মাশরুমের বীজ উৎপাদন

ল্যাবরেটরীতে সাধারণত দুইটি পদ্ধতিতে মাশরুমের বীজ উৎপাদন করা যায়। 
যেমনঃ 
(১) টিস্যু কালচার পদ্ধতি 
(২) স্পোরকালচার পদ্ধতি। 
টিস্যুকালচার পদ্ধতিতে জাতের বিশুদ্ধতা বজায় রেখে রোগমুক্ত বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। সুতরাং এখানে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে মাশরুমের বীজ উৎপাদনের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি তুলে ধরা হল।



টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে মাশরুমের বীজ উৎপাদন পদ্ধতি ফ্লো চার্টঃ


পিডিএ মিডিয়া প্রস্তুত প্রণালীঃ
ল্যাবরেটরীতে টিস্যুকালচার করার পূর্বে পিডিএ মিডিয়া তৈরি করতে হবে। প্রতি লিটার পিডিএ মিডিয়ার জন্য নিম্নলিখিত উপকরণসমূহ প্রয়োজন।

১। গোলআলু - ২৫০ গ্রাম
২। এগার এগার - ২০ গ্রাম
৩। গ্লুকোজ - ২০ গ্রাম
৪। এসপারসিন - ২৫০ মিলিগ্রাম

পিডিএ তৈরিঃ
প্রথমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ আলু নিয়ে উপরের ছাল ফেলে দিয়ে পাতলা করে টুকরো টুকরো করে ১ লিটার পানিতে ফুটাতে হবে। ৩০ মিনিট ফুটানোর পর আলু সিদ্ধ হলে পাতলা কাপড় দিয়ে ছেকে নিয়ে আলু ফেলে দিয়ে ঐ পানির সাথে উল্লেখিত পরিমাণ এগার এগারগ্লুকোজ ও এসপারজিন মিশিয়ে আরও ১৫ মিনিট ফুটাতে হবে এবং মাঝে মাঝে নাড়ন কাঠি দ্বারা নেড়ে দিতে হবে। তারপর প্রতি টেস্ট টিউবে ১০ মিঃ লিঃ করে ভরে টেস্ট টিউবের মুখ ছিপি দিয়ে ভাল করে বন্ধ করতে হবে। অতঃপর অটোক্লেভ মেশিনে ১২০-১২১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১.১-১.৫ কেজি/সেঃ মিঃ২ প্রেসারে ২০ মিনিট জীবাণু মুক্ত করে নিতে হবে। তারপর উক্ত টেস্ট টিউব গরম অবস্থায় ৪৫ ডিগ্রী কোণে কাত করে ২৪ ঘন্টার সময় রেখে দিলে তা জমাট বেঁধে পিডিএ মিডিয়া তৈরি হবে।


পিওর কালচারঃ
পূর্বে প্রস্তুতকৃত পিডিএ মিডিয়াতে সুস্থ্যসবলরোগমুক্ত ও জুভেনাইল (Juvinileঅবস্থার মাশরুম ফ্রুটিং বডি সংগ্রহ করে ক্লিন বেঞ্চ এর ভিতরে সার্জিক্যাল ব্লেড দ্বারা কেঁটে সরিষা দানার মত সামান্য টিস্যু নিয়ে পিডিএ মিডিয়াতে সাবধানে নিডেল দ্বারা ঢুকিয়ে দিতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যেএ সমস্ত কাজগুলি জীবাণুমুক্ত পরিবেশে করতে হবে। তারপর উক্ত টেস্ট টিউবকে ২০-২৫০ সেঃ তাপমাত্রায় ৭-১২ দিন রেখে দিলে দেখা যাবে টেস্ট টিউবের ভেতর সাদা মাইসিলিয়ামে পূর্ণ হয়েছে। তখনই এটা স্টক কালচারে পরিণত হবে। এই স্টক কালচারকে পিওর কালচার বলা হয়।

মাদার কালচারঃ
মাশরুম সেন্টারে প্রধানতঃ দুই পদ্ধতিতে মাদার কালচার তৈরি করা হয়। 
(১) কাঠের গুড়া পদ্ধতি (২) গম পদ্ধতি

কাঠের গুড়া পদ্ধতিঃ

কাঠের গুড়ার মাদার কালচার তৈরি করতে নিম্নলিখিত উপকরণাদীর প্রয়োজনঃ (৩০০ গ্রামের ৪টি মাদার কালচারের জন্য)

উপকরণের নাম         পরিমাণ
কাঠের গুড়া           ৪০০ গ্রাম
গমের ভূষি        ২০০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম কার্বনেট   ৬০ গ্রাম
পানি                ৫০%

উল্লিখিত পরিমাণ কাঠের গুড়াগমের ভূষিধানের তুষচুন ও পানি মিশ্রিত করে পিপি ব্যাগে ৩০০ গ্রাম করে ভরে প্লাস্টিক নেক দ্বারা বেঁধে কাঠের লাঠি দ্বারা ছিদ্র করে কটন স্টপার দিয়ে মুখ বন্ধ করে ব্রাউন পেপার দিয়ে ঢেকে রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেধে দিতে হবে। তারপর অটোক্লেভ মেশিনে ১২০-১২১ ডিগ্রী সেঃ তাপমাত্রায় ও ১.১-১.৫ কেজি/সি.মি.২ প্রেসারে ১ ঘন্টাকাল জীবাণুমুক্ত করতে হবে। অতঃপর পিওর কালচার থেকে সামান্য মাইসেলিয়াম খণ্ড উক্ত প্যাকেটে জীবানুমুক্ত অবস্থায় ইনোকুলেশন করতে হবে। পরে প্যাকেটগুলি গ্রোথ চেম্বারে ২০-২৫ ডিগ্রী সেঃ তাপমাত্রায় ১২-১৫ দিন রাখার পর মাইসিলিয়াম দ্বারা পূর্ণ হলে তা মাদার কালচার হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এছাড়াও মাদার কালচার তৈরির জন্য গমজোয়ার এবং খড় ব্যবহার করা যায়।

মাশরুমের টিসু ইনোকুলেশনঃ
মাশরুম চাষ ঘর থেকে মাঝারি বয়সী ফ্রুটবডি সংগ্রহ করে ল্যাবে নিয়ে আসতে হবে। তৈরীকৃত পিডিএ মিডিয়াসংগৃহীত মাশরুমনতুন ব্লেডস্পিরিট ল্যাম্প ও প্রয়োজনীয় উপকরণ ক্লীনবেঞ্চে রেখে ইউ ভি লাইট ২০ মিনিট জ্বালিয়ে রাখতে হবে। ক্লিন বেঞ্চ চালু রেখে ৭০% এলকোহল দিয়ে হাততাজা মাশরুম ও কাজ করার জায়গা মুছে নিতে হবে। স্পিরিট ল্যাম্পে ব্লেডটি পুড়িয়ে লাল করে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এবার ব্লেড দিয়ে কলার জোন( পিলিয়াস ও স্টাইপের সংযোগ স্থল) থেকে মটর দানার সমপরিমান মাশরুমের টিসু ব্লক কেটে নিয়ে স্পিরিট ল্যাম্পের আগুনের সামনে রেখে সাবধানতার সাথে টেস্টটিউবে থাকা মিডিয়ায় বসিয়ে দিতে হবে। টেস্টটিউবের ছিপি বন্ধ করে ২২-২৫০ সে০ তাপমাত্রায় ইনকিউবেট করলে ৭-১০ দিনের মধ্যে সাদা তুলার ন্যায় মাইসেলিয়ামে টেস্টটিউব ভরে যাবে এবং পিউরকালচার তৈরী হয়ে যাবে। এই পিউর কালচার থেকে মাদার কালচার বা পুনরায় পিডিএ মিডিয়ায় ইনোকুলেট করে পিউর কালচার বানানো যাবে।

গমের মাদার কালচার তৈরি পদ্ধতিঃ
কাঠের গুড়ার পরিবর্তে গম দিয়ে মাদার কালচার তৈরি করা যায়। বর্তমানে অত্র সেন্টারে এ পদ্ধতিতেও মাদার কালচার প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।
প্রথমে ভাল গম ময়লা আবর্জনা ঝেড়ে ১২-১৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ভাল করে ধুয়ে সমপরিমাণ পানিতে ৩০-৪৫ মিঃ এমনভাবে সিদ্ধ করতে হবে যেন গম যথেষ্ট নরম হবে কিন্তু ফেটে যাবে না। বেশি সিদ্ধ করা চলবে না। তারপর পানি ঝরিয়ে ঠান্ডা করে প্রতি কেজি গমের সাথে ১০০ গ্রাম চুন (ক্যালসিয়াম কার্বনেট) মিশিয়ে গমকে ঝরঝরে করে নিতে হবে। পরে পিপি ব্যাগে ৩০০ গ্রাম ওজনের গম ভরে নেক লাগিয়ে রাবার ব্যান্ড দ্বারা বেঁধে দিতে হবে। তারপর তুলা দ্বারা মুখ এটে ব্রাউন পেপার দিয়ে ঢেকে রাবার ব্যান্ড দিয়ে বাঁধতে হবে। প্যাকেটগুলোকে অটোক্লেভ ১২০-১২১ ডিগ্রী সেঃ তাপমাত্রায় ও ১.১-১.৫ কেজি/সি.মি.২ চাপে এক ঘন্টা জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। উপরোক্ত নিয়মে পিউর কালচার দিয়ে ইনুকুলেশন করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে দিলে ১০-১৫ দিনের মধ্যে সাদা মাইসেলিয়ামে ভরে গেলেই মাদার কালচারে রূপান্তরিত হবে।

বাণিজ্যিক স্পন তৈরি
বাণিজ্যিক স্পনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাশরুমের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে।

ওয়েস্টার মাশরুমের স্পন উৎপাদন পদ্ধতি
প্রতি ১০০টি আধা কেজি ওজনের স্পন প্যাকেট তৈরির জন্য ১৬ কেজি কাঠের গুঁড়া ,৮ কেজি গমের ভুষি১কেজি ধানের তুষ ১০০ গ্রাম চুনের সাথে ২৫ লিটার পানি ভালভাবে মিশিয়ে ১০'' x '' সাইজের পিপি ব্যাগে আধা কেজি মিশ্রণ ভরে পিপির মুখে একটি প্লাস্টিক নেক লাগিয়ে তুলার প্লাগ দিয়ে মুখ আটকিয়ে একটি ব্রাউন পেপার দিয়ে মুখটি বন্ধ করতে হবে। অতঃপর প্যাকেটগুলোকে অটক্লেভে ১২০-১২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ও ১.১-১.৫ কেজি/ সেমি২ চাপে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্যাকেট ঠাণ্ডা হলে সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত পরিবেশে ক্লিন বেঞ্চে বা ক্লিন বক্সের মধ্যে প্রতিটি প্যাকেট ১-২ চামচ মাদার কালচার দিয়ে ইনুকুলেশন করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে দিলে ২০-২৫ দিনের মধ্যে সাদা মাইসেলিয়ামে ভরে যাবে এবং বাণিজ্যিক স্পন প্যাকেট তৈরি হবে। অটোক্লেভের অভাবে ড্রামে ৬-৭ ঘণ্টা সিদ্ধ করতে হবে।

বিকল্প পদ্ধতি
স্পন প্যাকেট তৈরির জন্য কাঠের গুঁড়ায় পানি মিশিয়ে মিশ্রণে পানির পরিমাণ ৬৫% করতে হবে এবং নেটের ব্যাগে ভরে পাস্তুরাইজেশন চেম্বারে স্তরে স্তরে সাজাতে হবে। বাষ্প দিয়ে পাস্তুরাইজেশন চেম্বারের তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রি সে. এ এক ঘণ্টা রাখতে হবে। কাঠের গুঁড়ার তাপমাত্রা যাতে দ্রুত নেমে না যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। এ অবস্থায় ১৬ -২২ ঘণ্টা রাখার পর কাঠের গুঁড়ার অর্ধেক পরিমাণ কাউনের মাদার মিশিয়ে আধা কেজির স্পন প্যাকেট তৈরি করতে হবে। তৈরিকৃত প্যাকেট রেকে সাজিয়ে রাখলে ১০-১২ দিনের মধ্যেই মাইসেলিয়াম রান সম্পন্ন হয়। এ পদ্ধতির স্পন প্যাকেট তৈরির সুবিধা হল-

১। পিপি লাগে একটি
২। তুলা লাগে কম
৩। সময় লাগে কম
৪। জ্বালানি খরচ খুব কম এবং
৫। কনটামিনেশন নেই বললেই চলে।