সেচে জ্বালানি বিহীন ব্যাটারি বক্স পদ্ধতি আবিষ্কার করে চমক সৃষ্টি

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ছাড়া শুধু ব্যাটারির সাহায্যে সেচ পদ্ধতির আবিষ্কার করে চমক লাগিয়ে দিয়েছেন নজরুল ইসলাম। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আহম্মদপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম চারটি ব্যাটারি, একটি বৈদ্যুতিক মোটর এবং জেনারেটর দিয়ে আবিষ্কার করেছেন সেচ যন্ত্র। নজরুল এ সেচ যন্ত্রের নাম দিয়েছেন পাওয়ার বক্স। এ পাওয়ার বক্সে সাহায্যেই মাটির গভীর থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে পানি। সেই পানি ব্যবহার করা যাবে সেচ কাজ ছাড়াও সাংসারিক নানা কাজে।

নজরুল জানান, সেচ কাজ ছাড়াও এ পাওয়ার বক্স দিয়ে ফ্যান চালানো,টিভি দেখা,বাল্ব জ্বালানো ও অটোরিকশা চালানো যাবে। তবে এসব কাজে বাড়তি কোনো বিদ্যুৎ বা জ্বালানির প্রয়োজন হবে না। পাওয়ার বঙ্ চললেই এখানে ব্যবহৃত ব্যাটারিগুলো মোটর ও জেনারেটরের সাহায্যে অটোমেটিক চার্জ হবে। বিসি মোটর ঘুরলেই জেনারেটর বিদ্যুৎ তৈরি
করবে। ২৪ মে আবিষ্কার সম্পন্ন হওয়ার পরে যন্ত্রটি দিয়ে এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন ছাড়াও নানা কাজে সেটি ব্যবহার শুরু করেছেন। এখন এটি বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সাশ্রয়ে এটি বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলেও দাবি করেন তিনি।

উদ্ভাবক নজরুল ইসলাম জানান, তিনি শ্যালো মেশিন সাভির্সিং ও বৈদ্যুতিক নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত। এলাকায় তাকে মেকার নামে ডাকা হয়। এ মেকারি করতে করতে এরই মধ্যে তিনি নিজেই বিভিন্ন গাড়ির গিয়ার বঙ্ও তৈরি করেছেন। শেষে দীর্ঘ তিন বছর ধরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ছাড়াই পাওয়ার বক্স উদ্ভাবনের কাজে হাত দেন। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন প্রযুক্তির ওই পাওয়ার বক্স উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন তিনি। ওই পাওয়ার বঙ্রে মাধ্যমে এক দিকে পানি ওঠানো ছাড়াও বট্যারি চার্জ, ফ্যান চালানো, লাইট জ্বালানো, টিভি চালানোসহ দিনে ৮ থেকে ১০ বিঘা জমিতে সেচের কাজও করা যাচ্ছে। পাওয়ার বঙ্টি অটোরিকশায় ব্যবাহর করা হলে সেটি অটোরিকশা চালাতেও সাহায্য করবে। সেইসঙ্গে অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ করতেও কোনো বিদ্যুৎ লাগবে না। ব্যাটারিও দীর্ঘমেয়াদি হবে। এটি দ্বারা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পাশাপাশি সেচ কাজ ও বিভিন্ন কাজ খুব সহজেই করা যাবে। তিনি আরও জানান, তার এ পাওয়ার বক্স তৈরি করতে চারটি ১২ ভল্টের ব্যাটারি, একটি হাইস্পিড জেনারেটর, একটি মোটর, কিছু বৈদ্যুতিক তার, একটি লোহার সেফ ও বিয়ারিংয়ের ব্যবহার করতে হয়েছে। এগুলো দিয়ে তিনি নিজস্ব মেধাশক্তি দিয়ে উদ্ভাবন করেছেন পাওয়ার বঙ্। সব মিলিয়ে এটি তৈরি করতে তার ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার টাকা।

তবে বাণিজ্যিকভাবে এটি তৈরি করতে পারলে আরও খরচ কমে যাবে। সেইসঙ্গে এটির ব্যবহার বাড়ানো গেলে দেশের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে সেচ কাজে এবং অটোরিকশার জন্য ব্যবহৃত বিদ্যুতের বড় একটি চাহিদা পূরণ হবে এখান থেকে। তবে আর্থিক অনটনের কারণে তার একার পক্ষে এ যন্ত্রটি ব্যাপক হারে বাজারজাত করা সম্ভব নয় বলেও দাবি করেন তিনি। নজরুল ইসলাম একজন স্বশিক্ষিত হলেও নিজের মেধাশক্তি দিয়ে বৈদ্যুতিক এবং শ্যালো মেশিনের কাজের পাশাপাশি পাওয়ার বক্স উদ্ভাবন করেন, যা সত্যিই বিরল একটি ঘটনা। তার এ উদ্ভাবনী শক্তি দেখে এলাকার সাধারণ মানুষও বিস্মিত।


স্থানীয় মিলন হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, 'নজরুল ইসলামের শ্যালো মেশিনসহ বিদ্যুতের নানা কাজে দক্ষতা রয়েছে। এগুলো করেই সংসার চালান তিনি। এরই মধ্যে তিনি যে এত বড় একটি যন্ত্র আবিষ্কার করবেন, তা কল্পনাতীত। এটি বাণিজ্যিক হারে দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশেরই লাভ হবে বলেও জানান তিনি।'