কুমিল্লায় ঘরে ঘরে ‘সাদা সোনা’

ভোর বেলায় চাষীরা ঘুম থেকে জেগে দেখেন ঘরের বারান্দায় এমন কি খুপরী ঘরেও সাদা ফুল ফুটে আছে। তারা ফুল ছিড়ে বিক্রি করেন। এতে নগদ টাকা আসে। এই হলো মাশরুম। মাশরুমকে কেউ বলেন সাদা ফুল, কেউ বলেন সাদা সোনা

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার খাড়াতাইয়া মাশরুম পল্লীর চাষী সাহেরা বেগম। ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন। স্বামী অব. সেনা সদস্য জসিম। স্বামী অবসরের পর পরিবারের আর কোন আয়ের পথ না থাকায় ৩ সন্তানের লেখাপড়ার খরচসহ পরিবারের অন্যান্য খরচ চালানো তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তার পর ২০০৮ সালে কুমিল্লা মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ উপকেন্দ্র হতে ৩ দিনের মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তার পর তাকে সরকারিভাবে ২৫টি মাশরুমের স্পন প্যাকেট সরবরাহ করা হয়। ঐ বছর তিনি ২৫টি স্পন থেকে প্রায় ১০০টি খড়ের প্যাকেট তৈরী করেন। একই বছর তার আয় হয় ছয় হাজার টাকা, যা দিয়ে তিনি পরবর্তী বছরের জন্য একটি ছোট মাশরুম চাষ ঘর ও খড় কিনে রাখেন। বর্তমানে তার মাসিক আয় প্রায় বিশ হাজার টাকা।

বর্তমানে খাড়াতাইয়া ও গাজীপুর মাশরুম পল্লীতে ৬০ জন মাশরুম চাষী আছেন। উক্ত পল্লী থেকে দৈনিক গড়ে ৮০-১০০ কেজি মাশরুম উৎপাদন হয়। যা প্রতি দিন বিভিন্ন ভোক্তা এসে কিনে নিয়ে যান। তাছাড়া কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন কাঁচা বাজারে, বিভিন্ন ডিপার্ঁমেন্টাল স্টোরে প্রতি কেজি মাশরুম ১৩০-১৫০ টাকায় পাইকারী দামে বিক্রি হয়।


উদ্যানতত্ত্ববিদ ড. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান যে, মাশরুমে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও অল্প পরিমাণ শর্করা। মাশরুমের সবজি, ভর্তা, স্যুপসহ নানান মজাদার খাবার তৈরী করা যায়।

মাশরুম ডায়াবেটিক, হৃদরোগ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, ও মরণ ব্যাধি ক্যান্সার রোগ ছাড়াও আরো অনেক রোগ প্রতিরোধ হিসাবে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।


উল্লেখ্য, ২০০৭-২০০৮ অর্থ বছর থেকে এ পর্যন্ত বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ উপকেন্দ্র, কুমিল্লার উদ্যোগে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ৩০৫০ জন মাশরুম কেন্দ্রের প্রশিক্ষকরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমবায় প্রতিষ্ঠানে আরো প্রায় ৫০০০ জন আগ্রহী নারী পুরুষকে মাশরুম চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। বর্তমানে জেলার বুড়িচং, চান্দিনা ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ৪টি মাশরুম পল্লী রয়েছে। এসব মাশরুম পল্লীতে রয়েছে প্রায় ১৫০ জন মাশরুম চাষী। দিন দিন চাষী সংখ্যা বেড়েই চলছে।