বিভিন্ন প্রকারের মাশরুম



মাশরুম(Mushroom) কি ?


পৃথিবীতে প্রেয় ৩ লক্ষ প্রজাতির ছত্রাক আছে,বিভিন্ন যাচাই বাছাই করে যে সমস্ত ছত্রাক খাওয়ার উপযোগী(বিষাক্ততামুক্ত),পুষ্টিকর আর সুস্বাদু সেগুলোকেই মাশরুম বলে। অন্য কথায় মুলত Basdiomycetes ও Ascomyctesশ্রেণীর ভক্ষনযোগ্য মৃত ছত্রাককে মাশরুম বলে। আমাদের দেশে সাধারনত Basdiomycetesশ্রেণীর মাশরুম চাষ করা হয়।

আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রকার মাশরুম


গ্রীষ্মকালিন মাশরুম-

১.মিল্কী মাশরুম(Milky transparent) Calocybe indica






২.ঋষি মাশরুম(Reishi) Ganoderma lucidium

একে ঔষধী মাশরুমও বলা হয়



৩.স্ট্র মাশরুম(Straw) Volvariella volvacea



শীতকালিন মাশরুম

১.শীতাকে(Shitake) Lentinus edodes


২.বাটন(Button) Agaricus sp.



৩.ইনোকি(Enoki) Flammulina velutipes



৪.শিমাজী(Shimaji) Hypsizygus tessulatus


পুরো বছরকালিন মাশরুম

১.ওয়েস্টার মাশরুম(Oyester) Pleurotus sp.


মাশরুম চাষ প্রনালী


মাশরুম মিডিয়া,পিডিএ,বিভিন্ন কালচারের প্যাচাল পারলাম না।যদি কেউ আগ্রহী হোন তাহলে মন্তব্যে লেখা যাবে।সরাসরি মাশরুম চাষ নিয়ে শুরু করলাম-

যে বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হবে

১.অক্সিজেনের অবাধ প্রবেশ

২.অল্প আলো যুক্ত ঘর(৮০-২০০ লাক্স)যেন কোনমতে একজন ব্যাক্তি পেপার পড়তে পারে।এর ফলে অঙ্কুরোদগম ভালো হবে।

৩.বিভিন্ন স্টেজে বিভিন্ন তাপমাত্রা প্রয়োজন,তাই তাপমাত্রা ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নিয়ন্ত্রন করার ব্যাবস্থা থাকতে হবে।

৪.সবাই জানি ছত্রাক স্যাঁত স্যাঁতে স্থানে অধিক জন্মে তাই আর্দ্রতা ৭০%-৮৫% রাখতে হবে।

৫.কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দিতে হবে।



বিশেষ সাবধানতা
১.চাষঘর ও এর আশেপাশে অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে, চারদিকে সুষম বাতাস প্রবাহ হয়,এমন জায়গা হলে ভালো হয়।

২.খড়ের মধ্যে চাষ করলে রোগ-পোকামাকড় মুক্ত ও শুকনো খড় সঙ্গগ্রহ করতে হবে।



কিভাবে করবেন
১.বিশ্বস্ত কোন স্থান হতে মাশরুমের স্পন(মাদার কালচার) সংগ্রহ করবেন।অবশ্যই স্পন মাইসেলিয়াম পূর্ন অর্থাৎ সাদা দেখা যাবে। যদি অন্য রঙের উপস্থিতি দেখা যায় তাহলে ঐ স্পন বাতিল করবেন।

২.স্পনের প্যাকেটের মুখের দিকে দুই কাধ বরাবর(প্রতি কাধ ২ ইঞ্চি লম্বা আর ১ ইঞ্চি ব্যাস করে ইংরেজি "D" এর মতো পিপি )কেটে ফেলতে হবে।

৩.পরিষ্কার ব্লেড গরম পানিতে জীবানুমুক্ত করে কাটা যায়গার মাইসেলিয়াম চেছে ফেলতে হবে।

৪. তারপর স্পন কে ৫-১৫ মিনিট পানিতে উপুর করে চুবিয়ে রাখবেন।অতঃপর পানি থেকে তুলে ভালোভাবে পানি ঝড়িয়ে চাষ ঘরের মেঝে বা তাকে সাজিয়ে রাখেন।এ ক্ষেত্রে স্পন -স্পনের দূরত্ব ৩ ইঞ্চি আর সারি - সারির দুরত্ব ২ ইঞ্চি রাখলে শ্বসন ভালো হয়।

৫. আর্দ্রতা(৭০-৮৫%) রাখার জন্য স্পনের চারপাশে ৫-৬ বার(গ্রীষ্মকালে),২-৩ বার (বর্ষা আর শীতকালে)পানি স্প্রে করবেন।সাব্ধান প্যাকেটে যেন পানি না জমে।সুর্য ওঠার আগে বা সুর্য ডোবার পর স্প্রে করলে ভালো ফলন দেয়।

৬. তাপমাত্রা বেশি হয়ে গেলে দেয়াল ও মেঝে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে ফ্যান দ্বারা দরজার দিকে বাতাস করলে ঘর ঠান্ডা হয়ে যাবে।

৭. উপরোক্ত কাজ গুলো ঠিকমত হলে ২-৩ দিনের মধ্যেই মাশরুমের অঙ্কুর পিন আকারে বের হয়ে আসবে,৭-৮ দিনের মধ্যেই মাশরুম তোলার উপযোগী হয়ে যাবে।

৮. ১ম বার মাশরুম সংগ্রহের পর স্পনের প্যাকেটকে কমপক্ষে ১ দিন বিশ্রাম দিতে হবে। তারপর আবার সাদা মাইসেলিয়াম চেছে উপরের ক্রমিক ৪ থেকে শুরু করবেন।১০ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে ২য় বার মাশরুম সঙ্গগ্রহ করা যাবে।

এভাবে একটি প্যাকেট হতে ৮-১০ বারের বেশী মাশরুম সংগ্রহ করা ঠিক হবে না।আর ৯০ দিনের পর কোন ভাবেই প্যাকেট আর ব্যাবহার করবেন না। ব্যবাহৃত প্যাকেট খুলে ভিতরের মিডিয়া সার হিসেবে ব্যাবহার করতে পারবেন (এইটা ফাউ)।

পোকা-মাকড় দমনচাষঘরে সাধারনত বিভিন্ন ধরনের মাছি,উইভিল,মাইট,পিপড়া দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে পঘর পরিষ্কার রাখলে সব বালাই নাশ হয়ে যায়।তারপরও যা করতে হবে- ঘরের চারপাশে ব্লিচিং পাউডার/ফিনিস পাওডার ছড়িয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।স্বল্প মাত্রায় এক্টেলিক দেওয়া যেতে পারে।তবে ঘরের ভেন্টিলেটর আর দরজায় নেট দিলে বেশী ভালো হয়।মাইট আর উইভিলের প্রতিরোধ ব্যাবস্থা হিসেবে তাপমাত্রা আর আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রনই যথেষ্ট।

মাশরুম সংরক্ষন
১. মাশরুম বড় কিন্তু শিরা ঢিল হয়ে যায় নাই কিংবা কিনারা ফেটে যায় নাই,এমন মাশরুম সংগ্রহ করার উপযোগী

২. অধিক আর্দ্রতায় মাশরুম সংগ্রহ করা যাবে না, এক্ষেত্রে উপযোগী সময়-সকাল অথবা বিকাল বেলা

৩. হালকা মোচরে মাসরুম তুলতে হবে,না হয় স্পনের মাইসেলিয়াম ভেঙ্গে যাবে।

৪. উত্তোলিত মাশরুমের গোড়া কেটে পরিষ্কার করে সংরক্ষন করতে হবে।

৫. উত্তোলনের পুর্বে ১২ ঘন্টায় পানি স্প্রে করা যাবে না।



মাশরুম সংরক্ষন
তাজা মাশরুম
১.মাশরুম উত্তোলনের পর ঠান্ডা জায়গায় রেখে ২-৩ দিন খাওয়া যাবে।

২.ফ্রিজে ৭-৮ দিন রাখা যাবে( এক্ষেত্রে পুরা প্যাকেটের মাশরুম একবারেই শেষ করতে হবে)

৩.২% ফুটন্ত লবন পানিতে ২-৩ মিনিট সিদ্ধ করে পানি ঝড়িয়ে ঢাকনাযুক্ত কৌটায় রেখে ডিপফ্রিজে রেখে ৬-৭ মাস খাওয়া যাবে।



শুকনা মাশরুম
রোদে শুকিয়ে দীর্ঘদিন খাওয়া যাবে 

মাশরুম সম্মন্ধে আরোও জানার থাকলে প্রশ্ন করবেন,উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।আর যারা ব্যাক্তিপর্যায়ে মাশরুম চাষ করেন তারাও সহায়তা করবে।