সৌরচালিত পানির পাম্প : সমস্যা ও সম্ভাবনা



কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষি জমিতে সেচ একটি গুর্বত্বপূর্ন কাজ। মোট আমদানিকৃত ২৬-২৭ লাখ মে.টন ডিজেলের এক পঞ্চমাংশ সেচকাজে ব্যবহৃত হয়। ডিজেলচালিত মোট ১১ লাখ অগভীর এবং এলএলপি পাম্পের মাধ্যমে সারাদেশে প্রায় ৭৭ ভাগ কৃষি জমিতে সেচ প্রদান করা হয়। অন্যদিকে বিদ্যুতের মাধ্যমে ২৩ শতাংশ জমিতে সেচ দেয়া হয় যাতে প্রায় ৪০০-৫০০ মেঘাওয়াট বিদ্যুত খরচ হয়। যেহেতু পর্যাপ্ত শক্তি অপ্রতুল তাই প্রতিবছর বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে সেচকার্যের মারাত্নক ব্যাঘাত ঘটে। তাই যদি সৌর চালিত পাম্প চালু করা যায় তা হবে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন যাতে বিদ্যুত ও ডিজেল নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না।

অব্যাহতভাবে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিও দরিদ্র কৃষকদের সেচখরচ অনেকাংশে বৃদ্ধি করে (যদিও বর্তমান সরকার ৰমতা গ্রহনের অব্যবহিত পরেই ডিজেলের মূল্য ৰানিক হৃাস করে এবং কৃষকদের সরাসরি ভর্তুকি প্রদানের প্রতিশ্র্বতি দেয়)। 
তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে মোট বিদ্যুত উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি থাকায় স্বাভাবিক সেচ কার্যক্রম ব্যহত হয়। সময়মত সেচ প্রদান করতে না পারায় ফসলের ফলনে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ পরিসি'তিতে সৌর চালিত পাম্প বিদ্যূত ও ডিজেলের বিকল্প হিসেবে শক্তির চাহিদা মিটাতে সৰম হবে। ৫,৬০০-৪৫,০০০ লিটার পানি সরবরাহে সৰম ৩০০-২,৪০০ ওয়াট ৰমতা সম্পন্ন সৌর পানির পাম্পের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন সৌদি আরব, চীন, জাপানে সেচ প্রদান করা হয়। উদাহরণস্বরূপ ১,৮০০ ওয়াট ৰমতাসম্পন্ন একটি সৌরচালিত পানির পাম্পের মাধ্যমে ২০ মিটার গভীর থেকে দৈনিক ৮২,০০০ লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১০.২৭ লাখ টাকা। এ মূল্যের সহিত ১০ বছর পরে অতিরিক্ত ২ লাখ টাকা দিয়ে একটি পাম্প পূন:স'াপন করতে হবে যার ২০ বছর পরে মূল্য দাড়ায় ১২.২৭ লাখ টাকা। এ হিসেবে ১ লিটার পানির উত্তোলনের খরচ দাড়ায় ০.২৫ পয়সা। অন্যদিকে ৫ অশ্বশক্তি ৰমতা সম্পন্ন একটি ডিজেলচালিত পাম্প একই পরিমান পানি উত্তোলনে শুধু ডিজেল খরচ বাবদ ২০ বছরে খরচ হবে ১৩.২৮ লাখ টাকা (প্রতি লিটার ডিজেল ৪০ টাকা হিসেবে)। 
এর মাধ্যমে প্রতি লিটার পানি উত্তোলনে খরচ হবে ০.২৭ টাকা।

সৌরচালিত পানির পাম্পের সুবিধা: 

১. সৌর চালিত পানির পাম্প চালু করলে প্রতি পাম্পে প্রায় ২৫,০০০ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে পরিবেশ রৰা পাবে।
২. যদি প্রায় ১৩ লাখ ডিজেল চালিত পাম্পকে সৌর চালিত পাম্পে রূপান্তর করা হয় তাহলে প্রতিবছর প্রায় ১৪ লাখ ডিজেলের সাশ্রয় হবে যা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ থেকে দেশকে রৰা করবে।
৩. শুষ্ক মৌসুমে বিদ্যুত ও ডিজেলের অভাবে সেচ কার্য বাধাগ্রস' হবে না।
সমস্যা:
আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক প্রান্তিক শ্রেণীর তাই তাদের পৰে একক ভাবে বিপুল পরিমান টাকা যোগান দিয়ে সৌর পাম্প স'াপন করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি সৌর পাম্পের রৰণাবেৰণ করার জন্য যে কারিগরি দৰতা প্রয়োজন তা আমাদের অধিকাংশ কৃষকেরই অনুপসি'ত। সৌর বিদ্যুত স'াপনের জন্য কৃষি ঋণের অপর্যাপ্ততা এ খাতে অন্যতম বড় সমস্যা।
সম্ভাবনা:
সরকারি সহায়তার মাধ্যমে কৃষকদের সংগঠিত করে কমিউনিটি ভিত্তিতে সৌর পাম্প চালু করা সম্ভব। ইতোমধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে প্রতি উপজেলায় অনেক আইপিএম কৃষক ক্লাব প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এ ক্লাবগুলোকে সংগঠিত করে সেখানে কার্যকরভাবে সৌর চালিত পানির পাম্প অনায়াসে স'াপন করা সম্ভব। আমাদের দেশের আবহাওয়া বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে পরিষ্কার সূর্যের আলো অনুকুল থাকায় সৌর পাম্প কার্যকারিতা অটুট থাকবে। বাংলাদেশের যে সমস্ত এলাকায় বিদ্যুৎসরবরাহ নেই অথবা ডিজেল সরবরাহেরও যথাযথ ব্যবস'া নেই যেমন পার্বত্য ও দ্বীপ এলাকার বিস্তীর্ন কৃষি জমিকে সৌর চালিত পানির পাম্পের সাহায্যে চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
সুত্রঃ মো. আবদুলৱাহীল বাকী ভূইয়া, প্রভাষক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর ও প্রাক্তন এইও (এল আর), এআইএস।