প্লাস্টিকের খেলনা তৈরি।


বর্তমান যুগে প্লাস্টিকের পণ্যের বেশ চাহিদা রয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক পণ্য সামগ্রী প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি করা হয়। বাচ্চাদের খেলার জন্য প্লাস্টিক দিয়ে বিভিন্ন ধরণের খেলনা সামগ্রী তৈরি করা হয়। প্লাস্টিক দিয়ে যেসব খেলনা তৈরি করা হয় তার মধ্যে- বল, পুতুল, গাড়ি, প্লেন, পিস্তল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আবার এগুলো তৈরির পদ্ধতিও বেশ সহজ।


বাজার সম্ভাবনা 
মূলধন 
প্রশিক্ষণ 
প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান 
খেলনা তৈরির নিয়ম 
আনুমানিক আয় ও লাভের পরিমাণ 
সচরাচর জিজ্ঞাসা 

ছবি:প্লস্টিকের খেলনা
ছবি তোলার স্থান:মিরপুর, ঢাকা।


বাজার সম্ভাবনা 
বাচ্চাদের খেলনা সামগ্রী তৈরির ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের বিকল্প নেই কারণ প্লাস্টিকের খেলনা সহজে ভাঙ্গে না এবং কম দামেই ছোটখাট খেলনা পাওয়া যায়। দামে সস্তা ও রঙিন প্লাস্টিকের খেলনা গ্রাম বা শহর দুই জায়াগার বাচ্চাদের কাছেই সমান জনপ্রিয়। উন্নতমানের প্লাস্টিক দিয়ে খেলনা তৈরি করতে পারলে বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব।

মূলধন 
আনুমানিক ২৫০০০-30000 টাকার মূলধন নিয়ে প্লাস্টিকের খেলনা তৈরি ব্যবসা শুরু করা যায়। প্লাস্টিকের খেলনা তৈরি ব্যবসা শুরু করতে যদি নিজের কাছে প্রয়োজনীয় পুঁজি না থাকে তাহলে স্থানীয় ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) থেকে শর্ত সাপেক্ষে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া যেতে পারে। 

প্রশিক্ষণ 
প্লাস্টিকের খেলনা তৈরি শেখার জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। এজন্য সবচেয়ে ভাল হয় বড় বড় কারখানাগুলোর সাথে যোগাযোগ করা। প্লাস্টিকের খেলনা তৈরির ব্যবসা করে এমন কোন অভিজ্ঞ লোকের সাথে যোগাযোগ করেও এ ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান 
স্থায়ী উপকরণ 
উপকরণ 
পরিমাণ 
আনুমানিক মূল্য (টাকা) 
প্রাপ্তিস্থান 
স্ট্যাম্প মেশিন
১টি
২৫০০-২৬০০
যন্ত্রপাতি বিক্রির দোকান
ডাইস
৫টি
৬০০০-৬১০০
যন্ত্রপাতি বিক্রির দোকান
টেবিল
২টি
১০০০-১১০০
কাঠের দোকান
হাত পাম্প মেশিন
৩টি
৬০০-৬৫০
যন্ত্রপাতি বিক্রির দোকান
ফাইলিং মেশিন
১টি
১০০০-১১০০
যন্ত্রপাতি বিক্রির দোকান
মোট=১১১০০-১১৫৫০ টাকা 
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা, নভেম্বর ২০০৯।



ছবি: বিভিন্ন রং-এর প্লস্টিকের দানা
ছবি তোলার স্থান: কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা।
ছবি: প্লস্টিকের খেলনা তৈরির যন্ত্র
ছবি তোলার স্থান: কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা।

কাঁচামাল (২৮৭ গ্রোস মাল তৈরির জন্য) 
উপকরণ 
পরিমাণ 
আনুমানিক মূল্য (টাকা) 
প্রাপ্তিস্থান 
মারলেস পাউডার
১৫০ পাউন্ড
৩৯০০-৪০০০
রাসায়নিক দ্রব্য বিক্রির দোকান
এল গাথেন পাউডার
৬০ পাউন্ড
১৫০০-১৬০০
রাসায়নিক দ্রব্য বিক্রির দোকান
পি পি পাউডার
৩০ পাউন্ড
৭৫০-৮০০
রাসায়নিক দ্রব্য বিক্রির দোকান
রিপিট
৩০ কেজি
৭৫০-৮০০
রাসায়নিক দ্রব্য বিক্রির দোকান
ব্যাগ/ প্যাকেজিং
১০ পাউন্ড
২৮০-৩০০
হার্ডওয়ারের দোকান
রশি
৩ বান্ডিল
১০৫-১১৫
হার্ডওয়ারের দোকান
চায়না রং
(
লাল, নীল, রূপালী)
২০০ গ্রাম
করে
৯০-১০০
হার্ডওয়ারের দোকান
মোট= ৭৩৪৫-৭৭১৫ টাকা 
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কেরানীগঞ্জ,ঢাকা, নভেম্বর ২০০৯।

খেলনা তৈরির নিয়ম 
প্লাস্টিকের খেলনা তৈরির ক্ষেত্রে প্রথমে দানা গুলোকে মেশিনের হাপরের মধ্যে ঢালতে হবে।
এরপর হাওয়া মেশিন চালাতে হবে। যখন সিলিন্ডারে পিস্টনের চাপ পড়ে তখন প্লাস্টিক গরম হয়ে তরল আকারে বইতে থাকে।
এরপর এই তরল প্রথমে ইঞ্জেকশন নলে ইঞ্জেকশন প্রান্তে এসে পৌছায়। এর প্রধান মুখে একটি স্টক থাকে। এই স্টকের কাজ হল, যে বস্ত্তটি তৈরি করা হবে তার আকার দেয়া হয়।
স্টকে ছোট ছোট ছিদ্রপথ থাকে। এগুলোকে গ্রেডস বলে। এই গ্রেডস এর বিভিন্ন ছিদ্র পথে ছাঁচে গরম তরল প্লাস্টিক ভরে যায়।
ছাঁচগুলোকে পানি দিয়ে ঠান্ডা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে প্লাস্টিক যত তাড়াতাড়ি ছাঁচের ভিতর গিয়ে ঢুকবে ততই ভালো। বেশি দেরী হলে তরল প্লাস্টিক গ্রেডসে জমে যেতে পারে। তখন প্লাস্টিক ছাঁচে পৌছানোর পথে বাঁধা দেয়। এজন্য যতক্ষণ না প্লাস্টিক ছাঁচের মধ্যে পৌছাবে ততক্ষণ পিস্টনকে চাপের মধ্যে রাখতে হবে।
ঠান্ডা হওয়ার পর ছাঁচটি খুলে প্লাস্টিকের খেলনাটি বের করে আনতে হবে।



সাবধানতা 
প্লাস্টিকের খেলনা তৈরি করতে হলে কিছু ব্যপারে সাবধান থাকতে হবে-
মেশিনে দানা ঢালার সময় সাবধান থাকতে হবে যেন সেগুলো নাকে মুখে না লাগে। এজন্য নাকে মুখে মাস্ক এবং হাতে গ্লাভস্ বা দস্তানা ব্যবহার করা উচিত।
যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সময় অনেক ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে সেজন্য সাবধান থাকতে হবে।
গলানো প্লাস্টিক যত দ্রুত সম্ভব ছাঁচের মধ্যে দিতে হবে কারণ দেরী হলে মেশিনের মধ্যেই প্লাস্টিক জমে যেতে পারে।
দানা গলানোর ক্ষেত্রে যে তাপ দেয়া হয় তা নির্দিষ্ট মাত্রায় হতে হবে। কমবেশী হলে সঠিক জিনিস তৈরিতে সমস্যা হবে।


আনুমানিক আয় ও লাভের পরিমাণ 
খরচ 
স্থায়ী যন্ত্রপাতির অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ
১০-১৫ টাকা
কাঁচামাল বাবদ খরচ
১১১০০-১১৫০০ টাকা
ঘর ভাড়া বাবদ খরচ
৪০০০-৪৫০০ টাকা
বিদ্যুৎ ও অন্যান্য
১৫০০-১৬০০ টাকা
মোট= ১৬৬১০-১৭৬১৫ টাক
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কেরানীগঞ্জ,ঢাকা, নভেম্বর ২০০৯।
আয় ও লাভ 
ছকে দেখানো পাউডারের পরিমাণ দিয়ে আনুমানিক ২৮৭ গ্রোস খেলনা তৈরি করা সম্ভব।
প্রতি গ্রোস খেলনার পাইকারী মূল্য আনুমানিক ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা।
তাহলে আয় হয় ২৮৭x (১৪৫ থেকে ১৫০)=৪১৬১৫ থেকে ৪৩০৫০ টাকা।
লাভ (আয়-ব্যয়) = (৪১৬১৫ থেকে ৪৩০৫০)-(১৬৬১০ থেকে ১৭৬১৫) টাকা
=
২৫০০৫ থেকে ২৫৪৩৫ টাকা।
তবে সময় ও স্থানভেদে এর কম বা বেশি লাভ হতে পারে।
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, কেরানীগঞ্জ,ঢাকা, নভেম্বর ২০০৯।

পুঁজির পরিমাণ বেশি থাকলে যে কোন ব্যক্তি প্লাস্টিকের খেলনা তৈরি ব্যবসার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

সচরাচর জিজ্ঞাসা 
প্রশ্ন ১ : প্লাস্টিকের খেলনা তৈরির বাজার কেমন ? 
উত্তর : শহর বা গ্রাম দুজায়গাতেই প্লাস্টিকের খেলনার চাহিদা রয়েছে। এছাড়া বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব।
প্রশ্ন ২ : প্লাস্টিকের খেলনা তৈরির ব্যবসায় কি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে ? 
উত্তর : প্লাস্টিকের খেলনা তৈরি ব্যবসায় প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে।
প্রশ্ন ৩ : প্লাস্টিকের খেলনা তৈরি ব্যবসায় কি পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন ? 
উত্তর : ২৫০০০-৩০০০০ টাকা মূলধন নিয়ে প্লাস্টিকের খেলনা ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে।

1 comments:

Unknown said... Udyokta

বিষয়টা পরিষ্কার করে বুঝতে পারলাম না