সালাতের সময়

পরিচ্ছেদঃ ৩৫৫। যথাসময়ে সালাত আদায়ের ফযীলত।

৫০২। আবূল ওয়ালীদ হিশাম ইবনু আবদুল মালেক (রহঃ) .... আবূ আমর শায়বানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর বাড়ীর দিকে ইশারা করে বলেন, এ বাড়ীর মালিক আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম, কোন্ আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, যথাসময়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, এরপর পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) আবার জিজ্ঞাসা করলেন, এরপর কোনটি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরপর জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ্ (আল্লাহর পথে জিহাদ)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, এগুলো তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনই, যদি আমি আরও বেশী জানতে চাইতাম, তাহলে তিনি আরও বলতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৫৬। পাঁচ ওয়াক্তের সালাত (গুনাসমূহের) কাফ্‌ফারা।

৫০৩। ইব্রাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, “বলত যদি তোমাদের কারো বাড়ীর সামনে একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার দেহে কোন ময়লা থাকবে?” তারা বললেন, তার দেহে কোনরূপ ময়লা বাকী থাকবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ)-এর উদাহরণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা (বান্দার) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৫৭। নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বে সালাত আদায় করে তার হক নষ্ট করা।

৫০৪। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) .... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আজকাল কোন জিনিসই সে অবস্থায় পাই না, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে ছিল। প্রশ্ন করা হল, সালাত (নামায/নামাজ)ও কি? তিনি বললেন, সে ক্ষেত্রেও যা হক নষ্ট করার তা-কি তোমরা করনি?

পরিচ্ছেদঃ ৩৫৭। নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বে সালাত আদায় করে তার হক নষ্ট করা।

৫০৫। আমর্ ইবনু যুরারা (রহঃ) .... যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি দামেশ্‌কে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম, তিনি তখন কাঁদছিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে যা কিছু পেয়েছি তার মধ্যে কেবলমাত্র সালাত (নামায/নামাজ) ছাড়া আর কিছুই বহাল নেই। কিন্তু সালাতকেও নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

বাকর (রহঃ) বলেন, আমার কাছে মুহাম্মাদ ইবনু বকর বুরসানী (রহঃ) উসমান ইবনুু্ আবূ রাওওয়াদ (রহঃ) সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৫৮। মুসল্লী সালাতে তার মহান প্রতিপালকের সাথে গোপনে কথা বলে।

৫০৬। মুসলিম ইবনুু্ ইবরাহিম (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে (নামায/নামাজ) দাঁড়ায়, তখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে গোপনে কথা বলে। কাজেই, সে যেন ডানদিকে থুথু না ফেলে, তবে (প্রয়োজনে) বাম পায়ের নীচে ফেলতে পারে।

আর শু'বা (রহঃ) বলেন, সে যেন কিবলার দিকে অথবা ডান দিকে থুথু না ফেলে, কিন্তু বামদিকে অথবা পায়ের তলায় ফেলতে পারে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৫৮। মুসল্লী সালাতে তার মহান প্রতিপালকের সাথে গোপনে কথা বলে।

৫০৭। হাফস ইবনু উমর (রহঃ) ..... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সিজদায় মধ্যপন্থা অবলম্বন কর। তোমাদের কেউ যেন তার বাহুদ্বয় বিছিয়ে না দেয় কুকুরের মত। আর যদি থুথু ফেলতে হয়, তাহলে সে যেন সামনে বা ডানে না ফেলে। কেননা, সে তখন তার প্রতিপালকের সঙ্গে গোপন কথায় লিপ্ত থাকে

পরিচ্ছেদঃ ৩৫৯। প্রচণ্ড গরমের সময় যুহরের সালাত ঠাণ্ডায় আদায় করা।

৫০৮। আয়্যূব ইবনু সুলাইমান (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা ও আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন গরমের প্রচণ্ডতা বৃদ্ধি পায়, তখন গরম কমলে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের অংশ।

পরিচ্ছেদঃ ৩৫৯। প্রচণ্ড গরমের সময় যুহরের সালাত ঠাণ্ডায় আদায় করা।

৫০৯। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) .... আবূ যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুয়ায্‌যীন আযান দিলে তিনি বললেনঃ ঠান্ডা হতে দাও,ঠান্ডা হতে দাও। অথবা তিনি বললেন, অপেক্ষা কর, অপেক্ষা কর। তিনি আরও বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের ফলেই সৃষ্টি হয়। কাজেই গরম যখন বেড়ে যায় তখন গরম কমলেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। এমনকি (বিলম্ব করতে করতে বেলা এতটুকু গড়িয়ে গিয়েছিল যে) আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩৫৯। প্রচণ্ড গরমের সময় যুহরের সালাত ঠাণ্ডায় আদায় করা।

৫১০। আলী ইবনু আবদুল্লাহ‌ মাদ্বীনী (রহঃ) .... আবূ হূরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন গরম বৃদ্ধি পায় তখন তোমরা তা কমে এলে (যুহরের) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করো। কেননা, গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপের অংশ। (তারপর তিনি বলেন), জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলেছে। ফলে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে দু’টি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন, একটি শীতকালে আর একটি গ্রীষ্মকালে। আর সে দু’টি হল, তোমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ঠ উত্তাপ এবং শীতকালে যে প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভব কর তাই।

পরিচ্ছেদঃ ৩৫৯। প্রচণ্ড গরমের সময় যুহরের সালাত ঠাণ্ডায় আদায় করা।

৫১১। উমর ইবনু হাফস (রহঃ) ..... আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) গরম কমলে আদায় কর। কেননা, গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। সুফিয়ান, ইয়াহ্ইয়া এবং আবূ আওয়ানা (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬০। সফরকালে গরম কমে গেলে যুহরের সালাত আদায়।

৫১২। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) ... আবূ যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়ায্‌যীন যুহরের আযান দিতে চেয়েছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ গরম কমতে দাও। কিছুক্ষন পর আবার মুয়ায্‌যীন আযান দিতে চাইলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পুনরায়) বললেনঃ গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (সালাত আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে, আমারা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। কাজেই গরম প্রচন্ড হলে উত্তাপ কমার পর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করো।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন হাদিসেتَتَفَيَّأ শব্দটিتَتَمَيَّلُ ঝুঁকে পড়া, গড়িয়ে পড়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬১। যুহরের ওয়াক্ত হয় সূর্য ঢলে পড়লে।

وَقَالَ جَابِرٌ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي بِالْهَاجِرَةِ

জাবির (রাঃ) বলেন, দুপুরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করতেন।


৫১৩। আবূল ইয়ামান (রহঃ) .... আনাস ইবনুু্ মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন সূর্য ঢলে পড়লে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এলেন এবং যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর মিম্বরে দাঁড়িয়ে কিয়ামত সম্বন্ধে আলোচনা করেন এবং বলেন যে, কিয়ামতে বহু ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটবে। এরপর তিনি বলেন, আমাকে কেউ কোন বিষয়ে প্রশ্ন করতে চাইলে করতে পারে। আমি যতক্ষন এ বৈঠকে আছি, এর মধ্যে তোমরা আমাকে যা কিছু জিজ্ঞাসা করবে আমি তা জানিয়ে দিব। এ শুনে লোকেরা খুব কাঁদতে শুরু করল। আর তিনি বলতে থাকলেনঃ আমাকে প্রশ্ন কর, আমাকে প্রশ্ন কর।

এ সময় আবদুল্লাহ্ ইবনু হুযাইফা সাহমী (রাঃ) দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার পিতা কে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার পিতা ‘হুযাইফা’। এরপর তিনি অনেকবার বললেনঃ আমাকে প্রশ্ন কর। তখন উমর (রাঃ) নতজানোু হয়ে বসে বললেন, “আমরা আল্লাহকে প্রতিপালক হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নাবী হিসাবে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। কিছুক্ষণ পর বললেনঃ এক্ষুনি এ দেওয়ালের পাশে জান্নাত ও জাহান্নাম আমার সামনে তুলে ধরা হয়েছিল; এত উত্তম ও এত নিকৃষ্টের মত কিছু আমি আর দেখিনি।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬১। যুহরের ওয়াক্ত হয় সূর্য ঢলে পড়লে।

৫১৪। হাফসা ইবনু উমর (রহঃ) ..... আবূ বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, যখন আমাদের একজন তার পার্শ্ববর্তী আপরজনকে চিনতে পারত। আর এ সালাত (নামায/নামাজ) তিনি ষাট থেকে একশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং যুহরের সালাত আদায় করতেন যখন সূর্য পশিম দিকে ঢলে পড়ত। তিনি আসরের সালাত আদায় করতেন এমন সময় যে, আমাদের কেউ মদিনার শেষ প্রান্তে পৌছে আবার ফিরে আসতে পারত, তখনও সূর্য সতেজ থাকত। রাবী বলেন, মাগরিব সম্পর্কে তিনি [আবূ বারযা (রাঃ)] কী বলেছিলেন, আমি তা ভুলে গেছি। আর ইশার সালাত রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতে তিনি কোনরূপ দ্বিধাবোধ করতেন নাতারপর রাবী বলেন, রাতের অর্ধাংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতে অসুবিধা বোধ করতেন না। আর মু’আয (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, শু’বা (রহঃ) বলেছেন, পরে আবূল মিনহালের (রহঃ) সংগে সাক্ষাত হয়েছিল, সে সময় তিনি বলেছেন, রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করতে অসুবিধা বোধ করতেন না।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬১। যুহরের ওয়াক্ত হয় সূর্য ঢলে পড়লে।

৫১৫। মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে গরমের সময় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম, তখন উত্তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কাপড়ের উপর সিজ্‌দা করতাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬২। যুহারের সালাত আসরের ওয়াক্তের আগ পর্যন্ত বিলম্ব করা।

৫১৬। আবূ নু’মান (রহঃ) ..... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা অবস্থানকালে (একবার) যুহর ও আসরের আট রাকাআত এবং মাগরিব ও ইশার সাত রাকাআত একত্রে মিলিয়ে আদায় করেন।* আয়্যূব (রহঃ) বলেন, সম্ভবত এটা বৃষ্টির রাতে হয়েছিল। জাবির (রহঃ) বললেন, সম্ভবত তাই।

*ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, বাড়ীতে অবস্থানকালে কোন প্রকার ভয় বা বৃষ্টি না থাকলে এরূপ করা যাবে না। এতে কারো দ্বিমত নেই। তবে ওযর থাকলে, কিংবা সফরের অবস্থায় এরুপ মিলিয়ে পড়া যাবে বলে ইমাম শাফেই, আহমাদ ও মালিক (রহঃ) মনে করেন। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মতে পৃথক পৃথকভাবে আদায় করতে হবে। এক নিয়্যাতে একত্রে আদায় করা জায়িয নয়।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৩। আসরের ওয়াক্ত

৫১৭। ইবরাহিম ইবনু মুনযির (রহঃ) ..... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন যে, তখনো সূর্যেরশ্মি ঘরের বাইরে যায়নি।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৩। আসরের ওয়াক্ত

৫১৮। কুতাইবা (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন যে, সূর্যেরশ্মি তখনো তাঁর ঘরের মধ্যে ছিল, আর ছায়া তখনো তাঁর ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েনি।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৩। আসরের ওয়াক্ত

৫১৯। আবূ নু’আইম (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, আর সূর্যকিরণ তখনো আমার ঘরে থাকত। সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার পরও পশ্চিমের ছায়া ঘরে দৃষ্টিগোচর হত না।

আবূ আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহঃ)] বলেন, ইমাম মালিক, ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ, শুআইব ও ইবনু আবূ হাফস্ (রহঃ) উক্ত সনদে এ হাদীসটির বর্ণনায় 'সূর্যেরশ্মি আমার ঘরের ভিতরে থাকত, ঘরের মেঝে ছায়া নেমে আসেনি' এরূপ বলেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৩। আসরের ওয়াক্ত

৫২০। মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) .... সায়্যার ইবনু সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি ও আমার পিতা আবূ বারযা আসলামী (রাঃ) এর কাছে গেলাম। আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয সালাতসমূহ কিভাবে আদায় করতেন? তিনি বললেন, আল-হাজীর, যাকে তোমরা আল-উলা বা যুহর বলে থাক, তা তিনি আদায় করতেন যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ত। আর আসরের সালাত (নামায/নামাজ) এমন সময় আদায় করতেন যে, তারপর আমাদের কেউ মদিনার শেষ প্রান্তে তার ঘরে ফিরে যেতো সূর্য তখনও সতেজ থাকতো। মাগরিব সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেন তা আমি ভুলে গেছি। আর ইশার সালাত যাকে তোমরা ‘আতামা’ বলে থাক, তা তিনি বিলম্বে আদায় করা পছন্দ করতেন। আর তিনি ইশার সালাতের আগে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। তিনি ফজরের সালাত এমন সময় সমাপ্ত করতেন যখন প্রত্যেকে তার পাশ্ববর্তী ব্যাক্তিকে চিনতে পারত। এ সালাতে তিনি ষাট থেকে একশ’ আয়াত তেলাওয়াত করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৩। আসরের ওয়াক্ত

৫২১। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম। সালাতের পর লোকেরা আওফ গোত্রের মহল্লায় গিয়ে তাদেরকে সালাত আদায় করা অবস্থায় পেত।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৩। আসরের ওয়াক্ত

৫২২। মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) ..... আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা উমর ইবনু আযীয (রহঃ)-এর সঙ্গে যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর কাছে গেলাম। আমরা গিয়ে তাঁকে আসরের সালাত আদায়ে রত পেলাম। আমি তাঁকে বললাম চাচা! এ কোন সালাত যা আপনি আদায় করলেন? তিনি বললেন, আসরের সালাত আর এ হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত, যা আমরা তাঁর সাথে আদায় করতাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৪। আসরের ওয়াক্ত।

৫২৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম, তারপর আমাদের কোন গমনকারী কুবার দিকে যেত এবং সূর্য যথেষ্ট উপরে থাকতেই সে তাদের কাছে পৌঁছে যেত।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৪। আসরের ওয়াক্ত।

৫২৪। আবূল ইয়ামান (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, আর সূর্য তখনও যথেষ্ট উপরে উজ্জ্বল অবস্থায় বিরাজমান থাকত। সালাতের পর কোন গমনকারী আওালির দিকে রওয়ানা হয়ে পৌঁছে যেত, আর তখনও সূর্য উপরে থাকত। আওালার কোন অংশ ছিল মদিনা থেকে চার মেইল বা তার কাছাকাছি দূরত্বে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৫। যে ব্যাক্তির আসরের সালাত ফাউত হল তার গুনাহ।

৫২৫। আব্দুল্ললাহ্ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোন ব্যাক্তির আসরের সালাত (নামায/নামাজ) ছুটে যায়, তাহলে যেন তার পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদ সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেল।

আবূ আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহঃ)] বলেন, (আরবী পরিভাষায়)وترت الرجل বাক্যটি ব্যবহার করা হয় যখন কেউ কাউকে হত্যা করে অথবা মাল-সম্পদ ছিনিয়ে নেয়।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৬। যে ব্যাক্তি আসরের সালাত ছেড়ে দিল তার গুনাহ

৫২৬। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) .... আবূ মালীহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমরা বুরাইদা (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। দিনটি ছিল মেঘাচ্ছন্ন। তাই বুরাইদা (রাঃ) বলেন, শীঘ্র আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নাও। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আসরের সালাত ছেড়ে দেয় তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৭। আসরের সালাতের ফযীলত

৫২৭। হুমাইদী (রহঃ) ... জরীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি রাতে (পূর্ণিমার) চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ ঐ চাঁদকে তোমরা যেমন দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভীড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই সূর্য উদয়ের এবং অস্ত যাওয়ার আগের সালাত (নামায/নামাজ) (শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে) আদায় করতে পারলে তোমরা তাই করবে। তারপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন, “কাজেই তোমার প্রতিপালকের প্রশ্নংসার তাসবীহ্ পাঠ কর সূর্য উদয়ের আগে ও অস্ত যওয়ার আগে।” (৫০ : ৩৯)

ইসমাঈল (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হলঃ এমনভাবে আদায় করার চেষ্টা করবে যেন কখনো ছুটে না যায়।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৭। আসরের সালাতের ফযীলত

৫২৮। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ফেরেশতাগণ পালা বদল করে তোমাদের মাঝে আগমন করেন; একদল দিনে, একদল রাতে। আসর ও ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) উভয় দল একত্র হন। তারপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী দলটি উঠে যান। তখন তাদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞাসা করেন, আমার বান্দাদের কোন্ অবস্থায় রেখে আসলে? অবশ্য তিনি নিজেই তাদের ব্যাপারে সর্বাধিক পরিজ্ঞাত। উত্তরে তাঁরা বলেনঃ আমরা তাদের সালাতে রেখে এসেছি, আর আমরা যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম তখনও তারা সালাতরত ছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৮। সূর্যাস্তের পূর্বে যে ব্যাক্তি আসরের এক রাকআত পায়।

৫২৯। আবূ ন’আইম (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে আসরের সালাতের এক সিজদা পায়, তাহলে সে যেন সালাত (নামায/নামাজ) পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্য উদিত হওয়ার আগে ফজরের সালাতর এক সিজদা পায়, তাহলে সে যেন সালাত (নামায/নামাজ) পূর্ণ করে নেয়।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৮। সূর্যাস্তের পূর্বে যে ব্যাক্তি আসরের এক রাকআত পায়।

৫৩০। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) .... সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, পূর্বেকার উম্মাতের স্থায়িত্বের তুলনায় তোমাদের স্থায়িত্ব হল আসর থেকে নিয়ে সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের অনুরূপ। তাওরাত অনুসারীদেরকে তাওরাত দেওয়া হয়েছিল। তারা তদনুসারে কাজ করতে লাগল; যখন দুপুর হল, তখন তারা অপারগ হয়ে পড়ল। তাদের এক এক ‘কীরাত’ করে পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়। তারপর ইনজীল অনুসারীদেরকে ইনজীল দেওয়া হল। তারা আসরের সালাত (নামায/নামাজ) পর্যন্ত কাজ করে অপারগ হয়ে পড়ল। তাদেরকে এক এক ‘কীরাত’ করে পারিশ্রমিক দেওয়া হল। তারপর আমাদেরকে কুরাআন দেওয়া হল। আমরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করলাম। আমদের দুই দুই ‘কীরাত’ করে দেওয়া হল। এতে উভয় কিতাবী সম্প্রদায় বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের দুই দুই ‘কীরাত’ করে দান করেছেন, আর আমাদেরকে দিয়েছেন এক এক কীরাত করে; অথচ আমলের দিক দিয়ে আমরাই বেশী। আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ তোমাদের পারিশ্রমিকের ব্যাপারে আমি কি তোমাদের প্রতি কোনরূপ যুলুম করেছি? তারা বলল, না। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বললেনঃ এ হল, আমার অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তাকে দেই।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৮। সূর্যাস্তের পূর্বে যে ব্যাক্তি আসরের এক রাকআত পায়।

৫৩১। আবূ কুরাইব (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুসলিম, ইয়াহূদী ও নাসারাদের উদাহারণ হল এরূপ, এক ব্যাক্তি একদল লোককে কাজে নিয়োগ করল, তারা তার জন্য রাত পর্যন্ত কাজ করবে। কিন্তু অর্ধদিবস পর্যন্ত কাজ করার পর তারা বলল, আপনার পারিশ্রমিকের আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। সে ব্যাক্তি অন্য আরেক দল লোককে কাজে নিয়োগ করল এবং বলল, তোমরা দিনের বাকী অংশ কাজ কর, তোমরা আমার নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাবে। তারা কাজ করতে শুরু করল। যখন আসরের সালাতের সময় হল, তখন তারা বলল, আমরা যা কাজ করেছি তা আপনার জন্য রেখে গেলাম। তারপর সে ব্যাক্তি আরেক দল লোককে কাজে নিয়োগ করল। তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত দিনের বাকী অংশ কাজ করল এবং সে দুই দলের পূর্ণ পারিশ্রমিক হাসিল করে নিল।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৯। মাগরিবের ওয়াক্ত। আতা রহঃ বলেন, রুগ্ন ব্যাক্তি মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করতে পারে।

৫৩২। মুহাম্মদ ইবনু মিহারান (রহঃ) .... রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে এমন সময় ফিরে আসতাম যে, আমাদের কেউ (তীর নিক্ষেপ করলে) নিক্ষিপ্ত তীর পতিত হওয়ার স্থান দেখতে পেত।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৯। মাগরিবের ওয়াক্ত। আতা রহঃ বলেন, রুগ্ন ব্যাক্তি মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করতে পারে।

৫৩৩। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) .... মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু হাসান ইবনু আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মুহাম্মদ ইবনু আমর (রহঃ) বলেন, হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ) (মদিনায়) এলে আমরা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-কে সালাতের ওয়াক্ত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম, (কেননা, হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ বিলম্ব করে সালাত আদায় করতেন)। তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) প্রচন্ড গরমের সময় আদায় করতেনআর আসরের সালাত সূর্য উজ্জল থাকতে আদায় করতেন, মাগরিবের সালাত সূর্য অস্ত যেতেই আর ইশার সালাত বিভিন্ন সময়ে আদায় করতেন। যদি দেখতেন, সবাই সমবেত হয়েছেন, তাহলে সকাল সকাল আদায় করতেন। আর যদি দেখতেন, লোকজন আসতে দেরী করছে, তাহলে বিলম্বে আদায় করতেন। আর ফজরের সালাত তাঁরা কিংবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকার থাকতে আদায় করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৯। মাগরিবের ওয়াক্ত। আতা রহঃ বলেন, রুগ্ন ব্যাক্তি মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করতে পারে।

৫৩৪। মাক্কী ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) ..... সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সূর্য পর্দার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩৬৯। মাগরিবের ওয়াক্ত। আতা রহঃ বলেন, রুগ্ন ব্যাক্তি মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করতে পারে।

৫৩৫। আদম (রহঃ) ..... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মাগরিব ও ইশার) সাত রাকআত ও (যুহর ও আসরের) আট রাকাআত একসাথে আদায় করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭০। মাগরিবকে ইশা বলা যিনি পছন্দ করেন না।

৫৩৬। আবূ মা’মার আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রহঃ) ..... আবদুল্লাহ‌ মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বেদুঈনরা মাগরিবের সালাতের নামের ব্যাপারে তোমাদের উপর যেন প্রভাব বিস্তার না করে। রাবী [আবদুল্লাহ‌ মুযানী (রাঃ)] বলেন, বেদুঈনরা মাগরিবকে ইশা বলে থাকে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭১। ইশা ও আতামা এর বর্ণনা এবং যিনি এতে কোন আপত্তি করেন না।

قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَثْقَلُ الصَّلاَةِ عَلَى الْمُنَافِقِينَ الْعِشَاءُ وَالْفَجْرُ». وَقَالَ: «لَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالْفَجْرِ». قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ وَالاِخْتِيَارُ أَنْ يَقُولَ الْعِشَاءُ لِقَوْلِهِ تَعَالَى: (وَمِنْ بَعْدِ صَلاَةِ الْعِشَاءِ). وَيُذْكَرُ عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ كُنَّا نَتَنَاوَبُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ صَلاَةِ الْعِشَاءِ فَأَعْتَمَ بِهَا. وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ وَعَائِشَةُ أَعْتَمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْعِشَاءِ. وَقَالَ بَعْضُهُمْ عَنْ عَائِشَةَ أَعْتَمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْعَتَمَةِ. وَقَالَ جَابِرٌ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي الْعِشَاءَ. وَقَالَ أَبُو بَرْزَةَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُؤَخِّرُ الْعِشَاءَ. وَقَالَ أَنَسٌ أَخَّرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِشَاءَ الآخِرَةَ. وَقَالَ ابْنُ عُمَرَ وَأَبُو أَيُّوبَ وَابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ صَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ

আবু হুরাইরা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, মুনাফিকদের জন্য সবচে কষ্টকর সালাত হল ইশা ও ফজর। তিনি আরও বলেছেন যে, তারা যদি জানত, আতামা (ইশা) ও ফজরে কি কল্যান নিহিত আছে। ইমাম বুখারি (রহঃ) বলেন, ইশা শব্দ ব্যাবহার করাই উত্তম। কেননা আল্লাহ্‌ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ (وَمِنْ بَعْدِ صَلاَةِ الْعِشَاءِ) আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমরা পালাক্রমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এখানে ইশার সালাতের সময় যেতাম। একবার তিনি তা দেরি করে আদায় করেন। ইবন আব্বাস ও আয়িশা (রাঃ) (এরূপ) বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আতমা দেরি করে আদায় করেন। জাবির (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত আদায় করলেন। আবু বারযা (রাঃ) বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত বিলম্বে আদায় করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ ইশা বিলম্বে আদায় করলেন। ইবন উমর, আবু আইউব ও ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব ও ইশার সালাত আদায় করেন।


৫৩৭। আবদান (রহঃ) .... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন, যে সালাত (নামায/নামাজ)কে লোকেরা ‘আতামা’ বলে থাকে। তারপর তিনি ফিরে আমাদের দিকে মুখ করে বললেন, আজকের এ রাত সম্পর্কে তোমরা জানো কি? এ রাত থেকে নিয়ে একশ’ বছরের শেষ মাথায় আজ যারা ভূপৃষ্ঠে আছে তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭২। ইশার সালাতের ওয়াক্ত লোকজন জামায়েত হয়ে গেলে বা বিলম্বে এলে

৫৩৮। মুসলিম ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) .... মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু হাসান ইবনু আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা জাবির ইব‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, মধ্যাহ্ন গড়ালেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত আদায় করতেন এবং সূর্য সতেজ থাকতেই আসর আদায় করতেন, আর সূর্য অস্ত গেলেই মাগরিব আদায় করতেন, আর লোক বেশী হয়ে গেলে ইশার সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করতেন এবং লোক কম হলে দেরী করতেন, আর ফজরের সালাত অন্ধকার থাকতেই আদায় করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭৩। ইশার সালাতের ফযীলত

৫৩৯। ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বিলম্ব করলেন। এ হল ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রসারের আগের কথা। (সালাতের জন্য) তিনি বেরিয়ে আসেননি, এমন কি উমর (রাঃ) বললেন, মহিলা ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। এরপর তিনি বেরিয়ে এলেন এবং মসজিদের লোকদের লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা ব্যতীত যমীনের অধিবাসীদের কেউ ইশার সালাতের জন্য অপেক্ষায় নেই।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭৩। ইশার সালাতের ফযীলত

৫৪০। মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) ..... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও আমার সঙ্গীরা-যারা (আবিসিনিয়া থেকে) জাহাজ যোগে আমার সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন- বাকী’য়ে বুতহানের একটি মুক্ত এলাকায় বসবাসরত ছিলাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থাকতেন মদিনায়। বুতহানের অধিবাসীরা পালাক্রমে একদল করে প্রতি রাতে এশার সালাতের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে আসতেন। পালাক্রমে ইশার সালাতের সময় আমি ও আমার কতিপয় সঙ্গী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হাযির হলাম। তখন তিনি কোন কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন, ফলে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে বিলম্ব করলেন। এমন কি রাত অর্ধেক হয়ে গেল।

তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এলেন এবং সবাইকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে তিনি উপস্থিত ব্যাক্তিদেরকে বললেনঃ প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে বসে যাও। তোমাদের সুসংবাদ দিচ্ছি যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য এটি এক নিয়ামত যে, তোমরা ব্যতীত মানুষের মধ্যে কেউ এ মুহূর্তে সালাত আদায় করছে না। কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ তোমরা ব্যতীত কোন উম্মাত এ সময় সালাত আদায় করেনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বাক্যটি বলেছিলেন বর্ণনাকারী তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ কথা শুনে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত মনে বাড়ী ফিরলাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭৪। ইশার সালাতের আগে ঘুমানো মাকরূহ।

৫৪১। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) .... আবূ বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার পূর্বে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭৫। ঘুম প্রবল হলে ইশার আগে ঘুমানো।

৫৪২। আয়্যূব ইবনু সুলাইমান (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেরী করলেন। উমর (রাঃ) তাঁকে বললেন, আস-সালাত। নারী ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। তারপর তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ তোমরা ব্যতীত পৃথিবীর আর কেউ এ সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে না। (রাবী বলেন) তখন মদিনা ব্যতীত অন্য কোথাও সালাত আদায় করা হত না। (তিনি আরও বলেন যে) পশ্চিম আকাশের ‘শাফাক’ অন্তর্হিত হওয়ার পর থেকে রাতের প্রথম এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে তাঁরা ইশার সালাত আদায় করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭৫। ঘুম প্রবল হলে ইশার আগে ঘুমানো।

৫৪৩। মাহমূদ (রহঃ) .... আবদুল্লাহ্ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক রাতে কর্মব্যস্ততার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে দেরী করলেন, এমন কি আমরা মসজিদে ঘুমিয়ে পড়লাম। তারপর জেগে উঠে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। এরপর আবার জেগে উঠলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন, তারপর বললেনঃ তোমরা ব্যতীত পৃথিবীর আর কেউ এ সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে না। ঘুম প্রবল হওয়ার কারণে এশার সালাত (নামায/নামাজ) বিনষ্ট হওয়ার আশংকা না থাকলে ইবনু উমর (রাঃ) তা আগেভাগে বা বিলম্ব করে আদায় করতে দ্বিধা করতেন না। কখনও কখনও তিনি ইশার আগে নিদ্রাও যেতেন।

ইবনু জুরাইজ (রহঃ) বলেন, এ বিষয়ে আমি আতা (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত আদায় করতে দেরী করেছিলেন, এমন কি লোকজন একবার ঘুমিয়ে জেগে উঠল, আবার ঘুমিয়ে পড়ে জাগ্রত হল। তখন উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) উঠে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, ‘আস-সালাত’।

আতা (রহঃ) বলেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, তারপর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এলেন-যেন এখনো আমি তাঁকে দেখছি- তাঁর মাথা থেকে পানি টপকে পড়ছিল এবং তাঁর হাত মাথার উপর ছিল। তিনি এসে বললেনঃ যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হবে বলে মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে এভাবে (বিলম্ব করে) ইশার সালাত আদায় করার নির্দেশ দিতাম।

ইবনু জুরাইজ (রহঃ) বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর বর্ণনা অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে মাথায় হাত রেখেছিলেন তা কিভাবে রেখেছিলেন, বিষয়টি সুস্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করার জন্য আতা (রহঃ)-কে বললাম। আতা (রহঃ) তাঁর আঙ্গুলগুলো সামান্য ফাঁকা করলেন, তারপর সেগুলোর অগ্রভাগ সম্মুখ দিক থেকে (চুলের অভ্যন্তরে) প্রবেশ করালেন। তারপর আঙ্গুলীগুলো একত্রিত করে মাথার উপর দিয়ে এভাবে টেনে নিলেন যে, তার বৃদ্ধাঙ্গুলী কানের সে পার্শ্বকে স্পর্শ করে গেল যা মুখমন্ডল সংলগ্ন চোয়ালের হাড্ডির উপর শ্মশ্রুর পাশে অবস্থিত। তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চুলের পানি ঝরাতে কিংবা চুল চাপড়াতে এরূপই করতেন। এবং তিনি বলেছিলেনঃ যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হবে বলে মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে এভাবেই (বিলম্ব করে) সালাত আদায় করার নির্দেশ দিতাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭৬। রাতের অর্ধাংশ পর্যন্ত ইশার ওয়াক্ত।

وَقَالَ أَبُو بَرْزَةَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَحِبُّ تَأْخِيرَهَا

আবু বারযা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত দেরীতে আদায় করা পছন্দ করতেন।


৫৪৪। আবদুর রহীম মুহারিবী (রহঃ) .... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একরাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত (নামায/নামাজ) অর্ধেক রাত পর্যন্ত বিলম্ব করলেন। তারপর সালাত আদায় করে তিনি বললেনঃ লোকেরা নিশ্চয়ই সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে। শোন! তোমরা যতক্ষণ সালাতের অপেক্ষায় ছিলে ততক্ষণ তোমরা সালাতেই ছিলে। ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ)-এর বর্ণনায় আরও আছে, তিনি বলেন, ইয়াহ্ইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) হুমাইদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (হুমাইদ) আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, সে রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আংটির উজ্জলতা আমি যেন এখনও দেখতে পাচ্ছি।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭৭। ফজরের সালাতের ফযীলত

৫৪৫। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) .... জারীর ইবনু আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ছিলাম। হঠা তিনি পূর্ণিমা রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, শোন! এটি যেমন দেখতে পাচ্ছ– তোমাদের প্রতিপালককেও তোমরা তেমনি দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই তোমরা যদি সূর্য উঠার আগের সালাত (নামায/নামাজ) ও সূর্য ডুবার আগের সালাত আদায়ে সমর্থ হও, তাহলে তাই কর। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ “সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ্ পাঠ করুন।” (৫০ঃ ৩৯)।

আবূ আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, ইবনু শিহাব (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে আরো বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে খালি চোখে দেখতে পাবে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭৭। ফজরের সালাতের ফযীলত

৫৪৬। হুদবা ইবনু খালিদ (রহঃ) ..... আবূ বকর ইবনু আবূ মূসা (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি দুই শীতের (ফজর ও আসরের) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে, সে জান্নাতে দাখিল হবে।

ইবনু রাজা (রহঃ) বলেন, হাম্মাম (রহঃ) আবূ জামরা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ বক্‌র ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (রহঃ) তাঁর নিকট এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭৭। ফজরের সালাতের ফযীলত

৫৪৭। ইসহাক (রহঃ) ..... আবু বকর ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। [দেখুন হাদিস নম্বরঃ ৫৪৬]

পরিচ্ছেদঃ ৩৭৮। ফজরের ওয়াক্ত

৫৪৮। আমর ইবনু আসিম (রহঃ) ..... যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাহরী খেয়েছেন, তারপর ফজরের সালাতে দাঁড়িয়েছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ দু’য়ের মাঝে কতটুকু সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, পঞ্চাশ বা ষাট আয়াত তিলাওয়াত করা যায়, এরূপ সময়ের ব্যবধান ছিল।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭৮। ফজরের ওয়াক্ত

৫৪৯। হাসান ইবনু সাব্বাহ্ (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) একসাথে সাহরী খাচ্ছিলেন, যখন তাঁদের খাওয়া হয়ে গেল– আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ফজরের) সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমরা আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, তাঁদের সাহরী খাওয়া থেকে অবসর হয়ে সালাত শুরু করার মধ্যে কতটুকু সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, একজন লোক পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করতে পারে এতটুকু সময়।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭৮। ফজরের ওয়াক্ত

৫৫০। ইসমায়ীল ইবনু আবূ উওয়াইস (রহঃ) .... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পরিবার-পরিজনের সাথে সাহরী খেতাম। খাওয়ার পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) পাওয়ার জন্য আমাকে খুব তাড়াহুড়া করতে হত।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭৮। ফজরের ওয়াক্ত

৫৫১। ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ..... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মুসলিম মহিলাগণ সর্বাঙ্গ চাদরে ঢেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ফজরের জামা’আতে হাযির হতেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তারা যার যার ঘরে ফিরে যেতেন। আবছা আঁধারে কেউ তাঁদের চিনতে পারত না।

পরিচ্ছেদঃ ৩৭৯। যে ব্যাক্তি ফজরের এক রাকআত পেল।

৫৫২। আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসলামা (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি সূর্য উঠার আগে ফজরের সালাতের এক রাকআত পায়, সে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) পেল। আর যে ব্যাক্তি সূর্য ডুবার আগে আসরের সালাতের এক রাকাআত পেল সে আসরের সালাত পেল।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮০। যে ব্যাক্তি সালাতের এক রাকআত পেল।

৫৫৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি কোন সালাতের এক রাকআত পায়, সে সালাত (নামায/নামাজ) পেল।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮১। ফজরের পর সূর্য উঠার আগে সালাত আদায়।

৫৫৪। হাফস ইবনু উমর (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কয়েকজন আস্থাভাজন ব্যাক্তি আমার কাছে – যাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন উমর (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পর সূর্য উজ্জ্বল হয়ে না উঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নিষেধ করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮১। ফজরের পর সূর্য উঠার আগে সালাত আদায়।

৫৫৫। মুসাদ্দাদ (রহঃ) .... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার নিকট কয়েক ব্যাক্তি এরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮১। ফজরের পর সূর্য উঠার আগে সালাত আদায়।

৫৫৬। মুসাদ্দাদ (রহঃ) .... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের ইচ্ছা করো না। উরওয়া (রহঃ) বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) আমাকে আরও বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি সূর্যের একাংশ প্রকাশ পেয়ে যায়, তাহলে পূর্ণরূপে উদিত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায়ে বিলম্ব করো। আর যদি তার একাংশ ডুবে যায় তাহলে সম্পূর্ণরূপে অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায়ে বিলম্ব করো। আবদাও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮১। ফজরের পর সূর্য উঠার আগে সালাত আদায়।

৫৫৭। উবায়দ ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ধরণের বেচা-কেনা করতে, দু’ভাবে পোষাক পরিধান করতে এবং দু’সময়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নিষেধ করেছেন।

ফজরের পর সূর্য পূর্ণরূপে উদিত না হওয়া পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোন সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। আর পুরো শরীর জড়িয়ে কাপড় পরতে এবং এক কাপড়ে (যেমন লুঙ্গি ইত্যাদি পরে) হাঁটু খাড়া করে এমনভাবে বসতে যাতে লজ্জাস্থান উপরের দিকে খুলে যায় – নিষেধ করেছেন। আর মুনাবাযা* ও মুলামাসা* (এর পন্থায় বেচা-কেনা) নিষেধ করেছেন।

*মুনাবাযাঃ বিভিন্ন দরের একাধিক পণ্যদ্রব্য একস্থানে রেখে মূল্য হিসেবে একটি অংক নির্ধারণ করে এ শর্তে বিক্রি করা যে, ক্রেতা নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্ব থেকে পাথর নিক্ষেপ করে যে পণ্যের গায়ে লাগাতে পারবে, উল্লেখিত মূল্যে তাকে তা বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ করতে হবে। এ পন্থার বেচা-কেনা “মুনাবাযা” বলে অভিহিত।

*
মুলাসামাঃ একাধিক পণ্যের প্রত্যেকটির ভিন্ন ভিন্ন ভাবে মূল্য নির্ধারণ করে এভাবে বিক্রি করা যে, ক্রেতা যেটি স্পর্শ করবে, পূর্ব নির্ধারিত মূল্যে তাকে অবশ্যই তা গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের বেচাকেনা শরয়ী পরিভাষায় ‘মুলামাসা’ বলে অভিহিত। যেহেতু এতে পছন্দ অপছন্দের স্বাধীনতা থাকে না, তাই শরীয়াত এ দু’টো পন্থাকে নিষিদ্ধ করেছে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮২। সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্তে সালাত আদায়ের উদ্যোগ নিবে না।

৫৫৮। আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ..... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের উদ্যোগ না নেয়।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮২। সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্তে সালাত আদায়ের উদ্যোগ নিবে না।

৫৫৯। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রহঃ) ..... আবূ সায়ীদ খুদ্‌রী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ফজরের পর সূর্য উদিত হয়ে (একটু) উপরে না উঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত কোন সালাত (নামায/নামাজ) নেই।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮২। সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্তে সালাত আদায়ের উদ্যোগ নিবে না।

৫৬০। মুহাম্মদ ইবনু আবান (রহঃ) .... মু’আবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা এমন এক সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে থাক - রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্য লাভ সত্ত্বেও আমরা তাঁকে কখনও তা আদায় করতে দেখিনি। বরং তিনি তা থেকে নিষেধ করেছেন। অর্থা আসরের পর দু’রাকাআত আদায় করতে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮২। সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্তে সালাত আদায়ের উদ্যোগ নিবে না।

৫৬১। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ সময়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নিষেধ করেছেন। ফজরের পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮৩। যিনি আসরের ও ফজরের পর ব্যাতিত অন্য সাময়ে সালাত আদায় মাকরূহ মনে করেন না।

رَوَاهُ عُمَرُ وَابْنُ عُمَرَ وَأَبُو سَعِيدٍ وَأَبُو هُرَيْرَةَ

উমর, ইবন উমর, আবু সাইদ ও আবু হুরাইরা (রাঃ) এ হাদিস বর্ণনা করেছেন।


৫৬২। আবূ নু’মান (রহঃ) ...... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার সঙ্গীদের যেভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি সেভাবেই আমি সালাত আদায় করি। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়ে সালাতের ইচ্ছা করা ব্যতীত রাতে বা দিনে যে কোন সময় কেউ সালাত আদায় করতে চাইলে আমি নিষেধ করি না।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮৪। আসরের পর কাযা বা অনুরূপ কোন সালাত আদায় করা।

৫৬৩। আবূ নু’আইম (রহঃ)......... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সে মাহান সত্তার শপথ, যিনি তাঁকে (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - কে) উঠিয়ে নিয়েছেন, আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) কখনই ছাড়েননি। আর সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ানো যখন তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি, তখন তিনি আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন। তিনি তাঁর এ সালাত (নামায/নামাজ) অধিকাংশ সময় বসে বসেই আদায় করতেন। আয়িশা (রাঃ) এ সালাত (নামায/নামাজ) দ্বারা আসরের পরবর্তী দু’রাকাআতের কথা বুঝিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, তবে উম্মাতের উপর বোঝা হয়ে পড়ার আশংকায় তা মসজিদে আদায় করতেন না। কেননা, উম্মাতের জন্য যা সহজ হয় তাই তাঁর কাম্য ছিল।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮৪। আসরের পর কাযা বা অনুরূপ কোন সালাত আদায় করা।

৫৬৪। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ...... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে ভাগিনে! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে উপস্থিত থাকার কালে আসরের পরবর্তী দু’রাকাআত কখনও ছাড়েননি।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮৪। আসরের পর কাযা বা অনুরূপ কোন সালাত আদায় করা।

৫৬৫। মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকাশ্যে বা গোপনে কোন অবস্থাতেই ছাড়তেন না। তা হল ফজরের সালাতের আগের দু’রাকাআত ও আসরের পরের দু’রাকাআত।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮৪। আসরের পর কাযা বা অনুরূপ কোন সালাত আদায় করা।

৫৬৬। মুহাম্মদ ইবনু আর’আরা (রহঃ) ..... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দিনই আসরের পর আমার কাছে আসতেন সে দিনই দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮৫। মেঘলা দিনে শীগ্র সালাত আদায় করা

৫৬৭। মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) ..... আবূ মালীহ্‌ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মেঘলা দিনে আমরা বুরাইদা (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেন, শীঘ্র সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নাও। কেননা, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আসরের সালাত (নামায/নামাজ) ছেড়ে দেয় তার সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮৬। ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর আযান দেওয়া।

৫৬৮। ইমরান ইবনু মাইসারা (রহঃ) .... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। যাত্রী দলের কেউ কেউ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! রাতের এ শেষ প্রহরে আমাদের নিয়ে যদি একটু বিশ্রাম নিতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার ভয় হচ্ছে সালাতের সময়ও তোমরা ঘুমিয়ে থাকবে। বিলাল (রাঃ) বললেন, আমি আপনাদের জাগিয়ে দিব। কাজেই সবাই শুয়ে পড়লেন। এ দিকে বিলাল (রাঃ) তাঁর হাওদার গায়ে একটু হেলান দিয়ে বসলেন। এতে তাঁর দু’চোখ মুদে আসল। ফলে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন।

সূর্য কেবল উঠতে শুরু করেছে, এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হলেন এবং বিলাল (রাঃ)-কে ডেকে বললেন, হে বিলাল! তোমার কথা গেল কোথায়? বিলাল (রাঃ) বললেন, আমার এত অধিক ঘুম আর কখনও পায়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা যখন ইচ্ছা করেছেন তখন তোমাদের রূহ্‌ কব্‌য করে নিয়েছেন; আবার যখন ইচ্ছা করেছেন তখন তা তোমাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন। হে বিলাল! উঠ, লোকদের জন্য সালাতের আযান দাও। তারপর তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং সূর্য যখন উপরে উঠল এবং উজ্জ্বল হল তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮৭। ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর লোকদের নিয়ে জামা'আতে সালাত আদায় করা।

৫৬৯। মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) ..... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, খন্দকের দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এসে কুরাইশ গোত্রীয় কাফিরদের ভর্সনা করতে লাগলেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি এখনও আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারিনি, এমন কি সূর্য অস্ত যায় যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর শপথ! আমিও তা আদায় করিনি। তারপর আমরা উঠে বুতহানের দিকে গেলাম। সেখানে তিনি সালাতের জন্য উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং আমরাও উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলাম; এরপর সূর্য ডুবে গেলে আসরের সালাত আদায় করেন, তারপর মাগরিবের সালাত আদায় করেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮৮। কেউ যদি কোন ওয়াক্তের সালাত আদায় করতে ভুলে যায়, তাহলে যখন স্মরণ হবে, তখন সে তা আদায় করে নিবে। সে সালাত ব্যাতিত অন্য সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে না।

وَقَالَ إِبْرَاهِيمُ مَنْ تَرَكَ صَلاَةً وَاحِدَةً عِشْرِينَ سَنَةً لَمْ يُعِدْ إِلاَّ تِلْكَ الصَّلاَةَ الْوَاحِدَةَ

ইবরাহীম (রহঃ) বলেন, কেউ যদি বিশ বছরও এক ওয়াক্তের সালাত ছেড়ে দিয়ে থাকে তা হলে তাকে সে ওয়াক্তের সালাতই পুনরায় আদায় করতে হবে।


৫৭০। আবূ নু’আইম ও মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কেউ কোন সালাতের কথা ভুলে যায়, তাহলে যখনই স্মরণ হবে, তখন তাকে তা আদায় করতে হবে। এ ব্যতীত সে সালাতের অন্য কোন কাফ্‌ফারা নেই। (কেননা, আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন)(‏وَأَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِي‏) “আমাকে স্মরণের উদ্দেশ্যে সালাত কায়েম কর”।

মূসা (রহঃ) বলেন, হাম্মাম (রহঃ) বলেছেন যে, আমি তাকে [কাতাদা (রহঃ)] পরে বলতে শুনেছি, “আমাকে স্মরণের উদ্দেশ্যে সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম কর।” হাব্বান (রহঃ) আনাস (রাঃ) এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৮৯। একাধিক সালাতের কাযা ধারাবাহিকভাবে আদায় করা।

৫৭১। মুসাদ্দাদ (রহঃ) .... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধকালে এক সময় উমর (রাঃ) কুরাইশ কাফিরদের ভর্সনা করতে লাগলেন এবং বললেন, সূর্যাস্তের পূর্বে আমি আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পরিনি, (জাবির (রাঃ) বলেন) তারপর আমার বুতহান উপত্যকায় উপস্থিত হলাম। সেখানে তিনি সূর্যাস্তের পর সে সালাত আদায় করলেন, তারপরে মাগরিবের সালাত আদায় করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯০। ইশার সালাতের পর গল্প গুজব করা মাকরূহ।

(পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত) السَّامِرُ শব্দটি السَّمرِ ধাতু হতে নির্গত। এর বহুবচন السُّمَّارُএ আয়াতে سامر শব্দ বহুবচনরূপে ব্যবহৃত হয়েছে।


৫৭২। মুসাদ্দাদ (রহঃ) .... আবূ মিনহাল (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে আবূ বারযা আসলামী (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞাস করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয সালাতসমূহ কোন সময় আদায় করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) যাকে তোমরা প্রথম সালাত বলে থাক, সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন। আর আসরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, আমাদের কেউ সূর্য সজীব থাকতেই মদিনার শেষ প্রান্তে নিজ পরিজনের কাছে ফিরে আসতে পারত। মাগরিব সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেন, তা আমি ভুলে গেছি। তারপর আবূ বারযা (রাঃ) বলেন, ইশার সালত একটু বিলম্বে আদায় করাকে তিনি পছন্দ করতেন। আর ইশার আগে ঘুমানো এবং পরে কথাবার্তা বলা তিনি অপছন্দ করতেন। আর এমন মুহূর্তে তিনি ফজরের সালাত শেষ করতেন যে, আমাদের যে কেউ তার পার্শ্ববর্তী ব্যাক্তিকে চিনতে পারত। এ সালাতে তিনি ষাট থেকে একশ’ আয়াত তিলাওয়াত করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯১। ইশার পর জ্ঞানচর্চা ও কল্যাণকর বিষয়ের আলোচনা।

৫৭৩। আবদুল্লাহ্‌ ইবনু সাব্বাহ্‌ (রহঃ) ..... কুর্‌রা ইবনু খালিদ (রহঃ) থকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা হাসান বসরী (রহঃ) এর অপেক্ষায় ছিলাম। তিনি এত বিলম্বে আসলেন যে, নিয়মিত সালাত (নামায/নামাজ) শেষে চলে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসল। এরপর তিনি এসে বললেন, আমাদের এ প্রতিবেশীগণ আমাদের ডেকেছিলেন। তারপর তিনি বললেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, এক রাতে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অপেক্ষায় ছিলাম। এমন কি প্রায় অর্ধেক রাত হয়ে গেল, তখন এসে তিনি আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। এরপর আমাদের সম্বোধন করে তিনি বললেনঃ জেনে রাখ! লোকেরা সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে, তবে তোমরা যতক্ষন সালাতের অপেক্ষায় ছিলে ততক্ষন সালাতেই রত ছিলে।

হাসন বসরী (রহঃ) বলেন, মানুষ যতক্ষন কল্যাণের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষন তারা কল্যাণেই নিরত থাকে। কুর্‌রা (রহঃ) বলেন, এ উক্তি আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিসেরই অংশ।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯১। ইশার পর জ্ঞানচর্চা ও কল্যাণকর বিষয়ের আলোচনা।

৫৭৪। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ..... আবদুল্লাহ্‌ ইবনু উমর (রাঃ) থকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাঁর শেষ জীবনে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে সালাম ফিরাবার পর বললেনঃ আজকের এ রাত সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কি? আজ থেকে নিয়ে একশ’ বছরের মাথায় আজ যারা ভূ-পৃষ্ঠে আছে তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। কিন্তু সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ‘একশ’ বছরের’ এ উক্তি সম্পর্কে নানাবিধ জল্পনা-কল্পনা করতে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আজকে যারা জীবিত আছে তাদের কেউ ভূ-পৃষ্ঠে থাকবে না। এর দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, এ শতাব্দী ঐ যুগের পরিসমাপ্তি ঘটাবে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৯২। পরিবার-পরিজন ও মেহমানদের সাথে রাতে কথাবার্তা বলা।

৫৭৫। মাহমূদ (রহঃ) .... আবদুর-রাহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আসহাবে সুফ্‌ফা ছিলেন খুবই দরিদ্র। (একদা) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যার কাছে দু’জনের আহার আছে সে যেন (তাঁদের থেকে) তৃতীয় জনকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। আর যার কাছে চারজনের আহারের সংস্থান আছে, সে যেন পঞ্চম বা ষষ্ঠজন সঙ্গে নিয়ে যায়। আবূ বকর (রাঃ) তিনজন সাথে নিয়ে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশজন নিয়ে আসেন। আবদুর রাহমান (রাঃ) বলেন, আমাদের ঘরে এবং আবূ বাকরের ঘরে আমি, আমার পিতা ও মাতা (এই তিন জন সদস্য) ছিলাম। রাবী বলেন, আমি জানিনা, তিনি আমার স্ত্রী এবং খাদিম একথা বলেছিলেন কি না?

আবূ বাকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরেই রাতের আহার করেন এবং ইশার সালাত (নামায/নামাজ) পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। ইশার সালাতের পর তিনি আবার (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরে) ফিরে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের আহার শেষ করা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। আল্লাহর ইচ্ছায় কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বাড়ী ফিরলে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, মেহমানদের কাছে আসতে কিসে আপনাকে ব্যস্ত রেখেছিল? কিংবা তিনি বলেছিলেন, (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) মেহমান থেকে। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, এখনও তাদের খাবার দাওনি? তিনি বললেন, আপনি না আসা পর্যন্ত তারা খেতে অস্বীকার করেন। তাদের সামনে হাযির করা হয়েছিল, তবে তারা খেতে সম্মত হননি।

তিনি (রাগান্বিত হয়ে) বললেন, ওরে বোকা এবং ভর্সনা করলেন। আর (মেহমানদের) বললেন, খেয়ে নিন। আপনারা অস্বস্তিতে ছিলেন। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি এ কখনই খাব না। আবদুর রাহমান (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা লুক্‌মা উঠিয়ে নিতেই নীচ থেকে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, সকলেই পেট ভরে খেলেন। অথচ আগের চাইতে অধিক খাবার রয়ে গেল।

আবূ বকর (রাঃ) খাবারের দিকে তাকিয়ে দেখেতে পেলেন তা আগের সমপরিমাণ কিংবা তার চাইতেও বেশী। তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, হে বনূ ফিরাসের বোন। এ কি? তিনি বললেন, আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এতো এখন আগের চাইতে তিনগুন বেশী! আবূ বকর (রাঃ)-ও তা থেকে আহার করলেন এবং বললেন, আমার সে শপথ শয়তানের পক্ষ থেকেই হয়েছিল। এরপর তিনি আরও লুক্‌মা মুখে দিলেন এবং অবশিষ্ট খাবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে নিয়ে গেলেন।

ভোর পর্যন্ত সে খাদ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেখানেই ছিল। এদিকে আমাদের ও অন্য একটি গোত্রের মাঝে সে সন্ধি ছিল তার সময়সীমা পূর্ন হয়ে যায়। (এবং তারা মদিনায় আসে) আমরা তাদের বারজনের নেতৃত্বে ভাগ করে দেই। তাদের প্রত্যকের সংগেই কিছু কিছু লোক ছিল। তবে প্রত্যকের সঙ্গে কতজন ছিল তা আল্লাহই জানেন। তারা সকলেই সেই খাদ্য থেকে আহার করেন। (রাবী বলেন) কিংবা আবদুর রাহমান (রাঃ) যেভাবে বর্ণনা করেছেন।