জাহাজের ক্যাপ্টেন



৪৯তম ব্যাচে ক্যাডেট ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী। তিন বছরের এ কোর্সে মোট ২৭৫ জনকে ভর্তি করা হবে। তাঁদের মধ্যে ২০ জন মেয়েও ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন।

আবেদনের যোগ্যতা
বাংলাদেশ মেরিন একাডেমীতে আবেদনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করতে হবে। উভয় পরীক্ষায় আলাদাভাবে ৩.৫০ জিপিএ থাকতে হবে। এ ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকের পদার্থ ও গণিত বিষয়ে আলাদাভাবে ৩.৫০ জিপিএ থাকতে হবে। ইংরেজি বিষয়ে কমপক্ষে ৩.০০ জিপিএ অথবা আইইএলটিএস স্কোর হতে হবে ৫.৫।
এ ছাড়া ক্যাডেট হওয়ার জন্য শারীরিক সক্ষমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মেরিন ক্যাডেট হিসেবে ছেলেদের কমপক্ষে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি ও মেয়েদের ৫ ফুট ২ ইঞ্চি হতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিশক্তির ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মেনে ক্যাডেট ভর্তি করা হয়। মেরিন ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য ৬/৬ এবং মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি ৬/১৮ হতে হবে। এসবের বাইরে আবেদনকারীকে অবশ্যই সাঁতার জানতে হবে।

অনলাইনে আবেদন
এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চাইলে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনলাইনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। আবেদন ফরমের জন্য সোনালী ব্যাংকের ওয়েবসাইটে (www.sonalibank.com.bd) যেতে হবে।
এরপর ওয়েবসাইটের নিচের দিকে Marine Academy online registration form লেখায় ক্লিক করতে হবে। যে ফরমটি আসবে, তা সঠিকভাবে পূরণ হলে সিরিয়াল নম্বরসহ একটি ই-টোকেন আসবে। সেটি প্রিন্ট করিয়ে নিতে হবে। কারণ ভর্তির আগ পর্যন্ত এটি ছাত্রের পরিচয় হিসেবে কাজ করবে।

পরীক্ষার ফি
প্রবেশপত্রের জন্য ই-টোকেনসহ আরো কিছু কাজ করতে হবে। ই-টোকেনের একটি ফটোকপি, এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, পরীক্ষা ও ব্যাংক ফি বাবদ এক হাজার ৬০ টাকা সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় জমা দিতে হবে। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এসব কাগজপত্র ঠিকমতো পেলে আবেদনকারীকে লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রদান করবেন।

লিখিত পরীক্ষা
১৬ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্র এবং আসনবিন্যাস www.macademy.gov.bd ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। আর ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকার চারটি, চট্টগ্রামের দুইটি এবং রাজশাহী ও খুলনার একটি কেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। লিখিত পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকবে। ২ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হবে।

স্বাস্থ্য ও মৌখিক পরীক্ষা
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের এরপর অংশ নিতে হবে শারীরিক ও মৌখিক পরীক্ষায়। মেরিন একাডেমীতেই অনুষ্ঠিত হবে শারীরিক সক্ষমতা যাচাই ও সাঁতার পরীক্ষা। এ ধাপ দুটি পেরোনোর পর অনুষ্ঠিত হবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের পাশাপাশি মেরিন একাডেমীর নির্দিষ্ট কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রথম ২৭৫ জন স্বাস্থ্য পরীক্ষার মুখোমুখি হবেন।

খরচ পড়বে চার লাখ টাকা
তিন বছরের এই কোর্সটি শেষ করতে সব মিলিয়ে চার লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ হবে। এই টাকা খরচ করা হবে ক্যাডেটের পড়াশোনা, থাকা-খাওয়া এবং পোশাকের খরচ হিসেবে।

যেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়
সমুদ্রগামী জাহাজের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। যেমন_জাহাজ চালনা, নৌ-প্রকৌশল, ইলেকট্রনিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অথবা হোটেল সার্ভিস ইত্যাদি। তিন বছরের কোর্স শেষে এসব বিভাগের যেকোনো একটিতে যোগ দেওয়া যায়। তবে যাঁরা প্রি-সি নটিক্যাল সায়েন্সে পড়াশোনা করেন, তাঁরা জাহাজ চালনা বিভাগে যোগদান করুন। প্রি-সি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্নকারীরা নৌ-প্রকৌশল বিভাগে যোগ দিন।

পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি
কোর্সটিতে দুই বছরের তাত্তি্বক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এক বছর সরাসরি সমুদ্রগামী জাহাজে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এই এক বছরে প্রতিটি ক্যাডেট মাসিক ৪০০ থেকে ৫০০ ডলার বেতন পাবেন (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা)। 

কোর্স সম্পন্ন করার পর সাত থেকে আট বছরের মধ্যে জাহাজের ক্যাপ্টেন অথবা চিফ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। একজন ক্যাপ্টেন অথবা চিফ ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক বেতন ১০ থেকে ২০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আট লাখ ২০ হাজার থেকে ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা)।

কাজের ক্ষেত্র
তিন বছরের কোর্স শেষে একজন ক্যাডেট লাভ করবেন প্রি-সি মেরিন (মার্চেন্ট মেরিন) সার্টিফিকেট। সমুদ্রগামী জাহাজ ছাড়াও দেশি-বিদেশি নৌ বন্দর, জাহাজ ব্যবস্থাপনা সংস্থা, পাওয়ার প্লান্টেও কাজের সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া রয়েছে জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, দেশি-বিদেশি তেল কম্পানিসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কাজের সুযোগ।