কৃষক মোখলেছুর রহমান স্ট্রবেরী চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্ববলম্বী হয়ে উঠেছে

স্ট্রবেরী চাষ এখন লাভ জনক ফসল। শুধু স্ট্রবেরী চাষ করেই অনেক ক্ষুদ্র কৃষক তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে ফেলেছেন। অর্থনৈতিকভাবে তারা সাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। পল্লীতে ভিনদেশি সুস্বাদু স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই। লাল টুকটুকে স্ট্রবেরী প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ২শ ৮০ টাকা থেকে ৩শ টাকা দরে। এসব এলাকায় লাগানো স্ট্রবেরি ক্ষেত পরিদর্শনে আসছেন বিভিন্ন প্রান্তরের মানুষ। এই স্ট্রবেরী চাষ করে অতি সহজেই লাভবান হচ্ছেন অনেক কৃষক। তারা বাজরে এ স্ট্রবেরী বিক্রি করে অনেক অর্থ উপার্জন করছে। এটি এখন অনেকেরে প্রধান আয়ের ব্যবস্থা।

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ঈদুলপুর ইউনিয়নের তাজনগর গ্রামের মোখলেছুর রহমান প্রধান বিপ্লব এমনই একজন সাধারন কৃষক। ৩ বিঘা জমি নিয়ে স্ট্রবেরী চাষ শুরু করেন তিনি। এতে ধান-পাটের চেয়ে স্ট্রবেরী চাষ করে তিনি অনেক লাভবান হয়েছেন। এতে তিনি স্ট্রবেরী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। এক একর জমিতে স্ট্রবেরী রোপন থেকে উৎপাদন হওয়া পর্যন্ত কৃষকের ব্যয় হয় সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা। উৎপাদিত স্ট্রবেরী প্রতি কেজি ২শ ৮০ টাকা থেকে ৩শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলতি মৌসুমে একর প্রতি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা স্ট্রবেরী বিক্রি করছে কৃষক মোখলেছুর রহমান প্রধান বিপ্লব। তিনি বিশাল স্ট্রবেরী খামার গড়ে তুলেছেন। পরিবারের সবাই তার খামারের পরিচর্যা করে থাকেন। এছাড়া এলাকার ১৬ জন কৃষিশ্রমিক তার জমিতে উৎপাদিত স্ট্রবেরী চাষে কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে নারী শ্রমিকরাও কাজে সুযোগ পেয়েছে। এসব কৃষিশ্রমিকরা খামারের স্ট্রবেরী তোলার পর তারা প্যাকেট করে গাইবান্ধা জেলা শহর সহ রাজধানী ঢাকাতেও বিক্রি করছেন। এছাড়া ক্ষেতের স্ট্রবেরী তুলে নেওয়ার পর স্ট্রবেরী চারাবীজ বিক্রি করে কৃষকরা বাড়তি আয় করে থাকেন। স্ট্রবেরী চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করছেন মোখলেছুর রহমান প্রধান বিপ¬ব। ধান- পাটের চেয়ে স্ট্রবেরী চাষে অধিক লাভ বান হওয়া যায়। বিশেষ করে ফ্যাসটিবল, ডারবি ও রবি-৩, স্বাদ ও সুস্বাদু গুন গত মান পুষ্টি সম্দ্ধ হওয়ায় বাজারে চাহিদা ও কদরবেশি। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, মৌসুমের শুরুতে অক্টোবরÑ নভেম্বর মাসে স্ট্রবেরী চাষের সহায়তার জন্য বিভিন্ন প্রদশনী খামারের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষন সহ নতুন নতুন প্রযুক্তি বিষয়ে ধারনা প্রদান করা হয়ে থাকে।

কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মীর মো: আব্দুর রাজ্জাক জানান, স্ট্রবেরী চাষে কৃষকদের উন্নত জাতের চাষ পদ্ধতি সর্ম্পকে প্রশিক্ষন প্রদান, প্রদর্শনী প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের পুর্নবাসনে চারা বীজ ও সার সরবারহ করা হয়েছে।

মোখলেছুর রহমান প্রধান বিপ্লব জানান, ১ লাখেরও বেশি চারা বিক্রি হবে হলে আশা করছেন। এই ক্ষেত থেকে তার প্রায় ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় হবে এবং স্ট্রবেরি উৎপাদনের খরচ শুধুমাত্র চারা বিক্রি করে উঠে আসবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে এই ক্ষেত থেকে ১০ লাখ টাকা আয় হবে। বর্তমানে অনেক দোকানদার ও বাইরের লোকজন তার উৎপাদিত স্ট্রবেরী কিনে নিচ্ছেন। আগামীতে আরো জমি নিয়ে স্ট্রবেরী চাষে ও মার্কেটিং এ নামবেন বলে মোখলেছুর রহমান প্রধান বিপ্লব আশাব্যক্ত করেছেন।


উল্লেখ্য স্ট্রবেরি বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় ফল। পৃথিবীতে যত রকম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল আছে তার মধ্যে স্ট্রবেরী অন্যতম। আমেরিকার ওহিও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিঞ্জানীরা দেখেছেন, স্ট্রবেরীতে জীবন রক্ষাকারী নানা পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এতে আছে ভিটামিন এসি ইকেবি-সিক্স, ওমেগা-৩ এবং ফলিক এসিড, মেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, পলিফেনল। এলাজিক ফেরালিক এবং কুমারিক এসিড, কুয়ের মিটিন, জ্যান্থোমাইসিডিন এবং ফাই টোস্টেরল। এর মধ্যে এলার্জিক এসিড ক্যান্সার প্রতিরোধী পৌঢ়ত্ব প্রতিরোধী। এমন কি এইডস রোগ প্রতিরোধী হিসেবেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। স্ট্রবেরী খেলে মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি শরীরের উচ্চ রক্ত চাপ কমায়। যার ফলে হ্নদরোগের সম্ভবনা কমে যায়। নিয়মিত খেলে পাকস্থলী, অন্ত্রে ও চর্ম রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এটি শরীরের কোলেস্টেরল কমায়। স্ট্রবেরী খেলে মনে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গেটে বাত, ফোড়া থেকেও শরীরকে রক্ষা করে বলে জানা গেছে।