লাভজনক গ্লাডিওলাস ফুল চাষ

গ্লাডিওলাস ফুল ইদানিংকালে আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এর ইংরেজি নাম Sword lily ও বৈজ্ঞনিক নাম Gladiolus sp. গ্লাডিওলাস ফুল কমবেশি সারাবছরই আমাদের দেশে উৎপাদন করা হয়। গ্লাডিওলাস ফুল বিভিন্ন রঙ- এর হয়ে থাকে। যেমন-সাদা, হলুদ, গোলাপী, লাল, ফিকে লাল, বেগুনী ইত্যাদি। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে ঢাকা, যশোর, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা প্রভৃতি অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে এই ফুলের চাষ করা হচ্ছে।

বাজার সম্ভাবনা
গ্লাডিওলাস ফুল বিভিন্ন রঙ- এর  হয়ে থাকে। বিয়ে, গায়ে হলুদ, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অনুষ্ঠানের স্থান সাজানোর জন্য  এই ফুলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কাঁটা ফুল হিসেবে ফুলদানিতে রাখলে বেশ কিছুদিন ধরে এ ফুল ফুটতে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন রঙ-এর গ্লাডিওলাস ফুলের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা দিন দিন আমাদের দেশে বাড়ছে। আমাদের দেশের প্রায় সব জেলা শহরে ফুলের দোকান দেখা যায়। এসব ফুলের দোকানে ফুল সরবরাহ করে আয় করা সম্ভব। এছাড়া গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করে দেশীয় বাজারে বিক্রয়ের পাশাপাশি, ফুল বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। গ্লাডিওলাস ফুল বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

জমি নির্বাচন
  • জৈব সার সমৃদ্ধ, বেলে দো-আঁশ অথবা দো-আঁশ মাটি;
  • উঁচু জমি, যে জমিতে বৃষ্টি অথবা সেচের পানি জমে থাকে না;
  • জমির PH মান ৬.৫ থেকে ৭.৫ হওয়া দরকার, তবে এর চাইতে কম PH সমৃদ্ধ মাটিতেও এই ফুল চাষ করা যেতে পারে;
  • অধিক কাদাযুক্ত এবং কালো মাটির জমিতে চাষ না করাই ভালো;
  • হালকা মাটির ক্ষেত্রে জৈবসার মিশিয়ে মাটির গুণাগুন ভালো করতে হবে;
  • একই জমিতে বারবার গ্লাডিওলাস চাষ করলে মাটি বাহিত রোগের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ফসলও চাষ করতে হবে।

আবহাওয়া
  • আদ্র, রৌদ্র উজ্জল, নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া;
  • দিনের তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২০ ডি. সে. থাকলে উৎপাদন ভালো হবে;
  • উপযুক্ত আদ্রতা থাকলে ৫০ ডি. সে. পর্যন্ত তাপমাত্রা গ্লাডিওলাস সহ্য করতে পারে;
  • উচ্চ তাপমাত্রায় গাছের পানি ধরে রাখার ক্ষমতায় সমস্যা দেখা দেয়, তাছাড়া প্রথম বীজ বপন থেকে প্রথম পাতা বের হওয়া পর্যন্ত যদি উচ্চ তাপমাত্রা থাকে তবে গাছ সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়;
  • ছোট দিন এবং আলোর তীব্রতা কম হলে ফুল উৎপাদন কমে যায়;
  • পূর্ণ সূর্যালোক এই ফুল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, ছায়ায় এই ফুল ভালো হয় না;
  • গাছের বৃদ্ধির প্রতিটি ধাপে বিশেষ করে কর্‌ম (বড় গুঁড়িকন্দ) রোপণ এবং স্পাইক (যে দন্ডটি ফুল ও পাতা ধরে রাখে) বের হওয়ার আগ মুহুর্তে মাটিতে আদ্রতার ঘাটতি হলে ফলন কমে যাবে।

কর্ম (বড় গুঁড়িকন্দ) লাগানোর উপযুক্ত সময়
মধ্য - আশ্বিন হতে কাত্তিকের শেষ (অক্টোবর হতে মধ্য নভেম্বর) পর্যন্ত।

কর্মেল (ছোট গুঁড়িকন্দ) লাগানোর উপযুক্ত সময়
১লা চৈত্র থেকে বৈশাখের মাঝামাঝি (মার্চের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের শেষ) পর্যন্ত।
তবে গদখালী (ঝিকরগাছা,যশোর) এলাকার চাষী ভাইরা সারা বছরই এই ফুলের চাষ করে থাকেন।

ভালো জাতের বৈশিষ্ট্য
  • দেশীয় মাটি ও আবহাওয়ায় চাষ উপযোগী;
  •  রোগ বালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন;
  • সহজে গাছ হেলে পড়ে না;
  • উন্নত মানের কর্‌ম ও কর্‌মেল ব্যবহার;
  • স্টিকে ফুলের সংখ্যা বেশি থাকা;
  • ফুলের রং অধিকতর উজ্জ্বল হওয়া;
  • বেশি সময় ফুলদানীতে সতেজ থাকা।

জমি চাষ পদ্ধতি
  • গ্লাডিওলাস ফুলের জন্য জমিকে খুব ভালোভাবে চাষ করতে হয়, এর মূল বেশি গভীরে প্রবেশ করে না, তাই মাটি খুব গভীরভাবে চাষ করার প্রয়োজন নেই;
  • ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি গভীরতায় জমি চাষ করতে হবে, তবে মাটির নীচে শক্ত কাদা মাটির স্তর থাকলে মাটি আরো গভীরভাবে চাষ করতে হবে;
  • পোকামাকড় মুক্ত রাখতে জমি চাষের সময় ক্লোরডেন এবং মাটি বাহিত রোগ থেকে মুক্ত রাখার জন্য মিথাইল ব্রোমাইড-ক্লোরোপিকরিন (১৬২কেজি/একর) প্রয়োগ করে মাটি শোধন করতে হবে;
  • এ সময়ে প্রতি একরে প্রায় ১০০০০ কেজি গোবর, ২০ থেকে ২৫ কেজি টিএসপি এবং ১৫ থেকে২০ কেজি এমওপি সার জমিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

রোপণ পদ্ধতি
  • কর্ম (মাটির নীচের বড় গুড়িঁকন্দ) -এর ক্ষেত্রে
  • রোগমুক্ত বড় (প্রায় ৩০ গ্রাম) ও মাঝারি (প্রায় ২০ গ্রাম) ওজনের ১.৫ থেকে ২ ইঞ্চি ব্যাস যুক্ত কর্‌ম ২.৫ থেকে ৩.৫ ইঞ্চি গভীরতায় রোপণ করতে হবে;
  • কর্‌ম অবশ্যই সুপ্তাবস্হা (যে সময়টুকুতে অঙ্কুর গজাবে না তাকেই সুপ্তাবস্হা বলে) মুক্ত হতে হবে, অর্থাৎ জমির পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে;
  • করম লাগানোর পূর্বে অঙ্কুরিত করে ০.১% থেকে ০.৩% ব্যাভিষ্টিন দ্রবনে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে, অপরপক্ষে কর্‌মেল লাগানোর ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে;
  • উন্নত মানের ফুল পাওয়ার জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ১২ ইঞ্চি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১০ ইঞ্চি হতে হবে;
  • তবে জমির অপচয় রোধ করার জন্য "১০ ইঞ্চি x ৬ ইঞ্চি" দূরত্বে রোপণ করা যেতে পারে।

করমেল (মাটির নীচের ছোট গুড়িঁকন্দ) -এর ক্ষেত্রে
  • কর্ম এর চারদিকে গুচ্ছাকারে ছোট ছোট কর্‌মেল পাওয়া যায়, কর্‌মেলের চারদিকে বাদামী রঙের শক্ত খোসা থাকে যার কারণে অঙ্কুরোদগম হতে দেরী হয়, তাই কর্‌মেল লাগানোর আগে সাবধানতার সাথে খোসা ছাড়িয়ে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে নিলে অঙ্কুরোদগম তাড়াতাড়ি হবে;
  • কর্‌মেল লাগানোর ক্ষেত্রে মাটি খুব ঝুরঝুর করে তৈরি করতে হবে এবং কর্‌ম-এর চেয়ে বেশি পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে;
  • প্রতিটি কর্‌মেল খুব ছোট হওয়ায় রোপণদূরত্ব কমিয়ে ৪ ইঞ্চি x ২ ইঞ্চি দূরত্বে এবং অল্প গভীরতায় (প্রায় ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি) রোপণ করতে হবে।

বংশবিস্তার
  • বীজ, গুঁড়ি কন্দ ও গুঁড়ি কন্দের গায়ে জন্মানো ছোট ছোট কন্দ থেকে গ্লাডিওলাসের বংশবিস্তার করা যায়।
  • বীজ থেকে তৈরি চারাতে ফুল আসতে অনেক সময় লাগে এবং জাতিগত বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে না। তাই বীজ দিয়ে সাধারণত বংশবিস্তার করা হয় না।
  • ফুল দেয়া শেষ হলে গাছ শুকিয়ে যায়। এ সময় মাটি খুঁড়ে গ্লাডিওলাসের কন্দ তুলে নিয়ে এর গায়ে জন্মানো ছোট কন্দগুলো আলাদা করে নিতে হবে।
  • এর কন্দগুলোর গায়ে লেগে থাকা মাটি পরিষ্কার করে নিয়ে কন্দগুলো ছায়াযুক্ত জায়গায় রেখে শুকিয়ে নিতে হবে।
  •  শুকানোর পর কন্দগুলো কিছুটা অন্ধকার শুকানো জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।
  •  এগুলো সুপ্ত অবস্থা অতিক্রম করে গজানো শুরু করলে নতুন ফুল গাছের জন্য মাটিতে রোপণ করতে হবে।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------


টুকরা পদ্ধতিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষে দ্বিগুণ লাভ
প্রচলিত পদ্ধতি ছেড়ে টুকরা পদ্ধতিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করলে দ্বিগুন লাভ হবে। সম্প্রতি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যায়ের (শেকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এএফএম জামাল উদ্দিনের সহযোগিতার শেকৃবি এমএস এর একদল শিক্ষার্থীর গবেষণার ফলে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

জানা যায়, গ্লাডিওলাস ফুল চাষের জন্য কন্দ লাগাতে হয় এবং এ কন্দের মাধ্যমেই এর বংশবৃদ্ধি হয়। একটি কন্দ থেকে সাধারণত একটি ফুল হয়। ফুল কেটে নিয়ে আসার পর প্রতিটি কন্দ হতে ২-৩টি নতুন কন্দ হয়। যা পরবর্তীতে রোপনের জন্য ব্যবহার করে। কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতিতে এ রোপন উপাদান কন্দের সংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। তাই প্রতিবছর অতি উচ্চ দামে অন্য দেশ হতে কন্দ সংগ্রহ করতে হয় এবং আমাদের দেশে নার্সারিতেও অতি উচ্চ দামে কন্দ কিনতে হয়, যায় ফলে গ্লাডিওলাস চাষের প্রাথমিক খরচ অনেক বেশি হয়। গ্লাডিওলাসের একটি কন্দ হতে একটি মাত্র গাছ হয় কিন্তু বাকি চোখ (বাড) সুপ্ত অবস্থার থাকে। একটি কন্দকে তার চোখ অক্ষত রেখে চোখের সংখ্যা ও কন্দের আকার অনুসারে দুই বা ততোধিক ভাগে বিভক্ত করে রোপন করলে বিভাজিত প্রত্যেক অংশ হতে নতুন গাছ জন্মায়। এছাড়া কন্দকে বিভক্ত করে রোপন করলে অধিকাংশ সময়ে দ্বিগুণ এবং মাঝে মাঝে তিনগুণ চারা জন্ম নেয়। এ টুকরা করা কন্দকে ছত্রাকনাশক মিশিয়ে দিলে ছত্রাকের আক্রমণ হয় না। তবে ছত্রাকনাশক মিশানোর পর তা ভাল করে শুকিয়ে নিতে হবে তা না হলে রোপনের পর পচার সম্ভাবনা থাকে। টুকরা করা কন্দ রোপনের আগে ৩০ মিনিট জিবরেলিক এসিড মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে নিলে কন্দের সুপ্তাবস্থা অতি দ্রুত ভেঙ্গে যায় ফলে দ্রুত গাছ জন্মায়। প্রচলিত পদ্ধতিতে যেখানে একটি কন্দ হতে ২-৩টি নতুন কন্দ পাওয়া যেত সেখানে টুকরা করে লাগালে একটি কন্দ হবে ৯টি বা তার বেশি নতুন কন্দ পাওয়া যায়।

সহযোগী অধ্যাপক ড. এএফএম জামাল উদ্দিন জানান, টুকরা পদ্ধতিতে রোপন করলে কন্দের সঙ্গে সঙ্গে কন্দের সংখ্যাও দ্বিগুণ বা তিনগুণ হতে পারে। আর যেখানে একটি কন্দ হতে একটি ফুল পাওয়া যেত সেখানে টুকরা পদ্ধতিতে প্রতিটি টুকরা অংশ হতে কমপক্ষে একটি অর্থাৎ একটি কন্দ হতে দুইটি বা তারও বেশি ফুল পাওয়া সম্ভব। তাই কন্দকে কেটে টুকরা করে ব্যবহার নিঃসন্দেহে লাভজনক। কন্দকে কেটে টুকরা করে রোপন করে কন্দের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।


----------------------------------------------------------------------------------------------------

  
সার প্রয়োগ
  • জৈব সার - ৭০০ কেজি (জমি তৈরীর সময়)
  • টিএসপি ২০ থেকে ২৫ কেজি - জমি তৈরির সময়
  • এমওপি ১৫ থেকে ২০ কেজি - জমি তৈরির সময়
  • ইউরিয়া ১৪ কেজি - চারটি পাতা বের হওয়ার পর।
  • ইউরিয়া ১৪ কেজি - স্পাইক বের হওয়ার সময়ে
সূত্র: ফিল্ড সার্ভে, মোঃ আব্দুর রহিম, সভাপতি, গদখালী ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, গদখালী, ঝিকরগাছা, যশোর


চাষের সময়ে পরিচর্যা
সুষ্ঠু পরিচর্যার উপর গ্লাডিওলাসের উৎপাদন বহুলাংশে নির্ভরশীল।

() সেচ পানি নিস্কাশন
  • ভালো ফুল পাবার জন্য মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস থাকতে হবে;
  • কর্ মাটিতে লাগানোর পর জমিতে হালকা সেচ দিতে হবে, যাতে কর্মগুলি মাটিতে লেগে যেতে পারে;
  • পরবর্তীতে আবহাওয়ার অবস্হা বুঝে ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর সেচ দিতে হবে;
  • ঝরণা বা প্লাবণ দুই পদ্ধতিতেই সেচ দেওয়া যায়;
  • মাটিতে পানির পরিমাণ কম থাকলে গাছের বৃদ্ধি কমে যাবে;
  • জমিতে পানির পরিমাণ বেশি হলে কর্ পচে যেতে পারে।
() আগাছা দমন
  • গ্লাডিওলাস ফুলের উৎপাদনে নিয়মিতভাবে গভীর শিকড় যুক্ত আগাছা দমন খুবই জরুরী;
  • আগাছানাশক হিসাবে ট্রাই-ফ্লুরালিন . কেজি/একর স্প্রে করতে হবে;
  • এছাড়াও এলাক্লোর ব্যবহার করে আগাছা দমন করা যায়;
  • আগাছানাশক ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কর্ কর্মেল ক্ষতিগ্রস্হ না হয়।
() মালচিং মাটি উঠানো
  • গ্লাডিওলাস ফুল চাষের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পরিচর্যা হচ্ছে গোড়ায় মাটি উঠানো;
  • অঙ্কুরোদগমের পর প্রতি ১৫ থেকে ৩০ দিন পর পর উপরের মাটি খুপরী বাহোদিয়ে মালচিং করে নিতে হবে;
  • গাছে থেকে টি পাতা বের হওয়ার পর একবার এবং স্পাইক (৭টি পাতা বের হওয়ার পর) বের হওয়ার সময় গাছের গোড়ায় দুই পাশ থেকে মাটি উঠিয়ে দিতে হবে;
  • সেচ দেওয়ার পর বা কোন কারনে কর্ বা কর্মেল মাটির উপরে উঠে এলে পাশ থেকে মাটি নিয়ে ঢেকে দিতে হবে;
  • মাটি উঠিয়ে দিলে মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকে এবং বাতাসে গাছ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
() স্টেকিং (কাঠি দিয়ে কান্ডকে দাঁড় করিয়ে রাখা)
  • প্রতি সারিতে . ফুট দূরে দূরে বাঁশের/কাঠের কাঠি পুঁতে ইঞ্চি উপরে একটি এবং স্পাইক বের হওয়ার স্হানে একটি তার বা নাইলনের রশি টানাতে হবে;
  • প্রতি গাছে আলাদা করে ছোট ছোট খুঁটি লাগানো যেতে পারে;
  • গাছ ঘন করে লাগালে স্টেকিং না করলেও চলে;
  • স্টেকিং দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কান্ডে বা মাটির নীচে কর্ বা কর্মেলে আঘাত না লাগে।
রোগবালাই ও তার প্রতিকার
গ্লাডিওলাস ফুলের বাগানে পোকার আক্রমণ হলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।

ফুল কাটা
  • কর্‌ম লাগানোর ৭৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে;
  • স্পাইক এর নিচের দিকে ১ থেকে ২ টি ফুলে (ফ্লোরেট) রং দেখা দিলে স্পাইক (যে দন্ডটি ফুল ও পাতা ধরে রাখে) কাটতে হবে;
  • স্পাইক কাটার পর গাছে ৪ থেকে ৫ টি পাতা এবং স্পাইকে ১ থেকে ২টি ফুটন্ত ফুল থাকতে হবে;
  • ফুল কাটার সাথে সাথে সেগুলো ছায়ায় কিছু সময় রাখতে হবে।
কর্‌ম তোলা ও সংরক্ষণ
ক) কর্‌ম তোলা
ফুল কাটার ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে কর্‌ম উঠাতে হবে। (গাছের পাতা যখন হলুদ ও বাদামী রং এর হয়)।
ফুল কাটার ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যে কর্‌ম উঠালে খুবই ভালো মানের কর্‌ম পাওয়া যায়; যা থেকে পরে ভালো ফুল পাওয়া যায়।
তোলার সময় কর্‌ম এর গায়ে যেন কোন আঘাত না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

খ) সংরক্ষণ
কর্‌ম ও কর্‌মেলকে ব্যাভিষ্টিন ১% দ্রবনে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর আলো-বাতাসযুক্ত স্হানে ভালোভাবে শুকিয়ে নিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।কর্‌মকে ২.৫ থেকে ৫ সে. তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। দেশীয় পদ্ধতিতে কর্‌ম ও কর্‌মেল আলো-বাতাসযুক্ত স্হানে বাঁশের মাচা অথবা কাঠের ট্রেতে এক স্তর করে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। বালতিতেও কর্‌ম সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন এক জাত অন্য জাতের সাথে মিশ্রিত না হয়। সংরক্ষণের সময় কর্‌মের উপরের খোসা ছাড়ানো উচিত নয়। অল্প পরিমাণ কর্‌মের ক্ষেত্রে রেফ্রিজারেটরের সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যেতে পারে। কর্‌মেল সংখ্যায় বেশি এবং আকারে ছোট থাকে বলে ছিদ্রযুক্ত নাইলনের ব্যাগে ভরে বাঁশের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রেখেও সংরক্ষণ করা যায়। কর্‌ম ও কর্‌মেল সংরক্ষণ করার পরে সংরক্ষিত স্হান মাঝে মাঝে পরিদর্শন করে খেয়াল রাখতে হবে যেন পোকামাকড়ের আক্রমণ বা রোগাক্রান্ত না হয়।

ফলন
  • একর প্রতি ১ লক্ষ ৩৫ হাজার কর্‌ম থেকে ১ লক্ষ ৫ হাজার থেকে এক লক্ষ ২০ হাজার পর্যন্ত স্টিক পাওয়া যায় ;
  • একর প্রতি ৪ হাজার কেজি কর্‌ম ও প্রায় ৫ হাজার কেজি কর্‌মেল পাওয়া যায় ;
  • প্রতিটি কর্‌মের ওজন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ গ্রাম এবং প্রতিটি কর্‌মেলের ওজন প্রায় ২০ থেকে ৫০ গ্রাম ;

প্রতিটি কর্‌ম থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৫টি কর্‌মেল পাওয়া যায়।

প্রক্রিয়াজাতকরণ
  • কাটা ফুল বেশি দিন তাজা রাখতে দ্রবণে ৬০০ পিপিএম ৮- হাইড্রক্সি কুইনোলাইন সাইট্রেট এর সাথে ৪% চিনির দ্রবণ মিশিয়ে দিতে হবে;
  • স্পাইককে পলিথিনে মুড়ে কার্টুনে রাখতে হবে;
  • কার্টুনটি ৪ থেকে ১০ সে. তাপমাত্রায় তিন দিন পর্যন্ত রাখতে হবে।

প্যাকিং
৫ ফুট লম্বা, ২৪ ইঞ্চি চওড়া এবং ১২ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট ছিদ্র কাগজের বা যুক্ত কাঠের বাক্সে স্পাইক গুলি রাখতে হবে।বাক্সের চারিদিকে স্পাইক এবং বান্ডেলের ফাঁকে ফাঁকে শোষক তুলা রাখতে হবে।

উৎপাদিত ফুলের পরিমাণ

প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করলে গড়ে প্রতিদিন ৬৭৫টি স্টিক পাওয়া যায়।



৪ শতক জমিতে গ্লাডিওলাস চাষ করে লাভ ১৫ হাজার টাকা।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাদিপুরের কৃষক কাইউম আলী রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের পাশে ধানী জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করেন। জমিতে সাদা ও গোলাপী রঙ মিশ্রিত গ্লাডিওলাস ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় প্রত্যেক ফুলের স্টিক অন্যদের চেয়ে ৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি করেছে। তিনি সাংবাদিকদের জানান,সাদা রঙের গ্লাডিওলাস ফুলের ১টি স্টিক পাইকারি দরে ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হলেও সাদা ও গোলাপী রঙ মিশিয়ে পাইকারী দরে বিক্রি করেছে ১১ টাকা থেকে ১৪ টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছ থেকে গ্লাডিওলাস ফুলের করম সংগ্রহ করে ৪ শতক জমিতে চাষ করে। তার খরচ হয় ২ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ফুল বিক্রি করেছে ১৭ হাজার টাকার। তার লাভ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। তাই এই কৃষক আগামী বছর বেশি পরিমাণ জমিতে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করবে বলে জানান।