জিরা একটি মূল্যবান মশলা। বিশ্বে গুটি কতেক দেশে এর চাষ হয়ে
থাকে। এর মধ্যে আছে ইরান, ভারত, মিসর ইত্যাদি। বাংলাদেশে পরীক্ষামুলকভাবে বিভিন্ন
জেলায় এর শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া জিরা চাষের জন্য খুবই অনুকুল।
এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে জিরার
চাষ করে সফল হয়েছেন ভোলার চাষি উৎপল চন্দ্র দাস, মোছলেহউদ্দিন, বাবুল, রায়হান, বেলায়েত, মনির, আঃ লতিফ, মোঃ আকবর হোসেন,
মোঃ হানিফ প্রমুখ।
জিরার বীজ: জানা যায়,
বাজারে যে জিরা পাওয়া যায়
সেই জিরা বীজই শুকনা অবস্থায় বপন করে এই জিরা চাষ করা সম্ভব। অথবা
পাশের দেশ ভারত থেকেও উন্নতমানের জিরা বীজ সংগ্রহ করা যায়।
জিরা চাষ: জিরা ভিজানো যাবে
না এবং পরিমিত জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে মাটি ভালোভাবে গুঁড়া করে জিরা বুনতে হয়।
প্রতি ১ শতাংশ জমিতে টিএসপি ৬শ গ্রাম, এমওপি ৩শ গ্রাম এবং জৈব সার ৩শ গ্রাম দিতে হবে। জিরার বীজ বুনার পর মাটি ভালভাবে
সমান করে মিশিয়ে দিতে হয়। বীজ বুনার পর চারার বয়স ১৫/২০ দিন হলে ১ বার ও ফুল আসার পর
১ বার পানি দিতে হবে। বীজ বোনার ২৫-৩০ দিন পর জমির আগাছা তুলে ফেলতে হয় এবং মাটি আলগা
করে দিতে হয়। ১০ থেকে ১৫ টন জৈব সার ব্যবহার করতে হয় জ
মিতে। বৃষ্টি হওয়ার পর হেক্টরপ্রতি ২০ কেজি নাইট্রোজেন এবং ২০ কেজি ফসফরাস সার ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এটি চাষের জন্য মাঠে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা প্রয়োজন। তবে লক্ষ রাখতে হবে, পানিতে যাতে চারা উপড়ে না যায়। জিরার বীজ সাধারণত বপন করার ৯ থেকে ১২ দিনের মধ্যে অঙ্কুরোদ্গম হয়। মাটির আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে জমিতে পানি জমে না থাকে। ১০০/১২০ দিনের মধ্যে কৃষক জিরার ফসল ঘরে তুলতে পারবে। গাছ কেটে অথবা মূলসহ উৎপাটন করে দুই দিনের মধ্যে শস্য আলাদা করে রোদে শুকাতে হয়।
মিতে। বৃষ্টি হওয়ার পর হেক্টরপ্রতি ২০ কেজি নাইট্রোজেন এবং ২০ কেজি ফসফরাস সার ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এটি চাষের জন্য মাঠে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা প্রয়োজন। তবে লক্ষ রাখতে হবে, পানিতে যাতে চারা উপড়ে না যায়। জিরার বীজ সাধারণত বপন করার ৯ থেকে ১২ দিনের মধ্যে অঙ্কুরোদ্গম হয়। মাটির আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে জমিতে পানি জমে না থাকে। ১০০/১২০ দিনের মধ্যে কৃষক জিরার ফসল ঘরে তুলতে পারবে। গাছ কেটে অথবা মূলসহ উৎপাটন করে দুই দিনের মধ্যে শস্য আলাদা করে রোদে শুকাতে হয়।
ফলন: ভালভাবে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ৮০০-১০০০ কেজি ফলন পাওয়া
যায়।
রোগবালাই: জিরায় সাধারণত শুয়াপোকা, জাবপোকা, সাদা গুঁড়ো রোগ, ধসা রোগ, ঝিমিয়ে পড়া রোগ ইত্যাদি
রোগবালাই দেখা দেয়।
ভোলার মনপুরার উপজেলার
১০টি স্পটে পরীক্ষামূলকভাবে জিরার চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে মনপুরা ইউনিয়নে ২টি,
হাজির হাট ইউনিয়নে ৪টি,
উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নে ২টি
ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নে ২টি স্থানে জিরার চাষ করা হয়েছে। সাদা জিরা, মিষ্টি জিরা (মৌরি), কালিজিরা, মোতি, ধনিয়া, পোস্তদানা (রাস্কুনী)
সব ফসলই উপকূলের এই দ্বীপে চাষ হচ্ছে।
চাষি উৎপল চন্দ্র
দাস জানান, বাজার থেকে ১শ গ্রাম
সাদা জিরা এনে ২ শতাংশ জমিতে বপন করেন তিনি। কোন রোগ-বালাই ছাড়াই যেভাবে জিরার গাছ
বেড়ে উঠছে এবং ফুল দেখা যাচ্ছে তাতে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাজার দর ও লাভ: জিরা চাষে স্বল্প ব্যয়ে অধিক আয়ের পাশাপাশি
রোগ-বালাইয়ের প্রকোপও কম। এর দাম বেশি। তাই লাভের সম্ভাবনাও বেশি। ১ শতাংশ জমিতে জিরা চাষ করতে ২শ টাকা খরচ হয়েছে।
আর ১ শতাংশ জমিতে জিরা উৎপাদন করা যাবে ২ থেকে আড়াই কেজি। যার বাজার মূল্য হবে ১ হাজার
টাকা।
উপজেলা কৃষি অফিসার
মোঃ মাহবুবার রহমান বলেন, জিরা চাষ করে অনেক
চাষি স্বাবলম্বী হয়েছেন। জিরা চাষিদের কৃষি বিভাগ সার্বিক সহযোগিতা করছে।
নওগাঁর পত্নীতলায়
একটি বেসরকারি কৃষি খামারে জিরা চাষের সফলতা দেখে এলাকার চাষিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া
পড়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে পত্নীতলা উপজেলার পুঁইয়া গ্রামে ব্রাদার্স এগ্রো নামের
একটি প্রাইভেট কৃষি খামারে প্রথমবারের মতো জিরা চাষ শুরু হয়। ওই গ্রামের তিনভাই দীপক
চক্রবর্তী, পুলক চক্রবর্তী এবং
অশক চক্রবর্তীর যৌথ ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা ব্রাদার্স এগ্রো কৃষি খামারের ২২ শতক
জমিতে ভারত থেকে পাটনা জাতের জিরার বীজ সংগ্রহ করে প্রথমবারের মতো জিরা চাষ শুরু করা
হয়। পুলক চক্রবর্তী জানান, প্রথমবার তাদের খামারের
ওই পরিমাণ জমিতে হালচাষসহ সার, বীজ ও পরিচর্যায় ১২
হাজার টাকা খরচ হয়। এ পরিমাণ টাকা খরচের মাধ্যমে চাষাবাদকৃত ২২ শতক জমি থেকে ৪ মাসের
মাথায় ৮৫ কেজি জিরা উৎপাদন হয়। তিনি জানান, যশোর সদর, টাঙ্গাইল সদর, শেরপুর সদর, দিনাজপুরের মিঠাপুকুর ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার
কয়েকজন বীজ ব্যবসায়ীর কাছে ৮০ কেজি জিরা বীজ হিসেবে বিক্রি হয় ৪০ হাজার টাকায়। জিরা
চাষে সফলতা পেয়ে এ প্রাইভেট কৃষি খামারে এ বছর ৫০ শতক জমিতে জিরা চাষ শুরু করা হয়েছে।
ফরিদপুরের জনৈক চাষী
মোঃ আমিনুজ্জামান এর চাষ করেছেন সম্প্রতি। তার এ চাষ এটাই প্রমাণ করলো যে, আমাদের দেশেও সহজে এর চাষ করা যায়। তিনি মাস কয়েক
আগে পার্শ্ববর্তী একটি দেশ থেকে সামান্য পরিমাণে জিরার বীজ সংগ্রহ করেন। সেই বীজ প্রায়
আট শতাংশ জমিতে লাগিয়ে জিরা উৎপাদনে সক্ষম হন প্রায় ২০ কেজি। তিনি এক সময় বিদেশে ছিলেন।
শিক্ষিতও। বাংলাদেশে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করেছেন। তিনি বলেন, আমার ভাল বেতনে চাকরি করার সুযোগ হয়নি। ব্যবসায়ও
তেমন সফল হতে পারিনি। আমিনুজ্জামানের এক আত্মীয় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে চাকরি
করেন। তিনি আমিনুজ্জামানকে চাষাবাদ করার পরামর্শ দেন। বলেন, তোমার তো পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে প্রায় ১৫ একর জমি
আছে। এই জমিতে বছর জুড়েই নানা ধরনের ফসল চাষ করা যায়। তাতে আর্থিক কষ্টও দূর হবে। তার
পরামর্শে আমিনুজ্জামান বছর কয়েক আগে আলু, ধনিয়া, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি চাষ করেন। এগুলো চাষ করে তিনি ভালই
লাভ পান।
আমিনুজ্জামান পত্রিকায়
জিরা চাষ নিয়ে লেখা একটি প্রতিবেদন পড়েছেন। এটি পড়ার পর থেকে তিনি মনে করেন তিনিও এর
চাষ করবেন। যেমন প্রতিজ্ঞা তেমনি তার বাস্তবায়ন। যে প্রতিবেদনটি তিনি পড়েছিলেন সেটি
লেখেছেন গাজীপুর কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের এক ব্যক্তি। আমিনুজ্জামান উক্ত গবেষণা কেন্দ্রের
এক লোক মারফত ৫০০ টাকা ব্যয়ে প্রায় আড়াইশ গ্রাম জিরার বীজ আনান বিদেশ থেকে। তবে বীজ
পেতে একটু দেরি হয়ে যায়। সময়মত এ বীজ হাতে পেলে আরো ভাল ফল পেতেন বলে তিনি জানান।
জমিতে সেচ দিয়ে তা
রোপন করা হয় গত ১ ডিসেম্বর। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তার এ সাফল্য দেখে রীতিমতো অবাক হয়েছেন
জেলা মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। তারা বলেন, ফরিদপুর জিরা উৎপাদনের জন্য অতি সম্ভাবনাময় একটি
স্থান। কারণ এখানে এর চাষে প্রায় সব ধরনের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। এ অনুকূল পরিবেশকে
কাজে লাগাতে পারলে এর চাষ করা হবে দেশের অন্যান্য স্থানেও। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা আরো
বলেন, বাণিজ্যিকভাবে জিরা চাষের
ক্ষেত্রে ফরিদপুর হতে পারে একটা মডেল। শুধু-ফরিদপুর নয় বরং গোটা দেশই এক সময় এর চাষের
মডেল হতে পারবে।
নওগাঁ জেলার পত্নীতলা
উপজেলা সদরের অশোক চক্রবর্তী। তিনি তার নিজের ৮ শতাংশ জমিতে জিরা চাষ করে বীজ হিসেবে
বিক্রি করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভ করেছেন। অশোক চক্রবর্তী মনে করেন তিনি বাংলাদেশে
দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে জিরা চাষ করেছেন।নওগাঁ কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক
এস এম নুরুজ্জামান জানান, আমাদের দেশে জিরা
চাষের ব্যাপকতা নেই। তবে তিনি মনে করেন এ দেশে জিরা চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে
জিরা চাষ করলে দেশে জিরা আমদানির ওপর চাপ কমে যাবে। ফলে বাজারে এর দামও সহনীয় পর্যায়ে
থাকবে।
নড়াইল পৌরসভার ডুমুরতলা
গ্রামের জিয়াউর রহমান নামে এক কৃষক কৌতুহলবশত ৬ শতক জমিতে জিরার চাষ করে চমক সৃষ্টি
করেছেন। তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে মিশর থেকে একশ’ গ্রাম বীজ এনে বপণ
করেছিলেন। এতে তার খরচ হয় ৮ হাজার টাকা। আর ফসল ওঠার আগেই তার ক্ষেতের জিরার দাম হচ্ছে
৮০ হাজার টাকা। জিরা চাষের এমন খবর শুনে বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জিয়াউর রহমানের জিরার
ক্ষেতে ভিড় করছেন এবং বীজ সংগ্রহ করে চাষের আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
0 comments:
মন্তব্য করুন