পরিচ্ছেদঃ ১/ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)
এর প্রতি কিভাবে ওহী শুরু হয়েছিল
১। হুমায়দী (রহঃ) ...
আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহঃ) থেকে বর্ণিত,
আমি উমর ইবনুল খাত্তাব
(রাঃ)-কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। আর মানুষ তার
নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভের অথবা নারীকে বিয়ে করার
উদ্দেশ্যে- সেই উদ্দেশ্যেই হবে তার হিজরতের প্রাপ্য।
তাহক্বীক:
মারফু হাদিস।
তাখরীজ
: বুখারীঃ তাওহীদ.পাবলিকেশান্স ১,
৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮,
৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩;
মুসলিমঃ
৫০৩৬; আবূ দাউদঃ ২২০৩; তিরমিযীঃ ১৭৪৮; দারাকুতনীঃ ১৩৪; নাসাঈঃ ৭৫, ৩৪৫০, ৩৮১০;
আহমাদঃ
১৭০, ৩০৭। মুসলিম ২৩/৪৫ হা:
১৯০৭ , (আধুনিক প্রকাশনী. ১ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন. ১)
পরিচ্ছেদঃ
১/ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)
এর প্রতি কিভাবে ওহী শুরু হয়েছিল
২। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ
(রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আপনার প্রতি ওহী কিভাবে আসে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন সময় তা ঘন্টাধ্বনির ন্যায় আমার নিকট আসে। আর এটি-ই
আমার উপর সবচাইতে কষ্টদায়ক হয় এবং তা সমাপ্ত হতেই ফিরিশতা যা বলেন আমি তা মুখস্থ
করে নই, আবার কখনো ফিরিশতা মানুষের আকৃতিতে আমার সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে ফেলি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি
প্রচন্ড শীতের দিনে ওহী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওহী শেষ হলেই তাঁর কপাল
থেকে ঘাম ঝরে পড়ত।
তাহক্বীক: মারফু হাদিস।
তাখরীজ: ( বুখারীঃ তা.পা ২, ৩২১৫; তিরমিযীঃ
৩৯৯৪; নাসাঈঃ ৯৪২; আহমাদঃ ২৬৯৫২; মুয়াত্তাঃ
৪৭৯। মুসলিম ৪৩/২৩, হা: ২৩৩৩ , আহমাদ
২৫৩০৭ ( আধুনিক প্রকাশনী. ২ , ই.ফা. ২)
শরীআহর মূল উৎস হচ্ছে ওয়াহী। ওয়াহী ২ প্রকার
। ওয়াহী মাতলু (আল-কুরআন) ও ওয়াহী গাইরে মাতলু (সুন্নাহ ও হাদীস) । এবং দ্বীনে ইলাহীর
ভিত্তি শুধু ২ টি জিনিসের উপর প্রতিষ্ঠিত । ইজমা ও কিয়াস কোন শারঈ দলীল নয়। বরং
ইজমা ও কিয়াস ওয়াহীর পক্ষে অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহ মুতাবিক হবে তা গ্রহণযোগ্য এবং যেটা বিপক্ষে
যারে সেটা পরিত্যাজ্য ও অগ্রহণযোগ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বানী :
[يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا [٤:٥٩]]
[يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ [٤٧:٣٣]]
[ওহে যারা ঈমান এনেছ!
আল্লাহকে অনুসরণ করো, ও রসূলের অনুগমন করো, আর
তোমাদের মধ্যে যাদের হুকুম দেবার ভার আছে। তারপর যদি কোনো বিষয়ে তোমরা মতভেদ
করো তবে তা পেশ করো আল্লাহ ও রসূলের কাছে, যদি তোমরা আল্লাহতে ও
আখেরাতের দিনে বিশ্বাস করে থাকো। এটিই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ও সর্বাঙ্গ সুন্দর
সমাপ্তিকরণ। (নিসাঃ ৪ : ৫৯)
ওহে যারা ঈমান এনেছ!
আল্লাহকে মেনে চলো ও রসূলের আজ্ঞা পালন করো, আর তোমাদের ক্রিয়াকর্ম
বিফল করো না (মুহাম্মাদঃ ৪৭ : ৩৩)]
কিন্তু বাতিলি ফির্কার
লোকেরা ইজমা ও কিয়াসকে ওয়াহীর আসনে বসিয়েছে এবং বলে থাকে : শরীআহর ভিত্তি ভিত্তি ৪
টি বিষয়ের উপর । কুরআন , সুন্নাহ , ইজমা, কিয়াস
। বড় আশ্চর্জের বিষয় এই যে, সাহাবায়ে কেরাম যাদের উপর
আল্লাহ তা’আলা তার সন্তুষ্টির ঘোষনা দিয়েছেন, তাদেরকে সত্যবাদী বলে
স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং মুসলিম উম্মাহ এ ব্যপারে সকলেই একমত। অথচ তারা সাহবায়ে
কেরামকে ২ ভাগে ভাগ করেছেন। [১] ফকীগ [২] গাইরে ফকীহ। আর বলেছেন যে সকল সাহাবী
ফকীহ ছিলেন তার আযদি কিয়াসের বীপরীতে হাদীস বর্ণনা করেন তবে তা গ্রহণযোগ্য কিন্তু
যে সকল সাহাবী গাইরে ফকীহ অর্থাৎ ফকীহ নন তাঁরা যদি কিয়াসের খেলাফ হাদীস বর্ণনা করেন তাহলে
তা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।
প্রকৃতপক্ষে এটা উম্মতে
মুহাম্মাদিয়াকে সিরাতে মুস্তাকীমের পথ হতে সরিয়ে দেয়ার একটা বড় অস্ত্র এবং
পরিকল্পনা। কেননা তারা কিয়াসকে মূল আর হাদীসকে ২য় স্থানে রেখেছেন। সকল সাহাবীর উপর
আল্লাহ তা’আলা সন্তুষ্ট কিন্তু তারা খুশী নন। সকল সাহাবীর ব্যাপারে উম্মতের ঐক্যমত
রয়েছে। কিন্তু তাদের নিকট গাইরে ফকীহ সাহাবীগণ ‘আদীল নন।
ধোকাঁবাজির কিছু নমুনা :
তারা বলেন, ফকীহ সাহাবীগণ কিয়াসের খেলাফ হাদীস বর্ণনা করলে তা গ্রহণীয়
হবে। কিন্তু গাইরে ফকীহ সাহাবীগণ কিয়াসের খেলাফ হাদীস বর্ণনা করলে তা গ্রহণীয় হবে
না এবং কিয়াসের উপর আ‘মাল করতে হবে। বাই’য়ি মুসারাহ এর হাদীস আবূ হুরাইরাহ h হতে বর্ণিত এবং কিয়াসের
খেলাফ। এই জন্য তা বাতিল। এবং কিয়াসের উপর আ‘মালযোগ্য । অথচ এই হাদীস ‘আবদুল্লাহ
ইবনু মাসঊদ h হতেও বর্ণিত হয়েছে। (দেখুন
সহীহ বুখারী ২৮৮ পৃষ্ঠা রশিদিয়া ছাপা)
পরিচ্ছেদঃ
১/ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)
এর প্রতি কিভাবে ওহী শুরু হয়েছিল
৩। ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সর্বপ্রথম যে ওহী আসে, তা
ছিল ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে ভোরের আলোর
ন্যায় প্রকাশ পেত। তারপর তাঁর কাছে নির্জনতা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তিনি হেরা'র
গুহায় নির্জনে থাকতেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসা এবং কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে
নিয়ে যাওয়া এইভাবে সেখানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক রাত ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন।
তারপর খাদীজা (রাঃ)-এর
কাছে ফিরে এসে আবার অনুরূপ সময়ের জন্য কিছু খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতেন। এমনিভাবে
হেরা’ গুহায় অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে ওহী এলো। তাঁর কাছে ফিরিশতা এসে বললেন, পড়ুন’।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “আমি বললাম, আমি
পড়িনা’। তিনি বলেনঃ তারপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার
অত্যন্ত কষ্ট হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
পড়ুন’। আমি বললামঃ আমি তো
পড়ি না। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার
অত্যন্ত কষ্ট হল। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ পড়ুন’। আমি জবাব দিলাম, আমিতো
পড়িনা’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর
তৃতীয়বার তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। এরপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পড়ুন আপনার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক থেকে।
পড়ুন আর আপনার রব্ মহামহিমান্বিত।” (৯৬: ১-৩)
তারপর এ আয়াত নিয়ে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এলেন। তাঁর অন্তর তখন কাঁপছিল।
তিনি খাদীজা বিন্ত খুওয়ালিদের কাছে এসে বললেন, আমাকে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে
চাঁদর দিয়ে ঢেকে দাও। ’ তাঁরা তাঁকে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাঁর ভয় দূর
হল। তখন তিনি খাদীজা (রাঃ) এর কাছে সকল ঘটনা জানিয়ে তাঁকে বললেন, আমি
নিজের উপর আশংকা বোধ করছি। খাদীজা (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্র কসম, কক্ষনো
না। আল্লাহ্ আপনাকে কক্ষনো অপমানিত করবেন না। আপনিতো আত্মীয়-স্বজনের সাথে
সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব
বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন
এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন।
এরপর তাঁকে নিয়ে খাদীজা
(রাঃ) তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনু নাওফিল ইবনু আবদুল আসা’দ ইবনু আবদুল উযযার
কাছে গেলেন, যিনি জাহিলী যুগে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী
ভাষা লিখতে জানতেন এবং আল্লাহ্র তওফীক অনুযায়ী ইবরানী ভাষায় ইনজীল থেকে অনুবাদ
করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বয়োবৃদ্ধ এবং অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা (রাঃ) তাঁকে
বললেন, হে চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। ওয়ারাকা তাঁকে
জিজ্ঞেস করলেন, ভাতিজা! তুমি কী দেখ?’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা দেখেছিলেন, সবই
খুলে বললেন।
তখন ওয়ারাকা তাঁকে বললেন, ইনি
সে দূত যাঁকে আল্লাহ্ মূসা আলাইহিস সালাম এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! আমি যদি
সেদিন যুবক থাকতাম। আফসোস! আমি যদি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন
তোমার কাওম তোমাকে বের করে দেবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ তাঁরা কি আমাকে বের করে দিবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অতীতে
যিনই তোমার মত কিছু নিয়ে এসেছেন তাঁর সঙ্গেই শত্রুতা করা হয়েছে। সেদিন যদি আমি
থাকি, তবে তোমাকে প্রবলভাবে সাহায্য করব। এর কিছুদিন পর ওয়ারাকা
(রাঃ) ইন্তেকাল করেন। আর ওহী স্থগিত থাকে।
ইবনু শিহাব (রহঃ) ...
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) ওহী স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ একদা আমি হেঁটে চলেছি, হঠাৎ আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে
পেয়ে চোখ তুলে তাকালাম। দেখলাম, সেই ফিরিশতা, যিনি
হেরায় আমার কাছে এসেছিলেন, আসমান ও যমিনের মাঝখানে
একটি কুরসীতে বসে আছেন। এতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তৎক্ষণাৎ আমি ফিরে এসে বললাম, আমাকে বস্ত্রাবৃত কর, আমাকে
বস্ত্রাবৃত কর। তারপর আল্লাহ তা'আলা নাযিল করলেন, হে
বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, সতর্কবানী প্রচার করুন এবং
আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পোশাক পবিত্র রাখুন। অপবিত্রতা থেকে দূরে
থাকুন (৭৪: ১-৪)। এরপর ব্যাপকভাবে পর পর ওহী নাযিল হতে লাগল।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ
(রহঃ) ও আবূ সালেহ (রহঃ) অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। হেলাল ইবনু রাদদাদ (রহঃ) যুহরী
(রহঃ) থেকেও অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। ইউনুস ও মা'মার فؤاده এর স্থলেبَوَادِرُهُ শব্দ উল্লেখ
করেছেন।
তাখরীজ: ( বুখারীঃ তা.পা ৩, ৩৩৯২, ৪৯৫৩, ৪৯৫৫, ৪৯৫৬, ৪৯৫৭, ৬৯৮২; মুসলিম
১/৭৩ হাঃ ১৬০, আহমদ ২৬০১৮ ( আ.প্রঃ ৩, ইঃফাঃ ৩)।
পরিচ্ছেদঃ
১/ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)
এর প্রতি কিভাবে ওহী শুরু হয়েছিল
৪। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ)
... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহান আল্লাহর বাণীঃ
তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনার জিহ্বা তার সাথে নাড়বেন না’ (৭৫:১৬) এর
ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহী নাযিলের সময় তা আয়ত্ত করতে বেশ কষ্ট স্বীকার করতেন এবং
প্রায়ই তিনি তাঁর উভয় ঠোঁট নাড়াতেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি
তোমাকে দেখানোর জন্য ঠোঁট দুটি নাড়ছি যেভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নাড়াতেন। ’
সা’ঈদ (রহঃ) (তাঁর
শাগরিদদের) বললেন, আমি ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-কে
যেভাবে তাঁর ঠোঁট দুটি নাড়াতে দেখেছি, সেভাবেই আমার ঠোঁট দুটি
নাড়াচ্ছি। ’ এই বলে তিনি তাঁর ঠোঁট দুটি নাড়ালেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল
করলেনঃ “তাড়াতাড়ি ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহবা তার সাথে নাড়াবেন না। এর
সংরক্ষণ ও পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই। ” (৭৫:১৬-১৮)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন এর
অর্থ হলঃ আপনার অন্তরে তা সংরক্ষণ করা এবং আপনার দ্বারা তা পাঠ করানো। সুতরাং যখন
আমি তা পাঠ করি আপনি সে পাঠের অনুসরণ করুন (৭৫:১৯) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন অর্থাৎ মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং চুপ
থাকুন। এরপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই (৭৫:১৯)। ’ অর্থাৎ আপনি তা পাঠ করবেন এটাও আমার
দায়িত্ব। তারপর যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিবরাঈল আলাইহি
ওয়া সাল্লাম আসতেন, তখন তিনি মনোযোগ সহকারে
কেবল শুনতেন। জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম চলে গেলে তিনি যেমন পড়েছিলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ঠিক তেমনি পড়তেন।
পরিচ্ছেদঃ
১/ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)
এর প্রতি কিভাবে ওহী শুরু হয়েছিল
৫। আবদান (রহঃ) ও বিশর
ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন
সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমযানে তিনি আরো বেশী দানশীল হতেন, যখন
জিবরীল (আঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমযানের প্রতি রাতেই জিবরীল (আঃ) তাঁর সাথে
সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁরা পরস্পর কুরআন
তিলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রহমতের
বাতাস থেকেও অধিক দানশীল ছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ
১/ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)
এর প্রতি কিভাবে ওহী শুরু হয়েছিল
৬। আবূল ইয়ামান হাকাম ইবনু
নাফি (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ
সুফিয়ান ইবনু হরব তাকে বলেছেন, বাদশাহ হিরাকল একবার তাঁর
কাছে লোক পাঠালেন। তিনি কুরাইশদের কাফেলায় তখন ব্যবসা উপলক্ষে সিরিয়ায় ছিলেন। সে
সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ সুফিয়ান ও কুরাইশদের সাথে
নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সন্ধিবদ্ধ ছিলেন। আবূ সুফিয়ান তার সঙ্গীদের সহ হিরাকলের কাছে
এলেন এবং তখন হিরাকল জেরুযালেমে অবস্থান করছিলেন। হিরাকল তাদেরকে তাঁর নিকটে
ডাকলেন। তার পাশে তখন রোমের নেত্রীস্থানীয় ব্যাক্তিগন উপস্থিত ছিল। এরপর তাদের কাছে
ডেকে নিলেন এবং দোভাষীকে ডাকলেন।
তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, এই
যে ব্যাক্তি নিজেকে নাবী বলে দাবী করে — তোমাদের মধ্যে বংশের দিক দিয়ে তাঁর সবচেয়ে
নিকটাত্মীয় কে? আবূ সুফিয়ান বললেন, আমি
বললাম, বংশের দিক দিয়ে আমিই তাঁর নিকটাত্মীয়। তিনি বললেন, তাঁকে
আমার খুব কাছে নিয়ে এস এবং তাঁর সঙ্গীদেরও কাছে এনে পেছনে বসিয়ে দাও। এরপর তাঁর
দোভাষীকে বললেন, তাদের বলে দাও, আমি
এর কাছে সে ব্যাক্তি সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করবো,
সে যদি আমার কাছে মিথ্যা
বলে, তবে সাথে সাথে তোমরা তাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রকাশ করবে। আবূ
সুফিয়ান বলেন, আল্লাহ্র কসম! তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রচার করবে-এ
লজ্জা যদি আমার না থাকত, তবে অবশ্যই আমি তাঁর
সম্পর্কে মিথ্যা বলতাম।
এরপর তিনি তাঁর সম্পর্কে
আমাকে প্রথম প্রশ্ন যে করেন তা হচ্ছে, তোমাদের মধ্যে তাঁর
বংশমর্যাদা কেমন?’ আমি বললাম, তিনি
আমাদের মধ্যে অতি সম্ভ্রান্ত বংশের। তিনি বললেন,
তোমাদের মধ্যে এর আগে আর
কখনো কি কেউ একথা বলেছে? আমি বললাম, না।
তিনি বললেন, তাঁর বাপ-দাদাদের মধ্যে কি কেউ বাদশাহ ছিলেন? আমি
বললাম, না। তিনি বললেন, তারা কি সংখ্যায় বাড়ছে, না
কমছে? আমি বললাম, তারা বেড়েই চলেছে। তিনি
বললেন, তাঁর দ্বীন গ্রহণ করার পর কেউ কি নারায হয়ে তা পরিত্যাগ করে? আমি
বললাম, না। তিনি বললেন, নবূয়তের দাবীর আগে তোমরা
কি কখনো তাঁকে মিথ্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছ? আমি বললাম, না।
তিনি বললেন, তিনি কি চুক্তি ভঙ্গ করেন?’
আমি বললাম, না।
তবে আমরা তাঁর সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময়ের চুক্তিতে আবদ্ধ আছি। জানিনা, এর
মধ্যে তিনি কি করবেন।
আবূ সুফিয়ান বলেন, এ
কথাটুকু ছাড়া নিজের পক্ষ থেকে আর কোন কথা সংযোজনের সুযোগই আমি পাইনি। তিনি বললেন, তোমরা
কি তাঁর সাথে কখনো যুদ্ধ করেছ?’ আমি বললাম, হাঁ।
তিনি বললেন, তাঁর সঙ্গে তোমাদের যুদ্ধ কেমন হয়েছে?’ আমি বললাম, তাঁর ও আমাদের মধ্যে
যুদ্ধের ফলাফল কুয়ার বালতির ন্যায়। কখনো তাঁর পক্ষে যায়, আবার
কখনো আমাদের পক্ষে আসে। ’ তিনি বললেন, তিনি তোমাদের কিসের আদেশ
দেন?’ আমি বললাম, তিনি বলেনঃ তোমরা এক
আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছুর শরীক করো না এবং তোমাদের বাপ-দাদার
ভ্রান্ত মতবাদ ত্যাগ কর। আর তিনি আমাদের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার, সত্য
কথা বলার, নিষ্কলুষ থাকার এবং আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করার আদেশ
দেন।
তারপর তিনি দোভাষীকে বললেন, তুমি
তাকে বল, আমি তোমার কাছে তাঁর বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তুমি তার
জওয়াবে উল্লেখ করেছ যে, তিনি তোমাদের মধ্যে
সম্ভ্রান্ত বংশের। প্রকৃতপক্ষে রাসূল গণকে তাঁদের কওমের উচ্চ বংশেই প্রেরণ করা হয়ে
থাকে। তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, এ কথা তোমাদের মধ্যে
ইতিপূর্বে আর কেউ বলেছে কিনা? তুমি বলেছ, না।
তাই আমি বলছি যে, আগে যদি কেউ এ কথা বলে
থাকত, তবে অবশ্যই আমি বলতে পারতাম,
এ এমন ব্যাক্তি, যে
তাঁর পূর্বসূরীর কথারই অনুসরণ করছে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁর
পূর্বপুরুষের মধ্যে কোন বাদশাহ ছিলেন কি না? তুমি তার জবাবে বলেছ, না।
তাই আমি বলছি যে, তাঁর পূর্বপুরুষের মধ্যে
যদি কোন বাদশাহ থাকতেন, তবে আমি বলতাম, ইনি
এমন এক ব্যাক্তি যিনি তাঁর বাপ-দাদার বাদশাহী ফিরে পেতে চান।
আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা
করেছি- এর আগে কখনো তোমরা তাঁকে মিথ্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছ কি না? তুমি
বলেছ, না। এতে আমি বুঝলাম, এমনটি হতে পারে না যে, কেউ
মানুষের ব্যাপারে মিথ্যা ত্যাগ করবে অথচ আল্লাহ্র ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলবে। আমি
তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, শরীফ লোক তাঁর অনুসরন করে, না
সাধারণ লোক? তুমি বলেছ, সাধারণ লোকই তাঁর অনুসরণ
করে। আর বাস্তবেও এরাই হন রাসূল গণের অনুসারী। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তারা
সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি বলেছ বাড়ছে।
প্রকৃতপক্ষে ঈমানে পূর্ণতা লাভ করা পর্যন্ত এ রকমই হয়ে থাকে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা
করেছি, তাঁরা দ্বীনে দাখিল হওয়ার পর নারায হয়ে কেউ কি তা ত্যাগ করে? তুমি
বলেছ, না। ঈমানের স্নিগ্ধতা অন্তরের সাথে মিশে গেলে ঈমান এরূপই
হয়। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি তিনি চুক্তি ভঙ্গ করেন কি না? তুমি
বলেছ, না। প্রকৃতপক্ষে রাসূলগণ এরূপই, চুক্তি
ভঙ্গ করেন না।
আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি
তিনি তোমাদের কিসের নির্দেশ দেন। তুমি বলেছ, তিনি তোমাদের এক আল্লাহ্র
ইবাদত করা ও তাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক না করার নির্দেশ দেন। তিনি তোমাদের নিষেধ
করেন মূর্তিপূজা করতে আর তোমাদের আদেশ করেন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে, সত্য
কথা বলতে ও কলুষমুক্ত থাকতে। তুমি যা বলেছ তা যদি সত্য হয়, তবে
শীঘ্রই তিনি আমার এ দু’পায়ের নীচের জায়গার মালিক হবেন। আমি নিশ্চিত জানতাম, তাঁর
আবির্ভাব হবে; কিন্তু তিনি যে তোমাদের মধ্যে থেকে হবেন, এ
কথা ভাবিনি। যদি জানতাম, আমি তাঁর কাছে পৌঁছাতে
পারব, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য আমি যে কোন কষ্ট স্বীকার করতাম। আর আমি যদি তাঁর
কাছে থাকতাম তবে অবশ্যই তাঁর দু’খানা পা ধুয়ে দিতাম। এরপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই পত্রখানি আনতে বললেন, যা তিনি দিহয়াতুল কালবীর
মাধ্যমে বসরার শাসকের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তিনি তা পাঠ করলেন। তাতে লেখা ছিলঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহীম (দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহ্র নামে)। আল্লাহ্র বান্দা ও তাঁর রাসুল
মুহাম্মদএর পক্ষ থেকে রোম সম্রাট হিরাকল এর প্রতি। --শান্তি (বর্ষিত হোক) তার
প্রতি, যে হিদায়াতের অনুসরণ করে। তারপর আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত
দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, নিরাপদে থাকবেন। আল্লাহ্
আপনাকে দ্বিগুণ পুরষ্কার দান করবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেন, তবে
সব প্রজার পাপই আপনার উপর বর্তাবে। হে আহলে কিতাব! এস সে কথার দিকে, যা
আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই; যেন আমরা আল্লাহ্ ব্যতীত
আর কারো ইবাদত না করি, কোন কিছুকেই তাঁর শরীক না
করি এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ্ ব্যতীত রব রূপে গ্রহণ না করি। যদি তারা মুখ
ফিরিয়ে নেয়, তবে বলো, তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা
মুসলিম’ (৩:৬৪)।
আবূ সুফিয়ান বলেন, হিরাকল
যখন তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন এবং পত্র পাঠও শেষ করলেন, তখন
সেখানে শোরগোল পড়ে গেল, চীৎকার ও হৈ-হল্লা তুঙ্গে উঠল এবং আমাদের বের করে
দেওয়া হল। আমাদের বের করে দিলে আমি আমার সঙ্গীদের বললাম, আবূ
কাবশার ছেলের বিষয়তো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, বনূ আসফার (রোম)-এর
বাদশাহও তাকে ভয় পাচ্ছে। তখন থেকে আমি বিশ্বাস করতে লাগলাম, তিনি
শীঘ্রই জয়ী হবেন। অবশেষে আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে ইসলাম গ্রহণের তওফীক দান করলেন।
ইবনু নাতূর ছিলেন
জেরুযালেমের শাসনকর্তা এবং হিরাকলের বন্ধু ও সিরিয়ার খৃষ্টানদের পাদ্রী। তিনি বলেন, হিরাকল
যখন জেরুযালেম আসেন, তখন একদিন তাঁকে বিমর্ষ
দেখাচ্ছিল। তাঁর একজন বিশিষ্ট সহচর বলল, আমরা আপনার চেহারা আজ
বিবর্ণ দেখতে পাচ্ছি, ইবনু নাতূর বলেন, হিরাকল
ছিলেন জ্যোতিষী, জ্যোতির্বিদ্যায় তাঁর
দক্ষতা ছিল। তারা জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাদের বললেন,
আজ রাতে আমি তারকারাজির
দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, খতনাকারীদের বাদশাহ
আবির্ভূত হয়েছেন। বর্তমান যুগে কোন্ জাতি খতনা করে?’
তারা বলল, ইয়াহূদী
ছাড়া কেউ খতনা করে না। কিন্তু তাদের ব্যাপার যেন আপনাকে মোটেই চিন্তিত না করে।
আপনার রাজ্যের শহরগুলোতে লিখে পাঠান, তারা যেন সেখানকার সকল
ইয়াহূদীকে হত্যা করে ফেলে। তারা যখন এ ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত ছিল, তখন
হিরাকলের কাছে এক ব্যাক্তিকে উপস্থিত করা হল, যাকে গাসসানের শাসনকর্তা
পাঠিয়েছিল। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্পর্কে খবর
দিচ্ছিল। হিরাকল তার কাছ থেকে খবর জেনে নিয়ে বললেন,
তোমরা একে নিয়ে গিয়ে দেখ, তার
খতনা হয়েছে কি-না। তারা তাকে নিয়ে দেখে এসে সংবাদ দিল, তার
খতনা হয়েছে।
হিরাকল তাকে আরবদের
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে জওয়াব দিল, তারা খতনা করে। তারপর
হিরাকল তাদের বললেন, ইনি [রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এ উম্মতের বাদশাহ। তিনি আবির্ভূত হয়েছেন। এরপর
হিরাকল রোমে তাঁর বন্ধুর কাছে লিখলেন। তিনি জ্ঞানে তাঁর সমকক্ষ ছিলেন। পরে হিরাকল
হিমস চলে গেলেন। হিমসে থাকতেই তাঁর কাছে তাঁর বন্ধুর চিঠি এলো, যা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবির্ভাব এবং তিনই যে প্রকৃত নাবী, এ
ব্যাপারে হিরাকলের মতকে সমর্থন করছিল। তারপর হিরাকল তাঁর হিমসের প্রাসা’দ রোমের
নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিদের ডাকলেন এবং প্রাসা’দর সব দরজা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ
দিলেন। দরজা বন্ধ করা হল। তারপর তিনি সামনে এসে বললেন, হে
রোমবাসী! তোমরা কি কল্যাণ, হিদায়ত এবং তোমাদের
রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব চাও? তাহলে এই নাবী'র
রায়’আত গ্রহণ কর।
এ কথা শুনে তারা জংলী
গাধার মত ঊর্ধ্বশ্বাসে দরজার দিকে ছুটল, কিন্তু তারা তা বন্ধ
অবস্থায় পেল। হিরাকল যখন তাদের অনীহা লক্ষ্য করলেন এবং তাদের ঈমান থেকে নিরাশ হয়ে
গেলেন, তখন বললেন, ওদের আমার কাছে ফিরিয়ে আন।
তিনি বললেন, আমি একটু আগে যে কথা বলেছি,
তা দিয়ে তোমরা তোমাদের
দ্বীনের উপর কতটুকু অটল, কেবল তার পরীক্ষা
করেছিলাম। এখন আমি তা দেখে নিলাম। একথা শুনে তারা তাঁকে সিজদা করল এবং তাঁর প্রতি
সন্তুষ্ট হল। এই ছিল হিরাকল এর শেষ অবস্থা।
আবূ আবদুল্লাহ [বুখারী
(রহঃ)] বলেন, সালেহ ইবনু কায়সান (রহঃ),
ইউনুস (রহঃ) ও মা’মার
(রহঃ) এ হাদীস যুহরী (রহঃ) থেকে রিওয়ায়েত করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ
২/ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)
এর বাণীঃ ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীঃ ইসলামের ভিত্তি পাঁচটিঃ মৌখিক স্বীকৃতি (ইয়াকীনসহ) এবং
কর্মই ঈমান এবং তা বাড়ে ও কমে। আল্লাহ্ তা'আলা ইরশাদ করেনঃ যাতে তারা
তাদের ঈমানের সাথে ঈমান দৃঢ় করে নেয় (৪৮ : ৪)। আমরা তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। (১৮ঃ ১৩)।
এবং যারা সৎপথে চলে আল্লাহ্ তাদের অধিক
হেদায়াত দান করেন (১৯ঃ ৭৬)। এবং যারা সৎপথ অবলম্বন করে আল্লাহ্ তাদের অধিক হেদায়াত বাড়িয়ে দেন এবং
তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দেন
(৪৭ঃ ১৭), যাতে মু'মিনদের ঈমান বেড়ে যায় (৭৪ঃ
৩১)। আল্লাহ্ তা'আলা আরো ইরশাদ করেন, এটা
তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বাড়িয়ে দিল? যারা মু'মিন
এ তো তাদের ঈমান বাড়িয়ে দেয়। (৯ঃ ১২৪) এবং তাঁর বাণীঃ (فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا) "সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর;
আর এটা তাদের ঈমান বাড়িয়ে
দিয়েছিল" (৩ঃ ২৭৩)। (وَمَا زَادَهُمْ إِلاَّ إِيمَانًا وَتَسْلِيمًا) "আর এতে
তাদের ঈমান ও আনুগত্য বাড়লো।" (৩৩ঃ ২২)। আর আল্লাহ্র জন্য ভালবাসা ও আল্লাহ্র
জন্য ঘৃণা করা ঈমানের অংশ।
উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ)
আদী ইবনু আদী (রহঃ) এর কাছে এক পত্রে লিখেছিলেন,
‘ঈমানের কতকগুলো ফরয, কতকগুলো
হুকুম-আহকাম, বিধি-নিষেধ এবং সুন্নাত রয়েছে। যে এগুলো পরিপূর্ণরূপে আদায়
করে তার ঈমান পূর্ণ হয়। আর যে এগুলো পূর্ণভাবে আদায় করে না, তার
ঈমান পূর্ণ হয় না। আমি যদি বেঁচে থাকি তবে অচিরেই এগুলো তোমাদের নিকট বর্ণনা করব, যাতে
তোমরা তার উপর ‘আমল করতে পার। আর যদি আমার মৃত্যু হয় তাহলে জেনে রাখ, তোমাদের
সাহচর্যে থাকার জন্য আমি লালায়িত নই।
ইবরাহীম (‘আ.) বলেন, (وَلَكِنْ لِيَطْمَئِنَّ قَلْبِي) ‘তবে এ তো কেবল চিত্ত প্রশান্তির
জন্য’- (২ঃ ২৬০)। মু‘আয (রাঃ) বলেন, ‘এসো আমাদের সঙ্গে বস, কিছুক্ষণ
ঈমানের আলোচনা করি।’ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, ‘ইয়াকীন হল পূর্ণ ঈমান।’
ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, ‘বান্দা প্রকৃত তাকওয়ায়
পৌঁছতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে, মনে
যে বিষয় সন্দেহের সৃষ্টি করে, তা পরিত্যাগ না করে।’
মুজাহিদ (রহঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনাকে এবং নূহকে একই ধর্মের আদেশ করেছি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)
বলেন, (شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا) অর্থাৎ পথ ও পন্থা—এবং তোমাদের দু'আ
অর্থাৎ তোমাদের ঈমান।
৭। উবায়দুল্লাহ্ ইবনু মূসা
(রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি।
১। আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ্ নেই
এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ আল্লাহ্র রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দান।
২। সালাত (নামায/নামাজ)
কায়েম করা
৩। যাকাত দেওয়া
৪। হাজ্জ (হজ্জ) করা এবং
৫। রামাদান এর সিয়াম পালন
করা।
পরিচ্ছেদঃ
৩/ ঈমানের বিষয়সমূহ
আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ
পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোন কল্যাণ নেই; কিন্তু
কল্যাণ আছে কেউ ঈমান আনলে আল্লাহ তা'আলার উপর, আখিরাত, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ
ও নবীগণের উপর ঈমান আনলে এবং আল্লাহ্র মুহাব্বতে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, অভাভগ্রস্থ, মুসাফির, সাহায্য-প্রার্থীদের
এবং দাসত্ব মোচনের জন্য সম্পদ দান করলে, সালাত কায়িম করলে ও যাকাত
দিলে এবং ওয়াদা দিয়ে তা পূরণ করলে, অর্থসংকটে, দুঃখ-কষ্টে
ও যুদ্ধকালে ধৈর্য ধারণ করলে। তারাই সত্যপরায়ণ, ও তারা মুত্তাকী’’- (২ঃ
১৭৭)। (... قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ) ‘‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মু'মিনগণ, যারা
বিনয়-নম্র নিজেদের সালাতে ... (২৩ঃ ১–২)
৮। আবদুল্লাহ ইবনু জু’ফী
(রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঈমানের শাখা রয়েছে ষাটের
কিছু বেশি। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।
পরিচ্ছেদঃ
৪/ প্রকৃত মুসলিম সে-ই, যার জিহ্বা ও হাত থেকে
অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে
৯। আদম ইবনু ইয়াস (রহঃ)
... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রকৃত মুসলিম সে-ই, যার
জিহ্বা ও হাত থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে এবং প্রকৃত মুহাজির সে-ই, যে
আল্লাহ্ তা’আলার নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করে।
আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আবূ
মু’আবিয়া (রহঃ) বলেছেন, আমার কাছে দাউদ ইবনু আবূ
হিন্দ (রহঃ) আমির (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেনঃ তিনি বলেছেন যে, আমি
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি এবং আবদুল আ’লা (রহঃ) দাউদ (রহঃ) থেকে, দাউদ
(রহঃ) আমির (রহঃ) থেকে, আমির (রহঃ) আবদুল্লাহ
(রাঃ) থেকে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ
৫/ ইসলামে কোন কাজটি উত্তম
১০। সা’ঈদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া
ইবনু সা’ঈদ আল উমাবী আল কুরাশী (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া
রাসুলাল্লাহ! ইসলামে কোন্ কাজটি উত্তম? তিনি বললেনঃ যার জিহ্বা ও
হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে।
পরিচ্ছেদঃ
৬/ খাবার খাওয়ানো ইসলামী গুন
১১। অমর ইবনু খালিদ (রহঃ)
... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,
এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করল,
ইসলামের কোন কাজটি উত্তম? তিনি
বললেন, তুমি খাবার খাওয়াবে ও পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দিবে।
পরিচ্ছেদঃ
৭/ নিজের জন্য যা পছন্দনীয়, ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করা
ঈমানের অংশ
১২। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ও
হুসাইন আল মু'আল্লিম (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হবে না, যতক্ষণ
না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করবে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে।
পরিচ্ছেদঃ
৮/ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে
ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ
১৩। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ...
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ সেই পবিত্র সত্তার কসম, যাঁর
হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন
হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তানের চেয়ে বেশি
প্রিয় হই।
পরিচ্ছেদঃ
৮/ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে
ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ
১৪। ইয়া’কুব ইবনু ইবরাহীম
ও আদম (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তোমাদের কেউ মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষন
না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে
বেশী প্রিয় হই।
পরিচ্ছেদঃ
৯/ ঈমানের স্বাদ
১৫। মুহাম্মদ ইবনুল
মূসান্না (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে, সে
ঈমানের স্বাদ পায়। ১। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছুর থেকে প্রিয়
হওয়া; ২। কাউকে খালিস আল্লাহ্র জন্যই মুহব্বত করা; ৩।
কুফ্রীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা।
পরিচ্ছেদঃ
১০/ আনসারকে ভালোবাসা ঈমানের লক্ষণ
১৬। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ...
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ঈমানের চিহ্ন হল আনসারকে ভালবাসা এবং মুনাফিকীর
চিহ্ন হল আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা।
পরিচ্ছেদঃ
১১/ পরিচ্ছদ নেই
১৭। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ...
‘আয়িনুল্লাহ্ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও
লায়লাতুল ‘আকাবার একজন নকীব ‘উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পার্শ্বে একজন সাহাবীর উপস্থিতিতে তিনি ইরশাদ
করেনঃ তোমরা আমার কাছে এই মর্মে বায়’আত গ্রহণ কর যে,
আল্লাহ্র সঙ্গে কিছু শরীক
করবে না, চুরি করবে না, যিনা করবে না, তোমাদের
সন্তানদের হত্যা করবে না, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দেবে
না এবং নেক কাজে নাফরমানী করবে না। তোমাদের মধ্যে যে তা পূরণ করবে, তার
বিনিময় আল্লাহ্র কাছে। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং দুনিয়াতে তার
শাস্তি পেয়ে গেলে, তবে তা হবে তার জন্য কাফ্ফারা।
আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং আল্লাহ্ তা অপ্রকাশিত রাখলে, তবে
তা আল্লাহ্র ইচ্ছাধীন। তিনি যদি চান, তাকে মাফ করে দেবেন আর যদি
চান, তাকে শাস্তি দেবেন। আমরা এর উপর বায়’আত গ্রহণ করলাম।
পরিচ্ছেদঃ
১২/ ফিতনা থেকে পলায়ন দ্বীনের অংশ
১৮। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা (রহঃ) ... আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেদিন দূরে
নয়, যেদিন মুসলিমের উত্তম সম্পদ হবে কয়েকটি বকরী, যা
নিয়ে সে পাহাড়ের চুড়ায় অথবা বৃষ্টিপাতের স্থানে চলে যাবে। ফিতনা থেকে বাঁচতে সে
তার দ্বীন নিয়ে পালিয়ে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ
১৩/ নাবী করীম (ﷺ)
এর বাণী, আমি তোমাদের তুলনায় আল্লাহকে সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী। আর
মারেফাত (আল্লাহ্র পরিচয়) অন্তরের কাজ। যেমন আল্লাহ্ ইরশাদ করেছেনঃ কিন্তু তিনি
তোমাদের অন্তরের সংকল্পের জন্য দায়ী করবেন। (২ঃ ২২৫)
১৯। মুহাম্মদ ইবনু সালাম
(রহঃ) ... ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের যখন কোন আমলের নির্দেশ দিতেন তখন তাঁরা
যতটুকু সমর্থ্য রাখতেন ততটুকুরই নির্দেশ দিতেন। একবার তাঁরা বললেন, হে
আল্লাহ্র রাসূল! আমরা তো আপনার মত নই। আল্লাহ্ তা’আলা আপনার পূর্ববর্তী এবং
পরবর্তী সকল ত্রুটি মাফ করে দিয়েছেন। একথা শুনে তিনি রাগ করলেন, এমনকি
তাঁর চেহারা মুবারকে রাগের চিহ্ন প্রকাশ পাচ্ছিল। এরপর তিনি বললেনঃ তোমাদের চাইতে
আল্লাহকে আমিই বেশি ভয় করি ও বেশি জানি।
পরিচ্ছেদঃ
১৪/ কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার ন্যায় অপছন্দ করা ঈমানের অঙ্গ
২০। সুলায়মান ইবনু হারব
(রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে, সে ঈমানের স্বাদ পায়—(১)
যার কাছে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল অন্য সব কিছু থেকে প্রিয়; (২) যে একমাত্র আল্লাহ্রই জন্য কোন বান্দাকে মুহব্বত করে এবং (৩) আল্লাহ্
তা’আলা কুফর থেকে মুক্তি দেওয়ার পর যে কুফর-এ ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার
মতোই অপছন্দ করে।
পরিচ্ছেদঃ
১৫/ আমলের দিক থেকে ঈমানদারদের শ্রেষ্ঠত্বের স্তরভেদ
২১। ইসমা’ঈল (রহঃ) ... আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতীগণ জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ
করবেন। পরে আল্লাহ্ তা’আলা (ফিরিশতাদের) বলবেন, যার অন্তরে একটি সরিষা
পরিমানও ঈমান রয়েছে, তাকে দোযখ থেকে বের করে
নিয়ে আস। তারপর তাদের দোযখ থেকে বের করা হবে এমন অবস্থায় যে, তারা
(পুড়ে) কালো হয়ে গেছে। এরপর তাদের বৃষ্টিতে বা হায়াতের [বর্ণনাকারী মালিক (রহঃ)
শব্দ দু’টির কোনটি এ সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেছেন] নদীতে ফেলা হবে। ফলে তারা সতেজ
হয়ে উঠবে, যেমন নদীর পাশে ঘাসের বীজ গজিয়ে উঠে। তুমি কি দেখতে পাওনা
সেগুলো কেমন হলুদ রঙের হয় ও ঘন হয়ে গজায়? উহাইব (রহঃ) বলেন, ‘আমর (রহঃ) আমাদের কাছেحيا এর স্থলেحياة এবং خردل من ايمان এর স্থলেخردل من خير বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ
১৫/ আমলের দিক থেকে ঈমানদারদের শ্রেষ্ঠত্বের স্তরভেদ
২২। মুহাম্মদ ইবনু উবায়দুল্লাহ্
(রহঃ) ... আবূ উমামা ইবনু সাহল ইবনু হুনাইফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একবার আমি ঘুমন্ত অবস্থায় (স্বপ্নে) দেখলাম যে, লোকদেরকে
আমার সামনে হাযির করা হচ্ছে। আর তাদের পরণে রয়েছে জামা। কারো জামা বুক পর্যন্ত আর
কারো জামা এর নীচ পর্যন্ত। আর উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে আমার সামনে হাযির করা হল
এমন অবস্থায় যে, তিনি তাঁর জামা (এত লম্বা
যে) টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সাহাবায়ে কিরাম বললেন,
ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এর
কী তা’বীর করেছেন? তিনি বললেনঃ (এ জামা মানে)
দ্বীন।
পরিচ্ছেদঃ
১৬/ লজ্জা ঈমানের অঙ্গ
২৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ
(রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাঁর ভাইকে তখন (অধিক)
লজ্জা ত্যাগের জন্য নসীহত করছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
বললেনঃ ওকে ছেড়ে দাও। কারন লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।
পরিচ্ছেদঃ
১৭/ যদি তারা তওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত
দেয়, তবে তাদের পথ ছেড়ে দেবে (৯:৫)
২৪। আবদুল্লাহ ইবনু
মুহাম্মদ আল-মুসনাদী (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমি লোকদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার
জন্য আদিষ্ট হয়েছে, যতক্ষন না তারা সাক্ষ্য
দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল, আর সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম
করে ও যাকাত দেয়। তারা যদি এ কাজগুলো করে, তবে আমার পক্ষ থেকে তাদের
জান ও মালের ব্যাপারে নিরাপত্তা লাভ করল; অবশ্য ইসলামের বিধান
অনুযায়ী যদি কোন কারন থাকে, তাহলে স্বতন্ত্র কথা। আর
তাদের হিসাবের ভার আল্লাহ্র ওপর ন্যাস্ত।
পরিচ্ছেদঃ
১৮/ যে বলে ঈমান আমলেরই নাম
আল্লাহ্ তা‘আলার এ বাণীর
পরিপ্রেক্ষিতেঃ
وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
এটাই জান্নাত, তোমাদেরকে
যার অধিকারী করা হয়েছে তোমাদের কর্মের ফলস্বরূপ। (সূরা যুখরুফঃ ৭২)
فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ
সুতরাং কসম আপনার রবের।
আমি তাদের সবাইকে প্রশ্ন করবই সে বিষয়ে, যা তারা করে- (সূরাহ্
হিজরঃ ৯০)। আল্লাহ তা'আলার এ বাণী সম্পর্কে আলিমদের এক দল বলেন, لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ এর স্বীকারোক্তি সম্পর্কে
প্রশ্ন করা হবে।
আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ
لِمِثْلِ هَذَا فَلْيَعْمَلِ الْعَامِلُونَ
এরূপ সাফল্যের জন্য
‘আমলকারীদের উচিত ‘আমাল করা। (সূরাহ্ সাফফাতঃ ৬১)
২৫। আহমদ ইবনু ইউনুস ও
মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল,
‘কোন্ আমলটি উত্তম?’ তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনা। প্রশ্ন করা হল, তারপর
কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করা। প্রশ্ন করা হল, তারপর
কোনটি। তিনি বললেনঃ মকবূল হাজ্জ (হজ্জ)।
পরিচ্ছেদঃ
১৯/ ইসলাম গ্রহন যদি খাঁটি না হয় বরং বাহ্যিক আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য বা হত্যার
ভয়ে হয়।
তবে তাঁর ইসলাম গ্রহণ মহান
আল্লাহর এ বাণী অনুযায়ী হবেঃ
قَالَتِ الأَعْرَابُ آمَنَّا قُلْ
لَمْ تُؤْمِنُوا وَلَكِنْ قُولُوا أَسْلَمْنَا
‘‘আরব
মরুবাসীরা বলে, আমরা ঈমান আনলাম; আপনি
বলে দিন, তোমরা ঈমান আন নি; বরং তোমরা বল, ‘আমরা বাহ্যত মুসলিম হয়েছি। (সূরা হুজরাতঃ ১৪)
আর ইসলাম গ্রহণ খাঁটি হলে
তা হবে আল্লাহ্ তা‘আলার এ বাণী অনুযায়ীঃ (إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الإِسْلاَمُ) ‘‘নিশ্চয়ই ইসলাম আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন’’- (সূরাহ্ আলে
‘ইমরানঃ ১৯)।
২৬। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ...
সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একদল লোককে কিছু দান করলেন। সা’দ (রাঃ) সেখানে বসা ছিলেন। সা’দ (রাঃ)
বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এক ব্যাক্তিকে
কিছু দিলেন না। সে ব্যাক্তি আমার কাছে তাদের চেয়ে অধিক পছন্দনীয় ছিল। তাই আমি
বললাম, ইয়া রাসূলল্লাহ্! অমুক ব্যাক্তিকে আপনি বাদ দিলেন কেন? আল্লাহ্র
কসম! আমিতো তাকে মু’মিন বলেই জানি। তিনি বললেনঃ (মু’মিন) না মুসলিম? তখন
আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। তারপর আমি তার সম্পর্কে যা জানি, তা
প্রবল হয়ে উঠল। তাই আমি আমার বক্তব্য আবার বললাম,
আপনি অমুককে দানের ব্যপারে
বিরত রইলেন?
আল্লাহ্র কসম! আমিতো তাকে
মু’মিন বলেই জানি। তিনি বললেনঃ ‘না মুসলিম?’ তখন আমি কিছুক্ষণ চুপ
থাকলাম। তারপর তার সম্পর্কে যা জানি তা প্রবল হয়ে উঠল। তাই আমি আমার বক্তব্য আবার
বললাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারও সেই জবাব দিলেন। তারপর বললেনঃ
‘সা’দ! আমি কখনো ব্যাক্তি বিশেষকে দান করি, অথচ অন্য লোক আমার কাছে
তার চাইতে বেশি প্রিয়। তা এ আশঙ্কায় যে (সে ঈমান থেকে ফিরে যেতে পারে পরিণামে), আল্লাহ্
তা’আলা তাকে অধোমুখে জাহান্নামে ফেলে দেবেন।
এ হাদীস ইউনুস, সালিহ, মা’মার
এবং যুহরী (রহঃ)-এর ভাতিজা যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ
২০/ সালামের প্রচলন করা ইসলামের অন্তর্ভুক্ত
আম্মার (রাঃ) বলেন, ‘তিনটি গুণ যে আয়ত্ত করে, সে (পূর্ণ) ঈমান লাভ করেঃ
(১) নিজ থেকে ইনসাফ করা, (২) বিশ্বে সালামের প্রচলন, এবং
(৩) অভাবগ্রস্থ অবস্থায়ও দান করা।
২৭। কুতায়বা (রহঃ) ...
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যাক্তি রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করল,
‘ইসলামের কোন্ কাজ সবচাইতে
উত্তম?’ তিনি বললেনঃ তুমি লোকদের আহার করাবে এবং পরিচিত-অপরিচিত
নির্বিশেষে সকলকে সালাম দিবে।
পরিচ্ছেদঃ
২১/ স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা আর এক কুফর অন্য কুফর থেকে ছোট।
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর সূত্রে হাদিস বর্ণিত
আছে।
২৮। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা (রহঃ) ... ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়। (আমি
দেখি), তার অধিবাসীদের অধিকাংশই স্ত্রীলোক; (কারন) তারা কুফরী করে। জিজ্ঞাসা করা হল, ‘তারা কি আল্লাহর সঙ্গে
কুফরী করে? তিনি বললেনঃ ‘তারা স্বামীর অবাধ্য হয় এবং ইহসান অস্বীকার
করে। তুমি যদি দীর্ঘকাল তাদের কারো প্রতি ইহসান করতে থাক, এরপর
সে তোমার সামান্য অবহেলা দেখলেই বলে, ‘আমি কখনো তোমার কাছ থেকে
ভালো ব্যবহার পাইনি।
পরিচ্ছেদঃ
২২/ পাপ কাজ জাহেলী যুগের স্বভাব
আর শির্ক ব্যতীত অন্য কোন
গুনাহ্তে লিপ্ত হওয়াতে ঐ পাপীকে কাফির বলা যাবে না। যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম [আবূ যার (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে] বলেছেনঃ তুমি এমন ব্যক্তি, তোমার
মধ্যে জাহিলী যুগের অভ্যাস রয়েছে। আর আল্লাহর বাণীঃ
إِنَّ
اللَّهَ لاَ يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ
আল্লাহ্ তাঁর সাথে অংশীদার
স্থাপন করার গুনাহ ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন।
(সূরা আন-নিসাঃ ৪৮)
২৯। ‘আবদুর রহমান ইবনুল
মুবারক (রহঃ) ... আহনাফ ইবনু কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি (সিফফীনের যুদ্ধে) এ ব্যক্তিকে [আলী (রাঃ)-কে] সাহায্য
করতে যাচ্ছিলাম। আবূ বাক্রা (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাত হলে তিনি বললেনঃ ‘তুমি
কোথায় যাচ্ছে?’ আমি বললাম, ‘আমি এ ব্যক্তিকে সাহায্য
করতে যাচ্ছি। তিনি বললেনঃ ‘ফিরে যাও। কারন আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, দু’জন মুসলমান তাদের
তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হলে হত্যাকারী এবং নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। আমি
বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এ হত্যাকারী (তো অপরাধী), কিন্তু
নিহত ব্যক্তির কি অপরাধ? তিনি বললেন, (নিশ্চয়ই) সে তার সঙ্গীকে হত্যা করার জন্য উদগ্রীব ছিল।
পরিচ্ছেদঃ
২২/ পাপ কাজ জাহেলী যুগের স্বভাব
৩০। সুলায়মান ইবনু হারব
(রহঃ) ... মা’রূর (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি একবার
রাবাযা নামক স্থানে আবূ যর (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি
ও চাঁদর) আর তাঁর চাকরের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাঁকে এর
(সমতার) কারন জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ একবার আমি এক ব্যাক্তিকে গালি দিয়েছিলাম
এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ ‘আবূ যর! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি
তো এমন ব্যাক্তি, তোমার মধ্যে এখনো জাহিলী
যুগের স্বভাব রয়েছে। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই
ভাই। আল্লাহ্ তা’আলা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে
থাকবে, সে যেন নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরে, তাকে
তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না, যা তাদের জন্য খুব কষ্টকর।
যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে
কাজে সাহায্য করবে।
পরিচ্ছেদঃ
২৩/ যুলুমের প্রকারভেদ
৩১। আবূল ওয়ালীদ এবং বিশ্র
(রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ (الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ
بِظُلْمٍ) “যারা ঈমান
এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি” (৬ঃ ৮২) এ আয়াত নাযিল হলে
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবিগণ বললেন, ‘আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে যুলুম করে নি?’ তখন আল্লাহ্ তা’আলা এ
আয়াত নাযিল করেনঃ (إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ) “নিশ্চয়ই শির্ক চরম যুলুম।” (৩১ঃ ১৩)
পরিচ্ছেদঃ
২৪/ মুনাফিকের আলামত
৩২। সুলায়মান আবূর রাবী’
(রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ মুনাফিকের আলামত তিনটিঃ ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে ২. যখন
ওয়াদা করে ভঙ্গ করে এবং ৩. আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে।
পরিচ্ছেদঃ
২৪/ মুনাফিকের আলামত
৩৩। কাবীসা ইবনু ‘উকবা
(রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
নাবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে সে হবে খাঁটি মুনাফিক। যার
মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা
পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়।
১. আমানত রাখা হলে খেয়ানত
করে
২. কথা বললে মিথ্যা বলে
৩. চুক্তি করলে ভঙ্গ করে
এবং
৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল
গালি দেয়।
শু’বা (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ)
থেকে হাদীস বর্ণনায় সুফিয়ান (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ
২৫/ লায়লাতুল কদরে ইবাদতে রাত্রি জাগরণ ঈমানের অন্তর্ভুক্ত
৩৪। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ...
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যাক্তি
ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় লায়লাতুল কদর-এ ইবাদতে রাত্রি জাগরণ করবে, তার
অতীতের গুনাহ্ মাফ করে দেওয়া হবে।
পরিচ্ছেদঃ
২৬/ জিহাদ ঈমানের অন্তর্ভুক্ত
৩৫। হারামীয়া ইবনু হাফস
(রহঃ) .... আবূ যুর’আ ইবনু ‘আমর ইবনু জারীর (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি
বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ করেনঃ যে
ব্যাক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়, যদি সে শুধু আল্লাহর উপর
ঈমান এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাসের কারনে বের হয়ে থাকে, তবে
আল্লাহ্ তা’আলা ঘোষণা দেন যে, আমি তাকে ঘরে ফিরিয়ে আনব
তার সওয়াব বা গনীমত (ও সওয়ার) সহ কিংবা তাকে জান্নাতে দাখিল করব। আর আমার উম্মতের
উপর কষ্টদায়ক হবে বলে যদি মনে না করতাম তবে কোন সেনাদলের সাথে না গিয়ে বসে থাকতাম
না। আমি অবশ্যই এটা পছন্দ করি যে, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হই, আবার
জীবিত হই, আবার শহীদ হই, আবার জীবিত হই, আবার
শহীদ হই।
পরিচ্ছেদঃ
২৭/ রমযানের রাতে নফল ইবাদত ঈমানের অঙ্গ
৩৬। ইসমা’ঈল (রহঃ) ... আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যাক্তি রমযানের রাতে সওয়াবের
আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ্ মাফ
করে দেওয়া হয়।
পরিচ্ছেদঃ
২৮/ সওয়াবের আশায় রমযানের সিয়াম পালন ঈমানের অঙ্গ
৩৭। ইবনু সালাম (রহঃ) ...
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যাক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায়
রমযানের সিয়াম পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে
দেওয়া হয়।
পরিচ্ছেদঃ
২৯/ দ্বীন সহজ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর বাণীঃ আল্লাহর নিকট সবচাইতে পসন্দনীয় হল দীন-ই হানীফিয়্যা যা সহজ
সরল।
৩৮। আবদুস সালাম ইবনু
মুতাহ্হার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী
করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ নিশ্চয়ই দ্বীন সহজ-সরল। দ্বীন
নিয়ে যে কড়াকড়ি করে দ্বীন তার উপর বিজয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং
(মধ্যপন্থার) নিকটবর্তী থাক, আশান্বিত থাক এবং
সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশে (ইবাদতের মাধ্যমে) আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর।
পরিচ্ছেদঃ
৩০/ সালাত ঈমানের অন্তর্ভুক্ত
আর আল্লাহর বাণীঃ (وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ) আল্লাহ এরূপ নন যে তোমাদের ঈমান ব্যর্থ
করবেন- (সূরা আল-বাক্বারাঃ ১৪৩)। অর্থাৎ বায়তুল্লাহর নিকট (বায়তুল মুকাদ্দাসমুখী হয়ে) আদায় করা তোমাদের
সালাতকে তিনি নষ্ট করবেন না।
৩৯। ‘আমর ইবনু খালিদ (রহঃ)
... বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরত করে সর্বপ্রথম আনসারদের মধ্যে তাঁর নানাদের গোত্র [আবূ
ইসহাক (রহঃ) বলেন] বা মামাদের গোত্রে এসে ওঠেন। তিনি ষোল-সতের মাস বায়তুল
মুকাদ্দসের দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। কিন্তু তাঁর পছন্দ ছিল যে, তাঁর
কিবলা বায়তুল্লাহ্র দিকে হোক। আর তিনি (বায়তুল্লাহ্র দিকে) প্রথম যে সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করেন, তা ছিল আসরের সালাত
(নামায/নামাজ) এবং তাঁর সঙ্গে একদল লোক উক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তাঁর
সঙ্গে যাঁরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছিলেন তাঁদের একজন লোক বের হয়ে এক মসজিদে
মুসল্লীদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁরা তখন রুকু’র অবস্থায়
ছিলেন।
তখন তিনি বললেনঃ “আমি
আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, এইমাত্র আমি রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মক্কার দিকে ফিরে সালাত (নামায/নামাজ)
আদায় করে এসেছি। তখন তাঁরা যে অবস্থায় ছিলেন সে অবস্থায়ই বায়তুল্লাহ্র দিকে ঘুরে
গেলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করতেন তখন ইয়াহূদীদের ও আহলি কিতাবদের কাছে এটা খুব ভাল লাগত; কিন্তু
তিনি যখন বায়তুল্লাহ্র দিকে (সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য) তাঁর মুখ ফিরালেন তখন
তারা এর প্রতি চরম অসন্তুষ্ট হল।
যুহায়র (রহঃ) বলেন, আবূ
ইসহাক (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে আমার কাছে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাতে
এ কথাও রয়েছে যে, কিবলা পরিবর্তনের পূর্বে
বেশ কিছু লোক ইন্তেকাল করেছিলেন এবং শহীদ হয়েছিলেন,
তাঁদের ব্যাপারে আমরা কি
বলব, বুঝতে পারছিলাম না, তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল
করেনঃ (وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ) “আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের সালাত
(নামায/নামাজ)-কে (যা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে আদায় করা হয়েছিল) বিনষ্ট করবেন না।”
পরিচ্ছেদঃ
৩১/ উত্তমরূপে ইসলাম গ্রহন
মালিক (রহঃ) ... আবূ সা’ঈদ
খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ
করে এবং তার ইসলাম উত্তম হয়, আল্লাহ্ তা’আলা তার আগের
সব গুনাহ্ মাফ করে দেন। এরপর শুরু হয় প্রতিদান; একটি সৎ কাজের বিনিময়ে দশ গুণ থেকে
সাতশ গুণ পর্যন্ত; আর একটি মন্দ কাজের
বিনিময়ে ঠিক ততটুকু মন্দ প্রতিফল। অবশ্য আল্লাহ্ যদি মাফ করে দেন তবে ভিন্ন কথা।
৪০। ইসহাক ইবনু মানসূর
(রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন উত্তমরূপে
ইসলামের উপর কায়েম থাকে তখন সে যে নেক আমল করে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে সাতশ গুণ
পর্যন্ত (সওয়াব) লেখা হয়। আর সে যে মন্দ কাজ করে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে তার জন্য
ঠিক ততটুকুই মন্দ লেখা হয়।
পরিচ্ছেদঃ
৩২/ আল্লাহ্ তা'আলার কাছে সবচাইতে পছন্দনীয় আমল সেটাই যা
নিয়মিত করা হয়
৪১। মুহাম্মদ ইবনুল
মূসান্না (রহঃ) ... ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একবার তাঁর কাছে আসেন, তাঁর নিকট এক মহিলা ছিলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ ‘ইনি কে? আয়িশা
(রাঃ) উত্তর দিলেন অমুক মহিলা, এ বলে তিনি তাঁর সালাত
(নামায/নামাজ)-এর উল্লেখ করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘থাম, তোমরা
যতটুকু সামর্থ্য রাখ, ততটুকুই তোমাদের করা উচিৎ। আল্লাহর কসম! আল্লাহ্ তা’আলা
ততক্ষন পর্যন্ত (সওয়াব দিতে) বিরত হন না, যতক্ষন না তোমরা নিজেরা
ক্লান্ত হয়ে পড়। আল্লাহর কাছে সবচাইতে পছন্দনীয় আমল তা-ই, যা
আমলকারী নিয়মিত করে থাকে।
পরিচ্ছেদঃ
৩৩/ ঈমানের বাড়া-কমা।
আল্লাহ্ তা'আলার
বাণীঃ আমি তাঁদের হিদায়াত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম (১৮ঃ ৩৩) যাতে মুমিনদের ঈমান আরো বেড়ে
যায় (৭৪ঃ ৩১) তিনি আরও ইরশাদ করেন, আজ আমি তোমাদের জন্য
তোমাদের দ্বীন পূর্ণাংগ করে দিলাম (৫ঃ ৩) পূর্ণ জিনিস থেকে কিছু বাদ দেয়া হলে তা
অসম্পূর্ণ হয়।
৪২। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাহ্ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমানও
নেকী থাকবে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং যে এবং যে‘লা-ইলাহা
ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি গম পরিমানও নেকী থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে
বের করা হবে এবং যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও
নেকী থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।
ইমাম আবূ ‘আবদুল্লাহ
মুখারী (রহঃ) বলেন, আবান (রহঃ) কাতাদা (রহঃ)
আনাস (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নেকী (خَيْر) এর স্থলে
‘ঈমান’ শব্দটি রিওয়ায়েত করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ
৩৩/ ঈমানের বাড়া-কমা।
৪৩। হাসান ইবনুুস সাব্বাহ্
(রহঃ) ... ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, এক
ইয়াহূদী তাঁকে বললঃ হে আমীরুল মু‘মিনীন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে যা আপনারা
পাঠ করে থাকেন, তা যদি আমাদের ইয়াহূদী
জাতির উপর নাযিল হত, তবে অবশ্যই আমরা সে দিনকে
ঈদ হিসেবে পালন করতাম। তিনি বললেন, কোন আয়াত? সে
বললঃ
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا
“আজ
তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ
করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম।” (৫ : ৩) ‘উমর (রাঃ) বললেন এটি যে
দিন এবং যে স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর নাযিল হয়েছিল তা
আমরা জানি; তিনি সেদিন ‘আরাফায় দাঁড়িয়েছিলেন এবং তা ছিল জুম‘আর দিন।
পরিচ্ছেদঃ
৩৪/ যাকাত ইসলামের অঙ্গ।
আল্লাহ্ তা'আলার
বাণীঃ তাঁরা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর অনুগত্য বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর
ইবাদত করতে এবং সালাত কায়েম করতে, যাকাত দিতে। আর এ-ই সঠিক
দ্বীন (৯৮ঃ ৫)
৪৪। ইসমা’ঈল (রহঃ) ...
তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাজ্দবাসী
এক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো। তার মাথার চুল ছিল
এলোমেলো। আমরা তার কথার মৃদু আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম,
কিন্তু সে কি বলছিল, আমরা
তা বুঝতে পারছিলাম না। এভাবে সে কাছে এসে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগল। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ)।
সে বলল, ‘আমার উপর এ ছাড়া আরো সালাত (নামায/নামাজ) আছে?’ তিনি বললেনঃ ‘না, তবে নফল আদায় করতে পার।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আর রমযানের সিয়াম। সে বলল, ‘আমার উপর এ ছাড়া আরো সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আছে? তিনি
বললেনঃ না, তবে নফল আদায় করতে পার। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে যাকাতের কথা বললেন। সে বলল, ‘আমার ওপর এ ছাড়া আরো দেয় আছে? তিনি বললেনঃ না, তবে
নফল হিসেবে দিতে পার। বর্ণনাকারী বলেন, সে ব্যাক্তি এই বলে চলে
গেলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি এর চেয়ে বেশিও করব না এবং কমও করব না। তখন
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে সফলকাম হবে যদি সত্য বলে থাকে।
পরিচ্ছেদঃ
৩৫/ জানাযার অনুগমন ঈমানের অঙ্গ
৪৫। আহমদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ
ইবনু ‘আলী আল-মানজূফী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের
আশায় কোন মুসলমানের জানাযায় অনুগমন করে এবং তার সালাত (নামায/নামাজ)-ই জানাযা আদায়
ও দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সাথে থাকে, সে দুই কীরাত সওয়াব নিয়ে
ফিরবে। প্রতিটি কীরাত হল উহুদ পর্বতের মতো। আর যে ব্যাক্তি শুধু জানাযা আদায় করে, তারপর
দাফন সম্পন্ন হওয়ার আগেই চলে আসে, সে এক কীরাত সওয়াব নিয়ে
ফিরবে।
‘উসমান
আল-মুয়াযযিন (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ
৩৬/ অজ্ঞাতসারে মুমিনের আমল নষ্ট হওয়ার আশংকা
ইবরাহিম তায়মী (রহঃ) বলেনঃ
আমার আমলের সাথে যখন আমার কথা তুলনা করি, তখন আশঙ্কা হয়, আমি
না মিথ্যাবাদী হই। ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) বলেন,
আমি নাবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এমন ত্রিশজন সাহাবীকে পেয়েছি, যারা
সবাই নিজেদের সম্পর্কে নিফাকের ভয় করতেন। তাঁরা কেউ এ কথা বলতেন না যে, তিনি
জিবরীল (আঃ) ও মীকাঈল (আঃ) এর তুল্য ঈমানের অধিকারী। হাসান বসরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, নিফাকের
ভয় মু'মিনই করে থাকে। আর কেবল মুনাফিকই তা থেকে নিশ্চিত থাকে।
তউবা না করে পরস্পর লড়াই করা ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে সতর্ক থাকা। কারন আল্লাহ্
তা'আলা বলেনঃ (وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ) এবং তাঁরা (মুত্তাকিরা) যা করে ফেলে, জেনে
শুনে তাঁর (গুনাহর) পুনরাবৃতি করে না (৩ঃ ১৩৫)
৪৬। মুহাম্মদ ইবনু ‘আর
‘আরা (রহঃ) ... যুবায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আবূ ওয়াইল
(রহঃ)-কে মুরজিআ[১] সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসিকী এবং তার
সাথে লড়াই করা কুফরী।
[১] একটি বাতিল ফিরকা, যাদের
মত হল, ভাল হোক বা মন্দ কোন আমলের মূল্য নেই এবং ইমান আনার পর কোন
গুনাহ ক্ষতিকর নয়।
পরিচ্ছেদঃ
৩৬/ অজ্ঞাতসারে মুমিনের আমল নষ্ট হওয়ার আশংকা
৪৭। কুতায়বা ইবনু সা’ঈদ
(রহঃ) ... ‘উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) বর্ণনা করেন যে,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম লায়লাতুল কদ্র সম্পর্কে খবর দেওয়ার জন্য বের হলেন। তখন দু’জন মুসলমান
পরস্পর বিবাদ করছিল। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের লায়লাতুল কদ্র সম্পর্কে খবর দেওয়ার
জন্য বেরিয়েছিলাম; কিন্তু তখন অমুক অমুক
বিবাদে লিপ্ত থাকায় তা (নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কিত জ্ঞান) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর
হয়তো বা এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে। তোমরা তা অনুসন্ধান কর ২৭, ২৯
ও ২৫ তম রাতে।
পরিচ্ছেদঃ
৩৭/ জিবরীল (আঃ) কর্তৃক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ঈমান, ইসলাম, ইহসান
ও কিয়ামতের জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন
জিবরীল (আঃ) কর্তৃক
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ঈমান, ইসলাম, ইহসান
ও কিয়ামতের জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন আর তাকে দেওয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর উত্তর। তারপর তিনি বললেনঃ জিবরীল (আঃ) তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে
এসেছিলেন। তিনি এসব বিষয়কে দ্বীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। ঈমান সম্পর্কে আব্দুল কায়স
গোত্রের প্রতিনিধি দলকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিবরন
দিয়েছেন এবং আল্লাহ্ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ (وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ) কেউ ইসলাম ব্যাতিত অন্য কোন দ্বীন গ্রহন
করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না (৩ঃ ৮৫)
৪৮। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ...
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনসমুক্ষে বসা ছিলেন, এমন
সময় তাঁর কাছে এক ব্যাক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন ‘ঈমান কি?’ তিনি বললেনঃ ‘ঈমান হল, আপনি বিশ্বাস রাখবেন
আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, (কিয়ামতের দিন) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। আপনি আরো
বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইসলাম কি?’ তিনি বললেনঃ ‘ইসলাম হল, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন
এবং তাঁর সঙ্গে শরীক করবেন না, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম
করবেন, ফরয যাকাত আদায় করবেন এবং রমযানের সাওম
(রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবেন। ঐ ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইহসান কি?’ তিনি বললেনঃ ‘আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন যেন আপনি
তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (বিশ্বাস রাখবেন যে,) তিনি আপনাকে দেখছেন।
ঐ ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কিয়ামত কবে?’ তিনি বললেনঃ ‘এ ব্যাপারে
যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা
বেশি জানেন না। তবে আমি আপনাকে কিয়ামতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছিঃ বাঁদী যখন তার
প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে
প্রতিযোগিতা করবে। (কিয়ামতের বিষয়) সেই পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভূক্ত, যা
আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জাননা। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতটি শেষ
পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেনঃ (إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ) “কিয়ামতের জ্ঞান
কেবল আল্লাহই নিকট।” (৩১ : ৩৪) এরপর ঐ ব্যাক্তি চলে গেলে তিনি বললেনঃ ‘তোমরা তাকে
ফিরিয়ে আন।’ তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন, ‘ইনি জিবরীল আলাইহিস সালাম। লোকদের দ্বীন শেখাতে এসেছিলেন। আবূ আব্দুল্লাহ
বুখারী (রহঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এসব বিষয়কে ঈমানের অন্তর্ভুক্ত করেছেন৷
পরিচ্ছেদঃ
৩৮/ পরিচ্ছদ নেই
৪৯। ইবরাহীম ইবনু হামাযা
(রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেনঃআবূ সুফিয়ান
ইবনু হারব আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, হিরাকল তাঁকে বলেছিলেন, আমি
তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তারা (ঈমানদারগণ) সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি
উত্তর দিয়েছিলে, তারা সংখ্যায় বাড়ছে।
প্রকৃতপক্ষে ঈমানের ব্যাপার এরূপই থাকে যতক্ষণ না তা পূর্ণতা লাভ করে। আর আমি
তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেউ তাঁর দ্বীন গ্রহণ করার
পর তা অপছন্দ করে মুরতাদ হয়ে যায় কি-না? তুমি জবাব দিয়েছ, ‘না।’ প্রকৃত ঈমান এরূপই, ঈমানের স্বাদ অন্তরের সাথে
মিশে গেলে কেউ তা অপছন্দ করে না।
পরিচ্ছেদঃ
৩৯/ দ্বীন রক্ষাকারীর ফজিলত
৫০। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) ...
নু’মান ইবনু বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে,
‘হালালও স্পষ্ট এবং হারামও
স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়- যা অনেকেই জানেনা। যে
ব্যাক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাকবে,
সে তার দ্বীন ও মর্যাদা
রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, উদহারন
সে রাখালের ন্যায়, যে তার পশু বাদশাহ্র
সংরক্ষিত চারণভুমির আশে পাশে চরায়, অচিরেই সেগুলো সেখানে ঢুকে
পড়ার আশংকা রয়েছে। জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহ্রই একটি
সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর যমীনে তাঁর
সংরক্ষিত এলাকা হল তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ,
শরীরের মধ্যে একটি গোশতের
টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে
যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে
যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল কলব।
পরিচ্ছেদঃ
৪০/ গণীমতের এক পঞ্চমাংশ প্রদান ঈমানের অন্তর্ভুক্ত
৫১। আলী ইবনুল জা’দ (রহঃ)
... আবূ জামরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর সঙ্গে বসতাম্ তিনি আমাকে তাঁর আসনে বসাতেন। একবার তিনি
বললেনঃ তুমি আমার কাছে থেকে যাও, আমি তোমাকে আমার সম্পদ
থেকে কিছু অংশ দেব। আমি দু’ মাস তাঁর সঙ্গে অবস্থান করলাম। তারপর একদিন তিনি বললেন, আবদুল
কায়েসের একটি প্রতিনিধি দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলে
তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমরা কোন্ কওমের? অথবা কোন্ প্রতিনিধিদলের? তারা
বলল, রাবী‘আ গোত্রের।’ তিনি বললেনঃ মারহাবা সে গোত্র বা সে
প্রতিনিধি দলের প্রতি, যারা অপদস্থ ও লজ্জিত না
হয়েই এসেছে। তারা বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষিদ্ধ মাসসমূহ ছাড়া অন্য কোন সময় আমরা আপনার কাছে আসতে পারি
না। (কারন) আমাদের এবং আপনার মাঝখানে মুযার গোত্রীয় কাফিরদের বাস। তাই আমাদের কিছু
স্পষ্ট হুকুম দিন, যাতে আমরা যাদের পিছনে
রেখে এসেছি তাদের জানিয়ে দিতে পারি এবং যাতে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি।
তারা পানীয় সম্পর্কেও
জিজ্ঞাসা করল। তখন তিনি তাদের চারটি জিনিসের নির্দেশ এবং চারটি জিনিস থেকে নিষেধ
করলেন। তাদের এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার আদেশ দিয়ে বললেনঃ ‘এক আল্লাহ প্রতি ঈমান
আনা কিভাবে হয় তা কি তোমরা জানো?’ তাঁরা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।’ তিনি বললেনঃ ‘তা হল এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ্
ছাড়া ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা, যাকাত
দেওয়া, রমযানের সিয়াম পালন করা; আর তোমরা গণীমতের মাল থেকে
এক-পঞ্চমাংশ প্রদান করবে। তিনি তাদেরকে চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করলেন। তা হলঃ সবুজ
কলসী, শুকনো লাউয়ের খোল, খেজুর গাছের গুঁড়ি থেকে
তৈরীকৃত পাত্র এবং আলকাতরার পালিশকৃত পাত্র। রাবী বলেন, বর্ণনাকারী
(مزفت এর স্থলে) কখনওالمقير উল্লেখ করেছেন
(উভয় শব্দের অর্থ একই)। তিনি আরো বলেন, তোমরা এগুলো ভালো করে
আয়ত্ত করে নাও এবং অন্যদেরও এগুলি জানিয়ে দিও।
পরিচ্ছেদঃ
৪১/ আমল নিয়ত ও সওয়াব আশা অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষের প্রাপ্য তার নিয়ত অনুযায়ী।
অতএব ঈমান, উযূ, সালাত, যাকাত, হাজ্জ, সিয়াম
এবং অন্যান্য আহকাম সবই সবই এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ (قُلْ كُلٌّ يَعْمَلُ عَلَى شَاكِلَتِهِ) ‘‘বলুন প্রত্যেকেই আপন স্বভাব অনুসারে কর্ম
সম্পাদন করে থাকে।’’ (সূরা আল-ইসরাঃ ৮৪)
شَاكِلَتِهِ অর্থাৎ নিয়ত অনুযায়ী। মানুষ তার পরিবারের
জন্য সাওাবের নিয়তে যা খরচ করে, তা সদাক্বাহ। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (এখন মক্কা হতে হিজরাত নেই)
তবে কেবল জিহাদ ও নিয়্যাত অবশিষ্ট রয়েছে।
৫২। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলাম
(রহঃ) ... ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত এবং প্রত্যেক মানুষের প্রাপ্য তার
নিয়ত অনুযায়ী। অতএব যার হিজরত হবে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর উদ্দেশ্যে, তার হিজরত আল্লাহ্ ও তাঁর
রাসূল -এর উদ্দেশ্যে হয়েছে বলেই গণ্য হবে। আর যার হিজরত হয় দুনিয়া হাসিলের জন্য বা
কোন নারীকে বিয়ে করার জন্য, তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই
গণ্য হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে।
পরিচ্ছেদঃ
৪১/ আমল নিয়ত ও সওয়াব আশা অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষের প্রাপ্য তার নিয়ত অনুযায়ী।
৫৩। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল
(রহঃ) ... আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মানুষ তার পরিবারের জন্য সওয়াবের নিয়তে যখন খরচ করে তখন তা হয়
তার সদকা স্বরূপ।
পরিচ্ছেদঃ
৪১/ আমল নিয়ত ও সওয়াব আশা অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষের প্রাপ্য তার নিয়ত অনুযায়ী।
৫৪। হাকাম ইবনু নাফি’
(রহঃ) ... সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যা-ই
খরচ কর না কেন, তোমাকে তার সওয়াব অবশ্যই
দেওয়া হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও।’
পরিচ্ছেদঃ
৪২/ নাবী (ﷺ) এর বানীঃ
দ্বীন হল কল্যাণ কামনা করা, আল্লাহর রেজমন্দির জন্য, তাঁর
রাসুলের জন্য, মুসলিম নেত্রীবৃন্দের জন্য এবং সকল মুসলিমের জন্য।
আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ
إِذَا
نَصَحُوا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ
‘যদি
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি তাদের অবিমিশ্র অনুরাগ থাকে। (সূরা তাওবাঃ ৯১)
৫৫। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ...
জারীর ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেনঃ আমি রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বায়’আত গ্রহণ করেছি সালাত (নামায/নামাজ)
কায়েম করার, যাকাত দেওয়ার এবং সকল মুসলিমের কল্যাণ কামনা করার।
পরিচ্ছেদঃ
৪২/ নাবী (ﷺ) এর বানীঃ
দ্বীন হল কল্যাণ কামনা করা, আল্লাহর রেজমন্দির জন্য, তাঁর
রাসুলের জন্য, মুসলিম নেত্রীবৃন্দের জন্য এবং সকল মুসলিমের জন্য।
৫৬। আবূ নু‘মান (রহঃ) ... যিয়াদ ইবনু ‘ইলাকা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ)১ যেদিন ইন্তেকাল করেন সেদিন আমি জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কাছ থেকে শুনেছি, তিনি (মিম্বরে) দাঁড়িয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করে বললেন, তোমরা ভয় কর এক আল্লাহকে যাঁর কোন শরীক নাই, এবং নতুন কোন আমীর না আসা পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখ, অনতিবিলম্বে তোমাদের আমীর আসবেন। এরপর জারীর (রাঃ) বললেন, তোমাদের আমীরের জন্য মাগফিরাত কামনা কর, কেননা তিনি ক্ষমা করা ভালবাসতেন। তারপর বললেন, একবার আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললাম, আমি আপনার কাছে ইসলামের বায়’আয় গ্রহণ করতে চাই। তিনি (অন্যান্য বিষয়ের সাথে) আমার উপর শর্ত আরোপ করলেনঃ আর সকল মুসলমানের কল্যাণ কামনা করবে। তারপর আমি তাঁর কাছে এ শর্তের উপর বায়’আত গ্রহণ করলাম। এ মসজিদের রবের কসম! আমি তোমাদের কল্যাণকামী। এরপর তিনি আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করলেন এবং (মিম্বর থেকে) নেমে গেলেন।
0 comments:
মন্তব্য করুন