শখের বশে আমরা অনেকেই টবে
বা ছাদে কাঁচামরিচ,ধনেপাতা, টমেটো, পুদিনা ইত্যাদি ছোট সবজি লাগাই। কিন্তু শখের বশে
আলু লাগানোর শখ অনেকেই করি না। কাজটিকে আমি ঠিক সাহস বলবো না, তবে পণ্ডশ্রম হবে ভেবে
কিংবা বাগানে মাটিতে লাগানোর মত আশানুরুপ ফল পাওয়া যাবে না এই ভেবে অনেকেই টবে আলু
চাষ করতে চান না। তাদের জন্য আছে কনটেইনারে বা ব্যারেলে ( আমাদের দেশে ব্যারেল বা কাঠের
পিপা পাওয়া কঠিন এই ক্ষেত্রে আপনি রঙের খালি কনটেইনার ব্যাবহার করতে পারেন) বাগান পদ্ধতি।
কনটেইনারে একটু বড় পরিসরে বাগান করা যায়। এতে সৌখিন বাগানিদের শখের খোরাক এবং আশানুরুপ
ফলন দুই ই মিলবে।
সুবিধা
কনটেইনারে বাগান করা অনেক
সহজ। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বাগান করে অনেক বেশি ফলন পাওয়া যায়। সারের অপচয় হয় না। আগাছা
, ছত্রাক এবং পোকা মাকড় থেকে দূরে থাকা যায়। ছাদে, বারান্দায় বা যে কোন জায়গায় স্থাপন
করা যায়।কনটেইনারে আলু চাষ করলে তা আহরণ করা যায় খুবই সহজে। গর্ত করে বা কোদাল দিয়ে
খনন করে ফসল নষ্ট হবে না । শুধুমাত্র কনটেইনারে উপুড় করে ফেললেই হল।
টব
কনটেইনার নির্বাচন ও প্রস্ততি
৪০-৫০ লিটার বা ২ থেকে
৩ ফুট উচ্চতার যে কোন রঙের, পানির কনটেইনার, পানির বালতি বা যে কোন ফুড গ্রেডের কনটেইনার
বাগান করার জন্য ব্যাবহার করা যেতে পারে। অতিরিক্ত পানি নির্গমনের জন্য প্রতিটি কনটেইনারে
নিচে ৩/৪ ইঞ্চি সাইজের ৫ -৬ টি ছিদ্র করে নিতে হবে। কনটেইনারে আলু চাষের জন্য ভালো
পানি নিষ্কাশন ব্যাবস্থা থাকা খুবই জরুরি। তারপর কনটেইনার টি ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে
হবে।
আলুর চাষ
বীজ সংগ্রহ ও চারা রোপণ
আলুর বীজ দুইভাবে সংগ্রহ
করা যেতে পারে। বীজ থেকে এবং আলুর কাটিং থেকে। বীজের চারা সরাসরি নার্সারি থেকে সংগ্রহ
করা যেতে পারে আর কাটিং চারা পেতে পারেন বিগত বছরের আলু থেকে। পুরনো আলু থেকে ছোট ছোট
অঙ্কুর বের হয়। সেই অঙ্কুর গুলোকে আলু সমেত ১-২ ইঞ্চি কিউব করে কেটে অঙ্কুরটি ঊর্ধ্ব
মুখী করে একটি ডিমের কেসে রাখতে হবে। । অঙ্কুর গুলোকে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে।
এবার কন্টেইনারের নিচের
দিকে আনুমানিক ৬ ইঞ্চি পরিমাণ স্থান ঝুরঝুরে কম্পোষ্ট মিশ্রিত মাটি দিয়ে ভরতে হবে,
আপনি চাইলে কয়লা,নারকেলের ছোবড়া বা কচুরিপানা ব্যাবহার করতে পারেন। এতে করে মাটিতে
আদ্রতা বজায় থাকবে এবং মাটি থাকবে ঝুরঝুরে। অঙ্কুর গুলো নিরাপদ দূরত্বে রেখে রোপণ করুন।
অঙ্কুরের নিচের অংশটি মাটি দিয়ে ঢেকে দিন। আর বীজ থেকে গাছ উৎপাদন করলে বীজ গুলোকে
মাটির উপর ছিটিয়ে দিন। মাটিগুলো একটু ভেজা রাখা ভালো তবে খেয়াল রাখবেন আলুগুলো যেন
পচে না যায়।
আলু গাছ
অতিরিক্ত মাটি যোগ করুন
গাছগুলো ৬-৮ ইঞ্চি পর্যন্ত
দীর্ঘ হলে গাছ গুলোর ৩ ভাগের ২ অংশ আরো এক লেয়ার কম্পোষ্ট মিশ্রিত মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে
হবে। এভাবে কন্টেইনারের উপর পর্যন্ত গাছগুলোকে ধাপে ধাপে কম্পোষ্ট মিশ্রিত মাটি দিয়ে
ঢেকে দিয়ে পর্যাপ্ত পানি সেচন করতে হবে ( মানে গাছ যত বড় হবে, মাটির লেয়ারও তত উঁচুতে
উঠবে) ।
ফসল তোলার পালা
প্রায় ১০ সপ্তাহ পর আলু
গাছের ফুলগুলো হলুদ হওয়া শুরু করলে আলু তোলার জন্য পুরোপুরি উপযোগী হয়ে পড়বে। প্রথমে
উপরের আলুগুলো সাবধানে বের করে আনতে হবে, এরপর পুরো উলটে ফেলে সমস্ত মাটি বের করে ফেলতে
হবে। মাটি থেকে আলুগুলো আলাদা করে ফেলতে হবে।
ব্যারেল বা কনটেইনারে আলু চাষের আরো কিছু টিপস
প্রথম বছর ফসল তোলার পর
কিছু আলু বীজ হিসেবে পরবর্তী বছরের জন্য রেখে দেয়া যেতে পারে। শিম গাছের ঝোপ আলু চাষাবাদের
জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী।
মাটির পরিবর্তে কাঠের গুড়া
ব্যাবহার করতে পারেন। এই টিপস গুলোতে সফল না হলে অন্য কনটেইনারে বীজে উৎপাদিত গাছ লাগিয়েও
পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
সূত্র: সৌখিনবিডিডটকম
0 comments:
মন্তব্য করুন