আপনিও হতে পারেন একজন সৃজনশীল সিরামিক প্রকৌশলী


ঘর সাজানো বা অফিসের সৌন্দর্যবর্ধনের উপকরণ হিসেবে শৌখিন মানুষের কাছে নানা রকমের দৃষ্টিনন্দন সিরামিক পণ্যের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় । আর এখন সিরামিকের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে টাইলস ছাড়া বাড়ি নির্মাণ বা সৌন্দর্যবর্ধনে অনেকে কল্পনাও করতে পারেন না। বাড়িতে সিরামিকসের কমোড ও বেসিন স্থাপন থেকে শুরু করে বাড়িতে ও অফিসে সিরামিকের টি-টেবিল ও ঘর সাজানোর শোপিস রাখা এবং বাসনকোসন, চায়ের পেয়ালাসহ নানা ধরনের তৈজসপত্রের ব্যবহার তো আজকাল ফ্যাশনেও পরিণত হয়েছে। আর তাই দেশে সিরামিক পণ্যের চাহিদা বাড়ার সুবাদে স্থাপিত হচ্ছে নতুন নতুন সিরামিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
সিরামিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে দরকার হচ্ছে দক্ষ লোকের। কিন্তু ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও দেশে সিরামিক প্রকৌশলীর বেশ অভাব রয়েছে। সিরামিক শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের মতে, দক্ষ সিরামিক প্রকৌশলীদের চাকরির নিশ্চয়তা আছে। সুতরাং, পেশাগত চাহিদা ও সম্ভাবনা থাকায় নবীনেরা এ বিষয়ে পড়াশোনা করে হয়ে যেতে পারেন দক্ষ সিরামিক প্রকৌশলী।

কি ধরনের কাজ করবেন সিরামিক প্রকৌশলীরা 
তিনটি বিভাগ আছে সিরামিকে : টাইলস, স্যানিটারি (কমোড, বেসিন) ও টেবিলওয়্যার (বাসনকোসন, ফুলদানি, শোপিস ইত্যাদি) ।
কিন্তু বিভাগ তিন ধরনের হলেও মূল কাজ একই রকম। এটি একটি সৃজনশীল পেশা। পণ্যের নকশা, কালার ম্যাচিং, গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা দেখাই হচ্ছে সিরামিক প্রকৌশলীর মূল কাজ। এ ছাড়া একজন সিরামিক প্রকৌশলী তাঁর সৃজনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নিত্য নতুন নতুন সিরামিক পণ্য উৎপাদন করতে পারেন।

কাজের ক্ষেত্র
দেশে বর্তমানে প্রায় দুই শতাধিক সিরামিক কারখানা আছে। এসব শিল্পে প্রাথমিক পর্যায়ে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করার সুযোগ রয়েছে। কাজে ভালো দক্ষতা দেখাতে পারলে দ্রুত পদোন্নতি পাওয়া যায়। দেশের বাইরেও রয়েছে কাজ করার সুযোগ। সিরামিক প্রকৌশলীদের জন্য বাংলাদেশ কউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (বিসিএসআইআর) এবং বিএসটিআইতেও কাজ ও গবেষণা করার সুযোগ আছে।
এটি যেহেতু কাজটি একটি সৃজনশীল, তাই মেধা ও মননের মাধ্যমে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আসতে পারলে এই পেশায় দ্রুত খুব ভালো অবস্থান অর্জন করা সম্ভব হবে। সিরামিক বিষয়ে পড়ালেখা করে সাধারণত কোনো শিক্ষার্থীকে বসে থাকতে হয়না । সিরামিকে চাহিদা বেশি থাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এই বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থীই কর্মে নিয়োজিত হতে সক্ষম ।
চাকরির শুরুতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেতন হলেও তা দ্রুত ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা কিংবা এরও বেশি হয়ে যেতে পারে। তবে তা পুরোটাই নির্ভর করবে একজন সিরামিক প্রকৌশলীর কাজের দক্ষতা, নিষ্ঠা এবং সৃজনশীলতার উপরে। এছাড়াও সৃজনশীল এই পেশায় পড়াশোনা চলাকালেও চাকরি করে আয়ের সুযোগ থাকে।

পড়াশোনার সুযোগ
দেশে সিরামিক নিয়ে পড়াশোনার জন্য সরকারি-বেসরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই । তবে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকসে চার বছর মেয়াদি সিরামিক টেকনোলজি ডিপ্লোমা কোর্স এবং দুই বছর মেয়াদি ট্রেড কোর্স চালু আছে। চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স আটটি সেমিস্টারে বিভক্ত। এই কোর্সে আসনসংখ্যা ৮০। 
দুই বছরের সিরামিক ট্রেড কোর্সে ছয় সপ্তাহ বরাদ্দ রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিংয়ের জন্য। অন্যদিকে এসএসসি (ভোকেশনাল) সিরামিক ট্রেডে আসনসংখ্যা ৩০।
ভর্তির যোগ্যতা ও সময়
প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যেই সাধারণত ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এখানে ছেলেমেয়ে উভয়ই ভর্তির সুযোগ পায়। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর এসএসসি অথবা সমমান পরীক্ষায় সর্বনিম্ন জিপিএ ৩ সহ গণিতে জিপিএ ৩ থাকতে হবে। এমসিকিউ পদ্ধতিতে ৫০ নম্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী মেধাক্রমে ভর্তির সুযোগ পায়। এসএসসি ভোকেশনালের জন্য ১৫ ভাগ, মেয়েদের জন্য ১০ ভাগ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৬ ভাগ এবং ২ ভাগ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত।
যোগাযোগ 
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস, তেজগাঁও, ঢাকা-১২০৮।
এছাড়া বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটেও এই প্রতিষ্ঠান, কোর্স এবং ভর্তির সব ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে। ওয়েব ঠিকানা: www.bteb.gov.bd