হাঁস পালনের পরিকল্পনা ও খরচের তথ্যাদি

ভূমিকা:
হাঁস পালন করে বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করে নেয়া যায় নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাইবান্ধা সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন গ্রামে হাঁস পালন করে অনেকেই সচ্ছল জীবন ফিরে পেয়েছেন উন্নত জাতের একটি হাঁস বছরে ৩০০টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে হাঁসের নাম হলো খাকী ক্যাম্ববেল, জিনডিং ইন্ডিয়ান রানার নদীর তীর, পুকুর পাড় আর্দ্র ভূমিতে হাঁস পালন খুবই লাভজনক

হাঁস সংগ্রহ:
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা থেকে হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করা যাবে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়াস্থ কেন্দ্রীয় হাঁসের খামার, খুলনার দৌলতপুর হাঁসের খামারসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাঁস-খামার থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করা যায় নিম্নে ৫০০ হাঁস ৩০টি হাঁস পালনের তথ্যাদি উল্লেখ করা হলো

ডিম পাড়া ৫০০ হাঁস পালার যাবতীয় তথ্যাদি :
প্রতি হাঁসের জন্য বর্গফুট হিসেবে ১০০০ বর্গফুটের ঘর তৈরি করতে হবে পাকা হলে প্রতি হাঁসের জন্য কমপক্ষে বর্গফুট হিসেবে ১০০০ বর্গফুট কাঁচা হলে প্রতি হাঁসের জন্য ১০ বর্গফুট হিসেবে ৫০০০ বর্গফুট ওয়াটার চেনেলের গভীরতা  , প্রস্থ  ইঞ্চি রাখুন মাস পর্যন্ত প্রতিপালন করতে প্রতিটি হাঁসের জন্য ১৫ কেজি খাবার দরকার হবে মাস পর প্রতি হাঁসের জন্য দৈনিক ১৬০ গ্রাম (আড়াই ছটাকের কিছু উপরে) হিসেবে খাবার লাগবে

আবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি : 
. ফিডার বা ফিড হপার টিন বা প্লাস্টিকের বা কাঠের তৈরি এবং উভয় দিক দিয়ে খেতে পারে এরূপ ফুট লম্বা ১০টি ফিডার
. লিটার: ধান বা গমের খড়, ধানের তুষ ব্যবহার করা যায়, তবে খড় ব্যবহার করাই উত্তম
. ডিম পাড়ার ঘর: হাঁসির জন্য ডিম পাড়ার ঘর তেমন দরকার হয় না মূল ঘরের কোনায় বা দেয়ালের সঙ্গে ধানের খড় দিলে এতে হাঁসি ডিম দেবে এবং ওই ডিম পরিষ্কার থাকবে। ঝুড়ি বা ট্রেতে করে ডিম সংগ্রহ করতে হবে 

মাস বয়স পর্যন্ত খরচ (জমি ঘর বাদে) : 
১১০০ বাচ্চার দাম প্রতিটি ২০ টাকা হিসেবে ২২ হাজার টাকা মাস বয়স পর্যন্ত ৫৫০ বাচ্চার খাবার খরচ (খাবার মাস বয়স পর্যন্ত ১৫ কেজি এবং প্রতি কেজি খাবারের মূল্য ১৮ টাকা) ,৪৮,৫০০ টাকা অন্যান্য খরচ বাবদ ,০০০ টাকা মোট বিনিয়োগ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা

মাস বয়সের পর ডিম খাবারের হিসাব (লাভ-লোকসান):
দৈনিক ৫০০ হাঁসির খাদ্য (প্রতিটির জন্য ১৫০ গ্রাম) = ৭৫ কেজি প্রতি কেজি ১৮ টাকা হারে ১৩৫০ টাকা দৈনিক ডিম উত্পাদন (৬০% উত্পাদন হিসেবে) ৩০০টি (১০০ ডিম = ৬০০ টাকা হিসেবে) ১৮০০ টাকা, মাসের খাবার খরচ বাদে থাকে (১৮০০-১৩৫০) ৩০ = ১৩,৫০০ টাকা, মাসে ১০০০.০০ টাকা শ্রমিক খরচ ধরলে লাভ থাকবে ১২,৫০০ টাকা
ছোট খামার হিসেবে জমির দাম, ব্যবস্থাপনা খরচা ইত্যাদি বিবেচনা না করে শুধু বাচ্চার মূল্য, খরচ শ্রমিক বিবেচনা করা হয়েছে বাচ্চা মর্দা এবং মাদী শনাক্ত করা না থাকলে ১১০০ বাচ্চা ক্রয় করতে হবে অন্যথায় ৫৫০টি বাচ্চা ক্রয় করলেই চলবে মৃত্যুর হার মাস বয়স পর্যন্ত % ধরা হয়েছে বলে ৫০০ হাসির জন্য ৫০টি বাচ্চা বেশি ক্রয় করতে হবে দুই মাস বয়স পর্যন্ত মর্দা বাচ্চা পালন করতে যা খরচ হবে, ওই বয়সে ওই বাচ্চাগুলো বিক্রয় করে খরচের টাকা উঠে যাবে তাই কেবল ৫৫০টি বাচ্চার খাদ্য খরচ দেখানো হলো

৩০টি হাঁস পালন :
. সর্বদা বদ্ধ অবস্থায় : ঘরের জায়গার পরিমাণ : প্রতি হাঁসের জন্য বর্গফুট হিসেবে ১৫০ বর্গফুট = ১র্৫ ১র্০ একটি ঘর দৈনিক খাবার কেজি = ৯০ টাকা
দৈনিক গড় ডিম = ১৮টি-১০৮ টাকা (উত্পাদন ৬০%) দৈনিক লাভ ১০৮-৯০ = ১৮ টাকা মাসে লাভ ৫৪০ টাকা

খ. অর্ধ ছাড়া অবস্থায় : ঘরের জায়গার পরিমাণ বর্গফুট হিসেবে = ৬০ বর্গফুট ঘরের বাইরে রানের পরিমাণ = পাকা হলে - বর্গফুট হিসেবে ৬০ বা ১৫০ বর্গফুট দৈনিক গড় ডিম উত্পাদন ১৮টি ১০৮ টাকা দৈনিক লাভ ১০৮-৯০ = ১৮ টাকা মাসে লাভ ৫৪০ টাকা

গ. ছাড়া অবস্থায় : ঘরপ্রতি হাঁসের জন্য দেড় থেকে বর্গফুট হিসেবে = ৪৫ বর্গফুট দৈনিক গড় ডিম উত্পাদন ১৫টি = ৯০ টাকা (ডিম উত্পাদন ৫০% প্রতিটি ডিম টাকা) যদি কোনো খাবার খরচ না লাগে তবে মাসে লাভ ২৭০০ টাকা যদি অর্ধেক খাবার সরবরাহ করতে হয় তবে লাভ, (মাসে অর্ধেক খাবারের পরিমাণ = ৭৫ কেজি-১৩৫০ টাকা ( কেজি খাবারের মূল্য ১৮ টাকা) = ২৭০০-১৩৫০ = ১৩৫০ টাকা অর্থাত্ ১৩৫০ টাকা লাভ

হাঁস মাছের মিশ্র চাষ পদ্ধতি :
মাছের সঙ্গে হাঁসের চাষ একটি সমন্বিত খামার পদ্ধতি একে অন্যের সহায়ক পুকুরে মাছ হাঁস পালন পদ্ধতির সমন্বয় ঘটাতে পারলে সীমিত জায়গায় উত্পাদন বেশি পাওয়া যাবে চাষ পদ্ধতি সবার জানা থাকলে বাংলাদেশের অনেকেই দ্বিগুণ ফসল ফলাতে পারবেন অল্প জায়গায় মাছ হাঁস পালন পদ্ধতি অনেক উন্নত দেশে চালু আছে তাইওয়ান, হংকং, চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশে এর ব্যাপক প্রসার হয়েছে হাঁসকে পুকুরে জৈবসার উত্পাদনকারী মেশিন বলা যেতে পারে মাছ চাষের জন্য পুকুরে হাঁস পালন করলে খুব কম খরচে অনবরত জৈবসার ছড়ানো যায়

হাঁস মাছ চাষের প্রধান সুবিধাগুলো হলো :
. একটি হাঁস প্রতি মাসে - কেজি জৈবসার পুকুরে ছড়িয়ে দিতে পারে -৪টি হাঁসের জৈব সার থেকে কেজি বাড়তি মাছ উত্পন্ন হতে পারে
. হাঁস পুকুরের অবাঞ্ছিত আগাছা খেয়ে মাছ চাষে সাহায্য করে
. শামুক, ব্যাংগাচি, পোকা-মাকড় যা মাছের কোনো কাজে আসে না এমন জিনিস খেয়ে হাঁস ডিম উত্পাদন করে
. পুকুরে মাছ হাঁসের চাষ একসঙ্গে করে বছরে প্রতি হেক্টরে -১৫ টন (মাছ হাঁস) উত্পাদন বাড়ানো যেতে পারে

বাসস্থান :
হাঁসের ঘর পুকুরের উপর যে কোনো পাশে অথবা পুকুরের পাড়ে নির্মাণ করা যেতে পারে পুকুরের উপরে নির্মিত ঘরে হাঁসের বিষ্টা উচ্ছিষ্ট সরাসরি পানিতে পড়বে এবং মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হবে আর পুকুরের পাড়ে হাঁসের ঘর থাকলে ড্রেনের মাধ্যমে হাঁসের ময়লা পুকুরে দেয়া সহজ হবে।

5 comments:

Unknown said... Udyokta

ভাই আমি পুকুরে মনোসেক্স তেলাপিয়া ও হাঁস এক সাথে চাষ করতে চাই। হাঁস তেলাপিয়া মাছের কোন ক্ষতি করবে কি?

Badal said... Udyokta

ক্ষতি করবে না।

Anonymous said... Udyokta

আমি হাসের পালক কিনতে চাই। সাইজ- ২-৪ সেন্টিমিটার/ বা এক থেকে দেড় ইন্চি । পরিস্কার, শুকনো এবং ময়লা মুক্ত হতে হবে। চাহিদা: প্রতি মাসে ৬০০০/৭০০০ কেজি। যারা সরবরাহ করতে পারবেন তারা যোগাযোগ করুন। 01917746325.
Packing 50kg in PP woven bag.

Unknown said... Udyokta

যে কোন বয়সি হাস পাইকারী বিক্রয় করে থাকি । খামার করার সকল ধরনের সহযোগীতা পাবেন । হাসের খামার করার ইচ্চুক ব্যক্তিরা যোগাযোগ করবেন । ০১৭৩২৪৪২৭০৩

Unknown said... Udyokta

ফেইসবুকে এড করতে পারে হাস ক্রয়ের জন্য । hasaniqbalch2@gmail.com