কয়েক শ হাঁসের বাচ্চা ব্রুডার হাউসে (নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রার ঘর) লাইটের চারপাশে কিলবিল করছে। এগুলো এক দিনের বাচ্চা। এখান থেকে বাচ্চা বিক্রি করা হয়, আবার চিক শেডেও (বাচ্চা পরিচর্যা ছাউনি) নেওয়া হয়। এখানে আছে সাত, ১৫ ও ৩০ দিন বয়সের বাচ্চা। এসব হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জে বাংলাদেশ সরকারের কেন্দ্রীয় হাঁস প্রজননকেন্দ্রের চিত্র।
এ দেশের বিভিন্ন জাতের হাঁসের প্রায় সবই আছে এখানে। যেমন, রুডি শেলডাক, ম্যালার্ড, পিনটেইল, পান্তামুখী বা খুন্দে হাঁস, বালিহাঁস বা কটন টিল, পিয়ং হাঁস বা গ্যাডওয়াল হাঁস, লালশির হাঁস, পাতিহাঁস বা দাগা ঠোঁট হাঁস, সরালি হাঁস বা হুইসলিং টিল।
হাঁসের উন্নতজাত বাড়ানো, মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সারা দেশে হাঁস চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য করা হয়েছে কেন্দ্রীয় হাঁস প্রজননকেন্দ্র।
খামার থেকে প্রজননকেন্দ্রকেন্দ্রীয় হাঁস প্রজননকেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আবদুল ওয়াহাব বলেন, ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা হাঁস ও মুরগির খামারটি ১৯৮৬ সালে কেন্দ্রীয় হাঁস প্রজননকেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়। এই কেন্দ্র চায়না বেইজিং জাতের হাঁস এনে এদেশের পরিবেশে অভ্যস্ত করে তুলেছে। এছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বাছাই করে দেশি হাঁসের জাত এনে আরও উন্নত হাঁসের জাত গড়ে তুলেছে তারা।
লম্বা লম্বা টিনশেড, একদিকে লোহার জাল দিয়ে ঘেরা বারান্দা। ছাউনির (শেড) ভেতর ধানের তুষের দুই ইঞ্চি পরিমাণের বিছানা করা আছে হাঁসগুলোর ঘুমানোর জন্য। বারান্দায় বানানো আছে কৃত্রিম পুকুর, পুকুরে পানি আছে হাঁসেরা খাওয়া, গোসল এই একই পানিতে সারে। এমন বেশ কয়েকটি ছাউনি আছে, একেক ছাউনিতে একেক জাতের ২০০ করে হাঁস ও হাঁসা রাখা আছে। প্রজননের জন্য ছয়টি হাঁসের জন্য একটি করে হাঁসা থাকে। এখানে সবচেয়ে অভিনব জাতের যে হাঁস আছে সেগুলোর নাম জিনডিং হাঁস। এরা খুব কষ্টসহিঞ্চু ও এদের পালন পদ্ধতিও খুব সহজ। এরা বছরে ২৫০ থেকে ২৭০টি ডিম দেয়। এদের বিশেষত্ব হলো, এরা লবণাক্ত পানিতে সহজে মানিয়ে নিতে পারে। আছে চীন থেকে আনা বেইজিং হাঁস।
এদের গায়ের রং সাদা ও কালো। চীনের এই হাঁসগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। তবে দেশি কালো জাতের হাঁসগুলো এই প্রজননকেন্দ্রের সবচেয়ে সেরা সংগ্রহ বলে জানান আবদুল ওয়াহাব। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় উপযোগী, উচ্চ মাত্রায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন এই হাঁসগুলো বছরে ২০০ থেকে ২৩০টি ডিম দেয়। এদের মাংসও খুব সুস্বাদু। পেঙ্গুইনের মতো দেখতে এক প্রকারের হাঁস আছে, এই জাতের হাসগুলো খুবই কম ডিম দেয়। এদের গায়ে মাংসও খুব কম থাকে। তার পরও শুধু জাত বাঁচিয়ে রাখতেই এদের এখানে রাখা হয়েছে।
যেভাবে চলছে কেন্দ্রসকাল সাতটায় শুরু হয় কেন্দ্রের কাজ। প্রথমে প্রতিটি ছাউনি দেখে নিতে হয় হাঁসগুলো সব সুস্থ আছে কি না। আবদুল ওয়াহাব বলেন, একটা হাঁস দেখেই বুঝতে পারেন, সেটা অসুস্থ কি না। সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে চলে আসেন হাঁস পরিচর্যাকারী (ডাক অ্যাটেনডেন্ট)।
তাঁরা ডিম সংগ্রহ করেন এবং হাঁসের খাবার দেন। দিনে তিনবার হাঁসের খাবার দেওয়া হয়, সকালে একবার, দুপুর ১২টার সময় একবার আর বিকেল চারটায় একবার। হাঁস সবসময় খাবার খায়। ডিম সংগ্রহ করে হাঁসের জাত অনুযায়ী বিভিন্ন ছাউনির ডিমগুলো আলাদা আলাদাভাবে রাখা হয়। ডিমগুলোকে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় বাচ্চা ফুটানোর ঘরে নিয়ে রাখা হয়। জাত হিসেবে আলাদাভাবে ডিম ফুটানোর ইনকিউবিটরে রেখে দেওয়া হয়। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ডিমগুলো ফুটে যায়। বাচ্চা ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোকে গরম তাপমাত্রার (ব্রুডার হাউস) ঘরে রাখা হয়। সাত দিন পর বাচ্চাগুলোকে বাচ্চা পরিচর্চা ঘরে (চিক শেড) স্থানান্তরিত করা হয়। বাচ্চা পরিচর্যা ঘরে বাচ্চাগুলোকে দুই মাস রাখা হয়। প্রতিটি বাচ্চার জন্য মাসে ৮০ গ্রাম খাবার (স্টল ফিড) দিতে হয়। এরপর হাঁসগুলোকে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ন্ত পরিচর্যা ঘরে (গ্রোয়ার শেড)।
এখানে হাঁসগুলো পরিপক্বতা লাভ করে। পরিচর্যা ঘরে হাঁসগুলো তিন মাস থাকার পর যখন ডিম পাড়ার উপযোগী হয়, তখন তাদের ডিম পাড়ার ঘরে (লেয়ার শেড) স্থানান্তরিত করা হয়।
ডিম উৎপাদন অক্ষম (কালিং হাঁস) হাঁসকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এখানে এমন হাঁসের মূল্য ৭০ টাকা। কেন্দ্রীয় হাঁস প্রজননকেন্দ্রে প্রক্রিয়াজাত হাঁস কিনতে পাওয়া যায়। পাখনা ছাড়ানো (ড্রেসিং) সংরক্ষিত (ফ্রোজেন) একটি হাঁসের দাম পড়বে ৮৫ টাকা। আর বাচ্চা কিনতে চাইলে একটার দাম পড়বে ১২ টাকা।
রোগ প্রতিরোধ ও খাবারহাঁসের প্রধান রোগ কলেরা আর প্লেগ। হাঁসকে এসব রোগ থেকে রক্ষা করতে কিছু নিয়ম পালন করা হয় প্রজননকেন্দ্রে। প্রতিদিন হাঁসের ধানের তুষের বিছানায় ব্লিচিং ও ভিরকন এস প্রয়োগ করা হয়।
প্রতিদিন তুষগুলো ওলট-পালট করে দেওয়া হয়। প্রতি চার মাস পর পুরোনো তুষ তুলে দিয়ে নতুন তুষ দেওয়া হয়। কেউ ভেতরে যেতে চাইলে ভাইরাস মুক্তকারী দ্রবণে পা চুবিয়ে তবে যেতে হয়। ধুলাবালির সঙ্গে থাকে বিভিন্ন রোগের জীবাণু।
ধূলিকণার সঙ্গে অণুজীবাণু প্রবেশ ঠেকাতে ও কুকুরের উৎপাত থেকে হাঁসকে রক্ষা করতে প্রজননকেন্দ্রের সীমানাপ্রাচীর আরও উঁচু করা দরকার বলে জানান আবদুল ওয়াহাব। হাঁস পালন খুবই সহজ, প্রকৃতিতে ছেড়ে দিলে তারা নিজেদের খাবার নিজেরাই সংগ্রহ করতে পারে।
হ্রদ, বিল, পুকুর ও মোহনার অগভীর অঞ্চলের তলার কাদা থেকে জলজ উদ্ভিদের বীজ, কন্দ ও শামুকজাতীয় প্রাণী সংগ্রহ করে।
এ দেশের বিভিন্ন জাতের হাঁসের প্রায় সবই আছে এখানে। যেমন, রুডি শেলডাক, ম্যালার্ড, পিনটেইল, পান্তামুখী বা খুন্দে হাঁস, বালিহাঁস বা কটন টিল, পিয়ং হাঁস বা গ্যাডওয়াল হাঁস, লালশির হাঁস, পাতিহাঁস বা দাগা ঠোঁট হাঁস, সরালি হাঁস বা হুইসলিং টিল।
হাঁসের উন্নতজাত বাড়ানো, মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সারা দেশে হাঁস চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য করা হয়েছে কেন্দ্রীয় হাঁস প্রজননকেন্দ্র।
খামার থেকে প্রজননকেন্দ্রকেন্দ্রীয় হাঁস প্রজননকেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আবদুল ওয়াহাব বলেন, ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা হাঁস ও মুরগির খামারটি ১৯৮৬ সালে কেন্দ্রীয় হাঁস প্রজননকেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়। এই কেন্দ্র চায়না বেইজিং জাতের হাঁস এনে এদেশের পরিবেশে অভ্যস্ত করে তুলেছে। এছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বাছাই করে দেশি হাঁসের জাত এনে আরও উন্নত হাঁসের জাত গড়ে তুলেছে তারা।
লম্বা লম্বা টিনশেড, একদিকে লোহার জাল দিয়ে ঘেরা বারান্দা। ছাউনির (শেড) ভেতর ধানের তুষের দুই ইঞ্চি পরিমাণের বিছানা করা আছে হাঁসগুলোর ঘুমানোর জন্য। বারান্দায় বানানো আছে কৃত্রিম পুকুর, পুকুরে পানি আছে হাঁসেরা খাওয়া, গোসল এই একই পানিতে সারে। এমন বেশ কয়েকটি ছাউনি আছে, একেক ছাউনিতে একেক জাতের ২০০ করে হাঁস ও হাঁসা রাখা আছে। প্রজননের জন্য ছয়টি হাঁসের জন্য একটি করে হাঁসা থাকে। এখানে সবচেয়ে অভিনব জাতের যে হাঁস আছে সেগুলোর নাম জিনডিং হাঁস। এরা খুব কষ্টসহিঞ্চু ও এদের পালন পদ্ধতিও খুব সহজ। এরা বছরে ২৫০ থেকে ২৭০টি ডিম দেয়। এদের বিশেষত্ব হলো, এরা লবণাক্ত পানিতে সহজে মানিয়ে নিতে পারে। আছে চীন থেকে আনা বেইজিং হাঁস।
এদের গায়ের রং সাদা ও কালো। চীনের এই হাঁসগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। তবে দেশি কালো জাতের হাঁসগুলো এই প্রজননকেন্দ্রের সবচেয়ে সেরা সংগ্রহ বলে জানান আবদুল ওয়াহাব। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় উপযোগী, উচ্চ মাত্রায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন এই হাঁসগুলো বছরে ২০০ থেকে ২৩০টি ডিম দেয়। এদের মাংসও খুব সুস্বাদু। পেঙ্গুইনের মতো দেখতে এক প্রকারের হাঁস আছে, এই জাতের হাসগুলো খুবই কম ডিম দেয়। এদের গায়ে মাংসও খুব কম থাকে। তার পরও শুধু জাত বাঁচিয়ে রাখতেই এদের এখানে রাখা হয়েছে।
যেভাবে চলছে কেন্দ্রসকাল সাতটায় শুরু হয় কেন্দ্রের কাজ। প্রথমে প্রতিটি ছাউনি দেখে নিতে হয় হাঁসগুলো সব সুস্থ আছে কি না। আবদুল ওয়াহাব বলেন, একটা হাঁস দেখেই বুঝতে পারেন, সেটা অসুস্থ কি না। সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে চলে আসেন হাঁস পরিচর্যাকারী (ডাক অ্যাটেনডেন্ট)।
তাঁরা ডিম সংগ্রহ করেন এবং হাঁসের খাবার দেন। দিনে তিনবার হাঁসের খাবার দেওয়া হয়, সকালে একবার, দুপুর ১২টার সময় একবার আর বিকেল চারটায় একবার। হাঁস সবসময় খাবার খায়। ডিম সংগ্রহ করে হাঁসের জাত অনুযায়ী বিভিন্ন ছাউনির ডিমগুলো আলাদা আলাদাভাবে রাখা হয়। ডিমগুলোকে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় বাচ্চা ফুটানোর ঘরে নিয়ে রাখা হয়। জাত হিসেবে আলাদাভাবে ডিম ফুটানোর ইনকিউবিটরে রেখে দেওয়া হয়। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ডিমগুলো ফুটে যায়। বাচ্চা ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোকে গরম তাপমাত্রার (ব্রুডার হাউস) ঘরে রাখা হয়। সাত দিন পর বাচ্চাগুলোকে বাচ্চা পরিচর্চা ঘরে (চিক শেড) স্থানান্তরিত করা হয়। বাচ্চা পরিচর্যা ঘরে বাচ্চাগুলোকে দুই মাস রাখা হয়। প্রতিটি বাচ্চার জন্য মাসে ৮০ গ্রাম খাবার (স্টল ফিড) দিতে হয়। এরপর হাঁসগুলোকে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ন্ত পরিচর্যা ঘরে (গ্রোয়ার শেড)।
এখানে হাঁসগুলো পরিপক্বতা লাভ করে। পরিচর্যা ঘরে হাঁসগুলো তিন মাস থাকার পর যখন ডিম পাড়ার উপযোগী হয়, তখন তাদের ডিম পাড়ার ঘরে (লেয়ার শেড) স্থানান্তরিত করা হয়।
ডিম উৎপাদন অক্ষম (কালিং হাঁস) হাঁসকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এখানে এমন হাঁসের মূল্য ৭০ টাকা। কেন্দ্রীয় হাঁস প্রজননকেন্দ্রে প্রক্রিয়াজাত হাঁস কিনতে পাওয়া যায়। পাখনা ছাড়ানো (ড্রেসিং) সংরক্ষিত (ফ্রোজেন) একটি হাঁসের দাম পড়বে ৮৫ টাকা। আর বাচ্চা কিনতে চাইলে একটার দাম পড়বে ১২ টাকা।
রোগ প্রতিরোধ ও খাবারহাঁসের প্রধান রোগ কলেরা আর প্লেগ। হাঁসকে এসব রোগ থেকে রক্ষা করতে কিছু নিয়ম পালন করা হয় প্রজননকেন্দ্রে। প্রতিদিন হাঁসের ধানের তুষের বিছানায় ব্লিচিং ও ভিরকন এস প্রয়োগ করা হয়।
প্রতিদিন তুষগুলো ওলট-পালট করে দেওয়া হয়। প্রতি চার মাস পর পুরোনো তুষ তুলে দিয়ে নতুন তুষ দেওয়া হয়। কেউ ভেতরে যেতে চাইলে ভাইরাস মুক্তকারী দ্রবণে পা চুবিয়ে তবে যেতে হয়। ধুলাবালির সঙ্গে থাকে বিভিন্ন রোগের জীবাণু।
ধূলিকণার সঙ্গে অণুজীবাণু প্রবেশ ঠেকাতে ও কুকুরের উৎপাত থেকে হাঁসকে রক্ষা করতে প্রজননকেন্দ্রের সীমানাপ্রাচীর আরও উঁচু করা দরকার বলে জানান আবদুল ওয়াহাব। হাঁস পালন খুবই সহজ, প্রকৃতিতে ছেড়ে দিলে তারা নিজেদের খাবার নিজেরাই সংগ্রহ করতে পারে।
হ্রদ, বিল, পুকুর ও মোহনার অগভীর অঞ্চলের তলার কাদা থেকে জলজ উদ্ভিদের বীজ, কন্দ ও শামুকজাতীয় প্রাণী সংগ্রহ করে।
0 comments:
মন্তব্য করুন