একের পর এক বিভিন্ন যান্ত্রিক প্রযুক্তি
উদ্ভাবন করে দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে চলেছেন বগুড়ার রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ এর সত্ত্বাধিকারী
আলহাজ্ব আমির হোসেন। যা দেখেন অবিকল তাই বানিয়ে ফেলতে জুড়ি নেই আমির হোসেনের। অথচ কোন
পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার নন তিনি। নেই কোন তাত্ত্বিক কারিগরি জ্ঞান। স্রেফ হাতে-কলমের অভিজ্ঞতা
ও উদ্ভাবনী মেধা কাজে লাগিয়ে তিনি একের পর এক বিভিন্ন যন্ত্র তৈরি করে যাচ্ছেন। তার
এই কারিগরি কারখানার প্রতিষ্ঠাতা তার বাবা আব্দুল জব্বার ওরফে ধলু মেকার যিনিও উদ্ভাবনী
প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তিনি একটি সাইরেন যন্ত্র তৈরি
করেছিলেন। আমির হোসেন এরই মধ্যে কৃষিকাজে ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করে
দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন।
১৯৭৮ সালে এসএসসি পাশ করে আমির বাবার
ব্যবসায় যোগ দেন। তিনি ১৯৮৮ সালের ১৩ নবেম্বর মাসে মারা যাওয়ার পর রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং
ওয়ার্কসপের দায়িত্ব নেন তার ছেলে আমির হোসেন। ধলু মেকারের ৮ ছেলে- মেয়ের মধ্যে আমির
হোসেন চতুর্থ। পিতার মৃত্যুর পর থেকেই শুরু হয় গবেষণা। শুরু হয় বিভিন্ন মেশিন তৈরির
কল্পনা। প্রকৌশলী আমির হোসেন ২০০৩ সালে বুয়েট থেকে বিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী ও জিটিজেড
থেকে কৃষি সামগ্রী উদ্ভাবনের উপর প্রশিক্ষণ নেন। এ কাজে আমির হোসেনকে সাহায্য করেন
তার দ্বিতীয় মেয়ে আসমা খানম আশা ও তৃতীয় মেয়ে তাহিয়া খানম। তার প্রথম মেয়ে আমনিরা খানম
এলএলবিতে লেখাপড়া করলেও মাঝে মাঝে তিনিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আমিরের মেয়ে আসমা
খানম আশা বুয়েট থেকে এই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর পদকও পেয়েছেন। আমির হোসেন পাথর ভাঙা মেশিন
উদ্ভাবন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক আবিস্কার
তাকে নিয়ে গেছে অনেক উচ্চাসনে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নতুন নতুন
আবিস্কারের জন্য তাগাদা দেয়া হয়। এতে তিনি আরও উৎসাহিত হয়ে নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কারে
সক্ষম হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আমির হোসেন।
তার উদ্ভাবিত যন্ত্রগুলো হল:
১. জৈবসার ও মিশ্র সার তৈরির মেশিন
২. ইট তৈরির স্বয়ংক্রিয় মেশিন
৩. জমি নিড়ানি যন্ত্র
৪. ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র
৫. ইট ভাঙ্গার মেশিন
৬. শস্য ঝাড়াই যন্ত্র
৭. বীজ বপন যন্ত্র
৮. ধান কাটা মেশিন
৯. চিকন সেমাই তৈরির মেশিন
১০. গুটি ইউরিয়া সার তৈরির মেশিন
১১. জ্বালানিবিহীন গাড়ি
তার এমন, সব আবিষ্কারের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘রিভার্স ইঞ্জিনিয়ার’ পদবী পেয়েছেন। আমির হোসেনের বিভিন্ন কৃষিযন্ত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তার চিকন
সেমাই মেশিনের তৈরি সেমাই বগুড়ার চিকন সেমাই হিসেবে বাংলাদেশের সর্বত্র বিক্রি হচ্ছে।
আমির হোসেন তার গাড়ির নাম দিয়েছেন ‘রফ-রফ তাহিয়া’ বা সুন্দর ও দ্রুততম
যান। ২৫০ কেজি ওজনের এই গাড়ি পরিবেশ সহায়ক। চালকাসহ পাঁচজন আরোহী নিয়ে ঘণ্টায় ৭০-৮০
কিলোমিটার বেগে চলবে জ্বালানিবিহীন এ গাড়ি। গাড়িটি অচিরেই বাজারে আনায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ
আমির হোসেন।
যোগাযোগ : ০১৭১৪-৪২২৪৬৭
0 comments:
মন্তব্য করুন