খাঁচায় মাছ চাষের
পটভূমি
বাংলাদেশে ‘খাঁচায়
মাছ চাষ’ নূতন হলেও এশিয়ার কিছু দেশ যেমন চীন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম এবং নেপালে এর প্রচলন বেশ প্রাচীন। এশিয়ার
অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশ খাঁচায় মাছ চাষের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। স্বল্প
সময়ের ব্যবধানে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ প্রতিযোগিতামূলকভাবে খাঁচায় মাছ চাষে প্রভূত উন্নতি
সাধন করেছে। এদের অধিকাংশই খাঁচায় তেলাপিয়া চাষ করে মূলত: আন্তর্জাতিক রপ্তানী বাণিজ্যের
জন্য।
এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে
বড় রপ্তানীকারক দেশ হলো তাইওয়ান। সে দেশে ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম ওজনের তেলাপিয়া খাঁচায়
মজুদ করে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের তেলাপিয়া উৎপাদন করে, ফিলেট আকারে রপ্তানী করা হয়। দেশটি উচ্চ গুণগত মানের
তেলাপিয়ার ফিলেট রপ্তানীতে শীর্ষে অবস্থান করছে। তাইওয়ান ২০০৬ সালে, ২০,০০০ মেট্রিক টন ফ্রোজেন তেলাপিয়া এবং ৩১০০ মেট্রিক টন তেলাপিয়ার ফিলেট রপ্তানী
করেছে।
খাঁচায় মাছ চাষে বাংলাদেশ
বাণিজ্যিকভাবে খাঁচায়
মাছ উৎপাদনকে বাংলাদেশে ১৯৭৭ সালে সর্বপ্রথম জাতীয় উন্নয়ন কর্মসূচির অর্ন্তভূক্ত করা
হয়। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরীামূলকভাবে খাঁচায় মাছ চাষের উদ্যোগ
গ্রহন করে। সীমিত পরিসরের এ কার্যক্রম সময়ে সময়ে পরিচালিত হয় মূলত গবেষনা ও স্নাতকোত্তর
ছাত্র – ছাত্রীদের পাঠক্রমের অংশ হিসাবে।
বাংলাদেশে খাঁচায়
মাছ চাষের জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে।
কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই কাংখিত ফল লাভ হয়নি। অথচ একই সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিশেষ
করে দণি-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ খাঁচায় মাছ চাষে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। আমাদের
দেশের খাঁচায় মাছ চাষ বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক ও স্থায়ীত্বশীল না হওয়ার পিছনে কয়েকটি মৌলিক
উপাদানের অভাবকেই কারণ হিসাবে চিহি্তৃ করা হয়। সেগুলো নিম্নরুপ:
- মানসম্পন্ন টেকসই জালের অভাব:
- খাঁচায় ব্যবহার উপযোগী ভাসমান খাদ্যের অভাব:
- খাঁচায় চাষ উপযোগী মৎস্য প্রজাতি নির্বাচনে দূর্বলতা:
- প্রয়োজনীয় কারিগরী দিকনির্দেশনার অভাব:
- বাংলাদেশে খাঁচায় মাছ চাষের উত্তরণের সূচনা:
মৎস্য অধিদপ্তর,
বাংলাদেশের আওতায় ২০০১ সালে
মৎস্য প্রশিণ ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৮ জন কর্মকর্তাকে “মনোসেক্স তেলাপিয়ার
বীজ উৎপাদন, পাঙ্গাসের কৃত্রিম
প্রজনন ও খাঁচায় মাছ চাষ” এর ওপর
খাঁচায় মাছ চাষের
উপযোগী স্থান নির্বাচন
খাঁচা স্থাপনের জন্য
স্থান নির্বাচন দুইটি বিষয় গুরুত্ব সহাকারে বিবেচনা করতে হবে। প্রথমতঃ জলাশয়ের প্রকৃতি,
দ্বিতীয়ত: পরিবেশগত অবস্থান।
জলাশয়ের প্রকৃতি:
জলাশয়ের প্রকৃতির
মধ্যে তিনটি প্রধান নিয়ামক (ভধপঃড়ৎ) কে বিবেচনায় নিয়ে জলাশয় নির্বাচন করতে হবে:
১। পানির গুনাগুন:
তাপমাত্রা,
দ্রবীভূত অক্সিজেন
পি.এইচ.
অ্যামোনিয়া
এছাড়াও নাইট্রোজেন,
মুক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড
ইত্যাদি।
২। পানির গভীরতা:
গভীর জলাশয়ই খাঁচা
স্থাপনের জন্য উপযোগি
পানির গভীরতা বেশী
হলে সেখানে খাঁচার অভ্যন্তরে কার্যকরী উৎপাদন এলাকা বাড়ানো সম্ভব
খাঁচার তলদেশ ও জলাশয়ের
তলদেশের মধ্যকার দূরত্ব ন্যূণতম ৩ ফুট বা ১
মিটার থাকা প্রয়োজন
উক্ত দূরত্ব বেশী
হলে তলদেশের পচনশীল কাঁদার প্রভাব থেকে খাঁচার আভ্যন্তরীন পরিবেশ মুক্ত থাকে;
ভাটার সময় যখন পানির
উচ্চতা হ্রাস পায় এমন নদীতেও খাঁচার তলদেশ ও জলাশয়ের তলার মধ্যকার ব্যবধান ২ ফুটের
নীচে না নামে;
৩। পানির স্রোত বা
প্রবাহমাত্রা:
প্রবাহমান পানি সার্বনিক
খাঁচার ভিতরের পানি পরিবর্তনের মাধ্যমে মাছের অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে
খাঁচার আভ্যন্তরীন
বর্জ্যগুলোকে দ্রুত অপসারনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। নদীতে ৪-৮ ইঞ্চি/সেকেন্ড মাত্রার প্রবাহে খাঁচা স্থাপন মাছের জন্য উপযোগী। তবে প্রবাহের এ মাত্রা ১৬ ইঞ্চি/সেকেন্ড এর বেশী
হওয়া সমীচীন নয়। মাত্রাতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ
ও অব্যবহৃত খাদ্য খাঁচার তলদেশে জমে তিকর পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
৪। পরিবেশগত বিবেচ্য:
- খাঁচা নদীর এমন অংশে স্থাপন করতে হবে যাতে কোনক্রমেই নৌ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে পারে।
- খাঁচা স্থাপনের স্থান এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়
- মাছ চুরি হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে
- সামাজিক শত্রুতার বশবর্তী হয়ে কেউ খাঁচার জাল কেটে না দেয়
- প্রতিকুল আবহাওয়া যেমন বন্যা, জলোচ্ছাস, নিম্নচাপ ইত্যাদি যাতে খাঁচা স্থাপনাকে তিগ্রস্ত না করে;
- স্থানটির পাড়ের অংশ কিছুটা উঁচু হওয়া ভালো যাতে প্রতিকূল বায়ুপ্রবাহ স্থাপনাকে আঘাত না করে;
শিল্প-কলকারখানার
বর্জ্য নি:সৃত হয়ে নদীর পানিকে কলুষিত করে এ ধরনের অঞ্চল পরিহার করতে হবে।
খাঁচা তৈরীর উপকরণ
ও ডিজাইন
চাঁদপুরের ডাকাতিয়া
নদীতে বাণিজ্যিকভাবে সাফল্যজনক খাঁচায় মাছ চাষের ইতিহাস বেশী দিনের নয়। ২০০২ সাল থেকে
শুরু করে অতি স্বল্প সময়ের ব্যবধানে যতটুকু বিস্তার ও স্থায়িত্ব লাভ করেছে তার প্রধান
কারণ প্রয়োজনীয় উপকরণের সহজলভ্যতা ও প্রযুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন। এখানে নদীতে স্থাপিত
খাঁচায় ব্যবহৃত উপকরণগুলোকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা:
১। খাঁচার জাল তৈরীর
উপকরণ
২। খাঁচার ফ্রেম তৈরীর
উপকরণ
৩। খাঁচা পরিচালনার
জন্য উপকরণ
১। খাঁচার জাল তৈরীর
উপকরণ
- পলিইথিলিন জাল (ঘের জাল): ৬ তার বিশিষ্ট
- রাসেল নেট (খাদ্য আটকানোর বেড় তৈরীতে)
- মরক্কো কাছি (২৪ তার বিশিষ্ট) অথবা গ্রীন হেংস চিকন রশি (২৪ তার বিশিষ্ট)
- গ্রীন হেংস্ চিকন সুতা (মেরমতের জন্য)
- কভার নেট বা ঢাকনা জাল (পাখি ইত্যাদির উপদ্রব থেকে রার জন্য)
- খাঁচাকে পানিতে ঝুলন্ত রাখার জন্য প্রতিটি খাঁচার নীচে বাঁধার জন্য ছয়টি করে ইট
২। ফ্রেম তৈরী উপকরণ
- ১” জি.আই. পাইপ (৭০ ফুট প্রতিটি খাঁচার জন্য)
- ঝালাই করার জন্য ওয়েলডিং রড ও ফাটবার
- ফ্রেম ভাসমান রাখার জন্য শুন্য ড্রাম (২০০ লিটারের পি.ভি.সি. ড্রাম, ওজন ৯ কেজি’র উর্ধ্বে)
- খাঁচা স্থির রাখার জন্য গেরাপি (anchor)
- গেরাপি বাঁধতে মোটা কাছি (১২ নং গ্রীন হেংস্)
- ফ্রেমের সাথে বাঁধার জন্য মাঝারী আকারের সোজা বাঁশ (প্রয়োজনীয় সংখ্যক)
৩। খাঁচা পরিচালনার
জন্য উপকরণ:
- খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য রাখার জন্য ছোট টিনশেড ঘর
- খাদ্য প্রদান ও নিয়মিত পরিচর্যার জন্য নৌকা
- মাছ বাছাই (sorting) স্থানান্তরের জন্য সুবিধাজনক পাত্র (বড় পাতিল কিংবা কাটা ড্রাম)
- খাদ্য প্রদানের জন্য সুবিধাজনক পাত্র
- মাছ আহরণের জন্য ঝুঁড়ি বা খাড়ি
- মাছ ওজনের জন্য ছোট বড় বিভিন্ন আকারের ব্যালেন্স বা দাড়িপাল্লা
খাঁচার ডিজাইন:
খাঁচার ডিজাইন নির্ভর
করবে জলাশয়ের প্রকৃতি ও তার পারিপার্শি¦কতার উপর। নদীর ক্ষেত্রে, যেহেতু নদীর পাড় বরাবর
খাঁচা স্থাপন করাটাই নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত, এবং নদীর অভ্যন্তরের দিকে ঝুঁকি বেশী
এবং নৌ চলাচলে প্রতিবন্ধক হতে পারে, কাজেই খাঁচার আকার খুব বেশী বড় করার সুযোগ থাকে না। ডাকাতিয়া নদীতে খাঁচাগুলো ২০ফুটx১০ফুট ফ্রেম তৈরী করে ড্রামের সাহায্যে ভাসমান রাখা
হয় এবং একটি খাঁচার সাথে অন্যটি পার্শ¦ীয়ভাবে সংযুক্ত করা হয়। ফলে নদীর পাড় থেকে সুবিধাজনক গভীরতা যেখানে শুরু সেখান
থেকে নদীর ভিতরের দিকে ২০ ফুট পর্যন্ত খাঁচা বিস্তৃত হয়।
হাওড়, বাওর ও বড় দীঘি লেক ইত্যাদি যেহেতু বিস্তৃত জলাশয়
এবং এগুলোতে বড় নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কোন আশংকা থাকে না কাজেই এ সকল জলাশয়ে
বড় আকারের খাঁচা স্থাপন করা সম্ভব। পৃথিবীর অনেক দেশেই সমুদ্রে বিশাল পুকুরের অবয়বে
খাঁ
চার মজবুত কাঠামো তৈরী করে খাঁচায় মাছ চাষ করা হয়। তেমনিভাবে আমাদের দেশের এ সকল
জলাশয়ে অনেক বড় আকারের খাঁচা স্থাপন করা সমীচীণ। আবার যেহেতু এসকল জলাশয়ে অধিকাংশই
মূল নদীর সাথে সংযোগ থাকে না আর কোন কোনটিতে থাকলেও তা শুধুমাত্র বর্ষাকালে ল্য করা
যায় তাই এসকল জলাশয়ে পানির প্রবাহ বা স্রোত অনেকটা নেই বললেই চলে। কাজেই এ সকল ক্ষেত্রে
খাঁচা স্থাপন করে মাছ চাষের ক্ষেত্রে মজুদ ঘনত্ব খুব বেশী বৃদ্ধি করা যাবে না। বরং
মাঝারী ঘনত্বে মাছ মজুদ করে বেশী এলাকায় খাঁচা স্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে
হবে। এতে একদিকে যেমন অক্সিজেন সমৃদ্ধ পানির দ্রুত পরিবর্তনের অভাবে মাছ মারা যাওয়ার
সম্ভাবনা কম থাকে অন্যদিকে খাঁচার তলদেশে মাছের বর্জ্য জমে বিষাক্ত গ্যাসের কারণে মাছের
মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে না।
খাঁচা তৈরী ও জলাশয়ে
স্থাপন
জাল তৈরী:
বর্তমানে খাঁচা তৈরীতে
যে জাল ব্যবহৃত হচ্ছে তা পলিইথিলিনের তৈরী ও গুনগত মান অনেক উন্নত। এগুলোর সবচেয়ে বড়
উপযোগীতা হলে যে, কাঁকড়া, গুইসাপ, কচ্ছপ ইত্যাদি তিকর প্রাণী জালগুলো কাটতে পারে না।
জালগুলো ফ্যাক্টরী থেকে সরবরাহ করা হয় থান কাপড়ের ন্যায়, যার উচ্চতা থাকে ২ মিটারেরও বেশী। ডাকাতিয়া মডেলের
খাঁচার জন্য সাধারনত দুই আকারের জাল তৈরী করা হয়:
১। ৬ মিটারx৩ মিটারx১.৫মিটার
২। ৩মিটারx৩ মিটারx১.৫ মিটার
প্রথমত তলার জন্য
দুই টুকরা জাল কেটে নিতে হবে। প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২২ ফুট করে। কারণ সেলাই করার পর জাল
সংকুচিত হয়ে দৈর্ঘ্য কমে যায় ও ২০ ফুটে এসে দাঁড়ায়। টুকরা দুটিকে লম্বায় পাশাপাশি রেখে
গ্রীন হেংস ২৪ তারী সুতা দ্বারা পাশাপাশি মেঝের সাথে জোড়া দিতে হবে। এরপর তলার চারিদিকে
ঘের দেয়ার জন্য ৬৮-৭০ ফুট জাল কেটে নিতে হবে। এবার ১১০ ফুট মরক্কো কাছি নিয়ে ৭০ ফুট
জালের লম্বালম্বি কিনারার মেসের ভিতর দিয়ে পরাতে হবে। এরপর ঘের জালের একমাথা তলার এক
কোনায় ধরে দেয়ালের মেসের সাথে তলার জালের মেসে গ্রীন হেংস দ্বারা সংযুক্ত করতে হবে।
চার কোনায় দেয়াল নির্মানের জালের অংশ কিছু বেশী সংকুচিত করে সেলাই করতে হবে যাতে চার
কোনায় জালের দেয়াল যথেষ্ট ঝুলে থাকে। এজন্য চার কোনায় ২ ফুট হিসাবে মোট ৮ ফুট জাল বেশী
প্রয়োজন হবে।
অত:পর উপরের মরক্কো
কাছিতে তলার চার কোনার বরাবর মেস গুনে চিহ্নিত করে উপরের কোনা নির্ধারণ করতে হবে। এক
কোনা থেকে অন্য কোনা পর্যন্ত ২০ ফুট, ১০ ফুট ও ১০ ফুট মরক্কো কাছি চিহ্নিত করে ঐ ১০ফুট, ২০ ফুট মরক্কো কাছির মধ্যেই জাল আটকিয়ে গিট দিতে
হবে। প্রতিটি গিটের সাথে ৩-৪ ফুটের লুপ তৈরী করতে হবে। এরপর মরক্কো কাছি ও গ্রীন হেংস
থেকে জালের মেসগুলো যাতে সরে না যায় তার জন্য চিকন নাইলনের সুতা দ্বারা শক্তভাবে পেঁচিয়ে
দিতে হবে।
জাল তৈরী হয়ে গেলে
জালের চারকোণে চারটি বাঁশের খুটি স্থাপন করে তার সাথে জালটি বেঁধে নিতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয়
পরিমাণ (১০ ফুট কারণ এগুলো ২০ ফুট চওড়া হিসাবে উৎপাদন করা হয়)। ঢাকনা বা কভার জাল কেটে
উপরের চারদিকে এমনভাবে সুতা দ্বারা বেঁধে দিতে হবে যাতে সহজে খোলা যায়।
ফ্রেম তৈরী:
ফ্রেমের অবয়ব নির্ভর
করবে কোন পরিবেশে খাঁচা স্থাপন করা হবে তার উপর। পুকুরের পরিবেশে যেখানে পানির কোন
স্রোত বা প্রবাহ নেই সেখানে পিভিসি পাইপ, বাঁশ ইত্যাদি দিয়ে ফ্রেম তৈরী করলেও চলবে। কিন্তু যেখানে স্রোত বা বিভিন্ন মাত্রার
প্রবাহ বিদ্যমান সেখানে খাঁচার ফ্রেম অবশ্যই মজবুত ও শক্ত হওয়া প্রয়োজন।
ডাকাতিয়া নদীতে স্থাপিত
খাঁচাগুলোর ফ্রেম তৈরী করতে প্রথমত: ১ ইঞ্চি জিআই পাইপ দ্বারা ৬মিটারx৩মিটার ফ্রেম তৈরী করা হয় । একটি ফ্রেম তৈরীতে ২১
মিটার পাইপ ব্যবহৃত হয়। ৬মিটার আকারের পাইপ নিয়ে মাথার দিকের প্যাঁচ কাটানো অংশ কেটে
ফেলে দেয়া হয়। অত:পর ১ফুট ফ্যাটবার বাঁকা করে বাহির দিক দিয়ে কোনাগুলোকে ঘিরে ঝালাই
করা হয়।
আর মাঝে ৩মিটার আরেকটি
পাইপ বসিয়ে ঝালাই করে ফ্রেম তৈরী করা হয়। এতে সরাসরি ৬মিটারx৩মিটার আকারের খাঁচা বসানো যায় আবার প্রয়োজনবোধে
৩মিটার৩মিটার খাঁচাও বসানো যায়। এভাবে ফ্রেমগুলো তৈরী করে একটির সাথে অন্যটি সংযুক্ত
করে খাঁচার আকারে সাজিয়ে ইউনিট তৈরী করা হয়।
একটি ফ্রেমের সাথে
অন্যটি সাজানোর জন্য এবং সেগুলো পানিতে ভাসমান রাখার জন্য দুইটি ফ্রেমের মাঝে ৩টি ড্রাম
বসানো হয়। দুই ফ্রেমের মাঝে ড্রাম দিয়ে ফ্রেম দুটোকে ১৭-১৮ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের রড দিয়ে
(দুই মাথায় কাম্প তৈরী করে) সংযুক্ত করা হয়। আবার ড্রামের উপরে বসানোর মতো ৩ সুতা রডের
ফ্রেম তৈরী করেও রডের ফ্রেমের সাথে জিআই পাইপের মূল খাঁচার ফ্রেম বেধে দেয়া যাবে।
খাঁচা স্থাপন:
খাঁচা স্থাপনের যাবতীয়
উপকরণ সংগ্রহ করে নদীর পাড়ে যেখানে খাঁচা স্থাপন করা হবে সেস্থানে নিতে হবে। জিআই পাইপের
ফ্রেমগুলো আগেই নিকটবর্তী কোন ওয়ার্কশপ থেকে ঝালাই করে ফ্রেম তৈরী করে খাঁচা স্থাপনের
এলাকায় আনতে হবে।
একসাথে জায়গার উপযোগীতা
মোতাবেক ১০-১২ টি ফ্রেম পাশাপাশি রেখে প্রতি দুটো খাঁচার মাঝে তিনটি করে ড্রাম বসিয়ে
সংযোগকারী লোহার ফ্রেম দ্বারা আটকাতে হবে। ড্রামগুলো যাতে নীচ দিয়ে সরে না যায় সেজন্য দুই ফ্রেমের পাইপের সাথে ভালোভাবে
নাইলনের দড়ি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। এরপর সম্পূর্ণ ফ্রেমের দৃঢ়তার জন্য চারদিকে জিআই
পাইপের সাথে এবং মাঝের জিআই পাইপের সাথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সোজা বাঁশ বেঁধে দিতে হবে।
এরপর প্রয়োজনীয় জলবলের সহযোগিতা নিয়ে একসাথে সতর্কতার সাথে সম্পূর্ণ খাঁচার ফ্রেমকে
পানিতে ভাসাতে হবে। এভাবে সমস্ত খাঁচা পানির উপরে তথা ডাঙ্গাতে বেঁধে পরে পানিতে ভাসাতে
হবে।
প্রত্যাশিত গভীরতায়
খাঁচা ভাসানো হলে এর দুদিকে দুইটি এবং খাঁচা ইউনিটের দৈর্ঘ্য বিবেচনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক
গেরাপী বা নোঙর মোটা গ্রীন হেংস কাছি (১২ নং) দিয়ে বেঁধে উপযোগী দুরত্বে নদীতে সেট
করতে হবে।
এরপর ধীরে ধীরে খাঁচার
জাল ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে, প্রয়োজনীয় সংস্কার
করে, খাঁচাগুলো ফ্রেমে সাথে বাঁধতে
হবে। খাঁচায় মাছ মজুদের কমপে ১৫ দিন পূর্বে জালগুলো সেট করে ফেলতে হবে। এতে জালের গায়ে সামান্য শ্যাওলা
পড়বে। ফলে মাছ মজুদের পর নূতন জালের ঘর্ষনজনিত আঘাত থেকে মাছ রা পাবে।
খাঁচায় চাষ উপযোগী
মৎস্য প্রজাতি
খাঁচায় মাছ চাষ স্বাভাবিক
জলাশয়ে বা পুকুরে মাছ চাষের চেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ। এখানে পুকুরের চেয়ে অনেক বেশী ঘনত্বে
পোনা মজুদ করা হয়। খাঁচার মাছ শুধুমাত্র বাহির থেকে সরবরাহকৃত সম্পূরক খাদ্যের উপর
নির্ভরশীল, তাই পুকুরের ন্যায়
বিস্তৃত পরিবেশে প্রাকৃতিক খাদ্যের জন্য বিচরণ করতে পারে না। আর আবদ্ধ পরিবেশে থাকার
কারণে আক্রমণাত্বক স্বভাবের কোন মাছ থাকলে তার আক্রমণ থেকে রার জন্য দূর্বল মাছ কোন
নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে না। আবার ব্যবস্থাপনার অংশ হিসাবে প্রতিনিয়ত মাছগুলো নাড়াচাড়া
করে স্থানান্তর করতে হয়। এ ধরণের ব্যবস্থাপনার পীড়ন সহ্য মতা না থাকলে মাছ মারা যেতে
পারে। পানির স্বাভাবিক পরিবর্তণ কোন কারণে ব্যাহত হলে কিংবা তলার বর্জ্য পদার্থের প্রত্যাশিত
অপসারণ না হলে খাঁচার পরিবেশ প্রতিকূল হয়ে যেতে পারে। ইত্যকার বিষয়গুলো বিবেচনা করেই
বিভিন্ন দেশে নিজ নিজ ভৌগলিকভাবে সহজলভ্য প্রজাতির মাছই খাঁচার জন্য নির্বাচন করা হয়।
সাধারণভাবে খাঁচার চাষের জন্য মৎস্য প্রজাতিগুলোর নিম্নবর্ণিত বৈশিষ্ট্য গুলো বিবেচনা করা হয়:
- নিজস্ব পরিবেশগত অবস্থায় স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনায় যাদের দৈহিক বৃদ্ধির হার ভাল
- অধিক ঘনত্বে বসবাস উপযোগী
- যে মাছের পোনা সবসময়ই সহজলভ্য
- যাদের রোগ প্রতিরোধ মতা বেশী
- সম্পূরক খাদ্যে সাড়া দেবার প্রবণতা ভাল
- নদীর প্রবাহমান পানির খাঁচায় লাফানোর প্রবণতা কম
- তুলনামূলকভাবে দৈহিক পীড়ণ সহ্য করার মতা বেশী
- স্থানীয় বাজারে ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ও মূল্য বেশী
বর্ণিত
বৈশিষ্টাবলী বিবেচনায় এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন
দেশে খাঁচায় চাষের প্রজাতি হিসাবে নিম্নলিখিত মাছগুলোকে নির্বাচন করা হয়:
- তেলাপিয়া
- পাঙ্গাস
- কৈ
- শিং
- মাগুর
- গ্রাস কার্প
- কমনকার্প
- শোল
- চিংড়ি
- স্বরপুটি
- মার্বেল গোবী
- গোরামী
পূর্বে আমাদের দেশে
বিভিন্ন সময়ে খাঁচায় মাছ চাষের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদনের
চেষ্টা করা হয়েছে। শুরুর দিকে অনেকে খাঁচায় পাঙ্গাস মজুদ করতেন। কিন্তু ক্রমহ্রাসমান
বাজার মূল্যের কারণে আজকাল খাঁচায় পাঙ্গাস চাষ লাভজনক বলে মনে হয় না। বর্তমানে অধিকাংশ
খাঁচাতেই একক প্রজাতি হিসাবে মনোসেক্স তেলাপিয়ার চাষ করা হচ্ছে। এর কারণ হলো নার্সিং
করে খাঁচায় মজুদ করা হলে মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানেই খাঁচা থেকে মাছ আহরণ ও বিক্রয়
করা যায়; আর ক্রমবর্ধমাণ চাহিদা
অনুসারে দেশেই মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে বিভিন্ন হ্যাচারীতে। এর সাথে
সাথে আরো কিছু প্রজাতির মাছের পোনা খাঁচায় মজুদ করে উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যেই
লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরের বিভিন্ন খাঁচায় সীমিত মাত্রায় থাই স্বরপুটি, থাই কৈ, কমন কার্প, চিংড়ি ইত্যাদি মজুদ করা হয়েছে পরীামূলকভাবে। আমাদের
দেশী কৈ, শোল, শিং মাগুর মাছও খাঁচায় চাষ করা সম্ভব; তবে এ সকল মাছের পোনা প্রাপ্তিই প্রধান প্রতিবন্ধক
বলে মনে হয়। পোনা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা গেলে ও উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার সহজলভ্য হলে
ব্যাপকভাবে খাঁচায় এসকল প্রজাতির মাছ চাষ সম্ভব হবে।
খাঁচায় চাষ উপযোগী
আমাদের দেশের মৎস্য প্রজাতি:
- তেলাপিয়া
- থাই সরপুঁটি
- গ্রাস কার্প
- কমন কার্প
- শৈল
- কৈ
- শিং ও মাগুর
খাঁচায় মজুদ উপযোগী
মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা
খাঁচায় মাছের মজুদ
ঘনত্ব নির্ধারণ
খাঁচায় মাছ চাষের
ক্ষেত্রে পোনার মজুদ ঘনত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বল্প আয়তনে প্রত্যাশিত উৎপাদন
পেতে হলে মজুদ ঘনত্ব যত বাড়ানো যায় ততই ভাল। তবে এই ঘনত্ব বাড়ানোর সাথে বেশ কিছু ফ্যাক্টর
ওতপ্রোতভাবে জড়িত । যে সমস্ত ফ্যাক্টর পোনা মজুদ ঘনত্বের ওপর প্রভাব বিস্তার করে পোনা
মাছের বৃদ্ধির হারকে প্রভাবিত করে তা নিচে আলোচনা করা হলো:
১.পানির স্রোত:
নিয়মিত জোয়ার ভাটা
হয় এমন পানিতে অথবা একমুখী প্রবাহমান স্রোতের পানিতে মাছের মজুদ ঘনত্ব বাড়িয়ে খাচায়
মাছ চাষে ভাল ফল পাওয়া যায়। এভাবে স্রোতশীল নদীর পানিতে ৬মিটারx৩মিটারx১.৫মিটার আকারের খাঁচায় ১০০০টি মনোসেক্স তেলাপিয়া মজুদ করে চাষ করার মাধ্যমে প্রত্যাশিত
উৎপাদন পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে ২৫ গ্রাম ওজনের বা তার চেয়ে বড় মনোসেক্স তেলাপিয়া মজুদ
করতে হবে। থাইল্যান্ড বা মালোশিয়ায় প্রতি ঘনমিটার আয়তনে ৬০টি পোনা মজুদ করা হয়;
কিন্তু ডাকাতিয়া মডেল খাঁচায়
নদীর স্রোত ও গভীরতার বিবেচনায় প্রতি ঘনমিটার আয়তনে ৩৩ টি পোনা মজুদ করা হচ্ছে।
২. জালের ফাঁসের আকার:
খাঁচায় ব্যবহৃত জালের
ধরনের ওপরও মজুদ ঘনত্ব কম বেশি হয় এবং উৎপাদনও কমবেশি হবে। জালের ফাঁসের আকার বড় হলে
ঐ খাঁচায় মজুদ ঘনত্ব বাড়ানো যেতে পারে। কারণ জালের ফাঁসের আকার (mesh size)
বড় হলে খাঁচার ভিতরে পানির
প্রবাহ বেশী হবে এবং গ্রহন উপযোগী অক্সিজেনের পরিমানও বেড়ে যাবে। অন্য দিকে জালের ফাঁসের
আকার ছোট হলে খাঁচার ভিতরে পানির প্রবাহ কম হয়, ফলে গ্রহনযোগ্য অক্সিজেন সরবরাহও কম হয়ে থাকে। এজন্য পোনার মজুদ ঘনত্ব খুব বেশি বাড়ানো
সম্ভব হয় না। খাঁচায় জালের ফাঁসের আকার ০.৭৫ ইঞ্চি হিসাবে ব্যবহার করে লক্ষ্মীপুরের
মেঘনা নদীর রহমতখালী চ্যানেলে এবং চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে স্থাপিত খাঁচাগুলোতে ভালো
ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।
৩. পানির গভীরতা:
খাঁচা স্থাপনে পানির
গভীরতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। খাড়ি অঞ্চল অথবা পানির গভীরতা বেশি
এমন অঞ্চল খাঁচায় মাছ চাষের জন্য অধিক উপযোগী এবং খাঁচায় গভীরতা বৃদ্ধিসহ মজুদ ঘনত্ব
বাড়ানো সম্ভব হয়। অন্যদিকে যে স্থানে পানির গভীরতা কম সেখানে খাঁচা স্থাপন করে মাছ
চাষে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয় এবং মজুদ ঘনত্ব কমিয়ে ফেলতে হয় ফলশ্রুতিতে ফলে মাছের
উৎপাদন কম হয়। জোয়ার ভাটার প্রভাব সম্বলিত নদীতে ভাটার সময় যদি পানি আশংকাজনক হারে
কমে যায়, তবে মজুদকৃত মাছ পর্যাপ্ত
অক্সিজেন হতে বঞ্চিত হয়। এছাড়া উচ্ছিষ্ট খাবার খাঁচার তলদেশের কাদায় জমা হয় এবং এ্যামোনিয়া
গ্যাসের সৃষ্টি হয়, যা খাঁচার মাছের জহন্য
বিরূপ প্রভাব ফেলে।
৪. প্রত্যাশিত আকারের
মাছ উৎপাদন:
খাঁচায় মাছ চাষের
একটি সুবিধাজনক দিক হলো প্রত্যাশা অনুযায়ী যে কোনো আকারের মাছ উৎপাদন। বাজারে কত ওজনের
মাছের চাহিদা রয়েছে সেদিক বিবেচনায় রাখতে হবে এবং তার ওপর ভিত্তি করে মাছের মজুদ ঘনত্ব
নির্ধারন করে মাছ চাষ করতে হবে। যদি প্রতি ঘনমিটারে ৩৩ টি মাছ মজুদ করা যায় তাহলে ৬
মাসে গড়ে ৫০০ গ্রাম ওজনের তেলাপিয়া পাওয়া যাবে।
যদি ৩০০ গ্রাম ওজনের মনোসেক্স তেলাপিয়ার চাহিদা থাকে এবং ঐ পরিমাণ উৎপাদন পাওয়ার টার্গেট
থাকে তবে প্রতি ঘনমিটারে ৪০-৫০ টি মাছ মজুদ করতে হবে। এমনকি ২০০ গ্রাম ওজনের মাছের
চাহিদা ও বাজার মূল্য যদি আশানূরূপ হয় তাহলে মজুদ ঘনত্ব বাড়ানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৫. খাদ্যের গুণগতমান:
খাদ্যের গুণগতমান
ভাল হলে মাছের মজুদ ঘনত্ব বাড়ানো যায় এবং মাছের উৎপাদনও বেড়ে যায়; অন্যদিকে যদি খাদ্যের গুণগতমান ভাল না হয় তাহলে
মাছের মজুদ ঘনত্ব বাড়ানো যাবে না এবং মাছের উৎপাদনও তুলনামূলকভাবে হ্রাস পাবে। বর্তমানে
খাঁচায় মাছ চাষের ক্ষেত্রে ৩২% প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার দিয়ে প্রতি ঘনমিটারে ৬ মাসে ১৫
কেজি মনোসেক্স তেলাপিয়া উৎপাদন করা হচ্ছে। যদি ৩২% প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের পরিবর্তে
৩৫-৪০% প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োগ করা যায় তাহলে আনুপাতিক হারে মাছ মজুদের ঘনত্ব
বাড়ানো সম্ভব হবে এবং মাছের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। তবে এেেত্র খাঁচায় যেন কোন প্রকার
দূষনের প্রভাব না পড়ে সেদিকে ল্য রাখতে হবে।
৬. বিনিয়োগ মত্রা:
খাঁচায় আধুনিক পদ্ধতিতে
মাছ চাষ ব্যয়বহূল ও বানিজ্যিক চাষ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। একাজে উদ্যোক্তাকে অবশ্যই
সকল প্রকার ব্যয় বহন করার মতা থাকতে হবে। সাময়িক ভাবে লোকসানের বিষয়ে বিচলিত না হয়ে
চাহিদা অনূযায়ী বিনিয়োগ করে যেতে হবে। একাজে অংশগ্রহনকারী উদ্যোক্তাগনকে প্রযুক্তিগত
কারণে প্রথম দিকে বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে হয় এবং পরবর্তিতে ধীরে ধীরে বানিজ্যিক
ভাবে লাভবান হতে হয়।
খাঁচায় মাছ চাষের
মজুদ ঘনত্ব:
প্রবাহমান নদী অথবা
অন্যান্য জলাশয় যেখানে প্রতিনিয়ত স্রোত বহমান
থাকে সেসব জলাশয়ে নিম্নলিখিত ছক অনুযায়ী মজুদ ঘনত্ব নির্ধারণ করতে হবে।
মাছের প্রজাতি মজুদ সংখ্যা
মনোসেক্স তেলাপিয়া ১০০০
সরপুঁটি ১০০০
পাংগাস ৮০০
কার্পিও ৫০০
গ্রাস কার্প ৫০০
কালি বাউশ ৫০০
শিং ৮০০
মাগুর ৮০০
কৈ ৮০০
খাঁচার আকারঃ ২৭ ঘনমিটার
হিসেবে ধরে
বিল, হাওর, বাঁওড় ইত্যাদি জলাশয়ে খাঁচায় মাছ চাষের মজুদ ঘনত্ব:
বিল, হাওড়, বাঁওড় ইত্যাদি জলাশয় যেখানে স্রোত থাকে না সে সব জলাশয়ে নিম্নলিখিত ছক অনুযায়ী
মজুদ ঘনত্ব নির্ধারণ করা যেতে পারে:
মাছের প্রজাতি মজুদ সংখ্যা
মনোসেক্স তেলাপিয়া ৬০০-৭০০
সরপুঁটি ৬০০-৭০০
পাংগাস ৪০০-৫০০
কার্পিও ৩০০-৪০০
গ্রাস কার্প ৩০০-৪০০
কালি বাউশ ৩০০-৪০০
শিং ৪০০-৫০০
মাগুর ৪০০-৫০০
কৈ ৪০০-৫০০
খাঁচার আকারঃ ২৭ ঘনমিটার
হিসেবে ধরে
খাদ্য প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনা
খাঁচায় মাছ চাষে উৎপাদন
ব্যয়ের প্রায় দুই তৃতীয়াংশই খাদ্য বাবদ খরচ হয়। খাঁচায় সূষম সম্পূরক খাদ্য প্রযোগের
গুরুত্ব নিম্নরুপ:
- মাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে
- অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ করা যায়
- মৃত্যু হার অনেকাংশে কমে যায়
- অল্প সময়ে অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়
- রোগাক্রান্ত হওয়ার আশংকা হ্রাস পায়
- নির্ধারিত সময়ে কাংখিত আকারের মাছ উৎপাদন করা সম্ভব
খাঁচায় ব্যবহার উপযোগী
সম্পূরক খাদ্য:
সুষম সম্পূরক খাদ্যে
সকল প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে এবং তা ব্যয় বহুলও বটে। এ জন্য এ সব খাদ্যের অপচয় রোধে সতর্কতার সাথে খাদ্য প্রয়োগ করা
প্রয়োজন। প্রবাহমান নদীতে খাঁচায় মাছ চাষের জন্য ভাসমান খাদ্য ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক।
এতে একদিকে মাছের চাহিদা অনুযায়ী খাবার প্রদান করা যায় এবং খাদ্যের অপচয় রোধ করা সম্ভব
হয়। বর্তমানে বেসরকারি উদ্যোগে মাছের খাদ্য বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করার জন্য বহু খাদ্য
কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এসকল কারখানায় মাছের প্রজাতি ও বয়সের উপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয়
মাত্রার পুষ্টি উপাদান বিশেষত: আমিষের মাত্রা নিশ্চিত করে, বিভিন্ন আকারের দানাদার ভাসমান খাদ্য তৈরি করা হচ্ছে।
তন্মধ্যে মেগা ফিডস, আফতাব ফিডস্ লিমিটেড,
সিপি বাংলাদেশ, সিটি গ্রুপ, ইত্যাদি কোম্পানীর খাদ্য উল্লেখযোগ্য। চাষী বা খামার
পর্যায়ে ভাসমান দানাদার খাদ্য তৈরি করা একদিকে যেমন অত্যাধিক ব্যয়বহুল অন্যদিকে এর
জন্য পৃথক শিল্প ব্যবস্থাপনারও প্রয়োজন। এ কারণেই বাণিজ্যিকভাবে অনেক সংখ্যক খাঁচায়
তেলাপিয়া মাছ চাষের বেলায় নিজেদের তৈরি পিলেট খাদ্য ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়। বরং
বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ভাসমান খাদ্য ব্যবহার করাই উত্তম।
খাঁচায় মাছ চাষের
ক্ষেত্রে খাদ্য নির্বাচনে আরো একটি বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। তা হলো খাদ্যের
দানার আকার। সচরাচর মাছের মুখের আকারের সাথে
সামঞ্জস্য রেখে খাদ্য দানার আকার নির্বাচন করা হয়। আমরা যে ওজনের তেলাপিয়া খাঁচায় মজুদ
করি প্রাথমিকভাবে তাদের জন্য ন্যূনতম ৩ মিলিমিটার আকারের দানাদার খাদ্য প্রদান করতে
হবে। আর যখন তেলাপিয়ার ওজন ৫০ গ্রাম হবে তখন তাদের জন্য খাবারের আকার বৃদ্ধি করে ৫ মিলিমিটার আকারের দানাদার ভাসমান খাবার প্রদান
করতে হবে।
খাদ্য প্রয়োগ মাত্রা
ও কৌশল:
মাছের খাদ্য গ্রহণ
মাত্রা নির্ভর করে পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলীর অনুকূল অবস্থার ওপর। তাপমাত্রা বাড়লে
মাছের বিপাকীয় কার্যক্রমের হার বেড়ে যায়, ফলে খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। একইভাবে পানির তাপমাত্রা কমে গেলে খাদ্য চাহিদাও
কমে যায়। পানির পিএইচ মাত্রা ৭.০ – ৮.৫ পর্যন্ত থাকলে ও পানিতে দ্রবিভূত অক্সিজেনের
মাত্রা বাড়লে মাছের খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বিপরীতভাবে পিএইচ ও অক্সিজেনের মাত্রা
কমে যাবার কারণে খাদ্য গ্রহণ কমে যায়। এ ছাড়াও মাছ ছোট অবস্থায় তুলনামূলক বেশি খাবার
গ্রহণ করে থাকে।
খাঁচায় মাছ চাষে খাদ্য
প্রয়োগ করতে হয় চাহিদার ভিত্তিতে। খাঁচায় ভাসমান খাদ্য ব্যবহার করাই শ্রেয়;
কেননা খাদ্য প্রয়োগ করা হলে খাদ্যের কোন অংশ অব্যবহৃত
থেকে গেল কিনা তা তাৎণিকভাবে পর্যবেণ করা সম্ভব। প্রতিটি খাঁচায় দিনের নির্ধারিত সময়ে
অল্প অল্প করে খাদ্য সম্পূর্ন খাঁচায় ছিটিয়ে প্রদান করা হয়। একবার প্রদানকৃত খাদ্য
খাওয়া হয়ে গেলে আবার কিছু খাদ্য প্রদান করা হয়; এভাবে যখন দেখা যায় যে, খাদ্য গ্রহনের প্রবনতা অনেকটা কমে এসেছে অর্থাৎ
খাদ্য গ্রহণ করছে তবে অনেকটা অলসভাবে; এমনকি দু চারটি খাদ্য দানা ভাসমান থেকে যাচ্ছে তখন ঐ খাঁচায় খাদ্য প্রদান বন্ধ
করতে হবে। অর্থাৎ মাছের চাহিদা মাত্রা পূরণের কাছাকাছি পর্যন্ত খাদ্য প্রদান করা হয়।
এভাবে প্রতিটি খাঁচায় একের পর এক যথেষ্ট সময় পর্যবেণ করে খাদ্য প্রদান করতে হবে। মনোসেক্স
তেলাপিয়াকে খাঁচায় মজুদের পর হতে বাজারজাত করার পূর্ব পর্যন্ত (৩০০-৩৫০ গ্রাম ওজন/প্রতিটি)
যে খাদ্য প্রদান করা হয় তাতে দৈহিক ওজনের বিবেচনায় খাদ্য প্রয়োগের মাত্রা ৮% – ৩% এর
মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। আর তেলাপিয়ার ওজন যখন ৫০০ গ্রাম অতিক্রম করে তখন তাদের দেহে অধিক পরিমান চর্বি জমা হয়, ফলে খাদ্য গ্রহনের প্রবনতা অনেক হ্রাস পায়। এরা
তখন তাদের দেহ ওজনের ১% এরও কম খাদ্য গ্রহন করে। তখন দিনে তাদেরকে একবার মাত্র খাদ্য
প্রয়োগ করলেই চলে।
দৈনিক খাদ্য প্রয়োগ
শিডিউল (feeding schedule):
বিভিন্ন বয়সের তেলাপিয়াকে
দিনে বিভিন্ন শিডিউলে খাদ্য প্রদান করতে হয়। সচরাচর যে বয়সের বা আকারের মনোসেক্স তেলাপিয়া
পোনা মজুদ করা হয় (২৫ – ৩০ গ্রাম ওজনের) তাদের জন্য দিনে ৪ বার খাদ্য প্রদান করা প্রয়োজন।
আর তাদের ওজন ৫০ গ্রাম অতিক্রম করলে দৈনিক ৩ বার খাদ্য প্রদান করতে হবে এবং যখন তেলাপিয়া
১০০ গ্রাম ওজন অতিক্রম করবে তখন তাদেরকে দৈনিক
২ বার খাদ্য প্রদান করতে হবে।
মাছের দৈহিক আকারের
ভিত্তিতে খাঁচায় বর্ননা অনুযায়ী যতবারই খাদ্য প্রয়োগ করা হোক না কেন, ল্য রাখতে হবে যেন একবার খাদ্য প্রদানের পর ছোট
মাছের ক্ষেত্রে ৩ ঘন্টা এবং বড় মাছের ক্ষেত্রে ৪ ঘন্টা ব্যবধানের আগে দ্বিতীয়বার খাদ্য
প্রদান করা না হয়; অর্থাৎ প্রতি দুই
বার খাদ্য প্রদানের মাঝে ন্যূনতম ৩ ঘন্টা (ছোট মাছের ক্ষেত্রে) এবং ৪ ঘন্টা (বড় মাছের
ক্ষেত্রে) ব্যবধান নিশ্চিত করেই তবে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
খাঁচায় খাদ্য প্রয়োগে
বিবেচ্য বিষয়:
মেঘলা আবহাওয়ায় বা
বৃষ্টির দিনে বা নিুচাপের সময় খাঁচায় খাদ্য প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে কিংবা
কমিয়ে দিতে হবে।
যে কোন কারণে খাঁচার
মাছের ওপর পীড়ন (stress) সৃষ্টি হলে খাদ্য
প্রয়োগ কমিয়ে দিতে হবে এবং প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে। অন্যথায় খাদ্য অপচয় হয়ে পরিবেশ
বিনষ্ট করবে।
যে সকল জলাশয়ে জোয়ার
ভাটার প্রভাব সুস্পষ্ট সেখানে জোয়ার ভাটার অন্তর্বতীকালীন সময়ে যখন পানির উচ্চতা হ্রাস
পায় এবং পানি একেবারে স্থির হয়ে যায় তখন খাদ্য প্রয়োগ না করে বরং যখন জোয়ার বা ভাটার
মৃদু স্রোত থাকে তখন খাদ্য প্রদান করাই উত্তম।
ডাকাতিয়া নদীতে খাঁচায়
ভাসমান খাদ্য প্রয়োগ
নমুনায়ন ও গ্রেডিং
নমুনায়ন:
খাঁচায় মাছ চাষের
ক্ষেত্রে নমূনায়ণ করা হয় মাছের দৈহিক বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যগত অবস্থা, খাঁচার জাল ইত্যাদি পর্যবেণের জন্য। এজন্য মাঝে
মাঝে নির্ধারিত বিরতিতে প্রতিটি খাঁচার নীচে আড়াআড়ি ভাবে বাঁশ দিয়ে টেনে মাছগুলোকে
খাঁচার এক পার্শ্বে জড়ো করে মাছের সার্বিক
অবস্থা পর্যবেণ করা হয়।
গ্রেডিং:
যদিও খাঁচাতে পোনা
মজুদের সময় যথাসম্ভব একই আকারের পোনা এক খাঁচায় মজুদ করা হয়। সময় অতিক্রমের সাথে সাথে
মাছগুলোর মধ্যে দৈহিক বর্ধণ হারের তারতম্য দেখা যায়। ফলে খুব দ্রুত প্রতিটি খাঁচাতে
পোনা আকার বিভিন্ন হয়ে যায়। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও যথাযথ নিয়মে খাদ্য প্রদানের মাধ্যমে
চেষ্টা করা হয় মাছের আকারের বৈষম্য সর্বনিম্ন রাখতে। এরপরও প্রতিটি মাছের ভিন্ন ভিন্ন
দৈহিক বর্ধণ প্রবনতা, খাদ্য গ্রহণের দতা
ইত্যাদির কারণে সময়ের সাথে সাথে দৈহিক বর্ধণে তারতম্য সস্পষ্ট হতে থাকে। এজন্য নিদৃষ্ট
সময় পর পর প্রতিটি খাঁচা থেকে মাছ বাছাই করে বড় ও ছোট মাছ গুলোকে গ্রেডিং করে ভিন্ন
ভিন্ন আকারের মাছকে ভিন্ন ভিন্ন খাঁচায় স্থানান্তর
করা হয়। এভাবে বিভিন্ন আকারের মাছ থেকে সম আকারের মাছ বাছাই করে নির্দিষ্ট খাঁচায় মজুদ
করার পদ্ধতিই হলো গ্রেডিং বা বাছাইকরণ।
বাছাই বা গ্রেডিং
এর প্রয়োজনীয়তা:
- প্রতিটি মাছ যাতে সমভাবে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে,
- প্রতিটি মাছের দৈহিক বৃদ্ধি যাতে সমভাবে লাভ করে ফলশ্রুতিতে সার্বিক উৎপাদন বেশী হয়
- ভাল বাজার মূল্য লাভ করা যায়
- গ্রেডিং করতে গেলে সাথে সাথে মাছের সার্বিক অবস্থাও পর্যবেণ করা যায়
- দৈহিক বৃদ্ধির সাথে খাদ্য প্রদান সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা যাচাই করা যায়
- সঠিকভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করা যায়
গ্রেডিং করতে গিয়ে
নিয়মিত পরিচর্যার অংশ হিসাবে খাঁচার জালের কোন স্থান ছিঁড়ে গেলে তা মেরামত করা যায়
বাছাই এর সময় ও পদ্ধতি:
যে খাঁচাগুলোর মাছ
বাছাই বা গ্রেডিং করা হবে তার পূর্বের দিন ঐ নির্ধারিত খাঁচাগুলোর মাছকে খাদ্য প্রদান
বন্ধ রাখতে হয় যাতে গ্রেডিংকালে স্থানান্তর করতে গিয়ে মাছের শারিরীক পীড়নে মারা না
যায়। নদীতে যেহেতু পানি সর্বদা প্রবাহমান থাকে অথবা জোয়ার ভাটার কারণে পানির স্তর উঠানামা
করতে থাকে কাজেই শুধুমাত্র দিনের তাপমাত্রার দিকে ল্য রেখে সকাল বেলা কিংবা পড়ন্ত বিকালে
মৃদু সূর্যালোকে খাঁচার মাছ বাছাই করতে হবে। যখন নদীর পানি বেশী প্রবাহমান থাকে তখন
খাঁচার পানি দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে, এ সময় খাঁচার মাছ গ্রেডিং করা উপযোগী। মাছ গ্রেডিং শুরু করার আগেই হাফ ড্রামে ৮০
লিটার পানি দিয়ে তাতে সামান্য পরিমান (০.২৫ গ্রাম) ম্যালাকাইট গৃন মিশাতে হবে। মাছ
গ্রেডিং করে স্থানান্তর করার জন্য লম্বা হাতল বিশিষ্ট হ্যান্ড নেট ব্যবহার করতে হবে।
হ্যান্ড নেটের আকার বুঝে স্বল্প সংখ্যক মাছ একেবারে খাঁচা থেকে উঠিয়ে নৌকাতে রাখা ড্রামের
পানিতে বাছাই করে রাখতে হবে। এভাবে ৫/৭ মিনিটের মধ্যে ছোট মাছ হলে ৬০/৭০টি আর বড় মাছ
হলে ২০/২৫টি মাছ নিয়ে প্রত্যাশিত খালি খাঁচায় দ্রুত স্থানান্তর করতে হবে। এভাবে ধীরে
ধীরে বড় মাছগুলো বাছাই করে অন্য খাঁচায় নিয়ে গেলে ছোটগুলো আগের খাঁচায় রয়ে যাবে। এভাবে
একের পর এক সব খাঁচার মাছ বাছাই করে ফেলতে হবে। পাশাপাশি ৩টি খাঁচার মাছ পর পর কিংবা একই সাথে বাছাই করলে মাছগুলোকে বেশী দূরত্বে
স্থানান্তর করতে হয় না। ফলে মাছের ওপর স্থানান্তর জনিত চাপ তুলনামুলকভাবে অনেকাংশে
কম হয়। এক খাঁচা থেকে অন্য খাঁচার দূরত্ব বেশী হলে তখন ড্রামে পানি নিয়ে বাছাই করতে
হবে।
একটি খাঁচায় মাছের
মজুদ এবং তা থেকে আকার ভিত্তিক মাছ বাছাইয়ের ধারাবাহিক বিবরণ:
খাঁচার মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ
আরহণযোগ্য মাছের আকার
ওজন, বাজার চাহিদা, চাষের মেয়াদ ও ব্যবস্থাপনার ধরণ বিবেচনায় রেখে মাছ
আহরণ ও বাজারজাতকরণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। খাঁচার সব মাছ একত্রে বাজারজাতের উপযোগী
আকার ধারণ করে না। তাই বড় মাছগুলো বাছাই করে বাজারে প্রেরণের জন্য পৃথক এক বা একাধিক
খাঁচায় রাখতে হবে। এতে একদিকে যেমন একই আকারের মাছ গ্রেডিং করার কারণে উপযুক্ত মূল্য
পাওয়া যায়, অন্যদিকে ধীরে ধীরে
ছোট মাছগুলো বড় হওয়ার জন্য অতিরিক্ত স্থান ও সময় পাবে। মাছ বাজারে প্রেরণের সময় যদি
মাছের পেটে খাদ্য ভর্তি থাকে তবে মাছের গুণগত মান নষ্ট হওয়াকে তরান্বিত করে। এজন্য
মাছ বাজারে প্রেরণের আগের দিন ঐ খাঁচায় দুপুরের পর খাদ্য প্রদান বন্ধ রাখতে হবে। এতে
বাজারজাতের জন্য প্রেরিত মাছের গুণগত মান অধিক সময় অুন্ন থাকবে।
আহরণপূর্ব বিবেচ্য
বিষয়:
- মাছ আহরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে নিম্নে উল্লেখিত বিয়ষসমূহ বিবেচনা করা প্রয়োজন:
- মাছের আকার ও ওজন
- বাজার দর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ
- বাজার বা ক্রেতা নির্ধারণ
- দ্রুত মাছ বাজারে পৌছানোর জন্য পরিবহন ব্যবস্থা
- বাজারে প্রেরণের আগে মাছ পরিমাপের জন্য উপযুক্ত পরিমাপক যন্ত্র
- মাছ জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাতের জন্য প্লাস্টিক কন্টেইনার বা ড্রাম এর ব্যবস্থা
- দূরের বাজারে মাছ প্রেরণের আগে প্রয়োজনীয় পূর্ব প্রস্তুতি যেমন প্যাকিং, উপযুক্ত পাত্র, বরফ ইত্যাদি
মাছ আহরণ ও বাজারজাত
পদ্ধতি:
মাছ বাজারজাতকরণের
আগের দিন বিভিন্ন খাঁচা হতে বাজারজাত উপযোগী আকারের মাছকে বাছাইয়ের মাধ্যমে বাজারজাতের
জন্য স্থাপিত ভিন্ন খাঁচায় মজুদ করা হয়। যে মাছগুলোকে নির্ধারিত দিনে বাজারে প্রেরণ
করা হবে সেগুলোকে আগের দিন দুপুরের পর আর কোন খাদ্য প্রদান করা হয় না। ফলে বাজারজাতকরণের
পর মাছ মারা গেলেও মাছের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ও গুণগুত মান অধিক সময় পর্যন্ত অূন্ন।
নিকটতম বাজারে উপযোগী পাত্র বা ড্রামে পানিতে পরিমিত সংখ্যায় জীবন্ত সরবরাহ করা হয়
অথবা দূরবর্তী বাজারে বরফ দ্বারা সংরণ করে পাঠানো যায়। আর ধৃত মাছ নিকটবর্তী পাইকারী
বাজারে সঠিক সময়ে ঝুড়িতে করে তাড়াতাড়ি পৌছানো হয়।
মাছ বাজারজাতকরণ:
খাঁচা হতে সাধারণত:
বড় আকারের মাছ বাজারজাত করা হয়। তাই এসব মাছের বাজারমূল্য বেশী হয়। কিন্তু এ মাছগুলো
খাঁচার পাশেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করলে অনেক সময়ই ভাল দাম পাওয়া যায় না। খাঁচায় চাষকৃত
মাছ ভাল দামে বিক্রির জন্য নিম্নলিখিত পদপেগুলো গ্রহন করা যেতে পারে:
- দলীয়ভাবে একত্রে খাঁচায় উৎপাদিত মাছ বিক্রি করা
- জীবন্ত অবস্থায় মাছ বিক্রি করা
- বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময় যখন চাহিদা বেশি ও সরবরাহ কম থাকে সে সময়ে মাছ বিক্রি করা
- মধ্য স্বত:ভোগীদের কাছে বিক্রি না করে নিজেই খুচরা বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করা।
খাঁচা থেকে মাছ আহরণ
নিয়মিত পরিচর্যা ও
স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
খাঁচায় মাছ চাষের
উৎপাদন অনেকাংশে নির্ভর করে নিয়মিত খাঁচা ব্যবস্থাপনার উপর। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে
খাঁচায় মাছের উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব।
- নিয়মিত খাবার প্রয়োগ
- আচরণ পর্যবেণ
- জাল পর্যবেণ
- মৃত মাছ অপসারণ
- তিকর প্রাণির আক্রমণ
- উচ্ছিষ্ট খাদ্য
- জলাশয়ে খাঁচার অবস্থান পর্যবেণ
- খাঁচার জালের ফাঁস বন্ধ হয়ে যাওয়া
- নৌ চলাচল
- নদীর অস্বাভাবিক স্রোত
- প্রাকৃতিক বিপর্যয়
- খাঁচার মাছকে নিরাপদ রাখা
- পাখির উপদ্রব
- ড্রাম ভাসমান রাখা
- বাঁশের গুণগতমান লক্ষ্য রাখা
- পানির গুণগত মান পর্যবেক্ষণ
নদীতে ভাসমান খাঁচাতে
যেহেতু সার্বণিক পানি পরিবর্তন হতে থাকে ফলে খাঁচার মাছ প্রতিনিয়ত অক্সিজেনসমৃদ্ধ নূতন
পানির পরিবেশ লাভ করে। তাই নদীতে খাঁচায় মাছে রোগ দেখা দেয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। তবে
শীতের শুরুতে নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদের ন্যায় প্রচলিত কিছু রোগ দেখা দিতে পারে।
আবার বর্ষার শুরুতে যখন কৃষি জমি বিধৌত কীটনাশকসমৃদ্ধ পানি নদীতে এসে পতিত হয়,
তখন খাঁচার মাছের গায়ে লাল
দাগ, ছত্রাকজনিত রোগ, তরোগ ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
ডাকাতিয়া নদীতে স্থাপিত খাঁচাগুলোতে এখন পর্যন্ত শুধু সামান্য লাল দাগ ও কদাচিৎ ছত্রাকজনিত
রোগ দেখা দেয়। এ দুটির যে কোন রোগ দেখা দিলে
রোগের মাত্রার বিবেচনায় তাৎণিক ভাবে নিুবর্ণিত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়:
(ক) ফরমালিন ও মিথিলিণ
ব্লু দ্রবণে গোসল:
যেহেতু পুকুরের মাছের
ন্যায় খাঁচার মাছে তার পরিবেশে তথা পানিতে ঔষধ প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না তাই এখানে খাঁচার
মাছকে খাঁচা থেকে বাইরে এনে সুবিধাজনক পাত্রে ফরমালিণ দ্রবণে গোসল করানো হয়। খাঁচায়
রোগ দেখা দিলে খাচার মাছকে ফরমালিণ দ্রবণে গোসল করানোর পদ্ধতি নিম্নরুপ:
- সুবিধাজনক বড় পাতিলে কিংবা একটি হাফ ড্রামে ৮০ লিটার পানি নিতে হবে
- তাতে ২০ মিলিলিটার (মাছের গায়ে ত বা দাগ কম হলে) ফরমালিন মেশাতে হবে; আর ত বা দাগ বেশি হলে ২৫ মিলিলিটার ফরমালিন মেশাতে হবে
- এর সাথে ১ গ্রাম মিথিলিন ব্লু যোগ করে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
- ড্রামের দ্রবনে একটি সুবিধাজনক আকারের জাল সেট করতে হবে।
- এবার খাঁচা থেকে প্রতিবারে ৪০/৫০ টি করে তেলাপিয়া মাছ নিয়ে ড্রামের পানিতে রতি জালে ছেড়ে দিতে হবে।
- রোগের তীব্রতা বেশি হলে ৫ মিনিট এবং কম হলে ৩ মিনিট গোসল করাতে হবে। এরপর ড্রামের জালটি ধরে মাছগুলোকে নূতন খাঁচায় স্থানান্তরিত করতে হবে।
- এভাবে একটি খাঁচার অর্ধেক মাছ (৪০০ থেকে ৫০০ টি) গোসল করানো হয়ে গেলে বাকী অর্ধেক তেলাপিয়াকে গোসল করানোর আগে ড্রামের পানিতে পূনরায় কিছু পরিমান ফরমালিন (৫ মিলিলিটার) এবং সামান্য পরিমান (এক চিমটি) মিথিলিন ব্লু যোগ করে নিতে হবে।
- এভাবে সমস্ত খাঁচার মাছকে গোসল করাতে হবে। রোগের তীব্রতা বুঝে প্রয়োজনে ৭ দিন পর আবার মাছগুলোকে ফরমালিন ও মিথিলিন ব্লু দ্রবণে গোসল করাতে হবে।
(খ) এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো:
ফরমালিণ দ্রবণে গোসল
করানোর দিন থেকেই খাঁচার মাছকে ভাসমান খাদ্যের
সাথে এন্টিবায়োটিক মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। খাদ্যের সাথে এন্টিবায়োটিক খাওয়ানোর পদ্ধতি:
প্রতি ১০০ কেজি খাদ্যের
সাথে ১০০ গ্রাম এন্টিবায়োটিক পাউডার মিশাতে হবে।
খাঁচার একবেলার জন্য
প্রয়োজনীয় পরিমান ভাসমান খাদ্য পরিস্কার মেঝেতে ঢেলে নিতে হবে।
১ বস্তা বা ২৫ কেজির
খাদ্যে এন্টিবায়োটিক পাউডার ১ থেকে ১.৫ লিটার
পানিতে গুলতে হবে।
এন্টিবায়োটিক দ্রবণকে
মেঝেতে ছড়ানো খাদ্যের ওপর সমভাবে স্প্রে করে
ক তাপমাত্রায় ৫/৬ ঘন্টা শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর খাদ্যগুলো ব্যবহার করা যাবে।
প্রতিদিনের খাদ্যে
প্রতিদিন এন্টিবায়োটিক মিশাতে হবে। এভাবে ক্রমাগতভাবে দশদিন এন্টিবায়োটিক খাওয়াতে হবে;
কোন দিন দৈবক্রমে বাদ গেলে
আবার হিসাব করে দশদিনের কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ
বিশেষ করে দণি এশিয়ার কয়েকটি খাঁচায় মাছ চাষ করে রপ্তানীর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে
উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। খাঁচা ব্যবস্থাপনায় মাছ চাষের এ প্রযুক্তি দিন দিন উৎকর্ষ
লাভ করছে। আমাদের দেশে এ প্রযুক্তি এখনো একেবারে
প্রাথমিক পর্যায়ে। চাঁদপুর ও লীপুর জেলায় বিগত
কয়েক বছরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সংগতি রেখে আধুনিক প্রযুক্তিতে খাঁচায় মাছ চাষ
চলছে। এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকা ও পারিপার্শি¦কতায় বিভিন্নমূখী যে সকল ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়েছে সেগুলোকে কয়েকটি
শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:
কারিগরী ঝুঁকি
- মানসম্পন্ন পোনার অভাব
- উপযুক্ত খাবারের অপ্রতুলতা
- রাুসে প্রাণীর আক্রমণ
- পরজীবির আক্রমণ
- কাঁকড়া দ্বারা জাল কাঁটা
- ঘোলাত্ব
- খাঁচার জালের গবংয বন্ধ হয়ে যাওয়া ঘবঃ ভড়ঁষরহম
- নেভিগেশন সমস্যা
- প্রাকৃতিক ঝুঁকি
- জলোচ্ছ্বাস
- বন্যা
- খরা
- ঝড়
- পাহাড়ী ঢল
- সামাজিক ঝুঁকি
- চুরি
- শত্রুতা
- হিংসা
- জলাশয় ব্যবহারের অধিকার
- পরিবেশগত ঝুঁকি:
- কলকারখানার বর্জ্য
- জলজ আগাছা পঁচন
- পাট পঁচানো
- কীটনাশকের প্রভাব
- ঝুঁকি সমুহের সম্ভাব্য সমাধান:
- নিরাপদ জায়গায় খাঁচা স্থাপন
- নেভিগেশন সমস্যা
- সার্বণিক পর্যবেণ
- সমাজের লোকজনের সচেতনতা বৃদ্ধি
- পানির গভীরতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে খাঁচা স্থানান্তর
তেলাপিয়া মাছের রোগ
ও প্রতিকার
- সরকারী জলাশয়ে খাঁচা স্থাপনের পূর্বে যথাযথ কতর্ৃৃপরে লিখিত অনুমতি নিতে হবে।
- জলজ আগাছা কিংবা শিল্প এলাকার বর্জ্য নির্গত অঞ্চল হতে নিরাপদ দূরত্বে খাঁচা স্থাপন করতে হবে।
- যে কোন উৎস থেকেই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মাছের সম্পূরক খাদ্য সংগ্রহ করা হোক না কেন তার গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। অন্যথায় প্রত্যাশিত উৎপাদন মারাত্নকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
- ঝোঁপঝাড় মুক্ত এলাকায় খাঁচা স্থাপন করতে হবে এবং পাখির উপদ্রব থেকে রার জন্য খাঁচার উপরে ঢাকনা জাল দিয়ে আবরণ দিতে হবে।
- নদীর ভাসমান আবর্জনা বা কচুরীপানা খাঁচায় আটকে গেলে তা সাথে সাথে পরিস্কার করে ফেলতে হবে।
- কাঁকড়া, কচ্ছপ ইত্যাদি জলজ প্রাণী যাতে জাল কাটতে না পারে এমন জাল দ্বারা খাঁচা তৈরী করতে হবে।
- রাতের বেলায় খাঁচার স্থাপনায় বৈদ্যুতিক বাতি/ভাসমান বয়াতে বাতি দিয়ে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
লক্ষ্মীপুরের রহমতখালী
চ্যানেলে ক্রমবর্ধমান খাঁচার ইউনিট খাঁচায় মাছ চাষের আর্থিক বিশ্লেষণ
খাঁচায় মাছ চাষ মূলত:
উন্মুক্ত বা বদ্ধ জলাশয় ব্যবস্থাপনার একটি কৌশল। আমাদের দেশের সামাজিক ও পরিবেশগত অবস্থা
বিবেচনা করে দেশের কোথাও কোথাও চাষীরা পুকুরেও এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। খাঁচায় মাছের
উৎপাদন কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর নির্ভর করে না বরং অনেকগুলো বিষয়কে বিবেচনায়
রেখে উৎপাদন পরিকল্পনা করতে হয়। উৎপাদন পরিকল্পনা ও খাঁচা ব্যবস্থাপনার ওপরেই এর সফলতা
নির্ভর করে। নিম্নে ডাকাতিয়া মডেলে খাঁচায় তেলাপিয়া চাষের ফলাফলের ভিত্তিতে খাঁচা স্থাপনা
ব্যয়, উৎপাদন ব্যয় এবং একটি উৎপাদন
চক্রে উৎপাদনের চিত্র দেখানো হলো:
১০ টি খাঁচার (৬ মিটারx৩ মিটারx১.৫মিটার) সার্বিক অর্থনীতি:
১। খাঁচা স্থাপনের
স্থায়ী খরচ:
খাঁচার ড্রাম,
ফ্রেম ব্যতিত শুধু জাল দ্বারা
একটি খাঁচা তৈরীর খরচ:
সর্বমোট উৎপাদন খরচ
= ২৭৭৬৭৫.০০ টাকা
মাছের মৃত্যুহার
= ৫% = ৫০০ টি
মোট উৎপাদিত মাছ
= ৯৫০০ টি = ৪০০০ কেজি
মোট বিক্রয় = ৪০০০
কেজি x ১২০.০০=৪৮০০০০.০০ টাকা
নীট লাভ = বিক্রয়
মূল্য – উৎপাদন খরচ = ৪৮০০০০.০০ – ২৭৭৬৭৫.০০=২০২৩২৫.০০ টাকা
মুনাফার হার: ৪২.১৫%
৬ মাসের ফসল হিসাবে
খাঁচায় বছরে ২টি ফসল উৎপাদন করা যাবে। তাহলে ১ বছরে উৎপাদন খরচ ও আয় হবে নিুরূপ:
মোট উৎপাদন খরচ =
২৭৭৬৭৫.০০x২= ৫৫৫২৫০.০০ টাকা
মোট বিক্রয় = ৪০০০
কেজি x ১২০.০০ x ২ = ৯৬০০০০.০০ টাকা
নীট লাভ = ৬,
৬৫,০০০.০০ – ৫৫৫২৫০.০০ = ৪০৪৭৫০.০০ টাকা
1 comments:
বদ্ব খালে কি খাচায় মাছ চাষ করা সম্ভব ?
মন্তব্য করুন