শেকৃবিতে চাষ হচ্ছে নতুন সবজি টমাটিলো

যুগের আলোচিত মরণঘাতী ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ডায়রিয়া, কন্সটিপেশন নামক বিভিন্ন রোগ নিরাময়কারী গুণসমৃদ্ধ নতুন এক ধরনের ফল তথা সবজি চাষ হচ্ছে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি)।

নতুন এ শস্যের নাম টমাটিলৌ, যা আমাদের দেশীয় টমেটোর সোলানেসি গোত্রের একটি সবজি। এ টমাটিলৌ শুধু রোগ নিরাময়কারী নয়, এটি কীটনাশক ও বিষমুক্ত একটি পরিবেশবান্ধব সবজি। দেশে প্রথমবারের মতো চাষ করা এ টমাটিলৌ কোনো কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার ছাড়াই উৎপাদন করা হয়েছে। ফলে এ শস্য উৎপাদনে একদিকে পরিবেশ যেমন অপরিকল্পিত বিষাক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের হাত থেকে রক্ষা পাবে, তেমনি কৃষকের উৎপাদন খরচও অনেক কমে যাবে। আর এ নতুন শস্য টমাটিলৌর অরিজিন মেক্সিকোতে।
শেকৃবির জেনেটিক্স অ্যান্ড প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নাহিদ জেবা দেশে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মাঠে এ সবজি চাষ করেন। এতে দেখা যায় সম্পূর্ণ দেশীয় টমেটোর আদলে টমাটিলৌ চাষ করা হলে দেশি টমেটোর চেয়ে এক মাস আ
গেই এতে ফ্লাওয়ারিং (ফুল ধরা) শুরু হয়। ফলে এর হার্বেস্টিংও (ফসল সংগ্রহ) অল্প সময়ে করা সম্ভব। গবেষক নাহিদ জেবা গবেষণার মাঠে ৩০টি জাত ও লাইনের টমেটো নিয়ে গবেষণা করেন। এতে মেরুন, হলুদ, কমলা ও পিঙ্কসহ বিভিন্ন কালারের পাশাপাশি পিয়ার, পাপায়া, গ্লোব ও জায়ান্ট শেপসহ বিভিন্ন আকৃতির টমেটোর গবেষণায় সফলতা লাভ করেন।

টমাটিলৌ শস্যটি দেখতে খোসাযুক্ত ফোসকা বেগুনের মতো। পুরো ফলটি এক ধরনের শক্ত খোসা দ্বারা আবৃত থাকে। এটি দেশীয় টমেটোর চেয়ে আকারে কিছুটা বড় হয়। টমাটিলৌর ভেতরের অংশ পেয়ারার মতো ভরাট থাকে। পরিপক্ব টমাটিলৌর গা গাঢ় সবুজ বর্ণের হয়। এ ছাড়া এটি দেশীয় টমেটোর মতো এক গুচ্ছে না হয়ে আলাদাভাবে জন্মে। এর একটি গাছে আড়াই থেকে তিন কেজি টমাটিলৌ পাওয়া যায়।

টমাটিলৌ সালাদ, সস ও তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। বিশেষ করে নতুন এ শস্যটি কাঁচা অবস্থায় সুস্বাদু ফলের মতো খাওয়া যায়।

টমাটিলৌ সম্পর্কে প্রফেসর ড. নাহিদ জেবা বলেন, ‘আমাদের দেশে এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি শস্য। সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও কীটনাশকহীন ভাবে উৎপাদন করা যায় বলে এটি একটি পরিবেশবান্ধব ফসল। তা ছাড়া খোসাযুক্ত হওয়ায় পাখি, পোকামাকড় ও বিভিন্ন রোগবালাই থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যায়। ফলে উৎপাদন খরচও অনেক কমে যায়। এ ছাড়া এর উৎপাদন প্রতি হেক্টরে প্রায় ৬০ টন। যা নিজ দেশে উৎপাদনের চেয়ে দ্বিগুণ। এ ছাড়া এর ঔষধি গুণাগুণ হলো এটি ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধী। বিশেষ করে এর মধ্যে ফ্ল্যাভিনয়েড থাকায় এটি লাং ও মুখ গহ্বরের ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে এতে পেকটিনের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি অ্যান্টিকন্সটিপেশন, অ্যান্টিডায়রিয়া উপাদান হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি রক্তে গ্লুকোজ ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে এ শস্যের অধিক চাহিদা থাকায় এটি রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।


নতুন এ শস্য নিয়ে শেকৃবির উপাচার্য প্রফেসর মো. শাদাত উল্লা বলেন, ‘টমাটিলৌ নামে নতুন এ শস্যটি নানা গুণসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আমাদের দেশে ব্যাপক সাড়া জাগাবে। দেশি টমেটোর মতো সালাদ, সস ও সবজি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

সূত্র: লেখাপড়া.কম।

1 comments:

Unknown said... Udyokta

টমাটিলৌ চাষ এবং গবেসনা হচ্ছে যেনে খুব খুশি হলাম । এর ইংলিশ নাম Golden vary বরিশালে বলে লোলো, পটকা । বরিশালের যে কোন যায়গায় এই গাছ জন্মাতে দেখা যায় ।