টিস্যুকালচার পদ্ধতিতে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিতে নীরব বিপ্লব


টিস্যু কালচার পদ্ধতির চারা উত্পাদনে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিতে নীরব বিপ্লব এনে দিয়েছে। ইতিমধ্যে এ অঞ্চলের কৃষক আলু, টমেটো, স্ট্রবেরি, কলা ও জারবেরা ফুলের টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উত্পাদিত চারা ব্যবহার করে প্রাপ্ত বাম্পার ফলনে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছে। অনেকে আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছে। রাজশাহীতে সরকারি, বেসরকারি ও বাণিজ্যিকভাবে ১৪টি টিস্যু কালচার ল্যাব গড়ে উঠেছে ।

এ পর্যন্ত বাংলাদেশে গবেষণা, বাণিজ্যিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে শতাধিক টিস্যু কালচার ল্যাব গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে শুধু রাজশাহী জেলায় রয়েছে ১৪টি। যা দেশের অন্য কোন জেলায় নেই। রাজশাহীতে আমান কোল্ড স্টোরেজ, আকাফুজি এ্যাগ্রোটেকনোলজিস, আলো আশা বায়োটেক ল্যাব, বেঙ্গল কোল্ড স্টোরেজ, বায়োটেক, নীগার কোল্ড স্টোরেজ, জেনেটিক সিডস, হাইটেক ২টি, সুপ্রিম সিডস, গ্রিণ গ্লোরি, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বিএডিসি’র টিস্যু কালচার ল্যাব রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ল্যাব আলুর চারা তৈরি করলেও আলো-আশা বায়োটেক ল্যাব স্ট্রবেরি, আখ, কলা, স্টিভিয়া, জারবেরা ফুল, অর্কিড, লিলিয়াম, ক্যাপসিকাম, হর্স রেডিস -এর চারার বাণিজ্যিক উত্পাদন করছে।

রাজশাহীর নামোভদ্রার আব্দুল মোমিন, পবার মোস্তাফিজ ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল, তানোরের আব্দুর রশিদ, মোহনপুরের নূর আলমসহ শত শত মানুষ টিস্যু কালচারের বীজ ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে আলুর আবাদ করছে। টিস্যু কালচারের টমেটো চাষ করছে গোদাগাড়ীর কৃষক মিজান, সালাম ও রহমতসহ শত শত কৃষক। টিস্যু কালচারের কলা চাষ করে রাষ্ট্রীয় সুনাম কুড়িয়েছে পুঠিয়ার কানাই পাড়ার আজাহার আলী ও বিহারীপাড়ার মন্টু। টিস্যু কালচারের স্ট্রবেরি চাষ করেছে রাজশাহী মহানগরীর শালবাগানের লিয়াকত আলী লিকু, পবার তাজিমুল হক, মোহনপুরের আলাই বিদিরপুরের মনিরুজ্জামান মনির। বর্তমানে আকাফুজির গবেষণা প্লটে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উত্পাদিত চারা দিয়ে ২৫ প্রজাতির আলু, জারবেরা ফুল, হর্স রেডিস, ক্যাপসিকাম চাষ করছে গবেষক মতিউর রহমান। মতিউর রহমানের গবেষণা প্লটে পলিসেডে জারবেরা ফুলের বাম্পার উত্পাদন হয়েছে। এবছর একটি গাছ থেকে ২৫/ ৩০টি ফুল এবং ৫/৬টি চারা গাছ পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. এম মনজুর হোসেন বলেন, ‘টিস্যু কালচার হচ্ছে কোন জীব বা উদ্ভিদের অংশকে সরাসরি মানুষের কল্যাণে ব্যবহারের জৈব প্রযুক্তি বা বায়োটেকনোলজির একটি ধাপ। সাধারণত জীবাণুমুক্ত অবস্থায় কোন উদ্ভিদের কচি পাতা, কোষ, মুকুল বা অংশ বিশেষকে পুষ্টির মাধ্যমে আবাদ করাকেই উদ্ভিদের টিস্যু কালচার বলা হয়। টিস্যু কালচার পদ্ধতির মধ্যে কক্ষমুকুল কালচার, মেরিস্টেম কালচার, মাইক্রোপ্রোপাগেশন, ক্যালাস কালচারের মাধ্যমে চারা উত্পাদন করা হয়। টিস্যু কালচার ল্যাবে টেস্ট টিউব, কাঁচের বোতল বা ফ্লাক্সে পুষ্টির মাধ্যমে হরমোন যুগিয়ে নির্ধারিত উদ্ভিদের অনুচারা তৈরী করা হয়। গবেষক ও কৃষকরা ওই অনুচারা বা প্ল্যান্টলেট রোপণ করে ফসল উত্পাদন করছে।

এ ব্যাপারে রাজশাহী কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নূরুল আমিন বলেন, রাজশাহীতে টিস্যু কালচার পদ্ধতির চারার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গত কয়েক বছরে টিস্যু কালচার পদ্ধতির চারায় রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিতে নীরব বিপ্লব সাধিত হচ্ছে। অনেক কৃষক, শিক্ষিত যুবক ও ব্যবসায়ী শুধুমাত্র টিস্যু কালচারের আলু, কলা ও স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।