দেশী মাগুরের বৈশিষ্ট্য
অতিরিক্ত শ্বাসনালী থাকায় পানি ছাড়াও
বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। তাই মজা ও পচাপুকুর, ছোট ছোট ডোবা ইত্যাদি জলাশয়ের দূষিত পানিতেও মাগুর মাছের বেঁচে
থাকতে কোনো সমস্যা হয় না।
পুকুরের পানি শুকিয়ে গেলে যে প্রতিকূল
পরিবেশের সৃষ্টি হয়, সে অবস্খায়ও ছোট
ছোট গর্ত করে এ মাছ দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে।
পানি থেকে উত্তোলনের পর দীর্ঘদিন বেঁচে
থাকার কারণে জীবন্ত মাগুর বাজারজাত করা সম্ভব।
দেশী মাগুরের চাষ পদ্ধতি:
পুকুর নির্মাণ :
পুকুরের আয়তন ১০ শতাংশ থেকে ৩৩ শতাংশ
এবং গভীরতা ৮০ থেকে ১২০ সেন্টিমিটার (৩ থেকে ৪ ফুট) হওয়া বাঞ্ছনীয়।
অধিক গভীরতা উৎপাদনের দিক থেকে অসুবিধাজনক।
কেননা,
মাগুর মাছকে শ্বাস নেয়ার জন্য সবসময় উপরে আসতে হয়। এতে অতিরিক্ত
শক্তি ক্ষয়ের কারণে মাছের বৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট বিঘí ঘটে।
পুকুর তৈরি :
পাড়ের ঊর্ধ্বসীমা অবশ্যই সর্বোচ্চ
বন্যার লেভেল থেকে ৩০ সেন্টিমিটার (১ ফুট) উপরে রাখা আবশ্যক। এতে বৃষ্টির সময় মাছ
বুকে হেঁটে বাইরে যেতে পারবে না। তদুপরি বাইরে থেকে সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি মৎস্যভুক প্রাণীও পুকুরে প্রবেশের কোনো সুযোগ
পাবে না।
এ ছাড়া পুকুরের চারদিকের পাড়ের উপর
৩০ সেন্টিমিটার উঁচু নেটের বেড়া দেয়া বাঞ্ছনীয়।
চুন প্রয়োগ :
পুকুরের তলদেশ শুকিয়ে হালকাভাবে চাষ
দিয়ে তলার মাটির পিএইচ পরীক্ষা সাপেক্ষে প্রতি শতাংশে ১ থেকে ১.৫ কেজি হারে চুন প্রয়োগ
করতে হবে।
চুন প্রয়োগের পর পুকুর ১৫ সেন্টিমিটার
(৬ ইঞ্চি) পরিমাণ পানি ঢুকিয়ে সপ্তাহখানেক ধরে রাখা অত্যাবশ্যক।
জৈব সার প্রয়োগ :
চুন প্রয়োগের ৭ থেকে ১৫ দিন পর প্রতি
শতাংশে ১০ কেজি হারে গোবর সার অথবা ৫ কেজি হারে মুরগির বিষ্ঠা ছিটিয়ে দিতে হবে।
অজৈব সার প্রয়োগ :
জৈব সার প্রয়োগের সাত দিন পর পানির
উচ্চতা ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বজায় থাকা অবস্খায় প্রতি শতাংশে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি ও ২০ গ্রাম এমওপি সার ব্যবহার করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, পানির রঙ বাদামি সবুজ, লালচে বাদামি, হালকা সবুজ, লালচে সবুজ অথবা সবুজ থাকাকালীন অজৈব সার (রাসায়নিক) প্রয়োগের
কোনো প্রয়োজন নেই।
পোনা মজুদ :
৫ থেকে ৮ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যরে সুস্খ
সবল পোনা প্রতি বর্গমিটারে ৫০ থেকে ৮০টি হারে পুকুরে ছাড়া যেতে পারে। মে থেকে জুন
মাস মাগুরের পোনা ছাড়ার যথার্থ সময়।
মাগুরের খাদ্য ব্যবস্খাপনা :
প্রাকৃতিক পরিবেশে মাগুর মূলত জলাশয়ের
তলদেশের খাদ্য খেয়ে জীবনধারণ করে। প্রাকৃতিক এই খাদ্যগুলো হচ্ছেন্ধ জলাশয়ের তলার
আমিষজাতীয় পচনশীল দ্রব্যাদি, প্রাণী প্লাঙ্কটন
ও কেঁচোজাতীয় ক্ষুদ্রাকার প্রাণী ইত্যাদি।
সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ :
অধিক ঘনত্বে চাষের ক্ষেত্রে পুকুরে
সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ অপরিহার্য। সহজলভ্য দেশীয় উপকরণ সমন্বয়ে মাগুর মাছের সম্পূরক
খাদ্য প্রস্তুত করা যায়।
এ ক্ষেত্রে চালের কুঁড়া ৪০ শতাংশ, তৈলবীজের খৈল ৩০ শতাংশ এবং শুঁটকি ৩০ শতাংশ একত্রে মিশিয়ে গোলাকার
বল তৈরি করে মাছকে সরবরাহ করা যেতে পারে। তা ছাড়া শামুক ও ঝিনুকের মাংস মাগুরের অত্যন্ত
প্রিয় খাবার। এগুলোও অবাধে খাওয়ানো যায়।
খাদ্যের প্রয়োগমাত্রা :
পুকুরে মজুদকৃত মাছের মোট ওজনের ৫
থেকে ১০ শতাংশ হারে দৈনিক খাদ্যের এক-চতুর্থাংশ সকালে এবং বাকি তিন-চতুর্থাংশ সìধ্যায় প্রয়োগ করতে হবে।
একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, উপরোক্ত প্রযুক্তি মোতাবেক পুকুরে চাষকৃত দেশী মাগুরের ওজন অনধিক
৪ থেকে ৫ মাসে ১৭৫ থেকে ২০০ গ্রামে উন্নীত করা সম্ভব।
0 comments:
মন্তব্য করুন