আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে
বসতবাড়ির আনাচে-কানাচে ছায়াযুক্ত স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কিংবা স্তূপীকৃত গোবর
রাখার স্থানে ছাতার আকৃতির সাদা রংয়ের এক ধরনের ছত্রাক জন্মাতে দেখা যায়। একে
আমরা ব্যাঙের ছাতা বলে অভিহিত করে থাকি। আগাছার মতো যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা এসব ছত্রাক
খাবার উপযোগী নয়। অনুরূপ দেখতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের মাধ্যমে যে ব্যাঙের ছাতা
উত্পাদিত হয়, তা
অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং বিশ্বে সবজি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই ব্যাঙের ছাতাকে
ইংরেজিতে বলা হয় ‘মাশরুম’। মাশরুমের চাষে এবং এর ব্যবহার আমাদের দেশে তেমন প্রসার ঘটেনি। এখন পর্যন্ত
আমাদের দেশে শুধু চায়নিজ রেস্তোরাঁগুলোয় মাশরুম স্যুপ একটি উপাদেয় খাবার হিসেবে
পরিবেশন করা হয়। তবে পৃথিবীর বহু দেশে স্যুপ ছাড়াও এটা অন্যান্য সবজির মতো খাবার
হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মাশরুম একদিকে যেমন অত্যন্ত কম সময়ে উত্পাদিত হয়, তেমনি এগুলো রান্না করতেও
সময় কম লাগে। মাত্র তিন-চার মিনিটেই মাশরুম সিদ্ধ হয়ে যায়।
মাশরুম একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমিষ এবং হজমে সাহায্যকারী এনজাইম রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুমে থাকে ৩.১ গ্রাম আমিষ, ০.৮ গ্রাম স্নেহ, ১.৪ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ০.৪ গ্রাম আঁশ, ৪.৩ গ্রাম শর্করা, ৬ মি. গ্রাম কেলসিয়াম, ১১০ মি. গ্রাম ফসফরাস, ১.৫ মি. গ্রাম লৌহ, ০.১৪ মি. গ্রাম ভিটামিন বি১, ০.১৬ মি. গ্রাম বি২, ২.৪ মি. গ্রাম নায়াসিন, ১২ মি. গ্রাম ভিটামিন সি। এছাড়া খাদ্যশক্তি থাকে ৪৩ কেলোরি। সাধারণত মাশরুমে মাছ-মাংসের চেয়ে কিছু বেশি এবং প্রচলিত শাক-সবজির চেয়ে দ্বিগুণ খনিজ পদার্থ থাকে। আমিষের পরিমাণ থাকে বাঁধাকপি ও অন্যান্য শাক-সবজির চেয়ে চারগুণ। এছাড়াও এতে যে ফলিক এসিড থাকে তা অ্যামিনিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে। বহুমুত্র রোগী এবং যারা মোটা তাদের জন্য মাশরুম একটি উত্তম খাবার। এটা খেতে বেশ সুস্বাদু এবং সহজেই হজম হয়।
মাশরুম চাষ অত্যন্ত লাভজনক। মাত্র ১০-১৫ দিনেই খাবার উপযোগী হয়। এটা চাষের জন্য আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সহজলভ্য। বেকার যুবক-যুবতী এবং মহিলারা ঘরে বসেই এর চাষ করতে পারেন। অন্যান্য সবজির তুলনায় বাজারে এর দাম অনেক বেশি, এজন্য এটা চাষ করা অত্যন্ত লাভজনক। অভ্যন্তরীণ বাজার ছাড়াও বিদেশে রফতানির সুযোগ বিদ্যমান। গ্রীষ্মকালে যে কোনো চালা ঘরের নিচে এবং বারান্দায় চাষ করা যায়। বর্ষাকালে পানি প্রবেশ করে না অথচ বাতাস চলাচলের সুবিধা আছে এমন ঘরে এর চাষ করতে হয়। শীতকালে ভেজা স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘরে এর চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে ‘স্ট্র মাশরুম’ এবং শীতকালে ‘ওয়েস্টার’ জাতের মাশরুম চাষ উপযোগী।
মাশরুম পুষ্টিকর এবং ওষুধিগুণসম্পন্ন একটি উৎকৃষ্ট সবজি। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী। মাশরুম চাষের উপকরণ খড়, কাঠের গুঁড়া, আখের ছোবড়া অত্যন্ত- সস্তা ও সহজে পাওয়া যায়। এ সবজিটি ঘরের মধ্যে চাষ করা যায় এবং মাত্র ৭-১০ দিনের মধ্যেই মাশরুম পাওয়া যায় যা অন্য ফসলে পাওয়া যায় না। চাষাবাদে কোন খরচ নেই বললেই হয়। জমির প্রয়োজন হয় না।
বর্তমানে বাংলাদেশে চাষকৃত মাশরুম হচ্ছে কিং ওয়েস্টার, বাটন, শিতাকে, ইনোকি, মিল্কী হোয়াইট, বীচ, স্যাগী, নামেকো, পপলার ও স্ট্র ।
খড়ের বেডে মাশরুম চাষ সাধারণত দুধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্রথম ১৭ থেকে ২০ দিন ওমঘর ঘরে তারপর ফসল উৎপাদনের জন্য চাষঘরে ২১ দিন থেকে ৪৫ দিন। ওমঘর ব্যবস্থাপনা এবং চাষঘর ব্যবস্থাপনা তথা স্ব স্ব ক্ষেত্রে যথাযথভাবে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণই হল এ চাষের মূল কৌশল।
মাশরুম চাষা করতে বীজ, ধানের খড়, পাতলা পলিথিন ব্যাগ, ঝুলন- শিকা বা বাঁশ, ছিদ্রযুক্ত কালো পলিথিন সিট, ঘরের উষ্ণতা ও আদ্রর্তা পরিমাপের জন্য হাইগ্রোমিটার, ঘরের উষ্ণতা ও আদ্রর্তা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য হ্যান্ড সপ্রেয়ার, জীবাণুনাশক, ব্লেড বা ছোট ছুরি, বালতি, আনুসাঙ্গিক অন্যান্য উপকরণ।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
ক. মাশরুমের বীজ বা স্পন।
খ. বেড বা মাদা তৈরির জন্য ধানের শুকনা খড়।
গ. বেডের স্তরে ও উপরে ব্যবহারের জন্য মিলের ছাঁট তুলা/শিমুল তুলা এবং ধানের কুড়া/ছোলার বেসন।
ঘ. খড় ভেজানোর জন্য ড্রাম বা মাটির বড় চাড়ি/গামলা।
ঙ. বেডের তলায় ও উপরে ব্যবহারের জন্য পলিথিন কাগজ।
চ. মাপ মতো বেড তৈরির জন্য একটি কাঠের তলাবিহীন বাক্স (১ মিটার ঢ৩০ সে.মি. ঢ ৩০ সে.মি. আয়তনের)।
মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি:
বীজ প্যাকেট প্রস-তকরণ; সাদা মাইসেলিয়াম সমৃদ্ধ মাশরুমের বীজ প্যাকেটের মুখ বন্ধ থাকলে রাবার ব্যান্ড, কাগজ, তুলা ও প্লাস্টিক নেক খুলে আলাদা করে আবার প্যাকেটের
মুখটি শুধু রাবার ব্যান্ড দিয়ে পেচিয়ে ভালভাবে আটকাতে হবে; তারপর কম্পোস্ট প্যাকেটের উপরের দুপাশে (বিপরীত দিকে) ব্লেড দিয়ে গোলাকার বা
চোখের আকৃতি করে ৩-৪ সে.মি. পলিথিন ব্যাগ কেটে ফেলতে হবে; কাটা অংশে চা চামচ দিয়ে ১ সে.মি. গভীর করে কম্পোস্ট চেঁছে ফেলতে হবে। এ
ব্যবস্থাকে মাশরুম উৎপাদনের জন্য উদ্দিপ্তকরণ বলে; কম্পোস্ট
প্যাকেট গুলো এবার একটি সুবিধামত পাত্রে পরিষ্কার পানিতে ৩০ মিনিট পর্যন- ডুবিয়ে
রাখতে হবে; পানির পাত্র থেকে প্যাকেটগুলো
উঠিয়ে পরিষ্কার স্থানে ৩০ মিনিট পর্যন- উল্টো করে রাখতে হবে যাতে প্যাকেটের
বাড়তি পানি ঝরে পড়ে; এখন কম্পোস্ট প্যাকেটগুলো
মাশরুম চাষের জন্য প্রস্তুত হল। মাশরুম উৎপাদনের ঘরে মাচার উপর প্রয়োজন অনুযায়ী
একটি ভেজা পলিথিন পেতে উক্ত কম্পোস্ট প্যাকেটগুলো মাচার উপর রাখতে হবে এবং আর একটি
পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।খ. বেড বা মাদা তৈরির জন্য ধানের শুকনা খড়।
গ. বেডের স্তরে ও উপরে ব্যবহারের জন্য মিলের ছাঁট তুলা/শিমুল তুলা এবং ধানের কুড়া/ছোলার বেসন।
ঘ. খড় ভেজানোর জন্য ড্রাম বা মাটির বড় চাড়ি/গামলা।
ঙ. বেডের তলায় ও উপরে ব্যবহারের জন্য পলিথিন কাগজ।
চ. মাপ মতো বেড তৈরির জন্য একটি কাঠের তলাবিহীন বাক্স (১ মিটার ঢ৩০ সে.মি. ঢ ৩০ সে.মি. আয়তনের)।
মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি:
পলিথিন দিয়ে প্যাকেটগুলোকে ২-৩ দিন ঢেকে রাখতে হবে। তবে প্রতিদিন সকাল-দুপুর-বিকেল মোট ৩ বার প্যাকেটের উপরের ঢাকনা ১০ মিনিট পর্যন- সরিয়ে রাখতে হবে যেন এ সময় বাতাস চলাচল করতে পারে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে পলিথিনের উপরে হালকাভাবে পানি সপ্রে করতে হবে, অথবা ঘরের ভেতরের চারপাশে চট ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে।
মাশরুম উঠানোর পর গোড়া থেকে ১-২ সে.মি. মত কেটে বোঁটাসহ ছিদ্রযুক্ত পলিথিন ব্যাগে বাজারজাত করা ভাল। তবে বিশ্বাসযোগ্যতা ও দূষণমুক্ত রাখার জন্য পলিথিন প্যাকেটের মুখ বন্ধ করে বাজারজাত করা দরকার। সাধারণ তাপমাত্রায় মাশরুম ১২-১৫ ঘন্টা ভাল থাকে। ফ্রিজের সবজি রাখার স্থানে রাখলে ৩-৪ দিন পর্যন- ভাল থাকে। তবে এ মাশরুম রোদে শুকিয়ে অনেকদিন রাখা যায়। মাশরুম উঠানোর পর সুন্দর করে বোঁটা কেটে রোদে প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা করে ৩-৪ দিন শুকিয়ে সংরক্ষণ করলে ১ বছর পর্যন- শুকনো মাশরুম ভাল থাকে।
মাশরুম চাষ পদ্ধতির আরো কিছু টিপস
- পরিমাণমত শুকনো পরিষ্কার ধানের খড় সংগ্রহ করে পানিভর্তি ড্রামের মধ্যে কিংবা মাটির বড় চাড়ির মধ্যে ভালোভাবে নেড়েচেড়ে ভিজিয়ে নিন।
- ভেজানো খড়গুলো একটা ঝুড়িতে রেখে অতিরিক্ত পানি বের হতে দিন।
- এবার ভেজা খড়গুলো একটা পরিথিন কাগজের ওপর স্তূপ করে রেখে তার ওপর আরেকটি পলিথিন কাগজ দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিন।
- পরিমাণমত শিমুল তুলা কিংবা মিলের পরিত্যক্ত তুলা একটি পাত্রে ভিজিয়ে রাখুন।
- যে ঘরে বা স্থানে মাশরুম চাষ করা হবে সে জায়গা ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মেঝেতে পলিথিন বিছিয়ে দিন।
- এক মিটার লম্বা, এক মিটার চওড়া এবং ৩০ সি.মি. উঁচু তলাবিহীন কাঠের ফরমা বা বাক্সটি পলিথিন বিছানো কাগজের ওপর রাখুন।
- এখন কাঠের ফরমার মধ্যে সমানভাবে ভিজা খড় একটু চাপ দিয়ে সাজাতে থাকুন যেন বিছানো খড়ের স্তর ৮-১০ সে.মি. পুরু বা উঁচু হয়।
- চারদিকে খড়ের স্তূপের কিনার থেকে ৫ সে.মি. ছেড়ে এক সে.মি. পুরু ও ৫ সে.মি. চওড়া করে ভিজা তুলা ঠিকমত বিছিয়ে দিন।
- বীজ ছিটানোর পর একই নিয়মে আবার ৮-১০ সে.মি. করে খড় বিছিয়ে ২য় স্তর তৈরি করে একইভাবে তুলা বিছিয়ে তাতে মাশরুম বীজ ছড়িয়ে দিন।
- এরপর একইভাবে ৩য় স্তর তৈরি হলে বেডের উপরের সব অংশে তুলা ছড়িয়ে তার ওপর মাশরুম বীজ বুনে আবার হালকাভাবে সামান্য খড় ছিটানোর পর বাক্সটি ভরে গেলে সাবধানে তুলে নিন।
- একই নিয়মে পাশাপাশি ১০ সে.মি. ফাঁকে ফাঁকে একটির পর একটি বেড প্রয়োজনমত বসাতে থাকুন।
- প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাজানো শেষ হলে বেডগুলো পলিথিন কাগজ অথবা চট দিয়ে ঢেকে দিন।
- মাশরুম বেডে বীজ বপনের পর থেকে গজানোর আগ পর্যন্ত তাপমাত্রা ৩৫ক্র-৪৫ক্র সে.-এর মধ্যে রাখা দরকার এবং মাশরুম গজাতে শুরু করলে তাপমাত্রা ৩০ক্র-৩৫ক্র সে.-এর মধ্যে রাখতে হবে।
- পলিথিন দ্বারা ভালোভাবে ঢেকে তাপ বাড়ানো এবং খুলে দিয়ে তাপ কমানো যায়। কাজেই অবস্থার প্রেক্ষিতে তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- মাশরুম বেডকে পোকা-মাকড় ও জীব-জন্তুর উপদ্রব থেকে রক্ষা করুন।
- মাশরুম বেড সব সময় ভেজা থাকা দরকার। বেডের উপরিভাগ শুকিয়ে গেলে মাঝে মাঝে হালকাভাবে পানি ছিটিয়ে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
- মাশরুম বেডে বীজ বপনের ১০-১৫ দিনের মধ্যে আলপিনের মাথার আকারে মাশরুম গজানোর লক্ষণ দেখা যায়। মাত্র ২ দিনের মধ্যে এ অবস্থা পেরিয়ে মাশরুম দেশীয় মুরগির ডিমের আকার ধারণ করে। এ অবস্থা মাশরুম সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
- সংগ্রহে বিলম্ব হলে মাশরুম ছাতার মতো হয়ে ফুটে যায় এবং এর স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই সময়মত মাশরুম সংগ্রহ করা আবশ্যক।
- একটা বেড থেকে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত দফায় দফায় মাশরুম সংগ্রহ করা যায়।
- মাশরুম সংগ্রহ শেষ হলে বেডের সব আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সেখানে পরের বারের জন্য মাশরুম চাষের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
- মাশরুম তাজা অবস্থায় খাওয়া উত্তম।
- পলিথিন ব্যাগে সাধারণভাবে মাশরুম ১০-১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে।
- রিফ্রিজারেটরে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত মাশরুম অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায়।
- রোদে শুকিয়ে নিয়ে মাশরুম দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায়।
- রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ছোট ছোট টিনে বহুদিন ধরে সংরক্ষণ করে খাওয়া চলে।
- ৫ মিটার লম্বা ও ৪ মিটার চওড়া ঘরের মেঝেতে পূর্বে বর্ণিত পরিমাপের ৩০টি বেডে একত্রে মাশরুম চাষ করা যায়।
- তাক বা র্যাক তৈরি করে তাতে চাষ করলে এ সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি করা যায়।
- প্রতি বেডে গড়ে এক কেজি ’স্ট্র’ জাতের মাশরুম ফলে।
- বেড প্রতি ৩-৪ কেজি খড়, ২০০ গ্রাম তুলা এবং ১০০-১৫০ গ্রাম মাশরুম বীজের প্রয়োজন হয়।
- বীজ বপন থেকে শুরু করে মাশরুম সংগ্রহ পর্যন্ত একটা ফসল চক্র শেষ হতে সর্বমোট ২০ দিন সময় লাগে। অন্য কোনো সবজি এত তাড়াতাড়ি পাওয়া সম্ভব নয়।
- এক কেজি মাশরুম উত্পাদনে খরচ হয় প্রায় ১০০ টাকা।
- ৫ মিটার ঢ৪ মিটার আয়তনের একটা ঘরে বাঁশের তাক তৈরি করে (৩০×৪) ১২০টি বেডে মাশরুম চাষ করে প্রতি ২০ দিনে ১২০ কেজি মাশরুম উত্পাদন করা সম্ভব হবে। উত্পাদিত মাশরুম প্রতি কেজি বর্তমান বাজার মূল্য ২০০ টাকায় বিক্রি করলে (২০০ টাকা × ১২০টি বেড)=২৪,০০০ টাকা পাওয়া যাবে, যা থেকে ১২,০০০ টাকা খরচ বাদ দিয়ে ১২০০০ টাকা নিট মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
মাশরুমে রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেক কম। শুধু খড়ের বেড তৈরির সময় আগাছা বাছাই করে ফেললে আগাছার প্রকোপ থাকবে না। আর মাছিপোকা ও তেলাপোকা দমনের জন্য আঠার ফাঁদ, নকরোচ ব্যবহার করলেই চলে।
মাশরুম বিপণন পদ্ধতি:
মাশরুম চাষের পাশাপাশি
মাশরুম বিপণন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে বিপণন করতে না পারলে মাশরুম থেকে
অধিক পরিমাণ লাভ করা সম্ভব নয়। এজন্য চাষের পাশাপাশি বিপণন বা মার্কেটিং
পদ্ধতিটিও ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। মাশরুম কোথায় কোথায় বিক্রি করা যায়। কোথায়
বিক্রি করলে লাভ বেশি এগুলো জানা প্রয়োজন। সাধারণত বিভিন্ন হোটেলে মাশরুম বিক্রি
করা যায়। এছাড়া বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর যেমন_ আগোরা, নন্দন, মিনা বাজার ইত্যাদি জায়গায়
ভালো ও অধিক পরিমাণে মাশরুম সরবরাহ করতে পারলে বিক্রির সুযোগ আছে। খোলাবাজারে নিজ
উদ্যোগেও মাশরুম বিক্রি করা সম্ভব। সাধারণত বাজারে প্রতিকেজি মাশরুম ১৫০-২০০ টাকা
দরে বিক্রি হয়ে থাকে। যদি কোনো কারণে কখনো মাশরুম বিক্রি করা না যায়, সেক্ষেত্রে মাশরুম শুকিয়ে
রাখা সম্ভব। এটাকে ড্রাই মাশরুম বলে। বাজারে ড্রাই মাশরুমের দাম কেজিপ্রতি ১,০০০-১,২০০ টাকা। ড্রাই মাশরুম
পানিতে ভিজালে আবার কাঁচা মাশরুমের মতো হয়ে যায়। বিক্রির অসুবিধা হলে মাশরুম
সংরক্ষণ করা সম্ভব বলেই এটা একটি লাভজনক ব্যবসা। কোনো সুখ্যাত প্রতিষ্ঠানে মাশরুম
সরবরাহ করতে হলে দুটি বিষয় ভালো করে মনে রাখতে হবে। একটি দ্রব্যের মান ও অপরটি
দ্রব্যের উৎপাদনের পরিমাণ। যখন ভালো মানের মাশরুমের চাহিদা তৈরি হবে তখন প্রত্যেক
প্রতিষ্ঠান তা অধিক পরিমাণে আশা করবে। একজন ক্ষুদ্র মাশরুম চাষির পক্ষে যা পূরণ
করা কষ্টকর। এ জন্যই কিছুসংখ্যক লোক মিলেমিশে চাষাবাদ করতে পারলে অধিক পরিমাণ
মাশরুম সরবরাহ করা সম্ভব।
মাশরুম চাষ ও প্রশিক্ষণ
স্থান:
মাশরুম চাষ ও প্রশিক্ষণের
জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সাভারে কৃষি সম্প্র্রসারণ
অধিদপ্তর 'মাশরুম
চাষ সেন্টার' নামে
একটি প্রকল্প চালু করেছে। এখানে প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণার্থীকে আগে থেকে
রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এই প্রশিক্ষণ প্রকল্পের মেয়াদ তিন দিন পর্যন্ত। এখানে
প্রশিক্ষণার্থীদের সরকারিভাবে সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে কিভাবে মাশরুম চাষ করা
যায়, কিভাবে বিপণন করা যায়, মাশরুম চাষের সমস্যা সুবিধা
ইত্যাদি বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা প্রদান করে থাকে। সরকারিভাবে এই প্রশিক্ষণ
ব্যবস্থা অধিক সময় না হওয়ায় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও মাশরুম চাষের ওপর
হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে ঢাকার মৌচাকে মুকুল টাওয়ারে 'হিউম্যান ওয়েলফেয়ার এন্ড
ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, সাভার
বাসস্ট্যান্ডে পুরাতন কাস্টমস অফিসের পাশে 'শেফা মাশরুম' ইত্যাদি অন্যতম। মাশরুমের চাষ সম্পর্কে বলতে
গিয়ে 'হিরার' চেয়ারম্যান ব্রজেন বিশ্বাস
বলেন, মাশরুম অত্যন্ত সুস্বাদু ও
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে; কিন্তু সরকারিভাবে সবসময়
প্রশিক্ষণ না হওয়ায় 'হিরা' নিজস্ব উদ্যোগে মাশরুম চাষ ও
গবেষণা শুরু করেছে। বর্তমানে 'হিরা' থেকে মাশরুম চাষের ওপর প্রশিক্ষণও চালু হয়েছে।
এ ব্যাপারে 'হিরার' চেয়ারম্যান ব্রজেন বিশ্বাস
আরো বলেন, ২০০৬
সাল থেকে তারা মাশরুম চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেন। প্রতিবছর এখান থেকে
২০০-২৫০ লোক, মাশরুম
চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। বছরের যেকোনো সময়ই এখানে মাশরুম চাষের ওপর
প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। প্রতি ব্যাচে ৫-২০ জন প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে প্রশিক্ষণ
শুরু হয়। চারদিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে প্রশিক্ষণার্থীকে জনপ্রতি ১ হাজার
৫০ টাকা করে প্রদান করতে হয়।
মাশরুম চাষ ও এ সংক্রান্ত
বিষয়ে যাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন
মাশরুম চাষ প্রশিক্ষন, বীজ ও লোনসহ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য
গ্রীন বাংলা মাশরুম কর্নার
মাশরুম লাভলু
বি-১৯, বিটিআরসি মার্কেট, বগুড়া
মোবাইল: ০১৭১৬-৮৮৪৩৬৮
বীজ, তাজা, শুকনা ও পাউডার মাশরুম পাইকারী ক্রয়-বিক্রয় এবং প্রশিক্ষন
খাদেম মাশরুম সেন্টার
শফিউল আজম খান
মোবাইল: ০১৯১৬-৮২০৪৫৮, ০১৭১৫-৪৭৫০১২
৫৮১/সি, খিলগাঁও, ঢাকা-১২২৯
মাশরুম উৎপাদন এবং ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র
সৈকত মাশরুম প্রকল্প
মো: সোহরাব আলী
মোবাইল: ০১৭১৬-৪০৮৮৮০
১০৪/১ কাতলাপুর, সাভার, ঢাকা
মাশরুম স্পন ও পাইকারী ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র
এম. আর. টি মাশরুম প্রজেক্ট
রতন ইসলাম
মোবাইল: ০১৭১৫-৮৭৩৭৮০
মডেল কলেজ রোড, ডগড়মোড়া, সাভার, ঢাকা
তাজা, শুকনা এবং মাশরুম স্পন (বীজ) বিক্রয় কেন্দ্র
সুখী মাশরুম
আবদুল হালিম
মোবাইল: ০১৯১২-৪১১৭৫৫
১৯/৯, আই ব্লক, ব্যাংক কলোনী, সাভার, ঢাকা
মাশরুম বীজ, মাশরুমের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম (অটোক্লেভ মেশিন, পিপি, নেক, তুলা, রাবার) বিক্রয় কেন্দ্র
উদ্যম মাশরুম কর্নার
মো: সাইফুল ইসলাম (জামান)
মোবাইল: ০১৮১৬-৪৩০২৬৬, ০১৭১৬-৫০৩৮৩০, ০১১৯৯-১৬১২৯১
বি-১১১, সোবাহানবাগ, সাভার, ঢাকা
এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে হলে ফোন করা যেতে পারে। মোবাইল নং-০১৭১০৪০৭০৭৪, ০১১৯৯৪২৫৫২৩, ০১৯১১৪০৫৩৬৬
মাশরুম চাষ প্রশিক্ষন, বীজ ও লোনসহ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য
গ্রীন বাংলা মাশরুম কর্নার
মাশরুম লাভলু
বি-১৯, বিটিআরসি মার্কেট, বগুড়া
মোবাইল: ০১৭১৬-৮৮৪৩৬৮
বীজ, তাজা, শুকনা ও পাউডার মাশরুম পাইকারী ক্রয়-বিক্রয় এবং প্রশিক্ষন
খাদেম মাশরুম সেন্টার
শফিউল আজম খান
মোবাইল: ০১৯১৬-৮২০৪৫৮, ০১৭১৫-৪৭৫০১২
৫৮১/সি, খিলগাঁও, ঢাকা-১২২৯
মাশরুম উৎপাদন এবং ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র
সৈকত মাশরুম প্রকল্প
মো: সোহরাব আলী
মোবাইল: ০১৭১৬-৪০৮৮৮০
১০৪/১ কাতলাপুর, সাভার, ঢাকা
মাশরুম স্পন ও পাইকারী ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র
এম. আর. টি মাশরুম প্রজেক্ট
রতন ইসলাম
মোবাইল: ০১৭১৫-৮৭৩৭৮০
মডেল কলেজ রোড, ডগড়মোড়া, সাভার, ঢাকা
তাজা, শুকনা এবং মাশরুম স্পন (বীজ) বিক্রয় কেন্দ্র
সুখী মাশরুম
আবদুল হালিম
মোবাইল: ০১৯১২-৪১১৭৫৫
১৯/৯, আই ব্লক, ব্যাংক কলোনী, সাভার, ঢাকা
মাশরুম বীজ, মাশরুমের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম (অটোক্লেভ মেশিন, পিপি, নেক, তুলা, রাবার) বিক্রয় কেন্দ্র
উদ্যম মাশরুম কর্নার
মো: সাইফুল ইসলাম (জামান)
মোবাইল: ০১৮১৬-৪৩০২৬৬, ০১৭১৬-৫০৩৮৩০, ০১১৯৯-১৬১২৯১
বি-১১১, সোবাহানবাগ, সাভার, ঢাকা
এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে হলে ফোন করা যেতে পারে। মোবাইল নং-০১৭১০৪০৭০৭৪, ০১১৯৯৪২৫৫২৩, ০১৯১১৪০৫৩৬৬
0 comments:
মন্তব্য করুন