কোয়েল পালন : কম জায়গায় অল্প খরচে বেশি আয়

গৃহপালিত পাখির মধ্যে ক্ষুদ্র প্রজাতি কোয়েল। এ পাখি পালনে কবুতরের মতো নির্দিষ্ট ঘর বা মুরগির মতো বড় আকারের খামারের প্রয়োজন নেই। কম জায়গায় অল্প খরচে বেশি আয় করা যায়। একটি মুরগি পালনের স্থানে ১০টি কোয়েল পালন করা যায়। তাই কোয়েল পালন বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পালনের জন্য সর্বাধিক উপযোগী। এই কারণে, বিভিন্ন হাঁস-মুরগির খামারেও ইদানীং কোয়েল পালন ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে। দেশের পুষ্টি মিটিয়ে ইদানীং কোয়েলের মাংস বিদেশে রফতানি হচ্ছে।
কোয়েলের মাংস ও ডিম খুবই সুস্বাদু। এদের মাংস ও ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমিষ, প্রোটিন ও স্নেহজাতীয় পদার্থ বিদ্যমান। বিশেষ করে, কোয়েলের একটি ক্ষুদ্র ডিমে যে পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে একটি বড় আকারের মুরগির ডিমেও প্রায় সেই পরিমাণ প্রোটিন আছে। অথচ দামের দিক থেকে একটি মুরগির ডিমের বিনিময়ে চারটি কোয়েলের ডিম কেনা যায়।
ইদানীং আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাঁস-মুরগির খামারের পাশাপাশি কোয়েলের খামার তৈরি হয়েছে। অনেকে হাঁস-মুরগির খামার না করেও শুধু কোয়েলের খামার করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এর মাংস এবং ডিম বিদেশে রফতানি করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
কোয়েল পালনে যেসব সুবিধা : সাধারণত একটি ভালো জাতের কোয়েল বছরে ২৫০ থেকে ৩০০টি ডিম দেয়। এই ডিমগুলোর প্রায় প্রতিটি থেকেই বাচ্চা পাওয়া যায়। এই বাচ্চা পরবর্তী ৬ থেকে ৭ সপ্তাহের মধ্যেই খাওয়া বা বিক্রির উপযোগী হয়। পাশাপাশি এই বয়সে তারা ডিম দেয়া শুরু করতে পারে। কম পুঁজিতে কোয়েলের খামার তৈরি করা যায়। কোয়েল পালন করতে বিশেষ কোনো জায়গা বা বিশেষ কোনো থাকার স্থান নির্বাচন করতে হয় না। কোয়েলের আকার ক্ষুদ্র বলে এদের লালন-পালনের জন্য বিস্তৃত জায়গা প্রয়োজন হয় না। ছোট আকারের একটি খাঁচাতেই কোয়েল পালন করা যায়। একটি প্রমাণ সাইজের মুরগির জন্য যে পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন হয়। সেই একই জায়গা কমপক্ষে ১২টি কোয়েল পালন করা যায়। রোগ-ব্যাধির দিক থেকে কোয়েল খুবই লাভজনক বিনিয়োগ। কারণ, কোয়েলের রোগ-ব্যাধি হয় না বললেই চলে। যেহেতু কোয়েলের রোগ-ব্যাধি কম হয় সুতরাং এদের জন্য বাড়তি চিকিত্সা ব্যবস্থার তেমন প্রয়োজন হয় না। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে একটি বাচ্চা কোয়েল ডিম দিয়ে থাকে। সাধারণত ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ বয়সেই একটি কোয়েল ডিম প্রদান করে থাকে। এদের ডিম খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। পুষ্টিমানের দিক থেকে মুরগির ডিমের সঙ্গে তা তুলনীয়। কোয়েলের জন্য বিশেষ কোনো খাবার সরবরাহ করতে হয় না। এদের খাদ্য চাহিদা কম অথচ শারীরিক বাড় খুব বেশি। এরা খুব দ্রুত বাড়তে পারে। দিনে ২০ থেকে ৩০ গ্রাম খাবার দিলেই এরা এদের শারীরিক ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারে।
কোয়েলের ডিম থেকে সর্বোচ্চ ২০ দিনের মধ্যেই বাচ্চা ফুটে বের হয়। এই বাচ্চা পরিণত কোয়েলে রূপান্তরিত হতে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ। কোয়েলের মাংসে চর্বির পরিমাণ খুব কম বলে যে কোনো রোগীর পথ্য হিসেবে কোয়েলের মাংস ব্যবহৃত হতে পারে। কোয়েলের ডিম পর্যাপ্ত পুষ্টির চাহিদাও মেটাতে পারে। এই কারণে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কোয়েল পালন অত্যন্ত লাভজনক পদ্ধতি।
কোয়েল পালনের স্থান : কোয়েলের থাকার জায়গা বা বাসস্থান কোয়েলের থাকার জন্য হাঁস-মুরগির মতো বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নিতে হয় না। তবে অন্য সব গৃহপালিত পশু-পাখির মতো তাদের বাসস্থান যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের মধ্যে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা বিশেষ প্রয়োজন।
লিটার বা খাঁচায় কোয়েল পালন করা সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত। একটি খাঁচার ওপর আরেকটি খাঁচা এভাবে মোটামুটিভাবে অল্প জায়গাতে অনেক খাঁচা স্থাপন করে কোয়েল পালন করা যায়। মোটামুটিভাবে ১৩০ থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, ৬০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার প্রস্থ এবং ২৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার উচ্চতাবিশিষ্ট একটি খাঁচায় কমপক্ষে ৬০ থেকে ১০০টি কোয়েল পালন করা যায়। তবে কোয়েলের খাঁচায় ব্যবহৃত জালের ফাঁকগুলো একটু ঘন হতে হবে। যাতে করে কোয়েলের মুখ বা গলা সেই ফাঁক দিয়ে বাইরে বেরিয়ে না আসে। সর্বোপরি বাচ্চা রাখার খাঁচাসহ পরিণত বয়সের কোয়েলের খাঁচাগুলোতে যেন ইঁদুর, ছুঁচো ইত্যাদি না ঢুকতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে খাঁচার ফাঁক তৈরি করতে হবে। কোয়েলের জন্য খাবার এবং পানির সুব্যবস্থা তার খাঁচাতেই রাখতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, পানি খাবার বা রাখার পাত্র উল্টে যেন কোয়েলের গা ভিজে না যায়। ঘরের যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে কোয়েলের খাঁচা রাখা যেতে পারে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে—বৃষ্টির পানি বা অন্য কোনো তরল পদার্থ দ্বারা যেন কোয়েলের খাঁচা ভিজে না যায়। ভেজা স্থান কোয়েলের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। খাবার পাত্র এবং পানি রাখার পাত্রগুলো মুরগির খামারের মতোই হবে—তবে সেগুলো আকারে ছোট হলেও অসুবিধা নেই।