ফরহাদ আহাম্মেদ কৃষিবিদ
দেশে বেড়ে চলা জনসংখ্যার প্রোটিনের চাহিদা ক্রমেই কমতে থাকা জমি থেকে পূরণের ল্েয সীমিত জায়গায় একত্রে একই সময়ে মুরগি ও মাছ উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। গবেষণায় ভালো ফলাফল পাওয়া গেলেও মাঠপর্যায়ে এই প্রযুক্তির তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। কারণ এ প্রযুক্তি সম্পর্কে চাষিরা জানেন না। দেশের সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ উৎপাদনের এটি একটি সময়োপযোগী প্রযুক্তি। দেশে বর্তমানে পুকুর ২.৪২ লাখ হেক্টর, বাঁওড় ০.০৫ লাখ হেক্টর ও চিংড়ি খামার ১.৪১ লাখ হেক্টর আছে। এসব বদ্ধ জলাশয়ে মুরগি ও মাছ সমন্বিতভাবে উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। মুরগির জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হয়। পুকুরে সার প্রয়োগ ও খাদ্য সরবরাহের জন্য আধুনিক পদ্ধতিতে মোট উৎপাদন ব্যয়ের শতকরা ৬০-৬৫ ভাগ ব্যয় হয়। পুকুরে মুরগির ঘর করে বিষ্ঠা পানিতে পড়ার সুযোগ দিয়ে মাছ চাষে অন্তত ৪০-৫০ ভাগ খরচ কমানো যায়। এতে মাছ উৎপাদনে খরচ কমে চাষি লাভবান হন। মাছ-মুরগি একত্রে চাষ করলে স্বল্প ব্যয় ও কম সময়ে অধিক উৎপাদন পাওয়া যায়। এ জন্য ব্যাপক প্রচার ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম নেয়া উচিত।
সুবিধা : মুরগির বিষ্ঠা একটি উৎকৃষ্ট সার। পুকুরের ওপর ঘর তৈরি করে মুরগি পালন করলে পুকুরে কোনো সার লাগে না। মুরগির খাদ্য গ্রহণের সময় ছিটকে পড়া খাদ্য ও উচ্ছিষ্ট সরাসরি পুকুরের পানিতে পড়ে। ফলে মাছের জন্য কোনো সম্পূরক খাদ্য দিতে হয় না। মুরগির বিষ্ঠার মধ্যে থাকা আধা হজম হওয়া খাদ্যদ্রব্য ও মুরগির বিষ্ঠা কিছু কিছু মাছের খাদ্য। মুরগির ঘরের জন্য অতিরিক্ত জায়গা লাগে না। মুরগির সাথে মাটির সংস্পর্শ থাকে না বলে রোগবালাই কম হয়। প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়। একই জায়গা থেকে একই সাথে মাছ, গোশত ও ডিম উৎপাদন হয়। আত্মকর্মসংস্থান ও বেকারত্ব দূর করা যায়। ঝুঁকি কম। মাছ ও মুরগি একত্রে উৎপাদনে একটিতে তি হলে অন্যটি দিয়ে পুষিয়ে নেয়া যায়।
অসুবিধা : সব জাতের মুরগি পালন করা যায় না। প্রতি বছরই মুরগির ঘরের খুঁটি পরিবর্তন করতে হয়। বন্যা হলে মুরগি সরাতে হয়। বিষাক্ত জলজপ্রাণী মুরগির তি করতে পারে।
পদ্ধতি : মুরগি ও মাছ সমন্বিত চাষে দুই ভাবে মুরগি পালন করা যায়। পুকুর বা জলাশয়ের পানির ওপর ঘর করে মুরগি পালন। পুকুর বা জলাশয় থেকে দূরে যথা- বাড়ির আঙিনায় বা পুকুরপাড়ে মুরগি পালন করে মুরগির বিষ্ঠা ও উচ্ছিষ্ট খাদ্যদ্রব্য নিয়মিত পুকুরে প্রয়োগ করা যায়।
পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি : একটু বড় আকারের কমপে ৩৩ শতাংশ হলে ভালো হয়। উঁচু স্থানে সূর্যের আলো পড়ে এবং বন্যার পানি প্রবেশ করে না এমন স্থানে পুকুর নির্বাচন করতে হয়। পুকুর পরিষ্কার করা, রাুসে মাছ, তিকর প্রাণী ও তিকর উদ্ভিদ অপসারণ করতে হবে। এরপর প্রতি শতাংশে এক কেজি হারে কলিচুন দিতে হবে। চুন দেয়ার সাত দিন পর পুকুরের ওপর তৈরি ঘরে মুরগির বাচ্চা রাখতে হবে। মুরগির বাচ্চা রাখার সাত থেকে ১০ দিন পর পুকুরে মাছের পোনা ছাড়তে হবে।
পোনা অবমুক্তকরণ : পুকুরে ৮-১২ সেন্টিমিটার আকারের পোনা ছাড়া উচিত। সাধারণত প্রতি শতাংশে ৩০-৪০টি পোনা ছাড়লে ভালো হয়। এর মধ্যে কাতলা চারটি সিলভারকার্প পাঁচটি, রুই আটটি, মৃগেল চারটি, মিররকার্প চারটি, গ্রাসকার্প একটি ও রাজপুঁটি সাতটি প্রতি শতাংশে ছাড়তে হবে।
মাছের পরিচর্যা : সম্পূরক খাদ্য দেয়ার প্রয়োজন নেই। প্রতি মাসে একবার জাল টেনে মাছের বৃদ্ধি, রোগবালাই ও স্বাস্থ্য পরীা করা প্রয়োজন।
মাছ ধরা : নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এরপর খাদ্য গ্রহণ বেশি করলেও বৃদ্ধি পায় না। রুই, কাতলা, মৃগেল আট থেকে ১২ মাসের মধ্যে ৭০০ গ্রাম থেকে ১.৫ কেজি পর্যন্ত হয়। সিলভারকার্প, মিররকার্প, গ্রাসকার্প ছয়-সাত মাসের মধ্যেই এক কেজি হয়।
ঘর তৈরি : পুকুরের ওপর খোলামেলা স্থানে, আলো-বাতাস লাগে এমন স্থানে মুরগির ঘর করতে হবে। ঘর পুকুরের পাড়েও করা যেতে পারে। পুকুরের আয়তনের ওপর ঘরের আয়তন নির্ভর করে। প্রতিটি ব্রয়লার মুরগির জন্য ১.৫ বর্গফুট ও ডিমপাড়া মুরগির জন্য ২ বর্গফুট স্থান প্রয়োজন। ঘরটি পুকুরের পাড় থেকে ৪-৫ ফুট ভেতরে পানির ওপর করতে হবে। ঘরের মেঝে বাঁশের বাতা ও চাল ছন দিয়ে করা যেতে পারে। মেঝে বাতা থেকে বাতার দূরত্ব ০.৫ ইঞ্চি দিতে হবে, যাতে মুরগির বিষ্ঠা সরাসরি পুকুরের পানিতে পড়ে। ঘরের মেঝে থেকে চালের উচ্চতা হবে ৪ ফুট। মেঝে থেকে ২ ফুট উঁচু করে বাঁশের শক্ত বেড়া দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। বেড়ার ওপরের ২ ফুট জালের মতো কেচি বেড়া বা শক্ত তারের নেট দিয়ে ঘিরে দিতে হবে, যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে।
মুরগির জাত : গোশত উৎপাদনের জন্য ব্রয়লার মুরগির স্টার ব্রো, হাবার্ড ও ডিম উৎপাদনের জন্য লেয়ার মুরগির স্টার ব্রুস, ইছাব্রাউন, লোম্যান, হাইসেক্স ইত্যাদি জাত উপযোগী। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ওই জাতের বাচ্চা পাওয়া যায়।
মুরগির সংখ্যা : প্রতি শতাংশে দু’টি হারে মুরগি পালন করলে মাছ চাষের জন্য কোনো সার বা খাদ্য দিতে হয় না। এ হিসাবে বিঘাপ্রতি ৬০-৭০টি ও একরপ্রতি ২০০টি মুরগি পালন করা যায়।
ব্রুডিং : এক মাস বয়স পর্যন্ত মুরগির বাচ্চাকে বৈদ্যুতিক হিটার, বাল্ব বা তুষের হিটার দিয়ে তাপ দিতে হয়। বাচ্চা রাখার ঘর জীবাণুনাশক (আইওসান) দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। ঘর শুকানোর পর লিটার হিসেবে ধানের তুষ বা কাঠের গুঁড়া ১.৫-২ ইঞ্চি পুরু করে মেঝেতে বিছাতে হবে। লিটারের ওপর গুঁড়া চুনা বা অল্প ফরমালিন ¯েপ্র করা যেতে পারে। এরপর লিটারের ওপর পরিষ্কার চট বিছিয়ে দিতে হবে। মুরগির বাচ্চা যাতে এ দিক সে দিক না যায় সে জন্য চিকগার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ইঞ্চি মাপের চিকগার্ডে ১২৫-১৫০টি মুরগির বাচ্চাকে তাপ দেয়া যায়। চিকগার্ডের ওপর ৩ ফুট ব্যাসের টিনের চাল দিয়ে হেসার তৈরি করে হেসারে তিনটি ৩০ ওয়াটের বাতি ও একটি ১০০ ওয়াটের বাতি লিটার থেকে ১০ ইঞ্চি ওপরে ঝুলানো থাকবে।
বায়ু চলাচল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও আর্দ্রতা স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। লেয়ার মুরগির জন্য দৈনিক ১৬ ঘণ্টা ও ব্রয়লার মুরগির জন্য বয়স অনুসারে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
মুরগির খাদ্য : সুষ্ঠু মুরগির জন্য সুষম খাদ্য প্রয়োজন। লেয়ার মুরগির জন্য গম বা ভুট্টা ভাঙা ৪৪ শতাংশ, অটোমিলের কুঁড়া ২৭ শতাংশ, ফিশমিল ১২ শতাংশ, তিলের খৈল ১০ শতাংশ, ঝিনুকের গুঁড়া ৬.৫ শতাংশ ও লবণ ০.৫ শতাংশ মিশিয়ে সুষম খাদ্য তৈরি করতে হবে। ব্রয়লার মুরগির জন্য গম বা ভুট্টা ভাঙা ৫০ শতাংশ, কুঁড়া ১৬ শতাংশ, ফিশমিল ১৮ শতাংশ, তিলের খৈল ১৫ শতাংশ ও লবণ ০.৫ শতাংশ মিশিয়ে সুষম খাদ্য তৈরি করতে হবে। প্রতি ১০০ কেজি প্রস্তুতকৃত খাদ্যে ২৫০ গ্রাম ভিটামিন প্রিমিক্স মেশাতে হবে। প্রতিটি লেয়ার মুরগিকে প্রতিদিন ১১৫-১২৫ গ্রাম খাদ্য দিতে হবে। মুরগির ঘরে বিশুদ্ধ পানি দিতে হবে।
পরিচর্যা : সময়মতো ভ্যাকসিন দিলে রোগ হবে না। কোনো মুরগির অসুখ হলে ঘর থেকে সরাতে হবে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
উৎপাদন : একরপ্রতি বছরে ১৮০০-২১০০ কেজি মাছ উৎপাদন হবে। ব্রয়লার বছরে ১২০০টি মুরগি হবে। ওজন হবে গড়ে ২২৮০ কেজি। প্রতিটি লেয়ার মুরগি গড়ে বছরে ২০০-২৫০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে।
আয়-ব্যয় : মাঠপর্যায়ে দেখা গেছে ৩৩ শতাংশ (১ বিঘা) পুকুরে ডিমপাড়া মুরগি ও মাছের একত্রে চাষ করলে বার্ষিক মোট খরচ হয় ৪০ হাজার ৩৩৮ টাকা এবং মোট আয় হয় ৬৮ হাজার ৩৫০ টাকা। প্রকৃত লাভ হয় ২৮ হাজার ১২ টাকা। মাছের সাথে ব্রয়লার মুরগি পালন করলে মোট খরচ হয় ৪২ হাজার ৭২৫ টাকা। মোট আয় হয় ৭৩ হাজার ৬৫০ টাকা। প্রকৃত লাভ হয় ৭৩৬৫০-৪২৭২৫= ৩০ হাজার ৯২৫ টাকা। যে কেউ একত্রে মাছের সাথে মুরগি পালন করলে লাভবান হতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে যেকোনো সরকারি উপজেলা মৎস্য অফিসে অথবা মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করতে পারেন।
দেশে বেড়ে চলা জনসংখ্যার প্রোটিনের চাহিদা ক্রমেই কমতে থাকা জমি থেকে পূরণের ল্েয সীমিত জায়গায় একত্রে একই সময়ে মুরগি ও মাছ উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। গবেষণায় ভালো ফলাফল পাওয়া গেলেও মাঠপর্যায়ে এই প্রযুক্তির তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। কারণ এ প্রযুক্তি সম্পর্কে চাষিরা জানেন না। দেশের সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ উৎপাদনের এটি একটি সময়োপযোগী প্রযুক্তি। দেশে বর্তমানে পুকুর ২.৪২ লাখ হেক্টর, বাঁওড় ০.০৫ লাখ হেক্টর ও চিংড়ি খামার ১.৪১ লাখ হেক্টর আছে। এসব বদ্ধ জলাশয়ে মুরগি ও মাছ সমন্বিতভাবে উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। মুরগির জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হয়। পুকুরে সার প্রয়োগ ও খাদ্য সরবরাহের জন্য আধুনিক পদ্ধতিতে মোট উৎপাদন ব্যয়ের শতকরা ৬০-৬৫ ভাগ ব্যয় হয়। পুকুরে মুরগির ঘর করে বিষ্ঠা পানিতে পড়ার সুযোগ দিয়ে মাছ চাষে অন্তত ৪০-৫০ ভাগ খরচ কমানো যায়। এতে মাছ উৎপাদনে খরচ কমে চাষি লাভবান হন। মাছ-মুরগি একত্রে চাষ করলে স্বল্প ব্যয় ও কম সময়ে অধিক উৎপাদন পাওয়া যায়। এ জন্য ব্যাপক প্রচার ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম নেয়া উচিত।
সুবিধা : মুরগির বিষ্ঠা একটি উৎকৃষ্ট সার। পুকুরের ওপর ঘর তৈরি করে মুরগি পালন করলে পুকুরে কোনো সার লাগে না। মুরগির খাদ্য গ্রহণের সময় ছিটকে পড়া খাদ্য ও উচ্ছিষ্ট সরাসরি পুকুরের পানিতে পড়ে। ফলে মাছের জন্য কোনো সম্পূরক খাদ্য দিতে হয় না। মুরগির বিষ্ঠার মধ্যে থাকা আধা হজম হওয়া খাদ্যদ্রব্য ও মুরগির বিষ্ঠা কিছু কিছু মাছের খাদ্য। মুরগির ঘরের জন্য অতিরিক্ত জায়গা লাগে না। মুরগির সাথে মাটির সংস্পর্শ থাকে না বলে রোগবালাই কম হয়। প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়। একই জায়গা থেকে একই সাথে মাছ, গোশত ও ডিম উৎপাদন হয়। আত্মকর্মসংস্থান ও বেকারত্ব দূর করা যায়। ঝুঁকি কম। মাছ ও মুরগি একত্রে উৎপাদনে একটিতে তি হলে অন্যটি দিয়ে পুষিয়ে নেয়া যায়।
অসুবিধা : সব জাতের মুরগি পালন করা যায় না। প্রতি বছরই মুরগির ঘরের খুঁটি পরিবর্তন করতে হয়। বন্যা হলে মুরগি সরাতে হয়। বিষাক্ত জলজপ্রাণী মুরগির তি করতে পারে।
পদ্ধতি : মুরগি ও মাছ সমন্বিত চাষে দুই ভাবে মুরগি পালন করা যায়। পুকুর বা জলাশয়ের পানির ওপর ঘর করে মুরগি পালন। পুকুর বা জলাশয় থেকে দূরে যথা- বাড়ির আঙিনায় বা পুকুরপাড়ে মুরগি পালন করে মুরগির বিষ্ঠা ও উচ্ছিষ্ট খাদ্যদ্রব্য নিয়মিত পুকুরে প্রয়োগ করা যায়।
পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি : একটু বড় আকারের কমপে ৩৩ শতাংশ হলে ভালো হয়। উঁচু স্থানে সূর্যের আলো পড়ে এবং বন্যার পানি প্রবেশ করে না এমন স্থানে পুকুর নির্বাচন করতে হয়। পুকুর পরিষ্কার করা, রাুসে মাছ, তিকর প্রাণী ও তিকর উদ্ভিদ অপসারণ করতে হবে। এরপর প্রতি শতাংশে এক কেজি হারে কলিচুন দিতে হবে। চুন দেয়ার সাত দিন পর পুকুরের ওপর তৈরি ঘরে মুরগির বাচ্চা রাখতে হবে। মুরগির বাচ্চা রাখার সাত থেকে ১০ দিন পর পুকুরে মাছের পোনা ছাড়তে হবে।
পোনা অবমুক্তকরণ : পুকুরে ৮-১২ সেন্টিমিটার আকারের পোনা ছাড়া উচিত। সাধারণত প্রতি শতাংশে ৩০-৪০টি পোনা ছাড়লে ভালো হয়। এর মধ্যে কাতলা চারটি সিলভারকার্প পাঁচটি, রুই আটটি, মৃগেল চারটি, মিররকার্প চারটি, গ্রাসকার্প একটি ও রাজপুঁটি সাতটি প্রতি শতাংশে ছাড়তে হবে।
মাছের পরিচর্যা : সম্পূরক খাদ্য দেয়ার প্রয়োজন নেই। প্রতি মাসে একবার জাল টেনে মাছের বৃদ্ধি, রোগবালাই ও স্বাস্থ্য পরীা করা প্রয়োজন।
মাছ ধরা : নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এরপর খাদ্য গ্রহণ বেশি করলেও বৃদ্ধি পায় না। রুই, কাতলা, মৃগেল আট থেকে ১২ মাসের মধ্যে ৭০০ গ্রাম থেকে ১.৫ কেজি পর্যন্ত হয়। সিলভারকার্প, মিররকার্প, গ্রাসকার্প ছয়-সাত মাসের মধ্যেই এক কেজি হয়।
ঘর তৈরি : পুকুরের ওপর খোলামেলা স্থানে, আলো-বাতাস লাগে এমন স্থানে মুরগির ঘর করতে হবে। ঘর পুকুরের পাড়েও করা যেতে পারে। পুকুরের আয়তনের ওপর ঘরের আয়তন নির্ভর করে। প্রতিটি ব্রয়লার মুরগির জন্য ১.৫ বর্গফুট ও ডিমপাড়া মুরগির জন্য ২ বর্গফুট স্থান প্রয়োজন। ঘরটি পুকুরের পাড় থেকে ৪-৫ ফুট ভেতরে পানির ওপর করতে হবে। ঘরের মেঝে বাঁশের বাতা ও চাল ছন দিয়ে করা যেতে পারে। মেঝে বাতা থেকে বাতার দূরত্ব ০.৫ ইঞ্চি দিতে হবে, যাতে মুরগির বিষ্ঠা সরাসরি পুকুরের পানিতে পড়ে। ঘরের মেঝে থেকে চালের উচ্চতা হবে ৪ ফুট। মেঝে থেকে ২ ফুট উঁচু করে বাঁশের শক্ত বেড়া দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। বেড়ার ওপরের ২ ফুট জালের মতো কেচি বেড়া বা শক্ত তারের নেট দিয়ে ঘিরে দিতে হবে, যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে।
মুরগির জাত : গোশত উৎপাদনের জন্য ব্রয়লার মুরগির স্টার ব্রো, হাবার্ড ও ডিম উৎপাদনের জন্য লেয়ার মুরগির স্টার ব্রুস, ইছাব্রাউন, লোম্যান, হাইসেক্স ইত্যাদি জাত উপযোগী। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ওই জাতের বাচ্চা পাওয়া যায়।
মুরগির সংখ্যা : প্রতি শতাংশে দু’টি হারে মুরগি পালন করলে মাছ চাষের জন্য কোনো সার বা খাদ্য দিতে হয় না। এ হিসাবে বিঘাপ্রতি ৬০-৭০টি ও একরপ্রতি ২০০টি মুরগি পালন করা যায়।
ব্রুডিং : এক মাস বয়স পর্যন্ত মুরগির বাচ্চাকে বৈদ্যুতিক হিটার, বাল্ব বা তুষের হিটার দিয়ে তাপ দিতে হয়। বাচ্চা রাখার ঘর জীবাণুনাশক (আইওসান) দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। ঘর শুকানোর পর লিটার হিসেবে ধানের তুষ বা কাঠের গুঁড়া ১.৫-২ ইঞ্চি পুরু করে মেঝেতে বিছাতে হবে। লিটারের ওপর গুঁড়া চুনা বা অল্প ফরমালিন ¯েপ্র করা যেতে পারে। এরপর লিটারের ওপর পরিষ্কার চট বিছিয়ে দিতে হবে। মুরগির বাচ্চা যাতে এ দিক সে দিক না যায় সে জন্য চিকগার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ইঞ্চি মাপের চিকগার্ডে ১২৫-১৫০টি মুরগির বাচ্চাকে তাপ দেয়া যায়। চিকগার্ডের ওপর ৩ ফুট ব্যাসের টিনের চাল দিয়ে হেসার তৈরি করে হেসারে তিনটি ৩০ ওয়াটের বাতি ও একটি ১০০ ওয়াটের বাতি লিটার থেকে ১০ ইঞ্চি ওপরে ঝুলানো থাকবে।
বায়ু চলাচল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও আর্দ্রতা স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। লেয়ার মুরগির জন্য দৈনিক ১৬ ঘণ্টা ও ব্রয়লার মুরগির জন্য বয়স অনুসারে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
মুরগির খাদ্য : সুষ্ঠু মুরগির জন্য সুষম খাদ্য প্রয়োজন। লেয়ার মুরগির জন্য গম বা ভুট্টা ভাঙা ৪৪ শতাংশ, অটোমিলের কুঁড়া ২৭ শতাংশ, ফিশমিল ১২ শতাংশ, তিলের খৈল ১০ শতাংশ, ঝিনুকের গুঁড়া ৬.৫ শতাংশ ও লবণ ০.৫ শতাংশ মিশিয়ে সুষম খাদ্য তৈরি করতে হবে। ব্রয়লার মুরগির জন্য গম বা ভুট্টা ভাঙা ৫০ শতাংশ, কুঁড়া ১৬ শতাংশ, ফিশমিল ১৮ শতাংশ, তিলের খৈল ১৫ শতাংশ ও লবণ ০.৫ শতাংশ মিশিয়ে সুষম খাদ্য তৈরি করতে হবে। প্রতি ১০০ কেজি প্রস্তুতকৃত খাদ্যে ২৫০ গ্রাম ভিটামিন প্রিমিক্স মেশাতে হবে। প্রতিটি লেয়ার মুরগিকে প্রতিদিন ১১৫-১২৫ গ্রাম খাদ্য দিতে হবে। মুরগির ঘরে বিশুদ্ধ পানি দিতে হবে।
পরিচর্যা : সময়মতো ভ্যাকসিন দিলে রোগ হবে না। কোনো মুরগির অসুখ হলে ঘর থেকে সরাতে হবে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
উৎপাদন : একরপ্রতি বছরে ১৮০০-২১০০ কেজি মাছ উৎপাদন হবে। ব্রয়লার বছরে ১২০০টি মুরগি হবে। ওজন হবে গড়ে ২২৮০ কেজি। প্রতিটি লেয়ার মুরগি গড়ে বছরে ২০০-২৫০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে।
আয়-ব্যয় : মাঠপর্যায়ে দেখা গেছে ৩৩ শতাংশ (১ বিঘা) পুকুরে ডিমপাড়া মুরগি ও মাছের একত্রে চাষ করলে বার্ষিক মোট খরচ হয় ৪০ হাজার ৩৩৮ টাকা এবং মোট আয় হয় ৬৮ হাজার ৩৫০ টাকা। প্রকৃত লাভ হয় ২৮ হাজার ১২ টাকা। মাছের সাথে ব্রয়লার মুরগি পালন করলে মোট খরচ হয় ৪২ হাজার ৭২৫ টাকা। মোট আয় হয় ৭৩ হাজার ৬৫০ টাকা। প্রকৃত লাভ হয় ৭৩৬৫০-৪২৭২৫= ৩০ হাজার ৯২৫ টাকা। যে কেউ একত্রে মাছের সাথে মুরগি পালন করলে লাভবান হতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে যেকোনো সরকারি উপজেলা মৎস্য অফিসে অথবা মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করতে পারেন।
0 comments:
মন্তব্য করুন