ফুলচাষ করে করে স্বাবলম্বী ও সফল উদ্যোক্তা যশোরের অঞ্জুরানী

যশোরের অঞ্জুরানীর গল্পটি গ্রামবাংলার আর পাঁচটি নারীর মতোই টানাপড়েনের সংসার কঠোর পরিশ্রম করে দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত পরিবারটিতে ফিরিয়েছেন সচ্ছলতা তিনি ফুল চাষ করেই হয়েছেন স্বাবলম্বী নির্বাচিত হয়েছেন সফল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা  রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার হাতে সফল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর . আতিউর রহমান কৃষি খাতে সাফল্যে শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছেন অঞ্জুরানী সরকার সিটি গ্রুপের সংগঠন সিটি ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোর নেটওয়ার্ক (সিডিএফ) যৌথভাবে পুরস্কারের আয়োজন করে পুরস্কার হাতে অঞ্জুরানী বলেন, ‘আমরা নারীরা লোকলজ্জার কথা বলে অনেক কিছুই করতে চাই না; কিন্তু কিছু করার জন্য ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট সবকিছু সমানভাবে না পেলেও কিছু করা যায়

যশোরের কেশবপুর উপজেলার মূলগ্রামের বাসিন্দা অঞ্জুরানী সরকার এক যুগ আগেও ছিলেন অসহায় নিঃস্ব সংসারে দুবেলা দুমুঠো অন্নসংস্থানে হিমশিম খেতে হয়েছে স্বামী সন্তোষ সরকার ছিলেন প্রান্তিক চাষি কৃষিকাজ করে যা উপার্জন করতেন, তা দিয়ে সংসার চলত না সংসারে লেগে থাকত অভাব-অনটন নিয়ে পরিবারে অশান্তিও কম ছিল না

সংসারের অবস্থায় অনেকটা বাধ্য হয়েই জীবনযুদ্ধে নেমে পড়তে হয় অঞ্জুরানীকে বাড়ির আঙিনায় এক টুকরো জায়গায় শুরু করেন ফুলচাষ সেই ফুল যশোরের অলিগলিতে হেঁটে হেঁটে বিক্রি শুরু করেন নিয়ে নানাজনের কটু কথা শুনতে হতো তাকে কিন্তু অঞ্জুরানী দমে যাননি শ্রম, সততা একাগ্রতা ফুল বিক্রি করে গেছেন ফুলের ব্যবসা করে এক যুগ পর সেই অঞ্জুরানী সরকার আজ সাফল্যের দেখা পেয়েছেন দারিদ্র্যকে জয় করে এখন তিনি একজন সফল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যশোরের মানুষের কাছে অঞ্জুরানী সরকার জীবনযুদ্ধে জয়ী এক সাহসী নারীর নাম ওই অঞ্চলের মানুষ যাকে ফুল বউদি নামেই বেশি চেনেন
দিয়ে

অঞ্জুরানী নিজেই জানালেন, ২০০০ সালে সামান্য সচ্ছলতার আশায় ফুল চাষ শুরু করেন তিনি এরই মধ্যে কেটে গেছে এক যুগ দীর্ঘ পথচলায় যে সাফল্য এসেছে, তা এককথায় অবিশ্বাস্য ফুল বিক্রির টাকা কিছু কিছু করে জমিয়ে যশোরের কেশবপুর বাজারে কিনেছেন চার শতক জমি যার বর্তমান মূল্য ১৪ লাখ টাকা ছোট ছেলেকে ২০০৪ সালে পাঠিয়েছেন কুয়েতে শুধু ফুল চাষের জন্য গ্রামে কিনেছেন ২৩০ শতক জমি আর জমিতে উৎপাদিত ফুল বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে দিতে কিনেছেন প্রাইভেট কার চলাফেরা করেন নিজস্ব প্রাইভেট কারে সাফল্যের পর্যায়ে আসার পরও ফুল বউদি রয়ে গেছেন আগের মতোই নিরহঙ্কার, সাদাসিধা তার চালচলনে আসেনি কোনো পরিবর্তন ধ্যান-জ্ঞান ওই ফুল বিক্রি নিয়েই তিনি আরও এগোতে চান

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অঞ্জুরানী বলেন, সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চান ফুলের ব্যবসা কেশবপুর বাজারে অবস্থিত নিজ জমিতে পাঁচতলা ভবন করতে চান সে ভবনেই কাটাতে চান জীবনের বাকি সময় সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চান সামনের দিকে


আর বড় ছেলে রূপচাঁদের স্বপ্ন মায়ের চেয়েও বেশি মায়ের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে চান তিনি পাশাপাশি ফুল বিদেশেও রফতানি করতে চান এজন্য ভারত থেকে ফুলচাষের ওপর এক বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণও নিয়ে এসেছেন কেশবপুর বাজারকে ফুলের বাজারে রূপান্তর করবেন- এমন স্বপ্নও রয়েছে রূপচাঁদের অঞ্জুরানীর ফুল ব্যবসায় কর্মসংস্থান হয়েছে স্কুল-কলেজপড়ুয়া অনেক গরিব মেধাবী ছেলেমেয়ের এমন ২০ শিক্ষার্থী নারী অঞ্জুরানীর সঙ্গে কাজ করছেন ভবিষ্যতে সংখ্যা আরও বাড়বে এমনটাই জানালেন তিনি

1 comments:

Allonlineshopbd.com said... Udyokta

এরকম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে অবহেলিত ফুল চাষীদের উৎসাহ প্রদান করার জন্য প্রতিবেদককে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে আরো প্রজটিভ বিপোর্ট আশ করছি।
www.allonlineshopbd.com