আযান

পরিচ্ছেদঃ ৩৯৩। আযানের সূচনা।

وَقَوْلُهُ عَزَّ وَجَلَّ: (وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ اتَّخَذُوهَا هُزُوًا وَلَعِبًا ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لاَ يَعْقِلُونَوَقَوْلُهُ: (إِذَا نُودِيَ لِلصَّلاَةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ)

আল্লাহ্‌ তায়ালার বাণীঃ যখন তোমরা সালাতের দিকে আহবান করোতখন তারা (মুশরিকরা) এ নিয়ে ঠাট্রা-বিদ্রুপ ও কৌতুক করে। তা এ জন্য যেতারা এমন এক সম্প্রদায় যারা উপলব্ধি করে না" (সুরা মায়েদাঃ ৫৮)

আল্লাহ্‌ তায়ালা আরও ইরশাদ করেছেনঃ আর যখন জুমার দিনে সালাতের জন্য আহবান করা হয় .... (সুরা জুমু'আঃ ৯)


৫৭৬। ইমরান ইবনু মাইসারা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেন, (সালাতে সমবেত হওয়ার জন্য) সাহাবা-ই কিরাম (রাঃ) আগুন জ্বালানো অথবা নাকূস বাজানোর কথা আলোচনা করেন। আবার এগুলোকে (যথাক্রমে) ইয়াহূদী ও নাসারাদের প্রথা বলে উল্লেখ করা হয়। তারপর বেলাল (রাঃ) কে আযানের বাক্য দু’বার করে ও ইকামতের বাক্য বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯৩। আযানের সূচনা।

৫৭৭। মাহমূদ ইবন গায়লান (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনইবনু উমর (রাঃ) বলতেন যেমুসলমানগন যখন মদিনায় আগমন করেনতখন তাঁরা সালাতের সময় অনুমান করে সমবেত হতেন। এর জন্য কোন ঘোষণা দেওয়া হতো না। একদিন তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনা করলেন। কয়েকজন সাহাবী বললেননাসারাদের ন্যায় নাকূস বাজানোর ব্যবস্থা করা হোক। আর কয়েকজন বললেনইয়াহূদীদের শিঙ্গার ন্যায় শিঙ্গা ফোকানোর ব্যবস্থা করা হোক। উমর (রাঃ) বললেনসালাতের ঘোষণা দেওয়ার জন্য তোমরা কি একজন লোক পাঠাতে পার নাতখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে বেলালউঠ এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য ঘোষণা দাও।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯৪। দুদু'বার আযানের শব্দ বলা।

৫৭৮। সুলাইমান ইব্‌ন হারব্‌ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনবিলাল (রাঃ) কে আযানের শব্দ দু’বার এবং قد قامت الصلاة ব্যতীত ইকামাতের শব্দগুলো বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯৪। দুদু'বার আযানের শব্দ বলা।

৫৭৯। মুহাম্মদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনমুসলিমগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তাঁরা সালাতের সময়ের জন্য এমন কোন সংকেত নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিলেনযার সাহায্যে সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় উপস্থিত এ কথা বুঝা যায়। কেউ কেউ বললেনআগুন জ্বালানো হোককিংবা ঘণ্টা বাজানো হোক। তখন বিলাল (রাঃ)-কে আযানের শব্দগুলো দু দু’বার এবং ইকামতের শব্দগুলো বেজোড় বলার নির্দেশ দেওয়া হল।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯৫। কাদ কামাতিস - সালাতু ব্যাতিতি ইকামাতের শব্দগুলো একবার করে বলা।

৫৮০। আলী ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রহঃ) .... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনবিলাল (রাঃ)-কে আযানের বাক্যগুলো দু’ দু’বার এবং ইকামতের শব্দগুলো বেজোড় বলার নির্দেশ দেওয়া হল। ইসমায়ীল (রহঃ) বলেনআমি এ হাদীস আইয়্যূবের নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেনতবে ‘কাদ্‌কামাতিস্‌ সালাত’ ব্যতীত।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯৬। আযানের ফযীলত।

৫৮১। আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ণ করেযাতে সে আযানের শব্দ না শোনে। যখন আযান শেষ হয়ে যায়তখন সে আবার ফিরে আসে। আবার যখন সালাতের জন্য ইকামত বলা হয়তখন আবার দূরে সরে যায়। ইকামত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ করওটা স্মরণ করবিস্মৃত বিষয়গুলো সে স্মরণ করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পৌছে যেসে কয় রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে তা মনে করতে পারে না।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯৭। আযানের স্বর উচ্চ করা।

وَقَالَ عُمَرُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ أَذِّنْ أَذَانًا سَمْحًا وَإِلاَّ فَاعْتَزِلْنَا

উমর ইবন আবদুল আযিয (রহঃ) (মুয়াজ্জিনকে) বলতেনস্বাভাবিক কণ্ঠে সাদাসিধাভাবে আযান দাওনতুবা এ পদ ছেড়ে দাও।


৫৮২। আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ‌ ইবনু আবদুর রহমান আনসারী মাযিনী (রহঃ) থেকে বর্ণিতযে আবূ সায়ীদ খুদ্‌রী (রাঃ) তাঁকে বললেনআমি দেখছি তুমি বক্‌রী চরানো এবং বন-জঙ্গলকে ভালবাস। তাই তুমি যখন বক্‌রী নিয়ে থাকবা বন-জঙ্গলে থাক এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য আযান দাওতখন উচ্চকণ্ঠে আযান দাও। কেননাজ্বীনইনসান বা যে কোন বস্তুই যতদূর পর্যন্ত মুয়াযযিনের আওয়াজ শুনবেসে কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। আবূ সায়ীদ (রাঃ) বলেনএকথা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে শুনেছি।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯৮। আযানের কারণে রক্তপাত থেকে নিরাপত্তা পাওয়া।

৫৮৩। কুতাইবা ইবনু সায়ীদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই আমাদের নিয়ে কোন গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যেতেনভোর না হওয়া পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করতেন না বরং লক্ষ্য রাখতেনযদি তিনি তখন আযান শুনতে পেতেনতাহলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকতেন। আর যদি আযান শুনতে না পেতেনতাহলে অভিযান চালাতেন। আনাস (রাঃ) বলেনআমরা খায়বারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম এবং রাতের বেলায় তাদের সেখানে পৌছলাম। যখন প্রভাত হল এবং তিনি আযান শুনতে পেলেন নাতখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়ার হলেন। আমি আবূ তালহা (রাঃ)-এর পিছনে সাওয়ার হলাম। আমার পানাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কদম মুবারকের সাথে লেগে যাচ্ছিল।

আনাস (রাঃ) বলেনতারা তাদের থলে ও কোদাল নিয়ে বেরিয়ে আমাদের দিকে আসল। হঠা তারা যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেলতখন বলে উঠল, ‘এ যে মুহাম্মদআল্লাহর শপথ! মুহাম্মদ তাঁর পঞ্চ বাহিনী সহ!’ আনাস (রাঃ) বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দেখে বলে উঠলেনঃ ‘আল্লাহু আকবরআল্লাহু আকবরখায়বার ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোন কাওমের আঙ্গিনায় অবতরণ করিতখন সতর্কীকৃতদের প্রভাত হবে কত মন্দ!’

পরিচ্ছেদঃ ৩৯৯। মুয়াজ্জিনের আযান শুনলে যা বলতে হয়।

৫৮৪। আব্দুল্লহাহ্‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা আযান শুনতে পাও তখন মুয়ায্‌যিন যা বলে তোমরাও তার অনুরূপ বলবে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯৯। মুয়াজ্জিনের আযান শুনলে যা বলতে হয়।

৫৮৫। মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) ... ঈসা ইবনু তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিতএকদিন তিনি মু’আবিয়া (রাঃ)-কে (আযানের জবাব দিতে) শুনেছেন যেতিনি ‘আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ পর্যন্ত মুয়ায্‌যিনের অনুরূপ বলেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯৯। মুয়াজ্জিনের আযান শুনলে যা বলতে হয়।

৫৮৬। ইসহাক ইবনু রাহওয়াই (রহঃ) ... ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) বলেছেনঃ আমার কোন ভাই আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যেমুয়ায্‌যিন যখনحَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ‏ বললতখন তিনি [মু’আবিয়া (রাঃ)]لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ বললেন। তারপর তিনি বললেনতোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমরা এরূপ বলতে শুনেছি।

পরিচ্ছেদঃ ৪০০। আযানের দু'

৫৮৭। আলী ইবনু আইয়্যাশ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আযান শুনে দু’আ করেঃ ‘হে আল্লাহ-এ পরিপূর্ণ আহবান ও সালাতের প্রতিষ্ঠিত মালিকমুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওয়াসীলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সে মাকেমে মাহমূদে পৌছিয়ে দিন যার অঙ্গিকার আপনি করেছেন’- কিয়ামতের দিন সে আমার শাফা’আত লাভের অধিকারী হবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪০১। আযানের ব্যাপারে কুরআহর মাধ্যমে নির্বাচন।

وَيُذْكَرُ أَنَّ أَقْوَامًا اخْتَلَفُوا فِي الأَذَانِ فَأَقْرَعَ بَيْنَهُمْ سَعْدٌ

উল্লেখ করা হয়েছে যেএকদল লোক আযান দেয়ার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করল। সা'দ (রাঃ) তাদের মধ্যে কুরআহর মাধ্যমে নির্বাচন করলেন।


৫৮৮। আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আযানে ও প্রথম কাতারে কী (ফযীলত) রয়েছেতা যদি লোকেরা জানতকুরআহর মাধ্যমে নির্বাচন ব্যতীত এ সুযোগ লাভ করা যদি সম্ভব না হততাহলে অবশ্যই তারা কুরআহর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিত। যুহরে সালাত (নামায/নামাজ) আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করার মধ্যে কী (ফযীলত) রয়েছেযদি তারা জানততাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। আর ইশা ও ফজরের সালাত (জামা’আতে) আদায়ের কী ফযীলত তা যদি তারা জানততাহলে নিঃসন্দেহে হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হত।

পরিচ্ছেদঃ ৪০২। আযানের মধ্যে কথা বলা।

وَتَكَلَّمَ سُلَيْمَانُ بْنُ صُرَدٍ فِي أَذَانِهِوَقَالَ الْحَسَنُ لاَ بَأْسَ أَنْ يَضْحَكَ وَهْوَ يُؤَذِّنُ أَوْ يُقِيمُ

সুলাইমান ইবন সুরাদ (রহঃ) আযানের মধ্যে কথা বলেছেন। হাসান বসরী (রহঃ) বলেনআযান বা ইকামত দেওয়ার সময় হেঁসে ফেললে কোন দোষ নেই।


৫৮৯। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকবার বর্ষণ সিক্ত দিনে ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে খুত্‌বা দিচ্ছিলেন। এ দিকে মুয়আয্‌যিন আযান দিতে গিয়ে যখনحَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ এ পৌছলতখন তিনি তাকে এ ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন যেলোকেরা যেন আবাসে (নিজ নিজ ঘরে) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়। এতে লোকেরা একে অপরের দিকে তাকাতে লাগল। তখন ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বললেনতাঁর চাইতে যিনি অধিক উত্তম ছিলেন (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনিই এরূপ করেছেন। অবশ্য জুমু’আর সালাত ওয়াজিব। (তবে ওযরের কারণে নিজ আবাসে সালাত আদায় করার অনুমতি রয়েছে)।

পরিচ্ছেদঃ ৪০৩। সময় বলে দেওয়ার লোক থাকলে অন্ধ ব্যাক্তি আযান দিতে পারে।

৫৯০। আবদুল্লাহ‌ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ‌ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিলাল (রাঃ) রাত থাকতেই আযান দেন। কাজেই ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) আযান না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা (সাহ্‌রীর) পানাহার করতে পার। আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) বলেনইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) ছিলেন অন্ধ। যতক্ষন না তাঁকে বলে দেওয়া হত যে, ‘ভোর হয়েছেভোর হয়েছে’-ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি আযান দিতেন না।

পরিচ্ছেদঃ ৪০৪। ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর আযান দেওয়া।

৫৯১। আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনযখন মুআয্‌যিন সুব্‌হে সা’দিকের প্রতীক্ষায় থাকত (ও আযান দিত) এবং ভোর স্পষ্ট হতো- জামা’আত দাঁড়ানোর আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংক্ষেপে দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪০৪। ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর আযান দেওয়া।

৫৯২। আবূ নু’আইম (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের আযান ও ইকামতের মাঝে দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষেপে আদায় করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪০৪। ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর আযান দেওয়া।

৫৯৩। আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ‌ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিলাল (রাঃ) রাত থাকতে আযান দিয়ে থাকেন। কাজেই তোমরা (সাহ্‌রী) পানাহার করতে থাকযতক্ষণ না ইবনু উম্মে মাক্‌তূম (রাঃ) আযান দেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪০৫। ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগে আযান দেওয়া।

৫৯৪। আহ্‌মদ ইব্‌ন ইউনুস (রহঃ) ... আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরাশাদ করেছেনঃ বিলালের আযান যেন তোমাদের কাউকে সাহ্‌রী খাওয়া থেকে বিরত না রাখে। কেননাসে রাত থাকতে আযান দেয়-যেন তোমাদের মধ্যে যারা তাহাজ্জুদের সালাতরত তারা ফিরে যায় আর যারা ঘুমন্ত তাদেরকে জাগিয়ে দেয়। তারপর তিনি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললেনঃ ফজর বা সুবহে সা’দিক বলা যায় নাযখন এরূপ হয়-তিনি একবার আঙ্গুল উপরের দিকে উঠিয়ে নীচের দিকে নামিয়ে ইশারা করলেনযতক্ষন না এরূপ হয়ে যায়।

বর্ণনাকারী যুহাইর (রহঃ) তাঁর শাহাদাত আঙ্গুলদ্বয় একটি আপরটির উপর রাখার পর তাঁর ডানে ও বামে প্রসারিত করে দেখালেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪০৫। ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগে আযান দেওয়া।

৫৯৫ ইসহাক ইউসুফ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিততিনি বলেনবিলাল (রাঃ) রাত থাকতে আযান দিয়ে থাকেন। কাজেইইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) যতক্ষণ আযান না দেয়ততক্ষন তোমরা পানাহার করতে পার।

পরিচ্ছেদঃ ৪০৬। আযান ইকামতের মধ্যে ব্যাবধান কতটুকু।

৫৯৬। ইসহাক ওয়াসিতী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন মুগাফ্‌ফাল মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যে সালাত (নামায/নামাজ) রয়েছে। একথা তিনি তিনবার বলেন। (তারপর বলেন) যে চায় তার জন্য।

পরিচ্ছেদঃ ৪০৬। আযান ইকামতের মধ্যে ব্যাবধান কতটুকু।

৫৯৭। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনমুয়ায্‌যিন যখন আযান দিততখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগনের মধ্যে কয়েকজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বের হওয়া পর্যন্ত (মসজিদের) স্তম্ভের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেন এবং এ অবস্থায় মাগরিবের আগে দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অথচ মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যে কিছু (সময়) থাকত না।

উসমান ইবনু জাবালা ও আবূ দাঊদ (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যেএ’দুয়ের মধ্যবর্তী ব্যবধান খুবই সামান্য হত।

পরিচ্ছেদঃ ৪০৭। ইকামতের জন্য অপেক্ষা করা।

৫৯৮। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনযখন মুয়ায্‌যিন ফজরের সালাতের প্রথম আযান শেষ করতেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সুবহে সা’দিকের পর ফজরের সালাতের আগে দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষেপে আদায় করতেনতারপর ডান কাতে শুয়ে পড়তেন এবং ইকামতের জন্য মুয়ায্‌যিন তার কাছে না আসা পর্যন্ত শুয়ে থাকতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪০৮। কেউ ইচ্ছা করলে আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে সালাত আদায় করতে পারেন।

৫৯৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনপ্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা যায়। প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে সালাত আদায় করা যায়। তৃতীয়বার একথা বলার পর তিনি বলেনযে ব্যাক্তি ইচ্ছা করে।

পরিচ্ছেদঃ ৪০৯। সফরে এক মুয়াজ্জিন যেন আযান দেয়।

৬০০। মু’আল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) ... মালিক ইবনু হুয়াইরিস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি আমার গোত্রের কয়েকজন লোকের সঙ্গে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম এবং আমরা তার নিকট বিশ রাত অবস্থান করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দয়ালু ও বন্ধু বসল ছিলেন। তিনি যখন আমাদের মধ্যে নিজ পরিজনের কাছে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ লক্ষ্য করলেনতখন তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা পরিজনের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস করআর তাদের দ্বীন শিক্ষা দিবে এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। যখন সালাতের সময় উপস্থিত হয়তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি বয়সে বড় সে ইমামতি করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪১০। মুসাফিরদের জামা'আত হলে আযান ও আকামত দেওয়াআরাফা ও মুযদালিফার হুকুমও অনুরূপ প্রচণ্ড শীতের রাতে ও বৃষ্টির সময় মুয়াজ্জিনের এ মর্মে ঘোষণা করা যেআবাস স্থলই সালাত।

৬০১। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমরা এক সফরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। মুয়ায্‌যিন আযান দিতে চাইলে তিনি বললেনঃ ঠাণ্ডা হতে দাও। কিছুক্ষন পর মুয়ায্‌যিন আবার আযান দিতে চাইলে তিনি বললেনঠাণ্ডা হতে দাও। তারপর সে আবার আযান দিতে চাইলে তিনি বললেনঠাণ্ডা হতে দাও। এভাবে বিলম্ব করতে করতে টিলাগুলোর ছায়া তার সমান হয়ে গেল। পরে বললেনঃ উত্তাপের তীব্রতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের ফল।

পরিচ্ছেদঃ ৪১০। মুসাফিরদের জামা'আত হলে আযান ও আকামত দেওয়াআরাফা ও মুযদালিফার হুকুমও অনুরূপ প্রচণ্ড শীতের রাতে ও বৃষ্টির সময় মুয়াজ্জিনের এ মর্মে ঘোষণা করা যেআবাস স্থলই সালাত।

৬০২। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনদু’জন লোক সফরে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেনঃ তোমরা উভয় যখন সফরে বেরুবে (সালাতের সময় হলে) তখন আযান দিবেএরপর ইকামত দিবে এবং তোমাদের উভয়ের মধ্যে যে বয়সে বড় সে ইমামতি করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪১০। মুসাফিরদের জামা'আত হলে আযান ও আকামত দেওয়াআরাফা ও মুযদালিফার হুকুমও অনুরূপ প্রচণ্ড শীতের রাতে ও বৃষ্টির সময় মুয়াজ্জিনের এ মর্মে ঘোষণা করা যেআবাস স্থলই সালাত।

৬০৩। মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমরা সমবয়সী একদল যুবক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হাযির হলাম। বিশ দিন ও বিশ রাত আমরা তাঁর নিকট অবস্থান করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দয়ালু ও নম্র স্বভাবের লোক ছিলেন। তিনি যখন বুঝতে পারলেন যেআমরা আমাদের পরিজনের কাছে ফিরে যেতে চাই বা ফিরে যাওয়ার জন্য উসুক হয়ে পড়েছি। তখন তিনি আমাদের জিজ্ঞাসা করলেনআমরা আমাদের পিছনে কাদের রেখে এসেছি। আমরা তাঁকে জানালাম।

তারপর তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের পরিজনের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস কর। আর তাদের (দ্বীন) শিক্ষা দাও এবং (স কাজের) নির্দেশ দাও। (বর্ণনাকারী বলেন) মালিক (রাঃ) আরও কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছিলেন যা আমার মনে আছে বা মনে নেই।

তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় করবে। সালাতের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের একজন যেন আযান দেয় এবং তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি বয়সে বড় সে যেন তোমাদের ইমামতি করে।

পরিচ্ছেদঃ ৪১০। মুসাফিরদের জামা'আত হলে আযান ও আকামত দেওয়াআরাফা ও মুযদালিফার হুকুমও অনুরূপ প্রচণ্ড শীতের রাতে ও বৃষ্টির সময় মুয়াজ্জিনের এ মর্মে ঘোষণা করা যেআবাস স্থলই সালাত।

৬০৪। মূসাদ্দাদ (রহঃ) .... নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনপ্রচন্ড এক শীতের রাতে ইবনু উমর (রাঃ) যাজনান নামক স্থানে আযান দিলেন। এরপর তিনি ঘোষণা করলেনঃ তোমরা আবাস স্থলেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নাও। পরে তিনি আমাদের জানালেন যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরের অবস্থায় বৃষ্টি অথবা প্রচন্ড শীতের রাতে মুয়ায্‌যিনকে আযান দিতে বললেন এবং সাথে সাথে একথাও ঘোষণা করতে বললেন যেতোমরা আবাসে সালাত আদায় করে নাও।

পরিচ্ছেদঃ ৪১০। মুসাফিরদের জামা'আত হলে আযান ও আকামত দেওয়াআরাফা ও মুযদালিফার হুকুমও অনুরূপ প্রচণ্ড শীতের রাতে ও বৃষ্টির সময় মুয়াজ্জিনের এ মর্মে ঘোষণা করা যেআবাস স্থলই সালাত।

৬০৫। ইসহাক (রহঃ) ... আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আবতাহ নামক স্থানে দেখলামবিলাল (রাঃ) একটি বর্শা নিয়ে বেরুলেন। অবশেষ আবতাহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে তা পূতে দিলেনএরপর সালাত (নামায/নামাজ) এর ইকামত দিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪১১. মুয়ায্‌যিন কি আযানের সময় ডানে বামে মুখ ফিরাবেন এবং এদিক সেদিক তাকাতে পারবেন?

وَيُذْكَرُ عَنْ بِلاَلٍ أَنَّهُ جَعَلَ إِصْبَعَيْهِ فِي أُذُنَيْهِوَكَانَ ابْنُ عُمَرَ لاَ يَجْعَلُ إِصْبَعَيْهِ فِي أُذُنَيْهِوَقَالَ إِبْرَاهِيمُ لاَ بَأْسَ أَنْ يُؤَذِّنَ عَلَى غَيْرِ وُضُوءٍوَقَالَ عَطَاءٌ الْوُضُوءُ حَقٌّ وَسُنَّةٌوَقَالَتْ عَائِشَةُ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ اللَّهَ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ

বিলাল (রাঃ) থেকে উল্লেখ করা হয় যেতিনি আযানের সময় দু’কানে আঙ্গুল রাখতেন। ইব্রাহীম (রহঃ) বলেনবিনা উযুতে আযানে কোন দোষ নেই। আতা (রহঃ) বলেন, (আযানের জন্য) উযু জরুরি এবং সুন্নাত। আয়িশা (রাঃ) বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বক্ষণ আল্লাহ্‌র জিকির করতেন।


৬০৬। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেতিনি বিলাল (রাঃ) কে আযান দিতে দেখেছেন। (এরপর তিনি বলেন) তাই আমি তাঁর (বিলালের) ন্যায় আযানের মাঝে মুখ এদিক সেদিক (ডানে-বামে) ফিরাই।

পরিচ্ছেদঃ ৪১২. আমাদের সালাত ফাওত হয়ে গেছে’ কারো এরুপ বলা অপছন্দনীয়। বরং আমরা সালাত পাইনি’ এরুপ বলা উচিত। তবে এ ব্যাপারে নবী () যা বলেছেন তাই সঠিক।

৬০৭। আব নু’আইম (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকবার আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলাম। হঠা তিনি লোকদের (আগমনের) আওয়াজ শুনতে পেলেন। সালাত শেষে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের কি হয়েছিলতারা বললেনআমরা সালাতের জন্য তাড়াহুড়া করে আসছিলাম।নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরূপ করবে না। যখন সালাতে আসবে ধীরস্থিরভাবে আসবে (ইমামের সাথে) যতটুকু পাও আদায় করবেআর যতটুকু ফাওত হয়ে যায় তা (ইমামের সালাম ফেরানোর পর) পূরা করে নিবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪১৩। সালাতের (জামা’আত) দিকে দৌড়ে আসবে নাবরং শান্তি ও ধীরস্থির ভাবে আসবে।

وَقَالَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا، وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا قَالَهُ أَبُو قَتَادَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

তিন বলেনতোমরা ইমামের সঙ্গে যতটুকু সালাত পাও তা আদায় করবেআর তোমাদের যা ছুটে যায় তা (ইমামের সালাম ফেরানোর পর) পূরা করে নিবে। আবু কাতাদা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা বর্ণনা করেছেন।


৬০৮। আদম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিততিনি বলেনযখন তোমরা ইকামত শুনতে পাবেতখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর দিকে চলে আসবেতোমাদের উচিত ধীরস্থীরতা ও গাম্ভীর্যতা বজায় রাখা। তাড়াহুড়া করবেনা। ইমামের সাথে যতটুকু পাও তা আদায় করবেআর যা ছুটে যায় তা পূরা করে নিবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪১৪। ইকামতের সময় ইমামকে দেখলে লোকেরা কখন দাঁড়াবে।

৬০৯। মুসলিম ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামাত হলে আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না।

পরিচ্ছেদঃ ৪১৫। তাড়াহুড়া করে সালাতের দিকে দৌড়াতে নেই বরং শান্ত ও ধীরস্থিরভাবে দাঁড়াবে।

৬১০। আবূ নু’আইম (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের ইকামাত হলে আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না। ধীরস্থিরতার প্রতি লক্ষ রাখা তোমাদের জন্য একান্ত আবশ্যক।

আলী ইবনু মুবারাক (রহঃ) হাদীস বর্ণনায় শায়বান (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪১৬। কোন কারণে মসজিদ থেকে বের হওয়া যায় কি?

৬১১। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন হুজরা থেকে সালাতের জন্য তাশরীফ নিয়ে আসলেন। এদিকে সালাতের ইকামাত দেওয়া হয়েছে এবং কাতার সোজা করে নেওয়া হয়েছেএমন কি তিনি মুসাল্লায় দাঁড়ালেনআমরা তাকবীরের অপেক্ষা করছিএমন সময় তিনি ফিরে গেলেন এবং বলে গেলেন তোমরা নিজ নিজ স্থলে অপেক্ষা কর। আমরা নিজ নিজ স্থানে অপেক্ষা করতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত তিনি তাশরিফ নিয়ে আসলেনতাঁর মাথা মুবারক থেকে পানি টপকে পড়ছিলো এবং তিনি গোসল করে এসেছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪১৭। ইমাম যদি বলেন আমি ফিরে আসা পর্যন্ত তোমরা অপেক্ষা করতাহলে মুক্তাদিগণ তার জন্য অপেক্ষা করবে।

৬১২। ইসহাক (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেন, (একবার) সালাতের ইকামাত দেয়া হয়ে গেছেলোকেরা তাদের কাতার সোজা করে নিয়েছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে আসলেন এবং সামনে এগিয়ে গেলেনতখন তাঁর উপর গোসল ফরজ ছিল। তিনি বললেনঃ তোমরা নিজ নিজ এলাকায় অপেক্ষা কর। এরপর তিনি ফিরে গেলেন এবং গোসল করলেনতারপর ফিরে আসলেনতখন তাঁর মাথা মুবারক থেকে টপটপ করে পানি পড়ছিল। এরপর সবাইকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪১৮। আমরা সালাত আদায় করিনি’ কারোও এরুপ বলা।

৬১৩। আবূ নু’আইম (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনখন্দকের যুদ্ধের দিন উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেনইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারিনিএমন কি সুর্য ডুবতে লাগলো, (জাবির (রাঃ) বলেন,) যখন কথা হচ্ছিল তখন এমন সময়যে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারী ইফতার করে ফেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমিও সে সালাত আদায় করিনি। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘বুহতান’ নামক উপত্যকায় গেলেনআমিও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। সেখানে তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে তিনি (প্রথমে) আসরের সালাত আদায় করলেনএরপর তিনি মাগরিবের সালাত আদায় করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪১৯। ইকামাতের পর ইমামের কোন প্রয়োজন দেখা দিলে।

৬১৪। আবূ মা’মার আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনসালাতের ইকামাত হয়ে গেছে তখনও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের একপাশে এক ব্যাক্তির সাথে একান্তে কথা বলছিলেনঅবশেষে যখন লোকদের ঘুম আসছিল তখন তিনি সালাতে দাঁড়ালেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪২০। সালাতের ইকামাত হয়ে গেলে কথা বলা।

৬১৫। আইয়্যাশ ইবনু ওয়ালিদ (রহঃ) ... হুমাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনসালাতের ইকামাত হয়ে যাওয়ার পর কোন ব্যাক্তির কথা বলা সম্পর্কে আমি সাবিত বুনানীকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীস শোনালেন। তিনি বলেনসালাতের ইকামাত দেওয়া হয় এমন সময় এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো এবং সালাতের ইকামাতের পর তাঁকে ব্যস্ত রাখল।

পরিচ্ছেদঃ ৪২১। জামা’আতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব।

وَقَالَ الْحَسَنُ إِنْ مَنَعَتْهُ أُمُّهُ عَنِ الْعِشَاءِ فِي الْجَمَاعَةِ شَفَقَةً لَمْ يُطِعْهَا

হাসান বাসরী (রহঃ) বলেনকোন মা যদি তার সন্তানের প্রতি স্নেহবশত ইশার সালাত জামা’আতে আদায় করতে নিষেধ করেতবে এ ব্যাপারে সন্তান তাঁর মায়ের আনুগত্য করবে না।


৬১৬। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণতাঁর কসম! আমার ইচ্ছা হয়জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে আদেশ দেইতারপর সালাত (নামায/নামাজ) কায়েমের নির্দেশ দেইএরপর সালাতের আযান দেওয়া হোকতারপর এক ব্যাক্তিকে লোকদের ইমামতি করার নির্দেশ দেই। এরপর আমি লোকদের কাছে যাই এবং তাদের (যারা সালাতে শামিল হয় নাই) ঘর জ্বালিয়ে দেই। যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণতাঁর কসম! যদি তাদের কেউ জানত যেএকটি গোশতহীন মোটা হাঁড় বা ছাগলের ভালো দুটি পা পাবে তাহলে অবশ্যই সে ইশার জামা’য়াতেও হাযির হত।

পরিচ্ছেদঃ ৪২২। জামা’আতে সালাত আদায়ের ফযীলত।

وَكَانَ الأَسْوَدُ إِذَا فَاتَتْهُ الْجَمَاعَةُ ذَهَبَ إِلَى مَسْجِدٍ آخَرَوَجَاءَ أَنَسٌ إِلَى مَسْجِدٍ قَدْ صُلِّيَ فِيهِ، فَأَذَّنَ وَأَقَامَ وَصَلَّى جَمَاعَةً

জামা’আত না পেলে আসওয়াদ ইবন ইয়াযীদ (রাঃ) অন্য মসজিদে চলে যেতেন। আনাস ইবন মালিক (রাঃ) এমন এক মসজিদে গেলেন যেখানে ইকামত দিয়ে জামা’আতে সালাত আদায় করলেন।


৬১৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জামা’আতে সালাতের ফযীলত একাকী আদায়কৃত সালাত থেকে সাতাশ’ গুণ বেশি।

পরিচ্ছেদঃ ৪২২। জামা’আতে সালাত আদায়ের ফযীলত।

৬১৮। মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তির জামা’আতের সাথে সালাতের সাওয়াবতাঁর নিজের ঘরে বাজারে আদায়কৃত সালাতের সাওয়াব দ্বিগুণ করে ২৫ গুন বাড়িয়ে দেয়া হয়। এর কারণে এই যেসে যখন উত্তমরূপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলতারপর একমাত্র সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে রওয়ানা করল তখন তাঁর প্রতি কদমের বিনিময়ে একটী মর্তবা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পর সে যতক্ষণ নিজ সালাতের স্থানে থাকেফিরিশতাগণ তার জন্য এ বলে দু’আ করতে থাকেন- “হে আল্লাহ! আপনি তার উপর রহমত বর্ষণ করুণ এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করুণ। “আর তোমাদের কেউ যতক্ষণ সালাতের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতরত বলে গণ্য হয়।

পরিচ্ছেদঃ ৪২৩। জামা’আতে ফজরের সালাত আদায়ের ফযীলত।

৬১৯। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যেজামা’আতের সালাত (নামায/নামাজ) তোমাদের কারো একাকি সালাত থেকে পঁচিশ গুণ বেশি মর্তবা রাখে। আর ফজরের সালাতে রাতের ও দিনের ফিরিশতারা সম্মিলিত হয়। তারপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলতেনতোমরা চাইলে (এর প্রমান স্বরূপ)إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا‏ ফজরের সালাতে উপস্থিত হয় (ফিরিশতাগণ) এ আয়াত পাঠ কর।

শুয়াইব (রহঃ) বলেনআমাকে নাফি (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ননা করে শুনিয়েছেন যেজামা’আতের সালাত একাকী সালাত থেকে সাতাশ গুণ বেশি মর্তবা রাখে।

পরিচ্ছেদঃ ৪২৩। জামা’আতে ফজরের সালাত আদায়ের ফযীলত।

৬২০। উমর ইবনু হাফস (রহঃ) ... উম্মে দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকদিন আবূ দারদা (রাঃ) রাগান্বিত অবস্থায় আমার নিকট আসলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলামকিসে তোমাকে রাগান্বিত করেছেতিনি বললেনআল্লাহর কসম! মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের মধ্যে জামা’আতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা ব্যতিত তাঁর তরীকার আর কিছুই দেখছি না। (এখন এতেও ত্রুটি দেখছি)

পরিচ্ছেদঃ ৪২৩। জামা’আতে ফজরের সালাত আদায়ের ফযীলত।

৬২১। মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন (মসজিদ থেকে) যে যত বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে সালাতে আসেতার তত বেশি সাওয়াব হবে। আর যে ব্যাক্তি ইমামের সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা পর্যন্ত অপেক্ষা করেতার সাওয়াব সে ব্যাক্তির চাইতে বেশিযে একাকী সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ে।

পরিচ্ছেদঃ ৪২৪। আউয়াল ওয়াক্তে যোহরের সালাতে যাওয়ার ফযীলত।

৬২২। কুতাইবা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যাক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় একটি কাটাযুক্ত ডাল দেখে তা সরিয়ে ফেলল। আল্লাহ তা’লা তার এ কাজ সাদরে কবুল করে তার গুনাহ মাফ করে দিলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শহীদ পাঁচ প্রকার –

১. প্লেগে মৃত ব্যাক্তি

২. কলেরায় মৃত ব্যাক্তি

৩. নিমজ্জিত ব্যাক্তি

৪. চাপা পড়ে মৃত ব্যাক্তি

৫. আল্লাহর পথে (জিহাদে) শহীদ।

তিনি আরো বলেছেনঃ মানুষ যদি আযান দেওয়াপ্রথম কাতারে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার কী ফযীলত তা জানতকুরআহর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়া সে সুযোগ না পেততাহলে কুরআহর মাধ্যমে হলেও তারা সে সুযোগ গ্রহণ করত আর আওয়াল ওয়াক্ত (যোহরের সালাতে যাওয়ার) কী ফযীলত তা যদি মানুষ জানততাহলে এর জন্য তারা অবশ্যই সর্বাগ্রে যেত। আর ইশা ও ফজরের সালাত (জামা’আতে) আদায়ে কী ফযীলততা যদি তারা জানত তা হলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা (জামা’আতে) উপস্থিত হতো।

পরিচ্ছেদঃ ৪২৫। (মসজিদে গমনে) প্রতি কদমে সাওয়াবের আশা রাখা।

৬২৩। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হাওশাব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে বনী সালিমা! তোমরা কি (স্বীয় আবাস স্থল থেকে মসজিদে আসার পথে) তোমাদের পদচিহ্নগুলোর সাওয়াবের কামনা কর নাইবনু মারিয়াম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেবনী সালিমা গোত্রের লোকেরা নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বসতি স্থাপন করতে চেয়েছিল। আনাস (রাঃ) বলেনকিন্তু মদিনার কোন এলাকা একেবারে শূন্য হওয়াটা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করেন নাই। তাই তিনি বললেনঃ তোমরা কি (মসজিদে আসা যাওয়ায়) তোমাদের পদচিহ্নগুলোর সাওয়াব কামনা কর না?

কুরআনে উল্লেখিত آثَار শব্দের ব্যাখ্যা সম্পর্কে মুজাহিদ (রহঃ) বলেনآثَار অর্থ পদক্ষেপ। অর্থা যমীনে পায়ে চলার চিহ্নসমূহ।

পরিচ্ছেদঃ ৪২৬। ইশার সালাত জামা’আতে আদায় করার ফযীলত।

৬২৪। উমর ইবনু হাফস (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিকদের উপস ফজর ও ইশার সালাতের চাইতে অধিক ভারী সালাত (নামায/নামাজ) আর নেই। এ দু’ সালাতের কি ফযীলততা যদি তারা জানততা হলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা (জামা’আতে) উপস্থিত হতো।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি সংকল্প করছিলাম যেমুয়ায্‌যিন কে ইকামত দিতে বলি এবং কাউকে লোকদের ইমামতি করতে বলিআর আমি নিজে একটি আগুনের মশাল নিয়ে গিয়ে এরপরও যারা সালাতে আসেনিতাদের উপর আগুন ধরিয়ে দেই।

পরিচ্ছেদঃ ৪২৭। দু’ব্যক্তি বা তার বেশি হলেই জামা’আত।

৬২৫ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ... মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিততিনি বলেনযখন সালাতের সময় হয়তখন তোমাদের দু’জনের একজন আযান দিবে ও ইকামত বলবে। তারপর তোমাদের দু’জনের মধ্যে যে অধিক বয়স্ক সে ইমামতি করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪২৮। যিনি সালাতের অপেক্ষায় মসজিদে বসে থাকেনতাঁর এবং মসজিদের ফযিলত।

৬২৬। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যতক্ষণ তার সালাতের স্থানে থাকে তার উযূ (ওজু/অজু/অযু) ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য ফিরিশতাগণ এ বলে দোয়া করতে থাকে যেইয়া আল্লাহ! আপনি তাঁকে মাফ করে দিনইয়া আল্লাহ! আপনি তার উপর রহম করুণ। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তির সালাতই তাকে বাড়ি ফিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখেসে সালাতরত আছে বলে গণ্য হবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪২৮। যিনি সালাতের অপেক্ষায় মসজিদে বসে থাকেনতাঁর এবং মসজিদের ফযিলত।

৬২৭। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে নাসেদিন সাত ব্যাক্তিকে আল্লাহ তা’লা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক২. সে যুবক যার জীবন গড়ে উঠেছে তার রবের ইবাদাতের মধ্যে৩. সে ব্যাক্তি যার কলব মসজিদের সাথে লেগে রয়েছে৪. সে দু’ব্যাক্তি যারা পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর ওয়াস্তেএকত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য৫. সে ব্যাক্তি যাকে কোন উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহ্বান জানায়কিন্তু সে এ বলে তা প্রত্যাখ্যান করে যে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’৬. সে ব্যাক্তি যে এমন গোপনে দান করে যেতার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জাননা ৭. সে ব্যাক্তি যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করেফলে তার দু’চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়।

পরিচ্ছেদঃ ৪২৮। যিনি সালাতের অপেক্ষায় মসজিদে বসে থাকেনতাঁর এবং মসজিদের ফযিলত।

৬২৮। কুতাইবা (রহঃ) ... হুমাইদ (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আংটি ব্যবহার করতেনতিনি বললেনহ্যাঁ। একরাতে তিনি ইশার সালাত (নামায/নামাজ) অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্বে আদায় করলেন। সালাত শেষ করে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেনলোকেরা সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু তোমরা যতক্ষণ সালাতের জন্য অপেক্ষা করেছততক্ষণ সালাতরত ছিলে বলে গণ্য করা হয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেন। এ সময় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আংটির চমক দেখতে পাচ্ছিলাম।

পরিচ্ছেদঃ ৪২৯। সকাল- বিকেল মসজিদে যাওয়ার ফযীলত।

৬২৯। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ যে ব্যাক্তি সকাল বা বিকালে যতবার মসজিদে যায়আল্লাহ তা’লা তার জন্য ততবার মেহমানদারীর আয়োজন করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩০। ইকামত হয়ে গেলে ফরয ব্যতীত অন্য কোন সালাত নেই।

৬৩০। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহাইনা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তির পাশ দিয়ে গেলেন। অন্য সুত্রে ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনআব্দুর রাহমান (রহঃ) ... হাফস ইবনু আসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি মালিক ইবনু বুহাইনা নামক আযদ গোত্রীয় এক ব্যাক্তিকে বলতে শুনেছি যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখলেন। তখন ইকামত হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেনলোকেরা সে লোকটিকে ঘিরে ফেলল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনফজরের সালাত কি চার রাকাআতফজরের সালাত কি চার রাকাআতগুনদার ও মুআয (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে হাদিসটি বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন। (এ বর্ণনাটই সঠিক) তবে হাম্মাদ (রহঃ) ও সা’দ (রহঃ) এর মধ্যে সে হাফস (রহঃ) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করতে গিয়ে মালিক ইবনু বুহাইনা (রহঃ) থেকে বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩১। কি পরিমাণ রোগ থাকা সত্ত্বেও জামা’আতে শামিল হওয়া উচিত।

৬৩১। উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) ... আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকদা আমরা আয়িশা (রাঃ) এর কাছে ছিলাম এবং সালাতের পাবন্দী ও উহার তা’যীম সম্বন্ধে আলোচনা করছিলাম। আয়িশা (রাঃ) বললেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অন্তিম রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেনতখন সালাতের সময় হলে আযান দেওয়া হল। তখন তিনি বললেনআবূ বকরকে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বল। তাঁকে বলা হল যেআবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন তখন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো সে কথা বললেন এবং তারা আবারো তা-ই বললেন। তৃতীয়বারও তিনি সে কথা বললেন। তিনি আরো বললেনঃ তোমরা ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সাথী মহিলাদের মত। আবূ বকরকেই বলযেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে নেয়।

আবূ বকর (রাঃ) এগিয়ে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় শুরু করলেন। এদিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকে একটু হালকাবোধ করলেন। দু’জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে বেরিয়ে এলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেনআমার চোখে এখনও স্পষ্ট ভাসছে। অসুস্থতার কারণে তাঁর দু’পা মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়ে যাচ্ছিল। তখন আবূ বকর (রাঃ) পেছনে সরে আসতে চাইলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে স্বস্থানে থাকার জন্য ইঙ্গিত করলেন।

তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একটু সামনে আনা হলতিনি আবূ বকর (রাঃ) এর পাশে বসলেন। আ’মাশকে জিজ্ঞাসা করা হলঃ তাহলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমামতি করছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণে সালাত আদায় করছিলেন এবং লোকেরা আবূ বকর (রাঃ) এর সালাতের অনুকরন করছিল। আ’মাশ মাথার ইশারায় বললেনহ্যাঁ।

আবূ দাউদ (রহঃ) শু’বা (রহঃ) সূত্রে আ’মাশ থেকে হাদীসের কতকাংশ উল্লেখ করেছেন। আবূ মু’আবিয়া (রহঃ) অতিরিক্ত বলেছেনতিনি আবূ বকর (রাঃ) এর বাঁ দিকে বসেছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩১। কি পরিমাণ রোগ থাকা সত্ত্বেও জামা’আতে শামিল হওয়া উচিত।

৬৩২। ইব্রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন একেবারে কাতর হয়ে গেলেন এবং তাঁর রোগ বেড়ে গেলতখন তিনি আমার ঘরে সেবা-শুশ্রূষার জন্য তাঁর অন্যান্য স্ত্রীগণের কাছে সম্মতি চাইলেন। তাঁরা সম্মতি দিলেন। সে সময় দু’জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে (সালাতের জন্য) তিনি বের হলেনতাঁর দু’পা মাটিতে হেঁচড়িয়ে যাচ্ছিলো। তিনি ছিলেন আব্বাসা (রাঃ) ও অপর এক সাহাবীর মাঝখানে। (বর্ণনাকারী) উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেনআয়িশা (রাঃ) এর বর্ণিত এ ঘটনা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট ব্যক্ত করি। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেনতুমি কি জানোতিনি কে ছিলেনযার নাম আয়িশা (রাঃ) বলেন নিআমি বললামনা। তিনি বললেনতিনি ছিলেন আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩২। বৃষ্টি এবং অন্য কোন ওযর নিজ আবাসে সালাত আদায়ের অনুমতি।

৬৩৩ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনইবনু উমর (রাঃ) একবার প্রচন্ড শীত ও বাতাসের রাতে সালাতের আযান দিলেন। তারপর ঘোষণা দিলেনপ্রত্যেকে নিজ নিজ আবাসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নাওএরপর তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচণ্ড শীত ও বৃষ্টির রাত হলে মুয়াযযিনকে এ কথা বলার নির্দেশ দিতেন - প্রত্যেকে নিজ নিজ আবাসে সালাত আদায় করে নাও।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩২। বৃষ্টি এবং অন্য কোন ওযর নিজ আবাসে সালাত আদায়ের অনুমতি।

৬৩৪। ইসমাইল (রহঃ) ... মাহমুদ ইবনু রাবী’ আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) তাঁর নিজ গোত্রের ইমামতি করতেন। তিনি ছিলেন অন্ধ। একদিন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন। ইয়া রাসূলাল্লাহ! কখনো কখনো ঘোর অন্ধকার ও বর্ষণ প্রবাহ হয়ে পড়ে। অথচ আমি একজন অন্ধ ব্যাক্তি। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমার ঘরে কোন একস্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করুণযে স্থানটিকে আমার সালাতের স্থান হিসেবে নির্ধারন করবো। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে এলেন এবং বললেনঃ আমার সালাত আদায়ের জন্য কোন জায়গাটি তুমি ভালো মনে করতিনি ইশারা করে ঘরের জায়গা দেখিয়ে দিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে সালাত আদায় করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩৩। যারা উপস্থিত হয়েছে তাদের নিয়েই কি ইমাম সালাত আদায় শুরু করবে এবং বৃষ্টির দিনে কি জুমু’আর খুবা দিবে?

৬৩৫। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহহাব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএক বৃষ্টির দিনে ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে খুবা দিচ্ছিলেন। মুয়ায্‌যিন যখন حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ‏ পর্যন্ত পৌছলোতখন তিনি তাঁকে বললেনঘোষণা করে দাও যেসালাত যার যার আবাসে। এ শুনে লোকেরা একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগল – যেন তারা বিষয়টিকে অপছন্দ করল। তিনি তাদের লক্ষ করে বললেনমনে হয় তোমরা বিষয়টি অপছন্দ করছ। তবেআমার চেয়ে যিনি উত্তম ছিলেন অর্থা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনই এরূপ করেছেন। একথা সত্য যে জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ) ওয়াজিব। তবে তোমাদের অসুবিধায় ফেলা আমি পছন্দ করি না।

হাম্মাদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকেও অনুরূপ বর্ণিত আছে। তবে এ সূত্রে এরূপ উল্লেখ আছেআমি তোমাদের গুনাহর অভিযোগে ফেলতে পছন্দ করি না যেতোমরা হাঁটু পর্যন্ত কাদা মাড়িয়ে আসবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩৩। যারা উপস্থিত হয়েছে তাদের নিয়েই কি ইমাম সালাত আদায় শুরু করবে এবং বৃষ্টির দিনে কি জুমু’আর খুবা দিবে?

৬৩৬। মুসলিম ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ... আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ)-কে (শবে-কদর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা) করলামতিনি বললেনএকখন্ড মেঘ এসে এমন ভাবে বর্ষণ শুরু করল যেযার ফলে (মসজিদে নববীর) ছাদ দিয়ে পানি পড়া শুরু হল। কেননা, (তখন মসজিদের) ছাদ ছিল খেজুরের ডালের তৈরী। এমন সময় সালাতের ইকামত দেওয়া হলআমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পানি ও কাদার উপর সিজদা করতে দেখলামএমন কি আমি তাঁর কপালেও কাদার চিহ্ন দেখতে পেলাম।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩৩। যারা উপস্থিত হয়েছে তাদের নিয়েই কি ইমাম সালাত আদায় শুরু করবে এবং বৃষ্টির দিনে কি জুমু’আর খুবা দিবে?

৬৩৭ আদম (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিএক আনসারী (সাহাবী) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন আমি আপনার সাথে মসজিদে এসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে অক্ষম। তিনি ছিলেন মোটা। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য কিছু খাবার তৈরি করলেন এবং তাঁকে বাড়িতে দাওয়াত করে নিয়ে গেলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এর জন্য একটি চাটাই পেতে দিলেন এবং চাটাইয়ের একপ্রান্তে কিছু পানি ছিটিয়ে দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে চাটাইয়ের উপর দু’ রাকা’আত সালাত আদায় করলেন। জারুদ গোত্রীয় এক ব্যাক্তি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি চাশতের সালাত আদায় করতেন নাকিতিনি বললেনসে দিন ব্যতীত আর কোন দিন তাঁকে তা আদায় করতে দেখিনি।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩৪। খাবার উপস্থিতএসময় সালাতের ইকামত হল।

وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَبْدَأُ بِالْعَشَاءِوَقَالَ أَبُو الدَّرْدَاءِ مِنْ فِقْهِ الْمَرْءِ إِقْبَالُهُ عَلَى حَاجَتِهِ حَتَّى يُقْبِلَ عَلَى صَلاَتِهِ وَقَلْبُهُ فَارِغٌ

ইবন উমর (রাঃ) সালাতের আগে রাতের খাবার খেয়ে নিতেন। আবু দারদা (রাঃ) বলেনমানুষের জ্ঞানের পরিচয় হলপ্রথমে নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে নেওয়াযাতে নিশ্চিতভাবে সালাতে মনযোগী হতে পারে।


৬৩৮। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন রাতের খাবার উপস্থিত করা হয়আর সে সময় সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত হয়ে যায়তখন প্রথমে খাবার খেয়ে নাও।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩৪। খাবার উপস্থিতএসময় সালাতের ইকামত হল।

৬৩৯। ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিকেলের খাবার পরিবেশন করা হলে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগে তা খেয়ে নিবে। খাওয়া রেখে সালাতে তাড়াহুড়া করবে না।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩৪। খাবার উপস্থিতএসময় সালাতের ইকামত হল।

৬৪০। উবায়দুল্লাহ ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারো সামনে রাতের খাবার উপস্থিত করা হয়অপর দিকে সালাতের ইকামত হয়ে যায়তখন আগে খাবার খেয়ে নিবে। খাওয়া রেখে সালাতে তাড়াহুড়া করবে না।

(নাফি’ (রহঃ) বলেন) ইবনু উমর (রাঃ) এর জন্য খাবার পরিবেশন করা হতসে সময় সালাতের ইকামত দেয়া হততিনি খাবার শেষ না করে সালাতে আসতেন না। অথচ তিনি ইমামের কিরাআত শুনতে পেতেন।

যুহাইর (রহঃ) ও ওয়াহব ইবনু উসমান (রহঃ) মূসা ইবনু ওকবা (রহঃ) সূত্রে ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন খাবার খেতে থাকতখন সালাতের ইকামত হয়ে গেলেও খাওয়া শেষ না করে তাড়াহুড়া করবে না।

আবূ আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহঃ)] বলেনআমাকে ইব্রাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) এ হাদিসটি ওয়াহাব ইবনু উসমান (রহঃ) থেকে বর্ননা করেছেন এবং ওয়াহাব হলেন মদিনাবাসী।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩৫। খাবার হাতে থাকা অবস্থায় ইমামকে সালাতের দিকে আহ্বান করলে।

৬৪১। আব্দুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আমর ইবনু উমাইয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি দেখলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বকরির) সামনের রানের গোশত কেটে খাচ্ছেনএমন সময় তাঁকে সালাতের জন্য ডাকা হল। তিনি তখনই ছুরি রেখে দিয়ে উঠে গেলেন ও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেনকিন্তু এজন্য নতুন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেন নি।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩৬। গার্হস্থ কর্মে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় ইকামত হলেসালাতের জন্য বের হওয়া।

৬৪২। আদম (রহঃ) ... আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলামনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে থাকা অবস্থায় কি করতেনতিনি বললেনঘরের কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থা পরিজনের সহায়তা করতেন। আর সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় এতে সালাতে চলে যেতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩৭। যিনি কেবলমাত্র রাসূলুল্লাহ () এর সালাত ও তাঁর সুন্নাত শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন।

৬৪৩। মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ... আবু কিলাবাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকবার মালিক ইবনু হুয়াইরিস (রাঃ) আমাদের এ মসজিদে এলেন। তিনি বললেনআমি অবশ্যই তোমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবোবস্তুত আমার উদ্দেশ্য সালাত আদায় করা নয় বরং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছিতা তোমাদের দেখানোই আমাদের উদ্দেশ্য। (আইয়ুব (রহঃ) বলেন) আমি আবূ কিলাবা (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলামতিনি কি ভাবে সালাত আদায় করতেনতিনি বললেনআমাদের এই শাইখের মত আর শাইখ প্রথম রাকা’আতের সিজদা শেষ করে যখন মাথা উঠাতেনতখন দাঁড়াবার আগে একটু বসে নিতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩৮। বিজ্ঞ ও মর্যাদাশীল ব্যক্তিই ইমামতির অধিক হকদার।

৬৪৪। ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেনক্রমে তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। তখন তিনি বললেনআবূ বকরকে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বল। আয়িশা (রাঃ) বললেন তিনি তো কোমল হৃদয়ের লোক। যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেনতখন তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে পারবেন না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো বললেনআবূ বকরকে বলসে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। আয়িশা (রাঃ) আবার সে কথা বললেন। তখন তিনি আবার বললেনআবূ বকরকে বলসে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। তোমরা ইউসুফের (আলাইহিস সালাম) সাথী রমণীদেরই মত। তারপর একজন সংবাদদাতা আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট সংবাদ নিয়ে আসলেন এবং তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায়ই লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩৮। বিজ্ঞ ও মর্যাদাশীল ব্যক্তিই ইমামতির অধিক হকদার।

৬৪৫। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় বললেনআবূ বকর (রাঃ)-কে বলসে যেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। আয়িশা (রাঃ) বলেনআমি বললামআবূ বকর (রাঃ) যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেনতখন তাঁর কান্নার দরুন লোকেরা তাঁর কিছুই শুনতে পাবেনা। কাজেই উমর (রাঃ)-কে লোকদের নিয়ে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিন। আয়িশা (রাঃ) বলেনআমি হাফসা (রাঃ) কে বললামতুমিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বল যেআবূ বকর (রাঃ) আপনার স্থানে দাঁড়ালে কান্নার দরুন লোকেরা তাঁর কিছুই শুনতে পাবেনা। তাই উমর (রাঃ) কে লোকদের নিয়ে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিন। হাফসা (রাঃ)-ও তাই করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনথামতোমরা তোমরা ইউসুফের (আলাইহিস সালাম) সাথী রমণীদেরই ন্যায়। আবূ বকর (রাঃ)-কে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে বল। হাফসা (রাঃ) তখন আয়িশা (রাঃ)-কে বললেনআমি তোমার কাছ থেকে কখনও কল্যাণকর কিছু পাইনি।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩৮। বিজ্ঞ ও মর্যাদাশীল ব্যক্তিই ইমামতির অধিক হকদার।

৬৪৬। আবূ ইয়ামান (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক আনসারী (রাঃ) যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসারীখাদিম ও সাহাবী ছিলেন। তিনি বর্ননা করেন যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় আবূ বকর (রাঃ) সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অবশেষে যখন সোমবার এবং লোকেরা সালাতের জন্য কাতারে দাঁড়ালোতখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরার পর্দা উঠিয়ে আমাদের দিকে তাকালেন। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর চেহারা যেন কোরআনের পৃষ্ঠা (এর ন্যায় ঝলমল করছিল)। তিনি মুচকি হাসলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পেয়ে আমরা খুশিতে প্রায় আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম এবং আবূ বকর (রাঃ) কাতারে দাঁড়ানোর জন্য পিছন দিকে সরে আসছিলেন। তিনি ভেবেছিলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়তো সালাতে আসবেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ইশারায় বললেন যেতোমরা তোমাদের সালাত পূর্ণ করে নাও। এরপর তিনি পর্দা ফেলে দিলেন। সে দিনই তিনি ইন্তেকাল করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩৮। বিজ্ঞ ও মর্যাদাশীল ব্যক্তিই ইমামতির অধিক হকদার।

৬৪৭। আবূ মা’মার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেন, (রোগশয্যায় থাকার কারণে) তিনি দিন পর্যন্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে আসেন নি। এ সময় একবার সালাত (নামায/নামাজ) এর ইকামত দেওয়া হল। আবূ বকর (রাঃ) ইমামতি করার জন্য অগ্রসর হচ্ছিলেন। এমন সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরের পর্দা ধরে উঠালেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা যখন আমাদের সম্মুখে প্রকাশ পেলতখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের ইশারায় আবূ বকর (রাঃ) কে (ইমামতির জন্য) এগিয়ে যেতে বললেন এবং পর্দা ফেলে দেন। তারপর মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে আর দেখার সৌভাগ্য হয়নি।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩৮। বিজ্ঞ ও মর্যাদাশীল ব্যক্তিই ইমামতির অধিক হকদার।

৬৪৮। ইয়াহইয়া ইবনু সুলাইমান (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যখন খুব বেড়ে গেলতখন তাঁকে সালাতের জামা’আত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেনআবূ বকরকে বলসে যেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়। আয়িশা (রাঃ) বলেনআমি বললামআবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল মনের লোক। কিরা’আতের সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়বেন। তিনি বললেনতাকেই সালাত আদায় করতে বল। আয়িশা (রাঃ) সে কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। তিনি আবারো বললেনতাঁকেই সালাত আদায় করতে বল। তোমরা ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সাথী রমণীদের মত।

এ হাদীসটি যুহরীর (রহঃ) থেকে বর্ণনা করার ব্যাপারে যুবাইদী যুহরীর ভাতিজা ও ইসহাক ইবনু ইয়াহইয়া কালবী (রহঃ) ইউনুস (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন এবং মা’মার ও উকায়ল (রহঃ) যুহরী (রহঃ) এর মাধ্যমে হামযা (রহঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদিসটি (মুরসাল হিসাবে) বর্ণনা করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৩৯। কারণবশত ইমামের পাশে দাঁড়ানো।

৬৪৯। যাকারিয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঅন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ) কে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই তিনি লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। উরওয়া বর্ননা করেনইতিমধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটু সুস্থতা বোধ করলেন এবং সালাতের জন্য বেরিয়ে আসলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) লোকদের ইমামতি করছিলেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখে পিছিয়ে আসতে চাইলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইশারা করলেন যেযেভাবে আছ সেভাবেই থাক। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ) এর বরাবর তাঁর পাশে বসে গেলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অনুসরণ করে সালাত আদায় করছিলেন আর লোকেরা আবূ বকর (রাঃ)-কে অনুসরণ করে সালাত আদায় করছিল।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪০। কোন ব্যাক্তি লোকদের ইমামতি করার জন্য অগ্রসর হলে যদি পূর্ব নির্ধারিত ইমাম এসে যান তাহলে তিনি পিছে সরে আসুন বা না আসুন উভয় অবস্থায় তাঁর সালাত আদায় হয়ে যাবে। এ মর্মে আয়িশা (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে।

৬৫০। আবূদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ সায়িদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেএকবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনু আওফ গোত্রের এক বিবাদ মীমাংসার জন্য সেখানে যান। ইতিমধ্যে (আসরের) সালাতের সময় হয়ে গেলেমুয়াযযীন আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে এসে বললেনআপনি কি লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেবেনতা হলে ইকামত দেইতিনি বললেনহ্যাঁআবূ বকর (রাঃ) সালাত আরম্ভ করলেন। লোকেরা সালাতে থাকতে থাকতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ আনলেন এবং তিনি সারিগুলো ভেদ করে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন সাহাবীগন হাতে তালি দিতে লাগলেন। আবূ বকর (রাঃ) সালাতে আর কোন দিকে তাকাতেন না। কিন্তু সাহাবীগন বেশী করে হাতে তালি দিতে লাগলেনতখন তিনি তাকালেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি ইশারা করলেননিজের জায়গায় থাক।

তখন আবূ বকর (রাঃ) দু’হাত উঠিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে পিছিয়ে গেলেন এবং কাতারের বরাবর দাঁড়ালেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে এগিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি বললেনহে আবূ বকর! আমি তোমাকে নির্দেশ দেয়ার পর কি সে তোমাকে বাধা দিয়েছিলআবূ বকর (রাঃ) বললেনআবূ কুহাফার পুত্রের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা শোভা পায় না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের এত হাতে তালি দিতে দেখলাম। ব্যাপার কিশোন! সালাতে কারো কিছু ঘটলে সুবহানাল্লাহ বলবে। সুবহানাল্লাহ বললেই তাঁর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হবে। আর হাতে তালি দেওয়া তো মহিলাদের জন্য।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪১. একাধিক ব্যক্তি কিরাআতে সমান হলেতাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ইমাম হবেন।

৬৫১। সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ... মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমরা একদল যুবক একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে হাযির হলাম এবং প্রায় বিশ দিন আমরা সেখানে থাকলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু। তাই তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা যখন নিজ দেশে ফিরে গিয়ে লোকদের দ্বীন শিক্ষা দিবেতখন তাদের এ সময়ে অমুক সালাত আদায় করতে বলবে। এবং ওই সময়ে অমুক সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বলবে। তারপর যখন সালাতের সময় হয় তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ইমামতি করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪২. ইমাম অন্য লোকদের কাছে উপস্থিত হলেতাদের ইমামতি করতে পারেন।

৬৫২। মু’আয ইবনু আসা’দ (রহঃ) ... ইতবান ইবনু মালিক আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চাইলেন। আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। তিনি বললেনঃ তোমার ঘরের কোন জায়গাটি আমার সালাত আদায়ের জন্য তুমি পছন্দ করআমি আমার পছন্দ মত একটি স্থান ইশারা করে দেখালাম। তিনি সেখানে সালাতের জন্য দাঁড়ালেনআমরা তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। এরপর তিনি সালাম ফিরালেন এবং আমরা সালাম ফিরালাম।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪৩. ইমাম নির্ধারন করা হয় অনুসরণ করার জন্য।

وَصَلَّى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِي مَرَضِهِ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيهِ بِالنَّاسِ وَهُوَ جَالِسٌ وَقَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ إِذَا رَفَعَ قَبْلَ الْإِمَامِ يَعُودُ فَيَمْكُثُ بِقَدْرِ مَا رَفَعَ ثُمَّ يَتْبَعُ الْإِمَامَ وَقَالَ الْحَسَنُ فِيمَنْ يَرْكَعُ مَعَ الْإِمَامِ رَكْعَتَيْنِ وَلاَ يَقْدِرُ عَلَى السُّجُودِ يَسْجُدُ لِلرَّكْعَةِ الْآخِرَةِ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ يَقْضِي الرَّكْعَةَ الْأُولَى بِسُجُودِهَا وَفِيمَنْ نَسِيَ سَجْدَةً حَتَّى قَامَ يَسْجُدُ

যে রোগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হয়সে সময় তিনি বসে বসে লোকদের ইমামতি করেছেন। ইবন মাসউদ (রাঃ) বলেনকেউ যদি ইমামের আগে মাথা উঠিয়ে ফেলেতাহলে পুনরায় ফিরে গিয়ে ততটুকু সময় বিলম্ব করবে যতটুকু সময় মাথা উঠিয়ে রেখেছিল। তারপর ইমামকে অনুসরণ করবে। হাসান বাসরী (রহঃ) বলেনযে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে রুকু’ সহ দু’রাকাত সালাত আদায় করেকিন্তু সিজদা দিতে পারেনাসে শেষ রাকাতের জন্য দু’সিজদা করবে এবং প্রথম রাকাআত সিজদাসহ পুনরায় আদায় করবে। আর যে ব্যক্তি ভুলক্রমে এক সিজদা না দিয়ে দাঁড়িয়ে গেছেসে (পরবর্তি রাকাআতে) সে সিজদা করে নিবে।


৬৫৩। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি আয়িশা (রাঃ) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বললামরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (অন্তিম কালের) অসুস্থতা সম্পর্কে কি আপনি আমাকে কিছু শোনাবেনতিনি বললেনঅবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারাত্মক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনলোকেরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে ফেলেছেআমরা বললামনাইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা আপনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বললেনআমার জন্য গসলের পাত্রে পানি দাও। আয়িশা (রাঃ) বলেন আমরা তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন। তারপর একটু উঠতে চাইলেন। কিন্তু বেহুঁশ পয়ে পড়লেন।

কিছুক্ষন পর একটু হুঁশ ফিরে পেলে আবার তিনি জিজ্ঞাসা করলেনলোকেরা কি সালাত আদায় করে ফেলেছেআমরা বললামনাইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা আপনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বললেনআমার জন্য গোসলের পাত্রে পানি নিয়ে রাখ। আয়িশা (রাঃ) বলেনআমরা তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন। আবার উঠতে চাইলেনকিন্তু বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষন পর আবার হুঁশ ফিরে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেনলোকেরা কি সালাত আদায় করে ফেলেছেআমরা বললামনাইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা আপনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বললেনআমার জন্য গোসলের পাত্রে পানি নিয়ে রাখ। তারপর তিনি উঠে বসলেনএবং গোসল করলেন এবং উঠতে গিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষন পর আবার হুঁশ ফিরে পেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেনলোকেরা কি সালাত আদায় করে ফেলেছেআমরা বললামনাইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা আপনার অপেক্ষায় আছেন।

ওদিকে সাহাবীগণ ইশার সালাতের জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অপেক্ষায় মসজিদে বসে ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকরের নিকট এ মর্মে লোক পাঠান যেতিনি যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে নেন। সংবাদ বাহক আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল মনের লোক ছিলেনতাই তিনি উমর (রাঃ)-কে বললেনহে উমর! আপনি সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করে নিন। উমর (রাঃ) বললেনআপনই এর জন্য বেশি হকদার। তাই আবূ বকর সে কদিন সালাত আদায় করলেন।

তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটু নিজে হালকাবোধ করলেন এবং দু’জন লোকের কাঁধে ভর করে যোহরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য বের হলেন। সে দু’জনের একজন ছিলেন আব্বাস (রাঃ)। আবূ বকর (রাঃ) তখন সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করছিলেন। তিনি যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলেনপিছনে সরে আসতে চাইলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে পিছিয়ে না আসার জন্য ইশারা করলেন এবং বললেন তোমরা আমাকে তাঁর পাশে বসিয়ে দাও। তারা তাঁকে আবূ বকর (রাঃ) এর পাশে বসিয়ে দিলেন।

বর্ননাকারী বলেনতারপর আবূ বকর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের ইকতিদা করে সালাত আদায় করতে লাগলেন। আর সাহাবীগণ আবূ বকর (রাঃ) এর সালাতের ইকতিদা করতে লাগলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন উপবিষ্ট ছিলেন। উবায়দুল্লাহ বলেনআমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললামনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্তিম কালের অসুস্থতা সম্পর্কে আয়িশা (রাঃ) আমাকে যে হাদীস বর্ননা করেছেনতা কি আমি আপনার নিকট বর্ননা করব নাতিনি বললেনকরুণ। তাই আমি তাঁকে সে হাদীস শোনালাম। তিনি এ বর্ণনার কোন অংশেই আপত্তি করলেন নাতবে তাঁকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যেআব্বাস (রাঃ) এর সাথে যে অপর সাহাবী ছিলেনআয়িশা (রাঃ) কি আপনার নিকট তাঁর নাম উল্লেখ করেছেনআমি বললামনা। তিনি বললেনতিনি হলেনআলী (রাঃ)।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪৩. ইমাম নির্ধারন করা হয় অনুসরণ করার জন্য।

৬৫৪। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকদা অসুস্থতার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ গৃহে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন এবং বসে সালাত আদায় করেছিলেনএকদল সাহাবী তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন। তিনি তাদের প্রতি ইশারা করলেন যেবসে যাও। সালাত শেষ করার পর তিনি বললেনইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁর ইকতিদা করার জন্য। কাজেই সে যখন রুকু করে তোমরা ও তখন রুকু করবেএবং সে যখন রুকু থেকে মাথা উঠায় তখন তোমরাও মাথা উঠাবেআর সে যখন বসে সালাত আদায় করেতখন তোমরা সকলেই বসে সালাত আদায় করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪৩. ইমাম নির্ধারন করা হয় অনুসরণ করার জন্য।

৬৫৫। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেএকবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ায় সাওয়ার হন এরপর তিনি তা থেকে পড়ে যানএতে তাঁর ডান পাশে একটু আঘাত লাগে। তিনি কোন এক ওয়াক্তের সালাত (নামায/নামাজ) বসে আদায় করেছিলেনআমরাও তাঁর পেছনে বসে সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষ করার পর তিনি বললেনইমাম নির্ধারণই করা হয় তাঁর ইকতিদা করার জন্য। কাজেই ইমাম যখন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে তখন তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবেসে যখন রুকু করে তখন তোমরাও রুকু করবেসে যখন উঠেতখন তোমরাও উঠবেআর সে যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলে তোমরাও তখন رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ বলবে। আর সে যখন বসে সালাত আদায় করবেতখন তোমরা সবাই বসে সালাত আদায় করবে।

আবূ আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনহুমাইদী (রহঃ) বলেছেন যেযখন ইমাম বসে সালাত আদায় করেনতখন তোমরাও বসে সালাত আদায় করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ ছিল পূর্বে অসুস্থকালীন। এরপর তিনি বসে সালাত আদায় করেন এবং সাহাবীগণ তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেনকিন্তু তিনি তাদের বসতে নির্দেশ দেননি। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলের মধ্যে সর্বশেষ আমলই গ্রহণীয়।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪৪. মুক্তাদিগন কখন সিজদায় যাবেনআনাস (রাঃ) বলেনযখন ইমাম সিজদা করেন তখন তোমরাও সিজদা করবে।

৬৫৬। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... বারা’আ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি মিথ্যাবাদী নন* তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলার পর যতক্ষণ পর্যন্ত সিজদায় না যেতেনততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কেউ পিঠ বাঁকা করতেন না। তিনি সিজদায় যাওয়ার পর আমরা সিজদায় যেতাম।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪৪. মুক্তাদিগন কখন সিজদায় যাবেনআনাস (রাঃ) বলেনযখন ইমাম সিজদা করেন তখন তোমরাও সিজদা করবে।

৬৫৭। আব নু’আইম (রহঃ) ... সুফিয়ান (রহঃ) সূত্রে আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪৫. ইমামের আগে মাথা উঠানো গুনাহ।

৬৫৮। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনতোমাদের কেউ যখন ইমামের আগে মাথা উঠিয়ে ফেলেতহন সে কি ভয় করে না যেআল্লাহ তা’লা তাঁর মাথা গাধার মাথায় পরিণত করে দিবেনতাঁর আকৃতি গাধার আকৃতি করে দেবেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪৬. গোলামআযাদকৃত গোলামঅবৈধ সন্তানবেদুঈন ও নাবালিগের ইমামতি।

وَكَانَتْ عَائِشَةُ يَؤُمُّهَا عَبْدُهَا ذَكْوَانُ مِنَ الْمُصْحَفِوَوَلَدِ الْبَغِيِّ وَالأَعْرَابِيِّ وَالْغُلاَمِ الَّذِي لَمْ يَحْتَلِمْ، لِقَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَؤُمُّهُمْ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ

আয়িশা (রাঃ) এর গোলাম যাকওয়ান কোরআন দেখে কিরাআত পড়ে আয়িশা (রাঃ) এর ইমামতি করতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তাদের মধ্যে যে কোরআন সম্বন্ধে অধিক জ্ঞান রাখে সে তাদের ইমামতি করবে। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনবিনা কারণে গোলামকে জামাআতে উপস্থিত হতে নিষেধ করা যাবেনা।


৬৫৯। ইব্রাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেন যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মদিনায় আগমনের পূর্বে মুহাজিরগণের প্রথম দল যখন কুবা এলাকার কোন এক স্থানে এলেনতখন আবূ হুযাইফা (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম সালিম (রাঃ) তাঁদের ইমামতি করতেন। তাঁদের মধ্যে তিনি কোরআন সম্পর্কে অধিক অভিজ্ঞ ছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪৬. গোলামআযাদকৃত গোলামঅবৈধ সন্তানবেদুঈন ও নাবালিগের ইমামতি।

৬৬০। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা শোন ও আনুগত্য প্রকাশ করযদিও তোমাদের উপর এমন কোন হাবশীকে আমীর নিযুক্ত করা হয় – যার মাথা কিসমিসের মতো।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪৭. যদি ইমাম সালাত সম্পুর্ণ ভাবে আদায় না করেন আর মুক্তাদিগণ তা সম্পুর্ণভাবে আদায় করেন।

৬৬১। ফাযল ইবনু সাহল (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারা তোমাদের ইমামতি করে। যদি তারা সঠিকভাবে আদায় করে তা হলে তার সাওয়াব তোমরা পাবে। আর যদি তারা ত্রুটি করেতাহলে তোমাদের জন্য সাওয়াব রয়েছেআর ত্রুটি তাদের (ইমামের) উপরই বর্তাবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪৮. ফিতনাবাজ ও বিদ’আতীর ইমামতি।

وَقَالَ الْحَسَنُ صَلِّ وَعَلَيْهِ بِدْعَتُهُ

قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ وَقَالَ لَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ حَدَّثَنَا الأَوْزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا الزُّهْرِيُّ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَدِيِّ بْنِ خِيَارٍ، أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ ـ رضى الله عنه ـ وَهْوَ مَحْصُورٌ فَقَالَ إِنَّكَ إِمَامُ عَامَّةٍ، وَنَزَلَ بِكَ مَا تَرَى وَيُصَلِّي لَنَا إِمَامُ فِتْنَةٍ وَنَتَحَرَّجُ‏. فَقَالَ الصَّلاَةُ أَحْسَنُ مَا يَعْمَلُ النَّاسُ، فَإِذَا أَحْسَنَ النَّاسُ فَأَحْسِنْ مَعَهُمْ، وَإِذَا أَسَاءُوا فَاجْتَنِبْ إِسَاءَتَهُمْ‏. وَقَالَ الزُّبَيْدِيُّ قَالَ الزُّهْرِيُّ لاَ نَرَى أَنْ يُصَلَّى خَلْفَ الْمُخَنَّثِ إِلاَّ مِنْ ضَرُورَةٍ لاَ بُدَّ مِنْهَا

হাসান (রহঃ) বলেনতাঁর পিছনেও সালাত আদায় করে নেবে। তবে বিদআতের পরিণাম তার উপরই বর্তাবে।

আবু আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনআমাকে মোহাম্মদ ইবন ইউসুফ (রহঃ) উবাইদুল্লাহ ইবন আদী ইবন খিয়ার (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যেতিনি উসমান ইবন আফফান (রাঃ) অবরুদ্ধ থাকাকালে তাঁর নিকট গিয়ে বললেনপ্রকৃতপক্ষে আপনিই জনগনের ইমাম। আর আপনার বিপদ তো নিজেই বুঝতে পারছেন। আর আমাদের ইমামতি করছে কখনো বিদ্রোহীদের ইমাম। ফলে আমরা গুনাহগার হওয়ার আশঙ্কা করছি। তিনি বলেনমানুষের আমলের মধ্যে সালাতই সর্বোত্তম। কাজেই লোকেরা যখন উত্তম কাজ করেতখন তুমিও তাদের সাথে উত্তম কাজে শরীক হবেআর যখন তারা মন্দ কাজে লিপ্ত হয়তখন তাঁদের অপকর্ম থেকে বেঁচে থাকবে। যুবাইদী (রঃ) বর্ণনা করেন যেযুহরী (রহঃ) বলেছেনযারা স্বেচ্ছায় নপুংসক সাজেতাদের পেছনে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া সালাত আদায় করা সঙ্গত বলে মনে করি না।


৬৬২। মুহাম্মদ ইবনু আবান (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ যার (রাঃ) কে বলেনশোন এবং আনুগত্য করযদিও কোন হাবশী আমীর হয়- যার মাথা কিসমিসের মতো।

পরিচ্ছেদঃ ৪৪৯. দু’জনে সালাত আদায় করলেমুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে।

৬৬৩। সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকদা আমি আমার খালা মায়মুনা (রাঃ) এর ঘরে রাত যাপন করলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে আসলেন এবং চার রাকাআত সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর উঠে সালাতে দাঁড়ালেন। তখন আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাঁর ডানপাশে নিয়ে নিলেন এবং পাঁচ রাকাআত সালাত আদায় করলেন। এরপর আরো দু’রাকাত সালাত আদায় করে নিদ্রায় গেলেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার আওয়াজ শুনলাম। তারপর তিনি (উঠে ফজরের) সালাতের জন্য বেরিয়ে গেলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫০. যদি কেউ ইমামের বাম পাশে দাঁড়ায় এবং ইমাম তাকে ডান পাশে নিয়ে আসেনতবে কারো সালাত নষ্ট হয় না।

৬৬৪। আহমদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি আমার খালা মায়মুনা (রাঃ) এর ঘরে ঘুমালাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে রাতে তাঁর কাছে ছিলেন। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর সালাতে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে ধরে তাঁর ডানপাশে নিয়ে আসলেন। আর তিনি তের রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি ঘুমিয়ে পড়লেনএমনকি তাঁর নাক ডাকতে শুরু করল। এবং তিনি যখন ঘুমাতেন তাঁর নাক ডাকত। তারপর তাঁর কাছে মুয়ায্‌যিন এলেনতিনি বেরিয়ে গিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন এবং নতুন উযূ করেননি। আমর (রহঃ) বলেনএ হাদিস আমি বুকাইর (রহঃ)-কে শোনালে তিনি বলেনকুরাইব (রহঃ)-ও এ হাদীস আমার কাছে বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫১. যদি ইমাম ইমামতির নিয়ত না করেন এবং পরে কিছু লোক এসে শামিল হয় এবং তিনি তাদের ইমামতি করেন।

৬৬৫। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকবার আমি আমার খালার [মায়মুনা (রাঃ)] এর কাছে রাত যাপন করলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাতে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দাঁড়ালাম। আমি তাঁর বামপাশে দাঁড়িয়ে ছিলামতিনি আমার মাথা ধরে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫২. যদি ইমাম সালাত দীর্ঘ করেন এবং কেউ প্রয়োজনবশত (জামাআত থেকে) বেরিয়ে এসে (একাকী) সালাত আদায় করে।

৬৬৬। মুসলিম (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেমু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার পর ফিরে গিয়ে আপন গোত্রের ইমামতি করতেন। এই হাদিস মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) সূত্রে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেন যেমুয়ায ইবনু জাবাল (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত আদায় করার পর ফিরে গিয়ে নিজ গোত্রের ইমামতি করতেন। একদিন তিনি ইশার সালাতে সুরা বাকারা পাঠ করেনএতে এক ব্যাক্তি জামা’আত থেকে বেরিয়ে যায়। এ জন্য মু’আয (রাঃ) তার সমালোচনা করেন। এ খবর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছালে তিনি তিনবার فَتَّانٌ অথবা فَاتِنًا (বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী) শব্দটি বললেন। এবং তিনি তাকে আওসাতে মুফাসসালের দুটি সুরা পাঠের নির্দেশ দেন। আমর বলেনকোন দুটি সুরার কথা বলেছিলেনতা আমার মনে নেই।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫৩. ইমাম কর্তৃক সালাতে কিয়াম সংক্ষিপ্ত করা এবং রুকু ও সেজদা পুর্ণ ভাবে আদায় করা।

৬৬৭। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএক সাহাবী এসে বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর শপথ! আমি অমুকের কারণে ফজরের সালাতে অনুপস্থিত থাকি। তিনি জামা’আতে সালাতকে খুব দীর্ঘ করেন। আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নসীহত করতে গিয়ে সেদিনের ন্যায় এত বেশি রাগান্বিত আর কোন দিন দেখিনি। তিনি বলেনতোমাদের মাঝে বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী রয়েছে। তোমাদের মধ্যে যে কেউ অন্য লোক নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেসে যেন সংক্ষেপ করে। কেননাতাঁদের মধ্যে দুর্বলবৃদ্ধ ও হাজতমন্দ লোকও থাকে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫৪. একাকী সালাত আদায় করলে ইচ্ছানুসারে দীর্ঘায়িত করতে পারে।

৬৬৮। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেতখন সে যেন সংক্ষেপ করে। কেননা তাঁদের মাঝে দুর্বলঅসুস্থ ও বৃদ্ধ রয়েছে। আর যদি কেউ একাকী সালাত আদায় করে তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫৫. ইমাম সালাত দীর্ঘায়িত করলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা। আবু উসাইদ (র.) তাঁর ছেলেকে বলেছিলেনবেটা! তুমি আমাদের সালাত দীর্ঘায়িত করে ফেলেছ।

৬৬৯। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএক সাহাবী এসে বলল ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক ব্যাক্তির জন্য আমি ফজরের সালাতে অনুপস্থিত থাকি। কেননা তিনি আমাদের সালাত (নামায/নামাজ) খুব দীর্ঘ করেন। এ শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হলেন। আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেনআমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নসীহত করতে গিয়ে সেদিনের ন্যায় এত বেশি রাগান্বিত আর কোন দিন দেখিনি। তারপর তিনি বলেনঃ হে লোকেরা! তোমাদের মাঝে বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী রয়েছে। তোমাদের মধ্যে যে কেউ লোকদের ইমামতি করেসে যেন সংক্ষেপ করে। কেননাতাঁদের মধ্যে দুর্বলবৃদ্ধ ও হাজতমন্দ লোকও থাকে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫৫. ইমাম সালাত দীর্ঘায়িত করলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা। আবু উসাইদ (র.) তাঁর ছেলেকে বলেছিলেনবেটা! তুমি আমাদের সালাত দীর্ঘায়িত করে ফেলেছ।

৬৭০। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএক সাহাবী দু’টি পানি বহনকারী উট নিয়ে আসছিলেন। রাতের অন্ধকার তখন ঘনীভূত হয়ে এসেছে। এ সময় তিনি মু’আয (রাঃ)-কে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়রত পানতিনি তার উট দুটি বসিয়ে দিয়ে মু’আয (রাঃ) এর দিকে (সালাত আদায় করতে) এগিয়ে এলেনমু’আয (রাঃ) সুরা বাকারা বা সুরা নিসা পড়তে শুরু করেন। এতে সাহাবী (জামা’আত ছেড়ে) চলে যান।

পরে তিনি জানতে পারেন যেমু’আয (রাঃ) এর জন্য তার সমালোচনা করেছেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে মু’আয (রাঃ) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনহে মু’আয! তুমি কি লোকদের ফিতনায় ফেলতে চাওবা তিনি বলেছিলেন তুমি কি ফিতনা সৃষ্টিকারীতিনি একথা তিনবার বলেন।

তারপর তিনি বললেনতুমি سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَوَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا এবং وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى (সুরা) দ্বারা সালাত আদায় করলে না কেনকারন তোমার পিছনে দুর্বলবৃদ্ধ ও হাজতমন্দ লোক সালাত আদায় করে।

[শু’বা (রহঃ)] বলেন) আমার ধারণা শেষোক্ত বাক্যটি হাদিসের অংশ। সায়ীদ ইবনু মাসরুকমিসওয়ার এবং শাইবানী (রহঃ)-ও অনুরূপ রেওয়ায়াত করেছেন। আমরউবাইদুল্লাহ ইবনু মিকসামআবূ যুবাইর (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যেমু’আয (রাঃ) ইশার সালাতে সুরা বাকারা পাঠ করেছিলেন। আ’মাশ (রহঃ)-ও মুহারিব (রহঃ) সূত্রে অনুরূপ রিওয়ায়েত করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫৬. সালাত সংক্ষেপে এবং পুর্ণভাবে আদায় করা।

৬৭১। আবূ মা’মার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষেপে এবং পুর্ণভাবে আদায় করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫৭. শিশুর কান্নাকাটির কারণে সালাত সংক্ষেপ করা।

৬৭২। ইব্রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনআমি অনেক সময় দীর্ঘ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে দাঁড়াই। পরে শিশুর কান্নাকাটি শুনে সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষেপ করি। কারন আমি পছন্দ করি না যেশিশুর মাকে কষ্টে ফেলি।

বিশর ইবনু বাকরবাকিয়্যা ও ইবনু মোবারক আওযারী (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় ওয়ালীদ ইবনু মুসলিম (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫৭. শিশুর কান্নাকাটির কারণে সালাত সংক্ষেপ করা।

৬৭৩। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতআমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত এবং পুর্ণাঙ্গ সালাত (নামায/নামাজ) কোন ইমামের পেছনে কখনো পড়িনি। আর তা এ জন্য যেতিনি শিশুর কান্না শুনতে পেতেন এবং তার মায়ের ফিতনায় পড়ার আশঙ্কায় সংক্ষেপ করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫৭. শিশুর কান্নাকাটির কারণে সালাত সংক্ষেপ করা।

৬৭৪। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি দীর্ঘ করার ইচ্ছা নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করি। কিন্তু পরে শিশুর কান্না শুনে আমার সালাত সংক্ষেপ করে ফেলি। কেননাশিশু কাঁদলে মায়ের মন যে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে তা আমি জানি।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫৭. শিশুর কান্নাকাটির কারণে সালাত সংক্ষেপ করা।

৬৭৫। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি দীর্ঘ করার ইচ্ছা নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করি এবং শিশুর কান্না শুনে আমার সালাত সংক্ষেপ করে ফেলি। কেননাশিশু কাঁদলে মায়ের মন যে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে তা আমি জানি।

মূসা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫৮. নিজের সালাত আদায় করার পর অন্যে লোকের ইমামতি করা।

৬৭৬। সুলাইমান ইবনু হারব ও আবূ নু’মান (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনমু’আয (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিজ গোত্রে ফিরে গিয়ে তাঁদের ইমামতি করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৫৯. লোকদেরকে ইমামের তাকবীর শোনান।

৬৭৭। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত থাকা কালে একবার বিলাল (রাঃ) তাঁর নিকট এসে সালাতের (সময় হয়েছে বলে) সংবাদ দিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আবূ বকরকে বলযেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। (আয়িশা (রাঃ) বললেন)আমি বললামআবূ বকর (রাঃ) কোমল হৃদয়ের লোকতিনি আপনার স্থানে দাঁড়ালে কেঁদে ফেলবেন এবং কিরাআত পড়তে পারবেন না। তিনি আবার বললেনঃ আবূ বকরকে বলসালাত আদায় করতে। আমি আবারও সে কথা বললাম। তখন তৃতীয় বা চতুর্থবারে তিনি বললেনতোমরা তো ইউসুফের (আলাইহিস সালাম) সাথী রমণীদেরই মত। আবূ বকরকে বলসে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে।

আবূ বকর (রাঃ) লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন। ইতিমধ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’জনের কাঁধে ভর করে বের হলেন। [আয়িশা (রাঃ)] বললেন আমি যেন এখনও সে দৃশ্য দেখতে পাই। তিনি দু’পা মুবারাক মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়িয়ে যান। আবূ বকর (রাঃ) তাঁকে দেখতে পেয়ে পেছনে সরে আসতে লাগলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারায় তাঁকে সালাত আদায় করতে বললেন, (তবুও) আবূ বকর (রাঃ) পেছনে সরে আসলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পাশে বসলেনআবূ বকর (রাঃ) তাকবীর শোনাতে লাগলেন।

মুহাযির (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনু দাউদ (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬০. কোন ব্যক্তির ইমামের ইকতিদা করা এবং অন্যদের সেই মুক্তাদির ইকতিদা করা।

وَيُذْكَرُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَائْتَمُّوا بِي وَلْيَأْتَمَّ بِكُمْ مَنْ بَعْدَكُمْ

বর্ণিত আছে যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনতোমরা আমার ইকতিদা করবেতোমাদের পেছনের লোকেরা যেন তোমাদের ইকতিদা করে।


৬৭৮। কুতাইবা ইবনু সায়ীদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পীড়িত হয়ে পড়েছিলেনবিলাল (রাঃ) এসে সালাতের কথা বললেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনআবূ বকরকে বললোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে। আমি বললামইয়া রাসূলাল্লাহ! আবূ বকর অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের ব্যাক্তি। তিনি যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেনতখন সাহাবীগণকে কিছুই শোনাতে পারবেন না। যদি আপনি উমর (রাঃ) কে নির্দেশ দেন (তাহলে ভালো হয়)। তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেনঃ লোকদের নিয়ে আবূ বকরকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বল।

আমি হাফসা (রাঃ) কে বললামতুমি তাঁকে একটু বল যেআবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের ব্যাক্তি। তিনি যখন আপনার পরিবর্তে সে স্থানে দাঁড়াবেনতখন সাহাবীগণকে কিছুই শোনাতে পারবেন না। যদি আপনি উমর (রাঃ)-কে নির্দেশ দেন (তাহলে ভালো হত)। এ শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা ইউসুফের সাথী রমণীদেরই মত। আবূ বকরকে লোকদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করতে বল।

আবূ বকর (রাঃ) লোকদের নিয়ে সালাত আদায় শুরু করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে একটু সুস্থ বোধ করলেন এবং দু’জন সাহাবীর কাঁধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে মসজিদে গেলেন। তাঁর দু’পা মুবারক মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়ে যাচ্ছিল। আবূ বকর (রাঃ) যখন তাঁর আগমন আঁচ করলেনপেছনে সরে যেতে উদ্যত হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি ইশারা করলেন (পিছিয়ে না যাওয়ার জন্য)। তারপর তিনি এসে আবূ বকর (রাঃ) এর বামপাশে বসে গেলেন। অবশেষে আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। আর সাহাবীগণ আবূ বকর (রাঃ) এর সালাতের অনুসরণ করছিল।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬১. ইমামের সন্দেহ হলে মুক্তাদিদের মত গ্রহণ করা।

৬৭৯। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’রাকাআত আদায় করে সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে ফেললেন। যুল-ইয়াদাইন তাঁকে বললেনইয়া রাসূলাল্লাহ! সালাত কি কম করা হয়েছেনা আপনি ভুলে গেছেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (অন্যদের লক্ষ করে) বললেনঃ যুল-ইয়াদাইন কি ঠিকই বলছেসাহাবীগণ বললেনহ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং আরও দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেনতারপর সালাম ফিরালেন এবং তাকবীর বলে স্বাভাবিক সিজদার মত অথবা তার চাইতে দীর্ঘ সিজদা করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬১. ইমামের সন্দেহ হলে মুক্তাদিদের মত গ্রহণ করা।

৬৮০। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত দু’রাকাআত পড়লেন। তাঁকে বলা হল আপনি দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। তখন তিনি আরও দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন এবং সালাম ফেরানোর পর দুটি সিজদা করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬২. সালাতে ইমাম কেঁদে ফেললে।

وَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ شَدَّادٍ سَمِعْتُ نَشِيجَ عُمَرَ وَأَنَا فِي آخِرِ الصُّفُوفِ يَقْرَأُ: (إِنَّمَا أَشْكُو بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللَّهِ)

আবদুল্লাহ ইবন শাদ্দাদ (রহঃ) বলেনআমি পেছনের কাতার থেকে উমর (রাঃ) এর চাপা কান্নার আওয়াজ শুনেছি। তিনি তখন إِنَّمَا أَشْكُو بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللَّهِ (আমি আমার দুঃখ ও বেদনার অভিযোগ একমাত্র আল্লাহ্‌র নিকটই পেশ করছি)–এ আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন।


৬৮১। ইসমাইল (রহঃ) ... উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় বললেনঃ আবূ বকরকে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বল। আয়িশা (রাঃ) বলেনআমি তাঁকে বললামআবূ বকর (রাঃ) যখন আপনার স্থলে দাঁড়াবেনতখন কান্নার কারণে সাহাবীগণ কিছুই শুনতে পারবেন না। কাজেই উমর (রাঃ) কে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিন। তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেনঃ আবূ বকরকে বল লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে নিতে।

আয়িশা (রাঃ) বলেনতখন আমি হাফসা (রাঃ) কে বললামতুমি তাঁকে বল যেআবূ বকর (রাঃ) যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেনতখন কান্নার কারণে সাহাবীগণকে কিছুই শোনাতে পারবেন না। কাজেই উমর (রাঃ)-কে বলুন তিনি যেন সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করেন। হাফসা (রাঃ) তাই করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ চুপ কর! তোমরা ইউসুফের সাথী নারীদেরই মত। আবূ বকরকে বল সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। এতে হাফসা (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) কে (অভিমান করে) বললেনতোমার কাছ থেকে আমি কখনো আমার জন্য হিতকর কিছু পাইনি।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬৩. ইকামতের সময় এবং এর পরে কাতার সোজা করা।

৬৮২। আবদুল ওয়ালীদ হিশাম ইবনু আবদুল মালিক (রহঃ) ... নু’মান ইবনু বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবেতা না হলে আল্লাহ তা’লা তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে দেবেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬৩. ইকামতের সময় এবং এর পরে কাতার সোজা করা।

৬৮৩। আবূ মা’মার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কাতার সোজা করে নেবে। আমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদের দেখতে পাই।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬৪. কাতার সোজা করার সময় মুকতাদির প্রতি ইমামের ফিরে দেখা।

৬৮৪। আহমদ ইবনু আবূ রাজা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনসালাতের ইকামত হচ্ছেএমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে মুখ করে তাকালেন এবং বললেনঃ তোমরা কাতার গুলো সোজা করে নাও আর মিলে দাড়াও। কেননাআমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদের দেখতে পাই।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬৫. প্রথম কাতার

৬৮৫। আবূ আসিম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পানিতে ডুবেকলেরায়প্লেগে এবং ভুমিধসে বা চাপা পড়ে মৃত ব্যাক্তিরা শহীদ। যদি লোকেরা জানত যেপ্রথম ওয়াক্তে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে কি ফযীলততা হলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করে আগেভাগে আসার চেষ্টা করত। আর ইশা ও ফজরের জামা’আতের কি মর্তবা তা যদি তারা জানত তাহলে হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত এবং সামনের কাতারের কী ফযিলত তা যদি জানততাহলে এর জন্য তারা কুরআ ব্যবহার করত।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬৬. কাতার সোজা করা সালাতের পুর্ণতার অঙ্গ।

৬৮৬। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অনুসরণ করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ করা হয়। কাজেই তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তিনি যখন রুকু করেন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলেন তখন তোমরা رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলবে। তিনি যখন সিজদা করবেন তোমরাও তখন সিজদা করবে। তিনি যখন বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেনতখন তোমরাও সবাই বসে সালাত আদায় করবে। আর তোমরা সালাতে কাতার সোজা করে নিবেকেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬৬. কাতার সোজা করা সালাতের পুর্ণতার অঙ্গ।

৬৮৭। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনতোমরা তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নেবে। কেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬৭. কাতার সোজা না করার গুনাহ।

৬৮৮। মু’আয ইবনু আসা’দ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতএকবার তিনি (আনাস) মদিনায় আসলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের তুলনায় আপনি আমাদের সময়ের অপছন্দনীয় কী দেখতে পাচ্ছেনতিনি বললেনঅন্য কোন কাজ তেমন অপছন্দনীয় মনে হচ্ছে না। তবে তোমরা (সালাতে) কাতার ঠিকমত সোজা কর না।

উকবা ইবনু উবাইদ (রহঃ) বুশাইর ইবনু ইয়াসার (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যেআনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আমাদের কাছে মদিনায় এলেন .... বাকী অংশ অনুরূপ।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬৮. কাতারে কাঁধের সাথে কাঁধ ও পায়ের সাথে পা মেলানো।

وَقَالَ النُّعْمَانُ بْنُ بَشِيرٍ رَأَيْتُ الرَّجُلَ مِنَّا يُلْزِقُ كَعْبَهُ بِكَعْبِ صَاحِبِهِ

নু’মান ইবন বশীর (রাঃ) বলেনআমাদের কাউকে দেখছি পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির টাখনুর সাথে টাখনু মিলাতে।


৬৮৯। আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করে নাও। কেননাআমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদের দেখতে পাই। [আনাস (রাঃ) বলেন] আমাদের প্রত্যেকেই তার পাশ্ববর্তী ব্যাক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম।

পরিচ্ছেদঃ ৪৬৯. কেউ ইমামের বাম পাশে দাঁড়ালে ইমাম তাকে পিছনে ঘুরিয়ে ডানপাশে দাঁড় করালে সালাত আদায় হবে।

৬৯০। কুতাইবা ইবনু সায়ীদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকরাতে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে গিয়ে তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথার পেছনের দিক ধরে তাঁর ডানপাশে নিয়ে এলেন। তারপর সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন। পরে তার কাছে মুয়ায্‌যিন এলো। তিনি উঠে সালাত আদায় করলেনকিন্তু (নতুনভাবে) উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেন নি।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭০. মহিলা একজন হলেও ভিন্ন কাতারে দাঁড়াবে।

৬৯১। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকবার আমাদের ঘরে আমি ও একটি ইয়াতিম ছেলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। আর আমার মা উম্মে সুলাইম (রাঃ) আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭১. মসজিদ ও ইমামের ডানদিক।

৬৯২। মূসা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকরাতে আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত বা বাহু ধরে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন এবং তিনি তাঁর হাতের ইশারায় বললেনআমার পেছনের দিক দিয়ে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭২. ইমাম ও মুক্তাদির মধ্যে দেয়াল বা সুতরা থাকলে।

وَقَالَ الْحَسَنُ لاَ بَأْسَ أَنْ تُصَلِّيَ وَبَيْنَكَ وَبَيْنَهُ نَهْرٌوَقَالَ أَبُو مِجْلَزٍ يَأْتَمُّ بِالإِمَامِ وَإِنْ كَانَ بَيْنَهُمَا طَرِيقٌ أَوْ جِدَارٌ إِذَا سَمِعَ تَكْبِيرَ الإِمَامِ

হাসান (রহঃ) বলেনতোমার ও ইমামের মধ্যে নহর থাকলেও ইকতিদা করতে অসুবিধা নেই। আবু মিজলায (রহঃ) বলেনযদি ইমামের তাকবীর শোনা যায় তাহলে ইমাম ও মুকতাদির মধ্যে রাস্তা বাঁ দেয়াল থাকলেও ইকতিদা করা যায়।


৬৯৩। মুহাম্মদ (ইবনু সালাম) (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাত (নামায/নামাজ) তাঁর নিজ কামরায় আদায় করতেন। কামরার দেয়ালটি ছিল নিচু। ফলে একদিন সাহাবীগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীর মুবারক দেখতে পেলেন এবং (দেয়ালের অপর পার্শ্বে) সাহাবীগণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর সহিত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সকালে তারা একথা বলাবলি করছিলেন। দ্বিতীয় রাতে তিনি (সালাতে) দাঁড়ালেন। সাহাবীগণ দাঁড়িয়ে তাঁর সাথে সালাত আদায় করলেন। দু’ বা তিন রাত তারা এরূপ করলেন। এরপর (রাতে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে থাকলেনআর বের হলেন না। ভোরে সাহাবীগণ এ বিষয়ে আলোচনা করলেন। তখন তিনি বললেনঃ আমার আশঙ্কা হচ্ছিল যেরাতের সালাত তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হতে পারে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭৩. রাতের সালাত।

৬৯৪। ইব্রাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি চাটাই ছিল। তিনি তা দিনের বেলায় বিছিয়ে রাখতেন এবং রাতের বেলায় তা দিয়ে কামরা বানিয়ে নিতেন। সাহাবীগণ তাঁর পেছনে কাতার বন্দী হয়ে দাঁড়ান এবং পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭৩. রাতের সালাত।

৬৯৫। আবদুল আলা ইবনু হাম্মদ (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে একটি ছোট কামরা বানালেন। তিনি [বুসর ইবনু সায়ীদ (রহঃ)] বলেনমনে হয়, [যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ)] কামরাটি চাটাই'র তৈরী ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি সেখানে কয়েক রাত সালাত আদায় করেন। আর তাঁর সাহাবীগনের মধ্যে কিছু সাহাবীও তাঁর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তিনি যখন তাঁদের সম্বন্ধে জানতে পারলেনতখন তিনি বসে থাকলেন। পরে তিনি তাঁদের কাছে এসে বললেনতোমাদের কার্যকলাপ দেখে আমি বুঝতে পেরেছি। হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের ঘরেই সালাত আদায় কর। কেননাফরজ সালাত ব্যতীত লোকেরা ঘরে যে সালাত আদায় করে তা-ই উত্তম।

আফফান (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বলেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭৪. ফরয তাকবীর বলা ও সালাত শুরু করা।

৬৯৬। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেএকবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ায় চড়েন। ফলে তাঁর ডান পাঁজরে আঁচড় লাগে। আনাস (রাঃ) বলেনএ সময় কোন এক সালাত (নামায/নামাজ) আমাদের নিয়ে তিনি বসে আদায় করলেন। আমরাও তাঁর পেছনে বসে সালাত আদায় করি। সালাম ফেরানোর পর তিনি বললেনঃ ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁকে অনুসরণ করার জন্যই। তাই তিনি যখন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেন তখন তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে। আর তিনি যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন সিজদা করেন তখন তোমরাও সিজদা করবে। তিনি যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ‏ বলবে তখন তোমরা رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ বলবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭৪. ফরয তাকবীর বলা ও সালাত শুরু করা।

৬৯৭। কুতাইবা ইবনু সায়ীদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে আহত হন। তাই তিনি আমাদের নিয়ে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে বসে সালাত আদায় করি। তারপর তিনি ফিরে বললেনঃ ইমাম অনুসরণের জন্যই বা তিনি বলেছিলেনইমাম নির্ধারন করা হয় তাঁর অনুসরনের জন্য। তাই যখন তিনি তাকবীর বলেনতখন তোমরাও তাকবীর বলবেযখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। যখন তিনি উঠেন তখন তোমরাও উঠবে। তিনি যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলবে তখন তোমরা رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলবে এবং তিনি যখন সিজদাহ করেন তখন তোমরাও সিজদা করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭৪. ফরয তাকবীর বলা ও সালাত শুরু করা।

৬৯৮। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম নির্ধারন করা হয় তাঁর অনুসরণের জন্য। তাই যখন তিনি তাকবীর বলেনতখন তোমরাও তাকবীর বলবেযখন তিনি রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে। তিনি যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ‏ বলবে তখন তোমরা رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ বলবে। আর তিনি যখন সিজদা করেন তখন তোমরাও সিজদা করবে। যখন তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন তখন তোমরাও বসে সালাত আদায় করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭৫. সালাত শুরু করার সময় প্রথম তাকবীরের সাথে সাথে উভয় হাত উঠানো।

৬৯৯। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করতেনতখন উভয় হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর রুকুতে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও অনুরূপভাবে দু’হাত উঠাতেন এবং سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ বলতেন। কিন্তু সিজদার সময় এরূপ করতেন না।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭৬. তাকবীরে তাহরীমারুকুতে যাওয়া এবং রুকু থেকে উঠার সময় উভয় হাত উঠানো।

৭০০। মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছিতিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। এবং যখন তিনি রুকু’র জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন। আবার যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ করতেন এবং سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলতেন। তবে সিজদার সময় এরুপ করতেন না।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭৬. তাকবীরে তাহরীমারুকুতে যাওয়া এবং রুকু থেকে উঠার সময় উভয় হাত উঠানো।

৭০১। ইসহাক ওয়াসিতী (রহঃ) ... আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি মালিক ইবনু হুওয়ায়িরিস (রাঃ) কে দেখেছেনতিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর দু’ হাত উঠাতেন। আর যখন রূকূ’ করার ইচ্ছা করতেন তখনও তাঁর উভয় হাত উঠাতেনআবার যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও তাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং তিনি বর্ণনা করেন যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭৭. উভয় হাত কতটুকু উঠাবে। আবূ হুমাইদ (র.) তাঁর সাথীদের বলেছেন যেনবী (সাঃ) কাঁধ বরাবর হাত উঠাতেন।

৭০২। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাকবীর দিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করতে দেখেছিতিনি যখন তাকবীর বলতেন তখন তাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং কাঁধ বরাবর করতেন। আর যখন রুকূ’র তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন। আবার যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলতেনতখনও এরূপ করতেন এবং رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ বলতেন। কিন্তু সিজদায় যেতে এরূপ করতেন না। আর সিজদার থেকে মাথা উঠাবার সময়ও এরূপ করতেন না।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭৮. দু’রাকাআত আদায় করে দাঁড়াবার সময় দু’হাত উঠানো।

৭০৩। আইয়্যাশ (রহঃ) ... নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যেইবনু উমর (রাঃ) যখন সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং দু’হাত উঠাতেন আর যখন রুকূ করতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন। এরপর যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ‏ বলতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন এবং দু’রাকাআত আদায়ের পর যখন দাঁড়াতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন। এ সমস্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বলে ইবনু উমর (রাঃ) বলেছেন।

এ হাদীসটি হাম্মাদ ইবনু সালামা ইবনু উমর (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনু তাহমানআইউন ও মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) থেকে এ হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৭৯. সালাতে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা।

৭০৪। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনলোকদের নির্দেশ দেওয়া হত যেসালাতে প্রত্যেক ডান হাত বাম হাতের কবজির উপর রাখবে। আবূ হাযিম (রহঃ) বলেনসাহল (রহঃ) এ হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন বলেই জানি। ইসমায়ীল (রহঃ) বলেনএ হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণনা করা হত। তবে তিনি এরূপ বলেন নি যেসাহল (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন।

রিচ্ছেদঃ ৪৮০. সালাতে খুশু’ (বিনয়নম্রতাএকাগ্রতানিষ্ঠা ও তন্ময়তা)।

৭০৫। ইসমাঈল (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি মনে কর যেআমার কিবলা শুধুমাত্র এ দিকেআল্লাহর শপথতোমাদের রুকূ’ তোমাদের খুশু’কোন কিছুই আমার কাছে গোপন থাকে না। আর নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের দেখি আমার পিছন দিক থেকেও।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮০. সালাতে খুশু’ (বিনয়নম্রতাএকাগ্রতানিষ্ঠা ও তন্ময়তা)।

৭০৬। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রুকূ’ ও সিজদাগুলো যথাযথভাবে আদায় করবে। আল্লাহর শপথ! আমি আমার পিছনে থেকে বা রাবী বলেনআমার পিঠের পিছনে থেকে তোমাদের দেখতে পাইযখন তোমরা রুকূ’ ও সিজদা কর।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮১. তাকবীরে তাহরীমার পরে কি পড়বে।

৭০৭। হাফস্ ইবনু উমর (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ) এবং উমর (রাঃ) الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ‏ দিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮১. তাকবীরে তাহরীমার পরে কি পড়বে।

৭০৮। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে ও কিরাআতের মধ্যে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতেন। আমি বললামইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোকতাকবীর ও কিরাআত এর মধ্যে চুপ থাকার সময় আপনি কী পাঠ করে থাকেনতিনি বললেনঃ এ সময় আমি বলিঃ হে আল্লাহ্! আপনি মাশরিক ও মাগরিবের মধ্যে যেরূপ দুরত্ব সৃষ্টি করেছেনআমার ও আমার ত্রুটি-বিচ্যুতির মধ্যে ঠিক তদ্রুপ দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন। হে আল্লাহ! শুভ্র বস্ত্রকে যেরূপ নির্মল করা হয় আমাকেও সেরূপ পাক-সাফ করুন। আমার অপরাধসমূহ পানিবরফ ও হিমশিলা দ্বারা বিধৌত করে দিন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮২. পরিচ্ছেদ নাই

৭০৯। ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) ... আসমা বিনত্ আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সালাতুল কুসূফ (সূর্য গ্রহণের সালাত) আদায় করলেন। তিনি সালাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর রুকূ’তে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। তারপর দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর আবার রুকূ’তে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকূ’তে থাকলেন। এরপর উঠলেনপরে সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন। এরপর আবার দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। আবার রুকূ’তে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকূ’তে থাকলেন। এরপর রুকূ’ থেকে উঠে সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন। তারপর উঠে সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন।

এরপর সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে ফিরে দাঁড়িয়ে বললেনঃ জান্নাত আমার খুবেই নিকটে এসে গিয়েছিল এমনকি আমি যদি চেষ্টা করতাম তা হলে জান্নাতের একগুচ্ছ আঙ্গুর তোমাদের এনে দিতে পারতাম। আর জাহান্নামও আমার একেবারে নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছিল। এমনকি আমি বলে উঠলামইয়া রব! আমিও কি তাদের সাথেআমি একজন স্ত্রী লোককে দেখতে পেলাম।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনআমার মনে হয়তিনি বলেছিলেনএকটি বিড়াল তাকে খামচাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলামএ স্ত্রী লোকটির এমন অবস্থা কেনফিরিশতাগণ জবাব দিলেনসে একটি বিড়ালকে আটকিয়ে রেখেছিলফলে বিড়ালটি অনাহারে মারা যায়। উক্ত স্ত্রী লোকটি তাকে খেতেও দেয়নি এবং ছেড়েও দেয়নিযাতে সে আহার করতে পারে। নাফি’ (রহঃ) বলেনআমার মনে হয়ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) বর্ণনা করেছিলেনযাতে সে যমীনের পোকা মাকড় খেতে পারে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৩. সালাতে ইমামের দিকে তাকানো।

وَقَالَتْ عَائِشَةُ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي صَلاَةِ الْكُسُوفِفَرَأَيْتُ جَهَنَّمَ يَحْطِمُ بَعْضُهَا بَعْضًا حِينَ رَأَيْتُمُونِي تَأَخَّرْتُ

আয়িশা (রাঃ) বলেননবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে কুসূফ বর্ণনা প্রসংগে বলেছেনতোমরা যখন আমাকে পিছিয়ে আসতে দেখেছিলে তখন আমি জাহান্নাম দেখেছিলামতার এক অংশ অপর অংশকে বিচূর্ণ করছে।


৭১০। মূসা (রহঃ) ... আবূ মা’মার (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমরা খাব্বাব (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলামরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেনতিনি বললেনহ্যাঁ। আমরা জিজ্ঞাসা করলামআপনারা কি করে বুঝতে পারতেনতিনি বললেনতাঁর দাঁড়ির নড়াচড়া দেখে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৩. সালাতে ইমামের দিকে তাকানো।

৭১১। হাজ্জাজ (রহঃ) ... বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিতআর তিনি মিথ্যাবাদী ছিলেন নাতাঁরা যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেনতখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখতেন যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় গেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৩. সালাতে ইমামের দিকে তাকানো।

৭১২। ইসমাঈল (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন তিনি এজন্য সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেনইয়া রাসূলাল্লাহ! সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় আপনাকে দেখলাম যেন কিছু একটা ধরতে যাচ্ছিলেনকিন্তু পরে দেখলামআবার পিছিয়ে এলেন। তিনি বললেনআমাকে জান্নাত দেখানো হয় এবং তারই একটি আঙ্গুরের ছড়া নিতে যাচ্ছিলাম। আমি যদি তা নিয়ে আসতামতা হলে দুনিয়ার স্থায়িত্বকাল পর্যন্ত তোমরা তা থেকে খেতে পারতে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৩. সালাতে ইমামের দিকে তাকানো।

৭১৩। মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং মসজিদের কিবলার দিকে ইশারা করে বললেনএই মাত্র আমি যখন তোমাদের নিয়ে সালাত আদায় করছিলাম তখন এ দেওয়ালের সামনের দিকে আমি জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম। আজকের মতো এত মঙ্গল ও অমঙ্গল আমি আর দেখিনিএকথা তিনি তিনবার বললেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৪. সালাতে আসমানের দিকে চোখ তুলে তাকানো।

৭১৪। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকদের কি হল যেতারা সালাতে আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকায়এ ব্যাপারে তিনি কঠোর বক্তব্য রাখলেনএমনকি তিনি বললেনঃ যেন তারা অবশ্যই এ থেকে বিরত থাকেঅন্যথায় অবশ্যই তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেওয়া হবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৫. সালাতে এদিক ওদিক তাকান।

৭১৫। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ এটা এক ধরণের ছিনতাইযার মাধ্যমে শয়তান বান্দার সালাত (নামায/নামাজ) থেকে অংশ বিশেষ কেড়ে নেয়।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৫. সালাতে এদিক ওদিক তাকান।

৭১৬। কুতায়বা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতএকবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি নকশা করা চাঁদর পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাতের পরে তিনি বললেনঃ এ চাঁদরের কারুকার্য আমার মনকে নিবিষ্ট করে রেখেছিল। এটি আবূ জাহমের কাছে নিয়ে যাও এবং এর পরিবর্তে একটি “আম্বজিানিয়্যাহ” নিয়ে এস।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৬. সালাতের মধ্যে কোন কিছু ঘটলে বা কোন কিছু দেখলে বা কিবলার দিকে থুথু দেখলেসে দিকে তাকান। সাহল (র.) বলেছেনআবূ বকর (রাঃ) তাকালেন এবং নবী ()-কে দেখলেন।

৭১৭। কুতাইবা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেনএমতাবস্থায় মসজিদে কিবলার দিকে থুথু দেখতে পেয়ে তা পরিস্কার করে ফেললেন। তারপর তিনি সালাত শেষ করে বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে থাকেতখন আল্লাহ্ তার সামনে থাকেন। কাজেই সালাতে থাকা অবস্থায় কেউ সামনের দিকে থুথু ফেলবে না।

মূসা ইবনু ইকবা ও ইবনু আবূ রাওয়াদ (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকেও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৬. সালাতের মধ্যে কোন কিছু ঘটলে বা কোন কিছু দেখলে বা কিবলার দিকে থুথু দেখলেসে দিকে তাকান। সাহল (র.) বলেছেনআবূ বকর (রাঃ) তাকালেন এবং নবী ()-কে দেখলেন।

৭১৮। ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনমুসলমানগণ ফযরের সালাতরত এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ) এর হুজরার পর্দা উঠালে তাঁরা চমকে উঠলেন। তিনি তাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখলেনতাঁর কাতারবদ্ধ হয়ে আছেন। তা দেখে তিনি মুচকী হাসলেন। আবূ বকর (রাঃ) তাঁর ইমামতির স্থান ছেড়ে দিয়ে কাতারে শামিল হওয়ার জন্য পিছিয়ে আসতে চাইলেন। তিনি মনে করেছিলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হতে চান। মুসলিমগণও সালাত (নামায/নামাজ) ছেড়ে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। তিনি ইশারায় তাঁদের বললেনতোমরা তোমাদের সালাত পূরো করো। তারপর তিনি পর্দা ফেলে দিলেন। সে দিনেরই শেষভাগে তাঁর ইন্তেকাল হয়।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৭. সব সালাতেই ইমাম ও মুকতাদীর কিরাআত পড়া যরুরীমুকীম অবস্থায় হোক বা সফরেসশব্দ কিরাআতের সালাত হোক বা নিঃশব্দেরসব সালাতেই ইমাম ও মুকতাদীর কিরাআত পড়া যরুরী।

৭১৯। মূসা (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনকুফাবাসীরা সা’দ (রাঃ) এর বিরুদ্ধে উমর (রাঃ) এর নিকট অভিযোগ করলে তিনি তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেন এবং আম্মার (রাঃ) কে তাদের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। কূফার লোকেরা সা’দ (রাঃ) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে দিয়ে এ-ও বলে যেতিনি ভালরূপে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারেন না। উমর (রাঃ) তাঁকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেনহে আবূ ইসহাক! তারা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যেআপনি নাকি ভালরূপে সালাত আদায় করতে পারেন না। সা’দ (রাঃ) বললেনআল্লাহর শপথ! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের অনুরূপই সালাত আদায় করে থাকি। তাতে কোন ত্রুটি করি না।

আমি ইশার সালাত আদায় করতে প্রথম দু’রাকাআতে একটু দীর্ঘ ও শেষের দু’রাকাআতে সংক্ষেপ করতাম। উমর (রাঃ) বললেনহে আবূ ইসহাক! আপনার সম্পর্কে আমার এ-ই ধারণা। তারপর উমর (রাঃ) কুফার অধিবাসীদের এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক বা একাধিক ব্যাক্তিকে সা'দ (রাঃ) এর সঙ্গে কূফায় পাঠান। সে ব্যাক্তি প্র্রতিটি মসজিদে গিয়ে সা’দ (রাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল এবং তাঁরা সকলেই তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করলেন। অবশেষে সে ব্যাক্তি বনূ আব্‌স গোত্রের মসজিদে উপস্থিত হয়। এখানে উসামা ইবনু কাতাদাহ্ নামে এক ব্যাক্তি যাকে আবূ সাদাহ্ বলে ডাকা হত- দাঁড়িয়ে বললযেহেতু তুমি আল্লাহর নামের শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছসা’দ (রাঃ) কখনো সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে যান নাগনীমতের মাল সমভাবে বন্টন করেন না এবং বিচারে ইনসাফ করেন না।

তখন সা’দ (রাঃ) বললেনমনে রেখোআল্লাহর কসম! আমি তিনটি দু’আ করছিঃ ইয়া আল্লাহ্! যদি তোমার এ বান্দা মিথ্যাবাদী হয়লোক দেখানো এবং আত্মপ্রচারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকেতাহলেতার হায়াত বাড়িয়ে দিনতার অভাব বাড়িয়ে দিন এবং তাকে ফিতনার সম্মুখীন করুন।

পরবর্তীকালে লোকটিকে (তার অবস্থা সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলতআমি বয়সে বৃদ্ধফিতনায় লিপ্ত। সা’দ (রাঃ)-এর দু’আ আমার উপর লেগে আছে। বর্ণনাকারী আবদুল মালিক (রহঃ) বলেনপরে আমি সে লোকটিকে দেখেছিঅতি বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তার উভয় ভ্রু চোখের উপর ঝুলে পড়েছে এবং সে পথে মেয়েদের উত্যক্ত করত এবং তাদের চিমটি কাটতো।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৭. সব সালাতেই ইমাম ও মুকতাদীর কিরাআত পড়া যরুরীমুকীম অবস্থায় হোক বা সফরেসশব্দ কিরাআতের সালাত হোক বা নিঃশব্দেরসব সালাতেই ইমাম ও মুকতাদীর কিরাআত পড়া যরুরী।

৭২০। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ল না তার সালাত (নামায/নামাজ) হল না।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৭. সব সালাতেই ইমাম ও মুকতাদীর কিরাআত পড়া যরুরীমুকীম অবস্থায় হোক বা সফরেসশব্দ কিরাআতের সালাত হোক বা নিঃশব্দেরসব সালাতেই ইমাম ও মুকতাদীর কিরাআত পড়া যরুরী।

৭২১। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেনতখন একজন সাহাবী এসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম করলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেনআবার গিয়ে সালাত আদায় কর। কেননাতুমি তো সালাত আদায় করনি। তিনি ফিরে গিয়ে আগের মত সালাত আদায় করলেন। তারপর এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম করলেন। এভাবে তিনবার বললেনঃ ফিরে গিয়ে আবার সালাত আদায় কর। কেননাতুমি সালাত আদায় করনি। এভাবে তিনবার বললেন।

সাহাবী বললেনসেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন- আমি তো এর চেয়ে সুন্দর করে সালাত আদায় করতে জানিনা। কাজেই আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাতের জন্য দাঁড়াবেতখন তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যা তোমার পক্ষে সহজ তা পড়বে। তারপর রুকূ’তে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে আদায় করবে। তারপর সিজদা থেকে উঠে স্থির হয়ে বসবে। আর এভাবেই পূরো সালাত আদায় করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৮. যুহরের সালাতে কিরাআত পড়া।

৭২২। আবূ নু’মান (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেসা’দ (রাঃ) বলেনআমি তাদেরকে নিয়ে বিকালের দু’সালাত (যুহর ও আসর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের ন্যায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম। এতে কোন ত্রুটি করতাম না। প্রথম দু’রাকাআতে কিরাআত দীর্ঘায়িত এবং শেষ দু’রাকাআতে তা সংক্ষিপ্ত করাতাম। উমর (রাঃ) বলেনতোমর সম্পর্কে এইরূপ ধারণা।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৮. যুহরের সালাতে কিরাআত পড়া।

৭২৩। আবূ নু’আইম (রহঃ) ... আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের প্রথম দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহার সহিত আরও দু’টি সূরা পাঠ করতেন। প্রথম রাকাআতে দীর্ঘ করতেন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সংক্ষেপ করতেন। কখনো কোন আয়াত শুনিয়ে পড়তেন। আসরের সালাতেও তিনি সূরা ফাতিহার সাথে অন্য দু’টি সূরা পড়তেন। প্রথম রাকাআতে দীর্ঘ করতেন। ফজরের প্রথম রাকাআতেও তিনি দীর্ঘ করতেন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সংক্ষেপ করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৮. যুহরের সালাতে কিরাআত পড়া।

৭২৪। উমর ইবনু হাফস্ (রহঃ) ... আবূ মা’মার (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমরা খাব্বাব (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলামনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেনতিনি বললেনহ্যাঁ। আমরা প্রশ্ন করলামআপনরা কি করে তা বুঝতেনতিনি বললেনতাঁর দাঁড়ির (মুবারকের) নড়াচড়ায়।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৯. আসরের সালাতে কিরাআত।

৭২৫। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ মা’মার (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি খাব্বাব ইবনু আরত্ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলামনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেনতিনি বললেনহ্যাঁআমি জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা কি করে তাঁর কিরাআত বুঝতেনতিনি বললেনতাঁর দাঁড়ি মুবারকের নড়াচড়ায়।

পরিচ্ছেদঃ ৪৮৯. আসরের সালাতে কিরাআত।

৭২৬। মাক্কী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও আসরের প্রথম দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহার সাথে একটি সূরা পড়তেন। আর কখনো কখনো কোন আয়াত আমাদের শুনিয়ে পড়তেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯০. মাগরিবের সালাতে কিরাআত।

৭২৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনউম্মুল ফাযল (রাঃ) তাঁকে وَالْمُرْسَلاَتِ عُرْفًا সূরাটি তিলাওয়াত করতে শুনে বললেনবেটা! তুমি এ সূরা তিলাওয়াত করে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাগরিবের সালাতে এ সূরাটি পড়তে শেষবারের মত শুনেছিলাম।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯০. মাগরিবের সালাতে কিরাআত।

৭২৮। আবূ আসিম (রহঃ) ... মারওয়ান ইবনু হাকাম (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকদা যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) আমাকে বললেনকি ব্যপারমাগরিবের সালাতে তুমি যে কেবল ছোট ছোট সূরা তিলাওয়াত করঅথচ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দু’টি দীর্ঘ সূরার মধ্যে দীর্ঘতমটি থেকে পাঠ করতে শুনেছি।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯০. মাগরিবের সালাতে কিরাআত।

৭২৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... জুবাইর ইবনু মুতইম (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাগরিবের সালাতে সূরা তূর থেকে পড়তে শুনেছি।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯১. ইশার সালাতে সশব্দে কিরাআত।

৭৩০। আবূ নু’মান (রহঃ) ... আবূ রাফি’ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকদা আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। সেদিন তিনি ‏إِذَا السَّمَاءُ انْشَقَّتْ সূরাটি তিলাওয়াত করে সিজদা করলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনআমি আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে এ সিজদা করেছিতাই তাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ সূরায় সিজদা করব।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯১. ইশার সালাতে সশব্দে কিরাআত।

৭৩১। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ... আদী (ইবনু সাবিত) (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি বারাআ (রাঃ) থেকে শুনেছি যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ইশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর প্রথম দু’রাকাআতের এক রাকাআতে সূরাوالتين والزيتون পাঠ করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯২. ইশার সালাতে সিজদার আয়াত (সম্বলিত সূরা) তিলওয়াত।

৭৩২। মুসা’দ্দাদ (রহঃ) ... আবূ রাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনিإِذَا السَّمَاءُ انْشَقَّتْ‏ সুরাটি তিলাওয়াত করে সিজদা করলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এ সিজদা কেনতিনি বলেনআমি আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে এ সূরায় সিজদা করেছিতাই তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমি এতে সিজদা করব।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯৩. ইশার সালাতে কিরাআত।

৭৩৩। খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ইশার সালাতেوَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ পড়তে শুনেছি। আমি কাউকে তাঁর চাইতে সুন্দর কন্ঠ অথবা কিরাআত শুনিনি।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯৪. প্রথম দু’রাকাআতে কিরায়াত দীর্ঘ করা ও শেষ দু’রাকায়াতে তা সংক্ষেপ করা।

৭৩৪। সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনউমর (রাঃ) সা’দ (রাঃ)-কে বললেনআপনার বিরুদ্ধে তারা (কূফাবাসীরা) সর্ব বিষয়ে অভিযোগ করেছেএমনকি সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কেও। সা’দ (রাঃ) বললেনআমি প্রথম দু’রাকাআতে কিরাআত দীর্ঘ করে থাকি এবং শেষের দু’রাকাতে তা সংক্ষেপ করি। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে যেরূপ আদায় করেছিঅনুরূপই সালাত আদায়ের ব্যাপারে আমি ত্রুটি করিনি। উমর (রাঃ) বললেনআপনি ঠিকই বলেছেনআপনার ব্যাপারে ধারনা তো এরূপই ছিলকিংবা (তিনি বলেছিলেন) আপনার সম্পর্কে আমার এরূপই ধারনা।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯৫. ফজরের সালাতে কিরাআত। উম্মে সালামা (রা.) বলেননবী (সাঃ) সূরা তূর পড়েছেন।

৭৩৫। আদম (রহঃ) ... সাইয়ার ইবনু সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি ও আমার পিতা আবূ বারযা আসলামী (রাঃ) নিকট উপস্থিত হয়ে সালাত (নামায/নামাজ) সমূহের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত সূর্য ঢলে গেলেই আদায় করতেন। আর আসর (এমন সময় যেসালাতের শেষে) কোন ব্যাক্তি সজীব থাকতে থাকতেই মদিনার প্রান্ত সীমায় ফিরে আসতে পারত। মাগরিব সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেনতা আমি ভুলে গেছি। আর তিনি ইশা রাতের তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করতে কোন দ্বিধা করতেন নাএবং ইশার আগে ঘুমানো ও পরে কথাবার্তা বলা তিনি পছন্দ করতেন না। আর তিনি ফজর আদায় করতেন এমন সময় যেসালাত শেষে ফিরে যেতে লোকেরা তার পার্শ্ববর্তী ব্যাক্তিকে চিনতে পারত। এর দু’রাকাআতে অথবা রাবী বলেছেনএক রাকাআতে তিনি ষাট থেকে একশ’ আয়াত পড়তেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯৫. ফজরের সালাতে কিরাআত। উম্মে সালামা (রা.) বলেননবী (সাঃ) সূরা তূর পড়েছেন।

৭৩৬। মুসা’দ্দাদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনপ্রত্যেক সালাতেই কিরাআত পড়া হয়। তবে যে সব সালাত (নামায/নামাজ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শুনিয়ে পড়েছেনআমরাও তোমাদের শুনিয়ে পড়ব। আর যে সব সালাতে আমাদের না শুনিয়ে পড়েছেনআমরাও তোমাদের না শুনিয়ে পড়ব। যদি তোমরা সূরা ফাতিহার চাইতে বেশী না পড়সালাত (নামায/নামাজ) আদায় হয়ে যাবে। আর যদি বেশী পড় তা উত্তম।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯৬. ফজরের সালাতে স্বশব্দে কিরাআত।

وَقَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ طُفْتُ وَرَاءَ النَّاسِ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي وَيَقْرَأُ بِالطُّورِ

উম্মে সালামা (রা.) বলেনআমি লোকদের পিছনে তাওয়াফ করছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সালাত আদায় করছিলেন এবং সূরা তূর পাঠ করছিলেন।


৭৩৭। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে উকায বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন। আর দুষ্ট জ্বীনদের ঊর্ধ্বলোকের সংবাদ সংগ্রহের পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় এবং তাদের দিকে অগ্নিপিন্ড নিক্ষিপ্ত হয়। কাজেই শয়তানরা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসে। তারা জিজ্ঞাসা করলতোমাদের কি হয়েছেতারা বললআমাদের এবং আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে এবং আমাদের দিকে অগ্নিপিন্ড ছুঁড়ে মারা হয়েছে। তখন তারা বললনিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ একটা কিছু ঘটছে বলেই তোমাদের এবং আকাশের সংবাদ সংগ্রহের মধ্যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। কাজেইপৃথিবীর পূর্ব এবং পশ্চিম অঞ্চল পর্যন্ত বিচরণ করে দেখকী কারণে তোমাদের ও আকাশের সংবাদ সংগ্রহরে মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে?

তাই তাদের যে দলটি তিহামার দিকে গিয়েছিলতারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে অগ্রসর হল। তিনি তখন উকায বাজারের পথে নাখলা নামক স্থানে সাহাবীগণকে নিয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। তারা যখন কুরআন শুনতে পেলতখন সেদিকে মনোনিবেশ করল। তারপর তারা বলে উঠলআল্লাহর শপথ! এটই তোমাদের ও আকাশের সংবাদ সংগ্রহরে মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এমন সময় যখন তারা সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসল এবং বলল যে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছিযা সঠিক পথ নির্দেশ করে। ফলে আমরা এতে ঈমান এনেছি এবং কখনো আমরা আমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে কাউকে শরীক স্থির করব না।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ...قُلْ أُوحِيَ إِلَىَّ সূরা নাযিল করেন। মূলত তাঁর নিকট জ্বীনদের বক্তব্যই ওহীরূপে নাযিল করা হয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯৬. ফজরের সালাতে স্বশব্দে কিরাআত।

৭৩৮। মুসা’দ্দাদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে কিরাআত পড়ার জন্য নির্দেশ পেয়েছেনসেখানে পড়েছেন। আর যেখানে চুপ করতে থাকতে নির্দেশ পেয়েছেন সেখানে চুপ করে থেকেছেন। (আল্লাহ্ তা’আলার বাণী) “নিশ্চয় তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে উত্তম আদর্শ।”

পরিচ্ছেদঃ ৪৯৭. এক রাকাআতে দু’সূরা মিলিয়ে পড়াসূরার শেষাংশ পড়াএক সূরার আগে আরেক সূরা পড়া এবং সূরার প্রথমাংশ পড়া।

আব্দুল্লাহ্ ইবন সায়িব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে সূরা ম’মিনূন পড়তে শুরু করেন। যখন মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ) বা ঈসা (আঃ)-এর আলোচনা এলতাঁর কাশি উঠল আর তখন তিনি রুকু’তে চলে গেলেন। উমর (রাঃ) প্রথম রাকাআতে সূরা বাকারার একশ’ বিশ আয়াত তিলাওয়াত করেন এবং দ্বিতীয় রাকআতে মাসানী সূরা সমূহের কোন একটি তিলাওয়াত করেন। আহনাফ (রঃ) প্রথম রাকাআতে সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করেন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ইউসুফ বা ইউনুস তিলাওয়াত করেন এবং তিনি বর্ণনা করেছেন যেতিনি উমর (রাঃ)-এর পিছনে এ দু’টি সূরা দিয়ে ফজরের সালাত আদায় করেন।

ইবন মাসউদ (রাঃ) (প্রথম রাকআতে) সূরা আনফালের চল্লিশ আয়াত পড়েন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে মুফাসসাল সূরা সমূহের একটি পড়েন। যে ব্যক্তি দু’রাকাআতে একই সূরা ভাগ করে পড়ে বা দু’রাকাতে একই সূরা দুহরিয়ে পড়ে। তার সম্পর্কে কাতাদা (রহঃ) বলেনসবই মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা’আলার কিতাব। (অর্থা এতে কোন দোষ নেই)।

উবায়দুল্লাহ্ (রাঃ) কবার মসজিদে তাঁদের ইমামতি করতেন। তিনি সশব্দে কিরাআত পড়া হয় এমন কোন সালাতে যখনই কোন সূরা তিলাওয়াত করতেনقل هو الله أحد সূরা দ্বারা শুরু করতেন। তা শেষ করে অন্য একটি সূরা এর সাথে মিলিয়ে পড়তেন। আর প্রতি রাকাআতেই তিনি এরূপ করতেন। তাঁর সঙ্গীরা এ ব্যাপারে তাঁর কাছে বললেন যেআপনি এ সূরাটি দিয়ে শুরু করেনএটি যথেষ্ট হয় বলে আপনি মনে করেন না তাই আর একটি সূরা মিলিয়ে পড়েন। হয় আপিন এটিই পড়বেননা হয় এটি বাদ দিয়ে আর একটি সূরা মিলিয়ে পড়েন।হয় আপনি এটিই পড়বেননা হয় এটি বাদ অন্যটি পড়বেন। তিনি বললেনআমি এটি কিছুতেই ছাড়তে পারব না। আমার এভাবে ইমামতি করা যদি আপনারা অপসন্দ করেনতাহলে আমি আপনাদের ইমামতি ছেড়ে দেব। কিন্তু তাঁরা জানতেন যেতিনি তাদের মাঝে উত্তম। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তাদের ইমামতি করুক এটা তাঁরা অপসন্দ করতেন। পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁদের এখানে আগমন করেনতাঁরা বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানান। তিনি বললেনহেঅমুক! তোমার সঙ্গীগণ যা বলেন তা করতে তোমাকে কিসে বাঁধা দেয়আর প্রতি রাকাআতে এ সূরাটি বাধ্যতামূলক করে নিতে কিসে উদ্বুদ্ধ করছেতিনি বললেনআমি এ সূরাটি ভালবাসি। নবী করীম (সাঃ) বললেনঃ এ সূরার ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।


৭৩৯। আদম (রহঃ) ... আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএক ব্যাক্তি ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর নিকট এসে বললগতরাতে আমি মুফাসসাল সূরাগুলো এক রাকাইতেই তিলাওয়াত করেছি। তিনি বললেনতাহলে নিশ্চয়ই কবিতার ন্যায় দ্রুত পড়েছ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরস্পর সমতূল্য যে সব সূরা মিলিয়ে পড়তেনসেগুলো সম্পর্কে আমি জানি। এ বলে তিনি মুফাসসাল সূরাসমূহের বিশটি সূরার কথা উল্লেখ করে বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাকাআতে এর দু’টি করে সূরা পড়তেন।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯৮. শেষ দু’রাকাইতে সূরা ফাতিহাহ্ পড়া।

৭৪০। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের প্রথম দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও দু’টি সূরা পড়তেন এবং শেষ দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন এবং তিনি কোন কোন আয়াত আমাদের শোনাতেনআর তিনি প্রথম রাকাআতে যতটুকু দীর্ঘ করতেনদ্বিতীয় রাকাআতে ততটুকু দীর্ঘ করতেন না। এরূপ করতেন আসরে এবং ফজরেও।

পরিচ্ছেদঃ ৪৯৯. যুহরে ও আসরে নিঃশব্দে কিরাআত পড়া।

৭৪১। কুতাইবা (রহঃ) ... আবূ মা’মার (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমরা খাব্বাব (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলামরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেনতিনি বললেনহ্যাঁ। আমরা জিজ্ঞাসা করলামকি করে বুঝলেনতিনি বললেনতাঁর দাঁড়ি মুবারক নড়াচড়া দেখে।

পরিচ্ছেদঃ ৫০০. ইমাম আয়াত শুনিয়ে পাঠ করলে।

৭৪২। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর প্রথম দু’রাকাআতে সূরা ফাতিহার সাথে আরেকটি সূরা পড়তেন। কখনো কোন কোন আয়াত আমাদের শুনিয়ে পড়তেন এবং তিনি প্রথম রাকাআতে কিরাআত দীর্ঘ করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫০১. প্রথম রাকাআতে কিরাআতে দীর্ঘ করা।

৭৪৩। আবূ নু’আইম (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর প্রথম রাকাআতে কিরাআত দীর্ঘ করতেন ও দ্বিতীয় রাকাআতে সংক্ষিপ্ত করতেন এবং এরূপ করতেন ফযরের সালাতেও।

পরিচ্ছেদঃ ৫০২. ইমামের সশব্দে ‘আমীন’ বলা।

وَقَالَ عَطَاءٌ آمِينَ دُعَاءٌأَمَّنَ ابْنُ الزُّبَيْرِ وَمَنْ وَرَاءَهُ حَتَّى إِنَّ لِلْمَسْجِدِ لَلَجَّةًوَكَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ يُنَادِي الإِمَامَ لاَ تَفُتْنِي بِآمِينَوَقَالَ نَافِعٌ كَانَ ابْنُ عُمَرَ لاَ يَدَعُهُ وَيَحُضُّهُمْ، وَسَمِعْتُ مِنْهُ فِي ذَلِكَ خَيْرًا

আতা (রহঃ) বলেন, ‘আমীন’ হল দু’আ। তিনি আরও বলেনআবদুল্লাহ্ ইবন যুবাইর (রাঃ) ও তাঁর পিছনের মুসুল্লীগণ এমনভাবে ‘আমীন’ বলতেন যেমসজিদ গুমগুম আওয়ায হতো। আবূ হুরায়রা (রাঃ) ইমামকে ডেকে বলতেনআমাকে ‘আমীন’ বলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না। নাফি’ (রহঃ) বলেনইবন উমর (রাঃ) কখনই ‘আমীন’ বলা ছাড়তেন না এবং তিনি তাদের (আমীন বলার জন্য) উসাহিত করতেন। আমি তাঁর কাছ থেকে এ সম্পর্কে হাদীস শুনেছি।


৭৪৪। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘আমীন’ বলেনতখন তোমারও ‘আমীন’ বলো। কেননাযারা ‘আমীন’ (বলা) ও ফিরিশতাদের ‘আমীন’ (বলা) এক হয়তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ‘আমীন’ বলতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫০৩. আমীন বলার ফযীলত

৭৪৫। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ (সালাতে) ‘আমীন’ বলেআর আসমানে ফিরিশতাগণ ‘আমীন’ বলেন এবং উভয়ের ‘আমীন’ একই সময় হলেতার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

পরিচ্ছেদঃ ৫০৪. মুকতাদীর সশব্দে ‘আমীন’ বলা।

৭৪৬। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ পড়লে তোমরা ‘আমীন’ বলো। কেননাযার এ (আমীন) বলা ফিরিশতাদের (আমীন) বলার সাথে একই সময় হয়তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রহঃ) সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এবং নু’আইম- মুজমির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় সুমাই (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫০৫. কাতারে পৌছার আগেই রুকূতে চলে গেলে।

৭৪৭। মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) ... আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেতিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এমন অবস্থায় পৌঁছালেন যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন রুকূ’তে ছিলেন। তখন কাতার পর্যন্ত পৌঁছার আগেই তিনি রুকূ’তে চলে যান। এ ঘটনা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ব্যক্ত করা হলেতিনি বললেনআল্লাহ তা’আলা তোমার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দিন। তবে এরূপ আর করবে না।

রিচ্ছেদঃ ৫০৬. রুকূ’তে তাকবীর পূর্ণভাবে বলা।

قَالَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَفِيهِ مَالِكُ بْنُ الْحُوَيْرِثِ

এ ব্যাপারে ইবন আব্বাস (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। এ বিষয় মালিক ইবন হুওয়ারিস (রাঃ) থেকেও রিওয়ায়াত বর্ণিত আছে।


৭৪৮। ইসহাক ওয়াসিতী (রহঃ) ... ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বসরায় আলী (রাঃ) এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর বললেনইনি [আলী (রাঃ)] আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আদায়কৃত সালাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আর তিনি উল্লেখ করেন যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবার (মাথা) উঠাতে ও নামাতে তাকবীর বলতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫০৬. রুকূ’তে তাকবীর পূর্ণভাবে বলা।

৭৪৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেতিনি তাদের সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন এবং প্রতিবার উঠা বসার সময় তাকবীর বলতেন। সালাত শেষ করে তিনি বললেনতোমাদের মধ্যে আমার সালাতই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের সাথে বেশী সা’দৃশ্যপূর্ণ।

পরিচ্ছেদঃ ৫০৭. সিজদার তাকবীর পূর্ণভাবে বলা।

৭৫০। আবূ নু’মান (রহঃ) ... মুতাররিফ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি এবং ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি যখন সিজদায় গেলেন তখন তাকবীর বললেনসিজদা থেকে যখন মাথা উঠালেন তখনও তাকবীর বললেনআবার দু’রাকাআতের পর যখন দাঁড়ালেন তখনও তাকবীর বললেন। তিনি যখন সালাত শেষ করলেন তখন ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) আমার হাত ধরে বললেনইনি [আলী (রাঃ)] আমাকে মুহাম্মদ এর সালাত স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বা তিনি বলেছিলেনআমাদের নিয়ে মুহাম্মদ এর সালাতের ন্যায় সালাত আদায় করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫০৭. সিজদার তাকবীর পূর্ণভাবে বলা।

৭৫১। আমর ইবনু আওন (রহঃ) ... ইকরিমা (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি মাকামে (ইবরাহীমের নিকট) এক ব্যাক্তিকে দেখলাম যেপ্রতিবার উঠা ও ঝুঁকার সময় এবং দাঁড়ানো ও বসার সময় তাকবীর বলছেন। আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে একথা জানালে তিনি বললেনতুমি মাতৃহীন হওএকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) নয়?

পরিচ্ছেদঃ ৫০৮. সিজদা থেকে দাঁড়ানোর সময় তাকবীর বলা।

৭৫৩। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... ইকরিমা (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি মক্কা শরীফে এক বৃদ্ধের পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি বাইশবার তাকবীর বললেন। আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বললামলোকটি তো আহাম্মক। তিনি বললেনতোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক। এ যে আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত।

মূসা (রহঃ) বলেনআবান (রহঃ)কাতাদা (রহঃ) সূত্রেও ইাকরিমা (রহঃ) থেকে এ হাদীসটি সরাসরি বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫০৮. সিজদা থেকে দাঁড়ানোর সময় তাকবীর বলা।

৭৫৩। ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আরম্ভ করার সময় দাঁড়িয়ে তাকবীর বলতেন। এরপর রুকূ’তে যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেনআবার যখন রুকূ’ থেকে পিঠ সোজা করে উঠতেন তখন سَمِعَ اللَّهُ لَمِنْ حَمِدَهُ‏ বলতেনতারপর দাঁড়িয়েرَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলতেন। এরপর সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন। এবং যখন মাথা উঠাতেন তখনও তাকবীর বলতেন। আবার (দ্বিতীয়) সিজদায় যেতে তাকবীর বলতেন এবং পুনরায় মাথা উঠাতেন তখনও তাকবীর বলতেন। এভাবেই পুরো সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করতেন। আর দ্বিতীয় রাকাআতের বৈঠক শেষে যখন (তৃতীয় রাকাআতের জন্য) দাঁড়াতেন তখনও তাকবীর বলতেন।

আবদুল্লাহ সালিহ্ (রহঃ) লাইস (রহঃ) সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করতে وَلَكَ الْحَمْدُ উল্লেখ করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫০৯. রুকূ’তে হাঁটুর উপর হাত রাখা। আবূ হুমাইদ (রা.) তাঁর সঙ্গীদের সামনে বলেছেননবী () (রুকূ’র সময়) দু’হাত দিয়ে উভয় হাঁটুতে ভর দিতেন।

৭৫৪। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ... মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকবার আমি আমার পিতার পাশে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। এবং (রুকু’র সময়) দু’হাত জোড় করে উভয় উরুর মাঝে রাখলাম। আমার পিতা আমাকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন এবং বললেনপূর্বে আমরা এরূপ করতামপরে আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করা হয়েছে এবং হাত হাঁটুর উপর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ৫১০. যদি কেউ সঠিকভাবে রুকু’ না করে।

৭৫৫। হাফস ইবনু উমর (রহঃ) ... যায়িদ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনহুযাইফা (রাঃ) এক ব্যাক্তিকে দেখলেন যেসে রুকূ’ ও সিজদা ঠিকমত আদায় করছে না। তিনি তাকে বললেনতোমার সালাত (নামায/নামাজ) হয়নি। যদি তুমি (এই অবস্থায়) মারা যাওতাহলে আল্লাহ্ কর্তৃক মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রদত্ত আদর্শ হতে বিচ্যুত অবস্থায় তুমি মারা যাবে।

পরিচ্ছেদঃ ৫১২. রুকূ’ পূর্ণ করার সময় সীমা এবং এতে মধ্যম পন্থা ও ধীরস্থিরতা অবলম্বন।

بَابُ اسْتِوَاءِ الظَّهْرِ فِي الرُّكُوعِ وَقَالَ أَبُو حُمَيْدٍ فِي أَصْحَابِهِ رَكَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ هَصَرَ ظَهْرَهُ

৫১১. অনুচ্ছেদঃ রুকূ’তে পিঠ সোজা রাখা। আবূ হুমাইদ (রা.) তাঁর সঙ্গীদের সামনে বলেছেননবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’ করতেন এবং রুকূ’তে পিঠ সোজা রাখতেন।

৭৫৬। বাদাল ইবনু মুহাব্বার (রহঃ) ... বারা'আ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনসালাতে দাঁড়ানো ও বসা অবস্থা ব্যতীত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রুকূ’ সিজদা এবং দু’ সিজদার মধ্যবর্তী সময় এবং রুকূ’ থেকে উঠে দাঁড়ানোএগুলো প্রায় সমপরিমাণ ছিল।

পরিচ্ছেদঃ ৫১৩. যে ব্যক্তি সঠিক রুকু’ করেনি তাকে পুণরায় সালাত আদায়ের জন্য নবী () এর নির্দেশ।

৭৫৭। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতএকসময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে তাশরীফ আনলেনতখন এক ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলো। তারপর সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম করলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিয়ে বললেনঃ তুমি ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করকেননাতুমি সালাত আদায় করনি। লোকটি আবার সালাত আদায় করল এবং পুনরায় এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিল। তিনি বললেনঃ আবার গিয়ে সালাত আদায় করকেননাতুমি সালাত আদায় করনি। এভাবে তিনবার ঘটনার পূনরাবৃত্তি।

তারপর লোকটি বললসে মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেনআমি এর চেয়ে সুন্দর সালাত আদায় করতে জানিনা। কাজেইআপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাতে দাঁড়াবেতখন তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যতটুকু তোমার পক্ষে সহজ ততটুকু পড়বে। এরপর রুকূ’তে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকূ’ আদায় করবে। তারপর রুকূ’ থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। এরপর সিজদা থেকে উঠে স্থিরভাবে বসবে এবং পুনরায় সিজদায় গিয়ে স্থিরভাবে সিজদা করবে। তারপর পূর্ণ সালাত এভাবে আদায় করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৫১৪. রুকূ’তে দু’আ।

৭৫৮। হাফস ইবনু উমর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’ ও সিজদায় এ দু’আ পড়তেন سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي হে আমাদের রব আল্লাহ্! আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ্! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।

পরিচ্ছেদঃ ৫১৫. রুকূ’ থেকে মাথা উঠানোর সময় ইমাম ও মুকতাদী যা বলবেন।

৭৫৯। আদম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলে (রুকূ’ থেকে উঠতেন) তখন اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ বলতেনআর তিনি যখন রুকূ’তে যেতেন এবং রুকূ’থেকে মাথা উঠাতেনতখন তাকবীর বলতেন এবং উভয় সিজদা থেকে যখন দাঁড়াতেনতখন اللَّهُ أَكْبَرُ বলতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫১৬. ‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’-এর ফযীলত।

৭৬০। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলেনতখন তোমরা اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ বলবে। কেননাযার এ উক্তি ফিরিশতাগণের সঙ্গে একই সময়ে উচ্চারিত হয়তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

পরিচ্ছেদঃ ৫১৭. পরিচ্ছেদ নাই

৭৬১। মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি অবশ্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের ন্যায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করব। আবূ হুরায়রা (রাঃ) যুহরইশা ও ফজরের সালাতের শেষ রাকাআতে سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ‏ বলার পর কুনূত পড়তেন। এতে তিনি মু’মিনগণের জন্য দু’আ করতেন এবং কাফিরদের প্রতি লা’নত করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫১৭. পরিচ্ছেদ নাই

৭৬২। আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেন, (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে) কুনূত ফজর ও মাগরিবের সালাতে পড়া হত।

পরিচ্ছেদঃ ৫১৭. পরিচ্ছেদ নাই

৭৬৩। আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... রিফা’আ ইবনু রাফি’ যুরাকী (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকবার আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠিয়ে سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বললেনতখন পিছন থেকে এক সাহাবী رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ বললেন। সালাত শেষ করে তিনি জিজ্ঞাসা করলেনকে এরূপ বলেছিলসে সাহাবী বললেনআমি। তখন তিনি বললেনঃ আমি দেখলাম ত্রিশ জনের বেশী ফিরিশতা এর সাওয়াব কে আগে লিখবেন তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫১৮. রুকূ’ থেকে মাথা উঠানের পর স্থির হওয়া। আবূ হুমাইদা (র.) বর্ণনা করেননবী () উঠে এমনভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন যেমেরুদন্ডের হাড় যথাস্থানে ফিরে আসতো।

৭৬৪। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ... সাবিত (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আমাদেরকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের বর্ণনা দিলেন। তারপর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে দেখালেন। তিনি যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেনতখন (এতক্ষণ) দাঁড়িয়ে রইলেন যেআমরা মনে করলামতিনি (সিজদার কথা) ভুলে গেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫১৮. রুকূ’ থেকে মাথা উঠানের পর স্থির হওয়া। আবূ হুমাইদা (র.) বর্ণনা করেননবী () উঠে এমনভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন যেমেরুদন্ডের হাড় যথাস্থানে ফিরে আসতো।

৭৬৫। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ... বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রুকূ’ ও সিজদা এবং তিনি যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেনএবং দু’ সিজদার মধ্যবর্তী সময় সবই প্রায় সমান হত।

পরিচ্ছেদঃ ৫১৮. রুকূ’ থেকে মাথা উঠানের পর স্থির হওয়া। আবূ হুমাইদা (র.) বর্ণনা করেননবী () উঠে এমনভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন যেমেরুদন্ডের হাড় যথাস্থানে ফিরে আসতো।

৭৬৬। সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনমালিক ইবনু হুওয়ইরিস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) কেমন ছিল তা আমাদের দেখালেন। তখন সালাতের কোন ওয়াক্ত ছিল না। তিনি সালাতে দাঁড়ালেন এবং পুর্ণাঙ্গরূপে কিয়াম করলেন। তারপর রুকূ’তে গেলেন এবং ধীরস্থিরভাবে রুকূ’ আদায় করলেনতারপর তাঁর মাথা উঠালেন এবং কিছুক্ষণ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর তিনি আমাদের নিয়ে আমাদের এই শায়খ বুরাইদ (রহঃ)-এর ন্যায় সালাত আদায় করলেন। আর আবূ বুরাইদ (রহঃ) দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসতেনতারপর দাঁড়াতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫১৯. সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলতে বলতে নত হওয়। নাফি’ (র.) বলেনইবন উমর (রা.) সিজদায় যাওয়ার সময় হাঁটু রাখার আগে হাত রাখতেন।

৭৬৭। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবূ বকর ইবনু আবদুর রাহমান (রহঃ) ও আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যেআবূ হুরায়রা (রাঃ) রামযান মাসের সালাত (নামায/নামাজ) বা অন্য কোন সময়ের সালাত ফরয হোক বা অন্য কোন সালাত হোকদাঁড়িয়ে শুরু করার সময় তাকবীর বলতেনআবার রুকূ’তে যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর (রুকূ’ থেকে উঠার সময়) سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ‏ বলতেনসিজদায় যাওয়ার পূর্বে رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ বলতেন। তারপর সিজদার জন্য অবনত হওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলতেন। আবার সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় তাকবীর বলতেন।

এরপর (দ্বিতীয়) সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন এবং সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় তাকবীর বলতেন। দু’ রাকাআত আয়ায় করে দাঁড়ানোর সময় আবার তাকবীর বলতেন। সালাত শেষ করা পর্যন্ত প্রতি রাকআতে এইরূপ করতেন। সালাত শেষে তিনি বলতেনযে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! তোমাদের মধ্য থেকে আমার সালাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের সাথে অধিক সা’দৃশ্যপূর্ণ। দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত এরূপই ছিল।

উভয় বর্ণনাকারী [আবূ বকর ইবনু আবদুর রহমান ও আবূ সালামা (রহঃ)] বলেনআবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন তখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ বলতেন। আর কতিপয় লোকের নাম উল্লেখ করে তাঁদের জন্য দু’আ করতেন। দু’আয় তিনি বলতেনইয়া আল্লাহ্‌! ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদসালামা ইবনু হিশামআইয়্যাস ইবনু আবূ রাবী’আ (রাঃ) এবং অপরাপর দুর্বল মুসলমাদেরকে রক্ষা করুন। ইয়া আল্লাহ্! মুদার গোত্রের উপর আপনার পাকড়াও কঠোর করুনইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর যুগে যেমন খাদ্য সংকট ছিল তাদের জন্যও অনুরূপ খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে দিন।

(রাবী বলেন) এ যুগে পূর্বাঞ্চলের অধিবাসী মুদার গোত্রের লোকেরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরোধী ছিল।

পরিচ্ছেদঃ ৫১৯. সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলতে বলতে নত হওয়। নাফি’ (র.) বলেনইবন উমর (রা.) সিজদায় যাওয়ার সময় হাঁটু রাখার আগে হাত রাখতেন।

৭৬৮। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া থেকে পড়ে যান। কোন কোন সময় সুফিয়ান (রহঃ) হাদীস বর্ণনা করার সময় عَنْ فَرَسٍ শব্দের স্থলে مِنْ فَرَسٍ বলতেন। ফলে তাঁর ডান পাঁজর আহত হয়ে পড়ে। আমরা তাঁর শুশ্রুষা করার জন্য সেখানে গেলাম। এ সময় সালাতের ওয়াক্ত হল। তিনি আমাদের নিয়ে বসে সালাত আদায় করলেনআমরাও বসেই আদায় করলাম।

সুফিয়ান (রহঃ) আর একবার বলেছেনআমরা বসে সালাত আদায় করলাম। সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইমান নির্ধারণ করা হয় তাঁকে ইকতিদা করার জন্য। তিনি যখন তাকবীর বলেনতখন তোমরাও তাকবীর বলবেতিনি যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ‏ বলবেতখন তোমরা رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ‏ বলবে। তিনি যখন সিজদা করেনতখন তোমরাও সিজদা করবে।

সুফিয়ান (রহঃ) বলেনমা’মারও কি এরূপ বর্ণনা করেছেন? (আলী (রহঃ) বলেন) আমি বললামহ্যাঁ। সুফিয়ান (রহঃ) বলেনতিনি সঠিক স্মরণ রেখেছেনএরূপই যুহরী (রহঃ) وَلَكَ الْحَمْدُ‏ বর্ণনা করেছেন। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, (যুহরীর কাছ থেকে) ডান পাঁজর যখম হওয়ার কথা মুখস্থ করেছিলাম। কিন্তু যখন তাঁর কাছ থেকে বেরিয়ে আসলামতখন ইবনু জুরায়জ (রহঃ) বললেনআমিও তাঁর কাছে ছিলাম। (তিনি বলেছেন,) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ডান পায়ের নলা যখম হয়েছিল।

পরিচ্ছেদঃ ৫২০. সিজদার ফযীলত

৭৬৯। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেসাহাবীগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলেনইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাবতিনি বললেনঃ মেঘমুক্ত পূর্ণিমার রাতের চাঁদকে দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ করতাঁরা বললেননা ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেনমেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখার ব্যাপারে কি তোমাদের কোন সন্দেহ আছেসবাই বললেননা। তখন তিনি বললেনঃ নিঃসন্দেহে তোমারও আল্লাহ্ তা’আলা বলবেনযে যার উপাসনা করত সে যেন তার অনুসরণ করে।

তাই তাদের কেউ সূর্যের অনুসরণ করবেকেউ চন্দ্রের অনুসরণ করবেকেউ তাগুতের অনুসরণ করবে। আর অবশিষ্ট থাকবে শুধুমাত্র এ উম্মাহতবে তাদের সাথে মুনাফিকরাও থাকবে। তাঁদের মাঝে এ সময় আল্লাহ্ তা’আলা শুভাগমন করবেন এবং বলবেনঃ “আমি তোমাদের রব। তখন তারা বলবেযতক্ষণ পযন্ত আমাদের রবের শুভাগমন না হবেততক্ষণ আমরা এখানেই থাকব। আর তার যখন শুভাগমন হবে তখন আমরা অবশ্যই তাঁকে চিনতে পারব। তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা’আলা আগমন করবেন এবং বলবেন, “আমি তোমাদের রব।” তারা বলবে হ্যাঁআপনই আমাদের রব।

আল্লাহ তা’আলা তাদের ডাকবেন। আর জাহান্নামের উপর একটি সেতুপথ (পুলসিরাত) স্থাপন করা হবে। রাসূল গণের মধ্যে আমিই সবার আগে আমার উম্মত নিয়ে এ পথ অতিক্রম করব। সেদিন রাসূলগণ ব্যতীত আর কেউ কথা বলবে না। আর রাসূলগণের কথা হবেঃاللَّهُمَّ سَلِّمْ سَلِّمْ (আল্লাহুম্মা সাল্লিম সাল্লিম) ইয়া আল্লাহ্ রক্ষা করুনরক্ষা করুন।

আর জাহান্নামে বাঁকা লোহার বহু শলাকা থাকবেসেগুলো হবে সাদান কাঁটার মতো। তোমরা কি স’দান কাঁটা দেখেছতারা বলবেহ্যাঁ দেখেছি। তিনি বলবেনসেগুলো দেখতে সাদান কাঁটার মতোই। তবে সেগুলো কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহ্ ব্যতীত আর কেউ জনানে না। সে কাঁটা লোকের আমল অনুযায়ী তাদের তড়ি গতিতে ধরবে। তাদের কিছু রোক ধ্বংস হবে আমলের কারণে। আর কারোর পায়ে যখম হবেকিছু লোক কাঁটায় আক্রান্ত হবেতারপর নাজাত পেয়ে যাবে। জাহান্নামীদের থেকে যাদের প্রতি আল্লাহ্ পাক রহমত করতে ইচ্ছা করেবনতাদের ব্যাপারে ফিরিশতাগণকে নির্দেশ দেবেন যেযারা আল্লাহর ইবাদত করততাদের যেন জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হয়। ফিরিশতাগণ তাদের বের করে আনবেন এবং সিজদার চিহ্ন দেখে তাঁরা তাদের চিনতে পারবেন। কেননাআল্লাহ্ তা’আলা জাহান্নামের জন্য সিজদার চিহ্নগুলো মিটিয়ে দেওয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে। কাজেই সিজদার চিহ্ন ছাড়া আগুন বনী আদমের সব কিছুই গ্রাস করে ফেলবে।

অবশেষেতাদেরকে অঙ্গারে পরিণত অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তাদের উপর ‘আবে-হায়াত’ ঢেলে দেওয়া হবে ফলে তারা স্রোতে বাহিত ফেনার উপর গজিয়ে উঠা উদ্ভিদের মত সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে। এরপর আল্লাহ্ তা’আলা বান্দাদের বিচার কাজ সমাপ্ত করবেন। কিন্তু একজন লোক জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে থেকে যাবে। তার মুখমন্ডল তখনও জাহান্নামের দিকে ফেরানো থাকবে। জাহান্নামবাসীদের মধ্যে জান্নাতে প্রবেশকারী সেই শেষ ব্যাক্তি। সে তখন নিবেদন করবেহে আমার রব! জাহান্নাম থেকে আমার চেহারা ফিরিয়ে দিন। এর দূষিত হাওয়া আমাকে বিষিয়ে তুলছেএর লেলিহান শিখা আমাকে যন্ত্রনা দিচ্ছে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেনতোমার নিবেদন গ্রহণ করা হলেতুমি এছাড়া আর কিছু চাইবেন না তোসে বলবেনা আপনার ইজ্জতের শপথ! সে তার ইচ্ছামত আল্লাহ তা’আলাকে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিবে। কাজেই আল্লাহ্ তা’আলা তার চেহারাকে জাহান্নামের দিক ফিরিয়ে দিবেন।

এরপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবেতখন সে জান্নাতের অপরূপ সৗন্দর্য দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা সে চুপ করে থাকবে। তারপর সে বলবেহে আমার রব! আপনি জান্নাতের দরজার কাছে পৌছে দিন। তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাকে বলবেনতুমি পূর্বে যা চেয়েছিলেতা ছাড়া আর কিছু চাইবে না বলে তুমি কি অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দাওনিতখন সে বলবেহে আমার রব! তোমার সৃষ্টির সবচাইতে হতভাগ্য আমি হতে চাই না। আল্লাহ তাতক্ষণিক বলবেনতোমার এটি পুরন করা হলে তুমি এ ছাড়া কিছু চাইবে না তোসে বলবে নাআপনার ইজ্জতের কসম! এছাড়া আমি আর কিছুই চাইব না। এ ব্যাপারে সে তার ইচ্ছানুযাযী অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রুতি দেবে। সে যখন জান্নাতের দরজায় পৌঁছবে তখন জান্নাতের অনাবিল সৌন্দর্য ও তার আভ্যন্তরীণ সুখ শান্তি ও আনন্দঘন পরিবেশ দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছা করবেনসে চুপ করে থাকবে।

এরপর সে বলবেহে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দাও! তখন পরাক্রমলালী মহান আল্লাহ্ বলবেনঃ হে আদম সন্তানকি আশ্চয! তুমি কত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী! তুমি কি আমার সঙ্গে অীঙ্গকার করনি এবং প্রতিশ্রুতি দাওনি যেতোমাকে যা দেওয়া হয়েছেতা ছাড়া আর কিছু চাইবে নাতখন সে বলবেহে আমার রব! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আমাকে সবচাইতে হতভাগ্য করবেন না। এতে আল্লাহ্ হেসে দেবেন। এরপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন এবং বলবেনচাও। সে তখন চাইবেএমন কি তার চাওয়ার আকাংখা ফুরিয়ে যাবে। তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ্ বলবেনঃ এটা চাওওটা চাও। এভাবে তার রব তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবেন। অবশেষে যখন তার আকাংখা শেষ হয়ে যাবেতখন আল্লাহ্ বলবেনঃ এ সবই তোমারএ সাথে আরো সমপরিমাণ (তোমাকে দেওয়া হল)।

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বললেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যেআল্লাহ্ তা’আলা বলবেনঃ এসবই তোমারতার সাথে আরও দশগুণ (তোমাকে দেওয়া হল)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেনআমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুধু এ কথাটি স্মরণ রেখেছি যেএ সবই তোমার এবং এর সাথে সমপরিমাণ। আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেনআমি তাঁকে বলতে শুনেছি যেএসব তোমার এবং এর সাথে আরও দশগুণ।

পরিচ্ছেদঃ ৫২১. সিজদার সময় দু’বাহু পার্শ্ব দেশ থেকে পৃথক রাখা।

৭৭০। ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মালিক (রহঃ) যিনি ইবনু বুহাইনা (রাঃ) তাঁর থেকে বর্ণিতনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেনতখন উভয় হাত এরূপ করতেন যেতাঁর উভয় বগলের শ্রুভ্রতা প্রকাশ হয়ে পড়ত। লাইস (রহঃ) বলেনজা’ফর ইবনু রাবী’আ (রহঃ) আমার কাছে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫২৩. পূর্ণভাবে সিজদা না করলে।

بَابُ يَسْتَقْبِلُ بِأَطْرَافِ رِجْلَيْهِ الْقِبْلَةَ

قَالَهُ أَبُو حُمَيْدٍ السَّاعِدِيُّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

৫২২. অনুচ্ছেদঃ সালাতে উভয় পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখী রাখা। আবূ হুমাইদ (রা.) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।


৭৭১। সালত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি এক ব্যাক্তিকে দেখলেনসে রুকূ’ও সিজদা পূর্ণরূপে আদায় করছে না। সে যখন তার সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলতখন হুযায়ফা (রাঃ) তাকে বললেনতুমি তো সালাত আদায় করনি।

আবূ ওয়াইল (রহঃ) বলেনআমার মনে হয়তিনি এও বলেছিলেন যেএভাবে সালাত আদায় করে তুমি যদি মারা যাওতাহলে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরীকা থেকে বিচ্যুত হয়ে মারা যাবে।

পরিচ্ছেদঃ ৫২৪. সাত অঙ্গ দ্বারা সিজদা করা।

৭৭২। কাবসী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করতে এবং চুল কাপড় না গুটাতে আদিষ্ট হয়েছিলেন। (অঙ্গ সাতটি হল) কপালদু’হাতদু’হাঁটু ও দু’পা।

পরিচ্ছেদঃ ৫২৪. সাত অঙ্গ দ্বারা সিজদা করা।

৭৭৩। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমরা সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করতে এবং চুল ও কাপড় না গুটাতে আদিষ্ট হয়েছি।

পরিচ্ছেদঃ ৫২৪. সাত অঙ্গ দ্বারা সিজদা করা।

৭৭৪। আদম (রহঃ) ... বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতযিনি অবশ্যই মিথ্যাবাদী ছিলেন না। তিনি বলেনআমার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম। তিনি سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলার পর যতক্ষণ না কপাল মাটিতে স্থাপন করতেনততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কেউ সিজদার জন্য পিঠ ঝুঁকাত না।

পরিচ্ছেদঃ ৫২৫. নাক দ্বারা সিজদা করা।

৭৭৫। মু’য়াল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আমি সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। কপাল দ্বারা এবং তিনি হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে এর অন্তর্ভুক্ত করেনআর দু’ হাতদু’ হাঁটুদু’ পায়ের আঙ্গুলসমূহ দ্বারা। আর আমরা যেন চুল ও কাপড় না গুটাই।

পরিচ্ছেদঃ ৫২৬. নাক দ্বারা কাদামাটির উপর সিজদা করা।

৭৭৬। মূসা (রহঃ) ... আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললামআমাদের খেজুর বাগানে চলুন, (হাদীস সংক্রান্ত) আলাপ আলোচনা করব। তিনি বেরিয়ে আসলেন। আবূ সালামা (রহঃ) বলেনআমি তাকে বললামলাইলাতুল কদর’ সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেনতা আমার কাছে বর্ণনা করুন। তিনি বললেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামযানের প্রথম দশ দিন ই’তিকাফ করলেন। আমারও তাঁর সঙ্গে ই’তিকাফ করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এসে বললেনআপনি যা তালাশ করছেনতা আপনার সামনে রয়েছে। এরপর তিনি মধ্যবর্তী দশ দিন ই’তিকাফ করলেনআমরাও তাঁর সঙ্গে ই’তিকাফ করলাম। পুনরায় জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এসে বললেনআপনি যা তালাশ করছেনতা আপনার সামনে রয়েছে।

এরপর রামযানের বিশ তারিখ সকালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে বললেনযারা আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ই’তিকাফ করেছেনতারা যেন ফিরে আসেন (আবার ই’তিকাফ করেন) কেননাআমাকে স্বপ্নে লাইলাতুল কদর’ অবগত করানো হয়েছে। তবে আমাকে তা (নির্ধারিত তারিখটি) ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে তা শেষ দশ দিনের কোন এক বেজোড় তারিখে। স্বপ্নে দেখলাম যেন আমি কাদা ও পানির উপর সিজদা করছি।

তখন মসজিদের ছাদ খেজুরের ডাল দ্বারা নির্মিত ছিল। আমরা আকাশে কোন কিছুই (মেঘ) দেখিনিএক খন্ড হালকা মেঘ আসল এবং আমাদের উপর (বৃষ্টি) বর্ষিত হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এমন কি আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কপাল ও নাকের অগ্রভাগে পানি ও কাঁধার চিহ্ন দেখতে পেলাম। এভাবেই তাঁর স্বপ্ন সত্যে পরিণত হল।

পরিচ্ছেদঃ ৫২৭. কাপড়ে গিরা লাগানো ও তা বেঁধে নেওয়া এবং সতর প্রকাশ হয়ে পড়ার আশংকায় কাপড় জড়িয়ে নেওয়া।

৭৭৭। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনসাহাবীগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। কিন্তু ইযার বা লুঙ্গী ছোট হওয়ার করণে তা গলার সাথে বেঁধে নিতেন। আর মহিলাগণকে বলে দেওয়া হয়েছিলতোমরা সিজদা থেকে মাথা উঠাবে না যতক্ষণ পযন্ত পুরুষগণ ঠিকমত না বসবে।

পরিচ্ছেদঃ ৫২৮. (সালাতের মধ্যে মাথার) চুল একত্র করবে না।

৭৭৮। আবূ নু’মান (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেছেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি অঙ্গের সাহায্যে সিজদা করতে এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে চুল একত্র না করতে এবং কাপড় টেনে না ধরতে আদিষ্ট হয়েছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫২৯. সালাতের মধ্যে কাপড় টেনে না ধরা।

৭৭৯। মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সাত অঙ্গে সিজদা করারসালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে চুল একত্র না করার এবং কাপড় টেনে না ধরার জন্য আদিষ্ট হয়েছি।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩০. সিজদায় তাসবীহ ও দু’আ পাঠ।

৭৮০। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রুকূ’ ও সিজদায় অধিক পরিমাণে سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي “হে আল্লাহ্! হে আমাদের রব! আপনার প্রশংসা সহ প্রবিত্রতা ঘোষণা করছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন” পাঠ করতেন। এতে তিনি পবিত্র কুরআনের নির্দেশ পালন করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩১. দুসিজদার মধ্যে অপেক্ষা করা।

৭৮১। আবূ নু’মান (রহঃ) ... আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যেমালিক ইবনু হুয়াইরিস (রাঃ) তাঁর সাথীদের বললেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে আমি কি তোমাদের অবহিত করব না? (রাবী) আবূ কিলাবা (রহঃ) বললেনএ ছিল সালাতের সময় ছাড়া অন্য সময়। তারপর তিনি (সালাতে) দাঁড়ালেনতারপর রুকূ’ করলেনএবং তাকবীর বলে মাথা উঠালেন আর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর সিজদায় গেলেন এবং সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ বসে পুনরায় সিজদা করলেন। তারপর মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। এভাবে তিনি আমাদের শায়খ আমর ইবনু সালমোর সালাতের মত সালাত আদায় করলেন।

আইয়ূব (রহঃ) বলেনআমর ইবনু সালিমা (রহঃ) এমন কিছু করতেন যা অন্যদের করতে দেখিনি। তা হল তিনি তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাকাআতে বসতেন। মালিক ইবনু হুয়াইরিশ (রাঃ) বর্ণনা করেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে কিছু দিন অবস্থান করলাম। তিনি আমাদের বললেনতোমরা তোমাদের পরিবার পরিজনদের মধ্যে ফিরে যাওয়ার পর অমুক সালাত অমুক সময়অমুক সালাত অমুক সময় আদায় করবে। সময় হলে তোমাদের একজন আযান দেবে এবং তোমাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যাক্তি ইমামতী করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩১. দুসিজদার মধ্যে অপেক্ষা করা।

৭৮২। মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রহীম (রহঃ) ... বারাআ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিজদা ও রুকূ’ এবং দু’ সিজদার মধ্যে বসা প্রায় সমান হতো।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩১. দুসিজদার মধ্যে অপেক্ষা করা।

৭৮৩। সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যেভাবে আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছিকম বেশী না করে আমি তোমাদের সে ভাবেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে দেখাব। সাবিত (রহঃ) বলেনআনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এমন কিছু করতেন যা তোমাদের করতে দেখিনা। তিনি রুকূ’ হতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে এত বিলম্ব করতেন যেকেউ বলততিনি (সিজদার কথা) ভুলে গেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩২. সিজদায় কনুই বিছিয়ে না দেওয়া। আবূ হুমাইদ (রা.) বর্ণনা করেননবী () সিজদা করেছেন এবং তাঁর দু’হাত রেখেছেনকিন্তু বিছিয়েও দেননি আবার তা গুটিয়েও রাখেন নি।

৭৮৪। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিজদায় (অঙ্গ প্রত্যঙ্গের) সামঞ্জস্য রক্ষা কর এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দু’হাত বিছিয়ে না দেয় যেমন কুকুর বিছিয়ে দেয়।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩৩. সালাতের বেজোড় রাকাআতে সিজদা থেকে উঠে বসার পড় দাঁড়ানো।

৭৮৫। মুহাম্মদ ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) ... মালিক ইবনু হুয়াইরিস লাইসী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যেতিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছেন। তিনি তাঁর সালাতর বেজোড় রাকাআতে (সিজদা থেকে) উঠে না বসে দাঁড়াতেন না।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩৪. রাকাআত শেষে কিভাবে জমিতে ভর দিয়ে দাঁড়াবে।

৭৮৬। মু’আল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) ... আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনইবনু হুয়াইরিস (রাঃ) এসে আমাদের এ মসজিদে আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তিনি বললেনআমি তোমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করব। এখন আমার সালাত আদায়ের কোন ইচ্ছা ছিল নাতবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছি তা তোমাদের দেখাতে চাই। আইয়ূব (রহঃ) বলেনআমি আবূ কিলাবা (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলামতাঁর [মালিক ইবনু হুয়াইরিস (রাঃ)] এর সালাত কিরূপ ছিলতিনি [আবূ কিলাবা (রহঃ)] বলেনআমাদের এ শায়খ অর্থা আমর ইবনু সালিমা (রাঃ) এর সালাতের মত। আইয়ূব (রহঃ) বললেনশায়খ তাকবীর পূর্ণ বলতেন এবং যখন দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন বসতেনতারপর মটিতে ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩৫. দু’ সিজদার শেষে উঠার সময় তাকবীর বলবে। ইবন যুবায়র (রা.) উঠার সময় তাকবীর বলতেন।

৭৮৭। ইয়াহইয়া ইবনু সালিহ (রহঃ) ... সায়ীদ ইবনু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকবার আবূ সায়ীদ (রাঃ) সালাতে আমাদের ইমামতী করেন। তিনি প্রথম সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময়দ্বিতীয় সিজদা করার সময়দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় এবং দু’ রাকাআত শেষে (তাশাহহুদের ঠৈকের পর) দাঁড়ানোর সময় স্বশব্দে তাকবীর বলেন। তিনি বলেনআমি এভাবেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে) দেখেছি।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩৫. দু’ সিজদার শেষে উঠার সময় তাকবীর বলবে। ইবন যুবায়র (রা.) উঠার সময় তাকবীর বলতেন।

৭৮৮। সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ... মুতাররিফ (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি ও ইমরান (রাঃ) একবার আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি। তিনি সিজদা করার সময় তাকবীর বলেছেন। উঠার সময় তাকবীর বলেন এবং দু’রাকাআত শেষে দাঁড়ানোর সময় তাকবীর বলেছেন। সালাম ফিরানোর পর ইমরান (রাঃ) আমার হাত ধরে বললেনইনি তো (আলী) আমাকে মুহাম্মদ এর সালাত স্মরণ করিয়ে দিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩৬. তাশাহহুদে বসার পদ্ধতি।

وَكَانَتْ أُمُّ الدَّرْدَاءِ تَجْلِسُ فِي صَلاَتِهَا جِلْسَةَ الرَّجُلِ، وَكَانَتْ فَقِيهَةً

উম্মু দারদা (রা.) তাঁর সালাতে পুরুষের মত বসতেনতিনি ছিলেন দীন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞানী।


৭৮৯। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) কে সালাতে আসন পিড়ি করে বসতে দেখেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনআমি সে সময় অল্প বয়স্ক ছিলাম। আমিও সেরূপ করলাম। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আমাকে নিষেধ করলেন এবং তিনি বললেনসালাতে (বসার) সুন্নাত তরীকা হল তুমি ডান পা খাড়া করবে এবং বাঁ পা বিছিয়ে রাখবে। তখন আমি বললামআপনি কি এরূপ করেনতিনি বললেনআমার দু’পা আমার ভার বহন করতে পারে না।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩৬. তাশাহহুদে বসার পদ্ধতি।

৭৯০। ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর এবং লায়স (রহঃ) ... মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একদল সাহাবীর সঙ্গে বসা ছিলেন। তিনি বলেনআমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তখন আবূ হুমাইদ সায়ীদী (রাঃ) বলেনআমিই তোমাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত সম্পর্কে বেশী স্মরণ রেখেছি। আমি তাঁকে দেখেছি (সালাত শুরু করার সময়) তিনি তাকবীর বলে দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকূ’ করতেন তখন দু’ হাত দিয়ে হাঁটু শক্ত করে ধরতেন এবং পিঠ সমান করে রাখতেন। তারপর রুকূ’ থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন যাতে মেরুদন্ডের হাড়গুলো স্ব-স্ব স্থানে ফিরে আসত। এরপর যখন সিজদা করতেন তখন দু’ হাত সম্পূর্ণভাবে মাটির উপর বিছিয়ে দিতেন নাআবার গুটিয়েও রাখতেন না। এবং তাঁর উভয় পায়ের আঙ্গুলীর মাথা কেবলামুখী করে দিতেন এবং যখন শেষ রাকাআতে বসতেন তখন বাঁ পা এগিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসতেন।

লায়স (রহঃ) ... ইবনু আতা (রহঃ) থেকে হাদীসটি শুনেছেন। আবূ সালিহ (রহঃ) লায়স (রহঃ) থেকে كُلُّ فَقَارٍ مَكَانَهُ বলেছেন। আর ইবনু মুবারক (রহঃ) ... মুহাম্মদ ইবনু আমর (রহঃ) থেকে শুধু كُلُّ فَقَارٍ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩৭. যারা প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ ওয়াজিব নয় বলে মনে করেন। কেননানবী () দু’ রাকাআত শেষে (তাশাহহুদ না পড়ে) দাঁড়ালেন এবং আর (বসার জন্য) ফেরেন নি।

৭৯১। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... বনূ আবদুল মুত্তালিবের আযাদকৃত দাস এবং রাবী কোন সময়ে বলেছেন রাবীয়া ইবনু হারিসের আযাদকৃত দাসআবদুর রাহমান ইবনু হুরমুয (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেবনূ আবদ মানাফের বন্ধু গোত্র আযদ শানআর লোক আবদুল্লাহ ইবনু বুহাইনা (রাঃ) যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের অন্যতম। তিনি বলেছেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিয়ে যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তিনি প্রথম দু’ রাকাআত পড়ার পর না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুকতাদীগণ তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। এভাবে সালাতের শেষভাগে মুকতাদীগণ সালামের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসাবস্থায় তাকবীর বললেন এবং সালাম ফিরানের পূর্বে দু’বার সিজদা করলেনপরে সালাম ফিরালেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩৮. প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করা।

৭৯২। কুতাইবা ইবন সায়ীদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মালিক (রাঃ) যিনি ইবনু বুহাইনাতাঁর থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। দু’ রাকাআত পড়ার পর তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন অথচ তাঁর বসা জরুরী ছিল। তারপর সালাত (নামায/নামাজ)-এর শেষভাগে বসে তিনি দু’টো সিজদা করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩৯. শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়া।

৭৯৩। আবূ নু’আইম (রহঃ) ... শাকীক ইবনু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) (রাঃ) বলেনআমরা যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতামতখন আমরা বলতাম, “আসসালামু আলা জিবরীল ওয়া মিকাইল এবং আসসালামু আলা ফুলান ও ফুলান।” তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ আল্লাহ্ নিজেই তো সালামতাই যখন তোমরা কেউ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেতখন সে যেন বলেঃ

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ‏

কেননাযখন তোমরা এ বলবে তখন আসমান ও যমীনের আল্লাহর সকল নেক বান্দার কাছে পৌঁছে যাবে। এর সঙ্গে أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ ও পড়বে।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪০. সালামের পূর্বে দু’আ।

৭৯৪। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহঃ) থেকে বর্ণিত যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) তাঁকে বলেছেন যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বলে দু’আ করতেনঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَفِتْنَةِ الْمَمَاتِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা বিকা মিন আজাবিল কাবারঅয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহ দাজ্জালঅয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহিয়া অয়া ফিতনাতিল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনল মাসামি ওয়াল মাগরাম

অর্থঃ “কবরের আযাব থেকেমসীহে দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে ইয় আল্লাহ! আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ইয়া আল্লাহ্! গুনাহ্ ও ঋণগ্রস্থতা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই।

তখন এক ব্যাক্তি তাঁকে বললআপনি কতই না ঋণগ্রস্থতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যখন কোন ব্যাক্তি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে।

মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) বলেনখালফ ইবনু আমির (রহঃ) কে বলতে আমি শুনেছি যে مَسِيحِ  مسيح এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। উভয় শব্দই সমার্থবোধক তবে একজন হলেন ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং অপর ব্যাক্তি হল দাজ্জাল।

যুহরী (রহঃ) বলেছেনউরওয়া ইবনু ‍যুবাইর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যেআয়িশা (রাঃ) বলেছেনআমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাতের মধ্যে মধ্যে দাজ্জালের ফিতনা থেকে (আল্লাহর নিকট) আশ্রয় প্রার্থনা করতে শুনেছি।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪০. সালামের পূর্বে দু’আ।

৭৯৫। কুতাইবা ইবনু সায়ীদ (রহঃ) ... আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতএকদিন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরয করলেনআমাকে সালাতে পাঠ করার জন্য একটি দু’আ শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনএ দু’আটি বলবেঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

অর্থা “হে আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অধিক যুলুম করেছি। আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার কেউ নেই। আপনার পক্ষ থেকে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪১. তাশাহহুদের পর যে দু’আটি বেছে নেওয়া হয়অথচ তা ওয়াজিব নয়।

৭৯৬। মুসা’দ্দাদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমাদের অবস্থা এ ছিল যেযখন আমারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাতে থাকতামতখন আমরা বলতামবান্দার পক্ষ হতে আল্লাহর প্রতি সালাম। সালাম অমুকের প্রতিসালাম অমুকের প্রতি। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর প্রতি সালামতোমরা এরূপ বল না। কারণ আল্লাহ্ নিজেই সালাম। বরং তোমরা বল-

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ‏

অর্থা (সমস্ত মৌখিকদৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর প্রত্যেক বান্দার কাছে তা পৌঁছে যাবে। (এরপর বলবে)أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ অর্থা “আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যেআল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন মাবূদ নাই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যেনিশ্চয়ই মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।”

তারপর যে দু’আ তার পছন্দ হয় তা সে বেছে নিবে এবং পড়বে।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪২. সালাত শেষ হওয়া পযন্ত যিনি কপাল ও নাকের ধুলাবালি মোছেন নি।

قَالَ أَبُو عَبْد اللَّهِ رَأَيْتُ الْحُمَيْدِيَّ يَحْتَجُّ بِهَذَا الْحَدِيثِ أَنْ لَا يَمْسَحَ الْجَبْهَةَ فِي الصَّلَاةِ

আবূ আবদুল্লাহ্ (রহঃ) বলেনআমি হুমায়দী (রহঃ)-কে দেখেছি যেসালাত শেষ হওয়ার আগে কপাল না মুছার ব্যাপারে এ হাদীস দিয়ে দলিল পেশ করতেন।


৭৯৭। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করতে দেখেছি। এমন কি তাঁর (মুবারক) কপালে কাদামাটির চিহ্ন লেগে থাকতে দেখেছি।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪৩. সালাম ফিরান

৭৯৮। মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) ... উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেনতখন সালাম শেষ হলেই মহিলাগণ দাঁড়িয়ে পড়তেন। তিনি দাঁড়ানের পূর্বে কিছুক্ষণ বসে অপেক্ষা করতেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেনআমার মনে হয় তাঁর এ অপেক্ষা এ কারণে যাতে মুসল্লীগণ থেকে যে সব পুরুষ ফিরে যান তাদের পূর্বেই মহিলাগণ নিজ অবস্থানে পৌঁছে যান।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪৪. ইমামের সালাম ফিরানের সময় মুকতাদীগণও সালাম ফিরাবে।

وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يَسْتَحِبُّ إِذَا سَلَّمَ الإِمَامُ أَنْ يُسَلِّمَ مَنْ خَلْفَهُ

ইবন উমর (রাঃ) ইমামের সালাম ফিরানোর সময় মুকতাদীগণের সালাম ফিরানো মুস্তাহাব মনে করতেন।


৭৯৯। হিব্বান ইবনু মূসা (রহঃ) ... ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি। তিনি যখন সালাম ফিরান তখন আমরাও সালাম ফিরাই।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪৫. যারা ইমামের সালামের জবাব দেওয়া প্রয়োজন মনে করেন না এবং সালাতের সালামকেই যথেষ্ট মনে করেন।

৮০০। অবদান (রহঃ) ... মহমূদ ইবনু রাবী’ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা তাঁর স্পষ্ট মনে আছেযে তাঁদের বাড়ীতে রাখা একটি বালতির (পানি নিয়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুল্লি করছেন। তিনি বলেছেনআমি ইতবান ইবনু মালিক আনসারী (রাঃ) যিনি বনূ সালিম গোত্রের একজনতাঁকে বলতে শুনেছিআমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে বললামআমার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে এবং আমার বাড়ী থেকে আমার কাওমের মসজিদ পযন্ত পানি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। আমার একান্ত ইচ্ছা আপনি আমার বাড়ীতে এসে এক যায়গায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন সে যায়গাটুকু আমি সালাত আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট করে নিব।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইনশা আল্লাহ্আমি তা করব। পরদিন রোদের তেজ বৃদ্ধি পাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বকর (রাঃ) আমার বাড়ীতে এলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশের অনুমতি চাইলে আমি তাঁকে দিলাম। তিনি না বসেই বললেনঃ তোমার ঘরের কোন স্থানে তুমি আমার সালাত আদায় পছন্দ করতিনি পছন্দ মত একটি জায়গা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাত আদায়ের জন্য ইশারা করে দেখালেন। তারপর তিনি দাঁড়ালেন আমরাও তাঁর পিছনে কাতারবন্দী হলাম। অবশেষে তিনি সালাম ফিরালেনআমরাও তাঁর সালামের সময় সালাম ফিরালাম।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪৬. সালামের পর যিকর।

৮০১। ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বর্ণনা করেন যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় মুসল্লিগণ ফরয সালাত (নামায/নামাজ) শেষ হলে উচ্চস্বরে যিকর করতেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনআমি এরূপ শুনে বুঝলামমুসল্লিগণ সালাত শেষ করে ফিরছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪৬. সালামের পর যিকর।

৮০২। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনতাকবীর শুনে আমি বুঝতে পারতাম সালাত (নামায/নামাজ) শেষ হয়েছে। আলী (রাঃ) বলেনসুফিয়ান (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যেআবূ মা’বাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর আযাদকৃত দাস সমূহের মধ্যে অধিক সত্যবাদী দাস ছিলেন। আলী (রাঃ) বলেনতার নাম ছিল নাফিয।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪৬. সালামের পর যিকর।

৮০৩। মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনদরিদ্রলোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেনসম্পদশালী ও ধনী ব‍্যক্তিরা তাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চ মর্যাদা ও স্থায়ী আবাস লাভ করছেনতারা আমাদের মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন আমাদের মত সিয়াম পালন করছেন এবং অর্থের দ্বারা হজ্বউমরাজিহাদ ও সাদাকা করার মর্যাদাও লাভ করছেন। এ শুনে তিনি বললেনআমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলবযা তোমরা করলেযারা নেক কাজে তোমাদের চাইতে অগ্রগামী হয়ে গিয়েছেতাদের সমপর্যায়ে পৌছাতে পারবে। তবে যারা পুনরায় এ ধরনের কাজ করবে তাদের কথা স্বতন্ত্র।

তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশ বার করে তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) তাহ মীদ (আলহামদু লিল্লাহ) এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে। (এ বিষয়টি নিয়ে) আমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হল। কেউ বললআমরা তেত্রিশ বার তাসবীহ পড়বতেত্রিশ বার তাহমীদ আর চৌত্রিশ বার তাকবীর পড়ব। এরপর আমি তাঁর কাছে ফিরে গেলাম। তিনি বললেনسُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ বলবেযাতে সবগুলোই তেত্রিশ বার করে হয়ে যায়।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪৬. সালামের পর যিকর।

৮০৪। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) এর কাতিব ওয়াররাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনমুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) আমাকে দিয়ে মু’আবিয়া (রাঃ) কে (এ মর্মে) একখানা পত্র লেখালেন যেনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ফরয সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর বলতেনঃ

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهْوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ، اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

অর্থা এক আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাইসার্বভোমত্ব একমাত্র তাঁরইসমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্যতিনি সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল। ইয়া আল্লাহ! আপনি যা প্রদান করতে চান তা রোধ করার কেউ নেই। আপনার কাছে (সকাজ ভিন্ন) কোন সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসে না।

শু’বা (রহঃ) আবদুল মালিক (রহঃ) থেকে অনুরূপ বলেছেনআপনার কাছে (সকাজ ছাড়া) এবং হাসান (রহঃ) বলেন,جد অর্থ সম্পদ এবং শু’বা (রহঃ) ... ওয়াররাদ (রহঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪৭. সালাম ফিরানোর পর ইমাম মুক্তাদীগণের দিকে ফিরবেন ।

৮০৫। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... সামুরা ইবনু জুনদব (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করতেনতখন আমাদের দিকে মুখ ফিরাতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪৭. সালাম ফিরানোর পর ইমাম মুক্তাদীগণের দিকে ফিরবেন ।

৮০৬। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যেতিনি বলেন , রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে বৃষ্টি হওয়ার পর হুদায়বিয়াতে আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে ফিরে বললেনঃ তোমরা কি জানোতোমাদের পরাক্রমশালী ও মহিমাময় প্রতিপালক কী বলেছেনতাঁরা বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল-ই উত্তম জানেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (রব) বলেনআমার বান্দাদের মধ্য কেউ আমার প্রতি মু’মিন হয়ে গেল এবং কেউ কাফির। যে বলেছেআল্লাহর করুণা ও রহমতে আমরা বৃষ্টি লাভ করেছিসে হল আমার প্রতি বিশ্বাসী এবং নক্ষত্রের প্রতি অবিশ্বাসী। আর যে বলেছেঅমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টিপাত হয়েছেসে আমার প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছে এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী হয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪৭. সালাম ফিরানোর পর ইমাম মুক্তাদীগণের দিকে ফিরবেন ।

৮০৭। আবদুল্লাহ ইবনু মুনির (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্ধ রাত পর্যন্ত সালাত (নামায/নামাজ) বিলম্ব করলেন। এরপর তিনি আমাদের সামনে বের হয়ে এলেন। সালাত শেষে তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরায়ে বললেনলোকেরা সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষায় থাকবে ততক্ষণ তোমরা যেন সালাতে রত থাকবে।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪৮. সালামের পরে ইমামের মুসাল্লায় বসে থাকা।

وَقَالَ لَنَا آدَمُ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ أَيُّوبَ عَنْ نَافِعٍ قَالَ كَانَ ابْنُ عُمَرَ يُصَلِّي فِي مَكَانِهِ الَّذِي صَلَّى فِيهِ الْفَرِيضَةَ وَفَعَلَهُ الْقَاسِمُ وَيُذْكَرُ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَفَعَهُ لَا يَتَطَوَّعُ الْإِمَامُ فِي مَكَانِهِ وَلَمْ يَصِحَّ

নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনইবন উমর (রাঃ) যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ফরয সালাত আদায় করতেন সেখানে দাঁড়িয়ে অন্য সালাত আদায় করতেন। এরূপ কাসিম (রহঃ) আমল করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে মারুফূ’ হাদীস বর্ণনা করা হয়ে থাকে যেইমাম তাঁর জায়গায় দাঁড়িয়ে নফল সালাত আদায় করবেন। ইমাম বুখারী (র) বলেনএ হাদিসটি মারফূ’ হিসেবে রিওয়ায়েত করা ঠিক নয়।

৮০৮। আবূল ওয়ালীদ হিশাম ইবনু আবদুল মালিক (রহঃ) ... উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরানোর পর নিজ যায়গায় কিছুক্ষন অপেক্ষা করতেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেনরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বসে থাকার কারণ আমার মনে হয় সালাতের পর মহিলাগন যাতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পান। তবে আল্লাহই তা অধিক জ্ঞাত।

ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) ... হিন্দ বিনত হারিস ফিরাসিয়াহ (রাঃ) যিনি উম্মে সালামা (রাঃ) এর বান্ধবী তাঁর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্নী ঊম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরাতেনতারপর মহিলাগণ ফিরে গিয়ে তাঁদের ঘরে প্রবেশ করতেনরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফিরবার আগেই।

ইবনু ওহাব (রহঃ) ইউনুস (রহঃ) সূত্রে শিহাব (রহঃ) থেকে বলেন যেআমাকে হিন্দ ফিরাসিয়াহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন এবং উসমান ইবনু উমর (রহঃ) বলেনআমাকে ইউনুস (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে বলেন যেআমাকে হিন্দ ফিরাসিয়াহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেনআর যূবাইদী (রহঃ) বলেনআমাকে যুহরী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যেহিন্দ বিনত হারিস কুরাশিয়াহ (রাঃ) তাকে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি মা’বাদ ইবনু মিকদাদ (রহঃ) এর স্ত্রী।

আর মা’বদ বনূ যুহরার সাথে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ ছিলেন এবং তিনি (হিন্দ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীগণের নিকট যাতায়াত করতেন। শু’আইব (রহঃ) যূহরী (রহঃ) থেকে বলেন যেআমাকে হিন্দ কুরাশিয়াহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। আর ইবনু আবূ আতীক (রহঃ) যুহরী সূত্রে হিন্দ ফিরাসিয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। রাইস (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু সায়ীদ (রহঃ) সূত্রে ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যেকুরাইশের এক মহিলা তাঁকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৪৯. মুসল্লীদের নিয়ে সালাত আদায়ের পর কোন প্রয়োজনীয় কথা মনে পড়লে তাদের ডিঙ্গিয়ে যাওয়া।

৮০৯। মুহাম্মদ ইবনু উবাইদ (রহঃ) ... উকবা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি মদিনায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। সালাম ফিরানোর পর তিনি তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যান এবং মুসল্লিগণকে ডিঙ্গিয়ে তাঁর সহধর্মিণীগণের কোন একজনের কক্ষে গেলেন। তাঁর এই দ্রুততায় মুসল্লীগণ ঘাবড়িয়ে গেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের কাছে ফিরে এলেন এবং দেখলেন যেতাঁর দ্রুততার কারণে তাঁরা বিস্মিত হয়ে পড়েছেন। তাই তিনি বললেনঃ আমার কাছে রক্ষিত কিছু স্বর্ণের কথা মনে পড়ে যায়। তা আমার প্রতিবন্ধক হোকতা আমি পছন্দ করি না। তাই তা বণ্টন করার নির্দেশ দিয়ে দিলাম।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫০. সালাত শেষে ডান বা বাঁ দিকে ফিরে যাওয়া।

وَكَانَ أَنَسٌ يَنْفَتِلُ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ يَسَارِهِ، وَيَعِيبُ عَلَى مَنْ يَتَوَخَّى، أَوْ مَنْ يَعْمِدُ الاِنْفِتَالَ عَنْ يَمِينِهِ

আনাস ইবন মালিক (রাঃ) কখনো ডান দিকে এবং কখনো বাঁ দিকে ফিরে যেতেন। নির্দিষ্ট করে ডান দিকে ফিরে যাওয়া দোষণীয় মনে করতেন।


৮১০। আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) ... আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেছেনতোমাদের কেঊ যেন তার সালাত (নামায/নামাজ) এর কোন কিছু শয়তানের জন্য না করে। তা হলশুধুমাত্র ডান দিকে ফিরানো জরুরী মনে করা। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অধিকাংশ সময়ই বাম দিকে ফিরতে দেখেছি।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫১. কাচা রসুনপিয়াজ ও দুর্গন্ধ যুক্ত মশলা বা তরকারী।

وَقَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَمَنْ أَكَلَ الثُّومَ أَوِ الْبَصَلَ مِنَ الْجُوعِ أَوْ غَيْرِهِ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীঃ ক্ষুধা বা অন্য কোন কারনে কেউ যেন রসুন বা পিয়াজ খেয়ে অবশ্যই আমাদের মসজিদের কাছে না আসে।


৮১১। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি এ জাতীয় গাছ থেকে খায়তিনি এ দ্বারা রসুন বুঝিয়েছেনসে যেন আমাদের মসজিদে না আসে। (রাবী আতা (রহঃ) বলেন) আমি জাবির (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলামনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বারা কি বুঝিয়েছেন। জাবির (রাঃ) বলেনআমার ধারনা যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বারা কাঁচা রসুন বুঝিয়েছেন এবং মাখলাদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫১. কাচা রসুনপিয়াজ ও দুর্গন্ধ যুক্ত মশলা বা তরকারী।

৮১২। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের যুদ্ধের সময় বলেনযে ব্যাক্তি এই জাতীয় বৃক্ষ থেকে অর্থা কাচা রসুন ভক্ষন করবে সে যেন অবশ্যই আমাদের মসজিদের কাছে না আসে।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫১. কাচা রসুনপিয়াজ ও দুর্গন্ধ যুক্ত মশলা বা তরকারী।

৮১৩। সায়ীদ ইবনু উফাইর (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি রসুন অথবা পিয়াজ খায় সে যেন আমাদের থেকে দূরে থাকে অথবা বলেছেনসে যেন আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে আর নিজ ঘরে বসে থাকে। (উক্ত সনদে আরও বর্ণিত আছে যে,) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটি পাত্র যার মধ্যে শাক-সবজী ছিল আনা হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গন্ধ পেলেন এবং এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেনতখন তাঁকে সে পাত্রে রক্ষিত শাক-সবজী সম্পর্কে অবহিত করা হলতখন একজন সাহাবী আবূ আইয়ূব (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বললেনতাঁর কাছে এগুলো পৌঁছিয়ে দাও। কিন্তু তিনি তা খেতে অপছন্দ মনে করলেনএ দেখে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি খাও। আমি যার সাথে গোপন আলাপ করি তাঁর সাথে তুমি আলাপ কর না (ফিরিশতার সাথে আমার আলাপ হয় তাঁরা দুর্গন্ধ অপছন্দ করেন)।

আহমাদ ইবনু সালিহ (রহঃ) ইবনু ওয়াহাব (রহঃ) থেকে বলেছেনأُتِيَ بِبَدْرٍ ইবনু ওয়াহব-এর অর্থ বলেছেনখাঞ্চা যার মধ্যে শাক-সবজী ছিল। আর লায়স ও আবূ সাফওয়ান (রহঃ) ইউনুস (রহঃ) থেকে রিওওায়াত বর্ণনায় قدر এর বর্ণনা উল্লেখ করেন নি।

(ইমাম বুখারি (রহঃ) বলেন)قدر এর বর্ণনা যুহরী (রহঃ) এর উক্তিনা হাদীসের অংশ তা আমি বলতে পারছি না।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫১. কাচা রসুনপিয়াজ ও দুর্গন্ধ যুক্ত মশলা বা তরকারী।

৮১৪। আবূ মা’মার (রহঃ) ... আবদুল আযীয (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএক ব্যাক্তি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেনআপনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রসুন খাওয়া সম্পর্কে কি বলতে শুনেছেনতখন আনাস (রাঃ) বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি এ জাতীয় গাছ থেকে খায় সে যেন অবশ্যই আমাদের কাছে না আসে এবং আমাদের সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করে।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫২. শিশুদের উযূ করাকখন তাদের উপর গোসল ও পবিত্রতা অর্জন ওয়াজিব হয় এবং সালাতের জামা’আতেদু’ঈদে এবং জানাযায় তাদের হাযির হওয়া এবং কাতারবন্দী হওয়া ।

৮১৫। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... শা’বী (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএমন এক ব্যাক্তি আমাকে খবর দিয়েছেনযিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে একটি পৃথক কবরের কাছে গেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে লোকদের ইমামতি করেন। লোকজন কাতারবন্দী হয়ে তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে গেল। আমি জিজ্ঞাসা করলামহে আবূ আমর! কে আপনাকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেনতিনি বললেনইবনু আব্বাস (রাঃ)।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫২. শিশুদের উযূ করাকখন তাদের উপর গোসল ও পবিত্রতা অর্জন ওয়াজিব হয় এবং সালাতের জামা’আতেদু’ঈদে এবং জানাযায় তাদের হাযির হওয়া এবং কাতারবন্দী হওয়া ।

৮১৬। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিততিনি বলেনজুম্মার দিন প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক (মুসলমানের) গোসল করা কর্তব্য।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫২. শিশুদের উযূ করাকখন তাদের উপর গোসল ও পবিত্রতা অর্জন ওয়াজিব হয় এবং সালাতের জামা’আতেদু’ঈদে এবং জানাযায় তাদের হাযির হওয়া এবং কাতারবন্দী হওয়া ।

৮১৭। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি এক রাতে আমার খালা (উম্মুল মু’মিনীন) মাইমূনা (রাঃ) এর কাছে রাত্র কাটালাম। সে রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–ও সেখানে নিদ্রা যান। রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হলে তিনি উঠলেন এবং একটি ঝুলন্ত মশক থেকে পানি নিয়ে হালকা উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। আমর (বর্ণনাকারী) এটাকে হালকা এবং অতি কম বুঝলেন। এরপর তিনি সালাতে দাঁড়ালেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনআমি উঠে তাঁর মতই সংক্ষিপ্ত উযূ করলামএরপর এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বামপাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। তখন তিনি আমাকে ঘুরিয়ে তাঁর ডানপাশে করে দিলেন। এরপর যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেনএরপর বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি শ্বাস- প্রশ্বাসের আওয়াজ হতে লাগলএরপর মুয়াযযীন এসে সালাতের কথা জানালে তিনি উঠে তাঁর সালাতের জন্য চলে গেলেন এবং সালাত আদায় করলেন। কিন্তু (নতুন) উযূ করলেন না।

সূফিয়ান (রহঃ) বলেনআমি আমর (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলামলোকজন বলে থাকেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চোখ নিদ্রায় যেত কিন্তু তাঁর কালব (হৃদয়) জাগ্রত থাকত। আমর (রহঃ) বললেনউবাইদ ইবনু উমাইর (রহঃ) কে আমি বলতে শুনেছি যেনিশ্চয়ই নাবীগণের স্বপ্ন অহী। তারপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ (إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ) (ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)ইসমাইল (আলাইহিস সালাম)-কে বললেন) আমি স্বপ্নে দেখলামতোমাকে কুরবানী করছি...... (৩৭ঃ ১০২)।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫২. শিশুদের উযূ করাকখন তাদের উপর গোসল ও পবিত্রতা অর্জন ওয়াজিব হয় এবং সালাতের জামা’আতেদু’ঈদে এবং জানাযায় তাদের হাযির হওয়া এবং কাতারবন্দী হওয়া ।

৮১৮। ইসমায়ীল (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতইসহাক (রহঃ) এর দাদী মুলাইকা (রাঃ) খাদ্য তৈরী করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দাওয়াত করলেন। তিনি তার তৈরী খাবার খেলেন। এরপর তিনি বললেনঃ তোমরা উঠে দাঁড়াওআমি তোমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করব। আনাস (রাঃ) বলেনআমি একটি চাটাইয়ে দাঁড়ালাম যা অধিক ব্যবহারের কারনে কালো হয়ে গিয়েছিল। আমি এতে পানি ছিটিয়ে দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দাঁড়ালেনআমার সঙ্গে একটি ইয়াতীম বাচ্চাও দাঁড়াল এবং বৃদ্ধা আমাদের পিছনে দাঁড়ালেন। আমাদের নিয়ে তিনি দু’ রাকায়াত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫২. শিশুদের উযূ করাকখন তাদের উপর গোসল ও পবিত্রতা অর্জন ওয়াজিব হয় এবং সালাতের জামা’আতেদু’ঈদে এবং জানাযায় তাদের হাযির হওয়া এবং কাতারবন্দী হওয়া ।

৮১৯। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি একটি গাধার উপর আরোহণ করে অগ্রসর হলাম। তখন আমি প্রায় সাবালক। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় প্রাচীর ব্যতীত অন্য কিছু সামনে রেখে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। আমি কোন এক কাতারের সম্মুখ দিয়ে অগ্রসর হয়ে এক জায়গায় নেমে পড়লাম এবং গাধাটিকে চরে বেড়ানোর জন্য ছেড়ে দিলাম। এরপর আমি কাতারে প্রবেশ করলাম। আমার এ কাজে কেউ আপত্তি করলেন না।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫২. শিশুদের উযূ করাকখন তাদের উপর গোসল ও পবিত্রতা অর্জন ওয়াজিব হয় এবং সালাতের জামা’আতেদু’ঈদে এবং জানাযায় তাদের হাযির হওয়া এবং কাতারবন্দী হওয়া ।

৮২০। আবূল ইয়ামান ও আইয়াশ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেছেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে অনেক বিলম্ব করলেন। অবশেষে উমর (রাঃ) তাঁকে আহবান করে বললেননারী ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। আয়িশা (রাঃ) বলেনতখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে বললেনঃ তোমরা ব্যতীত পৃথিবীর আর কেউ এ সালাত আদায় করে না। (রাবী বলেন) মদিনাবাসী ব্যতীত আর কেউ সে সময় সালাত আদায় করতেন না।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫২. শিশুদের উযূ করাকখন তাদের উপর গোসল ও পবিত্রতা অর্জন ওয়াজিব হয় এবং সালাতের জামা’আতেদু’ঈদে এবং জানাযায় তাদের হাযির হওয়া এবং কাতারবন্দী হওয়া ।

৮২১। আমর ইবনু আলী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেএক ব্যাক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলআপনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কখনো ঈদের মাঠে গমন করেছেনতিনি বললেনহ্যাঁগিয়েছি। তবে তাঁর কাছে আমার যে মর্যাদা ছিল তা না থাকলে আমি অল্প বয়স্ক হওয়ার কারণে সেখানে যেতে পারতাম না। তিনি কাসীর ইবনু সালাতের বাড়ীর কাছে যে নিশানা ছিল সেখানে আসলেন (সালাতান্তে) পরে খুতবা দিলেন। এরপর মহিলাদের নিকট গিয়ে তিনি তাদের ওয়ায ও নসীহত করেন। এবং তাদের সাদাকা করতে নির্দেশ দেন। ফলে মহিলারা তাঁদের হাতের আংটি খুলে বিলাল (রাঃ) এর কাপড়ের মধ্যে ফেলতে লাগলেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বিলাল (রাঃ) বাড়ী চলে এলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫৩. রাতে ও অন্ধকারে মহিলাগণের মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হওয়া।

৮২২। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনএকদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত আদায় করতে অনেক বিলম্ব করলেন। ফলে উমর (রাঃ) তাঁকে আহবান করে বললেনমহিলা ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এসে বললেনঃ এ সালাতের জন্য পৃথিবীতে অন্য কেউ অপেক্ষারত নেই। সে সময় মদিনাবাসী ব্যতীত অন্য কোথাও সালাত আদায় করা হত না। মদিনাবাসীরা সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশের দৃশ্যমান লালিমা অদৃশ্য হওয়ার সময় থেকে রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ সময় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫৩. রাতে ও অন্ধকারে মহিলাগণের মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হওয়া।

৮২৩। উবাইদুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি তোমাদের স্ত্রীগণ রাতে মসজিদে আসার জন্য তোমাদের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেতাহলে তাদের অনুমতি দিবে। শু’বা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনায় উবাইদুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন

পরিচ্ছেদঃ ৫৫৩. রাতে ও অন্ধকারে মহিলাগণের মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হওয়া।

৮২৪। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... হিন্দ বিনত হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী সালামা (রাঃ) তাঁকে জানিয়েছেনমহিলাগন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে উঠে যেতেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কারী পুরুষগণআল্লাহ যতক্ষণ ইচ্ছা করেন, (তথায়) অবস্থান করতেন। তারপর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠতেনতখন পুরুষগণও উঠে যেতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫৩. রাতে ও অন্ধকারে মহিলাগণের মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হওয়া।

৮২৫। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করতেন তখন মহিলাগণ চাঁদরে সর্বাঙ্গ আচ্ছাদিত করে ঘরে ফিরতেন। অন্ধকারের কারনে তখন তাঁদেরকে চেনা যেতো না।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫৩. রাতে ও অন্ধকারে মহিলাগণের মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হওয়া।

৮২৬। মুহাম্মদ ইবনু মিসকীন (রহঃ) ... আবূ কাতাদা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সালাতে দাঁড়িয়ে তা দীর্ঘায়িত করব বলে ইচ্ছা করিএরপর শিশুর কান্না শুনতে পেয়ে আমি সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষিপ্ত করি এ আশংকায় যেতার মায়ের কষ্ট হবে।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫৩. রাতে ও অন্ধকারে মহিলাগণের মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হওয়া।

৮২৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনযদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন যেমহিলারা কি অবস্থা সৃষ্টি করেছেতা হলে বনী ইসরাঈলের মহিলাদের যেমন নিষেধ করা হয়েছিলতেমনি এদেরও মসজিদে আসা নিষেধ করে দিতেন। (রাবী) ইয়াহইয়া ইবনু সায়ীদ (রহঃ) বলেনআমি আমরাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলামতাদের কি নিষেধ করা হয়েছিলতিনি বললেনহ্যাঁ।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫৪. পুরুষগণের পিছনে মহিলাগণের সালাত।

৮২৮। ইয়াহইয়া ইবনু কাযাআ’ (রহঃ) ... উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেনতখন মহিলাগন তাঁর সালাম শেষ করার পর উঠে যেতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ানোর আগে নিজ জায়গায় কিছুক্ষন অবস্থান করতেন। রাবী যুহরী (রহঃ) বলেনআমাদের মনে হয়তা এ জন্য যেঅবশ্য আল্লাহ ভাল জানেনযাতে মহিলাগণ চলে যেতে পারেনপুরুষগন তাদের যাওয়ার আগেই।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫৪. পুরুষগণের পিছনে মহিলাগণের সালাত।

৮২৯। আবূ নু’আইম (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক) (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সুলাইম (রাঃ) এর ঘরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। আমি এবং একটি ইয়াতীম তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম আর উম্মে সুলাইম (রাঃ) আমাদের পিছনে দাঁড়ালেন।

পরিচ্ছেদঃ ৫৩৯. শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়া।

৮৩০। ইয়াহইয়া ইবনু মূসা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এরপর মু’মিনদের স্ত্রীগণ চলে যেতেনঅন্ধকারের জন্য তাদের চেনা যেত না অথবা বলেছেনঅন্ধকারের জন্য তাঁরা একে অপরকে চিনতেন না।

পরিচ্ছেদঃ ৫৫৬. মসজিদে যাওয়ার জন্য স্বামীর নিকট মহিলার অনুমতি চাওয়া।

৮৩১। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিততিনি বলেনতোমাদের কারো স্ত্রী যদি (সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য মসজিদে যাওয়ার) অনুমতি চায় তা হলে স্বামী যেন তাকে বাঁধা না দেয়।