মাশরুম

মাশরুম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ 
মাশরুম প্যাকেট করা

মাশরুম বাজারজাত করার আগে তা ভালো করে প্যাকেট করতে হবে। কীভাবে মাশরুম প্যাকেট করতে হবে তা জানা দরকার। ওয়েস্টার মাশরুমের পাপড়ি বেশি ছড়ানোর আগেই তুলে ফেলতে হবে। পাপড়ি বেশি ছড়ালে ফেটে যাবে। মাশরুম সংগ্রহের পর

১. গোড়া থেকে সামান্য অংশ কেটে নিন।

২. পলি প্রোপাইলিনের প্যাকেট ছিদ্র করুন।

৩. মাশরুম পলি প্রোপাইলিনে ভরুন।

৪. পলি প্রোপাইলিনের মুখ বন্ধ করুন।

বাজার কোথায়?
আমাদের দেশে মাশরুম সবার কাছে জনপ্রিয় না হলেও কেউ কেউ এখন খাচ্ছে। শহরের বড় বড় হোটেলে ও চাইনিজ হোটেলগুলোতে মাশরুমের চাহিদা রয়েছ। মাশরুম খাদ্য হিসেবে প্রচলিত নয় বলে বেচার জন্য শুরুতে শহরমুখী হতে হবে। শহরের বড় বড় বাজারগুলোতে মাশরুম বিক্রি হয়। এছাড়া বিদেশে এর চাহিদা রয়েছে। তাই, আমাদের দেশে মাশরুম চাষ করে টাকা আয় করা খুবই সহজ। এজন্য যারা বিদেশে সবজি ও কাঁচামাল পাঠায় তাদের সংগে যোগাযোগ করতে হবে। মাশরুম শুকিয়ে বিদেশে পাঠানো যায়। শুকনো মাশরুমের দামও বেশি পাওয়া যায়।

সাবধানতা

মাশরুম চাষে কিছু সাবধানতা মেনে চলতে হয়। বিশেষ করে পরিবেশ ও আবহাওয়ার ওপর সবসময় নজর রাখতে হব।

১. মাশরুম ঘর ও ঘরের বাইরে চারদিকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

২. কোনো ভাবেই বীজ বা স্পনে রোদের আলো লাগতে দেওয়া যাবে না।

৩. সবসময় ঘরটি ঠান্ডা রাখতে হবে৷ ২০-২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা হলে সবচেয়ে ভালো হয়। বৃষ্টির সময় যেমন ঠান্ডা থাকে তেমন তাপমাত্রা হতে হবে।

৪. খুব বেশি গরম পড়লে ঘরের চারদিকে বস্তা ঝুলিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে।

৫. অপরিষ্কার জায়গায় 'মাশরুম ফ্লাই' নামের পোকা মাশরুমের ক্ষতি করে।

৬. মাশরুম ফ্লাই- এ আক্রান্ত মাশরুম আলাদা করতে হব।৷ ঘরটি পরিষ্কার করে ধুতে হবে।

৭. কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না।

৮. তেলাপোকা থেকে সাবধান৷ তেলাপোকা অনেকসময় মাশরুম খেয়ে ফেলে।

৯. বীজ থেকে মাশরুম তুলে নেওয়ার পর ছিদ্র জায়গাটি আবার চেঁছে দিতে হবে। নিয়মমত যত্ন নিলে এতে আবার মাশরুম গজাবে।

মাশরুম ব্যবসা জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য মাশরুম ব্যবসা শুরু করতে হলে কি কি জানতে হবে?

মাশরুম চাষ ও ব্যবসা করতে কী কী লাগে?
এ ব্যবসার বাজার কেমন? মাশরুম চাষ ও ব্যবসা করতে কী কী লাগে?
ব্যবসায়ীক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ করতে হলে একজন কৃষককে নিম্নলিখিত কাজগুলো করেত হবে

মাশরুম ঘর তৈরী
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ
বীজ সংগ্রহ
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান


মাশরুমের ঘর তৈরী
ছায়াযুক্ত স্থান মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী। এজন্য ছায়াযুক্ত ছায়গায় ছন বা বাশেঁর চালা দিয়ে ঘর তৈরী করেত হবে।মাটির দেয়াল দিয়েও ঘর তৈরী করা যায়।বাশের বেড়া দিয়ে দেয়াল দিলে আলো বাতাস ঘের ঢুকে যেতে পারে। মাশরুম খোলা জায়গায় হয় না। এজন্য বাশেঁর বেড়ায় মাটি লেপে দিতে হবে যাতে ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস ঢুকতে না পারে।


চিত্র: মাশরুম চাষের ঘর



প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ

ব্যবসায়ীকভাবে মাশরুম চাষ করেত হলে নিম্নলিখিত জিনিসগুলো সংগ্রহ করতে হবে।

  • পুরাতন ব্লেড
  • প্লাস্টিকের গামলা
  • ছোট চা চামচ
  • পলি প্রোপাইলিন প্যাক (বিভিন্ন মাপের)
  • পানচিঙ মেশিন বা ছিদ্র করার যন্ত্র
  • হালকা পানি ঢালার ঝর্ণা
  • ছুরি
  • তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র- থার্মোমিটার
  • আদ্রতা মাপার যন্ত্র - হাইড্রোমিটার
  • স্ট্যাপলার
  • স্ট্যাপলারের পিন
ব্লেড,ছুরি, পানচিঙ মেশিন বা ছিদ্র করার যন্ত্র, স্ট্যাপলার, স্ট্যাপলার পিন যেকোন বই-খাতা পাওঙা যায় এমন দোকানে পাওয়া যাবে। তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র (থার্মোমিটার), আদ্রতা মাপার যন্ত্র (হাইড্রোমিটার), হালকা পানি ঢালার ঝর্ণা, প্লাস্টিকের গামলা, পলি প্রোপাইলিন প্যাক (বিভিন্ন মাপের) গবাদিপশু ও হাস-মুরগীর খাবার-পানির পাত্র এয দোকানে পাওয়া যায় সেই দোকানে।



বীজ সংগ্রহ



একজন সাধারণ কৃষকের পক্ষে কোনোভাবেই মাশরুমের বীজ বা স্পন তৈরি সম্ভব নয়। বীজ তৈরির প্রক্রিয়া খুবই ব্যয়বহুল। সরকারের কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় ঢাকা জেলার সাভারে 'মাশরুম চাষ কেন্দ্র রয়েছে। এই কেন্দ্রের গবেষনাগারে পদ্ধতিগত ভাবে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে মাশরুমের বীজ বা স্পন উত্‍পন্ন ও বিক্রি করা হয়। মাশরুম চাষ কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ সাধারণ কৃষকগণ বীজ কিনে মাশরুম চাষ ও বাজারজাত করতে পারেন।

সাভারের ‍‍ "মাশরুম চাষ কেন্দ্র " থেকে ওয়েস্টার মাশরুম বীজ বা স্পন কিনে চাষ করা যায়। ঠিকানা: "মাশরুম চাষ কেন্দ্র " , সাভার, ঢাকা

মাশরুম চাষ কেন করবেন?
১. সারা বছরই মাশরুম চাষ করা যায়। তাই, সারা বছর আয়ের পথ খোলা থাকে। বেশি লোকজনের দরকার হয় না। নারী-পুরুষ যে কেউ এর চাষ করতে পারে। বাড়তি কোনো খরচ নেই। সার, কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। মাত্র ১০-১৫ দিনে ফলানো যায়। বীজ উত্‍পন্নের উপকরণ ভূষি, চালের কুড়া, চুন, খড় সহজেই পাওয়া যায়। মাশরুম উত্‍পাদনে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। মাশরুম পরিণত অবস্থায় একদিনের বেশি তাজা থাকে না। ফ্রিজে তিনদিন পর্যন্ত তাজা থাকে। তবে, মাশরুম শুকিয়ে বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায়। ম

২. অল্প জায়গায় এমন কি নিজেদের থাকার ঘরের এককোণেও ছোট আকারের মাশরুম চাষ শুরু করা যায়। যে কেউ মাশরুম চাষ করে লাভবান হতে পারেন। নিজেদের থাকার ঘরের এককোণে মাশরুম চাষে আয় এর হিসাব

ব্যয়

খরচের খাত
দাম
মোট খরচ
মাশরুমের বীজ বা স্পন ২০০ টি ৩ টাকা/ স্পন ৬০০
যাতায়ত ও অন্যান্য ১০০০
মোট ব্যয় ১৬০০
উত্‍পাদন

পরিমাণ
বাজার দর
মোট আয়
৪০ কেজি (তাজা মাশরুম) ৭০ টাকা ২৮০০
১০ কেজি (শুকনো মাশরুম) ৪০০ ৪০০০


প্রকৃত আয় (লাভ)
যদি তাজা মাশরুম বিক্রি করা হয় সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ (২৮০০-১ ৬০০)=১২০০ টাকা

যদি শুকনো মাশরুম বিক্রি করা হয় সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ (৪০০০-১৬০০)=২৪০০টাকা

৩. আমরা প্রতিদিন নানা ধরনের খাবার খেয়ে থাকি।খাদ্য হিসেবে মাশরুমে নানান পুষ্টি ও ঔষধি গুণ রয়েছে। মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন আছে। এতে পানির পরিমাণ ৮৫-৯০ ভাগ।

মাশরুম হৃদরোগ, রক্ত, চর্বি, রক্তহীনতা, বেরিবেরি, চোখ, দাঁত ও হাড়ের গঠন ও ডায়াবেটিক রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
মাশরুম আমিষ-ভিটামিনে পরিপূর্ণ হওয়াতে খেতে অনেকটা মাংসের স্বাদ পাওয়া যায়। ২টি আলু বা ৪টি টমেটো বা ৬ টি লেবু থেকে যে পরিমাণ আমিষ পাওয়া যায় ১০ গ্রাম শুকনো মাশরুমে সেই পরিমাণ আমিষ পাওয়া যায়।
আমাদের দেহ (হাড়, দাত, রক্ত ইত্যাদি) গঠনে খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন,পটাশয়াম ইত্যাদি প্রয়োজন। প্রচলিত শাক-সবজি ও মাংসের থেকে মাশরুমে খনিজ পদার্থ বেশী থাকে।
মাশরুমে 'ইরিটাডেনিন' নামে একটি রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যা রক্তে 'কোলেস্টেরল' কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া 'ল্যাম্পট্রল' নামে আরও একটি পদার্থ রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় প্রায় দুই হাজার জাতের মাশরুম পাওয়া যায়। তবে প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্ম নেওয়া কোনো মাশরুম বিষাক্ত হয়। সেগুলো খাওয়া যায় না। যেমন-ব্যাঙের ছাতা । তারপরও খাবার উপযোগী হাজার জাতের মাশরুম রয়েছে। খাবার উপযোগী এসব মাশরুমের বীজ গবেষণাগারে পদ্ধতিগত ভাবে উত্‍পন্ন করা হয়