রঙিন মাছের প্রজনন বিভিন্ন প্রজাতির জন্য বিভিন্ন রূপ৷ যাই হোক প্রজননের বৈশিষ্ট অনুযায়ী রঙিন মাছকে মূলত বাচ্চা পাড়া বা অন্তজ জনন (Live bearer) গোষ্ঠী ও ডিম পাড়া বা অন্ডজ জনন (Egg layar) গোষ্ঠীতে ভাগ করা যায়৷ বাচ্চা পাড়া গোষ্ঠীর মধ্যে গাপ্পি, সোর্ড টেল, মলি, প্লাটি, গাম্বুসিয়া উল্লেখযোগ্য এবং ডিমপাড়া গোষ্ঠীর মধ্যে পুঁটি, খলসে, চাঁদা, পায়রাচাঁদা, জেব্রা, দাঁড়কে, ট্যাংরা, মৌরলা, ঘুঁতে, ভুতো বেলে, আনজেল, ডিসকাস, ফাইটার, টেট্রা, শার্ক এবং গোল্ডফিস৷ আবার ডিমপাড়া গোষ্ঠীর স্বকীয় বৈশিষ্টের জন্য এদেরকে চারটি ছোট দলে ভাগ করা যেতে পারে- আলগা ডিম পাড়ে এমন দল৷ যেমন- জেব্রা৷ আঠালো ডিম পাড়ে এমন দল৷ যেমন- গোল্ডফিস, বিভিন্ন জাতের পুঁটি, টেট্রা৷ বাবল নেষ্টের মধ্যে ডিম পাড়ে এমন দল৷ যেমন- খোলসে, ফাইটার, গোরামী৷ আঠালো ডিম যত্ন নিয়ে পাড়ে এমন দল৷ যেমন- আনজেল, ডিসকাস্৷ Live bearing মাছেদের বাচ্চা তোলা খুবই সোজা৷ এরা প্রায় বারো মাসেই বাচ্চা দেয়৷ দেখা যায় এরা বেশীর ভাগ একাদশী, আমাবস্যা, পূর্ণিমা এইসব দিনে বাচ্চা দেয়৷ বাচ্চা ছাড়তে আরম্ভ করলে সাধারণত ৪ ঘন্টার মধ্যে সব বাচ্চা ছেড়ে দেয়৷ এই জাতের মাছেরা যখন বাচ্চা দিতে আরম্ভ করে তখন তিনবার পর পর ২০-২১ দিন বাদে বাদে দেয়৷ অনেক সময় মাছেরা নিজেদের পেট ভরা খাবার না পেলে নিজেদের বাচ্চাদের খেয়ে ফেলে৷ Live bearing মাছেদের পুরুষ ও স্ত্রী চেনা খুব সহজ৷ পুরুষদের পেটের কাছে একটি ছুঁচালো পাখনা হয় যাকে ইংরাজীতে Gonopodium বলে, স্ত্রী মাছেদের পাখনা গোল হয় এবং মোটা পেটে কালো দাগ দেখা যায় যাকে Gravid spot বলে৷
সারা বছর ধরে গাপ্পি ও গোল্ড ফিসের প্রজনন ও চাষ করা হয়৷ যদিও শীতে গাপ্পি কম বাচ্চা দেয় ও গ্রীষ্মে গোল্ডফিস কম ডিম পাড়ে৷ শীতকালের প্রজননের জন্য আদর্শ-মাছ হচ্ছে গোল্ড ফিস, কই কার্প, ম্যানিলা কার্প, ক্যাট ফিস ইত্যাদি৷ গ্রীষ্মকালে টাইগার বার্ব, রোজীবার্ব, উইডো টেট্রা, শার্পে টেট্রা, সোর্ডটেল, মলি, প্লাটি প্রজনন করানো ভাল৷ বর্ষাকালে পার্ল গোরামী, কিসিং গোরামী, ডোয়ার্ফ গোরামী, ব্লু চিকলিড, জেব্রা চিকলিড, টেট্রা, টাইগার বার্ব করা ভাল৷
রঙিন মাছ চাষের বিভিন্ন ধাপ
রঙিন মাছের চাষ ব্যাপক, প্রায় নিবিড়, নিবিড় বিভিন্ন পদ্ধতিতে হয়৷ তবে যে কোন চাষে সাধারণ যে বিষয়গুলির উপর নজর দিতে হয় তা হল-
জলাধার প্রস্তুতি- কাঁচ, সিমেন্টের চৌবাচ্চা বা প্লাস্টিকের চাদর দিয়ে জলাধার তৈরীর পর জল ভর্তি করে ৩-৪ দিন রেখে দেবেন৷ জলাধার-এর উপর আচ্ছাদন থাকা ভাল৷ তবে ভাল আলো বাতাস যাতে লাগতে পারে সে দিকেও নজর দিতে হবে৷ পুকুরের জল, বৃষ্টির ধারা বা কলের জল, যেটা সুবিধে হয় চৌবাচ্চায় ব্যবহার করা যেতে পারে৷ মাছ ছাড়ার ২৪ ঘন্টা আগে প্রতি পাঁচ গ্যালন জলে ৫ শতাংশ মেথিলিন ব্লু এক ফোঁটা ও লবন চায়ের চামচের ২চামচ মিশিয়ে দিতে হবে৷
মাছের চারা সংগ্রহ ও মজুত- জেব্রা, খলসে, ঘুঁতে, পুঁটি, ব্যাডিস প্রভৃতি দেশী মাছের বাচ্চা৷ সাধারণত এর প্রাকৃতিক বাসস্থান খাল, বিল, পুকুর, নদী, নালা, ধানক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা হয় আর গোল্ড ফিস, প্লাটি, মলি, আনজেল ইত্যাদি বিদেশী মাছের বাচ্চা হাওড়া বা কলিকাতার হাতিবাগান বাজারে পাওয়া যায়৷ এছাড়া বাড়ীতে প্রজনন ঘটিয়েও এ মাছের চারা চাষের জন্য ব্যবহার করা হয়৷ মাছ নির্বাচনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যে সমস্ত মাছ আপনি একত্রে এক চৌবাচ্চায় ছাড়তে চান তারা এক সঙ্গে থাকবার উপযুক্ত মাছ কিনা৷ মাছের চারা চৌবাচ্চায় ছাড়ার আগে অবশ্যই শোধন করে নেওয়া উচিত যাতে রোগ জীবাণু থাকলে নষ্ট হয়৷ চাষের জন্য চারা সর্বদা সুস্থ, সবল এবং ক্ষতশূন্য হওয়া দরকার৷ রুগ্ন বা অপুষ্ট চারা বেছে বাদ দেওয়াই ভাল৷ চারা শোধন করার জন্য সাধারণত পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (Potassium permanganate) ব্যবহার করা হয়৷ ১০ লিটার পরিষ্কার জলে আঙ্গুলের এক টিপ (FingerTip) পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশিয়ে মাছের চারাগুলি ৫ থেকে ১০ মিনিট ওই জলে রেখে পরে পরিষ্কার জলে ধুয়ে চৌবাচ্চায় ছাড়তে হয়৷ মাছের খাবার প্রয়োগ- রঙিন মাছ কৃত্রিম জলাশয়ে পালন করা হয় তাই মাছের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য প্রয়োগ করা জরুরী৷ সঠিক খাদ্যের উপর মাছের রং, বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও প্রজনন নির্ভর করে৷ যদিও মাছকে বাজারের বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম খাদ্য দেওয়া হয় তবুও জীবন্ত খাদ্য (Live food) একান্ত প্রয়োজন৷ রঙিন মাছের জন্য বিভিন্ন প্রকার জীবন্ত খাদ্য নিম্নরূপ-
ব্রাইন শ্রিম্প (Brine shrimp)- নোনা জলের এই কবচী প্রাণী যেমন আর্টিমিয়া স্যালিনা (Artemia salina) সদ্য জন্মানো বাচ্চা মাছের খুবই প্রিয় খাদ্য৷
ইনফুসুরিয়ান্স (Infusorians)- এককোষী এই প্রাণী যেমন প্যারামেসিয়াম যা সমস্ত জলাশয়ে পাওয়া যায় তা বাচ্চা মাছের প্রথম খাদ্য (First food) রূপে বিশেষ সমাদৃত৷
ওয়াটার ফ্লি (Water flea)- ক্ষুদ্র এই কবচী খাদ্য কণার মধ্যে ডাফনিয়া ও সাইক্লপস উল্লেখযোগ্য৷ বড়গুলি পরিণত মাছের জন্য এবং বাচ্চাগুলি ঘন কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে সদ্য জন্মানো ছোট্ট মাছকে খাওয়ানো হয়৷
স্লাডজ ওয়ার্মস (Sludge worms)- টিউবিফেক্স এক সমাকৃতি পাঁকের কৃমি সব রঙিন মাছের খুবই প্রিয় খাদ্য৷ কেঁচো (Earth worms)- জীবন্ত কেঁচো অথবা কুঁচানো কেঁচো রঙিন মাছের যথেষ্ট প্রিয় খাদ্য৷
ব্লাড ওয়ার্ম (Blood worms)- পতঙ্গ শ্রেণীর জলজ দশার লার্ভাগুলি আকোয়ারিয়াম মাছের বিশেষ খাদ্যরূপে চিহ্নিত৷ যে খাবারই দিন খুব অল্প পরিমাণে দেবেন যা মাছেরা দশ মিনিটের মধ্যে খেয়ে নিতে পারে৷ রোজ সকালে ও বিকালে খেতে দিতে পারলে সবচেয়ে ভাল৷
স্লাডজ ওয়ার্মস (Sludge worms)- টিউবিফেক্স এক সমাকৃতি পাঁকের কৃমি সব রঙিন মাছের খুবই প্রিয় খাদ্য৷ কেঁচো (Earth worms)- জীবন্ত কেঁচো অথবা কুঁচানো কেঁচো রঙিন মাছের যথেষ্ট প্রিয় খাদ্য৷
ব্লাড ওয়ার্ম (Blood worms)- পতঙ্গ শ্রেণীর জলজ দশার লার্ভাগুলি আকোয়ারিয়াম মাছের বিশেষ খাদ্যরূপে চিহ্নিত৷ যে খাবারই দিন খুব অল্প পরিমাণে দেবেন যা মাছেরা দশ মিনিটের মধ্যে খেয়ে নিতে পারে৷ রোজ সকালে ও বিকালে খেতে দিতে পারলে সবচেয়ে ভাল৷
জল পরিবর্তন- নিয়মিত জল পরিবর্তন রঙিন মাছ চাষের জন্য একান্ত প্রয়োজন৷ খাবার বেশী দিলে, মাছেরা সব খাবার খেয়ে উঠতে পারে না বলে অবশিষ্ট খাবার পচে জল নষ্ট করে৷ এছাড়া মাছের বর্জ্য পদার্থ পড়ে জল ধীরে ধীরে খারাপ হয়৷ জল খারাপ হবার চিহ্ন হল, জলের অক্সিজেনের অভাব হওয়ায় সমস্ত মাছেরা উপরে উঠে বাতাস থেকে অক্সিজেন নেবার চেষ্টা করে৷ এ রকম অবস্থা দেখলে তত্ক্ষণাত চৌবাচ্চার জল পাল্টে দেবেন৷
জলে বায়ু সঞ্চালন করা- চৌবাচ্চায় যদি বায়ু সঞ্চালন বা হাওয়ার বন্দোবস্ত করা যায় তাহলে খুব ভাল হয়৷ হাওয়া বৈদ্যুতিক মোটর ও পাম্পের সাহায্যে দেওয়া যায়৷ হাওয়া দেওয়ার বন্দোবস্ত করলে অক্সিজেনের অভাব পড়বে না ও সাধারণত চৌবাচ্চায় যা রাখবার নিয়ম তার চতুর্গুন মাছ রাখতে পারবেন৷
জলে বায়ু সঞ্চালন করা- চৌবাচ্চায় যদি বায়ু সঞ্চালন বা হাওয়ার বন্দোবস্ত করা যায় তাহলে খুব ভাল হয়৷ হাওয়া বৈদ্যুতিক মোটর ও পাম্পের সাহায্যে দেওয়া যায়৷ হাওয়া দেওয়ার বন্দোবস্ত করলে অক্সিজেনের অভাব পড়বে না ও সাধারণত চৌবাচ্চায় যা রাখবার নিয়ম তার চতুর্গুন মাছ রাখতে পারবেন৷
0 comments:
মন্তব্য করুন