ব্যাগের কারখানা যখন নিজের



একটা ঘর আর প্রশিক্ষিত কর্মচারী লাগবে। আরো লাগবে একটা সেলাই মেশিন যাকে সুইং মেশিন বলে। কাপড়ের ব্যাগের কাঁচামাল হল- কাপড়, সুতা, রিপিট, জিপার, ফিতা, ফাইভার, স্ক্রিন প্রিন্টের জন্য ডাইস আর রং। আর বাজারজাতকরণের ধারণাও থাকতে হবে। চায়না কাপড়, সুতা ও ফিতা পাওয়া যায় ইসলামপুরেচকবাজারে পাওয়া যায় ফাইবার ও রিপিট। স্ক্রিন প্রিন্টের ডাইস বানিয়ে নেয়া যাবে শাঁখারি বাজার থেকে। রং কিনতে পারেন নবাবপুর থেকে। বড় ব্যাগ ১০০টা বানাতে চায়না কাপড় লাগবে ৩৫ গজ। ছোট ব্যাগ হলে লাগবে ১৫ গজ। একগজ চায়না কাপড়ের দাম ২৪০ টাকা। ফিতা দিয়ে ব্যাগের বর্ডার লাগানো হয়। ১০০ ব্যাগের জন্য ফিতা লাগবে ছয়টা। প্রতিটি ফিতার দাম ৫২ টাকা। একটা ব্যাগে একটা করে জিপার লাগবে। ১০০ জিপারের দাম ৮০০ টাকা। ব্যাগের হাতল লাগাতে রিপিট লাগে। একটা ব্যাগে চারটি রিপিট লাগে। ১০০ ব্যাগে রিপিট লাগে ৪০০টি। দাম ২০০ টাকা। হাতলের ভেতরে ফাইবার দিতে হয়। এতে করে হাতল ধরতে সুবিধা হয়। ১০০ ব্যাগ বানাতে ফাইবার লাগে পাঁচ কেজি। ফাইবার ৬০ টাকা কেজি। দুই পিঠে স্ক্রিন প্রিন্টের ছাপ দিতে লাগে ১০ টাকা। একটা পুরনো সেলাই মেশিন কিনতে পারবে ২৫ হাজার টাকা। একটা রুম ভাড়ায় তিন হাজার টাকা। দক্ষতা অনুযায়ী কর্মচারীর বেতন নির্ধারণ করুন। ব্যবসা শুরু করার আগেই বিভিন্ন মার্কেটে কিংবা চকবাজারের পাইকারি দোকানের সঙ্গে চুক্তি করে নিলে ভালো হয়। তাহলে তাদের সুবিধামতো ব্যাগের সাইজ বানিয়ে দেয়া যাবে। ২৪৯ ইঞ্চি সাইজের একটি ব্যাগ তৈরিতে খরচ পড়বে ৫০-৬০ টাকা। বাজারে বিক্রি ৭০-৮০ টাকা। ২৮১৬ ইঞ্চি সাইজে তৈরি খরচ পড়বে ৯০-১০০ টাকা। বিক্রি ১১০-১৩০ টাকা। একজন কর্মচারী দিনে দুই ডজনের মতো ব্যাগ তৈরি করতে পারে। একজন কর্মচারীর বানানো ব্যাগে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা লাভ থাকে। কর্মচারী বাড়িয়ে ব্যবসার পরিধিও বাড়াতে পারেন। এতে করে খরচ কমে আসবে, লাভটাও বেশি হবে। যাত্রাবাড়ীতে আছে মোহাম্মদ শহীদুল্লার ব্যাগের কারখানা। দুইটি সুইং মেশিন আর দুইজন কর্মচারী নিয়ে কারখানা। বাজারজাতকরণের কাজটা নিজেই করেন। শহীদুল্লা বলেন, কারখানা করার মূল সমস্যা হচ্ছে কর্মচারী বেশি দিন থাকে না। কাজ শিখেই নিজে আলাদা কারখানা করে। তার ১৬ বছরের ব্যবসাজীবনে ১৬ জন কর্মচারী কাজ শিখে চলে গেছে। তারা সবাই এখন কারখানার মালিক। ব্যবসা করতে হলে বাজারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। কাঁচামাল কেনার সময়ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে, না হলে ঠকতে হবে। সব মিলিয়ে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারলে মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করা কোনো ব্যাপারই না। চায়না ব্যাগের চেয়ে আমাদের দেশের বানানো ব্যাগ বেশি টেকসই। দেশে তৈরি ব্যাগ দিয়েই বাজার ধরে রাখা সম্ভব।