ইলম বা জ্ঞান

পরিচ্ছেদঃ ৪৪/ আলোচনায় মশগুল অবস্থায় ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আলোচনা শেষ করার পর প্রশ্নকারীর উত্তর প্রদান

৪৩. ইলমের ফযীলত

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

يَرْفَعْ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ্ তাদের মর্যাদায় উন্নত করবেনতোমরা যা কর আল্লাহ্ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। (৫৮ঃ ১১)।

মহান আল্লাহ্র বাণীঃ

رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا

হে আমার রব! আমার জ্ঞানের বৃদ্ধি সাধন কর। (২০ঃ ১১৪)


৫৭। মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) ও ইবরাহীম ইবনুল মুনযির (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসে লোকদের সামনে কিছু আলোচনা করছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর কাছে একজন বেদু্ঈন এসে প্রশ্ন করলেনকিয়ামত কবে হবেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আলোচনায় রত রইলেন। এতে কেউ কেউ বললেনলোকটি যা বলেছে তিনি তা শুনেছেন কিন্তু তার কথা পছন্দ করেন নি। আর কেউ কেউ বললেন বরং তিনি শুনতেই পান নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনা শেষ করে বললেনঃ কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়সে বললএই যে আমিইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ যখন আমানত নষ্ট করা হয় তখন কিয়ামতের প্রতীক্ষা করবে। সে বললকিভাবে আমানত নষ্ট করা হয়তিনি বললেনঃ যখন কোন কাজের দায়িত্ব অনুপযুক্ত লোকের প্রতি ন্যাস্ত হয়তখন তুমি কিয়ামতের প্রতীক্ষা করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫/ উচ্চস্বরে ইলমের আলচনা

৫৮। আবূন নুমান (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএক সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের পেছনে রয়ে গেলেন। পরে তিনি আমাদের কাছে পৌঁছলেনএদিকে আমরা (আসরের) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেরী করে ফেলেছিলাম এবং আমরা উযূ (ওজু/অজু/অযু) করছিলাম। আমরা আমাদের পা কোনমতে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম। তিনি উচ্চস্বরে বললেনঃ পায়ের গোড়ালিগুলোর (শুষ্কতার) জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে। তিনি দুবার বা তিনবার এ কথা বললেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬/ মুহাদ্দিসের উক্তিঃ হাদ্দাসানাআখবারানা ও আম্বা'আনা

হুমাইদী (রহ.) বর্ণনা করেন যেইবনু ‘উয়াইনাহ (রহঃ)-এর মতে حَدَّثَنَا وَأَخْبَرَنَا وَأَنْبَأَنَا وَسَمِعْتُ একই অর্থবোধক।

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেনحَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেনআর তিনি সত্যবাদী এবং সত্যবাদীরূপে স্বীকৃত।

শাকীক (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনسَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَلِمَةً আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ উক্তি শুনেছি’...

হুযাইফাহ (রাঃ) বলেনحَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ حَدِيثَيْنِ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট দুটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।

আবুল ‘আলিয়াহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনيَرْوِي عَنْ رَبِّهِ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেতিনি তাঁর রব থেকে বর্ণনা করেন’...

আনাস (রাঃ) বলেনعَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيمَا يَرْوِيهِ عَنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেতিনি বর্ণনা করেন তাঁর রব থেকে’....

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেনعَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَرْوِيهِ عَنْ رَبِّكُمْ عَزَّ وَجَلَّ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেতিনি তোমাদের মহিমাময় ও সুমহান প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন’...


৫৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেনঃ গাছপালার মধ্যে এমন একটি গাছ আছে যার পাতা ঝরে না। আর তা মুসলিমের উপমা। তোমরা আমাকে বল, ‘সেটি কি গাছ?’ রাবী বলেনতখন লোকেরা জঙ্গলের বিভিন্ন গাছ-পালার নাম চিন্তা করতে লাগল। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘আমার মনে হলসেটা হবে খেজুর গাছ।’ কিন্তু আমি তা বলতে লজ্জাবোধ করছিলাম। তারপর সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাদের বলে দিন সেটি কি গাছতিনি বললেনঃ তা হল খেজুর গাছ।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭/ শাগরিদগনের জ্ঞান পরীক্ষার জন্য উস্তাদের কোন বিষয় উত্থাপন করা

৬০। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেনঃ গাছ-পালার মধ্যে এমন একটি গাছ আছে যার পাতা ঝরে না। আর তা মুসলিমের উপমা। তোমরা আমাকে বল দেখি সেটি কি গাছরাবী বলেনতখন লোকেরা জঙ্গলের বিভিন্ন গাছ-পালার নাম চিন্তা করতে লাগল। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘আমার মনে হলসেটা হবে খেজুর গাছ। কিন্তু তা বলতে আমি লজ্জাবোধ করছিলাম। তারপর সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনিই আমাদের বলে দিন সেটি কি গাছতিনি বললেনঃ তা হল খেজুর গাছ।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮/ হাদিস পড়া ও মুহাদ্দিসের কাছে পেশ করা

হাসান (বসরী)সুফইয়ান সাউরী এবং মালিক (রহঃ)-এর মতে মুহাদ্দিসের সামনে পাঠ করা জায়েয। কোন কোন মুহাদ্দিস উস্তাদের সামনে পাঠ করার স্বপক্ষে যিমাম ইবনু সালাবা (রাঃ)-এর হাদীস পেশ করেন। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেছিলেন, ‘আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার ব্যাপারে আল্লাহ্ কি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন?’ তিনি বললেনঃ ‘হ্যাঁ রাবী বলেনএগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে পাঠ করা। যিমাম (রাঃ) তাঁর গোত্রের নিকট এ নির্দেশগুলো জানান এবং তাঁরা তা গ্রহণ করেন। (ইমাম) মালিক (রহঃ) তাঁর মতের সমর্থনে লিখিত দলীলকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করেনযা লোকদের সামনে পাঠ করা হলে তারা বলেঅমুক আমাদের সাক্ষী বানিয়েছেন। শিক্ষকের সামনে পাঠ করে পাঠক বলেঅমুক আমাকে পড়িয়েছেন।


৬১। মুহাম্মদ ইবন সালাম (রহঃ) ... হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনউস্তাদের সামনে শাগরিদের পাঠ করতে কোন বাধা নেই। ‘উবায়দুল্লাহ্ ইবন মূসা (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যেতিনি বলেন যখন মুহাদ্দিসের সামনে (কোন হাদীস) পাঠ করা হয় তখন حَدَّثَنِي (তিনি আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন) বলায় কোন আপত্তি নেই। বর্ণনাকারী বলেনআমি আবূ ‘আসিমকে মালিক ও সুফিয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, ‘উস্তাদের সামনে পাঠ করা এবং উস্তাদের নিজে পাঠ করা একই পর্যায়ের।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮/ হাদিস পড়া ও মুহাদ্দিসের কাছে পেশ করা

৬২। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ একবার আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যাক্তি সওয়ার অবস্থায় ঢুকল। মসজিদে (প্রাঙ্গণে) সে তার উটটি বসিয়ে বেঁধে রাখল। এরপর সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললতোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তার সামনেই হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। আমরা বললামএই হেলান দিয়ে বসা ফর্সা রঙের ব্যাক্তিই হলেন তিনি।

তারপর লোকটি তাঁকে লক্ষ্য করে বললহে আবদুল মুত্তালিবের পুত্র! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ ‘আমি তোমার জওয়াব দিচ্ছি। লোকটি বলল, ‘আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব এবং সে প্রশ্ন করার ব্যাপারে কঠোর হবএতে আপনি রাগ করবেন না। তিনি বললেনতোমার যেমন ইচ্ছা প্রশ্ন কর। সে বললআমি আপনাকে আপনার রব ও আপনার পূর্ববর্তীদের রবের কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছিআল্লাহ্ই কি আপনাকে সকল মানুষের রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন?’ তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ সাক্ষীহাঁ।

সে বললআমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছিআল্লাহ্ই কি আপনাকে দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেনতিনি বললেনঃ ‘আল্লাহ্ সাক্ষীহাঁ। সে বললআমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছিআল্লাহ্ই কি আপনাকে বছরের এ মাসে (রমযান) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের নির্দেশ দিয়েছেনতিনি বললেনঃ আল্লাহ্ সাক্ষীহাঁ।

সে বললআমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছিআল্লাহ্ই কি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেনআমাদের ধনীদের থেকে সদকা (যাকাত) উসূল করে গরীবদের মধ্যে ভাগ করে দিতেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ্ সাক্ষীহাঁ। এরপর লোকটি বলল, ‘আমি ঈমান আনলাম আপনি যা (যে শরীআত) এনেছেন তার ওপর। আর আমি আমার কওমের রেখে আসা লোকজনের পক্ষে প্রতিনিধিআমার নাম যিমাম ইবনু সালাবাবনী সাদ ইবনু বকর গোত্রের একজন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮/ হাদিস পড়া ও মুহাদ্দিসের কাছে পেশ করা

৬৩। মূসা ইবন ইসমাঈল (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করার ব্যাপারে কুরআনুল করীমে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। আমরা পছন্দ করতামগ্রাম থেকে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে তাঁর কাছে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি। তারপর একদিন গ্রাম থেকে একজন লোক এসে বললআমাদের কাছে আপনার একজন দূত গিয়েছে। সে আমাদের খবর দিয়েছে যেআপনি বলেনআল্লাহ্ তাআলা আপনাকে রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেনঃ সে সত্য বলেছে। সে বললআসমান কে সৃষ্টি করেছেনতিনি বললেনঃ মহিমাময় আল্লাহ্ তাআলা। সে বললপৃথিবী ও পর্বতমালা কে সৃষ্টি করেছেনতিনি বললেনঃ মহিমাময় আল্লাহ্ তাআলা। সে বললএসবের মধ্যে উপকারী বস্তুসমূহ কে রেখেছেনতিনি বললেনঃ মহিমাময় আল্লাহ্ তাআলা। সে বললতাহলে যিনি আসমান সৃষ্টি করেছেনযমীন সৃষ্টি করেছেনপর্বত স্থাপন করেছেন এবং তার মধ্যে উপকারী বস্তুসমূহ রেখেছেনতাঁর কসমসেই আল্লাহ্ই কি আপনাকে রাসূলরূপে পাঠিয়েছেনতিনি বললেনঃ হ্যাঁ।

সে বললআপনার দূত বলেছেন যেআমাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা এবং আমাদের মালের যাকাত দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। তিনি বললেনঃ সে সত্য বলেছে। সে বললযিনি আপনাকে রাসূল করে পাঠিয়েছেনতাঁর কসমআল্লাহ্ই কি আপনাকে এর আদেশ দিয়েছেনতিনি বললেনঃ হ্যাঁসে বললআপনার দূত বলেছেন যেআমাদের উপর বছরে একমাস সাওম পালন অবশ্য কর্তব্য। তিনি বললেনঃ সে সত্য বলেছে। সে বললযিনি আপনাকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন তাঁর কসমআল্লাহ্ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেনতিনি বললেনঃ হ্যাঁ। সে বললআপনার দূত বলেছেন যেআমাদের মধ্যে যার যাতায়াতের সামর্থ্য আছেতার উপর বায়তুল্লাহর হজ্জ করা অবশ্য কর্তব্য। তিনি বললেনঃ সে সত্য বলেছে। সে বললযিনি আপনাকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন তাঁর কসমআল্লাহ্ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেনতিনি বললেনঃ হ্যাঁলোকটি বললযিনি আপনাকে সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেনতাঁর কসমআমি এতে কিছু বাড়াবোও নাকামাবোও না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘সে যদি সত্য বলে থাকে তবে অবশ্যই সে জান্নাতে দাখিল হবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯/ শায়খ কর্তৃক ছাত্রকে হাদিসের কিতাব প্রদান এবং আলিম কর্তৃক ইলমের কথা লিখে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ।

আনাস (রাঃ) বলেন, ‘উসমান (রাঃ) কুরআন কারীমের বহু কপি তৈরি করিয়ে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করেন। আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ)ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ ও মালিক (রহঃ) এটাকে জায়িয মনে করেন। কোন কোন হিজাযবাসী ছাত্রকে হাদীস বর্ণনার অনুমতি প্রদানের ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ হাদীস দিয়ে দলীল পেশ করেন যেতিনি একটি সেনাদলের প্রধানকে একখানি পত্র দেন এবং তাঁকে বলে দেনঅমুক অমুক স্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত এটা পড়ো না। অতঃপর তিনি যখন সে স্থানে পৌঁছলেনতখন লোকের সামনে তা পড়ে শোনান এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফরমান তাদেরকে জানান।


৬৪। ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএক ব্যক্তিকে তাঁর চিঠি দিয়ে পাঠালেন এবং তাকে বাহরায়নের গভর্নরের কাছে তা পৌঁছে দিতে নির্দেশ দিলেন। এরপর বাহরায়নের গভর্নর তা কিসরা (পারস্য সম্রাট)-এর কাছে দিলেন। পত্রটি পড়ার পর সে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল। [বর্ণনাকারী ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন] আমার ধারনা ইবনু মূসায়্যাব (রহঃ) বলেছেন, (এ ঘটনার খবর পেয়ে) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য বদদুআ করেন যেতাদেরকেও যেন সম্পূর্ণরূপে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯/ শায়খ কর্তৃক ছাত্রকে হাদিসের কিতাব প্রদান এবং আলিম কর্তৃক ইলমের কথা লিখে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ।

৬৫। মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একখানি পত্র লিখলেন অথবা একখানি পত্র লিখতে মনস্থ করলেন। তখন তাঁকে বলা হল যেতারা (রোমবাসী ও অনারবরা) সীলমোহরযুক্ত ছাড়া কোন পত্র পড়ে না। এরপর তিনি রূপার একটি আংটি (মোহর) তৈরী করালেন যার নকশা ছিল (مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ) আমি যেন তাঁর হাতে সে আংটির ঔজ্জ্বল্য (এখনও) দেখতে পাচ্ছি। [শুবা (রহঃ) বলেন] আমি কাতাদ (রহঃ)-কে বললামকে বলেছে যেতার নকশা (مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ) ছিলতিনি বললেনআনাস (রাঃ)।

পরিচ্ছেদঃ ৫০/ মজলিসের শেষ প্রান্তে বসা এবং মজলিসের ভিতরে ফাক দেখে সেখানে বসা

৬৬। ইসমাঈল (রহঃ) ... আবূ ওয়াকিদ আল-লায়সী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মসজিদে বসেছিলেনতাঁর সঙ্গে আরও লোকজন ছিলেন। ইতিমধ্যে তিনজন লোক এলেন। তন্মধ্যে দুজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে এগিয়ে এলেন এবং একজন চলে গেলেন। আবূ ওয়াকিদ (রাঃ) বলেনতাঁরা দুজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। এরপর তাঁদের একজন মজলিসের মধ্যে কিছুটা জায়গা দেখে সেখানে বসে পড়লেন এবং অন্যজন তাদের পেছনে বসলেন। আর তৃতীয় ব্যাক্তি ফিরে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিস শেষ করে (সাহাবায়ে কিরামকে লক্ষ্য করে) বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এই তিন ব্যাক্তি সম্পর্কে কিছু বলবতাদের একজন আল্লাহর দিকে এগিয়ে এসেছে তাই আল্লাহ্ তাকে স্থান দিয়েছেন। অন্যজন (ভীড় ঠেলে অগ্রসর হতে অথবা ফিরে যেতে) লজ্জাবোধ করেছে,তাই আল্লাহও তার ব্যাপারে (তাকে শাস্তি দিতে এবং রহমত থেকে বঞ্চিত করতে) লজ্জাবোধ করেছেন। আর অপরজন (মজলিসে হাজির হওয়া থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেতাই আল্লাহ্ও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫১/ নাবী করীম () এর বানীঃ যাদের কাছে হাদিস পৌঁছানো হয় তাদের মধ্যে অনেকে এমন আছেযে শ্রোতা (বর্ণনাকারী'র) চাইতে বেশী মুখস্থ রাখতে পারে।

৬৭। মূসাদ্দাদ (রহঃ) ... আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেতিনি একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা উল্লেখ করে বলেন, (মিনায়) তিনি তাঁর উটের ওপর বসেছিলেন। একজন লোক তাঁর উটের লাগাম ধরে রেখেছিল। তিনি বললেনঃ আজ কোন্ দিন?’ আমরা চুপ থাকলাম এবং ধারণা করলাম যেএ দিনটির আলাদা কোন নাম তিনি দিবেন। তিনি বললেনঃ “এটা কুরবানীর দিন নয় কি?” আমরা বললামজী হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এটা কোন্ মাস?’ আমরা চুপ থাকলাম এবং ধারণা করতে লাগলাম যেতিনি হয়ত এর (প্রচলিত) নাম ছাড়া অন্য কোন নাম দিবেন। তিনি বললেনঃ এটা যিলহাজ্জ নয় কি?’ আমরা বললামজী হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ জেনে রাখ! তোমাদের জানতোমাদের মালতোমাদের সন্মান তোমাদের পরস্পরের জন্য হারামযেমন আজকের এ মাসতোমাদের এ শহরআজকের এ দিন সন্মানিত। এখানে উপস্থিত ব্যাক্তি (আমার এ বাণী) যেন অনুপস্থিত ব্যাক্তির কাছে পৌঁছে দেয়। কারন উপস্থিত ব্যাক্তি হয়ত এমন এক ব্যাক্তির কাছে পৌঁছাবেযে এ বাণীকে তার থেকে বেশি মুখস্থ রাখতে পারবে।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩/ রাসূলুল্লাহ্ () ওয়ায-নসীহতে ও ইলম শিক্ষা দানে উপযুক্ত সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতেনযাতে লোকজন বিরক্ত না হয়ে পড়ে।

৫২. পরিচ্ছেদঃ কথা ও আমলের পূর্বে ইলম জরুরী।

আল্লাহ তা'আলার ইরশাদঃ فَاعْلَمْ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ সুতরাং জেনে রাখআল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই।” (৪৭ঃ ১৯)। এখানে আল্লাহ তাআলা ইলমের কথা আগে বলেছেন। আলিমগণই নবীগণের ওয়ারিস। তারা ইলমের ওয়ারিস হয়েছেন। তাই যে ইলম হাসিল করে সে বিরাট অংশ লাভ করে। আর যে ব্যক্তি ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে পথ চলেআল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলিমগণই তাকে ভয় করে (৩৫ঃ ২৮)। আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেনঃ وَمَا يَعْقِلُهَا إِلاَّ الْعَالِمُونَ আলিমগণ ছাড়া তা কেউ বুঝেনা অন্যত্র ইরশাদ হয়েছেঃ وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ তারা বলবেযদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতামতাহলে আমরা জাহান্নামী হতাম না। (৬৭ঃ ১০)। আরো ইরশাদ করেনঃ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لاَ يَعْلَمُونَ বলযারা জানে আর যারা জানে নাতারা কি সমান হতে পারে? (৩৯ঃ ৯)

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। আর অধ্যায়নের মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জিত হয়। আবু যার (রাঃ) তাঁর ঘাড়ের দিকে ইশারা করে বলেনযদি তোমরা এখানে তরবারি ধরএরপর আমি বুঝতে পারি যেতোমরা আমার ওপর সে তরবারী চালাবার আগে আমি একটু কথা বলতে পারবতবে আমি যা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছিতবে অবশ্যই আমি তা বলে ফেলব।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীঃ উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে (আমার বাণী) পৌঁছে দেয়। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনكُونُوا رَبَّانِيِّينَ (তোমরা রব্বানি হও)। এখানে رَبَّانِيِّينَ মানে প্রজ্ঞাবানআলিম ও ফকীহগণ। আরো বলা হয় رباني সে ব্যক্তি কে বলা হয় যিনি মানুষকে জ্ঞানের বড় বড় বিষয়ের পূর্বে ছোট ছোট বিষয় শিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলেন।


৬৮। মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ (রহঃ) ... ইবন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে নির্দিষ্ট দিনে ওয়ায-নসীহত করতেনআমরা যাতে বিরক্ত না হই।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩/ রাসূলুল্লাহ্ () ওয়ায-নসীহতে ও ইলম শিক্ষা দানে উপযুক্ত সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতেনযাতে লোকজন বিরক্ত না হয়ে পড়ে।

৬৯। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা (দ্বীনের ব্যাপারে) সহজ পন্থা অবলম্বন করবেকঠিন পন্থা অবলম্বন করবে নামানুষকে সুসংবাদ শোনাবেবিরক্তি সৃষ্টি করবে না।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪/ ইলম শিক্ষার্থীদের জন্য দিন নির্দিষ্ট করা

৭০। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ ওয়াইল (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ ইবনু মাসউদ (রাঃ) প্রতি বৃহস্পতিবার লোকদের ওয়ায-নসীহত করতেন। তাঁকে একজন বললহে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমার মন চায় যেন আপনি প্রতিদিন আমাদের নসীহত করেন। তিনি বললেনঃ এ কাজ থেকে আমাকে যা বিরত রাখে তা হলআমি তোমাদের ক্লান্ত করতে পছন্দ করি না। আর আমি নসীহত করার ব্যাপারে তোমাদের (অবস্থার) প্রতি লক্ষ্য রাখিযেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন আমাদের ক্লান্তির আশংকায়।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫/ আল্লাহ্ যার কল্যাণ চানতাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন

৭১। সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) ... হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমি মুআবিয়া (রাঃ)কে বক্তৃতারত অবস্থায় বলতে শুনেছিতিনি বলেনআমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিআল্লাহ্ যার কল্যাণ চানতাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। আমি তো কেবল বিতরণকারীআল্লাহ্ই দানকারী। সর্বদাই এ উম্মাত (সত্যিকারের মুসলিম) কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ্ হুকুমের উপর প্রতিষ্টিত থাকবেবিরুদ্ধবাদীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

পরিচ্ছেদঃ ৫৬/ ইলমের ক্ষেত্রে সঠিক অনুধাবন

৭২। আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ... মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি সফরে মদিনা পর্যন্ত ইবনু উমর (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। এ সময় তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি মাত্র হাদীস রেওয়ায়েত করতে শুনেছি। তিনি বলেনআমরা একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম। তখন তাঁর নিকট খেজুর গাছের মথি আনা হল। তারপর তিনি বললেনঃ গাছপালার মধ্যে এমন একটি গাছ আছে যার দৃষ্টান্ত মুসলিমের ন্যায়। তখন আমি বলতে চাইলাম যেতা হল খেজুর গাছকিন্তু আমি ছিলাম উপস্থিত সবার চাইতে বয়সে ছোট। তাই চুপ করে রইলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ গাছটি হল খেজুর গাছ।

পরিচ্ছেদঃ ৫৭/ ইলম ও হিকমতের ক্ষেত্রে সমতুল্য হওয়ার আগ্রহ

উমর (রাঃ) বলেনতোমরা নেতৃত্ব লাভের আগেই জ্ঞান হাসিল করে নাও। আবূ আবদুল্লাহ্ (বুখারী) বলেনআর নেতা বানিয়ে দেওয়ার পরওকেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ বয়োবৃদ্ধকালেও ইলম শিক্ষা করেছেন।


৭৩। হুমায়দী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেবলমাত্র দুটি ব্যাপারই ঈর্ষা করা যায়; (১) সে ব্যাক্তির উপরযাকে আল্লাহ্ তাআলা সম্পদ দিয়েছেনএরপর তাকে হক পথে অকাতরে ব্যয় করার ক্ষমতা দেন; (২) সে ব্যাক্তির উপরযাকে আল্লাহ্ তাআলা হিকমত দান করেছেনএরপর সে তার সাহায্যে ফায়সালা করে ও তা শিক্ষা দেয়।

পরিচ্ছেদঃ ৫৮/ সমুদ্রে খিযর (আঃ)-এর কাছে মূসা (আঃ)-এর যাওয়া

আর আল্লাহ্ তাআলার বানীঃ (هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَى أَنْ تُعَلِّمَنِي مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا) (আমি কি আপনার অনুসরণ করব এ শর্তে যেসত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দেবেন। (১৮ঃ ৬৬)


৭৪। মুহাম্মদ ইবনু গুরায়র আয-যুহরী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি এবং হুর ইবনু কায়স ইবনু হিসন আল ফাযারী মূসা (আঃ) এর সঙ্গী সম্পর্কে বাদানুবাদ করেছিলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেনতিনি ছিলেন খিযর। ঘটনাক্রমে তখন তাদের পাশ দিয়ে উবাই ইবনু কাব (রাঃ) যাচ্ছিলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে ডেকে বললেনঃ আমি ও আমার এ ভাই মতবিরোধ পোষণ করছি মূসা (আঃ) এর সেই সঙ্গীর ব্যাপারে যাঁর সাথে সাক্ষাত করার জন্য মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে পথের সন্ধান চেয়েছিলেনআপনি কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেনতিনি বললেনহ্যাঁআমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিএকবার মূসা (আঃ) বনী ইসরাঈলের কোন এক মজলিসে হাজির ছিলেন। তখন তাঁর কাছে এক ব্যাক্তি এসে বলল, ‘আপনি কাউকে আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী বলে জানেন কি?’ মূসা (আঃ) বললেননা।

তখন আল্লাহ্ তাআলা মূসা (আঃ) এর কাছে ওহী পাঠালেনঃ হ্যাঁআমার বান্দা খিযর। অতঃপর মূসা (আঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাত করার রাস্তা জানতে চাইলেন। আল্লাহ্ তাআলা মাছকে তার জন্য নিশানা বানিয়ে দিলেন এবং তাঁকে বলা হলতুমি যখন মাছটি হারিয়ে ফেলবে তখন ফিরে আসবে। কারনকিছুক্ষনের মধ্যেই তুমি তাঁর সাক্ষাত পাবে। তখন তিনি সমুদ্রে সে মাছেরনিশানা অনুসরন করতে লাগলেন। মূসা (আঃ)-কে তাঁর সঙ্গী যুবক বললেন, (কুরআন মজীদের ভাষায়ঃ)

أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّي نَسِيتُ الْحُوتَ وَمَا أَنْسَانِيهِ إِلَّا الشَّيْطَانُ أَنْ أَذْكُرَهُ قَالَ ذَلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِي فَارْتَدَّا عَلَى آثَارِهِمَا قَصَصًا

আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আমরা যখন পাথরের কাছে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলামশয়তান তার কথা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। ... মূসা বললেনআমরা তো সে স্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম। এরপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। (১৮ : ৬৩-৬৪)

তাঁরা খিযরকে পেলেন। তাদের ঘটনা তা-ইযা আল্লাহ্ তাআলা তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৯/ নবী () এর উক্তিঃ হে আল্লাহ্! আপনি তাকে কিতাব (কুরআন) শিক্ষা দিন।

৭৫। আবূ মামার (রহঃ) ... ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেনঃ হে আল্লাহ্! আপনি তাকে কিতাব (কুরআন) শিক্ষা দিন।

পরিচ্ছেদঃ ৬০/ বালকদের কোন বয়সের শোনা কথা গ্রহণীয়।

৭৬। ইসমাঈল (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমি বালক হবার নিকটবর্তী বয়সে একবার একটি মাদী গাধার উপর সওয়ার হয়ে এলাম। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন কোন দেওয়াল সামনে না রেখেই মিনায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। তখন আমি কোন এক কাতারের সামনে দিয়ে গেলাম এবং মাদী গাধাটিকে চরে খাওয়ার জন্য ছেড়ে দিলাম। আমি কাতারে ভেতর ঢুকে পড়লাম কিন্তু এতে কেউ আমাকে নিষেধ করলেন না।

 পরিচ্ছেদঃ ৪৪/ আলোচনায় মশগুল অবস্থায় ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আলোচনা শেষ করার পর প্রশ্নকারীর উত্তর প্রদান

৪৩. ইলমের ফযীলত

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

يَرْفَعْ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ্ তাদের মর্যাদায় উন্নত করবেনতোমরা যা কর আল্লাহ্ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। (৫৮ঃ ১১)।

মহান আল্লাহ্র বাণীঃ

رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا

হে আমার রব! আমার জ্ঞানের বৃদ্ধি সাধন কর। (২০ঃ ১১৪)


৫৭। মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) ও ইবরাহীম ইবনুল মুনযির (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসে লোকদের সামনে কিছু আলোচনা করছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর কাছে একজন বেদু্ঈন এসে প্রশ্ন করলেনকিয়ামত কবে হবেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আলোচনায় রত রইলেন। এতে কেউ কেউ বললেনলোকটি যা বলেছে তিনি তা শুনেছেন কিন্তু তার কথা পছন্দ করেন নি। আর কেউ কেউ বললেন বরং তিনি শুনতেই পান নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনা শেষ করে বললেনঃ কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়সে বললএই যে আমিইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ যখন আমানত নষ্ট করা হয় তখন কিয়ামতের প্রতীক্ষা করবে। সে বললকিভাবে আমানত নষ্ট করা হয়তিনি বললেনঃ যখন কোন কাজের দায়িত্ব অনুপযুক্ত লোকের প্রতি ন্যাস্ত হয়তখন তুমি কিয়ামতের প্রতীক্ষা করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫/ উচ্চস্বরে ইলমের আলচনা

৫৮। আবূন নুমান (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএক সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের পেছনে রয়ে গেলেন। পরে তিনি আমাদের কাছে পৌঁছলেনএদিকে আমরা (আসরের) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেরী করে ফেলেছিলাম এবং আমরা উযূ (ওজু/অজু/অযু) করছিলাম। আমরা আমাদের পা কোনমতে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম। তিনি উচ্চস্বরে বললেনঃ পায়ের গোড়ালিগুলোর (শুষ্কতার) জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে। তিনি দুবার বা তিনবার এ কথা বললেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬/ মুহাদ্দিসের উক্তিঃ হাদ্দাসানাআখবারানা ও আম্বা'আনা

হুমাইদী (রহ.) বর্ণনা করেন যেইবনু ‘উয়াইনাহ (রহঃ)-এর মতে حَدَّثَنَا وَأَخْبَرَنَا وَأَنْبَأَنَا وَسَمِعْتُ একই অর্থবোধক।

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেনحَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেনআর তিনি সত্যবাদী এবং সত্যবাদীরূপে স্বীকৃত।

শাকীক (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনسَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَلِمَةً আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ উক্তি শুনেছি’...

হুযাইফাহ (রাঃ) বলেনحَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ حَدِيثَيْنِ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট দুটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।

আবুল ‘আলিয়াহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনيَرْوِي عَنْ رَبِّهِ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেতিনি তাঁর রব থেকে বর্ণনা করেন’...

আনাস (রাঃ) বলেনعَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيمَا يَرْوِيهِ عَنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেতিনি বর্ণনা করেন তাঁর রব থেকে’....

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেনعَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَرْوِيهِ عَنْ رَبِّكُمْ عَزَّ وَجَلَّ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেতিনি তোমাদের মহিমাময় ও সুমহান প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন’...


৫৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেনঃ গাছপালার মধ্যে এমন একটি গাছ আছে যার পাতা ঝরে না। আর তা মুসলিমের উপমা। তোমরা আমাকে বল, ‘সেটি কি গাছ?’ রাবী বলেনতখন লোকেরা জঙ্গলের বিভিন্ন গাছ-পালার নাম চিন্তা করতে লাগল। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘আমার মনে হলসেটা হবে খেজুর গাছ।’ কিন্তু আমি তা বলতে লজ্জাবোধ করছিলাম। তারপর সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাদের বলে দিন সেটি কি গাছতিনি বললেনঃ তা হল খেজুর গাছ।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭/ শাগরিদগনের জ্ঞান পরীক্ষার জন্য উস্তাদের কোন বিষয় উত্থাপন করা

৬০। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেনঃ গাছ-পালার মধ্যে এমন একটি গাছ আছে যার পাতা ঝরে না। আর তা মুসলিমের উপমা। তোমরা আমাকে বল দেখি সেটি কি গাছরাবী বলেনতখন লোকেরা জঙ্গলের বিভিন্ন গাছ-পালার নাম চিন্তা করতে লাগল। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘আমার মনে হলসেটা হবে খেজুর গাছ। কিন্তু তা বলতে আমি লজ্জাবোধ করছিলাম। তারপর সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনিই আমাদের বলে দিন সেটি কি গাছতিনি বললেনঃ তা হল খেজুর গাছ।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮/ হাদিস পড়া ও মুহাদ্দিসের কাছে পেশ করা

হাসান (বসরী)সুফইয়ান সাউরী এবং মালিক (রহঃ)-এর মতে মুহাদ্দিসের সামনে পাঠ করা জায়েয। কোন কোন মুহাদ্দিস উস্তাদের সামনে পাঠ করার স্বপক্ষে যিমাম ইবনু সালাবা (রাঃ)-এর হাদীস পেশ করেন। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেছিলেন, ‘আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার ব্যাপারে আল্লাহ্ কি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন?’ তিনি বললেনঃ ‘হ্যাঁ রাবী বলেনএগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে পাঠ করা। যিমাম (রাঃ) তাঁর গোত্রের নিকট এ নির্দেশগুলো জানান এবং তাঁরা তা গ্রহণ করেন। (ইমাম) মালিক (রহঃ) তাঁর মতের সমর্থনে লিখিত দলীলকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করেনযা লোকদের সামনে পাঠ করা হলে তারা বলেঅমুক আমাদের সাক্ষী বানিয়েছেন। শিক্ষকের সামনে পাঠ করে পাঠক বলেঅমুক আমাকে পড়িয়েছেন।


৬১। মুহাম্মদ ইবন সালাম (রহঃ) ... হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনউস্তাদের সামনে শাগরিদের পাঠ করতে কোন বাধা নেই। ‘উবায়দুল্লাহ্ ইবন মূসা (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যেতিনি বলেন যখন মুহাদ্দিসের সামনে (কোন হাদীস) পাঠ করা হয় তখন حَدَّثَنِي (তিনি আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন) বলায় কোন আপত্তি নেই। বর্ণনাকারী বলেনআমি আবূ ‘আসিমকে মালিক ও সুফিয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, ‘উস্তাদের সামনে পাঠ করা এবং উস্তাদের নিজে পাঠ করা একই পর্যায়ের।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮/ হাদিস পড়া ও মুহাদ্দিসের কাছে পেশ করা

৬২। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ একবার আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যাক্তি সওয়ার অবস্থায় ঢুকল। মসজিদে (প্রাঙ্গণে) সে তার উটটি বসিয়ে বেঁধে রাখল। এরপর সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললতোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তার সামনেই হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। আমরা বললামএই হেলান দিয়ে বসা ফর্সা রঙের ব্যাক্তিই হলেন তিনি।

তারপর লোকটি তাঁকে লক্ষ্য করে বললহে আবদুল মুত্তালিবের পুত্র! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ ‘আমি তোমার জওয়াব দিচ্ছি। লোকটি বলল, ‘আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব এবং সে প্রশ্ন করার ব্যাপারে কঠোর হবএতে আপনি রাগ করবেন না। তিনি বললেনতোমার যেমন ইচ্ছা প্রশ্ন কর। সে বললআমি আপনাকে আপনার রব ও আপনার পূর্ববর্তীদের রবের কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছিআল্লাহ্ই কি আপনাকে সকল মানুষের রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন?’ তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ সাক্ষীহাঁ।

সে বললআমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছিআল্লাহ্ই কি আপনাকে দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেনতিনি বললেনঃ ‘আল্লাহ্ সাক্ষীহাঁ। সে বললআমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছিআল্লাহ্ই কি আপনাকে বছরের এ মাসে (রমযান) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের নির্দেশ দিয়েছেনতিনি বললেনঃ আল্লাহ্ সাক্ষীহাঁ।

সে বললআমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছিআল্লাহ্ই কি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেনআমাদের ধনীদের থেকে সদকা (যাকাত) উসূল করে গরীবদের মধ্যে ভাগ করে দিতেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ্ সাক্ষীহাঁ। এরপর লোকটি বলল, ‘আমি ঈমান আনলাম আপনি যা (যে শরীআত) এনেছেন তার ওপর। আর আমি আমার কওমের রেখে আসা লোকজনের পক্ষে প্রতিনিধিআমার নাম যিমাম ইবনু সালাবাবনী সাদ ইবনু বকর গোত্রের একজন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮/ হাদিস পড়া ও মুহাদ্দিসের কাছে পেশ করা

৬৩। মূসা ইবন ইসমাঈল (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করার ব্যাপারে কুরআনুল করীমে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। আমরা পছন্দ করতামগ্রাম থেকে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে তাঁর কাছে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি। তারপর একদিন গ্রাম থেকে একজন লোক এসে বললআমাদের কাছে আপনার একজন দূত গিয়েছে। সে আমাদের খবর দিয়েছে যেআপনি বলেনআল্লাহ্ তাআলা আপনাকে রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেনঃ সে সত্য বলেছে। সে বললআসমান কে সৃষ্টি করেছেনতিনি বললেনঃ মহিমাময় আল্লাহ্ তাআলা। সে বললপৃথিবী ও পর্বতমালা কে সৃষ্টি করেছেনতিনি বললেনঃ মহিমাময় আল্লাহ্ তাআলা। সে বললএসবের মধ্যে উপকারী বস্তুসমূহ কে রেখেছেনতিনি বললেনঃ মহিমাময় আল্লাহ্ তাআলা। সে বললতাহলে যিনি আসমান সৃষ্টি করেছেনযমীন সৃষ্টি করেছেনপর্বত স্থাপন করেছেন এবং তার মধ্যে উপকারী বস্তুসমূহ রেখেছেনতাঁর কসমসেই আল্লাহ্ই কি আপনাকে রাসূলরূপে পাঠিয়েছেনতিনি বললেনঃ হ্যাঁ।

সে বললআপনার দূত বলেছেন যেআমাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা এবং আমাদের মালের যাকাত দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। তিনি বললেনঃ সে সত্য বলেছে। সে বললযিনি আপনাকে রাসূল করে পাঠিয়েছেনতাঁর কসমআল্লাহ্ই কি আপনাকে এর আদেশ দিয়েছেনতিনি বললেনঃ হ্যাঁসে বললআপনার দূত বলেছেন যেআমাদের উপর বছরে একমাস সাওম পালন অবশ্য কর্তব্য। তিনি বললেনঃ সে সত্য বলেছে। সে বললযিনি আপনাকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন তাঁর কসমআল্লাহ্ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেনতিনি বললেনঃ হ্যাঁ। সে বললআপনার দূত বলেছেন যেআমাদের মধ্যে যার যাতায়াতের সামর্থ্য আছেতার উপর বায়তুল্লাহর হজ্জ করা অবশ্য কর্তব্য। তিনি বললেনঃ সে সত্য বলেছে। সে বললযিনি আপনাকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন তাঁর কসমআল্লাহ্ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেনতিনি বললেনঃ হ্যাঁলোকটি বললযিনি আপনাকে সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেনতাঁর কসমআমি এতে কিছু বাড়াবোও নাকামাবোও না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘সে যদি সত্য বলে থাকে তবে অবশ্যই সে জান্নাতে দাখিল হবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯/ শায়খ কর্তৃক ছাত্রকে হাদিসের কিতাব প্রদান এবং আলিম কর্তৃক ইলমের কথা লিখে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ।

আনাস (রাঃ) বলেন, ‘উসমান (রাঃ) কুরআন কারীমের বহু কপি তৈরি করিয়ে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করেন। আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ)ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ ও মালিক (রহঃ) এটাকে জায়িয মনে করেন। কোন কোন হিজাযবাসী ছাত্রকে হাদীস বর্ণনার অনুমতি প্রদানের ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ হাদীস দিয়ে দলীল পেশ করেন যেতিনি একটি সেনাদলের প্রধানকে একখানি পত্র দেন এবং তাঁকে বলে দেনঅমুক অমুক স্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত এটা পড়ো না। অতঃপর তিনি যখন সে স্থানে পৌঁছলেনতখন লোকের সামনে তা পড়ে শোনান এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফরমান তাদেরকে জানান।


৬৪। ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএক ব্যক্তিকে তাঁর চিঠি দিয়ে পাঠালেন এবং তাকে বাহরায়নের গভর্নরের কাছে তা পৌঁছে দিতে নির্দেশ দিলেন। এরপর বাহরায়নের গভর্নর তা কিসরা (পারস্য সম্রাট)-এর কাছে দিলেন। পত্রটি পড়ার পর সে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল। [বর্ণনাকারী ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন] আমার ধারনা ইবনু মূসায়্যাব (রহঃ) বলেছেন, (এ ঘটনার খবর পেয়ে) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য বদদুআ করেন যেতাদেরকেও যেন সম্পূর্ণরূপে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯/ শায়খ কর্তৃক ছাত্রকে হাদিসের কিতাব প্রদান এবং আলিম কর্তৃক ইলমের কথা লিখে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ।

৬৫। মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একখানি পত্র লিখলেন অথবা একখানি পত্র লিখতে মনস্থ করলেন। তখন তাঁকে বলা হল যেতারা (রোমবাসী ও অনারবরা) সীলমোহরযুক্ত ছাড়া কোন পত্র পড়ে না। এরপর তিনি রূপার একটি আংটি (মোহর) তৈরী করালেন যার নকশা ছিল (مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ) আমি যেন তাঁর হাতে সে আংটির ঔজ্জ্বল্য (এখনও) দেখতে পাচ্ছি। [শুবা (রহঃ) বলেন] আমি কাতাদ (রহঃ)-কে বললামকে বলেছে যেতার নকশা (مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ) ছিলতিনি বললেনআনাস (রাঃ)।

পরিচ্ছেদঃ ৫০/ মজলিসের শেষ প্রান্তে বসা এবং মজলিসের ভিতরে ফাক দেখে সেখানে বসা

৬৬। ইসমাঈল (রহঃ) ... আবূ ওয়াকিদ আল-লায়সী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মসজিদে বসেছিলেনতাঁর সঙ্গে আরও লোকজন ছিলেন। ইতিমধ্যে তিনজন লোক এলেন। তন্মধ্যে দুজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে এগিয়ে এলেন এবং একজন চলে গেলেন। আবূ ওয়াকিদ (রাঃ) বলেনতাঁরা দুজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। এরপর তাঁদের একজন মজলিসের মধ্যে কিছুটা জায়গা দেখে সেখানে বসে পড়লেন এবং অন্যজন তাদের পেছনে বসলেন। আর তৃতীয় ব্যাক্তি ফিরে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিস শেষ করে (সাহাবায়ে কিরামকে লক্ষ্য করে) বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এই তিন ব্যাক্তি সম্পর্কে কিছু বলবতাদের একজন আল্লাহর দিকে এগিয়ে এসেছে তাই আল্লাহ্ তাকে স্থান দিয়েছেন। অন্যজন (ভীড় ঠেলে অগ্রসর হতে অথবা ফিরে যেতে) লজ্জাবোধ করেছে,তাই আল্লাহও তার ব্যাপারে (তাকে শাস্তি দিতে এবং রহমত থেকে বঞ্চিত করতে) লজ্জাবোধ করেছেন। আর অপরজন (মজলিসে হাজির হওয়া থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেতাই আল্লাহ্ও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫১/ নাবী করীম () এর বানীঃ যাদের কাছে হাদিস পৌঁছানো হয় তাদের মধ্যে অনেকে এমন আছেযে শ্রোতা (বর্ণনাকারী'র) চাইতে বেশী মুখস্থ রাখতে পারে।

৬৭। মূসাদ্দাদ (রহঃ) ... আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেতিনি একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা উল্লেখ করে বলেন, (মিনায়) তিনি তাঁর উটের ওপর বসেছিলেন। একজন লোক তাঁর উটের লাগাম ধরে রেখেছিল। তিনি বললেনঃ আজ কোন্ দিন?’ আমরা চুপ থাকলাম এবং ধারণা করলাম যেএ দিনটির আলাদা কোন নাম তিনি দিবেন। তিনি বললেনঃ “এটা কুরবানীর দিন নয় কি?” আমরা বললামজী হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এটা কোন্ মাস?’ আমরা চুপ থাকলাম এবং ধারণা করতে লাগলাম যেতিনি হয়ত এর (প্রচলিত) নাম ছাড়া অন্য কোন নাম দিবেন। তিনি বললেনঃ এটা যিলহাজ্জ নয় কি?’ আমরা বললামজী হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ জেনে রাখ! তোমাদের জানতোমাদের মালতোমাদের সন্মান তোমাদের পরস্পরের জন্য হারামযেমন আজকের এ মাসতোমাদের এ শহরআজকের এ দিন সন্মানিত। এখানে উপস্থিত ব্যাক্তি (আমার এ বাণী) যেন অনুপস্থিত ব্যাক্তির কাছে পৌঁছে দেয়। কারন উপস্থিত ব্যাক্তি হয়ত এমন এক ব্যাক্তির কাছে পৌঁছাবেযে এ বাণীকে তার থেকে বেশি মুখস্থ রাখতে পারবে।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩/ রাসূলুল্লাহ্ () ওয়ায-নসীহতে ও ইলম শিক্ষা দানে উপযুক্ত সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতেনযাতে লোকজন বিরক্ত না হয়ে পড়ে।

৫২. পরিচ্ছেদঃ কথা ও আমলের পূর্বে ইলম জরুরী।

আল্লাহ তা'আলার ইরশাদঃ فَاعْلَمْ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ সুতরাং জেনে রাখআল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই।” (৪৭ঃ ১৯)। এখানে আল্লাহ তাআলা ইলমের কথা আগে বলেছেন। আলিমগণই নবীগণের ওয়ারিস। তারা ইলমের ওয়ারিস হয়েছেন। তাই যে ইলম হাসিল করে সে বিরাট অংশ লাভ করে। আর যে ব্যক্তি ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে পথ চলেআল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলিমগণই তাকে ভয় করে (৩৫ঃ ২৮)। আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেনঃ وَمَا يَعْقِلُهَا إِلاَّ الْعَالِمُونَ আলিমগণ ছাড়া তা কেউ বুঝেনা অন্যত্র ইরশাদ হয়েছেঃ وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ তারা বলবেযদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতামতাহলে আমরা জাহান্নামী হতাম না। (৬৭ঃ ১০)। আরো ইরশাদ করেনঃ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لاَ يَعْلَمُونَ বলযারা জানে আর যারা জানে নাতারা কি সমান হতে পারে? (৩৯ঃ ৯)

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। আর অধ্যায়নের মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জিত হয়। আবু যার (রাঃ) তাঁর ঘাড়ের দিকে ইশারা করে বলেনযদি তোমরা এখানে তরবারি ধরএরপর আমি বুঝতে পারি যেতোমরা আমার ওপর সে তরবারী চালাবার আগে আমি একটু কথা বলতে পারবতবে আমি যা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছিতবে অবশ্যই আমি তা বলে ফেলব।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীঃ উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে (আমার বাণী) পৌঁছে দেয়। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনكُونُوا رَبَّانِيِّينَ (তোমরা রব্বানি হও)। এখানে رَبَّانِيِّينَ মানে প্রজ্ঞাবানআলিম ও ফকীহগণ। আরো বলা হয় رباني সে ব্যক্তি কে বলা হয় যিনি মানুষকে জ্ঞানের বড় বড় বিষয়ের পূর্বে ছোট ছোট বিষয় শিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলেন।


৬৮। মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ (রহঃ) ... ইবন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে নির্দিষ্ট দিনে ওয়ায-নসীহত করতেনআমরা যাতে বিরক্ত না হই।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩/ রাসূলুল্লাহ্ () ওয়ায-নসীহতে ও ইলম শিক্ষা দানে উপযুক্ত সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতেনযাতে লোকজন বিরক্ত না হয়ে পড়ে।

৬৯। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা (দ্বীনের ব্যাপারে) সহজ পন্থা অবলম্বন করবেকঠিন পন্থা অবলম্বন করবে নামানুষকে সুসংবাদ শোনাবেবিরক্তি সৃষ্টি করবে না।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪/ ইলম শিক্ষার্থীদের জন্য দিন নির্দিষ্ট করা

৭০। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবূ ওয়াইল (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ ইবনু মাসউদ (রাঃ) প্রতি বৃহস্পতিবার লোকদের ওয়ায-নসীহত করতেন। তাঁকে একজন বললহে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমার মন চায় যেন আপনি প্রতিদিন আমাদের নসীহত করেন। তিনি বললেনঃ এ কাজ থেকে আমাকে যা বিরত রাখে তা হলআমি তোমাদের ক্লান্ত করতে পছন্দ করি না। আর আমি নসীহত করার ব্যাপারে তোমাদের (অবস্থার) প্রতি লক্ষ্য রাখিযেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন আমাদের ক্লান্তির আশংকায়।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫/ আল্লাহ্ যার কল্যাণ চানতাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন

৭১। সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) ... হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমি মুআবিয়া (রাঃ)কে বক্তৃতারত অবস্থায় বলতে শুনেছিতিনি বলেনআমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিআল্লাহ্ যার কল্যাণ চানতাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। আমি তো কেবল বিতরণকারীআল্লাহ্ই দানকারী। সর্বদাই এ উম্মাত (সত্যিকারের মুসলিম) কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ্ হুকুমের উপর প্রতিষ্টিত থাকবেবিরুদ্ধবাদীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

পরিচ্ছেদঃ ৫৬/ ইলমের ক্ষেত্রে সঠিক অনুধাবন

৭২। আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ... মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি সফরে মদিনা পর্যন্ত ইবনু উমর (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। এ সময় তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি মাত্র হাদীস রেওয়ায়েত করতে শুনেছি। তিনি বলেনআমরা একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম। তখন তাঁর নিকট খেজুর গাছের মথি আনা হল। তারপর তিনি বললেনঃ গাছপালার মধ্যে এমন একটি গাছ আছে যার দৃষ্টান্ত মুসলিমের ন্যায়। তখন আমি বলতে চাইলাম যেতা হল খেজুর গাছকিন্তু আমি ছিলাম উপস্থিত সবার চাইতে বয়সে ছোট। তাই চুপ করে রইলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ গাছটি হল খেজুর গাছ।

পরিচ্ছেদঃ ৫৭/ ইলম ও হিকমতের ক্ষেত্রে সমতুল্য হওয়ার আগ্রহ

উমর (রাঃ) বলেনতোমরা নেতৃত্ব লাভের আগেই জ্ঞান হাসিল করে নাও। আবূ আবদুল্লাহ্ (বুখারী) বলেনআর নেতা বানিয়ে দেওয়ার পরওকেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ বয়োবৃদ্ধকালেও ইলম শিক্ষা করেছেন।


৭৩। হুমায়দী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেবলমাত্র দুটি ব্যাপারই ঈর্ষা করা যায়; (১) সে ব্যাক্তির উপরযাকে আল্লাহ্ তাআলা সম্পদ দিয়েছেনএরপর তাকে হক পথে অকাতরে ব্যয় করার ক্ষমতা দেন; (২) সে ব্যাক্তির উপরযাকে আল্লাহ্ তাআলা হিকমত দান করেছেনএরপর সে তার সাহায্যে ফায়সালা করে ও তা শিক্ষা দেয়।

পরিচ্ছেদঃ ৫৮/ সমুদ্রে খিযর (আঃ)-এর কাছে মূসা (আঃ)-এর যাওয়া

আর আল্লাহ্ তাআলার বানীঃ (هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَى أَنْ تُعَلِّمَنِي مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا) (আমি কি আপনার অনুসরণ করব এ শর্তে যেসত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দেবেন। (১৮ঃ ৬৬)


৭৪। মুহাম্মদ ইবনু গুরায়র আয-যুহরী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি এবং হুর ইবনু কায়স ইবনু হিসন আল ফাযারী মূসা (আঃ) এর সঙ্গী সম্পর্কে বাদানুবাদ করেছিলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেনতিনি ছিলেন খিযর। ঘটনাক্রমে তখন তাদের পাশ দিয়ে উবাই ইবনু কাব (রাঃ) যাচ্ছিলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে ডেকে বললেনঃ আমি ও আমার এ ভাই মতবিরোধ পোষণ করছি মূসা (আঃ) এর সেই সঙ্গীর ব্যাপারে যাঁর সাথে সাক্ষাত করার জন্য মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে পথের সন্ধান চেয়েছিলেনআপনি কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেনতিনি বললেনহ্যাঁআমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিএকবার মূসা (আঃ) বনী ইসরাঈলের কোন এক মজলিসে হাজির ছিলেন। তখন তাঁর কাছে এক ব্যাক্তি এসে বলল, ‘আপনি কাউকে আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী বলে জানেন কি?’ মূসা (আঃ) বললেননা।

তখন আল্লাহ্ তাআলা মূসা (আঃ) এর কাছে ওহী পাঠালেনঃ হ্যাঁআমার বান্দা খিযর। অতঃপর মূসা (আঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাত করার রাস্তা জানতে চাইলেন। আল্লাহ্ তাআলা মাছকে তার জন্য নিশানা বানিয়ে দিলেন এবং তাঁকে বলা হলতুমি যখন মাছটি হারিয়ে ফেলবে তখন ফিরে আসবে। কারনকিছুক্ষনের মধ্যেই তুমি তাঁর সাক্ষাত পাবে। তখন তিনি সমুদ্রে সে মাছেরনিশানা অনুসরন করতে লাগলেন। মূসা (আঃ)-কে তাঁর সঙ্গী যুবক বললেন, (কুরআন মজীদের ভাষায়ঃ)

أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّي نَسِيتُ الْحُوتَ وَمَا أَنْسَانِيهِ إِلَّا الشَّيْطَانُ أَنْ أَذْكُرَهُ قَالَ ذَلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِي فَارْتَدَّا عَلَى آثَارِهِمَا قَصَصًا

আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আমরা যখন পাথরের কাছে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলামশয়তান তার কথা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। ... মূসা বললেনআমরা তো সে স্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম। এরপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। (১৮ : ৬৩-৬৪)

তাঁরা খিযরকে পেলেন। তাদের ঘটনা তা-ইযা আল্লাহ্ তাআলা তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৯/ নবী () এর উক্তিঃ হে আল্লাহ্! আপনি তাকে কিতাব (কুরআন) শিক্ষা দিন।

৭৫। আবূ মামার (রহঃ) ... ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেনঃ হে আল্লাহ্! আপনি তাকে কিতাব (কুরআন) শিক্ষা দিন।

পরিচ্ছেদঃ ৬০/ বালকদের কোন বয়সের শোনা কথা গ্রহণীয়।

৭৬। ইসমাঈল (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমি বালক হবার নিকটবর্তী বয়সে একবার একটি মাদী গাধার উপর সওয়ার হয়ে এলাম। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন কোন দেওয়াল সামনে না রেখেই মিনায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। তখন আমি কোন এক কাতারের সামনে দিয়ে গেলাম এবং মাদী গাধাটিকে চরে খাওয়ার জন্য ছেড়ে দিলাম। আমি কাতারে ভেতর ঢুকে পড়লাম কিন্তু এতে কেউ আমাকে নিষেধ করলেন না।

পরিচ্ছেদঃ ৬০/ বালকদের কোন বয়সের শোনা কথা গ্রহণীয়।

৭৭। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... মাহমূদ ইবনুুর-রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমার মনে আছেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বালতি থেকে পানি নিয়ে আমার মুখমন্ডলে কুলি করে দিয়েছিলেনতখন আমি ছিলাম পাঁচ বছরের বালক।

পরিচ্ছেদঃ ৬১/ ইলম হাসিলের জন্য বের হওয়া

وَرَحَلَ جَابِرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ مَسِيرَةَ شَهْرٍ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أُنَيْسٍ فِي حَدِيثٍ وَاحِدٍ

জাবির ইবন ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) একটি মাত্র হাদীসের জন্য ‘আবদুল্লাহ্ ইবন উনায়স (রাঃ) এর কাছে এক মাসের পথ সফর করে গিয়েছিলেন।


৭৮। হিমস নগরের কাযী আবূল কাসিম খালিদ ইবনু খালীয়ি (রহঃ) ... ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতএকবার তিনি এবং হুর ইবনু কায়স ইবনু আল ফাযারী মূসা (আঃ) এর সঙ্গীর ব্যাপারে বাদানুবাদ করছিলেন। তখন উবাঈ ইবনু কা’ব (রাঃ) তাঁদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে ডেকে বললেনঃ আমি ও আমার এ ভাই মতবিরোধ পোষণ করছি মূসা (আঃ) এর সেই সঙ্গীর ব্যাপারে যাঁর সাথে সাক্ষাত করার জন্য মূসা (আঃ) আল্লাহর কাছে পথের সন্ধান চেয়েছিলেন—আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন?

উবাঈ (রাঃ) বললেনহ্যাঁআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর প্রসঙ্গে বলতে শুনেছি যেএকবার মূসা (আঃ) বনী ইসরাঈলের কোন এক মজলিসে হাজির ছিলেন। তখন তাঁর কাছে এক ব্যাক্তি এসে বলল, ‘আপনি কাউকে আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী বলে জানেন কি?’ মূসা (আঃ) বললেননা। তখন আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আঃ) এর কাছে ওহী পাঠালেনঃ হ্যাঁআমার বান্দা খিযর। এরপর তিনি তাঁর সাথে সাক্ষাত করার রাস্তা জানতে চাইলেন। আল্লাহ্ তা’আলা মাছকে তার জন্য নিশানা বানিয়ে দিলেন এবং তাঁকে বলা হলতুমি যখন মাছটি হারিয়ে ফেলবে তখন তুমি প্রত্যাবর্তন করবে। তাহলে কিছুক্ষনের মধ্যেই তুমি তাঁর সাক্ষাত পাবে। তিনি সমুদ্রে সে মাছেরনিশানা অনুসরন করতে লাগলেন। যা হোকমূসা (আঃ)-কে তাঁর সঙ্গী যুবক বললেন, (পবিত্র কুরআনের ভাষায়ঃ)

أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّي نَسِيتُ الْحُوتَ وَمَا أَنْسَانِيهِ إِلَّا الشَّيْطَانُ أَنْ أَذْكُرَهُ

আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আমরা যখন পাথরের কাছে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমি মাছের কথা (বলতে) ভুলে গিয়েছিলাম।আর শয়তান তার কথা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল।” (১৮ : ৬৩)। ... মূসা (আঃ) বললেনঃ

ذَلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِي فَارْتَدَّا عَلَى آثَارِهِمَا قَصَصًا

আমরা সে স্থানটির অনুসন্ধান করছিলাম (১৮ : ৬৪)।

তারপর তাঁরা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন। শেষে তাঁরা খিযর (আঃ)-কে পেয়ে গেলেন। তাঁদের (পরবর্তী) ঘটনা আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেছেন।

 

পরিচ্ছেদঃ ৬২/ ইলম শিক্ষার্থী ও শিক্ষাদাতার ফযীলত।

৭৯। মুহাম্মদ ইবনুল-আলা (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে যে হিদায়ত ও ইল্‌ম দিয়ে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হল যমীনের উপর পতিত প্রবল বৃষ্টির ন্যায়। কোন কোন ভূমি থাকে উর্বর যা সে পানি শুষে নিয়ে প্রচুর পরিমানে ঘাসপাতা এবং সবুজ তরুলতা উপাদন করে। আর কোন কোন ভূমি থাকে কঠিন যা পানি আটকে রাখে। পরে আল্লাহ্ তা’আলা তা দিয়ে মানুষের উপকার করেনতারা নিজেরা পান করে ও (পশুপালকে) পান করায় এবং তার দ্বারা চাষাবাদ করে। আবার কোন কোন জামি আছে যা একেবারে মসৃণ ও সমতলতা না পানি আটকে রাখেআর না কোন ঘাসপাতা উপাদন করে। এই হল সে ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত যে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাতে সে উপকৃত হয়। ফলে সে নিজে শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়। আর সে ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত-যে সে দিকে মাথা তুলে তাকায়ই না এবং আল্লাহর যে হিদায়ত নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছিতা গ্রহণও করে না।

আবূ ‘আবদুল্লাহ (মুখারী) (রহঃ) বলেনঃ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেনঃ তিনিقَبِلَت এর স্থলে قَيَّلَت (আটকিয়ে রাখে) ব্যবহার করেছেন।قَاعٌ হল এমন ভূমি যার উপর পানি জমে থাকে। আর الصَّفْصَفُ হল সমতল ভূমি।

পরিচ্ছেদঃ ৬৩/ ইলমের বিলুপ্তি ও মূর্খতার প্রসার

وَقَالَ رَبِيعَةُ لاَ يَنْبَغِي لأَحَدٍ عِنْدَهُ شَيْءٌ مِنَ الْعِلْمِ أَنْ يُضَيِّعَ نَفْسَهُ

রাবী’আ (রহঃ) বলেন, ‘যার কছে কিছুমাত্র ইলম আছেতার উচি নয় নিজেকে অপমানিত করা।


৮০। ইমরান ইবনু মায়সারা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যেকিয়ামতের কিছু নিদর্শন হলঃ ইলম লোপ পাবেঅজ্ঞাতার বিস্তৃতি ঘটবেমদপান ব্যাপক হবে এবং ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে।

পরিচ্ছেদঃ ৬৩/ ইলমের বিলুপ্তি ও মূর্খতার প্রসার

৮১। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি তোমাদের এমন একটি হাদীস বর্ণনা করব যা আমার পর তোমাদের কাছে আর কেউ বর্ণনা করবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যেকিয়ামতের কিছু নিদর্শন হলঃ ইলম কমে যাবেঅজ্ঞতার প্রসার ঘটবেব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বেস্ত্রীলোকের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবেএমনকি প্রতি পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন পুরুষ হবে তত্ত্বাবধায়ক।

পরিচ্ছেদঃ ৬৪/ ইলমের ফযীলত

৮২। সাঈদ ইবনু ‘উফায়র (রহঃ) ... ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিএকবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। তখন (স্বপ্নে) আমার কাছে এক পেয়ালা দুধ আনা হল। আমি তা পান করলাম (তার পরিতৃপ্তি আমার সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ল।) এমনকি আমার মনে হতে লাগল যেসে তৃপ্তি আমার নখ দিয়ে বের হচ্ছে। এরপর যেটুকু অবশিষ্ট ছিলতা আমি ‘উমর ইবনুল খাত্তাবকে দিলাম। সাহাবায়ে কিরাম জানতে চাইলেনইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এ স্বপ্নের কী তা’বীর করেনতিনি জওয়াবে বললেনঃ তা হল ইলম।

পরিচ্ছেদঃ ৬৫/ প্রাণী বা অন্য বাহনে আসীন অবস্থায় ফতোয়া দেওয়া।

৮৩। ইসমাঈল (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) দিনে মিনায় মানুষের (প্রশ্নের উত্তর দানের) জন্য (বাহনের উপর) বসা ছিলেন। লোকে তাঁর কাছে বিভিন্ন মাসআলা জিজ্ঞাসা করছিল। এক ব্যাক্তি তাঁর কাছে এসে বললআমি ভুলবশত কুরবানী করার আগেই মাথা মুড়িয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ যবেহ করকোন ক্ষতি নেই। আর এক ব্যাক্তি এসে বললআমি ভুলবশত কঙ্কর নিক্ষপের আগেই কুরবাণী করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কঙ্কর ছুঁড়োকোন অসুবিধা নেই। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রহঃ) বলেননবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সে দিন আগে বা পরে করা যে কাজ সম্পর্কেই জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিলতিনি একথাই বলছিলেনঃ করকোন ক্ষতি নেই।

পরিচ্ছেদঃ ৬৬/ হাত ও মাথার ইশারায় মাসয়ালার জবাব দান

৮৪। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতহাজ্জের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (নানা বিষয়ে) জিজ্ঞাসা করা হল। কোন একজন বললঃ আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বেই যবেহ করে ফেলেছি। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনতখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত দিয়ে ইশারা করে বললেনঃ কোন অসুবিধা নেই। আর এক ব্যাক্তি বললঃ আমি যবেহ করার পূর্বে মাথা মুড়িয়ে ফেলেছি। তিনি হাত দিয়ে ইশারা করলেনঃ কোন অসুবিধা নেই (যেহেতু ভুলবশতঃ করা হয়েছে)।

পরিচ্ছেদঃ ৬৬/ হাত ও মাথার ইশারায় মাসয়ালার জবাব দান

৮৫। মাক্বী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (শেষ যামানায়) ইলম তুলে নেওয়া হবেঅজ্ঞতা ও ফিতনার প্রসার ঘটবে এবং হারাজ বেড়ে যাবে। জিজ্ঞাসা করা হলইয়া রাসূলাল্লাহ! হারাজ কিতিনি হাত দিয়ে ইশারা করে বললেনঃ এ রকম। যেন তিনি এর দ্বারা হত্যা বুঝিয়েছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৬৬/ হাত ও মাথার ইশারায় মাসয়ালার জবাব দান

৮৬। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনআমি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে এলামতিনি তখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। আমি বললামমানুষের কি হয়েছেতিনি আকাশের দিকে ইঙ্গিত করলেন (দেখসূর্য গ্রহণ লেগেছে)। তখন সকল লোক (সালাতে কুসূফ আদায়ের জন্য) দাঁড়িয়ে রয়েছে। আয়িশা (রাঃ) বললেনসুবহানাল্লাহ্! আমি বললামএটা কি কোন নিদর্শনতিনি মাথা ইশারা করলেনহ্যাঁ। এরপর আমি (সালাতে) দাঁড়িয়ে গেলাম। এমনকি (সালাত এত দীর্ঘ ছিল যে,) আমার বেহুঁশ হয়ে পড়ার উপক্রম হল। তাই আমি মাথায় পানি ঢালতে লাগলাম। পরে (সালাত শেষে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করলেন। এরপর বললেনঃ যা কিছু আমাকে ইতিপূর্বে দেখানো হয়নিতা আমি আমার এ স্থানেই দেখতে পেয়েছি। এমনকি জান্নাত এবং জাহান্নামও দেখেছি। এরপর আল্লাহ্ তাআলা আমার কাছে ওহী প্রেরণ করলেনতোমাদেরকে কবরের মধ্যে পরীক্ষা করা হবে দাজ্জালের ন্যায় (কঠিন) পরীক্ষা অথবা তার কাছাকাছি।

ফাতিমা (রাঃ) বলেনআসমা (রাঃ)مثل (অনুরূপ) শব্দ বলেছিলেননা قريب (কাছাকাছি) শব্দতা ঠিক আমার মনে নেই। (কবরের মধ্যে) বলা হবেএ ব্যাক্তি সম্পর্কে তুমি কি জানোতখন মুমিন ব্যাক্তি বা মুকিন (বিশ্বাসী) ব্যাক্তি [ফাতিমা (রাঃ) বলেন] আসমা (রাঃ) এর কোন্ শব্দটি বলেছিলেন ঠিক আমার মনে নেইবলবে তিনি মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামতিনি আল্লাহর রাসূল। আমাদের কাছে মুজিযা ও হিদায়ত নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তা গ্রহণ করেছিলাম এবং তাঁর অনুসরণ করেছিলাম। তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনবার এরূপ বলবে। তখন তাকে বলা হবেআরামে ঘুমাওআমরা জানতে পারলাম যেতুমি (দুনিয়ায়) তাঁর ওপর বিশ্বাসী ছিলে। আর মুনাফিক অথবা মুরতাব (সন্দেহ পোষণকারী) ফাতিমা বলেনআসমা কোনটি বলেছিলেনআমি ঠিক মনে করতে পারছি না- বলবেআমি কিছুই জানিনা। মানুষকে (তাঁর সম্পর্কে) কি যেন বলতে শুনেছিতাই আমিও তাই বলেছি।

পরিচ্ছেদঃ ৬৭/ আবুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দলকে ঈমান এবং ইলমের হিফাজত করা এবং পরবর্তীদেরকে তা অবহিত করার বাপারে নবী () এর উসাহ দান।

وَقَالَ مَالِكُ بْنُ الْحُوَيْرِثِ قَالَ لَنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَارْجِعُوا إِلَى أَهْلِيكُمْ، فَعَلِّمُوهُمْ

মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রাঃ) বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছিলেনতোমরা তোমাদের গোত্রের নিকট ফিরে যাও এবং তাদেরকে শিক্ষা দাও


৮৭। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) ... আবূ জামরা (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও লোকদের মধ্যে দোভাষীর কাজ করতাম। একদিন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেনআবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেতিনি বললেনঃ তোমরা কোন্ প্রতিনিধি দলঅথবা বললেনঃ তোমরা কোন্ গোত্রেরতারা বললরাবীআ গোত্রের। তিনি বললেনঃ মারহাবা। এ গোত্রের প্রতি অথবা এ প্রতিনিধি দলের প্রতিএরা কোনরূপ অপদস্থ না হয়েই এসেছে। তারা বললআমরা বহু দূর থেকে আপনার কাছে এসেছি। আর আমাদের ও আপনার মাঝে রয়েছে কাফিরদের এই মুযার গোত্রের বাস। আমরা শাহ্‌র-ই হারাম- ছাড়া আপনার কাছে আসতে সক্ষম নই। সুতরাং আমাদের এমন কিছু নির্দেশ দিনযা আমাদের পশ্চাতে যারা রয়েছে তাদের কাছে পৌঁছাতে এবং তার ওসীলায় আমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারি।

তখন তিনি তাদের চারটি কাজের নির্দেশ দিলেন এবং চারটি কাজ থেকে নিষেধ করলেন। তাদের এক আল্লাহর উপর ঈমান আনার নির্দেশ দিলেন। তিনি বললেনঃ এক আল্লাহর উপর ঈমান আনা কিরূপে হয় জানোতারা বললঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ তা হল এ সাক্ষ্য দেওয়া যেআল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূলসালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করাযাকাত দেওয়া এবং রমযান এর সিয়াম পালন করা আর তোমাদের গনীমাতের মাল থেকে এক-পঞ্চমাংশ দান করবে। আর তাদের নিষেধ করলেন শুকনো লাউয়ের খোলসবুজ কলস এবং আলকাতরার পালিশকৃত পাত্র ব্যবহার করতে।

শুবা বলেনকখনও (আবূ জামরা) খেজুর গাছ থেকে তৈরী পাত্রের কথাও বলেছেন আবার তিনি কখনও (النقير) এর স্থলে (المقير) বলেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা এগুলো মনোযোগ সহকারে স্মরণ রাখ এবং তোমাদের পশ্চাতে যারা রয়েছে তাদের পৌঁছে দাও।

পরিচ্ছেদঃ ৬৮/ উদ্ভূত মাসআলার জন্য সফর করা এবং নিজের পরিজনদের শিক্ষা দেওয়া ।

৮৮। মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল আবূল হাসান (রহঃ) ... উকবা ইবনুল হারিস (রাঃ) বর্ণনা করেনতিনি আবূ ইহাব ইবনু আযীয (রহঃ)-এর কন্যাকে বিবাহ করলে তাঁর কাছে একজন স্ত্রীলোক এসে বললআমি উকবা (রাঃ)-কে এবং সে যাকে বিয়ে করেছে তাকে (আবূ ইহাবের কন্যাকে) দুধ পান করিয়েছি। উকবা (রাঃ) তাকে বললেনঃ আমি জানিনা যেতুমি আমাকে দুধ পান করিয়েছ। আর (ইতিপূর্বে) তুমি আমাকে একথা জানাওনি। এরপর তিনি মদিনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ কথার পর তুমি কিভাবে তার সঙ্গে সংসার করবেএরপর উকবা তাঁর স্ত্রীকে আলাদা করে দিলেন এবং সে মহিলা অন্য স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হল।

পরিচ্ছেদঃ ৬৯/ পালাক্রমে ইলম শিক্ষা করা ।

৮৯। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ও ইবনু ওহাব (রহঃ) ... উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমি ও আমার এক আনসারী প্রতিবেশী বনি উমায়্যা ইবনু যায়দের মহল্লায় বাস করতাম। এ মহল্লাহটি ছিল মদিনার ঊঁচু এলাকায় অবস্থিত। আমরা দুজনে পালাক্রমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে হাযির হাতম। তিনি একদিন আসতেন আর আমি একদিন আসতাম। আমি যেদিন আসতামসেদিনের ওহী প্রভৃতির খবর নিয়ে তাঁকে পৌঁছে দিতাম। আর তিনি যেদিন আসতেন সেদিন তিনি অনুরূপ করতেন। এরপর একদিন আমার আনসারী সঙ্গী তাঁর পালার দিন এলেন এবং (সেখান থেকে ফিরে) আমার দরজায় খুব জোরে করাঘাত করতে লাগলেন। (আমার নাম নিয়ে) বলতে লাগলেনতিনি কি এখানে আছেনআমি ঘাবড়ে গিয়ে তাঁর দিকে গেলাম। তিনি বললেনএক বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে [রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণকে তালাক দিয়েছেন]। আমি তখনি (আমার কন্যা) হাফসা (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তিনি তখন কাঁদছিলেন। আমি বললামরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাদের তালাক দিয়ে দিয়েছেনতিনি বললেনআমি জানিনা। এরপর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম এবং দাঁড়িয়ে থেকেই বললামঃ আপনি কি আপনার স্ত্রীদের তালাক দিয়েছেনজবাবে তিনি বললেনঃ না। আমি তখন আল্লাহু আকবার বলে উঠলাম।

পরিচ্ছেদঃ ৭০/ অপছন্দনীয় কিছু দেখলে ওয়ায-নাসীহত বা শিক্ষাদানের সময় রাগ করা

৯০। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ... আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকবার এক ব্যাক্তি বললইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি সালাতে (জামাতে) শামিল হতে পারি না। কারন অমুক ব্যাক্তি আমাদের নিয়ে খুব লম্বা করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। [আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেন,] আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কোন ওয়াযের মজলিসে সেদিনের তুলনায় বেশি রাগান্বিত হতে দেখিনি। (রাগত স্বরে) তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা মানুষের মধ্যে বিরক্তির সৃষ্টি কর। অতএব যে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে সে যেন সংক্ষেপ করে। কারন তাদের মধ্যে রোগীদুর্বল ও কর্মব্যস্ত লোকও থাকে।

পরিচ্ছেদঃ ৭০/ অপছন্দনীয় কিছু দেখলে ওয়ায-নাসীহত বা শিক্ষাদানের সময় রাগ করা

৯১। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... যায়েদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেএক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হারানো বস্তু প্রাপ্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেনঃ তার বাঁধনের রশি অথবা বললেনথলে-ঝুলি ভাল করে চিনে রাখ। এরপর এক বছর পর্যন্ত তার ঘোষণা দিতে থাক। তারপর (মালিক পাওয়া না গেলে) তুমি তা ব্যবহার কর। এরপর যদি এর মালিক আসে তবে তাকে তা দিয়ে দেবে। সে বললহারানো উট পাওয়া গেলেএ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন রেগে গেলেন যেতাঁর চেহারা মুবারক লাল হয়ে গেল। অথবা বর্ণনাকারী বলেনতাঁর মুখমন্ডল লাল হয়ে গেল। তিনি বললেনঃ উট নিয়ে তোমার কি হয়েছেতার তো আছে পানির মশক ও শক্ত পা। পানির কাছে যেতে পারে এবং গাছের লতা-পাতা খেতে পারে। তাই তাকে ছেড়ে দাওযাতে মালিক তাকে পেয়ে যায়। সে বললহারানো বকরী পাওয়া গেলেতিনি বললেনসেটি তোমারনয়ত তোমার ভাইয়েরনয়ত বাঘের।

পরিচ্ছেদঃ ৭০/ অপছন্দনীয় কিছু দেখলে ওয়ায-নাসীহত বা শিক্ষাদানের সময় রাগ করা

৯২। মুহাম্মদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কয়েকটি অপছন্দনীয় বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। প্রশ্নের সংখ্যা যখন বেশি হয়ে গেলতখন তিনি রেগে গিয়ে লোকদের বললেনঃ তোমরা আমার কাছে যা ইচ্ছা প্রশ্ন কর। এক ব্যাক্তি বললআমার পিতা কেতিনি বললেনঃ তোমার পিতা হুযাফা। আর এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বললইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা কেতিনি বললেনঃ তোমার পিতা হল শায়বার মাওলা (আযাদকৃত গোলাম) সালিম। তখন উমর (রাঃ) রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এড় চেহারার অবস্থা দেখে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা মহান আল্লাহ্ তাআলার কাছে তওবা করছি।

পরিচ্ছেদঃ ৭১। ইমাম বা মুহাদ্দিসের সামনে হাঁটু গেড়ে বসা

৯৩। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতএকবার রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফা দাঁড়িয়ে বললেনআমার পিতা কেতিনি বললেনঃ তোমার পিতা হুযাফা। এরপর তিনি বারবার বলতে লাগলেনতোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর। উমর (রাঃ) তখন হাঁটু গেড়ে বসে বললেনঃ আমরা আল্লাহকে রব হিসাবেইসলামকে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নাবী হিসেবে সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করে নিয়েছি। তিনি এ কথা তিনবার বললেন। তখন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব হলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৭২। ভালবাবে বুঝবার জন্য কোন কথা তিনবার বলা

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘মিথ্যা কথা থেকে সাবধান!’ এ কথাটি তিনি বারবার বলতে লাগলেন। ইবন ‘উমর (রাঃ) বলেননবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বিদায় হজ্জে) বলেছেনঃ আমি কি পৌঁছে দিয়েছিএকথা তিনি তিনবার বলেছেন।


৯৪। আবদা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম করতেনতিনবার সালাম করতেন। আর যখন কোন কথা বলতেন তা তিনবার বলতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৭২। ভালবাবে বুঝবার জন্য কোন কথা তিনবার বলা

৯৫। আবদা ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কথা বলতেন তখন তা তিনবার বলতেন যাতে তা বুঝে নেওয়া যায়। আর যখন কোন কওমের নিকট এসে সালাম করতেনতাদের প্রতি তিনবার সালাম করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৭২। ভালবাবে বুঝবার জন্য কোন কথা তিনবার বলা

৯৬। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমাদের এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছনে রয়ে গেলেন। এরপর তিনি আমাদের নিকট এমন সময় পৌঁছলেন যখন আমাদের সালাতুল আসরের প্রস্তুতিতে দেরী হয়ে গিয়েছিল। আমরা উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে গিয়ে আমাদের পা মোটামুটিভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চস্বরে ঘোষণা দিলেনঃ পায়ের গোড়ালী শুকনো থাকার জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে। তিনি একথা দুবার কিংবা তিনবার বললেন।

পরিচ্ছেদঃ ৭৩। আপন দাসী ও পরিবারবর্গকে শিক্ষা দান

৯৭। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) ... আবূ বুরদা (রহঃ)তাঁর পিতা থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ধরনের লোকের জন্য দুটি সওয়াব রয়েছেঃ (১) আহলে কিতাব—যে ব্যাক্তি তার নাবীর ওপর ঈমান এনেছে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপরও ঈমান এনেছে। (২) যে ক্রীতদাস আল্লাহর হক আদায় করে এবং তার মালিকের হকও (আদায় করে)। (৩) যার একটি বাঁদী ছিলযার সাথে সে মিলিত হত। তারপর তাকে সে সুন্দরভাবে আদব-কায়দা শিক্ষা দিয়েছে এবং ভালভাবে দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিয়েছেএরপর তাকে আযাদ করে বিয়ে করেছেতার জন্য দুটি সওয়াব রয়েছে। এরপর বর্ণনাকারী আমের (রহঃ) (তাঁর ছাত্রকে) বলেনতোমাকে কোন কিছুর বিনিময় ছাড়াই হাদীসটি শিক্ষা দিলামঅথচ এর চাইতে ছোট হাদীসের জন্যও লোক (দূর-দূরান্ত থেকে) সওয়ার হয়ে মদিনায় আসত।

পরিচ্ছেদঃ ৭৪। আলিম কর্তৃক মহিলাদের নসীহত করা ও দীনী ইলম শিক্ষা দেওয়া

৯৮। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাক্ষ্য রেখে বলছি যেঅথবা পরবর্তী বর্ণনাকারী আতা (রহঃ) বলেনআমি ইবনু আব্বাসকে সাক্ষী রেখে বলছি যেনাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঈদের দিন পুরুষের কাতার থেকে) বের হলেন আর তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিলাল (রাঃ)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনে করলেন যেদূরে থাকার কারনে তাঁর ওয়ায মহিলাদের কাছে পৌঁছে নি। তাই তিনি (পুনরায়) তাঁদের নসীহত করলেন এবং দান-খয়রাত করার উপদেশ দিলেন। তখন মহিলারা কানের দুল ও হাতের আংটি দিয়ে দিতে লাগলেন। আর বিলাল (রাঃ) সেগুলি তাঁর কাপড়ের আচঁলে নিতে লাগলেন।

ইসমাঈল (রহঃ) ... আতা (রহঃ) সূত্রে বলেন যেইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সাক্ষী রেখে বলছি।

পরিচ্ছেদঃ ৭৫। হাদিসের প্রতি আগ্রহ

৯৯। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হলঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! কিয়ামতের দিন আপনার শাফা'আত লাভে কে সবচাইতে বেশি ভাগ্যবান হবেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনআবূ হুরায়রা! আমি ধারণা করেছিলামএ বিষয়ে তোমার আগে আমাকে আর কেউ প্রশ্ন করবে না। কারন আমি দেখেছি হাদীসের প্রতি তোমার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। কিয়ামতের দিন আমার শাফা'আত লাভে সবচাইতে ভাগ্যবান হবে সেই ব্যাক্তি যে খালিস দিলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ (পূর্ণ কালেমা তাইয়্যেবা) বলে।

পরিচ্ছেদঃ ৭৬। কিভাবে ইলম তুলে নেয়া হবে

উমর ইবন আবদুল ‘আযীয (রহঃ) মদীনায় আবূ বকর ইবন হাযম (রহঃ)-এর কাছে এক পত্রে লিখেনঃ খোঁজ কররাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে হাদীস পাও তা লিখে নাও। আমি ইলম লোপ পাওয়ার এবং আলিমদের বিদায় নেওয়ার আশংকা করছি এবং জেনে রাখনবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস ছাড়া আর কিছুই গ্রহণ করা হবে না এবং প্রত্যেকের উচি ইলমের প্রচার-প্রসার করাআর তারা যেন একত্রে বসে (ইলমের চর্চা করে,) যাতে যে জানে না সে শিক্ষা লাভ করতে পারে। কারন ইলম গোপনীয় বিষয় না হওয়া পর্যন্ত বিলুপ্ত হবে না।


১০০। আলা ইবনু আবদুল জব্বার (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু দ্বীনার (রহঃ)-এর সূত্রে বির্ণিত রিওয়ায়াতে উমর ইবনু আবদুল- আযীয (রহঃ)- এর উপরোক্ত হাদীসে আলিমগণের বিদায় নেওয়া’ পর্যন্ত বর্ণিত আছে।

পরিচ্ছেদঃ ৭৬। কিভাবে ইলম তুলে নেয়া হবে

১০১। ইসমা‘ঈল ইবনু আবূ উওয়ায়স (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যেআল্লাহ্ তা‘আলা বান্দার অন্তর থেকে ইল্‌ম বের করে উঠিয়ে নেবেন নাবরং আলিমদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমেই ইল্‌ম উঠিয়ে নেবেন। যখন কোন আলিম বাকী থাকবে না তখন লোকেরা জাহিলদেরই নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবেতারা না জেনেই ফতোয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবেআর অপরকেও গোমরাহ করবে।

ফিরাবরী (রহঃ) বলেনআব্বাস (রহঃ) ... হিশাম সূত্রেও অনুরূপ বর্ণিত আছে।

পরিচ্ছেদঃ ৭৭। ইলম শিক্ষার জন্য মহিলাদের ব্যাপারে কি আলাদা দিন নির্ধারণ করা যায়?

১০২। আদম (রহঃ) ... আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ মহিলারা একবার নাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললপুরুষেরা আপনার কাছে আমাদের চাইতে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। তাই আপনি নিজে আমাদের জন্য একটি দিন ধার্য করে দিন। তিনি তাদের বিশেষ একটি দিনের ওয়াদা করলেনসে দিন তিনি তাদের সঙ্গে সাক্ষা করলেন এবং তাদের ওয়ায-নসীহত করলেন ও নির্দেশ দিলেন। তিনি তাদের যা যা বলেছিলেনতার মধ্যে একথাও ছিল যেতোমাদের মধ্যে যে স্ত্রীলোক তিনটি সন্তান আগেই পাঠাবে,* তারা তার জন্য জাহান্নামের পর্দাস্বরূপ হয়ে থাকবে। তখন এক স্ত্রীলোক বললআর দু’টি পাঠালেতিনি বললেনঃ দু’টি পাঠালেও।

পরিচ্ছেদঃ ৭৭। ইলম শিক্ষার জন্য মহিলাদের ব্যাপারে কি আলাদা দিন নির্ধারণ করা যায়?

১০৩। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) .... আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

আবদুর রহমান আল-আসবাহানী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ এমন তিন সন্তানযারা সাবালক হয়নি।

পরিচ্ছেদঃ ৭৮। কোন কথা শুনে না বুঝলে জানার জন্য পুনরায় জিজ্ঞেস করা

১০৪। সা‘ঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) .... ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) বলেননবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ) কোন কথা শুনে বুঝতে না পারলে বার বার জিজ্ঞাসা করতেন। একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “(কিয়ামতের দিন) যার হিসাব নেওয়া হবে তাকে আযাব দেওয়া হবে।” ‘আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমি জিজ্ঞাসা করলামআল্লাহ্ তা‘আলা কি ইরশাদ করেননি, (فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا‏) (তার হিসার-নিকাশ সহজেই নেওয়া হবে) (৮৪ : ৮)। তখন তিনি বললেনঃ তা কেবল হিসাব পেশ করা। কিন্তু যার হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে নেওয়া হবে সে ধবংস হবে।

পরিচ্ছেদঃ ৭৯। উপস্থিত ব্যাক্তি অনুপস্থিত ব্যাক্তির কাছে ইলম পৌঁছে দেবে

قَالَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তা বর্ণনা করেন।


১০৫। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ শুরায়হ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেতিনি ‘আমর ইবনু সা‘ঈদ (মদিনার গভর্নর)-কে বললেনযখন তিনি মক্কায় সেনাবাহিনী প্রেরণ করছিলেন— ‘হে আমীর! আমাকে অনুমতি দিনআমি আপনাকে এমন একটি হাদীস শোনাবযা মক্কা বিজয়ের পরের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন। আমার দু’ কান তা শুনেছেআমার অন্তর তা স্মরণ রেখেছেআর আমার দু’ চোখ তা দেখেছে। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করে বললেনঃ মক্কাকে আল্লাহ্ তা‘আলা হারাম করেছেনকোন মানুষ তাকে হারাম করেনি। তাই যে লোক আল্লাহর উপর এবং আখিরাতের উপর ঈমান রাখে তার জন্য সেখানে রক্তপাত করা এবং সেখানকার কোন গাছপালা কাটা হালাল নয়।

কেউ যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (সেখানকার) লড়াইকে দলীল হিসেবে পেশ করে তবে তোমরা বলে দিও যেআল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে এর অনুমতি দিয়েছিলেনকিন্তু তোমাদের অনুমতি দেননি। আমাকেও সে দিনের কিছু সময়ের জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন। তারপর আগের মতো আজ আবার এর নিষেধাজ্ঞা ফিরে এসেছে। উপস্থিত ব্যাক্তিরা যেন অনুপস্থিত ব্যাক্তিদের কাছে (এ বাণী) পৌঁছে দেয়। তারপর আবূ শুরাইয়া (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘আপনার এ হাদীস শুনে ‘আমর কি বলল?’ (আবূ শুরাইয়া (রাঃ) উত্তর দিলেন) সে বললঃ ‘হে আবূ শুরাইয়া! (এ বিষয়ে) আমি তোমার চাইতে ভাল জানি। মক্কা কোন বিদ্রোহীকেকোন খুনের পলাতক আসামীকে এবং কোন সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দেয় না।

পরিচ্ছেদঃ ৭৯। উপস্থিত ব্যাক্তি অনুপস্থিত ব্যাক্তির কাছে ইলম পৌঁছে দেবে

১০৬। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহহাব (রহঃ) .... আবূ বাকরা (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা উল্লেখ করে বলেন যেতিনি বলেছেনঃ তোমাদের জানতোমাদের মাল – বর্ণনাকারী মুহাম্মদ (রহঃ) বলেন, ‘আমার মনে হয়তিনি বলেছিলেনঃ এবং তোমাদের মানসম্মান (অন্য মুসলমানের জন্য) এ শহরে এ দিনের মতই মর্যাদা সম্পন্ন। শোন, (আমার এ বাণী যেন) তোমাদের মধ্যে উপস্থিত ব্যাক্তি অনুপস্থিত ব্যাক্তির কাছে পৌঁছে দেয়। বর্ণনাকারী মুহাম্মদ (রহঃ) বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য বলেছেনতা-ই হয়েছে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’বার করে বলেনহে লোক সকল! ‘আমি কি পৌঁছে দিয়েছি?’

পরিচ্ছেদঃ ৮০। নবী করীম () এর উপর মিথ্যারোপ করার গুনাহ

১০৭। আলী ইবনুল জা‘দ (রহঃ) .... ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার উপর মিথ্যা আরোপ করো না। কারণ আমার উপর যে মিথ্যা আরোপ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৮০। নবী করীম () এর উপর মিথ্যারোপ করার গুনাহ

১০৮। আবুল ওয়ালিদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমি আমার পিতা যুবাইরকে বললামঃ আমি তো আপনাকে অমুক অমুকের ন্যায় রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস বর্ণনা করতে শুনি না। তিনি বললেনঃ জেনে রাখআমি তাঁর থেকে দূরে থাকিনিকিন্তু (হাদিস বর্ণনা করি না এজন্য যে) আমি তাঁকে বলতে শুনেছিযে আমার উপর মিথ্যারোপ করবে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।

পরিচ্ছেদঃ ৮০। নবী করীম () এর উপর মিথ্যারোপ করার গুনাহ

১০৯। আবূ মা‘মার (রহঃ) ..... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ এ কথাটি তোমাদেরকে বহু হাদীস বর্ণনা করতে আমাকে বাধা দেয় যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যা আরোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।

পরিচ্ছেদঃ ৮০। নবী করীম () এর উপর মিথ্যারোপ করার গুনাহ

১১০। মাক্কী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... সালমা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–কে বলতে শুনেছিযে ব্যাক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনিসে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।

পরিচ্ছেদঃ ৮০। নবী করীম () এর উপর মিথ্যারোপ করার গুনাহ

১১১। মূসা (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার নামে তোমরা নাম রেখকিন্তু আমার উপনামে (কুনিয়াতে) তোমরা উপনামে রেখ না। আর যে আমাকে স্বপ্নে দেখে সে ঠিক আমাকেই দেখে। কারণ শয়তান আমার আকৃতির ন্যায় রুপ ধারণ করতে পারে না। যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যা আরোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।

পরিচ্ছেদঃ ৮১। ইলম লিপিবদ্ধ করা

১১২। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) .... আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমি ‘আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলামআপনাদের কাছে কি লিখিত কিছু আছেতিনি বললেনঃ ‘নাকেবলমাত্র আল্লাহর কিতাব রয়েছেআর সেই বুদ্ধি ও বিবেকযা একজন মুসলিমকে দান করা হয়। এ ছাড়া যা কিছু এ পত্রটিতে লেখা আছে। আবূ জুহায়ফা (রাঃ) বলেনআমি বললামএ পত্রটিতে কি আছেতিনি বললেন, ‘দিয়াতের (আর্থির ক্ষতিপূরণ) ও বন্দী মুক্তির বিধানআর এ বিধানটিও যেমুসলিমকে কাফিরের বিনিময়ে হত্যা করা যাবে না।

পরিচ্ছেদঃ ৮১। ইলম লিপিবদ্ধ করা

১১৩। আবূ নু‘আয়ম ফাযল ইবনু দুকায়ন (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেমক্কা বিজয়ের কালে খুযা‘আ গোত্র লায়স গোত্রের এক ব্যাক্তিকে হত্যা করল। এ হত্যা ছিল তাদের এক নিহত ব্যাক্তির প্রতিশোধ স্বরূপযাকে ইতিপূর্বে লায়স গোত্রের লোক হত্যা করেছিল। তারপর এ খবর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পোঁছল। তিনি তাঁর উটের উপর আরোহণ করে খুতবা দিলেনতিনি বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলা মক্কা থেকে ‘হত্যা’- কে (অথবা বর্ণনাকারী বললেন) ‘হাতী’-কে রোধ করেছেন। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘হত্যা’ বলেছেন না ‘হাতী’ বলেছেন এ ব্যাপারে বর্ণনাকারী আবূ নু‘আয়ম সন্দেহ পোষণ করেন। অন্যেরা শুধু ‘হাতী’ শব্দ উল্লেখ করেছেন। অবশ্য মক্কাবাসীদের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মু’মিনগনকে (যুদ্ধের মাধ্যমে) বিজয়ী করা হয়েছে। জেনে রাখআমার পূর্বে কারো জন্য মক্কা (নগরীতে লড়াই করা) হালাল করা হয়নি এবং আমার পরও কারো জন্য হালাল হবে না।

জেনে রাখতাও আমার জন্য দিনের কিছু সময় মাত্র হালাল করা হয়েছিল। আরো জেনে রাখআমার এই কথা বলার মুহূর্তে আবার তা হারাম হয়ে গেছে। সেখানকার কোন কাঁটা ও কোন গাছপালা কাটা যাবে না এবং সেখানে পড়ে থাকে কোন বস্তু কুড়িয়ে নেওয়া যাবেনা। তবে ঘোষণা করার জন্য নিতে পারবে। আর যদি কেউ নিহত হয়তবে তার আপনজনের জন্য দুটি ব্যবস্থার যে কোন একটির অধিকার রয়েছে। হয় তার ‘দিয়াত নিবে নয় ‘কিসাস’ গ্রহণ করবে। এরপর ইয়ামানবাসী এক ব্যাক্তি এসে বললইয়া রাসূলাল্লাহ! (এ কথাগুলো) আমাকে লিখে দিন। তিনি (সাহাবীদের) বললেনঃ তোমরা তাকে (আবূ শাহকে) লিখে দাও। তারপর একজন কুরায়শী [আব্বাস (রাঃ)] বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! গাছপালা কাটার নিষেধাজ্ঞা হতে ইযখির বাদ রাখুন। কারণ তা আমরা আমাদের ঘরে ও কবরে ব্যবহার করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ইযখির ছাড়াইযখির ছাড়া।*

পরিচ্ছেদঃ ৮১। ইলম লিপিবদ্ধ করা

১১৪। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের মধ্য আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) ব্যতীত আর কারো কাছে আমার চাইতে বেশী হাদীস নেই। কারণ তিনি লিখে রাখতেনআর আমি লিখতাম না। মা'মার (রহঃ) হাম্মাম (রহঃ) সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৮১। ইলম লিপিবদ্ধ করা

১১৫। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যখন বেড়ে গেল তখন তিনি বললেনঃ আমার কাছে কাগজ কলম নিয়ে এসআমি তোমাদের এমন কিছু লিখে দিব যাতে পরবর্তীতে তোমরা ভ্রান্ত না হও। ‘উমর (রাঃ) বললেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যন্ত্রণা প্রবল হয়ে গেছে (এমতাবস্থায় কিছু বলতে বা লিখতে তাঁর কষ্ট হবে)। আর আমাদের কাছে তো আল্লাহর কিতাব রয়েছেযা আমাদের জন্য যথেষ্ট। এতে সাহাবীগণের মধ্য মতবিরোধ দেখা দিল এবং শোরগোল বেড়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনতোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও। আমার কাছে ঝগড়া-বিবাদ করা উচিত নয়। এ পর্যন্ত বর্ণনা করে ইবনু আব্বাস (রাঃ) (যেখানে বসে হাদীস বর্ণনা করছিলেন সেখান থেকে) এ কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন যে, ‘হায় বিপদসাংঘাতিক বিপদ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর লেখনীর মধ্যে যা বাধ সেধেছে।

পরিচ্ছেদঃ ৮২। রাতে ইলম শিক্ষাদান এবং ওয়ায-নসিহত করা

১১৬। সাদাকা, ‘আমর ও ইয়াহিয়া ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) .... উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ এক রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জেগে বলেনঃ সুবহানআল্লাহ! এ রাতে কতই না বিপদাপদ নেমে আসছে এবং কতই না ভান্ডার খুলে দেওয়া হচ্ছে! অন্য সব ঘরের মহিলাগণকেও জানিয়ে দাওবহু মহিলা যারা দুনিয়ায় বস্ত্র পরিহিতাতারা আখিরাতে হবে বস্ত্রহীনা।

পরিচ্ছেদঃ ৮৩। রাতে ইলমের আলোচনা করা

১১৭। সা‘ঈদ ইবনু ‘উফায়র (রহঃ) ... ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের শেষের দিকে আমাদের নিয়ে ‘ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাম ফিরাবার পর তিনি দাঁড়িয়ে বললেনতোমরা কি এ রাতের সম্পর্কে জানোবর্তমানে যারা পৃথিবীতে রয়েছেএকশ বছরের মাথায় তাদের কেউ আর বাকী থাকবে না।

পরিচ্ছেদঃ ৮৩। রাতে ইলমের আলোচনা করা

১১৮। আদম (রহঃ) ..... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমি আমার খালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী মায়মূনা বিন্‌ত হারিস (রাঃ)-এর ঘরে এক রাত্রি যাপন করছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পালার রাতে সেখানে ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তাঁর ঘরে চলে আসলেন এবং চার রাক‘আত সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর উঠে বললেনঃ বালকটি কি ঘুমিয়ে গেছেবা এ ধরনের কোন কথা বললেন। তারপর (সালাতে) দাঁড়িয়ে গেলেনআমিও তাঁর বাঁ দিকে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাঁর ডান দিকে এনে দাঁড় করালেন। তারপর তিনি পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। পরে আরো দু’ রাক‘আত আদায় করলেন। এরপর শুয়ে পড়লেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। এরপর উঠে তিনি (ফজরের) সালাতের জন্য বের হলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৮৪। ইলম মুখস্ত করা

১১৯। ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ লোকে বলেআবূ হুরায়রা (রাঃ) বড় বেশী হাদীস বর্ণনা করে। (জেনে রাখ,) কিতাবে দুটি আয়াত যদি না থাকততবে আমি একটি হাদিসও বর্ণনা করতাম না। এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِن بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُولَٰئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

আমি সেসব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথ-নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরও যারা তা গোপন রাখে আল্লাহ তাদেরকে লা‘নত দেন এবং অভিশাপকারিগণও তাদেরকে অভিশাপ দেয় কিন্তু যারা তওবা করে এবং নিজদিগকে সংশোধন আর সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেওরাই তারাযাদের প্রতি আমি ক্ষমাশীলপরম দয়ালু।” (সূরা বাকারাঃ ১৫৯-১৬০)

(প্রকৃত ঘটনা এই যে,) আমার মুহাজির ভাইয়েরা বাজারে কেনাবেচায় এবং আমার আনসার ভাইয়েরা জমা-জমির কাজে মশগুল থাকত। আর আবূ হুরায়রা (রাঃ) (খেয়ে না খেয়ে) তুষ্ট থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে লেগে থাকত। তাই তারা যখন উপস্থিত থাকত নাতখন সে উপস্থিত থাকত এবং তারা যা মুখস্থ করত না সে তা মুখস্থ রাখত।

পরিচ্ছেদঃ ৮৪। ইলম মুখস্ত করা

১২০। আবূ মুস‘আব আহমদ ইবনু আবূ বাকর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমি বললামইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমি আপনার কাছ থেকে বহু হাদীস শুনি কিন্তু ভুলে যাই। তিনি বলবেন তোমার চাঁদর খুলে ধর। আমি খুলে ধরলাম। তিনি দু’হাত অঞ্জলী করে তাতে কিছু ঢেলে দেওয়ার মত করে বললেনঃ এটা তোমার বুকের সাথে লাগিয়ে ধর। আমি তা বুকের সাথে লাগালাম। এরপর আমি আর কিছুই ভুলিনি।

পরিচ্ছেদঃ ৮৪। ইলম মুখস্ত করা

১২১। ইবরাহীম ইবনুল মুনযির (রহঃ) ..... ইবনু আবূ ফুদায়ক (রহঃ) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন এবং তাতে বলেন যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত দিয়ে সে চাঁদরের মধ্য (কিছু) দিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৮৪। ইলম মুখস্ত করা

১২২। ইসমা‘ঈল (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইল্‌মের দুটি পাত্র মুখস্থ করে রেখেছিলাম। তার একটি পাত্র বিতরণ করে দিয়েছি। আর অপরটি প্রকাশ করলে আমার কন্ঠনালী কেটে দেওয়া হবে। আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেনহাদীসে উল্লিখিতبلعوم শব্দের অর্থ খাদ্যনালী।

পরিচ্ছেদঃ ৮৫। আলিমদের কথা শোনার জন্য লোকদের চুপ করানো

১২৩। হাজ্জাজ (রহঃ) .... জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেবিদায় হাজ্জের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি লোকদেরকে চুপ করিয়ে দাওতারপর তিনি বললেনঃ আমার পরে তোমরা কাফির (এর মত) হয়ে যেও না যেএকে অপরের গর্দান কাটবে।

পরিচ্ছেদঃ ৮৬। আলিমদের জন্য মুস্তাহাব এই যেতাঁকে যখন প্রশ্ন করা হয়ঃ সবচাইতে জ্ঞানী কেতখন তিনি ইহা আল্লাহর উপর ন্যাস্ত করবেন।

১২৪। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ আল-মুসনাদী (রহঃ) ... সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললামনাওফ আল-বাকালী দাবী করে যেমূসা (আঃ) [যিনি খাযির (আঃ) এর সাক্ষা লাভ করেছিলেন] বনী ইসরাঈলের মূসা নন বরং তিনি অন্য এক মূসা। (একথা শুনে তিনি) তিনি বললেনঃ আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে। উবাঈ ইবনু কা‘ব (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যেতিনি ইরশাদ করেনঃ মূসা (আঃ) একবার বনী ইসরাঈলদের মধ্য বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেন। তখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়সবচাইতে জ্ঞানী কেতিনি বললেনআমি সবচাইতে জ্ঞানী। মহান আল্লাহ তাঁকে সতর্ক করে দিলেন। কেননা তিনি ইল্‌মকে আল্লাহর উপর ন্যাস্ত করেন নি। তারপর আল্লাহ তাঁর নিকট এ ওহী পাঠালেনঃ দুই সমুদ্রের সংগমস্থলে আমার বান্দাদের মধ্য এক বান্দা রয়েছেযে তোমার চাইতে বেশী জ্ঞানী।

তিনি বলেনইয়া রব! কিভাবে তাঁর সাক্ষা পাওয়া যাবেতখন তাঁকে বলা হলথলের মধ্য একটি মাছ নিয়ে নাও। এরপর যেখানে সেটি হারিয়ে ফেলবে সেখানেই তাঁকে পাবে। তারপর তিনি রওয়ানা হলেন এবং ইউশা ইবনু নূন নামক তাঁর একজন খাদিমও তাঁর সাথে চলল। তাঁরা থলের মধ্য একটি মাছ নিলেন। চলার পথে তাঁরা একটি বড় পাথরের কাছে এসেসেখানে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। তারপর মাছটি (জীবিত হয়ে) থলে থেকে বেরিয়ে গেল এবং সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে চলে গেল। এ ব্যাপারটি মূসা (আঃ) ও তাঁর খাদিম-এর জন্য ছিল আশ্চর্যের বিষয়। এরপর তাঁরা তাঁদের বাকী রাতটুকু এবং পরের দিনভর চলতে থাকলেন।

পরে ভোরবেলা মূসা (আঃ) তাঁর খাদিমকে বললেন, ‘আমাদের নাশতা নিয়ে এসআমরা আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিআর মূসা (আঃ)-কে যে স্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলসে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে তিনি ক্লান্ত অনুভব করেন নি। তারপর তাঁর খাদিম তাঁকে বলল, ‘আপনি কি লক্ষ্য করেছনআমরা যখন পাথরের পাশে বিশ্রাম করছিলামতখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিমূসা (আঃ) বললেন, ‘আমরা তো সেই স্থানটই খুঁজছিলাম। তারপর তাঁরা তাঁদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল।

তাঁরা সেই পাথরের কাছে পোঁছেকাপড়ে আবৃত (বর্ণনাকারী বলেন) কাপড় মুড়ি দেওয়া এক ব্যাক্তিকে দেখতে পেলেন। মূসা (আঃ) তাঁকে সালাম দিলেন। তখন খাযির বললেনএ দেশে সালাম কোথা থেকে এল! তিনি বললেনআমি মূসা। খাযির জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বনী ইসরাইলের মূসাতিনি বললেনহ্যাঁ। তিনি আরো বললেনআমি কি আপনাকে অনুসরণ করতে পারি এ শর্তে যেসত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছেতা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেনখাযির বললেনতুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না। ‘মূসা (আঃ) বললেনআল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার আদেশ অমান্য করব না।

তারপর তাঁরা দুজন সমুদ্র তীর দিয়ে চলতে লাগলেনতাঁদের কোন নৌকা ছিল না। ইতিমধ্যে তাঁদের কাছ দিয়ে একটি নৌকা যচ্ছিল। তাঁরা নৌকাওয়ালাদের সঙ্গে তাঁদের আরোহণ করিয়ে নেওয়ার কথা বললেন। তারা খাযিরকে চিনতে পারল এবং ভাড়া ব্যতিরেকে তাঁদের নৌকায় তুলে নিল। তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার এক প্রান্তে বসে দুই-একবার সমুদ্রে তার ঠোঁট মারল। খাযির বললেন, ‘হে মূসা! আমার ইল্‌ম এবং তোমার ইল্‌ম (সব মিলেও) আল্লাহর ইল্‌ম থেকে সমুদ্র থেকে চড়ুই পাখির ঠোঁটে যতটুকু পানি এসেছে ততটুকু পরিমাণও কমাতে পারবে না।

এরপর খাযির নৌকার তক্তাগুলির মধ্য থেকে একটি খুলে ফেললেন। মূসা (আঃ) বললেনএরা আমাদের ভাড়া ছাড়া আরোহণ করিয়েছেআর আপনি আরোহীদের ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য নৌকায় ফাটল সৃষ্টি করলেনখাযির বললেনআমি কি বলিনি যেতুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না। মূসা (আঃ) বললেনআমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অধির কঠোরতা অবলম্বন করবেন না। বর্ণনাকারী বলেনইহা মূসা (আঃ) এর প্রথম ভুল।

তারপর তাঁরা উভয়ে (নৌকা থেকে নেমে) চলতে লাগলেন। (পথে) একটি বালক অন্যান্য বালকের সাথে খেলছিল। খাযির তার মাথার উপর দিক দিয়ে ধরলেন এবং হাত দিয়ে তার মাথা ছিদ্র করে ফেললেন। মূসা (আঃ) বললেন, ‘আপনি কি একটি নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন কোন হত্যার অপরাধ ছাড়াই?’ খাযির বললেনআমি তোমাকে বলিনি যেতুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করতে পারবে নাইবনু ‘উয়ায়না (রহঃ) বলেনএটা ছিল পূর্বের চেয়ে বেশী জোরালো।

তারপর আবারো চলতে লাগলেনচলতে চলতে তাঁরা এক গ্রামের অধিবাসীদের কাছে পৌঁছে তাদের কাছে খাবার চাইলেনকিন্তু তারা তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। তারপর সেখানে তাঁরা এক পতনোন্মুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন। খাযির তাঁর হাত দিয়ে সেটি খাড়া করে দিলেন। মূসা (আঃ) বললেন, ‘আপনি ইচ্ছে করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন। তিনি বললেনএখানেই তোমার আর আমার সম্পর্কের অবসান।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা মূসার (আঃ) এর ওপর রহম করুন। আমাদের কতই না মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হতো যদি তিনি সবর করতেনতাহলে আমাদের কাছে তাঁদের আরো ঘটনাবলী বর্ণনা করা হতো।

মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ আলী ইবনু খাসরাম সুফিয়ান ইবনু উয়ায়না (রহঃ) এ হাদিসটি বিশদভাবে বর্ণনা করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৮৭। আলিমের বসা থাকা অবস্থায় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করা

১২৫। উসমান (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ কোনটিকেননা আমাদের কেউ লড়াই করে রাগের বশীভূত হয়েআবার কেউ লড়াই করে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য। তিনি তার দিকে মাথা তুলে তাকালেন। বর্ণনাকারী বলেনতাঁর মাথা তোলার কারণ ছিল যেসে ছিল দাঁড়ানো। এরপর তিনি বললেনঃ আল্লাহর দ্বীনকে বুলন্দ করার জন্য যে যুদ্ধ করে সেই আল্লাহর রাস্তায়।

পরিচ্ছেদঃ ৮৮। কংকর মারার সময় কোন মাসআলা জিজ্জেস করা

১২৬। আবূ নু‘আয়ম (রহঃ) ... ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখলামজামরার নিকট তাঁকে মাস‘আলা জিজ্ঞাসা করা হছে। এক ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করলঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কংকর মারার আগেই কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কংকর মারতাতে কোন ক্ষতি নেই। অন্য এক ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করলঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কুরবানী করার পূর্বেই মাথা মুড়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কুরবানী করে নাওকোন ক্ষতি নেই। বস্তুত আগে পিছু করার যে কোন প্রশ্নই তাঁকে করা হচ্ছিলতিনি বলছিলেনঃ করকোন ক্ষতি নেই।

পরিচ্ছেদঃ ৮৯। আল্লাহ্‌ তায়ালার বাণীঃ (وَمَا أُوتِيتُمْ مِنْ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا) তোমাদেরকে ইলম দেওয়া হয়েছে অতি অল্পই।

১২৭। কায়স ইবনু হাফস (রহঃ) ... ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ একবার আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মদিনার বসতিহীন এলাকা দিয়ে চলছিলাম। তিনি একখানি খেজুরের ডালে ভর দিয়ে একদল ইয়াহুদীর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তারা একজন অন্যজনকে বলতে লাগলতাঁকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর। আর একজন বললতাঁকে কোন প্রশ্ন করো নাহয়ত এমন কোন জওয়াব দিবেন যা তোমার পছন্দ করো না। আবার তাদের কেউ কেউ বললতাঁকে আমরা প্রশ্ন করবই। তারপর তাদের মধ্য থেকে এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বললহে আবূল কাসিম! রূহ কীরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ করে রইলেনআমি মনে মনে বললামতাঁর প্রতি ওহী নাযিল হচ্ছে। তাই আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর যখন সে অবস্থা কেটে গেল তখন তিনি বললেনঃ

وَيَسْأَلُونَكَ عَنْ الرُّوحِ قُلْ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتُوا مِنْ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا

তারা তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলরূহ আমার প্রতিপালকের আদেশঘটিত। এবং তাদেরকে সামান্যই জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। (সূরা ইসরাঃ ৮৫)।

আ‘মাশ (রহ.) বলেনএভাবেই আয়াতটিকে আমাদের কিরাআতে أُوْتِيْتُمْ -এর স্থলে أُوْتُوْ পড়া হয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ৯০। কোন কোন মুস্তাহাব কাজ এই আশঙ্কায় ছেড়ে দেওয়া যে,কিছু লোক ভুল বুঝতে পারে এবং তারা এর চাইতে অধিকতর বিভ্রান্তিতে পড়তে পারে

১২৮। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) .... আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ ইবনু যুবায়র (রাঃ) আমাকে বললেন, ‘আয়িশা (রাঃ) তোমাকে অনেক গোপন কথা বলতেন। বল তো কাবা সম্পর্কে তোমাকে কী বলেছেনআমি বললামতিনি আমাকে বলেছেননবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আয়িশা! তোমাদের কওম যদি (ইসলাম গ্রহণে) নতুন না হতইবনু যুবায়র বলেনঃ কুফর থেকেতবে আমি কাবা ভেঙ্গে ফেলে তার দুটি দরজা বানাতাম। এক দরজা দিয়ে লোক প্রবেশ করত আর এক দরজা দিয়ে বের হত। (পরবর্তীকালে মক্কার আধিপত্য পেলে) তিনি এরূপ করেছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৯১। বুঝতে না পারার আশংকায় ইল্‌ম শিক্ষায় কোন এক গোত্র ছেড়ে আর এক গোত্র বেছে নেওয়া।

وَقَالَ عَلِيٌّ حَدِّثُوا النَّاسَ، بِمَا يَعْرِفُونَ، أَتُحِبُّونَ أَنْ يُكَذَّبَ، اللَّهُ وَرَسُولُهُ

আলী (রাঃ) বলেন, ‘মানুষের নিকট সেই ধরনের কথা বলযা তারা বুঝতে পারে। তোমরা কি পছন্দ কর যেআল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের প্রতি মিথ্যা আরোপ করা হোক?


১২৯। এ হাদীস উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) .... ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৯১। বুঝতে না পারার আশংকায় ইল্‌ম শিক্ষায় কোন এক গোত্র ছেড়ে আর এক গোত্র বেছে নেওয়া।

১৩০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেএকবার মু‘আয (রাঃ)নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সাওয়ারীতে উপবিষ্ট ছিলেনতখন তিনি তাঁকে ডাকলেনহে মু‘আয ইবনু জাবাল! মু‘আয (রাঃ) উত্তর দিলেন, ‘আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ! এবং (আপনার আদেশ পালনের জন্য) প্রস্তুত। তিনি ডাকলেনমু‘আয! মু‘আয (রাঃ) উত্তর দিলেন, ‘আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ এবং প্রস্তুত। তিনি আবার ডাকলেনমু‘আয। তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি হাযির ইয়া রাসূলাল্লাহ এবং প্রস্তুত। এরূপ তিনবার করলেন।

এরপর বললেনঃ যে কোন বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল’ তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। মু‘আয (রাঃ) বললেনইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কি মানুষকে এ খবর দেব নাযাতে তারা সুসংবাদ পেতে পারে?’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তারা এর উপর ভরসা করে বসে থাকবে।’ মু‘আয (রাঃ) (জীবনভর এ হাদিসটি বর্ণনা করেন নি) মৃত্যুর সময় এ হাদিসটি বর্ণনা করে গেছেন যাতে (ইল্‌ম গোপন রাখার) গুনাহ না হয়।

পরিচ্ছেদঃ ৯১। বুঝতে না পারার আশংকায় ইল্‌ম শিক্ষায় কোন এক গোত্র ছেড়ে আর এক গোত্র বেছে নেওয়া।

১৩১। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয (রাঃ)-কে বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোনরূপ শিরক না করে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করবে সে জান্নাতে দাখিল হবে। (এ কথা শুনে) মু‘আয (রাঃ) বললেন, ‘আমি কি লোকদের সুসংবাদ দেব না?’ তিনি বললেন, ‘নাআমার আশংকা হচ্ছে যেতারা এর উপরই ভরসা করে বসে থাকবে।’

পরিচ্ছেদঃ ৯২। ‘ইলম শিক্ষা করতে লজ্জাবোধ করা।

وَقَالَ مُجَاهِدٌ لاَ يَتَعَلَّمُ الْعِلْمَ مُسْتَحْيٍ وَلاَ مُسْتَكْبِرٌوَقَالَتْ عَائِشَةُ نِعْمَ النِّسَاءُ نِسَاءُ الأَنْصَارِ لَمْ يَمْنَعْهُنَّ الْحَيَاءُ أَنْ يَتَفَقَّهْنَ فِي الدِّينِ

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, ‘লাজুক এবং অহঙ্কারী ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করতে পারে না। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, ‘আনসারী মহিলারাই উত্তম। লজ্জা তাদেরকে ইসলামী জ্ঞান অন্বেষণ থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারে নি।


১৩২। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) ... উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে উম্মে সুলায়ম (রাঃ) এসে বললেনঃ ইয়া রাসুল্লাহ! আল্লাহ হক কথা প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। স্ত্রীলোকের স্বপ্নদোষ হলে কি গোসল করতে হবেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘হ্যাঁযখন সে বীর্য দেখতে পাবে।’ তখন উম্মে সালমা (লজ্জায়) তাঁর মুখ ঢেকে নিয়ে বললেনইয়া রাসূলাল্লাহ! স্ত্রীলোকের স্বপ্নদোষ হয় কি?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁতোমার ডান হাতে মাটি পড়ুক!* (তা না হলে) তাঁর সন্তান তাঁর আকৃতি পায় কিরূপে?

পরিচ্ছেদঃ ৯২। ‘ইলম শিক্ষা করতে লজ্জাবোধ করা।

১৩৩। ইসমা‘ঈল (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ গাছের মধ্যে এমন এক গাছ আছে যার পাতা ঝরে পড়ে না এবং তা হল মুসলিমের দৃষ্টান্ত। তোমরা আমাকে বল তো সেটা কোন গাছতখন লোকজনের খেয়াল জঙ্গলের গাছপালার প্রতি গেল। আর আমরা মনে হতে লাগল যেতা হল খেজুর গাছ। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনকিন্তু আমি লজ্জাবোধ করলাম। সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেনইয়া রাসুল্লাল্লাহ! আপনই আমাদের তা বলে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা হল খেজুর গাছ। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনতারপর আমি আমার পিতাকে আমার মনে যা এসেছিল তা বললাম। তিনি বললেন তুমি তখন তা বলে দিলে অমুক অমুক জিনিস লাভ করার চাইতে আমি বেশী খুশী হতাম।

পরিচ্ছেদঃ ৯৩। নিজে লজ্জাবোধ করলে অন্যকে প্রশ্ন করতে বলা

১৩৪। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ..... আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ আমার অধিক পরিমাণে ‘মযী’ বের হত। তাই এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–কে জিজ্ঞাসা করার জন্য মিকদাদকে বললাম। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এতে কেবল উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে হয়।

পরিচ্ছেদঃ ৯৪। মসজিদে ইলম ও মাসআলা-মাসায়েল আলোচনা করা

১৩৫। কুতায়বা ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি মসজিদে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমাদের কোথা থেকে ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দেন?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মদিনাবাসী ইহরাম বাঁধবে ‘যু’ল-হুলায়কা’ থেকেসিরিয়াবাসীইহরাম বাঁধবে ‘জুহফা’ থেকে এবং নাজদবাসী ইহরাম বাঁধবে ‘করন’ থেকে। ইবনু উমর (রাঃ) বলেনঅন্যরা বলেন যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এও বলেছেনঃ এবং ইয়ামানবাসী ইহরাম বাঁধবে ‘ইয়ালামলাম’ থেকে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, ‘এ কথাটি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বুঝে নিতে পারিনি।

পরিচ্ছেদঃ ৯৫। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের চাইতে বেশী উত্তর দেওয়া

১৩৬। আদম (রহঃ) .... ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যেএক ব্যাক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, ‘মুহরিম কী কাপড় পরবে?’ তিনি বলেনঃ ‘জামা পরবে নাপাগড়ী পরবে নাপাজামা পরবে নাটুপি পরবে না এবং কুসুম বা যা‘ফরান রঙে রঞ্জিত কোন কাপড় পরবে না। জুতা না থাকলে চামড়ার মোজা পরতে পারেতবে এমনভাবে কেটে ফেলতে হবে যাতে মোজা দু’টি পায়ের গিরার নিচে থাকে।