শাহরিয়ার সাগরের বিস্ময়কর উদ্ভাবন

ইপিএস (ইমার্জেন্সি পাওয়ার সাপ্লাই)। বিদ্যুৎবিহীন সময়ে নামমাত্র খরচে ছোট্ট একটি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে ঘর, অফিস কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আলোকিত করার এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহরিয়ার সাগর।

বিদ্যুৎহীনতার দুর্ভোগ লেগেই থাকে নাগরিক জীবনে। প্রচণ্ড লোডশেডিংয়ে বিদ্যুৎ এই আছে, তো এই নেই। আর এই অবস্থায় বাসা অফিস কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে একান্ত বাধ্যতামূলকভাবে সবাই ব্যবহার করছেন আইপিএস।

একটি বাসায় দুটি ফ্যান বাতির জন্য একটি আইপিএস লাগাতে খরচ হয় সর্বনিম্ম ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু এই বাজারে বিদ্যুৎহীনতার দুর্ভোগ থেকে মুক্ত থাকতে চট্টগ্রামের সাউদার্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র শাহরিয়ার সাগর উদ্ভাবন করেছেন নামমাত্র খরচের ইমার্জেন্সি পাওয়ার সাপ্লাই (ইপিএস) সিস্টেম।

মাত্র ১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারি আর কিছু ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের সাহায্যে এই ইপিএস বিদ্যুৎবিহীন একটি বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা আলোকিত রাখবে। সচল রাখবে নানা ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি।

বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার এক সেকেন্ডের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে এই সিস্টেম। শাহরিয়ার সাগরের উদ্ভাবনকৃত এই ইপিএস পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে। ইপিএস ব্যবহারকারীরাও এর ব্যবহার করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

ইপিএস সিস্টেমের উদ্ভাবক শাহরিয়ার সাগর রাইজিংবিডিকে জানান, এক বছরের গবেষণায় ইমার্জেন্সি পাওয়ার সাপ্লাই (ইপিএস) সিস্টেমটি তিনি উদ্ভাবন করেছেন। তার এই উদ্ভাবনী গবেষণায় সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন তারই ছাত্র চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাজ্জাদ বিন জাহিদ।
নিজের উদ্ভাবিত ইপিএস সিস্টেমের সঙ্গে উদ্ভাবক শাহরিয়ার সাগর (ডানে) 
এবং তার সহযোগী সাজ্জাদ বিন জাহিদ


ইপিএস সিস্টেম ও এর কার্যকারিতা সম্পর্কে শাহরিয়ার সাগর বলেন, এই সিস্টেমটি আইপিএসর বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। একটি আইপিএস সিস্টেম লাগাতে যেখানে ২৫/৩০ হাজার টাকা খরচ হয় সেখানে একটি ইপিএস বাসা অফিস কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপন করতে সর্বোচ্চ ব্যয় হবে মাত্র চার হাজার টাকা। বিদ্যুৎ আসার পর আইপিএস চার্জ হতে অনেক বিদ্যুৎ খরচ হয়। কিন্তু ইপিএসের চার্জিংয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচের কোন ঝঁকি নেই। একাধিক বড় ব্যাটারির সাহায্যে চালিত আইপিএস স্থাপন করতে যেভাবে বাসা বা অফিসে বড় একটি স্থান দখল করে নেয়। ইপিএস সিস্টেমের ক্ষেত্রে বড় স্থান দখলের কোন সুযোগই নেই।

সাগর বলেন, ইপিএস সিস্টেমে মাত্র একটি ১২ ভোল্টের একটি ছোট ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। বাসা, অফিস কিংবা দোকানের যে কোন ছোট্ট স্থানে এই ব্যাটারিটি স্থাপন করা যাবে। বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় এই ইপিএস থেকে কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।

ইপিএস সিস্টেম দিয়ে চালানো যাবে একাধিক এলইডি লাইট, ফ্যান। ইপিএস সিস্টেম থেকে পাওয়া যাবে বিদ্যুতের চেয়েও উজ্জ্বল আলো। চার্জ করা যাবো মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস।


শাহরিয়ার সাগর রাইজিংবিডিকে জানান, তার উদ্ভাবিত ইপিএস সিস্টেমটির নামকরণ তিনি নিজেই করেছেন। এই সিস্টেমটি এখন পরীক্ষামূলকভাবে রাঙ্গামাটি শহরে কমপক্ষে ১৫টি দোকান, অফিস এবং বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিনের নতুন গবেষণায় সিস্টেমটি তিনি আপগ্রেড করছেন। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ইপিএস সিস্টেম-এ আরো প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় এই ইপিএস সিস্টেমকে যাবতীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চালানোর উপযোগী করতে সক্ষম হবেন বলে জানান তিনি।


উল্লেখ্য, শাহরিয়ার সাগর বর্তমানে চট্টগ্রামের মেহেদীবাগস্থ সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে থ্রিপল ই বিভাগ থেকে সমাপনি পরীক্ষা দিয়ে এখন ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছেন। মেধাবী এই শিক্ষার্থী নিজেই প্রকৌশল বিভাগ অধ্যায়নরত হলেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্বাবিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা তার কাছ থেকে টিউশন গ্রহণের পাশাপাশি নানা তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন।