দেশি মাগুর একটি
পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সুস্বাদু মাছ। রোগীর পথ্য হিসাবে মাছটির চাহিদা রয়েছে অনেক। এক সময়
এই মাছটিকে সহজেই প্রাকৃতিক জলাশয়ে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন দেশি মাগুর আর তেমন পাওয়া
যায় না। তাই মাছটি প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল। তবে আশার কথা হল দেশের মাছ
চাষিরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এই মাছটিকে ফিরিয়ে এনেছে।
ডিম সংগ্রহের পরবর্তী ব্যবস্থাপনা : ডিম সংগ্রহের
পর ডিমগুলোকে সিস্টার্নে নিয়ে যেতে হবে। সিস্টার্নের আকার আয়তকার হতে হবে। দৈর্ঘ্যে
৮ ফুট এবং প্রস্থে ৪ ফুট হলে ভাল। সিস্টার্নের পানির উচ্চতা ৩ ইঞ্চির বেশি দেয়া উচিৎ
নয়। ডিমগুলোকে পাখির পালক দিয়ে আস-ে আস-ে সিস্টার্নে বিছিয়ে দিতে হবে। মাগুরের ডিম
আঠালো আর সেজন্য ডিমগুলোকে এমনভাবে বিছাতে হবে যেন একটি ডিম আরেকটি ডিমের সাথে লেগে
না যায়। তারপর আধা ইঞ্চি পি.ভি.সি. পাইপ ছিদ্র
করে পানির ঝর্ণার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দেশি মাগুরের ডিম ফুটতে কার্প জাতীয়
মাছের চেয়ে সময় বেশি লাগে। তাপমাত্রা ভেদে ৩০ থেকে ৩৬ ঘণ্টা সময় লাগে। এই দর্ীঘ
সময়ে মাগুর মাছের ডিমে ফাঙ্গাস আক্রমণ করতে পারে। ডিমে ফাঙ্গাস আক্রমণ করার সাথে সাথে
ওই ডিমগুলোকে সিস্টার্ন থেকে সাইফনের মাধ্যমে ফেলে দিতে হবে। অন্যথায় অত্যন- দ্রুত
গতিতে এই ফাঙ্গাস এক ডিম হতে অন্য ডিমে ছড়িয়ে গিয়ে সমস- ডিমকে নষ্ট করে ফেলতে পারে।
সেজন্য ডিমগুলোকে সিস্টার্নে ঘন করে দেয়া যাবে না। যথাসম্ভব পাতলা করে দিতে হবে। এই
সময় ঠাণ্ডা পানির ঝর্ণার সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা রাখতে হবে। পানির তাপমাত্রা ২৭/২৮ ডিগ্রি
সেন্টিগ্রেট রাখতে হবে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে_ পানির তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি হলে দেশি মাগুরের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়েও পরে
বাচ্চা মারা যায়। এভাবে ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পর বাচ্চাগুলো আপনা আপনি সিস্টার্নের
কোণায় যেতে থাকবে। সিস্টার্নের কোণায় অবস্থান নিলেই সাধারণত বাচ্চার নিরাপত্তা নিশ্চিত
হয়ে যায়। বাচ্চাগুলো কোণায় অবস্থান নিলে সিস্টার্নের মাঝখানের ময়লা, ধূলাবালি সাইফনের মাধ্যমে পরিষ্কার করে দিতে হবে। এভাবে বাচ্চার বয়স ৭২ ঘণ্টা
পার হলেই এদেরকে কৃত্রিম খাবার দিতে হবে। এই সময় খাবার হিসাবে ছোট জু-প্ল্যাংকটন জীবিত
অবস্থায় সিস্টার্নে দিতে হবে। এই জু-প্ল্যাংকটন পুকুর থেকে জীবিত অবস্থায় ধরে সংগ্রহ
করে তারপর সিস্টার্নে দিতে হবে। সিস্টার্নে দু'দিন এই খাবার খাওয়ানোর পর নার্সারি পুকুরে স্থানান-র করতে হবে।
রেনু উৎপাদনকালীন সতর্কতা : ১. দেশি মাগুরের ব্রুডমাছ
অবশ্যই পরিপক্ক হতে হবে। অন্যথায় সমস- কাজই বিফলে যাবে। ২. চাপ প্রয়োগে ডিম সংগ্রহের সময় খুব বেশি চাপ
দিয়ে ডিম বের করা উচিৎ নয়। তাতে ডিম ভেঙ্গে যেতে পারে। ৩. সিস্টার্নে ডিম যেন অধিক ঘনত্বে দেয়া না হয়
সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ একটি ডিম আরেকটি ডিমের সাথে যেন লেগে না যায়।
৪. সিস্টার্নের ঠাণ্ডা পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। পানির তাপমাত্রা ২৭/২৮ ডিগ্রির
বেশি হলে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলেও মারা যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। এভাবে চাহিদা অনুযায়ী যে কেউ দেশি মাগুরের রেনু
উৎপাদন করতে পারেন। (শেষ) _এ.কে.এম. নূরুল হক ব্রহ্মপুত্র ফিস সিড
কমপ্লেক্স (হ্যাচারি) চর পুলিয়ামারী,শম্ভুগঞ্জ, ময়মনসিং
0 comments:
মন্তব্য করুন