অর্গানিক সব্জি চাষে বিপ্লব

বাগেরহাটের ফকিরহাটে গড়ে উঠেছে বেতাগা অর্গানিক পল্লি। নেপালের অর্গানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে চাষ হচ্ছে এখানে। এই পদ্ধতিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই উৎপাদন হচ্ছে ফসলের।

বেতাগার অর্গানিক পল্লিতে এবার ৫০ একর জমি অর্গানিক পদ্ধতিতে আনা হয়েছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত এই পদ্ধতির উদ্যোক্তা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন দাস। তিনি জমিতে জৈব সার ও সেক্স ফরমেট ট্রাপ ব্যবহার করে সবজির দ্বিগুণ উৎপাদন পেয়েছেন। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করায় তার অর্থেরও সাশ্রয় হয়েছে।

বেতাগা ইউনিয়ন পরিষদে ‘উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে’ নামক এক প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, দুটি মৌজায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই লাউ, ঝিঙ্গে, পটল, উচ্ছে, করল্লা, ডাটাশাক, পুঁইশাক, শসা, চিচিঙ্গা, ক্ষীরা,  বেগুন, আলু, টমেটো, সূর্যমুখী, থাইপেয়ারা ও মাল্টার চাষ হচ্ছে।

বেতাগা ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন দাস বলেন, ‘নেপালের কাঠমান্ডুর অর্গানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এখানে পরিবেশ বান্ধব শাক-সবজির আবাদ করা হচ্ছে। আগামী বছরের মধ্যে আরও ১০ একর জমিতে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হবে। একদিকে যেমন কীটনাশক থেকে পরিবেশ রক্ষা পাচ্ছে অপরদিকে কৃষকের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে।’


তিনি বলেন, জৈব সার ব্যবহার করে এখানকার একজন কৃষক ১২ কাঠা জমিতে টমেটো চাষ করে দেড় লাখ টাকা উপার্জন করেন।

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন জানান, বাগেরহাট জেলার মধ্যে বেতাগা গ্রাম একটি উদাহরণ। শুধুমাত্র এখানেই রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত সবজি উৎপাদন হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল বীজ ব্যবহার করে লাউ, করল্লা, শসার উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকরা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে কচুরিপানা, গোবর ও ইউরিয়া সার মিশ্রিত করে ৪ মাস পর সবজি খেতে ব্যবহার করছে। কীটনাশক দমনের জন্য সেক্স ফেরমোন ট্রাপ ব্যবহার করছে।

কৃষকদের পরামর্শের জন্য এখানকার মাসকাটা নামক গ্রামে কৃষি ও তথ্য সার্ভিস সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ইউপি সদস্য ও কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদবিষয়ক স্থায়ী কমিটির ইউনিয়ন সভাপতি ইউনুস আলী শেখ জানান, সবজি বাজারজাতকরণের জন্য অর্গানিক বেতাগা সবজি মার্কেট নামে একটি বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ১৩ শতক জমির ওপর ১৮ লাখ ব্যয়ে মার্কেটটি নির্মাণ করছেন।

বেতাগা গ্রামের চাষি গোবিন্দ দেবনাথ, পিযুষ দাস, ফিরোজ শেখ, মোশাররফ হোসেন ও চঞ্চল দাস জানান, এক বিঘা জমিতে সবজি উৎপাদন করতে দুই হাজার টাকার রাসায়নিক সার প্রয়োজন হতো। জৈব সার ব্যবহার করে এক বিঘা জমিতে সবজি আবাদ করতে ৭০০ টাকা খরচ হয়। স্থানীয় কৃষকরা এখনই বাঁধা কপি, ওলকপি, ক্ষীরাই ও টমেটো চাষের উদ্যোগ নিয়েছে।

বেতাগা গ্রামের ১ নং ওয়ার্ডের এনামুল হকের স্ত্রী খাদিজা বেগম বলেন, ‘কচুরিপানা, গোবর, ফসফেট ও ইউরিয়া সার মাটি চাপা দিয়ে রাখার চার মাস পর এ জৈব সার ব্যবহারের উপযোগী হয়।’

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অপর একটি সূত্র জানায়, উপজেলার হোচলা গ্রামে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত পরিবেশে সবজি আবাদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আশাবাদী বেতাগার মত হোচলা গ্রামেও তারা অর্গানিক পদ্ধতিতে সফল হবে।

সূত্র: রাইজিংবিডি ডট কম