ছাদবাগানে মিষ্টি আঙুর চাষ


ফরহাদ আহাম্মেদ

বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকার বাড়ির ছাদে ও অল্পস্থানে আঙুর চাষ করা যায়। চাষ করা সহজ। যে কেউ কাজের ফাঁকে অবসরে চাষ করতে পারেন। আঙুরগাছ ১০০ বছরের বেশি বাঁচে। বছরে দু-তিনবার ফলন দেয়। উৎপাদন খরচ খুব কম। প্রতি গাছে চার-পাঁচ কেজি আঙুর ধরে।

বিশ্বে প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার আঙুরের জাত আছে। বাংলাদেশে চাষ উপযোগী মিষ্টি জাত হচ্ছে-
জাক কাউক : বছরে দুবার জুন-জুলাই ও অক্টোবর-নভেম্বরে ফল দেয়। ফুল থেকে ফল পাকা পর্যন্ত ১২০ দিন সময় লাগে।

ব্ল্যাক পার্ল : বছরে দুবার ফলন দেয়। ফলের রঙ কালো।

ব্ল্যাক রুবি : বছরে দুবার ফলন দেয়। ফলের রঙ প্রথমে সবুজ পরে কালো হয়।

কার্ডিনাল : ফল কালো লাল মিশ্রিত।

বাঙ্গালোর নীল : ফল কালো ধূসর রঙের। বিউটি সিডলেস : ফলে বীজ নেই। মে-জুন মাসে পাকে।

পুষাসিডলেস : ফল কিছুটা লম্বাটে ও সোনালি। কিশমিশ তৈরির জন্য ভালো।

থম্পসন সিডলেস : খুব মিষ্টি, ফলন কম। আনারই-শাহী : ফল বীজহীন ও লম্বাটে। আকারে বড়। মিষ্টি কম।
পারলেট : মধ্যম গোলাকার, বীজহীন, মিষ্টি ও রসালো।

সরকারি হর্টিকালচার বা বেসরকারি নার্সারি থেকে এখন চারা সংগ্রহ করার উপযোগী সময়। চারা রোপণের সময় এপ্রিল-মে মাস। কাণ্ডের কাটিং, গ্রাফটিং ও বাডিং পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করার এখনই সময়। বড় ড্রামে বা প্লাস্টিকের পাত্রে শতকরা ৭৫ শতাংশ দোআঁশ মাটি, ২০ শতাংশ পচা গোবর, দুই ভাগ পচা খৈল, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি ও ৪০০ গ্রাম এমওপি এক সাথে মিশিয়ে ১৫ দিন রাখার পর চারা রোপণ করতে হবে। প্রতি ড্রামে চার-পাঁচটি ৩০-৪০ দিন বয়সের সুস্থ সবল চারা রোপণ করতে হবে।

গাছের বয়স এক-তিন বছর হলে আগের মাত্রায় সার দিতে হবে। ফুল ও ফল ধরার সময় পরিমিত সেচ দিতে হবে। কাণ্ড মাচায় ওঠার পর ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে প্রধান কাণ্ডের ওপর থেকে ভেঙে দিতে হবে, যাতে কাণ্ডের উভয় দিকে দুটি করে মোট চারটি শাখা থাকে। শাখাগুলো লম্বা হতে থাকলে ১৫-২০ দিন পর চারটি শাখার ওপরের অংশ ভেঙে দিতে হবে, যাতে চারটি থেকে ১৬টি প্রশাখা গজাতে পারে। বর্ষার আগে ও পরে গাছের গোড়ার আশপাশের আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে ডাল ও কাণ্ড ছাঁটাই করলে ফলন বেশি হয়। ফলের গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য আঙুরের গুচ্ছ  থেকে অপরিণত ফল ছোট অবস্থায় ফেলে দিতে হবে। ফলবতী গাছের ডাল থেকে প্রায় ৫ সেন্টিমিটার চওড়া বাকল গোলাকারভাবে তুলে ফেললে অথবা জিবরেলিক অ্যাসিড নামক হরমোন স্প্রে করলে আঙুরের ফল ঝরা বন্ধ করে আঙুর মিষ্টি ও বড় হবে এবং ফেটে যাওয়া রোধ হবে।

মার্চ-এপ্রিলের পর ফল সংগ্রহ করলে আকাশ একটানা মেঘলা থাকা বা বৃষ্টির কারণে ফল টক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফল ঠিকমতো বড় ও মিষ্টি না হলে ফল ধরার পর প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার ইথরেল ও ১০০ মিলিগ্রাম জিবরেলিক অ্যাসিড পাউডার এক সাথে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর দুই থেকে তিনবার ¯েপ্র করলে উপকার পাওয়া যাবে। আঙুর পূর্ণ পরিপক্ব করে অর্থাৎ ফুল ধরার ১২০-১৩০ দিন পর ফল পাড়তে হবে। প্রতি বছর গাছপ্রতি ১ কেজি চুন দিতে হবে। আঙুরের থোকা ছায়ায় থাকলে রোদ লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ছায়ায় থোকা থাকলে টক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জমিতে উৎপাদিত আঙুরের চেয়ে ছাদের উৎপাদিত আঙুর মিষ্টি বেশি হয়। কারণ ছাদে রোদ বেশি লাগে। গাছের মোটা শাখার বাকল ১০-১৫ সেন্টিমিটার চক্রাকারে তুললে আঙুর মিষ্টি হয়।

আঙুর পাকার এক মাস আগে গাছপ্রতি ২০ গ্রাম পটাশ সার এক লিটার পানিতে মিশিয়ে ¯েপ্র করলে আঙুরের মিষ্টতা বাড়ে। এ ছাড়াও গাছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। অম্লীয় মাটিতে অম্লতা কমানোর জন্য বছরে দুবার চুন প্রয়োগ করতে হবে। অম্লীয় মাটিতে আঙুর টক হয়। বৃষ্টি হলে আঙুর টক হতে পারে এবং পাকা আঙুর ফেটে যেতে পারে। বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে মাচার ওপর পলিথিন সিট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। কলমের চারা রোপণের দুবছর পর থেকে গাছে ফল ধরে। ফুল আসার পর থেকে ১২০-১৩০ দিনে ফল পাকে। ফল পাকার সময় ফল সংগ্রহ করলে মিষ্টি হয়।