পরিচ্ছেদঃ
৯৭। পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল হয় না
পরিচ্ছেদ
৯৬. উযুর বর্ণনা
আল্লাহ
তা‘আলার বাণীঃ (হে মুমিনগণ!) তোমরা যখন সলাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা
তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধুবে ও তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা গিরা
পর্যন্ত ধুয়ে নিবে। (৫ঃ ৬)।
আবূ
‘আবদুল্লাহ্ বুখারী (রহ.) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উযূর ফরয হ’ল এক-একবার ধোয়া। তিনি দু’-দু’বার করে এবং
তিন-তিনবার করেও উযূ করেছেন, কিন্তু তিনবারের অধিক ধৌত
করেন নি। পানির অপচয় করা এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ‘আমালের সীমা
অতিক্রম করাকে ‘উলামায়ে কিরাম মাকরূহ বলেছেন।
১৩৭।
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল-হানযালী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তির
হাদস হয় তাঁর সালাত (নামায/নামাজ) কবুল হবে না, যতক্ষন না সে উযূ
(ওজু/অজু/অযু) করে। হাযরা-মাওতের এক ব্যাক্তি বলেন, হে আবূ হুরায়রা! হাদস কী? তিনি বলেন, নিঃশব্দে বা সশব্দে বায়ু
বের হওয়া।
পরিচ্ছেদঃ ৯৮। উযূর ফযীলত এবং উযূর প্রভাবে যাদের উযুর
অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ উজ্জ্বল হবে
১৩৮।
ইয়াহিয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) .... নু‘আয়ম মুজমির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। তারপর তিনি
উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে বললেনঃ ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, উযূর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল থাকবে উজ্জ্বল। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ
উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।
পরিচ্ছেদঃ ৯৯। সন্দেহের কারনে উযূ করতে হয় না যতক্ষণ না
(উযূ ভঙ্গের) নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মে
১৩৯।
‘আলী (রহঃ) .... ‘আব্বাদ ইবনু তামীম (রহঃ) তাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক ব্যাক্তি
সম্পর্কে বলা হল যে, তার মনে হয়েছিল যেন সালাত
(নামায/নামাজ)-এর মধ্যে কিছু হয়ে গিয়েছিল। তিনি বললেনঃ সে যেন ফিরে না যায়, যতক্ষণ না শব্দ শোনে বা গন্ধ পায়।
পরিচ্ছেদঃ ১০০। হালকাভাবে উযূ করা
১৪০।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়েছিলেন, এমনকি তাঁর নিঃশ্বাসের শব্দ হতে লাগল। এরপর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায়
করলেন। সুফিয়ান (রহঃ) আবার কখনো বলেছেন, তিনি শুয়ে পড়লেন, এমনকি তাঁর নিঃশ্বাসের শব্দ হতে লাগল। এরপর তিনি সালাত আদায় করলেন।
অন্য
সূত্রে সুফিয়ান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ আমি এক রাতে আমার খালা মায়মূনা (রাঃ) এর কাছে রাত কাটালাম। রাতে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে উঠলেন এবং রাতের কিছু অংশ চলে যাবার
পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ঝুলন্ত মশক থেকে হাল্কা উযূ
(ওজু/অজু/অযু) করলেন। রাবী ‘আমর (রহঃ) বলেন, তখন তিনি যেভাবে উযূ
করেছেন আমিও সেভাবে উযূ করলাম এবং এসে তাঁর বাঁয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। সুফিয়ান (রহঃ)
কখনোيسار (বাম) শব্দের স্থলেشمال বলতেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে ঘুরিয়ে তাঁর ডান দিকে দাঁড় করালেন। এরপর আল্লাহর যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ তিনি
সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন, এমনকি তাঁর নাক ডাকতে থাকল।
এরপর
মুয়াযযিন এসে তাঁকে সালাতের কথা জানিয়ে দিলেন। তিনি তাঁর সঙ্গে সালাত এর জন্য
রওয়ানা হলেন এবং সালাত আদায় করলেন, কিন্তু উযূ করলেন না। আমরা
‘আমর–কে বললামঃ লোকে বলে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চোখ ঘুমায় কিন্তু তাঁর অন্তর ঘুমায় না। তখন ‘আমর (রহঃ) বলেন, ‘আমি উবায়দ ইবনু ‘উমায়র (রহঃ)–কে বলতে শুনেছি, নাবীগনের স্বপ্ন ওহী। এরপর
তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ (إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ) ‘আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে যবেহ করছি। (৩৭ : ১০২)
পরিচ্ছেদঃ ১০১। পূর্ণরূপে উযূ করা।
وَقَالَ ابْنُ عُمَرَ إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ الإِنْقَاءُ
ইবনে
উমর (রাঃ) বলেন, ভালভাবে পরিস্কার করাই হল
পূর্ণরূপে উযূ করা।
১৪১।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) .... উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরাফার ময়দান থেকে
রওয়ানা হলেন। গিরিপথে গিয়ে তিনি সওয়ারি থেকে নেমে পেশাব করলেন। এরপর উযূ
(ওজু/অজু/অযু) করলেন কিন্তু উত্তমরূপে করলেন না। আমি বললাম, ‘ইয়া রাসুল্লাল্লাহ! সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন কি?’ তিনি বললেনঃ সালাতের স্থান তোমার সামনে। তারপর তিনি আবার সওয়ার হলেন। এরপর
মুযদালিফায় এসে সওয়ারি থেকে নেমে উযূ করলেন। এবার পূর্ণরূপে উযূ করলেন। তখন
সালাতের জন্য ইকামাত দেওয়া হল। তিনি মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। তারপর সকলে তাঁদের
অবতরণ স্থলে নিজ নিজ উট বসিয়ে দিল। পুনরায় ঈশার ইকামাত দেওয়া হল। তিনি ঈশার সালাত
আদায় করলেন এবং উভয় সালাতের মধ্য অন্য কোন সালাত আদায় করলেন না।
পরিচ্ছেদঃ ১০২। এক আঁজলা পানি দিয়ে দু'হাতে
মুখমণ্ডল ধোয়া
১৪২।
মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুর রহীম (রহঃ) .... ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং তাঁর মুখমণ্ডল ধুলেন। এক আঁজলা পানি দিয়ে
কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। এরপর আর এক আঁজলা পানি দিয়ে এরূপ করলেন অর্থাৎ আরেক হাতের সাথে মিলিয়ে মুখমণ্ডল
ধুলেন। এরপর আর এক আঁজলা পানি দিয়ে ডান হাত ধুলেন। এরপর আর এক আঁজলা পানি দিয়ে বাম
হাত ধুলেন। এরপর মাথা মাসেহ করলেন। এরপর আর এক আঁজলা পানি দিয়ে ডান পায়ের উপর ঢেলে
দিয়ে তা ধুয়ে ফেললেন। এরপর আর এক আঁজলা পানি দিয়ে বাম পা ধুলেন। তারপর বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এভাবে উযূ করতে দেখেছি’।
পরিচ্ছেদঃ ১০৩। সর্বাবস্থায়, এমনকি সহবাসের সময়েও
বিসমিল্লাহ বলা
১৪৩।
আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ..... ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ তাঁর স্ত্রীর
সাথে মিলনের পূর্বে যদি বলে,بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا (আল্লাহর
নামে আরম্ভ করছি। আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং যা আমাদেরকে দান
করবে তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখ)- তারপর (এ মিলনের দ্বারা) তাদের কিসমতে কোন
সন্তান থাকলে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
পরিচ্ছেদঃ ১০৪। শৌচাগারে কি বলতে হয়?
১৪৪।
আদম (রহঃ) ..... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রকৃতির ডাকে শৌচাগারে যেতেন তখন
বলতেন,اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ (হে আল্লাহ! আমি মন্দ কাজ ও শয়তান থেকে আপনার
শরণ নিচ্ছি।)
ইবনু
‘আর’আরা (রহঃ) শু‘বা (রহঃ) সূত্রেও অনুরূপ বর্ণনা করেন। গুনদার (রহঃ) শু‘বা (রহঃ)
থেকে বর্ণনা করেন,إِذَا أَتَى الْخَلاَءَ (যখন
শৌচাগারে যেতেন)। মূসা (রহঃ) হাম্মাদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন,إِذَا دَخَلَ (যখন প্রবেশ করতেন)। সাঈদ
ইবন যায়দ (রহঃ) আবদুল আযীয (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, যখন প্রবেশ করার ইচ্ছা
করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১০৫। শৌচাগারের কাছে পানি রাখা
১৪৫।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) .... ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৌচাগারে গেলেন, তখন আমি তাঁর জন্য উযূর পানি রাখলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ এটা কে রেখেছে? তাঁকে জানানো হলে তিনি বলেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি তাকে
দ্বীনের জ্ঞান দান করুন।
পরিচ্ছেদঃ ১০৬। মল-মূত্র ত্যাগের সময় কিবলামুখি হবে না, তবে ঘরের মধ্যে দেয়াল অথবা তেমন কোন আড়াল থাকলে ভিন্ন কথা।
১৪৬।
আদম (রহঃ) .... আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন শৌচাগারে যায়, তখন সে যেন কিবলার দিকে
মুখ না করে এবং তার পিঠও না করে, বরং তোমরা পূর্ব দিক এবং
পশ্চিম দিকে ফিরে বসবে (এই নির্দেশ মদিনার বাসিন্দাদের জন্য)।
পরিচ্ছেদঃ ১০৭। দুই ইটের ওপর বসে মলমূত্র ত্যাগ করা
১৪৭।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকে বলে মল-মূত্র ত্যাগের
সময় কিবলার দিকে এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে বসবে না। ‘আবদুল্লাহ ইবনু
‘উমর (রাঃ) বলেন, ‘আমি একদিন আমাদের ঘরের
ছাদের উপর উঠলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখলাম
বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে দুটি ইটের উপর তাঁর প্রয়োজনে বসেছেন। তিনি [ওয়াসি
(রহঃ)-কে] বললেন, তুমি বোধ হয় তাদের মধ্যে
শামিল, যারা নিতম্বের ওপর ভর করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে।
আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি জানিনা। মালিক (রহঃ) বলেন, (নিতম্বের উপর ভর করার অর্থ হল) যারা সালাত আদায় করে এবং মাটি থেকে নিতম্ব না
তুলে সিজদা করে।
পরিচ্ছেদঃ ১০৮। মহিলাদের বাইরে যাওয়া
১৪৮।
ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ... ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নীগণ রাতের বেলায় প্রাকৃতিক
প্রয়োজনে খোলা ময়দানে যেতেন। আর ‘উমর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–কে
বলতেন, আপনার সহধর্মিণীগণকে পর্দায় রাখুন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করেননি। এক রাতে ঈশার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নী সাওদা বিনত যাম‘আ (রাঃ) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হলেন।
তিনি ছিলেন দীর্ঘকায়া। ‘উমর (রাঃ) তাঁকে ডেকে বললেন, হে সাওদা! আমি কিন্তু
আপনাকে চিনে ফেলেছি। পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার আগে তিনি এ কথা বলেছিলেন। তারপর
আল্লাহ তা‘আলা পর্দার হুকুম নাযিল করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১০৮। মহিলাদের বাইরে যাওয়া
১৪৯।
যাকারিয়্যা (রহঃ) ... ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের প্রয়োজনের জন্য
বের হবার অনুমতি দেয়া হয়েছে। হিশাম (রহঃ) বলেন, অর্থ প্রাকৃতিক প্রয়োজনে।
পরিচ্ছেদঃ ১০৯। ঘরে মলমূত্র ত্যাগ করা
১৫০।
ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) .... ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার বিশেষ এক প্রয়োজনে
হাফসা (রাঃ) এর ঘরের ছাদে উঠলাম। তখন দেখলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে পিঠ দিয়ে শাম-এর দিকে মুখ করে তাঁর প্রয়োজনে
বসেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১০৯। ঘরে মলমূত্র ত্যাগ করা
১৫১।
ইয়াকূব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) .... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদিন আমি আমাদের ঘরের উপর উঠলাম। আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'টি ইটের উপর বায়তুল
মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বসেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১১০। পানি দ্বারা ইসতিনজা করা
১৫২।
আবূল ওলীদ হিশাম ইবনু ‘আবদুল মালিক (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের
হতেন তখন আমি ও আরেকটি ছেলে পানির পাত্র নিয়ে আসতাম। অর্থাৎ তিনি তা দিয়ে ইসতিনজা করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১১১। পবিত্রতা হাসিলের জন্য কারো সাথে পানি নিয়ে
যাওয়া।
وَقَالَ أَبُو الدَّرْدَاءِ: أَلَيْسَ فِيكُمْ صَاحِبُ النَّعْلَيْنِ وَالطَّهُورِ وَالْوِسَادِ
আবুদ-দারদা
(রাঃ) বলেন, তোমাদের মধ্যে কি জুতা, পানি ও বালিশ বহনকারী
ব্যক্তি [আবদুল্লাহ ইবন মাস‘ঊদ (রা)] নেই?
১৫৩।
সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের
হতেন তখন আমি ও আরেকটি ছেলে তাঁর পিছনে পানির পাত্র নিয়ে যেতাম।
পরিচ্ছেদঃ ১১২। ইসতিনজার জন্য পানির সাথে (লৌহ ফলকযুক্ত)
লাঠি নিয়ে যাওয়া
১৫৪।
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শৌচাগারে যেতেন
তখন আমি ও আরেকটি ছেলে পানির পাত্র এবং 'আনাযা' নিয়ে যেতাম। তিনি পানি দ্বারা ইসতিনজা করতেন।
নাযর
(রহঃ) ও শাযান (রহঃ) শু‘বা (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। হাদীসে বর্ণিত (عَنَزَة) ‘আনাযা’
শব্দের অর্থ এমন লাঠি যার মাথায় লোহা লাগানো থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ১১৩। ডান হাতে ইসতিনজা করার নিষেধাজ্ঞা
১৫৫।
মু‘আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন পান করে, তখন সে যেন পাত্রের মধ্যে
নিঃশ্বাস না ছাড়ে। আর যখন শৌচাগারে যায় তখন তার পুরূষাঙ্গ যেন ডান হাত দিয়ে স্পর্শ
না করে এবং ডান হাতে ইসতিনজা না করে।
পরিচ্ছেদঃ ১১৪। প্রস্রাব করার সময় ডান হাত দিয়ে পুরূষাঙ্গ
ধরবে না
১৫৬।
মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন পেশাব করে তখন সে যেন কখনো ডান হাত দিয়ে তার
পুরূষাঙ্গ না ধরে এবং ডান হাত দিয়ে ইসতিনজা না করে এবং পান করার সময় যেন পাত্রের
মধ্যে নিঃশ্বাস না ফেলে।
পরিচ্ছেদঃ ১১৫। পাথর দিয়ে ইসতিনজা করা
১৫৭।
আহমদ ইবনু মুহাম্মদ আল-মক্কী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হলে
আমি তাঁর অনুসরণ করলাম। আর তিনি এদিক ওদিক তাকাতেন না। যখন আমি তাঁর নিকটবর্তী
হলাম তখন তিনি আমাকে বললেন, আমাকে কিছু পাথর কুড়িয়ে
দাও, আমি তা দিয়ে ইসতিনজা করব। (বর্ণনাকারী বলেন), বা এ ধরনের কোন কথা বললেন, আর আমার জন্য হাড় বা গোবর
আনবে না। তখন আমি আমার কাপড়ের কোচায় করে কয়েকটি পাথর এনে তাঁর পাশে রাখলাম এবং আমি
তাঁর থেকে সরে গেলাম। তিনি প্রয়োজন শেষে সেগুলো ব্যবহার করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১১৬। গোবর দিয়ে ইসতিনজা না করা
১৫৮।
আবূ নু‘আয়ম (রহঃ) ... ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একবার শৌচ কাজে যাবার সময় তিনটি পাথর কুড়িয়ে
দিতে আমাকে আদেশ দিলেন। তখন আমি দু’টি পাথর পেলাম এবং তৃতীয়টির জন্য খোঁজাখুঁজি
করলাম কিন্তু পেলাম না। তাই একখণ্ড শুকনো গোবর নিয়ে তাঁর কাছে গেলাম। তিনি পাথর
দু’টি নিলেন এবং গোবর খণ্ড ফেলে দিয়ে বললেন, এটা নোংরা।
ইবরাহীম
ইবন ইউসুফ (রহঃ), তার পিতা, আবূ ইসহাক (রহঃ), আবদূর রহমান (রহঃ) এর
সূত্রে হাদীসখানা বর্ণনা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১১৭। উযূতে একবার করে ধোয়া
১৫৯।
মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক উযূ (ওজু/অজু/অযু)-তে
একবার করে ধুয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১১৮। উযূতে দু’বার করে ধোয়া
১৬০।
হুসায়ন ইবনু ‘ঈসা (রহঃ) ... ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উযূ (ওজু/অজু/অযু)-তে দু’বার
করে ধুয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১১৯। উযূতে তিনবার করে ধোয়া
১৬১।
আবদুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল-উওয়ায়সী (রহঃ) ... হুমরান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি ‘উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-কে দেখেছেন যে, তিনি পানির পাত্র আনিয়ে
উভয় হাতের তালুতে তিনবার ঢেলে তা ধুয়ে নিলেন। এরপর ডান হাত পাত্রের মধ্যে ঢুকালেন।
তারপর কুলি করলেন ও নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলেন। তারপর তাঁর মুখমণ্ডল
তিনবার ধুয়ে এবং দু’হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুয়ে নিলেন। এরপর মাথা মাসেহ করলেন।
তারপর উভয় পা গিরা পর্যন্ত তিনবার ধুয়ে নিলেন। পরে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমার মত এ
রকম উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে, তারপর দু রাক‘আত সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করবে, যাতে দুনিয়ার কোন খেয়াল করবে
না, তার পেছনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
ইবরাহীম
(রহঃ) ... ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উরওয়া হুমরান থেকে বর্ণনা করেন, ‘উসমান (রাঃ) উযূ
(ওজু/অজু/অযু) করে বললেন, আমি তোমাদেরকে একটি হাদীস
বর্ণনা করব। যদি একটি আয়াতে কারীমা না হত, তবে আমি তোমাদেরকে এ হাদীস
বর্ণনা করতাম না। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–কে বলতে শুনেছি, যে কোন ব্যাক্তি সুন্দর করে উযূ করবে এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে, পরের সালাত আদায় করা পর্যন্ত তার মধ্যবর্তী যত গুনাহ আছে সব মাফ করে দেওয়া
হবে। ‘উরওয়া (রহঃ) বলেন, সে আয়াতটি হলঃ
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ
আমি
যে সব স্পষ্ট নিদর্শন অবতীর্ণ করেছি তা যারা গোপন করে (২ : ১৫৯)
পরিচ্ছেদঃ ১২০। উযূর মধ্যে নাকে পানি দেয়ে নাক পরিষ্কার করা
‘উসমান (রা), আবদুল্লাহ ইবন যায়দ (রা) ও ইবন ‘আব্বাস (রা) নবী থেকে এ কথা
বর্ণনা করেছেনঃ
১৬২।
আবদান (রহঃ) ...... আবূ ইদরিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ)–কে বলতে শুনেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যাক্তি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে সে যেন নাকে পানি দিয়ে
নাক পরিষ্কার করে। আর যে ইসতিনজা করে সে যেন বেজোড় সংখ্যক ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করে।
পরিচ্ছেদঃ ১২১। (ইসতিনজার জন্য) বেজোড় সংখ্যক ঢিলা-কুলুখ
ব্যবহার করা
১৬৩।
‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন
উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে তখন সে যেন নাকে পানি দেয়, এরপর যেন ঝেড়ে নেয়। আর যে
ইসতিনজা করে সে যেন বেজোড় সংখ্যক ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করে। আর তোমাদের কেউ যখন ঘুম
থেকে জাগে তখন সে যেন উযূর পানিতে হাত ঢুকানোর আগে তা ধুয়ে নেয়; কারণ তোমাদের কেউ জাননা যে, ঘুমন্ত অবস্থায় তার হাত
কোথায় থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ১২২। দু’পা ধোয়া এবং মাসেহ না করা
১৬৪।
মূসা (রহঃ) .... ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে আমাদের পিছনে রয়ে গিয়েছিলেন, এরপর তিনি আমাদের কাছে পৌঁছে গেলেন। তখন আমরা আসরের সালাত (নামায/নামাজ) শুরু
করতে দেরী করে ফেলেছিলাম। তাই আমরা উযূ (ওজু/অজু/অযু) করছিলাম এবং (তাড়াতাড়ির
কারনে) আমাদের পা মাসেহ করার মত হালকা ভাবে ধুয়ে নিচ্ছিলাম। তখন তিনি উচ্চস্বরে
বললেনঃ 'পায়ের
গোড়ালির জন্য জাহান্নামের আযাব রয়েছে'। দুবার অথবা তিনবার তিনি একথা বললেন।
পরিচ্ছেদঃ ১২৩। উযূতে কুলি করা।
قَالَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ زَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
ইবন
‘আব্বাস (রাঃ) ও ‘আবদুল্লাহ ইবন যায়দ (রাঃ) নবী থেকে তা বর্ণনা করেছেন।
১৬৫।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ..... ‘উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম হুমরান
(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি ‘উসমান (রাঃ)-কে উযূর পানি আনাতে দেখলেন। তারপর তিনি সে
পাত্র থেকে উভয় হাতের উপর পানি ঢেলে তা তিনবার ধুয়ে ফেললেন। এরপর তাঁর ডান হাত
পানিতে ঢুকালেন। এরপর কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিয়ে নাক ঝেড়ে ফেললেন। এরপর তাঁর
মুখমণ্ডল তিনবার এবং উভয় হাত কুনই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন, এরপর মাথা মাসেহ করলেন। এরপর প্রত্যেক পা তিনবার ধোয়ার পর বললেনঃ আমি রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার এ উযূর ন্যায় উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে
দেখেছি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমার এ উযূর
ন্যায় উযূ করে দু’ রাক‘আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং তার মধ্য কোন বাজে
খেয়াল মনে আনবে না, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অতীতের
সব গুনাহ মাফ করে দিবেন।
পরিচ্ছেদঃ ১২৪। পায়ের গোড়ালী ধোয়া।
وَكَانَ ابْنُ سِيرِينَ يَغْسِلُ مَوْضِعَ الْخَاتَمِ إِذَا تَوَضَّأَ
ইবনে
সীরীন (রহঃ) উযূ করার সময় তাঁর আংটির জায়গা ধুতেন।
১৬৬।
আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) .... মুহাম্মদ ইবনু যিয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকেরা সে সময় পাত্র থেকে উযূ
(ওজু/অজু/অযু) করছিল। তখন তাঁকে বলতে শুনেছি, তোমরা উত্তমরূপে উযূ কর।
কারন আবূলকাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পায়ের গোড়ালীগুলোর জন্য
জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১২৫। চপ্পল পরা অবস্থায় উভয় পা ধোয়া কিন্তু
চপ্পলের উপর মাসেহ না করা
১৬৭। আবদুল ইবনু ইউসুফ
(রহঃ) .... ‘উবায়দ ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর
(রাঃ)-কে বললেন, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমি
আপনাকে এমন চারটি কাজ করতে দেখি, যা আপনার অন্য কোন সঙ্গীকে
করতে দেখিনা। তিনি বললেন, ‘ইবনু জুরায়জ, সেগুলো কি?’ তিনি বললেন, আমি দেখি, (১) আপনি তাওয়াফ করার সময় রুকনে ইয়ামানী দু'টি
ব্যতীত অন্য রুকন স্পর্শ করেন না। (২) আপনি ‘সিবতী’ (পশমবিহীন) চপ্পল পরিধান করেন; (৩) আপনি (কাপড়ে) হলুদ রং ব্যবহার করেন এবং (৪) আপনি যখন মক্কায় থাকেন লোকে
চাঁদ দেখে ইহরাম বাঁধে; কিন্তু আপনি তারবিয়ার দিন
(৮ ই যিলহাজ্জ) না এলে ইহরাম বাঁধেন না।
‘আবদুল্লাহ
(রাঃ) বললেনঃ রুকনের কথা যা বলেছ, তা এজন্য করি যে আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইয়ামানী রুকনদ্বয় ছাড়া আর কোনটি
স্পর্শ করতে দেখিনি। আর ‘সিবতী’ চপ্পল, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পশমবিহীন চপ্পল পরতে এবং তা পরিহিত অবস্থায় উযূ
(ওজু/অজু/অযু) করতে দেখেছি, তাই আমি তা করতে ভালবাসি।
আর হলুদ রং, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা দিয়ে
কাপড় রঙিন করতে দেখেছি, তাই আমিও তা দিয়ে রঙিন
করতে ভালবাসি। আর ইহরাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিয়ে তাঁর সওয়ারি রওনা না হওয়া পর্যন্ত আমি তাঁকে ইহরাম
বাঁধতে দেখিনি।
পরিচ্ছেদঃ ১২৬। উযূ এবং গোসলে ডান দিক থেকে শুরু করা
১৬৮। মূসা’দ্দাদ (রহঃ)
.... উম্মু আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যা [যয়নাব (রাঃ)]-কে গোসল করানোর সময় তাঁদের বলেছিলেনঃ তোমরা
তার ডানদিক এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু) এর স্থান থেকে শুরু কর।
পরিচ্ছেদঃ ১২৬। উযূ এবং গোসলে ডান দিক থেকে শুরু করা
১৬৯। হাফস ইবনু ‘উমর (রহঃ)
.... ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জুতা পরা, চুল আঁচড়ানো এবং পবিত্রতা
অর্জন করা তথা প্রত্যেক কাজই ডান দিক থেকে শুরু করতে ভালবাসতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১২৭। সালাতের সময় নিকটবর্তি বলে উযূর পানি তালাশ
করা।
وَقَالَتْ عَائِشَةُ حَضَرَتِ الصُّبْحُ فَالْتُمِسَ الْمَاءُ، فَلَمْ يُوجَدْ، فَنَزَلَ التَّيَمُّمُ
‘আয়িশা (রা) বলেনঃ একবার ফজরের সময় হল, তখন পানি তালাশ করা হল; কিন্তু কোথাও পাওয়া গেল
না। তখন তায়াম্মুম (এর আয়াত) নাযিল হল।
১৭০।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ..... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখলাম, তখন আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হয়ে গিয়েছিল। আর লোকজন উযূর পানি তালাশ
করতে লাগল কিন্তু পােল না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
কাছে কিছু পানি আনা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে পাত্রে
তাঁর হাত রাখলেন এবং লোকজনকে সে পাত্র থেকে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে বললেন। আনাস
(রাঃ) বলেন, সে সময় আমি দেখলাম, তাঁর আঙ্গুলের নীচ থেকে
পানি উথলে উঠছে। এমনকি তাঁদের শেষ ব্যাক্তি পর্যন্ত তা দেয়ে উযূ করল।
পরিচ্ছেদঃ ১২৮। যে পানি দেয়ে মানুষের চুল ধোয়া হয়।
وَكَانَ عَطَاءٌ لاَ يَرَى بِهِ بَأْسًا أَنْ يُتَّخَذَ مِنْهَا الْخُيُوطُ وَالْحِبَالُ، وَسُؤْرِ الْكِلاَبِ وَمَمَرِّهَا فِي الْمَسْجِدِ. وَقَالَ الزُّهْرِيُّ إِذَا وَلَغَ فِي إِنَاءٍ لَيْسَ لَهُ وَضُوءٌ غَيْرُهُ يَتَوَضَّأُ بِهِ. وَقَالَ سُفْيَانُ هَذَا الْفِقْهُ بِعَيْنِهِ، يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: (فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا) وَهَذَا مَاءٌ، وَفِي النَّفْسِ مِنْهُ شَيْءٌ، يَتَوَضَّأُ بِهِ وَيَتَيَمَّمُ
‘আতা (রহঃ) চুল দিয়ে সুতা এবং রশি প্রস্তুত
করায় কোন দোষ মনে করতেন না-
কুকুরের
ঝুটা এবং মসজিদের ভিতর দিয়ে কুকুরের যাতায়াত।
যুহরী
(রহঃ) বলেন, কুকুর যখন কোন পানির পাত্রে মুখ দেয় এবং সে পানি ছাড়া উযূ
করার মত অন্য কোন পানি না থাকে, তবে তা দিয়েই উযূ করবে।
সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, হুবহু এ মাসআলাটি বিবৃত
হয়েছে আল্লহ তা‘আলার এ বাণীতেঃ (فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا) “তারপর তোমরা যদি পানি না পাও তবে পাবিত্র
মাটি দিয়ে তায়াম্মুম কর।” আর এ তো পানিই। কিন্তু অন্তরে যেহেতু কিছু সন্দেহ রয়েছে
তাই তা দিয়ে উযূ করবে, পরে তায়াম্মুমও করবে।
১৭১।
মালিক ইবনু ইসমা‘ঈল (রহঃ) .... ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি আবীদা (রহঃ)-কে বললাম, আমাদের কাছে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কেশ রয়েছে যা আমরা আনাস (রাঃ) এর কাছ থেকে
কিংবা আনাস (রাঃ) এর পরিবারের কাছ থেকে পেয়েছি। তিনি বললেন, তাঁর একটি কেশ আমার কাছে থাকাটা দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তা
পাওয়ার চাইতে বেশী পছন্দনীয়।
পরিচ্ছেদঃ ১২৮। যে পানি দেয়ে মানুষের চুল ধোয়া হয়।
১৭২। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুর
রহীম (রহঃ) .... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মাথা মুড়িয়ে ফেললে আবূ তালহা (রাঃ)-ই প্রথম তাঁর কেশ
সংগ্রহ করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১২৯। কুকুর যদি পাত্র থেকে পানি পান করে
১৭৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ
(রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো পাত্রে যদি
কুকুর পান করে তবে তা সাতবার ধুইবে।
পরিচ্ছেদঃ ১২৯। কুকুর যদি পাত্র থেকে পানি পান করে
১৭৪। ইসহাক (রহঃ) .....
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (পূর্ব যুগে) এক ব্যাক্তি
একটি কুকুরকে পিপাসার তাড়নায় ভিজা মাটি চাটতে দেখতে পেল। তখন সে ব্যাক্তি তাঁর
মোজা নিল এবং কুকুরটির জন্য কুয়া থেকে পানি এনে দিতে লাগল। এভাবে সে ওর তৃষ্ণা
মিটাল। আল্লাহ এর বিনিময় দিলেন এবং তাকে জান্নাতে দাখিল করলেন।
আহমদ ইবনু শাবীব (রহঃ)
.... ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর যামানায় কুকুর মসজিদের ভিতর দিয়ে আসা-যাওয়া করত অথচ এজন্য তাঁরা
কোথাও পানি ছিটিয়ে দিতেন না।
পরিচ্ছেদঃ ১২৯। কুকুর যদি পাত্র থেকে পানি পান করে
১৭৫। হাফস ইবনু উমর (রহঃ)
.... আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত
কুকুর সম্পর্কে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, তুমি যখন তোমার
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর শিকার করতে ছেড়ে দাও, তখন সে হত্যা করলে তা তুমি
খেতে পার। আর সে তার কিছু অংশ খেয়ে ফেললে তুমি তা খাবে না। কারণ সে তা নিজের জন্যই
ধরেছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কখনো কখনো আমি আমার কুকুর
(শিকারে) পাঠিয়ে দেই, এরপর তার সাথে অন্য এক
কুকুরও দেখতে পাই (এমতাবস্থায় শিকারকৃত প্রানীর কি হুকুম)? তিনি বললেন, তাহলে খেও না। কারন তুমি
বিসমিল্লাহ বলেছ কেবল তোমার কুকুরের বেলায়, অন্য কুকুরের বেলায়
বিসমিল্লাহ বলনি।
পরিচ্ছেদঃ ১৩০। সম্মুখ এবং পেছনের রাস্তা দিয়ে কিছু নির্গত
হওয়া ছাড়া অন্য কারণে যিনি উযূর প্রয়োজন মনে করেন না
وَقَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: (أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ) وَقَالَ عَطَاءٌ فِيمَنْ يَخْرُجُ مِنْ دُبُرِهِ الدُّودُ أَوْ مِنْ ذَكَرِهِ نَحْوُ الْقَمْلَةِ يُعِيدُ الْوُضُوءَ. وَقَالَ جَابِرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ إِذَا ضَحِكَ فِي الصَّلاَةِ أَعَادَ الصَّلاَةَ، وَلَمْ يُعِدِ الْوُضُوءَ. وَقَالَ الْحَسَنُ إِنْ أَخَذَ مِنْ شَعَرِهِ وَأَظْفَارِهِ أَوْ خَلَعَ خُفَّيْهِ فَلاَ وُضُوءَ عَلَيْهِ. وَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ لاَ وُضُوءَ إِلاَّ مِنْ حَدَثٍ. وَيُذْكَرُ عَنْ جَابِرٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ فِي غَزْوَةِ ذَاتِ الرِّقَاعِ فَرُمِيَ رَجُلٌ بِسَهْمٍ، فَنَزَفَهُ الدَّمُ فَرَكَعَ وَسَجَدَ، وَمَضَى فِي صَلاَتِهِ. وَقَالَ الْحَسَنُ مَا زَالَ الْمُسْلِمُونَ يُصَلُّونَ فِي جِرَاحَاتِهِمْ. وَقَالَ طَاوُسٌ وَمُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ وَعَطَاءٌ وَأَهْلُ الْحِجَازِ لَيْسَ فِي الدَّمِ وُضُوءٌ. وَعَصَرَ ابْنُ عُمَرَ بَثْرَةً فَخَرَجَ مِنْهَا الدَّمُ، وَلَمْ يَتَوَضَّأْ. وَبَزَقَ ابْنُ أَبِي أَوْفَى دَمًا فَمَضَى فِي صَلاَتِهِ. وَقَالَ ابْنُ عُمَرَ وَالْحَسَنُ فِيمَنْ يَحْتَجِمُ لَيْسَ عَلَيْهِ إِلاَّ غَسْلُ مَحَاجِمِهِ
আল্লাহ
তা‘আলার এ বাণীর কারণেঃ (أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ) “অথবা তোমাদের কেউ শৌচ স্থান থেকে আসে (৮ঃ
৪৩)।
‘আতা (রহঃ) বলেন, যার পেছনের রাস্থা দিয়ে পোকা বের হয় অথবা যার পুরুষাঙ্গ দিয়ে উকুনের ন্যায়
কিছু বের হয়, তার পুনরায় উযূ করতে হবে।
জাবির
ইবন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, কেউ সালাতের মধ্যে হেসে
ফেললে কেবল সালাতই দোহরাবে, পুনরায় উযূ করবে না। হাসান
(রহঃ) বলেন, কেউ যদি চুল অথবা নখ কাটে অথবা তার মোজা খুলে ফেলে তবে তার
পুনরায় উযূ করতে হবে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
‘হাদাস’ ছাড়া আর কিছুতে
উযূর প্রয়োজন নেই। জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ‘যাতুর রিকা’ এর যুদ্ধে ছিলেন। সেখানে এক ব্যক্তি তীরবিদ্ধ হলেন এবং
ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটল, কিন্তু তিনি (সে অবস্থায়ই)
রুকু করলেন, সিজদা করলেন এবং সালাত আদায় করতে থাকলেন।
হাসান
(রহঃ) বলেন, মুসলিমগণ সব সময়েই তাঁদের যখম অবস্থায় সালাত আদায় করতেন এবং
তাঊস (রহঃ), মুহাম্মদ ইবন ‘আলী (রহঃ),
‘আতা (রহঃ) ও হিজাযবাসীগণ
বলেন, রক্তক্ষরণে উযূ করতে হয় না। ইবন ‘উমর (রাঃ) একবার একটি ছোট
ফোঁড়া টিপ দিলেন, তা থেকে রক্ত বের হল, কিন্তু তিনি উযূ করলেন না। ইবন আবূ আওফা (রাঃ) রক্ত মিশ্রিত থুথু ফেললেন
কিন্তু তিনি সালাত আদায় করতে থাকলেন। ইবন ‘উমর (রাঃ) ও হাসান (রহঃ) বলেন, কেউ শিঙ্গা লাগালে কেবল তার শিঙ্গা লাগানোর স্থানই ধোয়া প্রয়োজন।
১৭৬।
আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দা যে সময়টা মসজিদে থেকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর অপেক্ষায় থাকে, তার সে পুরো সময়টাই সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে গণ্য হয় যতক্ষণ না সে হাদাস
করে। এক অনারব ব্যাক্তি বলল, ‘হাদাস কি, আবূ হুরায়রা’? তিনি বললেন, শব্দ করে বায়ূ বের হওয়া।
পরিচ্ছেদঃ ১৩০। সম্মুখ এবং পেছনের রাস্তা দিয়ে কিছু নির্গত
হওয়া ছাড়া অন্য কারণে যিনি উযূর প্রয়োজন মনে করেন না
১৭৭। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ)
..... ‘আব্বাস ইবনু তামীম (রহঃ), তাঁর চাচার সূত্রে বর্ণনা
করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (কোন মুসল্লি)
সালাত (নামায/নামাজ) থেকে ফিরবে না যতক্ষণ না সে শব্দ শুনে বা গন্ধ পায়।
পরিচ্ছেদঃ ১৩০। সম্মুখ এবং পেছনের রাস্তা দিয়ে কিছু নির্গত
হওয়া ছাড়া অন্য কারণে যিনি উযূর প্রয়োজন মনে করেন না
১৭৮। কুতায়বা (রহঃ) ....
মুহাম্মদ ইবনুল হানফিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) বলেছেন, আমার বেশী বেশী মযী বের
হতো। কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করছিলাম। তাই আমি মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ)-কে অনুরোধ করলাম, তিনি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি
তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেনঃ এতে শুধু উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে হয়।
হাদিসটি শু‘বা (রহঃ) আ‘মাশ
(রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৩০। সম্মুখ এবং পেছনের রাস্তা দিয়ে কিছু নির্গত
হওয়া ছাড়া অন্য কারণে যিনি উযূর প্রয়োজন মনে করেন না
১৭৯। সা‘দ ইবনু হাফস (রহঃ)
.... যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, তিনি ‘উসমান ইবনু ‘আফফান
(রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন ,কেউ
যদি স্ত্রী সহবাস করে, কিন্তু মনী (বীর্য) বের না
হয় (তবে তার হুকুম কি?) উসমান (রাঃ) বললেনঃ সে উযূ
(ওজু/অজু/অযু) করে নেবে যেমন উযূ করে থাকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য এবং তার
লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি একথা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। (যায়দ বলেন) তারপর আমি এ সম্পর্কে
‘আলী (রাঃ), যুবায়র (রাঃ), তালহা (রাঃ) ও উবাই ইবনু
কা‘ব (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেছি। তাঁরা আমাকে এ নির্দেশই দিয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৩০। সম্মুখ এবং পেছনের রাস্তা দিয়ে কিছু নির্গত
হওয়া ছাড়া অন্য কারণে যিনি উযূর প্রয়োজন মনে করেন না
১৮০। ইসহাক ইবনু মনসূর
(রহঃ) .... আবূ সা‘য়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারীর কাছে লোক পাঠালেন।
তিনি চলে এলেন। তখন তাঁর মাথা থেকে পানির ফোঁটা পড়ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সম্ভবত আমরা তোমাকে তাড়াতাড়ি করতে বাধ্য করেছি। তিনি বললেন, জী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন ত্বরার কারণে মনী বের না হয় (অথবা বললেন), মনীর অভাবজনিত কারণে তা
বের না হয় তবে তোমার উপর কেবল উযূ (ওজু/অজু/অযু) করা জরুরী।
ওয়াহব (রহঃ) শু‘বা (রহঃ)
সূত্রে এ রকমই বর্ণনা করেন। তিনি [শুবা (রহঃ)] বলেন, আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ)
বলেছেন, গুনদর (রহঃ) ও ইয়াহইয়া (রহঃ) শু‘বা (রহঃ) এর সূত্রে বর্ণনায়
উযূর কথা উল্লেখ করেন নি।
পরিচ্ছেদঃ ১৩১। শ্রদ্ধেয় জনকে কোন ব্যক্তির উযূ করিয়ে দেওয়া
১৮১। ইবনু সালাম (রহঃ)
.... উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আরাফাত থেকে ফিরছিলেন, তখন তিনি একটি গিরিপথের
দিকে গিয়ে তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে এলেন। উসামা (রাঃ) বলেন, পরে আমি তাঁকে পানি ঢেলে দিচ্ছিলাম আর তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করছিলেন। এরপর
আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন? তিনি বললেন, সালাত (নামায/নামাজ)-এর
স্থান তোমার সামনে।
পরিচ্ছেদঃ ১৩১। শ্রদ্ধেয় জনকে কোন ব্যক্তির উযূ করিয়ে দেওয়া
১৮২। আমর ইবনু ‘আলী (রহঃ)
.... মুগীরা ইবনু শু‘বা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, তিনি এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলেন। এক
সময় তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে গেলেন। (প্রয়োজন সেরে আসার পর) মুগীরা তাঁকে
পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন এবং তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করছিলেন। তিনি তাঁর মুখমণ্ডল এবং
দু হাত ধুলেন এবং তাঁর মাথা মাসেহ করলেন ও উভয় মোজার উপর মাসেহ করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৩২। বিনা উযূতে কুরআন প্রভৃতি পাঠ করা।
وَقَالَ مَنْصُورٌ عَنْ إِبْرَاهِيمَ لاَ بَأْسَ بِالْقِرَاءَةِ فِي الْحَمَّامِ، وَبِكَتْبِ الرِّسَالَةِ عَلَى غَيْرِ وُضُوءٍ. وَقَالَ حَمَّادٌ عَنْ إِبْرَاهِيمَ إِنْ كَانَ عَلَيْهِمْ إِزَارٌ فَسَلِّمْ، وَإِلاَّ فَلاَ تُسَلِّمْ
মনসূর
(রহঃ) ... ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, হাম্মামখানায় (কুরআন) পাঠ
করা এবং বিনা উযূতে পত্র লেখায় কোন দোষ নেই। হাম্মাদ (রহঃ) ইবরাহীম (রহঃ) থেকে
বর্ণনা করেন, হাম্মামখানার লোকদের পরনে ইযার (লুঙ্গি বা পায়জামা) থাকলে
সালাম দিও নতুবা সালাম দিও না।
১৮৩।
ইসমাইল (রহঃ) .... ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি একবার নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী মায়মূনা (রাঃ) এর ঘরে রাত কাটান। তিনি
ছিলেন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর খালা। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ এরপর আমি বিছানার
চওড়া দিকে শয়ন করলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর
স্ত্রী বিছানার লম্বা দিকে শয়ন করলেন; এরপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনিভাবে রাত যখন অর্ধেক হয়ে গেল
তার কিছু পূর্বে কিংবা কিছু পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে
উঠলেন। তিনি বসে হাত দিয়ে তাঁর মুখমণ্ডল থেকে ঘুমের আবেশ মুছতে লাগলেন। তারপর সূরা
আলে-‘ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করলেন।
এরপর
দাঁড়িয়ে একটি ঝুলন্ত মশক থেকে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তিনি সুন্দরভাবে উযূ
করলেন। তারপর সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমিও উঠে তিনি যেরূপ করেছিলেন তদ্রুপ করলাম। তারপর গিয়ে তাঁর বাঁ পাশে
দাঁড়ালাম। তিনি তাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং আমার ডান কান ধরে একটু
নাড়া দিলেন (এবং তাঁর), ডান পাশে এনে দাঁড় করালেন।
তারপর তিনি দু রাক‘আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর দু রাক‘আত, তারপর দু রাক‘আত, দু রাক‘আত, তারপর দু রাক‘আত, তারপর দু রাক‘আত, তারপর বিতর আদায় করলেন। তারপর শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর কাছে মুয়াযযিন
এলেন। এরপর তিনি দাঁড়িয়ে হাল্কাভাবে দু রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। তারপর বেরিয়ে
গিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৩৩। পূর্ণ বেহুশী ছাড়া উযূ না করা
১৮৪। ইসমাইল (রহঃ) .....
আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি একবার নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) এর কাছে এলাম। তখন সুর্য
গ্রহণ লেগেছিল। দেখলাম সব মানুষ দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছে এবং ‘আয়িশা
(রাঃ)-ও দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম লোকদের কী
হয়েছে? তিনি তাঁর হাত দিয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ্’! আমি বললাম এটা কি কোন আলামত? তিনি ইশারা করে বললেন, ‘হ্যাঁ’। এরপর আমিও সালাতে দাঁড়িয়ে গেলাম। এমনকি আমাকে সংজ্ঞাহীনতায় আচ্ছন্ন
করে ফেলল এবং আমি আমার মাথায় পানি দিতে লাগলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম (মুসল্লিদের দিকে) ফিরে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করে বললেন, “যেসব জিনিস আমি ইতিপূর্বে দেখিনি সেসব আমি আমার এই স্থানে আমি দেখতে পেয়েছি, এমনকি জান্নাত এবং জাহান্নামও।
আর আমার কাছে ওহী পাঠানো
হয়েছে যে, কবরে তোমাদের পরীক্ষা করা হবে দাজ্জালের ফিতনার ন্যায় অথবা
তার কাছাকাছি। বর্ণনাকারী বলেন, আসমা (রাঃ) কোনটি বলেছিলেন, আমি জানিনা। তোমাদের প্রত্যেকের কাছে (ফিরিশতা) উপস্থিত হবে এবং তাকে জিজ্ঞাসা
করা হবে, “এ ব্যাক্তি সম্পর্কে তোমার কি জ্ঞান আছে?” –তারপর ‘মু’মিন, বা ‘মু’কিন’ ব্যাক্তি
বলবে- আসমা ‘মুমিন’ বলেছিলেন না ‘মুকিন’ তা আমি জানিনা- ইনি মুহাম্মদুর
রাসূলুল্লাহ। তিনি আমাদের কাছে মু‘জিযা ও হিদায়ত নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তাঁর ডাকে
সাড়া দিয়েছি, তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর অনুসরণ করেছি। তারপর তাকে
বলা হবে নিশ্চিন্তে ঘুমাও। আমরা জানলাম যে, তুমি মু’মিন ছিলে। আর
‘মুনাফিক’ বা ‘মুরতাব’ বলবে, আমি জানিনা। আসমা এর কোনটি
বলেছিলেন তা আমি জানিনা- লোকজনকে এঁর সম্পর্কে কিছু একটা বলতে শুনেছি আর আমিও তা-ই
বলেছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৩৪। পূর্ণ মাথা মসেহ করা।
لِقَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: (وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ). وَقَالَ ابْنُ الْمُسَيَّبِ الْمَرْأَةُ بِمَنْزِلَةِ الرَّجُلِ تَمْسَحُ عَلَى رَأْسِهَا. وَسُئِلَ مَالِكٌ أَيُجْزِئُ أَنْ يَمْسَحَ بَعْضَ الرَّأْسِ فَاحْتَجَّ بِحَدِيثِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ
আল্লাহ্
তা‘আলার এ বাণীর পরিপ্রেক্ষিতে (وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ) (আর তোমাদের মাথা মসেহ কর) (৫ঃ ৬)। ইবনুল মুসায়্যিব বলেনঃ
স্ত্রীলোকও (এ ক্ষেত্রে) পুরুষের সমপর্যায়ে। সে তার মাথা মসেহ করবে। ইমাম মালিক
(রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, মাথার কিছু অংশ মসেহ করা
কি যথেষ্ট হবে? তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবন যায়দ
(রাঃ) এর হাদিস দলীল হেসেবে পেশ করলেন।
১৮৫।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... ইয়াহইয়া আল-মাযিনী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যাক্তি ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে (তিনি আমর ইবনু ইয়াহিয়ার দাদা)
জিজ্ঞাসা করলঃ আপনি কি আমাদেরকে দেখাতে পারেন, কিভাবে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতেন? ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) বলেনঃ হ্যাঁ। তারপর তিনি পানি আনালেন। হাতের উপর সে
পানি ঢেলে দু’বার তাঁর হাত ধুইলেন। তারপর কুলি করলেন এবং তিনবার নাকে পানি দিয়ে
ঝেড়ে পরিস্কার করলেন। এরপর চেহারা তিনবার ধুইলেন। তারপর দু’ হাত কনুই পর্যন্ত
দু’বার করে ধুইলেন। তারপর দু' হাত দিয়ে মাথা মাসেহ
করলেন। অর্থাৎ হাত দু’টি সামনে ও পিছনে নিলেন।
মাথার সম্মুখ ভাগ থেকে শুরু করে উভয় হাত গর্দান পর্যন্ত নিলেন। তারপর আবার যেখান
থেকে নিয়েছিলেন, সেখানেই ফিরিয়ে আনলেন।
তারপর দু’পা ধুইলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৩৫। উভয় পা গিরা পর্যন্ত ধোয়া
১৮৬। মূসা (রহঃ) .... ‘আমর
ইবনু আবূ হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উযূ (ওজু/অজু/অযু) সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। তখন
তিনি এক পাত্র পানি আনালেন এবং তাঁদের (দেখাবার) জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর মত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তিনি পাত্র থেকে দু’হাতে পানি ঢাললেন।
তা দিয়ে হাত দুটি তিনবার ধুইলেন। তারপর পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে তিন আঁজলা পানি
দিয়ে কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়লেন। তারপর আবার হাত ঢুকালেন। তিনবার
তাঁর চেহারা মুবারক ধুইলেন। তারপর আবার হাত ঢুকিয়ে (পানি নিয়ে) দুই হাত কনুই
পর্যন্ত দু’বার ধুইলেন। তারপর আবার হাত ঢুকিয়ে উভয় হাত দিয়ে সামনে এবং পেছনে একবার
মাথা মাসেহ করলেন। তারপর দু’ পা গিরা পর্যন্ত ধুইলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৩৬। মানুষের উযূর অবশিষ্ট পানি ব্যবহার করা।
وَأَمَرَ جَرِيرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ أَهْلَهُ أَنْ يَتَوَضَّئُوا بِفَضْلِ سِوَاكِهِ
জাবির
ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর পরিবারকে মিসওয়াক ধোয়া অবশিষ্ট পানি দিয়ে উযূ করতে
নির্দেশ দেন।
১৮৭।
আদম (রহঃ) ... আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একবার দুপুরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে বেরিয়ে এলেন।
তাঁকে উযূর পানি এনে দেওয়া হল। তখন তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। লোকে তাঁর উযূর
ব্যবহৃত পানি নিয়ে গায়ে মাখতে লাগল। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যোহরের দু’রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আর তাঁর সামনে ছিল একটি লাঠি।
আবূ
মূসা (রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পাত্র আনালেন যাতে পানি
ছিল। তারপর তিনি তার মধ্যে উভয় হাত ও চেহারা মুবারক ধুইলেন এবং তার মধ্যে কুলি
করলেন। তারপর তাঁদের দু’জন [আবূ মূসা (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ)]-কে বললেন, তোমরা এ থেকে পান কর এবং তোমাদের মুখমণ্ডল ও বুকে ঢাল।
পরিচ্ছেদঃ ১৩৬। মানুষের উযূর অবশিষ্ট পানি ব্যবহার করা।
১৮৮। আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ
(রহঃ) .... মাহমুদ ইবনুুর-রবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি সে
ব্যাক্তি, যার মুখমণ্ডলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁদের কুয়া থেকে পানি নিয়ে কুলির পানি দিয়েছিলান। তিনি তখন বালক ছিলেন। ‘উরওয়া
(রহঃ) মিসওয়া (রহঃ) প্রমুখের কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। এ উভয় বর্ণনা একটি
অন্যটির সত্যায়ন করে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উযূ (ওজু/অজু/অযু)
করতেন তখন তাঁর ব্যবহৃত পানির উপর তাঁরা (সাহাবায়ে কিরাম) যেন হুমড়ি খেয়ে পড়তেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৩৭। পরিচ্ছেদ নাই
১৮৯। আবদুর রহমান ইবনু
ইউনুস (রহঃ) .... সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) বলেনঃ আমার খালা আমাকে নিয়ে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে হাযির হলেন এবং বললেনঃ ‘ইয়া
রাসুলাল্লাহ! আমার ভাগ্নে অসুস্থ’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং বরকতের দু‘আ করলেন। তারপর উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন।
আমি তাঁর উযূর (অবশিষ্ট) পানি পান করলাম। তারপর তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। তখন আমি তাঁর
উভয় কাঁধের মধ্যস্থলে মোহরে নুবূওয়াত দেখতে পেলাম। তা ছিল নওশার আসনের ঘুন্টির মত।
পরিচ্ছেদঃ ১৩৮। এক আঁজলা পানি দিয়ে কুলি করা ও নাকে পানি
দেওয়া
১৯০। মূসা’দ্দাদ (রহঃ)
.... ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণত, একবার তিনি পাত্র থেকে উভয়
হাতে পানি ঢেলে দু’হাত ধৌত করলেন। তারপর এক আঁজলা পানি দিয়ে (মুখ) ধুইলেন বা কুলি
করলেন এবং নাকে পানি দিলান। তিনবার এরূপ করলেন। তারপর দু’ হাত কনুই পর্যন্ত
দু’-দু’বার ধুইলেন এবং মাথার সামনের অংশ এবং পেছনের অংশ মাসেহ করলেন। আর গিরা
পর্যন্ত দু’ পা ধুইলেন। এরপর বললেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর উযূ (ওজু/অজু/অযু) এরূপ ছিল।
পরিচ্ছেদঃ ১৩৯। একবার মাথা মসেহ করা
১৯১। সুলায়মান ইবনু হারব
(রহঃ) ... ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি একবার ‘আমার ইবনু আবূ হাসান (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি ‘আবদুল্লাহ
ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর তিনি পানির একটি পাত্র আনালেন এবং উযূ
(ওজু/অজু/অযু) করে তাঁদের দেখালেন। তিনি পাত্রটি কাত করে উভয় হাতের উপর পানি ঢেলে
তিনবার তা ধুয়ে ফেলেন। তারপর পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকালেন এবং তিন আঁজলা পানি দিয়ে
তিনবার করে কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিয়ে তা ঝেড়ে ফেললেন। তারপর আবার পাত্রের
মধ্যে হাত ঢুকালেন (এবং পানি দিয়ে) তিনবার মুখমণ্ডল ধুইলেন।তারপর আবার পাত্রের
মধ্যে হাত ঢুকালেন এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত দু'-দু'বার
ধুইলেন। তারপর আবার পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকালেন। তাঁর মাথা হাত দিয়ে সামনে এবং
পেছনে মাসেহ করলেন। তারপর আবার পাত্রের মধ্যে তাঁর হাত ঢুকালেন এবং উভয় পা ধুইলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৩৯। একবার মাথা মসেহ করা
১৯২। উহয়র (রহঃ) সুত্রে
মূসা (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, মাথা একবার মসেহ করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৪০। নিজ স্ত্রীর সাথে উযূ করা এবং স্ত্রীর উযূর
অবশিষ্ট পানি (ব্যবহার করা)।
وَتَوَضَّأَ عُمَرُ بِالْحَمِيمِ مِنْ بَيْتِ نَصْرَانِيَّةٍ
‘উমর (রাঃ) গরম পানি দিয়ে এবং খৃস্টান
মহিলাদের ঘরের পানি দিয়ে উযূ করেন।
১৯৩।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ..... ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় পুরুষ এবং মহিলা
একত্রে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৪১। বেহুশ লোকদের ওপর নবী (ﷺ) এর উযূর পানি ছিটিয়ে দেওয়া
১৯৪। আবূল ওলীদ (রহঃ) ....
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমার পীড়িত
অবস্থায় একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার খোঁজ-খবর নিতে
এলেন। আমি তখন এতই অসুস্থ ছিলাম যে আমার জ্ঞান ছিল না। তারপর তিনি উযূ
(ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং তাঁর উযূর পানি আমার ওপর ছিটিয়ে দিলেন। তখন আমার জ্ঞান
ফিরে এল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (আমার) ‘মীরাস’
কে পাবে? আমার একমাত্র ওয়ারিস হল কালালা (অর্থ পিতামাতা ও
সন্তান-সন্ততি ছাড়া অন্যেরা)। তখন ফারায়েযের আয়াত নাযিল হল।
পরিচ্ছেদঃ ১৪২। গামলা, কাঠ ও পাথরের পাত্রে
উযূ-গোসল করা
১৯৫। আবদুল্লাহ ইবনু মুনীর
(রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় উপস্থিত হলে যাঁদের বাড়ী নিকটে ছিল তাঁরা
(উযূ করার জন্য) বাড়ী চলে গেলেন। আর কিছু লোক রয়ে গেলেন (তাঁদের কোন উযূর ব্যবস্থা
ছিল না)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য একটি পাথরের
পাত্রে পানি আনা হল। পাত্রটি এত ছোট ছিল যে, তার মধ্যে তাঁর উভয় হাত
মেলে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তা থেকেই কওমের সকল লোক উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। আমরা
জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, আশিজন বা আরো বেশী।
পরিচ্ছেদঃ ১৪২। গামলা, কাঠ ও পাথরের পাত্রে
উযূ-গোসল করা
১৯৬। মুহাম্মদ ইবনুল ‘আলা
(রহঃ) .... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পানি ভর্তি পাত্র আনালেন। তাতে তাঁর উভয় হাত ও মুখমণ্ডল
ধুইলেন এবং কুলি করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৪২। গামলা, কাঠ ও পাথরের পাত্রে
উযূ-গোসল করা
১৯৭। আহমদ ইবনু ইউনুস
(রহঃ) .... আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বাড়ীতে এলেন। আমরা তাঁকে পিতলের একটি
পাত্রে পানি দিলাম। তিনি তা দিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তাঁর মুখমণ্ডল তিনবার ও
উভয় হাত দু’ দু’বার করে ধুইলেন এবং তাঁর হাত সামনে ও পেছনে এনে মাথা মাসেহ করলেন
আর উভয় পা ধুইলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৪২। গামলা, কাঠ ও পাথরের পাত্রে
উযূ-গোসল করা
১৯৮। আবূল ইয়ামান (রহঃ)
.... ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর রোগ যন্ত্রণা বেড়ে গেলে তিনি আমার ঘরে শুশ্রূষার জন্য তাঁর
পত্নীগনের অনুমতি চাইলেন। তাঁরা অনুমতি দিলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(আমার ঘরে আসার জন্য) দু’ব্যাক্তির ওপর ভর করে বের হলেন। আর তাঁর পা দু’খানি তখন
মাটিতে চিহ্ন রেখে যাচ্ছিল। তিনি ‘আব্বাস (রাঃ) ও অন্য এক ব্যাক্তির মাঝখানে
ছিলেন। ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু
‘আব্বাস (রাঃ)-কে এ কথা অবহিত করলাম। তিনি বললেন, সে অন্য ব্যাক্তিটি কে তা
কি তুমি জানো? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তিনি হলেন ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)। ‘আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে আসার পর রোগ আরো বেড়ে গেলে তিনি
বললেন, তোমরা আমার উপর মুখের বাঁধন খোলা হয়নি এমন সাতটি মশকের পানি
ঢেলে দাও, তাহলে হয়ত আমি মানুষকে কিছু ওয়াসিয়্যাত করব। তাঁকে তাঁর
সহধর্মিণী হাফসা (রাঃ) এর একটি বড় পাত্রের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া হল। তারপর আমরা তাঁর
ওপর সেই সাত মশক পানি ঢালতে শুরু করলাম। এভাবে ঢালার পর এক সময় তিনি আমাদের প্রতি
ইশারা করলেন, (এখন থাম) তোমরা তোমাদের কাজ করেছ। এরপর তিনি বের হয়ে
জনসমক্ষে গেলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৪৩। গামলা থেকে উযূ করা
১৯৯। খালিদ ইবনু মাখলাদ
(রহঃ) .... ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, আমার চাচা উযূর পানি বেশী
খরচ করতেন। একদিন তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে বললেন, ‘আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কিভাবে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে
দেখেছেন? তিনি এক গামলা পানি আনালেন। সেটি উভয় হাতের ওপর কাত করে (তা
থেকে পানি ঢেলে) হাত দু’খানি তিনবার ধুইলেন, তারপর তাঁর হাত গামলায়
ঢুকালেন। তারপর এক আঁজলা পানি দিয়ে তিনবার কুলি করলেন এবং নাক পরিষ্কার করলেন।
তারপর পানিতে তাঁর হাত ঢুকালেন। উভয় হাতে এক আঁজলা পানি নিয়ে মুখমণ্ডল তিনবার
ধুইলেন। তারপর উভয় হাত কনুই পর্যন্ত দু’বার করে ধুইলেন। তারপর উভয় হাতে পানি নিয়ে
মাথার সামনে এবং পেছনে মাসেহ করলেন এবং দু’পা ধুইলেন। তারপর বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এভাবেই উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে
দেখেছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৪৩। গামলা থেকে উযূ করা
২০০। মূসা’দ্দাদ (রহঃ)
.... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একপাত্র পানি চাইলেন। একটি বড় পাত্র তাঁর কাছে আনা হল, তাতে সামান্য পানি ছিল। তারপর তিনি তার মধ্যে তাঁর আঙ্গুল রাখলেন। আনাস (রাঃ)
বলেন, আমি পানির দিকে তাকাতে লাগলাম। তাঁর আঙ্গুলের ভেতর দিয়ে
পানি উথলে উঠতে লাগল। আনাস (রাঃ) বলেন, যারা উযূ (ওজু/অজু/অযু)
করেছিল, আমি অনুমান করলাম তাদের সংখ্যা ছিল ৭০ থেকে ৮০ জন।
পরিচ্ছেদঃ ১৪৪। এক মুদ (পানি) দিয়ে উযূ করা
২০১। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) ...
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সা’ (৪ মুদ*) থেকে পাঁচ মুদ পর্যন্ত পানি দিয়ে
গোসল করতেন এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতেন এক মুদ দিয়ে।
পরিচ্ছেদঃ ১৪৫। উভয় মোজার ওপর মসেহ করা
২০২। আসবাগ ইবনুল ফারাজ
(রহঃ) ... সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উভয় মোজার ওপর মাসেহ করেছেন।
‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (তার পিতা) উমর (রাঃ)-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি
বললেনঃ হ্যাঁ! সা’দ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু বর্ণনা
করলে সে ব্যাপারে আর অন্যকে জিজ্ঞাসা করো না।
মুসা ইবন উকবা (রহঃ) ...
সা'দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ অতঃপর উমর
(রাঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) কে অনুরূপ বললেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৪৫। উভয় মোজার ওপর মসেহ করা
২০৩। আমর ইবনু খালিদ
আল-হাররানী (রহঃ) .... মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক
প্রয়োজনে বাইরে গেলে মুগীরা (রাঃ) পানি সহ একটি পাত্র নিয়ে তাঁর অনুসরণ করলেন।
তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক প্রয়োজন শেষ করে এলে মুগীরা
(রাঃ) তাঁকে পানি ঢেলে দিলেন। আর তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং উভয় মোজার উপর
মাসেহ করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৪৫। উভয় মোজার ওপর মসেহ করা
২০৪। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) ...
উমায়্যা যামরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উভয় মোজার ওপর মাসেহ করতে দেখেছেন। হারব ও
আবান (রহঃ) ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৪৫। উভয় মোজার ওপর মসেহ করা
২০৫। আবদান (রহঃ) ....
উমায়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর পাগড়ীর ওপর এবং উভয় মোজার ওপর মাসেহ করতে
দেখেছি। মা’মার (রহঃ) আমর (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা করতে দেখেছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৪৬। পবিত্র অবস্থায় উভয় পা (মোজায়) প্রবেশ করানো
২০৬। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) ...
মুগীরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। (উযূ
(ওজু/অজু/অযু) করার সময়) আমি তাঁর মোজাদ্বয় খুলতে চাইলে তিনি বললেনঃ ওদুটো থাকুক, আমি পবিত্র অবস্থায় ও দু’টি পরেছিলাম। (এই বলে) তিনি তার ওপর মাসেহ করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৪৭। বকরীর গোশত এবং ছাতু খেয়ে উযূ না করা।
وَأَكَلَ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ لَحْمًا فَلَمْ يَتَوَضَّئُوا
আবু
বকর, উমর ও উসমান (রাঃ) গোশত খেয়ে উযূ করেন নি।
২০৭।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বকরীর কাঁধের
গোশত খেলেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন; কিন্তু উযূ (ওজু/অজু/অযু)
করলেন না।
পরিচ্ছেদঃ ১৪৭। বকরীর গোশত এবং ছাতু খেয়ে উযূ না করা।
২০৮। ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র
(রহঃ) .... উমায়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটি ববরীর কাঁধের গোশত কেটে খেতে দেখলেন। এ সময় সালাত
(নামায/নামাজ)-এর জন্য ডাকা হল। তখন তিনি ছুরি ফেলে দিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়
করলেন; কিন্তু উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন না।
পরিচ্ছেদঃ ১৪৮। ছাতু খেয়ে উযূ না করে কেবল কুলি করা
২০৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ
(রহঃ) .... সুওযায়দ ইবনুু'ন-নু'মান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ খায়বর যুদ্ধের বছর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওয়ানা হলেন। চলতে চলতে তাঁরা যখন সাহবা-য় পৌঁছলেন, এটি খায়বরের নিবটবর্তী অঞ্চল, তখন তিনি আসরের সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর খাবার আনতে বললেনঃ কিন্তু ছাতু ছাড়া আর কিছুই আনা
হল না। তারপর তিনি নির্দেশ দেওয়ায় তা (পানিতে) মেশানো হল। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা খেলেন এবং আমরাও খেলাম। তারপর তিনি মাগরিবের
জন্য দাঁড়িয়ে কুলি করলেন এবং আমরাও কুলি করলাম। পরে তিনি সালাত আদায় করলেন; উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন না।
পরিচ্ছেদঃ ১৪৮। ছাতু খেয়ে উযূ না করে কেবল কুলি করা
২১০। আসবাগ (রহঃ) ....
মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে (একটি বকরীর) কাঁধের গোশত
খেলেন, তারপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, আর উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন না।
পরিচ্ছেদঃ ১৪৯ দুধ পান করলে কি কুলি করতে হবে?
২১১। ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র
ও কুতায়বা (রহঃ) .... ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুধ পান করলেন। তারপর কুলি
করলেন এবং বললেনঃ এতে তৈলাক্ত পদার্থ রয়েছে (এজন্য কুলি করা ভাল)। ইউসুন ও সালিহ
ইবনু কায়সান (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৫০। ঘুমের পরে উযূ করা এবং দু’একবার ঝিমালে বা
মাথা ঝুঁকে পড়লে উযূ না করা
২১২। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ
(রহঃ) .... ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের অবস্থায়
তোমাদের কারো যদি তন্দ্রা আসে তবে সে যেন ঘুমের রেশ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত ঘুমিয়ে
নেয়। কারন, তন্দ্রাবস্থায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে সে জানতে
পারবে না, সে কি ক্ষমা চাইছে, না নিজেকে গালি দিচ্ছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৫০। ঘুমের পরে উযূ করা এবং দু’একবার ঝিমালে বা
মাথা ঝুঁকে পড়লে উযূ না করা
২১৩। আবূ মা’মার (রহঃ)
.... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি সালাতে ঝিমায়, সে যেন ততক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়, যতক্ষন না সে কি পড়ছে, তা বুঝতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ১৫১। হাদস ছাড়া উযূ করা
২১৪। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ
(রহঃ) ও মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সালাতের সময় উযূ
(ওজু/অজু/অযু) করতেন। আমি বললামঃ আপনারা কিরূপ করতেন? তিনি বললেনঃ হাদস (উযূ ভঙ্গের কারন) না হওয়া পর্যন্ত আমাদের (পূর্বের) উযূই
যথেষ্ট হত।
পরিচ্ছেদঃ ১৫১। হাদস ছাড়া উযূ করা
২১৫। খালিদ ইবনু মাখলাদ
(রহঃ) ... সুওয়ায়দ ইবনুু’ন-নু‘মান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ খায়বার যুদ্ধের বছর আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সাথে বের হলাম। সাহবা নামক স্থানে পৌঁছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত শেষে
তিনি খাবার আনতে বললেন। ছাতু ছাড়া আর কিছু আনা হল না। আমরা তা খেলাম এবং পান
করলাম। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের জন্য দাঁড়িয়ে কুলি
করলেন; তিনি (নতুন) উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন না।
পরিচ্ছেদঃ ১৫২। পেশাবের অপবিত্রতা থেকে সতর্ক না থাকা কবীরা
গুনাহ
২১৬। উসমান (রহঃ) ... ইবনু
‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মদিনা বা মক্কার কোন এক বাগানের কাছ দিয়ে
যাচ্ছিলেন। তিনি এমন দু’ব্যাক্তির আওয়াজ পেলেন, যাদের কবরে আযাব হচ্ছিল।
তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এদের দু’জনকে আযাব দেওয়া হচ্ছে, অথচ কোন বড় গুনাহের জন্য এদের আযাব দেওয়া হচ্ছে না। তারপর তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, এদের একজন তার পেশাবের নাপাকি থেকে সতর্কতা অবলম্বন করত না। আর একজন চোগলখুরী
করত। তারপর তিনি একটি খেজুরের ডাল আনালেন এবং তা ভেঙ্গে দু’খন্ড করে প্রত্যেকের
কবরের উপর একখন্ড রাখলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল,
‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! এরূপ কেন
করলেন?’ তিনি বললেনঃ হয়ত তাদের আযাব কিছুটা লাঘব করা হবে, যতদিন পর্যন্ত এ দু’টি না শুকায়।
পরিচ্ছেদঃ ১৫৩। পেশাব ধোয়া সম্বন্ধে যা বর্ণিত হয়েছে।
وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِصَاحِبِ الْقَبْرِ: كَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ». وَلَمْ يَذْكُرْ سِوَى بَوْلِ النَّاسِ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক কবরবাসী সম্পর্কে বলেছে, সে তার পেশাব থেকে সতর্ক থাকত না। তিনি শুধু মানুষের পেশাব সম্পর্কেই উল্লেখ
করেছেন।
২১৭।
ইয়া’কুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হলে
আমি তাঁর কাছে পানি নিয়ে যেতাম। তিনি তা দিয়ে ইসতিন্জা করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৫৪। পরিচ্ছেদ নাই।
২১৮। মুহাম্মদ ইবনুল
মূসান্না (রহঃ) .... ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার দু’টি কররের কাছ দিয়ে
যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি বললেনঃ এদের আযাব দেওয়া হচ্ছে, কোন কঠিন পাপের জন্য তাদের আযাব হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব থেকে সতর্ক থাকত
না। আর অপরজন চোগলখুরী করে বেড়াত। তারপর তিনি একখানি কাঁচা খেজুরের ডাল নিয়ে ভেঙ্গে
দু’ভাগ করলেন এবং প্রত্যেক কবরের ওপর একখানি পুঁতে দিলেন। সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)
জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! এরূপ কেন
করলেন?’ তিনি বললেনঃ হয়তো তাদের থেকে (আযাব) কিছুটা লাঘব করা হবে, যতদিন পর্যন্ত এ’টি না শুকাবে। ইবনুল মূসান্না (রহঃ)-আ’মাশ (রহঃ) বলেনঃ আমি
মুজাহিদ (রহঃ) থেকে অনুরূপ শুনেছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৫৫। এক বেদুঈনকে মসজিদে পেশাব শেষ করা পর্যন্ত
নবী (ﷺ) এবং অন্যান্য লোকের পক্ষ থেকে অবকাশ দেওয়া।
২১৯। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল
(রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বেদুঈনকে মসজিদে পেশাব করতে দেখলেন। তখন তিনি
বললেনঃ ওকে ছেড়ে দাও। সে পেশাব শেষ করলে পানি আনিয়ে সেখানে পানি ঢেলে দিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৫৬। মসজিদে পেশাবের উপর পানি ঢেলে দেওয়া
২২০। আবূল ইয়ামান (রহঃ)
.... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক বেদুঈন
দাঁড়িয়ে মসজিদে পেশাব করে দিল। তখন লোকজন তাকে বাধা দিতে যাচ্ছিল। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেনঃ ওকে ছেড়ে দাও এবং ওর পেশাবের উপর এক
বালতি পানি ঢেলে দাও। কারন তোমাদের সহজ ও বিনমর আচরণ করার জন্য পাঠানো হয়েছে, কঠোর আচরণের জন্য পাঠানো হয়নি।
পরিচ্ছেদঃ ১৫৬। মসজিদে পেশাবের উপর পানি ঢেলে দেওয়া
২২১। আবদান (রহঃ) ও খালিদ
ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার এক বেদুঈন এসে মসজিদের এক কোণে পেশাব করে দিল। তা দেখে লোকজন
তাকে ধমকাতে লাগল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিষেধ করলেন। তার
পেশাব শেষ হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশে এর উপর এক বালতি পানি
ঢেলে দেওয়া হল।
পরিচ্ছেদঃ ১৫৭। শিশুদের পেশাব
২২২। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ
(রহঃ) ... উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটি শিশুকে আনা হল। শিশুটি তাঁর কাপড়ে
পেশাব করে দিল। তিনি পানি আনালেন এবং এর ওপর ঢেলে দিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৫৭। শিশুদের পেশাব
২২৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ
(রহঃ) .... উম্মু কায়স বিনত মিহসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি তার এক ছোট ছেলেকে, যে তখনো খাবার খেতে শিখেনি, নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুটিকে তাঁর কোলে বসালেন। তখন সে তাঁর কাপড়ে
পেশাব করে দিল। তিনি পানি আনিয়ে এর উপর ছিটিয়ে দিলেন এবং তা (ভাল করে) ধুইলেন না।
পরিচ্ছেদঃ ১৫৮। দাঁড়িয়ে এবং বসে পেশাব করা
২২৪।
আদম (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার কওমের আবর্জনা ফেলার স্থানে এলেন।
তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে পেশাব করলেন। তারপর পানি চাইলেন। আমি তাঁকে পানি নিয়ে দিলাম।
তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন।*
* সাধারণত বসে পেশাব করাই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
অভ্যাস। আ জন্যই আয়েশা (রাঃ) বলেন, যে ব্যাক্তি তোমাদের বলবে
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পেশাব
করেছেন- তার কথা বিশ্বাস করো না। (তিরমিযি, নাসাঈ)। এই একটি মাত্র
স্থানেই তাঁর অভ্যাসের ব্যাতিক্রম পাওয়া যায়।এর কারণ সম্পর্কে আবু হুরাইরা (রাঃ)
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোমর ব্যাথার
কারণে দাঁড়িয়ে পেশাব করেছেন। (বায়হাকি, হাকেম )।
পরিচ্ছেদঃ ১৫৯। সঙ্গীর কাছে বসে পেশাব করা এবং দেয়ালের
আড়ালে করা
২২৫। উসমান ইবনু আবূ শায়বা
(রহঃ) .... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমার স্মরণ আছে
যে, একবার আমিও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাথে
চলছিলাম। তিনি দেয়ালের পেছনে মহল্লার একটি আবর্জনা ফেলার জায়গায় এলেন। তারপর
তোমাদের কেউ যেভাবে দাঁড়ায় সেভাবে দাঁড়িয়ে তিনি পেশাব করলেন। এ সময় আমি তাঁর কাছ
থেকে সরে যাচ্ছিলাম কিন্তু তিনি আমাকে ইশারা করলেন। আমি এসে তাঁর পেশাব করা শেষ না
হওয়া পর্যন্ত তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৬০। মহল্লার আবর্জনা ফেলার স্থানে পেশাব করা
২২৬। মুহাম্মদ ইবনু ‘আর
‘আরা (রহঃ) .... আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবূ মূসা (রাঃ)
পেশাবের ব্যাপারে খুব কড়াকড়ি করতেন এবং বলতেনঃ বনী ইসরাঈলের কারো কাপড়ে (পেশাব)
লাগলে তা কেটে ফেলত। হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, আবূ মূসা (রাঃ) যদি এ থেকে
বিরত থাকতেন (তবে ভাল হত)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহল্লার
আবর্জনা ফেলার স্থানে দাঁড়িয়ে পেশাব করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৬১। রক্ত দুয়ে ফেলা।
২২৭। মুহাম্মদ ইবনুল
মূসান্না (রহঃ) ..... আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেনঃ ইয়া
রাসূলাল্লাহ! বলুন, আমাদের কারো কাপড়ে হায়েযের
রক্ত লেগে গেলে সে কি করবে? তিনি বললেনঃ সে তা ঘষে
ফেলবে, তারপর পানি দিয়ে রগড়াবে এবং ভাল করে ধুয়ে ফেলবে। এরপর সেই কাপড়ে
সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৬১। রক্ত দুয়ে ফেলা।
২২৮। মুহাম্মদ (রহঃ) ....
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ফাতিমা বিনত
আবূ হুবায়শ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন ইয়া
রাসূলাল্লাহ! আমার এত বেশি রক্তস্রাব হয় যে, আর পবিত্র হই না।
এমতাবস্থায় আমি কি সালাত (নামায/নামাজ) ছেড়ে দেব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না, এ তো ধমনি নির্গত রক্ত, হায়েয় নয়। তাই যখন তোমার হায়েয আসবে তখন সালাত ছেড়ে দিও। আর যখন তা বন্ধ হবে
তখন রক্ত ধুয়ে ফেলবে, তারপর সালাত আদায় করবে।
বর্ণনাকারী বলেন, আমার পিতা বলেছেনঃ তারপর এভাবে আরেক হায়েয না আসা পর্যন্ত প্রত্যেক সালাতের
জন্য উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৬২। বীর্য ধোয়া এবং ঘষে ফেলা এবং স্ত্রীলোক থেকে
যা লেগে যায় তা ধুয়ে ফেলা
২২৯। আবদান (রহঃ) ....
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাপড় থেকে জানবাতের চিহ্ন ধুয়ে দিতাম এবং কাপড়ে
ভিজা চিহ্ন নিয়ে তিনি সালাতে (নামাযে) বের হতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৬২। বীর্য ধোয়া এবং ঘষে ফেলা এবং স্ত্রীলোক থেকে
যা লেগে যায় তা ধুয়ে ফেলা
২৩০। কুতয়বা ও মূসা’দ্দাদ
(রহঃ) .... সুলায়মান ইবনু ইয়াসর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে কাপড়ে
লাগা বীর্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাপড় থেকে তা ধুয়ে ফেলতাম। তিনি কাপড় ধোয়ার ভিজা দাগ নিয়ে
সালাতে (নামাযে) বের হতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৬৩। জানাবাতের নাপাকী বা অন্য কিছু ধোয়ার পর যদি
ভিজা দাগ থেকে যায়
২৩১। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল
(রহঃ) ...... আমর ইবনু মায়মুন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ কাপড়ে জানবাতের
নাপাকী লাগা সম্পর্কে আমি সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি
বললেনঃ ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
কাপড় থেকে তা ধুয়ে ফেলতাম। এরপর তিনি সালাতে (নামাযে) বেরিয়ে যেতেন আর তাতে পানি দিয়ে
ধোয়ার চিহ্ন থাকত।
পরিচ্ছেদঃ ১৬৩। জানাবাতের নাপাকী বা অন্য কিছু ধোয়ার পর যদি
ভিজা দাগ থেকে যায়
২৩২। আমর ইবনু খালিদ (রহঃ)
... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাপড় থেকে বীর্য ধুয়ে ফেলতেন। আয়িশা (রাঃ)
বলেনঃ তারপর আমি তাতে পানির একটি বা কয়েকটি দাগ দেখতে পেতাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৬৪। উট, চতুস্পদ জন্তু ও বকরীর
পেশাব এবং বকরীর খায়াড় প্রসঙ্গে
২৩৩। সুলায়মান ইবনু হারব
(রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ উকল বা উরায়না
গোত্রের কিছু লোক (ইসলাম গ্রহণের জন্য) মদিনায় এলে তারা পীড়িত হয়ে পড়ল। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের (সদকার) উটের কাছে যাবার এবং ওর পেশাব ও দুধ
পান করার নির্দেশ দিলেন। তারা সেখানে চলে গেল। তারপর তারা সুস্থ হয়ে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাখালকে হত্যা করে ফেলল এবং উটগুলি হাঁকিয়ে নিয়ে
গেল। এ খবর দিনের প্রথম ভাগেই এসে পৌঁছল। তিনি তাদের পেছনে লোক পাঠালেন। বেলা বেড়ে
উঠলে তাদেরকে (গ্রেফতার করে) আনা হল। তারপর তাঁর আদেশে তাদের হাত পা কেটে দেওয়া
হল। উত্তপ্ত শলাকা দিয়ে তাদের চোখ ফুঁড়ে দেওয়া হল এবং গরম পাথুরে ভূমিতে তাদের
নিক্ষেপ করা হল। তারা পানি চাইছিল, কিন্তু দেওয়া হয়নি।
আবূ কিলাবা (রহঃ) বলেন, এরা চুরি করেছিল, হত্যা করেছিল, ঈমান আনার পর কুফরী করেছিল এবং আল্লাহ্ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল।
পরিচ্ছেদঃ ১৬৪। উট, চতুস্পদ জন্তু ও বকরীর
পেশাব এবং বকরীর খায়াড় প্রসঙ্গে
২৩৪। আদম (রহঃ .... আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ নির্মিত হবার পূর্বে বকরীর খোয়াড়ে সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৬৫। ঘি এবং পানিতে নাপাকী পড়া।
وَقَالَ الزُّهْرِيُّ لاَ بَأْسَ بِالْمَاءِ مَا لَمْ يُغَيِّرْهُ طَعْمٌ أَوْ رِيحٌ أَوْ لَوْنٌ. وَقَالَ حَمَّادٌ لاَ بَأْسَ بِرِيشِ الْمَيْتَةِ. وَقَالَ الزُّهْرِيُّ فِي عِظَامِ الْمَوْتَى نَحْوَ الْفِيلِ وَغَيْرِهِ أَدْرَكْتُ نَاسًا مِنْ سَلَفِ الْعُلَمَاءِ يَمْتَشِطُونَ بِهَا، وَيَدَّهِنُونَ فِيهَا، لاَ يَرَوْنَ بِهِ بَأْسًا. وَقَالَ ابْنُ سِيرِينَ وَإِبْرَاهِيمُ وَلاَ بَأْسَ بِتِجَارَةِ الْعَاجِ
যুহরী
(রহঃ) বলেনঃ পানিতে নাপাকী পড়লে কোন ক্ষতি নেই, যতক্ষন তার স্বাদ, গন্ধ বা রং পরিবর্তন না হয়। হাম্মদ (রহঃ) বলেনঃ মৃত (পাখীর) পালক (পানিতে
পড়লে) কোন দোষ নেই। যুহরী (রহঃ) মৃত জন্তু, যথাঃ হাতী প্রভৃতির হাড়
সম্পর্কে বলেনঃ আমি পূর্ববর্তী উলামায়ে কিরামের মধ্যে কিছু আলিমকে পেয়েছি, তাঁরা তা দিয়ে (চিরুণী বানিয়ে) চুল আঁচড়াতেন এবং তার পাত্রে তেল রেখে ব্যবহার
করতেন, এতে তাঁরা কোনরূপ দোষ মনে করতেন না। ইবন সীরীন (রহঃ) ও
ইবরাহীম (রহঃ) বলেনঃ হাতীর দাঁতের ব্যবসায়ে কোন দোষ নেই।
২৩৫।
ইসমা‘ঈল (রহঃ) .... মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে ‘ঘি’র মধ্যে ইঁদুর পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেনঃ
ইঁদুরটি এবং তার আশপাশ থেকে ফেলে দাও এবং তোমাদের ঘি ব্যবহার কর।
পরিচ্ছেদঃ ১৬৫। ঘি এবং পানিতে নাপাকী পড়া।
২৩৬। আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ
(রহঃ) .... মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ‘ঘি’র
মধ্যে ইঁদুর পড়ে যাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেনঃ ইঁদুরটি এবং তার
আশপাশ থেকে ফেলে দাও।
মা’ন (রহঃ) বলেন, মালিক (রহঃ) আমার কাছে বহুবার এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে
এবং ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মায়মূনা (রাঃ) থেকেও।
পরিচ্ছেদঃ ১৬৫। ঘি এবং পানিতে নাপাকী পড়া।
২৩৭। আহমদ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা
করেন, তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাস্তায় মুসলমানদের যে যখম হয়, কিয়ামতের দিন তার প্রতিটি যখম আঘাতকালীন সময়ে যে অবস্থায় ছিল তদ্রুপ হবে। রক্ত
ছুটে বের হতে থাকবে। তার রং হবে রক্তের রং কিন্তু গন্ধ হবে মিশকের ন্যায়।
পরিচ্ছেদঃ ১৬৬। স্থির পানিতে পেশাব করা
২৩৮। আবূল ইয়ামান (রহঃ)
... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, আমরা শেষে আগমনকারী এবং
(কিয়ামত দিবসে) অগ্রগামী। এ সনদেই তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন স্থির- যা প্রবাহিত
নয় এমন পানিতে কখনো পেশাব না করে। (সম্ভবত) পরে সে আবার তাতে গোসল করবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৬৭। মুসল্লীর পিঠের উপর ময়লা বা মৃত জন্তু ফেললে
তার সালাত নষ্ট হবে না।
ইবন
উমর (রাঃ) সালাত আদায়ের অবস্থায় তাঁর কাপড়ে রক্ত দেখলে (সেভাবেই) তা রেখে দিতেন
এবং সালাত আদায় করে নিতেন।
ইবনুল
মুসায়্যাব ও শা’বী (রহঃ) বলেন, যখন কেউ সালাত আদায় করে আর
তার কাপড়ে রক্ত অথবা জানাবাতের নাপাকী থাকে অথবা সে কিবলা ছাড়া অন্যদিকে মুখ করে
অথবা তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করে এরপর ওয়াক্তের মধ্যেই যদি পানি পেয়ে যায় তবে
(সালাত) দুহরাবে না।
২৩৯।
আবদান (রহঃ) ..... আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদারত অবস্থায়
ছিলেন। অন্য সূত্রে আহমদ ইবনু ‘উসমান (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) বর্ণনা
করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার
বায়তুল্লাহর পাশে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন এবং সেখানে আবূ জাহল ও তার
সঙ্গীরা বসা ছিল। এমন সময় তাদের একজন অন্যজনকে বলে উঠল, তোমাদের মধ্যে কে অমুক গোত্রের উটনীর নাড়ীভুঁড়ি এনে মুহাম্মদ যখন সিজদা করেন
তখন তার পিঠের উপর রাখতে পারে? তখন কওমের বড় পাষন্ড
(উকবা) তাড়াতাড়ি গিয়ে তা নিয়ে এল এবং তাঁর প্রতি নজর রাখল। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদায় গেলেন, তখন সে তাঁর পিঠের উপর দুই
কাঁধের মাঝখানে তা রেখে দিল।
ইবনু
মাস’উদ (রাঃ) বলেন, আমি (এ দৃশ্য) দেখেছিলাম
কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। হায়! আমার যদি কিছু প্রতিরোধ শক্তি থাকত! তিনি বলেন, তারা হাসতে লাগল এবং একে অন্যের উপর লুটিয়ে পড়তে লাগল। আর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সিজদায় থাকলেন, মাথা উঠালেন না। অবশেষে
ফাতিমা (রাঃ) এলেন এবং সেটি তাঁর পিঠের উপর থেকে ফেলে দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঠিয়ে বললেনঃ ইয়া আল্লাহ্! আপনি কুরায়শকে
ধ্বংস করুন। এরূপ তিনবার বললেন। তিনি যখন তাদের বদ দু’আ করেন তখন তা তাদের অন্তরে
ভীতির সঞ্চার করল।
বর্ণনাকারী
বলেন, তারা জনত যে, এ শহরে দু’আ কবূল হয়। এরপর
তিনি নাম ধরে বললেনঃ ইয়া আল্লাহ্! আবূ জাহলকে ধ্বংস করুন। এবং ‘উতবা ইবনু রাবী’আ, শায়বা ইবনু রবী’আ, ওয়ালীদ ইবনু ‘উতবা, উময়্যা ইবনু খালাফ ও ‘উকবা ইবনু মু’আইতকে ধ্বংস করুন। রাবী বলেন, তিনি সপ্তম ব্যাক্তির নামও বলেছিলেন কিন্তু তিনি স্মরণ রাখতে পারেন নি। ইবনু
মাস’উদ (রাঃ) বলেনঃ সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার জান, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের নাম উচ্চারণ করেছিলেন, তাদের আমি বদরের কূপের মধ্যে নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৬৮। থুথু, শ্লেষ্মা ইত্যাদি কাপড়ে
লেগে গেলে।
قَالَ عُرْوَةُ عَنِ الْمِسْوَرِ وَمَرْوَانَ خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَمَنَ حُدَيْبِيَةَ فَذَكَرَ الْحَدِيثَ. وَمَا تَنَخَّمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نُخَامَةً إِلاَّ وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ
উরওয়া
(রহঃ) মিসওয়ার ও মাওয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ার সময় বের হলেন। তারপর পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করার পর
তিনি বলেন, আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সেদিন) যখনই কোন
শ্লেষ্মা ঝেড়ে ফেলছিলেন, তখন তা কারো না কারো হাতে
পড়ছিল। তারপর (বরকতস্বরূপ) ঐ ব্যক্তি তা তার মুখমন্ডল ও শরীরে মেখে নিচ্ছিল।
২৪০।
মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একবার তাঁর কাপড়ে থুথু ফেললেন। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন যে, ইবনু মারয়াম এই হাদীসটি বিস্তারিতরূপে বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৬৯। নাবীয (খেজুর, কিসমিস, মনাক্কা ইত্যাদি ভিজানো পানি) এবং নেশাকারক পানীয় দ্বারা উযূ করা না-জায়েয।
وَكَرِهَهُ الْحَسَنُ وَأَبُو الْعَالِيَةِ. وَقَالَ عَطَاءٌ التَّيَمُّمُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنَ الْوُضُوءِ بِالنَّبِيذِ وَاللَّبَنِ
হাসান
(রহঃ) ও আবুল ‘আলিয়া (রহঃ) একে মাকরূহ বলেছেন। আতা (রহঃ) বলেনঃ নাবীয এবং দুধ দিয়ে
উযূ করার চাইতে তায়াম্মুম করাই আমার কাছে পছন্দনীয়।
২৪১।
আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) .... ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে সকল পানীয় নেশা
সৃষ্টি করে, তা হারাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৭০। পিতার মুখমন্ডল থেকে কন্যা কর্তৃক রক্ত ধুয়ে
ফেলা।
وَقَالَ أَبُو الْعَالِيَةِ امْسَحُوا عَلَى رِجْلِي فَإِنَّهَا مَرِيضَةٌ
আবুল
আলিয়া (রহঃ) বলেনঃ আমার পায়ে ব্যাথা, তোমরা আমার পা মসেহ করে
দাও।
২৪২।
মুহাম্মদ (রহঃ) .... আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, যখন আমার এবং সাহল ইবনু
সা’দ আস-সা’ইদী (রাঃ)-এর মাঝখানে কেউ ছিল না, তখন লোকে প্রশ্ন করলঃ
(উহুদ যুদ্ধে) কী দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যখমের চিকিৎসা করা হয়েছিল? তখন তিনি বললেনঃ এ ব্যাপারে আমার চেয়ে ভাল একজন জানে এমন কেউ জীবিত নেই। ‘আলী (রাঃ)
তাঁর ঢালে করে পানি আনছিলেন আর ফাতিমা (রাঃ) তাঁর মুখমন্ডল থেকে রক্ত ধুইয়ে দিলেন।
অবশেষে চাটাই পুড়িয়ে (তার ছাই) তাঁর ক্ষতস্থানে দেওয়া হল।
পরিচ্ছেদঃ ১৭১। মিসওয়াক করা।
وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ بِتُّ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاسْتَنَّ
ইবন
আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে রাত
কাটিয়েছিলাম। তখন তিনি মিসওয়াক করলেন।
২৪৩।
আবূ’ন-নু’মান (রহঃ) .... আবূ বুরদা (রহঃ)-এর পিতা [আবূ মূসা (রাঃ)] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। তখন
তাঁকে দেখলাম তিনি মিসওয়াক করছেন এবং মিসওয়াক মুখে দিয়ে তিনি উ’, উ’, শব্দ করছেন যেন তিনি বমি করছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭১। মিসওয়াক করা।
২৪৪। উসমান ইবনু আবূ শায়বা
(রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে (সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য) উঠতেন তখন
মিসওয়াক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৩। উযূ সহ রাতে ঘুমাবার ফযীলত
وَقَالَ عَفَّانُ حَدَّثَنَا صَخْرُ بْنُ جُوَيْرِيَةَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَرَانِي أَتَسَوَّكُ بِسِوَاكٍ، فَجَاءَنِي رَجُلاَنِ أَحَدُهُمَا أَكْبَرُ مِنَ الآخَرِ، فَنَاوَلْتُ السِّوَاكَ الأَصْغَرَ مِنْهُمَا، فَقِيلَ لِي كَبِّرْ. فَدَفَعْتُهُ إِلَى الأَكْبَرِ مِنْهُمَا ". قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ اخْتَصَرَهُ نُعَيْمٌ عَنِ ابْنِ الْمُبَارَكِ عَنْ أُسَامَةَ عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ
পরিচ্ছেদঃ
১৭২. বয়সে বড় ব্যক্তিকে মিসওয়াক প্রদান করা
‘আফফান (রহঃ) .... ইবন ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা
করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি (স্বপ্নে)
দেখলাম যে, আমি মিসওযাক করছি। আমার কাছে দুই ব্যক্তি এলেন। একজন অপরজন
থেকে বয়সে বড়। তারপর আমি তাদের মধ্যে কনিষ্ঠ ব্যক্তিকে মিসওয়াক দিতে গেলাম। তখন
আমাকে বলা হল, ‘বড়কে দাও। তখন আমি তাদের মধ্যে বয়সে বড় ব্যক্তিকে দিলাম।
আবূ আবদুল্লাহ্ বলেন, নু’আয়ম, ইবনুল মুবারক সূত্রে ইবন ‘উমর (রাঃ) থেকে হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন।
২৪৫।
মুহাম্মদ ইবনু মুকতিল (রহঃ) .... বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তুমি বিছানায় যাবে
তখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূর মতো উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নেবে। তারপর ডান
পার্শ্বে শুয়ে বলবেঃ
اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ لاَ مَلْجَأَ وَلاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ اللَّهُمَّ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ
“হে আল্লাহ্! আমার জীবন আপনার কাছে সমর্পণ
করলাম। আমার সকল কাজ আপনার কাছে সোপর্দ করলাম এবং আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করলাম, আপনার প্রতি আগ্রহ ও ভয় নিয়ে। আপনি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল ও নাজাতের স্থান নেই।
হে আল্লাহ্! আমি ঈমান আনলাম আপনার নাযিলকৃত কিতাবের উপর এবং আপনার প্রেরিত নাবীর
উপর।”
তারপর
যদি সে রাতেই তোমার মৃত্যু হয় তবে ফিতরাতে ইসলামের উপর তোমার মৃত্যু হবে। এ
কথাগুলি তোমার শেষ কথা বনিয়ে নাও। তিনি বললেন, ‘আমি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথাগুলি পুনরায় শোনালাম। যখন اللَّهُمَّ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ পর্যন্ত পৌঁছে وَرَسُولِكَ বললাম, তখন তিনি বললেনঃ না; বরংوَنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ বল।
গোসল
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪। গোসলের
পূর্বে উযূ করা
এ
প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ “যদি তোমরা অপবিত্র থাক তবে বিশেষভাবে পবিত্র
হবে। তোমরা যদি পীড়িত হও বা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ শৌচগার থেকে আসে অথবা তোমরা
স্ত্রীর সাথে সংগত হও এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে এবং তা
তোমাদের মুখে ও হাতে বুলাবে। আল্লাহ্ তোমাদের কষ্ট দিতে চান না; বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।” (৫ : ৬)
এবং
আল্লাহ্র বাণীঃ “হে মু’মিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের ধারেও যেয়োনা, যতক্ষন না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার, আর যদি তোমরা পথবাহী না হও
তবে অপবিত্র অবস্থায়ও না, যতক্ষন না তোমরা গোসল কর।
আর তোমরা যদি পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ যদি শৌচাগার থেকে আসে অথবা
স্ত্রীসংগম করে, আর পানি না পায়, তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম কর, এবং তা মুখ ও হাতে বুলাবে।
আল্লাহ্ পাপ মোচনকারী ও ক্ষমাশীল। (৪ : ৪৩)
২৪৬।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানবাতের গোসল করতেন, তখন প্রথমে তাঁর হাত দু’টো ধুয়ে নিতেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূর মত
উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতেন। তারপর তাঁর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে নিয়ে চুলের গোড়া
খিলাল করতেন। তারপর তাঁর উভয় হাতের তিন আঁজলা পানি মাথায় ঢালতেন। তারপর তাঁর সারা
দেহের উপর পানি পৌঁছিয়ে দিতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪। গোসলের পূর্বে উযূ করা
২৪৭। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ
(রহঃ) ..... মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের উযূর ন্যায় উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন, অবশ্য পা দুটো ছাড়া এবং তাঁর লজ্জাস্থান ও যে যে স্থানে নাপাক লেগেছে তা ধুয়ে
নিলেন। তারপর নিজের উপর পানি ঢেলে দেন। তারপর সেখান থেকে সরে গিয়ে পা দুটো ধুয়ে
নেন। এই ছিল তাঁর জানবাতের গোসল।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫। স্বামী-স্ত্রীর একসাথে গোসল
২৪৮। আদম ইবনু আবূ ইয়াস
(রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ও নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্রে (কাদাহ) থেকে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম।
সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬। এক সা’ বা অনুরূপ পাত্রের পানিতে গোসল
২৪৯। আবদুল্লাহ ইবনু
মুহাম্মদ (রহঃ) .... আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ও ‘আয়িশা
(রাঃ)-এর ভাই ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তাঁর ভাই তাঁকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি প্রায় এক
সা’ (তিন কেজির চেয়ে কিছু পরিমাণ বেশি)-এর সমপরিমান এক পাত্র আনালেন। তারপর তিনি
গোসল করলেন এবং নিজের মাথার উপর পানি ঢাললেন। তখন আমাদের ও তাঁর মাঝে পর্দা ছিল।
আবূ ‘আবদুল্লাহ [ইমাম
বুখারী (রহঃ)] বলেন যে, ইয়াযীদ ইবনু হারূন (রহঃ), বাহয ও জুদ্দী (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে نَحْوًا مِنْ صَاعٍ এর পরিবর্তে قَدْرِ صَاعٍ (এক সা’ পরিমাণ)-এর কথা বর্ণনা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬। এক সা’ বা অনুরূপ পাত্রের পানিতে গোসল
২৫০। আবদুল্লাহ ইবনু
মুহাম্মদ (রহঃ) ... আবূ জা’ফর (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ও তাঁর পিতা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর কাছে ছিলেন। সেখানে আরো কিছু
লোক ছিলেন। তাঁরা তাঁকে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, এক সা’ তোমার জন্য যথেষ্ট। তখন এক ব্যাক্তি বলে উঠলঃ আমার জন্য তা যথেষ্ট নয়।
জাবির (রাঃ) বললেনঃ যাঁর মাথায় তোমার চাইতে বেশি চুল ছিল এবং তোমার চাইতে যিনি
উত্তম ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য তো এ পরিমাণই যথেষ্ট
ছিল। তারপর তিনি এক কাপড়ে আমাদের ইমামতি করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬। এক সা’ বা অনুরূপ পাত্রের পানিতে গোসল
২৫১। আবূ নু’আয়ম (রহঃ)
.... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও মায়মূনা (রাঃ) একই পাত্রের পানি দ্বারা গোসল করতেন।
আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘উয়ায়না (রহঃ) তাঁর শেষ জীবনে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে মায়মূনা
(রাঃ) থেকে ইহা বর্ণনা করতেন। তবে আবূ নু’আয়ম (রাঃ)-এর বর্ণনাই ঠিক।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭। মাথায় তিনবার পানি ঢালা
২৫২। আবূ নু’আয়ম (রহঃ)
.... জুবায়র ইবনু মুত’ইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মাথায় তিনবার পানি
ঢেলে থাকি। এই বলে তিনি উভয় হাতের দ্বারা ইশারা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭। মাথায় তিনবার পানি ঢালা
২৫৩। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার
(রহঃ) .... জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নিজের মাথায় তিনবার পানি ঢালতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭। মাথায় তিনবার পানি ঢালা
২৫৪। আবূ নু’আয়ম (রহঃ)
.... আবূ জা’ফর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমাকে জাবির
(রাঃ) বলেছেন, আমার কাছে তোমার চাচাত ভাই অর্থাৎ হাসান ইবনু মুহাম্মদ ইবনু হানাফিয়্যা
এসেছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, জানবাতের গোসল কিভাবে করতে
হয়? আমি বললাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তিন আঁজলা পানি নিতেন এবং নিজের মাথার উপর ঢেলে দিতেন। তারপর নিজের
সারা দেহে পানি পৌঁছিয়ে দিতেন। তখন হাসান আমাকে বললেন, আমার মাথার চুল খুব বেশি। আমি তাঁকে বললাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর চুল তোমার চেয়ে অধিক ছিল।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮। একবার পানি ঢেলে গোসল করা
২৫৫। মূসা ইবনু ইসমা‘ঈল
(রহঃ) ... ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মায়মূনা (রাঃ) বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য গোসলের
পানি রাখলাম। তিনি তাঁর হাত দু’বার বা তিনবার ধুয়ে নিলেন। পরে তাঁর বাম হাতে পানি
নিয়ে তাঁর লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেললেন। তারপর মাটিতে হাত ঘষলেন। তারপর কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন আর তাঁর চেহারা ও দু’হাত ধুয়ে নিলেন। এরপর তাঁর সারা দেহে
পানি ঢাললেন। তারপর একটু সরে গিয়ে দু’পা ধুয়ে নিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৯। গোসলে হিলাব* বা খুশবু ব্যবহার করা।
২৫৬। মুহাম্মদ ইবনুল
মূসান্না (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানবাতের গোসল করতেন, তখন হিলাবের অনুরূপ পাত্র চেয়ে নিতেন। তারপর এক আঁজলা পানি নিয়ে প্রথমে মাথার
ডান পাশ এবং পরে বাম পাশ ধুয়ে ফেলতেন। দু’হাতে মাথার মাঝখানে পানি ঢালতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮০। জানাবাতের গোসলে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া
২৫৭। উমর ইবনু হাফস্ ইবনু
গিয়াস (রহঃ) .... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, মায়মূনা (রাঃ) বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য গোসলের
পানি ঢেলে রাখলাম। তিনি তাঁর ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতে পানি ঢাললেন এবং উভয় হাত
ধুইলেন। এরপর তাঁর লজ্জাস্থান ধুয়ে নিলেন এবং মাটিতে তাঁর হাত ঘষে নিলেন। পরে তা
ধুয়ে কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন, তারপর তাঁর চেহারা ধুইলেন এবং মাথার উপর পানি ঢাললেন। পরে ঐ স্থান থেকে সরে
গিয়ে দুই পা ধুইলেন। অবশেষে তাঁকে একটি রুমাল দেওয়া হল, কিন্তু তিনি তা দিয়ে শরীর মুছলেন না।
পরিচ্ছেদঃ ১৮১। পরিচ্ছন্নতার জন্য মাটিতে হাত ঘষা
২৫৮। আবদুল্লাহ ইবনু
যুবাইর হুমায়দী (রহঃ) .... মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানবাতের গোসল করলেন। তিনি নিজের
লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেললেন। তারপর হাত ঘষলেন এবং তা ধুইলেন। তারপর সালাতের উযূর মত
উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। গোসল শেষ করে তিনি তাঁর দু পা ধুইলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮২। যখন জানাবাত ছাড়া হাতে কোন নাপাকী না থাকে, ফরয গোসলের আগে হাত না ধুয়ে পানির পাত্রে তা প্রবেশ করানো যায় কি?
وَأَدْخَلَ ابْنُ عُمَرَ وَالْبَرَاءُ بْنُ عَازِبٍ يَدَهُ فِي الطَّهُورِ، وَلَمْ يَغْسِلْهَا ثُمَّ تَوَضَّأَ. وَلَمْ يَرَ ابْنُ عُمَرَ وَابْنُ عَبَّاسٍ بَأْسًا بِمَا يَنْتَضِحُ مِنْ غُسْلِ الْجَنَابَةِ
ইবন
‘উমর (রাঃ) ও বারা ইবন ‘আযিব (রাঃ) হাত না ধুয়ে পানিতে হাত ঢুকিয়েছেন, তারপর উযূ করেছেন। ইবন ‘উমর (রাঃ) ও ইবন ‘আব্বাস (রাঃ) যে পানিতে ফরয গোসলের
পানির ছিটা পড়েছে তা ব্যবহারে কোন দোষ মনে করতেন না।
২৫৯।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্রের পানি দিয়ে
এভাবে গোসল করতাম যে, তাতে আমাদের দু’জনের হাত
একের পর এক পড়তে থাকত।
পরিচ্ছেদঃ ১৮২। যখন জানাবাত ছাড়া হাতে কোন নাপাকী না থাকে, ফরয গোসলের আগে হাত না ধুয়ে পানির পাত্রে তা প্রবেশ করানো যায় কি?
২৬০। মূসা’দ্দাদ (রহঃ)
.... ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানবাতের গোসল করার সময় প্রথমে হাত ধুয়ে নিতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮২। যখন জানাবাত ছাড়া হাতে কোন নাপাকী না থাকে, ফরয গোসলের আগে হাত না ধুয়ে পানির পাত্রে তা প্রবেশ করানো যায় কি?
২৬১। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ)
.... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ও নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্রের পানি দিয়ে জানবাতের গোসল করতাম।
‘আবদুর
রহমান ইবনু কাসিম (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা
করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮২। যখন জানাবাত ছাড়া হাতে কোন নাপাকী না থাকে, ফরয গোসলের আগে হাত না ধুয়ে পানির পাত্রে তা প্রবেশ করানো যায় কি?
২৬২। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ)
.... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও তার স্ত্রীদের কেউ কেউ একই পাত্রের পানি নিয়ে গোসল করতেন। মুসলিম
(রহঃ) এবং ওয়াহ্ব ইবনু জারীর (রহঃ) শু’বা (রাঃ) থেকে ‘তা ফরয গোসল ছিল’ বলে বর্ণনা
করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩। গোসলের সময় ডান হাত থেকে বাম হাতের উপর পানি
ঢালা।
২৬৩। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল
(রহঃ) .... মায়মূনা বিনত হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য গোসলের পানি রেখে পর্দা করে
দিলাম। তিনি পানি দিয়ে দু’বার কিংবা তিনবার হাত ধুইলেন। সুলায়মান (রহঃ) বলেন, তৃতীয়বারের কথা বলেছেন কিনা মনে পড়ে না। তখন তিনি ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতে
ঢাললেন এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে নিলেন। তারপর তাঁর হাত মাটিতে বা দেওয়ালে ঘষলেন। পরে
তিনি কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন এবং তাঁর
চেহারা ও দু’ হাত ধুইলেন এবং মাথা ধুয়ে ফেললেন্ তারপর তাঁর শরীরে পানি ঢেলে দিলেন।
পরে সেখান থেকে সরে গিয়ে তাঁর দু’পা ধুইলেন। অবশেষে আমি তাঁকে একখন্ড কাপড় দিলাম; কিন্তু তিনি হাতের ইশারায় নিষেধ করলেন এবং তা নিলেন না।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪। গোসল ও উযূর অঙ্গ পৃথকভাবে ধোয়া।
وَيُذْكَرُ عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ غَسَلَ قَدَمَيْهِ بَعْدَ مَا جَفَّ وَضُوءُهُ
ইবন
‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি উযূর অঙ্গসমূহ শুকিয়ে
যাওয়ার পর দু’পা ধুয়েছিলেন।
২৬৪।
মুহাম্মদ ইবনু মাহবূব (রহঃ) .... মায়মূনা (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম, তিনি উভয় হাতে পানি ঢেলে
দু’বার করে বা তিনবার করে তা ধুইয়ে নিলেন। এরপর তিনি ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতে
ঢাললেন এবং তাঁর লজ্জাস্থান ধুইলেন। পরে তাঁর হাত মাটিতে ঘষলেন। তারপর কুলি করলেন
ও নাকে পানি দিলেন। তারপর তাঁর মাথা তিনবার ধুইলেন এবং তাঁর সারা শরীরে পানি ঢাললেন।
অবশেষে সেখান থেকে একটু সরে গিয়ে তাঁর দু’পা ধুয়ে ফেললেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৫। একাধিকবার বা একাধিক স্ত্রীর সাথে সংগত
হওয়ার পর একবার গোসল করা।
২৬৫। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার
(রহঃ) .... মুহাম্মদ ইবনু মুনতাশির (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে [আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)]-এর উক্তিটি*
উল্লেখ করলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ আবূ ‘আবদুর রহমানকে রহম করুন। আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুশবু লাগাতাম, তারপর তিনি তাঁর স্ত্রীদের
সঙ্গে মিলিত হতেন। তারপর ভোরবেলায় এমন অবস্থায় ইহ্রাম বাঁধতেন যে, তাঁর দেহ থেকে খুশবু ছড়িয়ে পড়তো।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৫। একাধিকবার বা একাধিক স্ত্রীর সাথে সংগত
হওয়ার পর একবার গোসল করা।
২৬৬। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার
(রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণের কাছে দিনের বা রাতের কোন এক সময়
পর্যায়ক্রমে মিলিত হতেন। তাঁরা ছিলেন এগারজন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি এত শক্তি রাখতেন? তিনি বললেন, আমরা পরস্পর বলাবলি করতাম
যে, তাঁকে ত্রিশজনের শক্তি দেওয়া হয়েছে। সা’ঈদ (রহঃ) কাতাদা
(রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আনাস (রাঃ) তাঁদের কাছে
হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে (এগারজনের স্থলে) নয়জন স্ত্রীর কথা বলেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬। মযী বের হলে তা ধুয়ে ফেলা ও উযূ করা।
২৬৭। আবূল ওলীদ (রহঃ) ....
‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমার অধিক মযী
বের হতো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা আমার স্ত্রী হওয়ার কারনে
আমি একজনকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার
জন্য পাঠালাম। তিনি প্রশ্ন করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ উযূ
(ওজু/অজু/অযু) কর এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেল।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭। খুশবু লাগিয়ে গোসল করার পর খুশবুর তাসির
থেকে গেলে।
২৬৮। আবূ নু’মান (রহঃ)
.... মুহাম্মদ ইবনু মুনতাশির (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)-এর উক্তি
উল্লেখ করলাম, “আমি এমন অবস্থায় ইহরাম বাঁধা পছন্দ করি না, যাতে সকালে আমার দেহ থেকে খুশবু ছড়িয়ে পড়ে।” ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুগন্ধি লাগিয়েছি, তারপর তিনি পর্যায়ক্রমে তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন এবং তাঁর ইহ্রাম
অবস্থায় প্রভাত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭। খুশবু লাগিয়ে গোসল করার পর খুশবুর তাসির
থেকে গেলে।
২৬৯। আদম ইবনু (রহঃ) ....
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি যেন এখনো
দেখছি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহ্রাম অবস্থায় তাঁর
সিথিতে খুশবুর ঔজ্জ্বল্য রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৮। চুল খিলাল করা এবং চামড়া ভিজেছে বলে নিশ্চিত
হওয়ার পর তাতে পানি ঢালা।
২৭০। আবদান (রহঃ) .....
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাবতের গোসল করতেন, তখন তিনি দু’হাত ধুইতেন এবং সালাতের উযূর মত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতেন। তারপর
গোসল করতেন। পরে তাঁর হাত দিয়ে চুল খিলাল করতেন। চামড়া ভিজেছে বলে যখন তিনি
নিশ্চিত হতেন, তখন তাতে তিনবার পানি ঢালতেন। তারপর সমস্ত শরীর ধুয়ে
ফেলতেন। ‘আয়িশা (রাঃ) আরো বলেছেনঃ আমি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একই পাত্র থেকে গোসল করতাম। আমরা একই সাথে তা থেকে আঁজলা ভরে পানি
নিতাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯। জানাবাত অবস্থায় যে উযূ করে সমস্ত শরীর ধোয়
কিন্তু উযূর প্রত্যঙ্গগুলো দ্বিতীয়বার ধোয় না।
২৭১। ইউসুফ ইবনু ‘ঈসা
(রহঃ) ..... মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানবাতের গোসলের জন্য পানি রাখলেন। তারপর দু’বার
বা তিনবার ডান হাতে বাম হাতের উপর পানি ঢাললেন এবং তাঁর লজ্জাস্থান ধুইলেন। তারপর
তাঁর হাত মাটিতে বা দেওয়ালে দু’বার বা তিনবার ঘষলেন। পরে তিনি কুলি করলেন ও নাকে
পানি দিলেন এবং চেহারা ও দু’হাত ধুইলেন। তারপর তাঁর মাথায় পানি ঢাললেন এবং তাঁর
শরীর ধুইলেন। একটু সরে গিয়ে তাঁর দুই পা ধুইলেন। মায়মূনা (রাঃ) বলেনঃ এরপর আমি
একখন্ড কাপড় দিলে তিনি তা নিলেন না, বরং নিজ হাতে পানি ঝেড়ে
ফেলতে থাকলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯০। মসজিদের ভিতরে নিজের জানাবাতের কথা স্মরণ
হলে তখনেই বেরিয়ে পড়বে, তায়াম্মুম করতে হবে না
২৭২। আবদুল্লাহ ইবনু
মুহাম্মদ (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার সালাতের
ইকামত দেওয়া হলে সবাই দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে বেরিয়ে আসলেন। তিনি মূসাল্লায়
দাঁড়ালে তাঁর মনে হল যে, তিনি জানবাত অবস্থায় আছেন।
তখন তিনি আমাদের বললেনঃ স্ব স্ব স্থানে দাঁড়িয়ে থাক। তিনি ফিরে গিয়ে গোসল করে আবার
আমাদের সামনে আসলেন এবং তাঁর মাথা থেকে পানি ঝরছিল। তিনি তাকবীর (তাহ্রীমা)
বাঁধলেন, আর আমরাও তাঁর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম।
আবদুল আ’লা (রহঃ) যুহরী
(রহঃ) থেকে এবং আওযাঈ (রহঃ)-ও যুহরী (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯১। জানাবাতের গোসলের পর দু’হাত ঝাড়া
২৭৩। আবদান (রহঃ) ... মায়মূনা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম এবং কাপড় দিয়ে পর্দা
করে দিলাম। তিনি দু’হাতের উপর পানি ঢেলে উভয় হাত ধুয়ে নিলেন। তারপর ডান হাত দিয়ে
বাম হাতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধুইলেন। পরে হাতে মাটি লাগিয়ে ঘষে নিলেন এবং ধুয়ে
ফেললেন। এরপর কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন, চেহারা ও দু’হাত (কনুই পর্যন্ত) ধুইলেন। তারপর মাথায় পানি ঢাললেন ও সমস্ত
শরীরে পানি পৌঁছালেন। তারপর একটু সরে গিয়ে দু’পা ধুয়ে নিলেন। এরপর আমি তাঁকে কাপড়
দিলাম কিন্তু তিনি তা নিলেন না। তিনি দু’হাত ঝাড়তে ঝাড়তে চলে গেলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯২। মাথার ডান দিক থেকে গোসল শুরু করা।
২৭৪। খাল্লাদ ইবনু
ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) ..... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমাদের কারও
জানবাতের গোসলের প্রয়োজন হলে সে দু’হাতে পনি নিয়ে তিনবার মাথায় ঢালত। পরে হাতে
পানি নিয়ে ডান পাশে তিনবার এবং আবার হাতে পানি নিয়ে বাম পাশে তিনবার ঢালত।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩। নির্জনে বিবস্ত্র হয়ে গোসল করা এবং পর্দা
করে গোসল করা। পর্দা করে গোসল করাই উত্তম।
وَقَالَ بَهْزٌ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللَّهُ أَحَقُّ أَنْ يُسْتَحْيَا مِنْهُ مِنَ النَّاسِ
বাহয
(রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লজ্জা করার ব্যাপারে
মানুষের চেয়ে আল্লাহ্ পাকই অধিকতর হকদার।
২৭৫।
ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনী ইসরাঈলের লোকেরা নগ্ন হয়ে একে
অপরকে দেখা অবস্থায় গোসল করত। কিন্তু মূসা (আঃ) একাকী গোসল করতেন। এতে বনী
ইসরাঈলের লোকেরা বলাবলি করছিল, আল্লাহর কসম! মূসা (আঃ)
কোষবৃদ্ধি’ রোগের কারনেই আমাদের সাথে গোসল করে না। একবার মূসা (আঃ) একটা পাথরের
উপর কাপড় রেখে গোসল করছিলেন। পাথরটা তাঁর কাপড় নিয়ে পালাতে লাগল। তখন মূসা (আঃ)
“পাথর! আমার কাপড় দাও, পাথর! আমার কাপড় দাও” বলে
পেছন পেছন ছুটলেন। এদিকে বনী ইসরাঈল মূসার দিকে তাকাল। তখন তারা বলল, আল্লাহর কসম! মূসার কোন রোগ নেই। মূসা (আঃ) পাথর থেকে কাপড় নিয়ে পরলেন এবং
পাথরটাকে পিটাতে লাগলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! পাথরটিতে ছয় কিংবা
সাতটি পিটুনির দাগ পড়ে গেল।
আবূ
হুরায়রা (রাঃ) আরো বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক সময় আইয়ূব (আঃ) বিবস্ত্রাবস্থায় গোসল করছিলেন। তখন তাঁর উপর
সোনার পঙ্গপাল বর্ষিত হচ্ছিল। আইয়ূব (আঃ) তাঁর কাপড়ে সেগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন। তখন
তাঁর রব তাঁকে বললেনঃ হে আইয়ূব! আমি কি তোমাকে এগুলো থেকে অমুখাপেক্ষী করিনি? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, আপনার ইযযতের কসম! অবশ্যই করেছেন। তবে আমি আপনার বরকত থেকে বেনিয়ায নেই। এভাবে
বর্ণনা করেছেন ইব্রাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একবার আইয়ূব আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বিবস্ত্রাবস্থায় গোসল করেছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪। লোকদের সামনে গোসলের সময় পর্দা করা।
২৭৬। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা (রহঃ) ... উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর কাছে গিয়ে তাঁকে গোসলরত অবস্থায় দেখলাম, ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা
করে রেখেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইনি
কে? আমি বললামঃ আমি উম্মে হানী।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪। লোকদের সামনে গোসলের সময় পর্দা করা।
২৭৭। আবদান (রহঃ) ...
মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য পর্দা করেছিলাম আর তিনি জানবাতের গোসল
করছিলেন। তিনি দু’হাত ধুইলেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি নিয়ে লজ্জাস্থান
এবং যেখানে কিছু লেগেছিল তা ধুয়ে ফেললেন। তারপর মাটিতে বা দেওয়ালে হাত ঘষলেন এবং
দু’পা ছাড়া সালাতের উযূর মতই উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর তাঁর সমস্ত শরীরে
পানি পৌঁছালেন। তারপর একটু সরে গিয়ে দু’পা ধুইলেন।
আবূ আওয়ানা (রহঃ) ও ইবনু
ফুযাইল (রহঃ) (ستر) সতর (পর্দা করা)-এর ব্যাপারটি এই হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫। মহিলাদের ইহ্তিলাম (স্বপ্নদোষ) হলে।
২৭৮। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ
(রহঃ) .... উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবূ তালহা (রাঃ)-এর স্ত্রী উম্মে সুলায়ম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে এসে বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ্
তা’আলা হকের ব্যাপারে লজ্জা করেন না। স্ত্রীলোকের ইহ্তিলাম (স্বপ্নদোষ) হলে কি
গোসল ফরয হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ।
যদি তারা বীর্য দেখে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬। জুনুবী ব্যক্তির ঘাম, নিশ্চয় মুসলিম অপবিত্র নয়
২৭৯। আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ
(রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ তাঁর সঙ্গে
মদিনার কোন এক পথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেখা হল। আবূ হুরায়রা
(রাঃ) তখন জানবাতের অবস্থায় ছিলেন। তিনি বলেন, আমি নিজেকে নাপাক মনে করে
সরে পড়লাম। পরে আবূ হুরায়রা (রাঃ) গোসল করে এলেন। পুনরায় সাক্ষাৎ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ আবূ হুরায়রা! কোথায় ছিলে? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি জানবাতের অবস্থায়
আপনার সঙ্গে বসা সমীচীন মনে করিনি। তিনি বললেনঃ সুবাহানাল্লাহ্! মু’মিন নাপাক হয়
না।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৭। জানাবাতের সময় বের হওয়া এবং বাজার ইত্যাদিতে
চলাফেরা করা।
وَقَالَ عَطَاءٌ يَحْتَجِمُ الْجُنُبُ وَيُقَلِّمُ أَظْفَارَهُ، وَيَحْلِقُ رَأْسَهُ، وَإِنْ لَمْ يَتَوَضَّأْ
‘আতা (রহঃ) বলেছেন, জুনুবী ব্যক্তি উযূ না করেও শিঙ্গা লাগাতে, নখ কাটতে এবং মাথা কামাতে
পারে।
২৮০।
আবদুল্লাহ আ’লা (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই রাতে পর্যায়ক্রমে তাঁর
স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হতেন। তখন তাঁর নয়জন স্ত্রী ছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৭। জানাবাতের সময় বের হওয়া এবং বাজার ইত্যাদিতে
চলাফেরা করা।
২৮১। আয়্যাশ (রহঃ) ... আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমার সঙ্গে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ হল, তখন আমি জুনুবী ছিলাম।
তিনি আমার হাত ধরলেন, আমি তাঁর সঙ্গে চললাম। এক
স্থানে তিনি বসে পড়লেন। তখন আমি সরে পড়ে বাসস্থানে এসে গোসল করলাম। আবার তাঁর কাছে
গিয়ে তাঁকে বসা অবস্থায় পেলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ আবূ হুরায়রা! কোথায় ছিলে? আমি তাঁকে (ঘটনা) বললাম। তখন তিনি বললেনঃ সুবহানাল্লাহ্! মু’মিন অপবিত্র হয়
না।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৮। জুনুবী ব্যক্তির গোসলের আগে উযূ করে ঘরে
অবস্থান করা।
২৮২। আবূ নু’আয়ম (রহঃ)
.... আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ‘আয়িশা
(রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলামঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জানবাতের অবস্থায়
ঘুমাতেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তবে তিনি উযূ
(ওজু/অজু/অযু) করে নিতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৯। জুনুবীর নিদ্রা
২৮৩। কুতাইবা ইবনু সা’ঈদ
(রহঃ) .... ‘উমর ইবনুু’ল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আমাদের কেউ জানবাতের অবস্থায়
ঘুমাতে পারবে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নিলে জানবাতের অবস্থায়ও ঘুমাতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ২০০. পরিচ্ছেদঃ জুনুবী উযূ করে ঘুমাবে।
২৮৪। ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র
(রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানবাতের অবস্থায় ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন তিনি
লজ্জাস্থান ধুয়ে সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূর মত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ২০০. পরিচ্ছেদঃ জুনুবী উযূ করে ঘুমাবে।
২৮৫। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল
(রহঃ) ... ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘উমর (রাঃ) নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আমাদের কেউ জুনুবী অবস্থায়
ঘুমাতে পারবে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যদি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নেয়।
পরিচ্ছেদঃ ২০০. পরিচ্ছেদঃ জুনুবী উযূ করে ঘুমাবে।
২৮৬। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ
(রহঃ) ..... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ উমর ইবনুল
খাত্তাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, রাত্রে কোন সময় তাঁর জানবাতের গোসল ফরয হয় (তখন কি করতে হবে?) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে, লজ্জাস্থান ধুয়ে নিবে, তারপর ঘুমাবে।
পরিচ্ছেদঃ ২০১। দু’লজ্জাস্থান পরস্পর মিলিত হলে।
২৮৭। মু‘আয ইবনু ফাযালা
(রহঃ) ও আবূ নু’য়ম (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ স্ত্রীর চার শাখার মাঝে বসে
তার সাথে সঙ্গত হলে, গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়।
‘আমর
(রহঃ) শু’বার সূত্রে এই হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর মূসা (রহঃ) হাসান
[বসরী (রহঃ)] সূত্রেও অনুরূপ বলেছেন।
আবূ ‘আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারি)
(রহঃ) বলেনঃ এটা উত্তম ও অধিকতর মজবুত। মতভেদের করনে আমরা অন্য হাদীসটিও বর্ণনা
করেছি, গোসল করাই অধিকতর সাবধানতা।
পরিচ্ছেদঃ ২০২। স্ত্রী অঙ্গ থেকে কিছু লাগলে ধুয়ে ফেলা
২৮৮। আবূ মা’মার (রহঃ)
.... যায়দ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি উসমান ইবনু ‘আফফান
(রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ স্বামী-স্ত্রী সংগত হলে যদি মনি বের না হয় (তখন কি করবে)? উসমান (রাঃ) বললেনঃ সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূর মত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে
এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে। ‘উসমান (রাঃ) বলেনঃ আমি এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। এরপর ‘আলী ইবনু আবূ তালিব, যুবায়র ইবনুল-আওওয়াম, তালহা ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ্ ও উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তাঁরা
সবাই ঐ একই জবাব দিয়েছেন। আবূ সালামা (রহঃ) আবূ আয়্যূব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি [আবূ আবয়্যূব (রাঃ)] এ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে শুনেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২০২। স্ত্রী অঙ্গ থেকে কিছু লাগলে ধুয়ে ফেলা
২৮৯। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ...
উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! স্ত্রীর সাথে
সঙ্গত হলে যদি বীর্য বের না হয় (তার হুকুম কি)? তিনি বললেনঃ স্ত্রীর থেকে
যা লেগেছে তা ধুয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে ও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
আবু আবূদুল্লাহ্ (ইমাম
বুখারী) (রহঃ) বলেনঃ গোসল করাই শ্রেয়। আর তা-ই সর্বশেষ হুকুম। আমি এই শেষের হাদীসটি
বর্ণনা করেছি মতভেদ থাকার কারনে। কিন্তু পানি (গোসল) অধিক পবিত্রকারী।
তায়াম্মুম
পরিচ্ছেদঃ ২৩৩। আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “এবং তোমরা পানি না
পেলে পাক মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে এবং তা তোমরা তোমাদের মুখ ও হাতে বুলাবে”
(৪ঃ৪৩)
৩২৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ
(রহঃ) ..... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কোন এক সফরে বেরিয়েছিলাম। যখন আমরা ‘বায়যা’ অথবা ‘যাতুল জায়শ’
নামক স্থানে পৌছালাম তখন আমার একখানা হার হারিয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে হারের খোঁজে থেমে গেলেন আর লোকেরাও তাঁর সঙ্গে থেমে
গেলেন, অথচ তাঁরা পানির নিকটে ছিলেন না। তখন লোকেরা আবূ বকর (রাঃ)
এর কাছে এসে বললেনঃ ‘আয়িশা কি করেছে আপনি কি দেখেন নি? তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও লোকদের আটকিয়ে ফেলেছেন, অথচ তাঁরা পানির নিকটে নেই এবং তাদের সাথেও পানি নেই।
আবূ বকর (রাঃ) আমার নিকট
আসলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উরুর
উপরে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) বললেনঃ তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর লোকদের আটকিয়ে ফেলেছো! অথচ আশেপাশে কোথাও পানি নেই। ‘আয়িশা
(রাঃ) বললেন আবূ বকর আমাকে খুব তিরস্কার করলেন আর, আল্লাহর ইচ্ছা, তিনি যা খুশি তাই বললেন। তিনি আমার কোমরে আঘাত দিতে লাগলেন। আমার উরুর উপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথা থাকায় আমি নড়তে পারছিলাম না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরে উঠলেন, কিন্তু পানি ছিল না। তখন আল্লাহ তা’আলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন। তারপর
সবাই তায়াম্মুম করে নিলেন।
উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ)
বলেছেনঃ হে আবূ বকরের পরিবার বর্গ! এটাই আপনাদের প্রথম বরকত নয়। ‘আয়িশা (রাঃ)
বলেনঃ তারপর আমি যে উটে ছিলাম তাকে দাঁড় করালে দেখি আমার হার খানা তার নীচে পড়ে
আছে।
পরিচ্ছেদঃ ২৪১। পরিচ্ছেদ নাই।
৩২৮। মুহাম্মদ ইবনু সিনান
ও সা’ঈদ ইবনু নাযর (রহঃ) .... জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় দান করা
হয়েছে, যা আমার পূর্বে কাউকে দেওয়া হয়নি। (১) আমাকে এমন প্রভাব
দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যে, একমাস দূরত্বেও তা
প্রতিফলিত হয়; (২) সমস্ত যমীন আমার জন্য প্রবিত্র ও সালাত (নামায/নামাজ)
আদায়ের উপযোগি করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মাতের যে কোন লোক ওয়াক্ত হলেই সালাত আদায়
করতে পারবে; (৩) আমার জন্য গনীমতের মাল হালাল করে দেওয়া হয়েছে, যা আমার আগে আর কারো জন্য হালাল করা হয়নি; (৪) আমাকে (ব্যাপক)
শাফা’আতের অধিকার দেওয়া হয়েছে; (৫) সমস্ত নাবী প্রেরিত
হতেন কেবল তাদের সম্প্রদায়ের জন্য, আর আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে
সমগ্র মানব জাতির জন্য।
পরিচ্ছেদঃ ২৩৪। পরিচ্ছেদঃ মাটি ও পানি পাওয়া না গেলে
৩২৯। যাকারিয়্যা ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি এক সময়ে (তাঁর বোন)
আসমা (রাঃ)-এর হার ধার করে নিয়ে গিয়েছিলেন। (পথিমধ্যে) হারখানা হারিয়ে গেল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটির খোঁজে লোক পাঠালেন। তিনি এমন
সময় হারটি পেলেন, যখন তাদের সালাতের ওয়াক্ত
হয়ে গিয়েছিল অথচ তাদের কাছে পানি ছিল না। তাঁরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
তারপর বিষয়টি তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বর্ণনা
করেন। তখন আল্লাহ তা’আলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করেন। সেজন্য উসায়দ ইবনু হুযায়র
(রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ)–কে লক্ষ্য করে বললেনঃ আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
আল্লাহর কসম! আপনি যে কোন অপছন্দনীয় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন, তাতেই আল্লাহ তা’আলা আপনার ও সমস্ত মুসলমানের জন্য কল্যাণ রেখেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৩৫। মুকীম অবস্থায় পানি না পেলে এবং সালাত ছুটে
যাওয়ার ভয় থাকলে তায়াম্মুম করা।
وَبِهِ قَالَ عَطَاءٌ. وَقَالَ الْحَسَنُ فِي الْمَرِيضِ عِنْدَهُ الْمَاءُ وَلاَ يَجِدُ مَنْ يُنَاوِلُهُ يَتَيَمَّمُ. وَأَقْبَلَ ابْنُ عُمَرَ مِنْ أَرْضِهِ بِالْجُرُفِ، فَحَضَرَتِ الْعَصْرُ بِمَرْبَدِ النَّعَمِ فَصَلَّى، ثُمَّ دَخَلَ الْمَدِينَةَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ فَلَمْ يُعِدْ
‘আতা (রহঃ)-এর অভিমতও তাই। হাসান বসরী (রহঃ)
বলেনঃ যে রোগের কাছে পানি আছে কিন্তু তাঁর কাছে তা পৌছানোর কোন লোক না থাকে, তবে সে তায়াম্মুম করবে। ইবন ‘উমর (রাঃ) জুরুফ নামক স্থানের জমি থেকে ফেরার সময়
‘মারবাদুন্না’আম’-এ পৌঁছালে আসরের সময় হয়ে যায়। তখন তিনি (তায়াম্মুম) করে সালাত
আদায় করলেন। পরে তিনি মদীনা পৌছালেন। তখনো সূর্য উপরে ছিল। কিন্তু তিনি সালাত
পুনরায় আদায় করলেন না
৩৩০।
ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ..... আবূ জুহাইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদিনার নিকটস্থ) ‘বি'রে
জামাল’ থেকে আসছিলেন। পথিমধ্যে তাঁর সাথে এক ব্যাক্তির দেখা হল। লোকটি তাঁকে সালাম
দিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জওয়াব না দিয়ে দেয়ালের কাছে অগ্রসর হয়ে
তাতে (হাত মেরে) নিজ চেহারা ও হস্তদ্বয় মাসেহ করে নিলেন, তারপর সালামের জওয়াব দিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৩৬। তায়াম্মুমের জন্য মাটিতে হাত মারার পর
হস্তদ্বয়ে ফুঁ দেওয়া
৩৩১। আদম (রহঃ) ..... সা'ঈদ
ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আবযা তাঁর পিতা [আবদুর রহমান (রাঃ)] থেকে বর্ণিত, এক ব্যাক্তি ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট এসে জানতে চাইলঃ একবার আমার গোসলের
প্রয়োজন হল অথচ আমি পানি পেলাম না। তখন আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) উমর ইবনুল
খাত্তাব (রাঃ)-কে বললেনঃ আপনার কি সেই ঘটনা স্মরণ আছে যে, এক সময় আমরা দু'জন সফরে ছিলাম এবং দু'জনেরই
গোসলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। আপনি তো সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন না। আর আমি
মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে সালাত আদায় করলাম। তারপর আমি ঘটনাটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কাছে বর্ণনা করলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
তোমার জন্য তো এতটুকুই যথেষ্ট ছিল। এ বলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'হাত
মাটিতে মারলেন এবং দু'হাতে ফুঁ দিয়ে তাঁর চেহারা ও উভয় হাত মাসেহ
করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৩৭। মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয়ে তায়াম্মুম করা
৩৩২। হাজ্জাজ (রহঃ) ....
আবদুর রহমান ইবনু আবযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘আম্মার
(রাঃ)-ও এ কথা (যা পূর্বের হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে তা) বর্ণনা করেছেন। শু’বা
(রহঃ) নিজের হস্তদ্বয় মাটিতে মেরে মুখের কাছে নিলেন (ফুঁ দিলেন)। তারপর নিজের
চেহারা ও হস্তদ্বয় মাসেহ করলেন। নাযর (রহঃ) শু’বা (রহঃ) সুত্রে অনুরূপ বর্ণনা
করেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৩৭। মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয়ে তায়াম্মুম করা
৩৩৩। সুলায়মান ইবনু হারব
(রহঃ) .... ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু আবযা (রহঃ) তাঁর পিতা থকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (‘আবদুর রহমান) ‘উমর (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলেন, আর ‘আম্মার (রাঃ) তাঁকে বলেছিলেনঃ আমরা এক অভিযানে গিয়েছিলাম, আমরা উভয়ই জুনুবী হয়ে পড়লাম।
উক্ত রেওয়ায়েতে হাত
দু’টোতে ‘نَفَخَ فِيهِمَا’ এর স্থলে ‘تَفَلَ فِيهِمَا’ বলেছেন। উভয়েই সমার্থক।
পরিচ্ছেদঃ ২৩৭। মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয়ে তায়াম্মুম করা
৩৩৪। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর
(রহঃ) ... আবদুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘আম্মার (রাঃ)
‘উমর (রাঃ) কে বলেছিলেনঃ (আমি তায়াম্মুমের উদ্দেশ্যে) মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম। পরে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বলেছিলেনঃ চেহারা ও
হাত দু’টো মাসেহ করাই তোমার জন্য যথেষ্ট।
পরিচ্ছেদঃ ২৩৭। মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয়ে তায়াম্মুম করা
৩৩৫। মুসলিম (ইবনু
ইবরাহীম) (রহঃ) ... আবদুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘উমর (রাঃ) –এর কাছে উপস্থিত ছিলাম, ‘আম্মার (রাঃ) তাঁকে বললেন, এর পর রাবী পূর্বের হাদিসটি বর্ণনা করেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৩৭। মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয়ে তায়াম্মুম করা
৩৩৬। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার
(রহঃ) .... ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু আবযা তাঁর পিতা (‘আবদুর রহমান) থেকে বর্ণনা
করেন যে, ‘আম্মার (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মাটিতে হাত মারলেন এবং তাঁর চেহারা ও হস্তদ্বয় মাসেহ করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৩৮। পাক মাটি মুসলমানদের উযূর পানির স্থলবর্তী।
পবিত্রতার জন্য পানির পরিবর্তে এটাই যথেষ্ট।
وَقَالَ الْحَسَنُ يُجْزِئُهُ التَّيَمُّمُ مَا لَمْ يُحْدِثْ. وَأَمَّ ابْنُ عَبَّاسٍ وَهُوَ مُتَيَمِّمٌ. وَقَالَ يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ لاَ بَأْسَ بِالصَّلاَةِ عَلَى السَّبَخَةِ وَالتَّيَمُّمِ بِهَا
হাসান
(রহঃ) বলেনঃ হাদস না হওয়া পর্যন্ত তাঁর জন্য তায়াম্মুমই যথেষ্ট। ইবন ‘আব্বাস (রাঃ)
তায়াম্মুম করে ইমামতি করেছেন। ইয়াহইয়া ইবন সা’ঈদ (র) বলেনঃ লোনা ভূমিতে সালাত আদায়
করা বা তাতে তায়াম্মুম করার কোন বাধা নেই।
৩৩৭।
মুসাদ্দাদ (রহঃ) .... ইমরান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। আমরা রাতে চলতে চলতে
শেষরাতে এক স্থনে ঘুমিয়ে পড়লাম। মুসাফিরের জন্য এর চাইতে মধুর ঘুম আর হতে পারে না।
(আমরা এমন ঘোর নিদ্রায় নিমগ্ন ছিলাম যে,) সূর্যের তাপ ছাড়া অন্য
কিছু আমাদের জাগাতে পারেনি। সর্বপ্রথম জাগলেন অমুক, তারপর অমুক, তারপর অমুক। (রাবী) আবূ রাজা’ (রহঃ) তাঁদের সবারই নাম নিয়েছিলেন কিন্তু ‘আওফ
(রহঃ) তাঁদের নাম মনে রাখতে পারেন নি। চতুর্থবারে জেগে ওঠা ব্যাক্তি ছিলেন ‘উমর
ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমালে আমরা কেউ তাঁকে
জাগাতাম না, যতক্ষণ তা তিনি নিজেই জেগে উঠতেন। কারণ নিদ্রাবস্থায় তাঁর
উপর কি অবতীর্ণ হচ্ছে তা তো আমাদের জানানেই।
‘উমর (রাঃ) জেগে যখন মানুষের অবস্থা দেখলেন, আর তিনি ছিলেন দৃঢ়চিত্ত ব্যাক্তি—উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে শুরু করলেন। তিনি
ক্রমাগত উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে লাগলেন। এমন কি তাঁর শব্দে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জেগে উঠলেন। তখন লোকেরা তাঁর কাছে ওজর পেশ করলো। তিনি বললেনঃ কোন ক্ষতি
নেই বা বললেনঃ কোন ক্ষতি হবে না। এখান থেকে চল। তিনি চলতে লাগলেন। কিছু দূর গিয়ে
থামলেন। উযূর পানি আনলেন এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। সালাত (নামায/নামাজ)-এর
আযান দেওয়া হল। তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে দেখলেন, এক ব্যাক্তি পৃথক দাড়িয়ে আছেন। তিনি লোকদের সাথে সালাত আদায় করেন নি। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে অমুক! তোমাকে লোকদের
সাথে সালাত আদায় করতে কিসে বাধা দিল? তিনি বললেনঃ আমার উপর গোসল
ফরয হয়েছে। আথচ পানি নেই। তিনি বললেনঃ পবিত্র মাটি নাও (তায়াম্মুম কর), এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট।
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় সফর শুরু করলেন। লোকেরা তাঁকে পিপাসার কষ্ট
জানালো। তিনি অবতরণ করলেন, তারপর অমুক ব্যাক্তিকে
ডাকলেন। (রাবী) আবূ রাজা’ (রহঃ) তাঁর নাম উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু ‘আওফ (রহঃ) তা
ভুলে গিয়েছেন। তিনি ‘আলী (রাঃ)-কেও ডাকলেন। তারপর উভয়কেই পানি খুজে আনতে বললেন।
তাঁরা পানির খোজে বের হলেন। তাঁরা পথে এক মহিলাকে দুই মশক পানি উটের উপর করে নিতে
দেখলেন। তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেনঃ পানি কোথায়? সে বললোঃ গতকাল এ সময়ে আমি
পানির নিকটে ছিলাম। আমার পাত্র পেছনে রয়ে গেছে। তাঁরা বললেনঃ এখন আমাদের সঙ্গে
চলো। সে বললোঃ কোথায়? তাঁরা বললেনঃ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট। সে বললঃ সেই লোকটির কাছে যাকে সাবি’
(ধর্ম পরিবর্তনকারী) বলা হয়? তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ, তোমরা যাকে এই বলে থাক। আচ্ছা এখন চল।
তাঁরা
তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন এবং সমস্ত
ঘটনা খুলে বললেন। ‘ইমরান (রাঃ) বলেনঃ লোকেরা স্ত্রীলোকটিকে তাঁর উট থেকে নামালেন।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পাত্র আনতে বললেন এবং উভয় মশকের
মুখ খুলে তাতে পানি ঢাললেন এবং সেগুলোর মুখ বন্ধ করে দিলেন। তারপর সে মশকের নীচের
মুখ খুলে দিয়ে লোকদের মধ্যে পানি পান করার ও জন্তু-জানোয়ারকে পানি পান করানোর
ঘোষণা দিলেন। তাঁদের মধ্যে যার ইচ্ছা পানি পান করলেন ও জন্তুকে পান করালেন। অবশেষে
যে ব্যাক্তির গোসলের দরকার ছিল, তাকেও এক পাত্র পানি দিয়ে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ পানি নিয়ে যাও এবং গোসল সার। ঐ মহিলা
দাড়িয়ে দেখছিল যে তাঁর পানি নিয়ে কি করা হচ্ছে। আল্লাহর কসম! যখন তাঁর থেকে পানি
নেয়া শেষ হল তখন আমাদের মনে হল, মশকগুলো পুর্বাপেক্ষা অধিক
ভর্তি।
তারপর
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মহিলার জন্য কিছু একত্র কর। লোকেরা
মহিলার জন্য আজওয়া (বিশেষ খেজুর), আটা ও ছাতু এনে একত্র
করলেন। যখন তাঁরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী জমা করলেন, তখন তা একটা কাপড়ে বেধে মহিলাকে উটের উপর সওয়ার করালেন এবং তাঁর সামনে কাপড়ে
বাঁধা গাঁটরিটি রেখে দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
তুমি জান যে, আমার তোমার পানি মোটেই কম করিনি; বরং আল্লাহ তা’লাই আমাদের পানি পান করিয়েছেন।
এরপর
সে তাঁর পরিজনের কাছে ফিরে গেল। তাঁর বেশ দেরি হয়েছিল। পরিবারের লোকজন তাঁকে
জিজ্ঞেসা করল, হে অমুক! তোমার এত দেরি হল কেন? উত্তরে সে বললো একটা আশ্চার্যজনক ঘটনা! দু’জন লোকের সাথে আমার দেখা হয়েছিল।
তাঁরা আমাকে সেই লোকটির কাছে নিয়ে গিয়েছিল, যকে সাবি’ বলা হয়। আর
সেখানে সে এসব করল। এ বলে সে মধ্যমা ও তর্যনী আঙ্গুল দিয়ে আসমান ও যমীনের দিকে
ইশারা করে বলল, আল্লাহর কসম! সে এ দু’টির
সবচাইতে বড় জাদুকর, নয় তো সে বাস্তবিকই
আল্লাহর রাসূল। এ ঘটনার পর মুসলিমরা ওই মহিলার গোত্রের আশেপাশের মুশরিকদের উপর
হামলা করতেন কিন্তু মহিলার সাথে সম্পর্কযুক্ত গোত্রের কোন ক্ষতি করতেন না। একদিন
মহিলা নিজের গোত্রকে বললঃ আমার মনে হয় তারা ইচ্ছা করে তোমাদের নিষ্কৃতি দিচ্ছে। এ
সব দেখে কি তোমরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে না? তাঁরা সবাই মহিলাটির কথা
মেনে নিল এবং ইসলাম দাখিল হয়ে গেল।
আবূ
‘আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারি) (রহঃ) বলেনঃ صنباء শব্দের অর্থ নিজের দিন
ছেড়ে অন্যের দিন গ্রহন করা। আবুল ‘আলিয়া (রহঃ) বলেনঃ صابئين হচ্ছে আহলে কিতাবের একটা দল, যারা যবূর কিতাব পড়ে থাকে। أصب শব্দের অর্থ ঝুকে পড়া।
পরিচ্ছেদঃ ২৩৯। জুনুবী ব্যক্তির রোগ বৃদ্ধির, মৃত্যুর বা তৃষ্ণার্ত থেকে যাওয়ার আশঙ্কা বোধ হলে তায়াম্মুম করা।
وَيُذْكَرُ أَنَّ عَمْرَو بْنَ الْعَاصِ أَجْنَبَ فِي لَيْلَةٍ بَارِدَةٍ فَتَيَمَّمَ وَتَلاَ: (وَلاَ تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا) فَذَكَرَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ يُعَنِّفْ
বর্ণিত
আছে যে, এক শীতের রাতে আমর ইবনু’ল ‘আস (রাঃ) জুনুবী হয়ে পড়লে
তায়াম্মুম করলেন। আর (এ প্রসঙ্গে) তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ তোমরা নিজেদের
হত্যা করো না, নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (৮ : ২৯)
এরপর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তিনি তাকে
দোষারোপ করেন নি।
৩৩৮।
বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) ..... আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবূ মূসা (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ
(জুনুবী) পানি না পেলে কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না? ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেনঃ হ্যাঁ’ আমি এক মাসও যদি পানি না পাই তবে সালাত আদায়
করব না। এ ব্যাপারে লোকদের যদি অনুমতি দেই তা হলে তাঁরা একটু শীত বোধ করলেই এরূপ
করতে থাকবে। অর্থাৎ তায়াম্মুম করে সালাত আদায়
করবে। আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ তাহলে উমর (রাঃ)-এর সামনে ‘আম্মার (রাঃ)-এর কথার তারপর্য
কি হবে? তিনি উত্তরে বললেনঃ উমর (রাঃ) আম্মার (রাঃ)-এর কথায়
সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে আমি মনে করি না।
পরিচ্ছেদঃ ২৩৯। জুনুবী ব্যক্তির রোগ বৃদ্ধির, মৃত্যুর বা তৃষ্ণার্ত থেকে যাওয়ার আশঙ্কা বোধ হলে তায়াম্মুম করা।
৩৩৯। উমর ইবনু হাফস (রহঃ)
.... শাকীক ইবনু সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ‘আবদুল্লাহ
ইবনু মাস’ঊদ ও আবূ মূসা (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তাঁকে আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ
‘আবদুর রহমান। কেউ জুনুবী হলে যদি পানি না পায় তবে কি করবে? তখন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেনঃ পানি না পাওয়া পর্যন্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়
করবে না। আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ তাহলে ‘আম্মার (রাঃ) এর কথার উত্তরে আপনি কি বলবেন? তাঁকে যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন (তায়াম্মুম করে নেওয়া)
তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) বললেনঃ তুমি দেখ না উমর
(রাঃ) ‘আম্মারের এই কথায় সন্তুষ্ট ছিলেন না? আবূ মূসা (রাঃ) পুনরায়
বললেনঃ ‘আম্মারের কথা বাদ দিলেও তায়াম্মুমের আয়াতের কি ব্যাখ্যা করবেন? ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কোন উত্তর দিতে পারলেন না। তিনি তবুও বললেনঃ আমরা যদি
লোকদের তার অনুমতি দিয়ে দেই তাহলে আশঙ্কা হয়, কারো কাছে পানি ঠাণ্ডা মনে
হলেই তায়াম্মুম করবে। রাবী আ’মাশ (রহঃ) বলেনঃ আমি শাকীক (রহঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, আবদুল্লাহ (রাঃ) এ কারণে কি তায়াম্মুম অপছন্দ করেছিলেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
পরিচ্ছেদঃ ২৪০। তায়াম্মুমের জন্য মাটিতে একবার হাত মারা
৩৪০। মুহাম্মদ ইবনু সালাম
(রহঃ) .... শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ‘আবদুল্লাহ
(ইবনু মাস’ঊদ) ও আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ)-এর সঙ্গে বসা ছিলাম। আবূ মূসা (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ
(রাঃ)-কে বললেনঃ কোন ব্যাক্তির জুনুবী হলে সে যদি এক মাস পর্যন্ত পানি না পায়, তাহলে কি সে তায়াম্মুম করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না? শাকীক (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেনঃ
একমাস পানি না পেলেও সে তায়াম্মুম করবে না। তখন তাঁকে আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ তাহলে
সূরা মায়িদার এ আয়াত সম্পর্কে কি করবেন যে "পানি না পেলে পাক মাটি দিয়ে
তায়াম্মুম করবে" (৫ : ৬)। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) জওয়াব দিলেনঃ মানুষকে সেই অনুমতি
দিলে অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছার সম্ভবনা রয়েছে যে, সামান্য ঠাণ্ডা লাগলেই
লোকেরে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে। আমি বললামঃ আপনারা এ জন্যই কি তা অপছন্দ করেন? তিনি জওয়াব দিলেন, হ্যাঁ।
আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ
আপনি কি উমর ইবনু খাত্তব (রাঃ)-এর সম্মুখে ‘আম্মার (রাঃ)-এর এ কথা শোনেন নি যে, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা প্রয়জনে বাইরে
পাঠিয়েছিলেন। সফরে আমি জুনুবী হয়ে পড়লাম এবং পানি পেলাম না। এজন্য আমি জন্তুর মত
মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম। পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে
ঘটনাটি বিবৃত করলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমার জন্য তো এতুকুই যথেষ্ট ছিল—এই বলে তিনি
দু’হাত মাটিতে মারলেন। তারপর তা ঝেড়ে নিলেন এবং তা দিয়ে তিনি বাম হাতে ডান হাতের
পিঠ মাসেহ করলেন কিংবা রাবী বলেছেন, বাম হাতের পিঠ ডান হাতে
মাসেহ করলেন। তারপর হাত দুটো দিয়ে তাঁর মুখমণ্ডল মাসেহ করলেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)
বললেনঃ আপনি দেখেন নি যে দেখ না উমর (রাঃ) ‘আম্মার (রাঃ)-এর কথায় সন্তুষ্ট হন নি?
ইয়া’লা (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ)
থেকে এবং তিনি শাকীক (রহঃ) থেকে আরো বলেছেন যে , তিনি বললেনঃ আমি
‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ও আবূ মূসা (রাঃ)-এর কাছে হাযির ছিলাম; আবূ মূসা (রাঃ) বলেছিলেনঃ আপনি ‘উমর (রাঃ) থেকে ‘আম্মারের এ কথা শোনেন নি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ও আপনাকে বাইরে
পাঠিয়েছিলেন। তখন আমি জুনুবী হয়ে গিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়েছিলাম। তারপর আমরা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে এ বিষয় তাঁকে জানালাম।
তখন তিনি বললেনঃ তোমার জন্য এই যথেষ্ট ছিল—এ বলে তিনি তাঁর মুখমণ্ডল এবং দু’হাত
একবার মাসেহ করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৪১। পরিচ্ছেদ নাই।
৩৪১। আবদান (রহঃ) .... আবূ রাজা’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন আল-খুযা’ঈ (রাঃ) বলেছেন যে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে জামা’আতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করে পৃথক দাড়িয়ে থাকতে দেখলেন। তিনি লোকটিকে ডেকে বললেনঃ হে অমুক! তুমি জামা’আতে সালাত আদায় করলে না কেন? লোকটি বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার গোসলের প্রয়োজন হয়েছিল, কিন্তু পানি নেই। তিনি বললেনঃ তুমি পবিত্র মাটির ব্যবহার (তায়াম্মুম) করবে। তা-ই তোমার জন্য যথেষ্ট।
0 comments:
মন্তব্য করুন