চিনির চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি।
শুনে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। গাছটির নাম স্টেভিয়া। বলা যেতে পারে মধুগাছ কিংবা মিষ্টিগাছ।
গাছটির আদিবাস প্যারাগুয়েতে। পরে আমেরিকা, চীন,
কানাডা, কোরিয়া, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড মেক্সিকোসহ
আরো অনেক দেশে চাষ শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে সমপ্রতি ব্র্যাক নার্সারি গাজীপুরে বাণিজ্যিকভাবে
চাষের জন্য টিস্যু কালচারের মাধ্যমে চারা উৎপাদন শুরু করেছে। সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস
প্রতিরোধক ও চিনির বিকল্প হিসেবে স্টেভিয়া জনপ্রিয় হচ্ছে। চিনির চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি
মিষ্টি : পাতা সবুজ অবস্থাতেই চিনির চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি। পাতা শুকিয়ে প্রসেস
করলে মিষ্টির পরিমাণ আরো বেড়ে যায়।
স্টেভিয়া ইংরেজি নাম। এর মধ্যে কোনো
ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেড নেই। যার কারনে ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা অনায়াসে খেতে পারেন।
এছাড়া ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ, উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধসহ
ত্বকের ক্ষত নিরাময় করে।
জমি : দোআশ ও বেলে দোআশ মাটিতে সবচেয়ে ভালো হয়। পানি জমে না এমন জমিতে চাষ করতে
হবে। শুধুমাত্র এ্যাটেঁল মাটিতে চাষ না করাই ভালো।
জমি তৈরি : অন্যান্য ফসলের মতো ৪/৫টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা ও
জমি সমান করে নিতে হবে।
বীজ/ চারা/ কলম রোপণ : স্টেভিয়ার বীজ ৭-৮ দিন গ্রিন হাউসে রেখে গজিয়ে তারপর রোপণ
করাই ভালো। টিস্যু কালচার চারা দিয়ে চাষ করা যায়। ব্র্যাক নার্সারি গাজীপুর বা আপনার
নিকস্থ কোনো নার্সারি থেকে চারা কিনে চাষ করতে পারেন। তাছাড়া গাছের কাটিং বা শাখা
কলম থেকে চাষ করা যায়। প্রতিশতকে প্রায় ৫০০টি চারা লাগে। চারা থেকে চারার দূরত্ব
৬-৭ ইঞ্চি এবং লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ১৮-২০ ইঞ্চি হলে ভালো হয়।
সার : স্টেভিয়ার সারের চাহিদা তুলনামূলক কম। তারপরও মাটি পরীক্ষা করে প্রয়োজনমতো
সার দিতে হবে। গোবর ও খৈল পর্যাপ্ত পরিমাণে দিতে হবে। তবে অনুমোদিত গড় মাত্রা হলো
বিঘাপ্রতি ইউরিয়া-৩ কেজি, টিএসপি-৬ কেজি, এমপি- ৬ কেজি সারসহ অন্যান্য সার দিতে হবে।
সেচ ও নিকাশ : রোপণ করার পর স্টেভিয়া ক্ষেতে বারবার সেচ দিতে হবে। শুকনো
মৌসুমে একদিন পর পর সেচ দিতে হবে। গাছের কান্ডের অগ্রভাগ শুকিয়ে গেলে সেচের পরিমাণ
বাড়িয়ে দিতে হবে। আপনাকে সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে পানি জমে না থাকে। পানি জমার
সঙ্গে সঙ্গে নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
আগাছা পরিষ্কার : স্টেভিয়া ক্ষেতে আগাছা হলে তা নিড়ানি দিয়ে তুলে ফেলতে
হবে। সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
রোগবালাই : সেপ্টেরিকা ও স্কোরোশিয়ানা এ দুটি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা
দিয়ে থাকে। পেকামাকড়ের মধ্যে কাটওয়ার্মের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। এরজন্য বিশেষজ্ঞদের
পরামর্শ নিতে পারেন।
অন্যান্য পরিচর্যা : কোনো কারণে চারা মরে গেলে নতুন চারা রোপণ করতে হবে। যেকোনো
রোগবালাই দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে। বেশি শাখা হলে ছাঁটাই করার
ব্যবস্থা নিতে হবে।
পাতার কাজ : বিজ্ঞানীদের মতে, উচ্চরক্তচাপ ও বস্নাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। যকৃত ও প্লীহায়
পুষ্টি সরবরাহ করে। ত্বকের ও দাঁতের ক্ষয়রোধসহ খাদ্য হজমে সহায়তা করে। চিনির বিকল্প
হিসেবে সবাই খেতে পারেন। সম্পূর্ণ নিরাপদ। পাতা সবুজ ও শুকনো চিবিয়ে কিংবা চায়ের
সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে বোতলে সংরক্ষণ করা যায়। অনেকে
পানের সঙ্গে মিষ্টি জর্দার পরিবর্তে স্টেভিয়া গুঁড়া করে ব্যবহার করেন। বর্তমানে আমাদের
দেশে স্টেভিয়ার চাহিদা বাড়ছে। তবে বিদেশে এর অনেক বড় বাজার রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এক একরে স্টেভিয়া চাষ করে বছরে ৪-৫ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
হাসানুর রহমান খান বকুল
লেখক : সাংবাদিক ও কৃষি লেখক
0 comments:
মন্তব্য করুন