আমিরের ধানকাটা যন্ত্র : দু’ঘণ্টায় কাটা যাবে এক একর জমির ধান

আসাদুজ্জামান ফিরোজ, বগুড়া
বগুড়ার প্রকৌশলী আমির হোসেন এবার হালকা ও সস্তা ধানকাটা মেশিন তৈরি করেছেন। এ মেশিন দিয়ে ধান-গম-ভুট্টা-পাট ও আখ কাটা যাবে। যন্ত্রটির নাম কলের কাচিঁ
আমির হোসেনের তৈরি এ মেশিনে দুঘণ্টায় এক একর জমির ধান কাটা যাবে। এজন্য খরচ হবে ২ লিটার পেট্রোল। ১ দশমিক ৫ হর্স পাওয়ারের মেশিন খুব হালকা, ১০/১৫ কেজি ওজন। নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী যে কেউ সহজেই যন্ত্রটি চালিয়ে ধান-পাট-গম-ভুট্টা-তিল-আখ গাছ কাটতে পারবেন। আপাতত পেট্রোল ইঞ্জিন তৈরি করলেও তিনি পরে এটিকে সোলার পাওয়ার মেশিনে রূপান্তরিত করবেন বলে জানান।
তৈরি হলো যেভাবে: কোনো যন্ত্র একবার মনে ধরলে অবিকল সে-রকম যন্ত্র বানানোর চেষ্টা করেন আমির হোসেন। এটি তাঁর শখ। বছরখানেক আগে তিনি গাজীপুরে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে গিয়ে ধান কাটার একটি যন্ত্র দেখেন। যন্ত্রটি বেশ বড়। আমির জানতে পারেন, বিদেশ থেকে এটি প্রায় ১২ লাখ টাকায় কেনা হয়েছে। যন্ত্রটি তাঁর মনে ধরে। স্বল্পমূল্যে চাষিদের এমন একটি যন্ত্র উপহার দেওয়ার কথা ভাবেন তিনি।
 বাড়ি ফিরে আমির তাঁর মেয়ে আশার সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করেন। আশা বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজের শিক্ষার্থী। যন্ত্রের নকশা তৈরির ওপর স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ রয়েছে তাঁর। বাবার কথামতো ধান কাটার যন্ত্রের একটি নকশা তৈরি করেন তিনি। আমির নকশামতো যন্ত্র তৈরিতে নেমে পড়েন। প্রায় এক বছর ধরে এই মেধা ও শ্রম দিয়ে তিনি তৈরি করেন কলের কাঁচি
 এই কলের কাস্তে তৈরিতে আমির দেশীয় উপকরণ ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে পাইপ, কার্বন স্টিল পেনিয়াম, কার্বন স্টিল ব্লেড রয়েছে। যন্ত্রে জুড়ে দেওয়া হয়েছে দেড় অশ্বশক্তির পেট্রলচালিত ইঞ্জিন।
 আমির জানান, তাঁর কলের কাঁচি দিয়ে দুই ঘণ্টায় এক একর জমির ধান কাটা যাবে। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ হবে ৬০৭০ টাকা। যন্ত্রটি তুলনামূলকভাবে হালকা হওয়ায় এটি দিয়ে পূর্ণবয়স্ক যে কেউ সহজে ক্ষেতের ফসল কাটতে পারবেন। তিনি জানান, কৃষকেরা এখন যন্ত্রটি আট হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় কিনতে পারবেন। যন্ত্রটি আরও সস্তা ও আধুনিক করতে তিনি কৃষি ও শিল্পমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে কৃষক পাঁচ-ছয় হাজার টাকায় এটি কিনতে পারবেন।
একজন কৃষক মাত্র ৮/১০ মণ চাল বিক্রি করে এ মেশিন ৮/১০ হাজার টাকায় কিনতে পারবেন। ইঞ্জিনের বিশেষত্ব, ধান-পাট-গম যে অবস্থায় থাকুক, যে অবস্থায় লাগানো হোক, খাড়া থাক বা মাটিতে হেলে পড়ুক, সহজেই এসব কাটা যাবে।
এ মেশিন দিয়ে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটে এক বিঘা জমির ধান কেটে দেখিয়েছেন আমির হোসেন বগুড়া পৌর এলাকার ধরমপুর গ্রামের মাঠে। এক বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ হবে মাত্র ৬০/৭০ টাকা। বগুড়া শহরের কাটনারপাড়া রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারী আমির হোসেন দাবি করেছেনচীন, জাপান, ভারত, থাইল্যান্ড কোনো দেশ এখনও তার মতো হালকা, টেকসই ও সস্তা শস্যকাটার মেশিন তৈরি করতে পারেনি। তারা যা তৈরি করেছে, তা অনেক ভারি, দামি ও ব্যয়বহুল। ওইসব যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে ধান-পাট-গম লাইন করে লাগাতে হয় এবং খাড়া হয়ে থাকতে হয়। কিন্তু মাটিতে ধান-পাট-গমের গাছ হেলে পড়লেও আমিরের তৈরি মেশিন দিয়ে সহজেই কাটা যাবে।
বোরো মৌসুমে একসঙ্গে লাখ লাখ একর জমির ধান পেকে যায়। শ্রমিকের অভাবে কৃষক ধান কাটতে পারে না। সে সময় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকায় শঙ্কিত থাকে কৃষক। অনেকেই শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে না পারায় ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে সব নষ্ট হয়ে যায়। একথা চিন্তা করে আমির হোসেন হালকা ও সস্তা এ ধানকাটার মেশিন তৈরি করেছেন।
এ মেশিন আরও সস্তা ও আধুনিক করার জন্য কৃষিমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সহযোগিতা চেয়েছেন আমির হোসেন। সোলার পাওয়ারে এ মেশিন চালানো গেলে শস্য কাটতে কোনো খরচ লাগবে না। এ প্রযুক্তির ওপর তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ৬ বিভাগের ৬শ কৃষকের মধ্যে তার এই সস্তা ধানকাটা মেশিন নামমাত্র মূল্যে তৈরি করে দিতে চান। কৃষিকে যান্ত্রিক ও আধুনিকীকরণের জন্য এটি তার আর একটি নতুন পদক্ষেপ।

এ ব্যাপারে বগুড়ার কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রোস্তম আলী সাংবাদিকদের বলেন, এই যন্ত্র ব্যবহার করে কৃষককুল উপকৃত হবে। ধান কাটতে খরচ ও সময় দুই-ই বাঁচবে।

ভিডিও লিংক

4 comments:

Unknown said... Udyokta

কোন ছবি নাই কেন?আপনার বা আপনার যন্তের?

Badal said... Udyokta

ছবি দেখুন।

Unknown said... Udyokta

ভাই, আমি হবিগন্জ জেলার সায়েস্হাগনজ থানার বাসিন্দা,আমার ফোন:০১৮২০৫০৬৬৭৫,আপনার কলের কাচি আমার দরকার,দয়া করে যোগাযোগ করুন,

Badal said... Udyokta

বগুড়া শহরের কাটনার পাড়ার ঠিকাদারপাড়া লেনের বাসিন্দা আমির হোসেন। তার অন্য নাম ধলু মেকার। সেখানে রয়েছে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ। আপনি সেখান যোগাযোগ করতে পারেন। তার সাথে যোগাযোগের ফোন নম্বার ০১৭১৪-৪২২৪৬৭।