পরিচিতি
মাশরুম অনেক প্রাচীন উদ্ভিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে এটি একটি পুষ্টিকর সবজি হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। অন্যদিকে মাশরুম হচ্ছে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ভালো পরিবেশে চাষ করা সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ওষুধিগুণসম্পন্ন সবজি যা সম্পূর্ণ হালাল। সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বলা হয়েছে, "মাশরুম এক ধরণের ছত্রাক, যা অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ওষুধিগুণসম্পন্ন সবজি হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত"।
গ্রীক, রোমান ও চীনারা মাশরুমকে দেবতার খাবার হিসেবে মনে করেন। প্রাচীন দেব-দেবীদের এটি দিয়ে অর্ঘ্য বা পূজো দেওয়া হতো। এমনকি রাজা মহারাজাদেরকেও মাশরুম উপহার হিসেবে পাঠানো হতো। মাশরুম বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ফসল।
গুণাগুণ• মাশরুম অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ওষুধিগুণসম্পন্ন হালাল সবজি ;
• মাশরুমে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেলের এমন সমন্বয় আছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ;
• মাশরুমে চর্বি ও শর্করা কম থাকায় এবং আঁশ বেশি থাকায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের আদর্শ খাবার;
• মাশরুমে আছে শরীরের কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম কিছু উপাদান। তাই নিয়মিত মাশরুম খেলে হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপ দূর হয় ;
• মাশরুমে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ডি, যা শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে অত্যন্ত কার্যকরী ;
• মাশরুমে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। ফলে মাশরুম খেলে রক্তশূন্যতা দূর হয়। এ ছাড়া হেপাটাইটিস-বি, আমাশয়, ক্যান্সার, ডেঙ্গুজ্বর, টিউমার, ডায়বেটিস, কিডনী রোগ ও এলার্জি প্রতিরোধক উপাদানও আছে ;
• মাশরুমে "ট্রাইটারপিন" নামক উপাদান থাকাতে বর্তমানে এটি বিশ্বে এইডস্ প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ;
• মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে গ্লাইকোজেন থাকাতে শক্তি বাড়াতে কাজ করে। তাই যৌন অক্ষম রোগীদের জন্য মাশরুম একটি মহৌষধ ;
• মাশরুম খেলে হাইপার টেনশন দূর হয়, মেরুদন্ড দৃঢ় হয় ও মস্তিস্ক সুস্হ থাকে ;
• মাশরুম হজমে সহায়তা করে, রুচি বাড়ায় ও পেটের পীড়া দূর করে ;
• মাশরুম খেলে শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়, রক্ত চাপ কমায়, রক্ত চলাচল বাড়ায়, সর্দি কাশি প্রতিরোধ করে ;
• বাত, ব্যথা, জন্ডিস, কৃমি, রক্ত বন্ধ হওয়ার কাজে মাশরুম ব্যবহার হয় ;
• নিয়মিত মাশরুম খেলে চুল পড়া ও চুল পাকা বন্ধ হয়;
• মাশরুম কম ক্যালরিযুক্ত বলে ওজন কমানোর জন্য আদর্শ খাদ্য ;
• বিদেশে মাশরুম 'ওষুধ, টনিক ও খাদ্য' একের ভিতরে তিন হিসেবে পরিচিত। মাশরুমের পুষ্টিমাণ মাংস ও সবজির সংমিশ্রণ বলে, বিচিত্র ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত রুচিকর রকমারী খাবার তৈরি করা সম্ভব ;
মাশরুমের বিচিত্র জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে রয়েছে ভর্তা, সবজি-ভাজী, মাশরুম-গুঁড়ামাছ, মাশরুম-চিংড়ি মাছ, মাশরুম-মাংসের ভুনা, চাইনিজ কারি, চাইনিজ স্যুপ, মাশরুম পোলাও, মাশরুম-বিরিয়ানী, মাশরুম রাইস ইত্যাদি। ফাস্টফুড আইটেম বা নাস্তা হিসেবে এটি দিয়ে মাশরুম ভাজা, মাশরুম চপ, সমুচা, রোল, স্যান্ডউইচ, পিৎজা, পেটিস, সিঙ্গাড়া, নুডুল্স, বার্গার, চটপটি, মোগলাই ইত্যাদি দারুন উপযোগী এবং সুস্বাদু খাদ্য তৈরি করা যায়।
মাশরুমের পুষ্টিমাণঃ (১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমের ওজনের শতকরা হিসাবে)
জাত সাদা বোতাম মাশরুম
প্রোটিন ২৮.১
চর্বি ৩.১
কার্বোহাইড্রেট ৫৯.৪
আঁশ ৮.৩
শক্তি (কিলোক্যালরি)৩৫৩
জাত ঝিনুক মাশরুম
প্রোটিন ২১.৬
চর্বি ৭.২
কার্বোহাইড্রেট ৫৭.৬
আঁশ ৮.৭
শক্তি (কিলোক্যালরি)৩৪৫
জাত খড় মাশরুম
প্রোটিন ২৯.৫
চর্বি ৫.৭
কার্বোহাইড্রেট ৬০
আঁশ ১০.৪
শক্তি (কিলোক্যালরি)৩৭৪
বিভিন্ন মাশরুমের ভিটামিন ও খনিজের পরিমাণঃ (১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমের ওজনে প্রাপ্ত মিলিগ্রামে)
জাত সাদা বোতাম মাশরুম
থায়মিন ৮.৯
রিবোফ্লাভিন ৩.৭
নায়াসিন ৪২.৫
ক্যালসিয়াম ৭১০
পটাশিয়াম ২৮৫০
আয়রন ৮.৮
সোডিয়াম ১০৬
২
খড় মাশরুম
থায়মিন ১.২
রিবোফ্লাভিন ৩.৩
নায়াসিন ৯১.৯
ক্যালসিয়াম ৭১৫
পটাশিয়াম ৩৮৫৫
আয়রন ১৭.১
সোডিয়াম ৩৭৪
৩
ঝিনুক মাশরুম
থায়মিন ৪.৮
রিবোফ্লাভিন ৪.৭
নায়াসিন ১০৮.৭
ক্যালসিয়াম ৩৩৩
পটাশিয়াম ৩৭০৩
আয়রন ১৫.২
সোডিয়াম ৮৩৭
প্রতি ১০০ গ্রাম তাজা মাশরুমে ৩০ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায় এবং এতে কোলস্টোরেল নাই। চর্বির পরিমাণ এতে খুবই কম (২ থেকে ৮%) তবে শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড রয়েছে।
মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয়তা• মাশরুম একটি প্রোটিন, আঁশ, ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ সবজি।
• মাশরুম চাষে আবাদি জমি দরকার হয় না, ঘরেই এর চাষ সম্ভব।
• মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ (যেমন- খড়, কাঠের গুঁড়া, পচা পাতা, আখের ছোবড়া) খুবই সস্তা এবং সহজে পাওয়া যায়।
• এটি চাষ করতে অল্প পুঁজি ও অল্প শ্রম লাগে কিন্তু অধিক মুনাফা ও লাভ করা যায়।
• মাশরুম চাষের মাধ্যমে দেশের পুষ্টি উন্নয়ন, দারিদ্র দূর করা এবং কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হতে পারে।
• বিশ্বব্যাপী মাশরুমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মাশরুম রপ্তানি করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
মাশরুমের বৈশিষ্ট্যমাশরুম একপ্রকার ছত্রাকজাতীয় উদ্ভিদ। এতে সবুজ কণা বা ক্লোরোফিল নেই বলে সবুজ কণাযুক্ত উদ্ভিদের মতো নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। সে কারণে খাদ্যের জন্য এরা প্রাণীজ বা উদ্ভিজ বস্তুর উপর নির্ভর করে। মাশরুমের ফুল কিংবা খাবারযোগ্য অংশটি সাধারণভাবে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে।
টুপী: টুপী বা পিলিয়াস অনেকটা ছাতার মত আকৃতি। এটি সাধারণত: মাংশল এবং পুরু হয়। জাতভেদে টুপী বিভিন্ন আকৃতি, মাপ ও বর্ণের হয়।
জিল: জিল বা ল্যামেল্যা মাশরুমের টুপীর নীচের অংশ। এর মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় স্পোর থাকে। উদ্ভিদের বংশবিস্তারের জন্য যেমন বীজ থাকে, মাশরুমের তেমনি থাকে স্পোর। স্পোরের মাধ্যমে মাশরুমের বংশবিস্তার ঘটে। জাতভেদে স্পোরের রং বিভিন্ন হয় এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে রংয়ের পরিবর্তন হয়। স্পোরগুলো খালি চোখে দেখা যায় না তবে অনেকগুলো স্পোরকে একসাথে দেখতে ধূলোর মতো মনে হয়। স্পোরগুলো ঝরে পড়লে তা বাতাসে অন্য জায়গায় চলে যায়। অনুকূল পরিবেশ পেলে স্পোরগুলো গজায়। স্পোর গজিয়ে সুতোর মত এক ধরনের দন্ড জন্ম নেয়। এগুলোকে হাইফা বলা হয়। অনেকগুলো হাইফাকে একত্রে মাইসেলিয়াম বলে। মাইসেলিয়াম বৃদ্ধি পেয়ে বড় হয় এবং খাদ্য সংগ্রহ করে। হাইফাই মাশরুমের মূল কাঠামো।
আবরণ: মাশরুমের জিল এক ধরণের কোষ দিয়ে আবৃত থাকে যা টুপীর প্রান্ত থেকে দন্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। কোষগুলোকে আবরণ বা ভেইল বলা হয়। আস্তে আস্তে মাশরুমের বৃদ্ধি হতে থাকলে টুপীর দিককার আবরণ ছিঁড়ে যায় এবং এর কিছু অংশ টুপীর প্রান্তভাগ সংলগ্ন থাকে অন্য অংশ দন্ডের চারদিকে আংটির মতো থাকে এটিকে এনুলাস বলা হয়
দন্ড: মাশরুমের দন্ডটি সাধারণভাবে টুপীর মাঝামাঝি থাকে। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে এটি একপাশেও থাকতে পারে। দন্ডটির ভিতরের অংশ ভরাট কিংবা ফাঁপা থাকতে পারে। দন্ডটির সব জায়গায় একই ধরনের পরিধি বিশিষ্ট হতে পারে কিংবা মাঝে বা শেষ প্রান্ত কিছুটা ফুলে থাকতে পারে।
মাশরুমের জাত: জাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও প্রাপ্ত কাঁচামালের ভিত্তিতে নীচে দেয়া মাশরুমের জাতগুলো আমাদের দেশে চাষ করার জন্য উপযোগী: বাংলাদেশে উৎপাদন উপযোগী বিভিন্ন মাশরুমের নাম-
১) ঝিনুক মাশরুম Oyster Mushroom
২) দুধ মাশরুম Milky Mushroom
৩) কান মাশরুম Wood ear Mushroom
৪) বোতাম মাশরুম Button Mushroom
৫) শিতাকে মাশরুম Shitake Mushroom
৬) খড় মাশরুম Paddy Straw Mushroom
বিভিন্ন জাতের মাশরুম চাষের বর্ষপঞ্জী ও বিভিন্ন জাতের মাশরুম উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা
১) ঝিনুক মাশরুম ২০ থেকে ৩২০ সে.
২) দুধ মাশরুম ২৫ থেকে ৩৭০ সে.
৩) খড় মাশরুম ২৫ থেকে ৩৯০ সে.
৪) কান মাশরুম ২২ থেকে ৩২০ সে.
৫) তাপ সহনশীল বোতাম মাশরুম ১৮ থেকে ২৪০ সে.
৬) শিতাক মাশরুম ১৮ থেকে ২২০ সে.
৭) বোতাম মাশরুম ১৬ থেকে ২০০ সে.
বীজ উৎপাদন পদ্ধতি: মাশরুম বীজ বা স্পন সহজে পাওয়া যায় না বলে অনেকেই মাশরুম চাষ করার ইচ্ছা থাকলেও করতে পারছে না। গবেষণাগার অর্থাৎ ল্যাবরেটরিতে দুভাবে মাশরুমের বীজ উৎপাদন করা যায়।
১. টিস্যু কালচার পদ্ধতি ও ২. স্পোর কালচার পদ্ধতি।
মাশরুম চাষের সাথে জড়িত চাষীভাইরা মাশরুমের বীজ চাইলে নিম্নলিখিত ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন- • মাশরুম, প্রকল্প পরিচালক, মাশরুম সেন্টার উন্নয়ন প্রকল্প, সোবহানবাগ, সাভার, ঢাকা, ফোন-৭৭১০৬৪৬। • মান্না মাশরুমি, ৫৫/৬/১, পূর্ব বাইশটেকী (মুক্তিযোদ্ধা মসজিদ সংলগ্ন) মিরপুর-১৩, ঢাকা-১২১৬, মোবাইল-০১৭১২-৯৭২৪৬০, ০১৮১৯-২১৭৮৪৪ ফোন-৯০১৬০২৬ (বাসা)। ই-মেইল : mannamushroomy@yahoo.com
মাশরুম চাষ পদ্ধতি: চাষকৃত খাবার উপযোগী মাশরুমের মধ্যে বোতাম মাশরুম, ঝিনুক মাশরুম, কান মাশরুম, শিতাক মাশরুম ও খড় মাশরুম এই পাঁচটিকেই প্রধান হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
১. ঝিনুক মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি- ঝিনুক মাশরুম উৎপাদনের জন্য প্রচলিত ও অপ্রচলিত দুইটি পদ্ধতি রয়েছে। বাংলাদেশে প্রচলিত ঝিনুক মাশরুম চাষ পদ্ধতি ঝিনুক মাশরুম উৎপাদনের জন্য দেশে চাষীদের কাছে সাথে সাথে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত "পিপি ব্যাগ" (পলিপ্রপাইলিন ব্যাগ) সরবরাহ করা হয়। চাষীরা শুধুমাত্র শস্য ঘরে রেখে ফসল উৎপাদন করে থাকেন। "পিপি ব্যাগগুলোর" ওজন ৫০০ গ্রাম। এতে নীচের উৎপাদন মিলিয়ে মিডিয়া (যাতে মাশরুম চাষ করা হয়) প্রস্তুত করা হয়। কাঁঠের গুড়া = ৬৪% গমের ভূষি = ৩২ % ধানের ভূষি = ৪% এ মিশ্রণের সাথে সামান্য পরিমাণ চুন এবং ৬০ থেকে ৬৫% পানি মেশানো হয়। ব্যাগগুলো জীবাণুমুক্ত করা হয় এবং পূর্বে তৈরি বীজ বা স্পন নিয়ে খড়ের চালা বিশিষ্ট বাঁশের বেড়া ও পাকা মেঝের ঘরে কাঠ ও বাঁশের তাকে ছোট ছোট প্যাকেটগুলি সারি করে সাজিয়ে এ মাশরুম চাষ করা হয়। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ঝিনুক মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতির ধাপগুলো নিম্নরূপ: উজ্জ্বল সোনালী রংয়ের তাজা শুকনো খড় সংগ্রহ করে ছোট ছোট টুকরা করে কাটতে হবে। টুকরাগুলোর মাপ ১ থেকে ২ ইঞ্চি (২ থেকে ৪ সেমি) হতে হবে। খড়ের টুকরাগুলো পরিষ্কার চটের থলিতে ভর্তি করে পরিষ্কার কলের পানি ভর্তি ড্রামে একরাত ভিজিয়ে রাখতে হবে ;
• ভেজানো বস্তা সকালে পানি থেকে তুলে তারের জালের উপর রাখতে হবে যাতে করে অতিরিক্ত পানি সরে যায়। এ সময় বস্তাটিকে সামান্য পেটালে পানি তাড়াতাড়ি ঝরে যাবে ;
• একটি বড় মুখওয়ালা ডেকচি বা পরিষ্কার অর্ধেক ড্রাম দিয়ে তৈরি পাত্রে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভর্তি করতে হবে। পানিভর্তি পাত্রে খড় ভর্তি বস্তাটিকে ডুবিয়ে পানি গরম করার ব্যবস্হা করতে হবে। প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট পানি গরম করা হলে পানি ফুটতে শুরু করবে। এ অবস্হায় ১০ মিনিট সময় ফুটালে খড় জীবাণুমুক্ত হবে। এই পদ্ধতিকে "পাস্তুরাইজেশন" বলা হয়। পানি না ফুটিয়েও পাস্তুরাইজেশন করা যায়। এক্ষেত্রে ১০০ লিটার পরিষ্কার পানিতে ১২৫ মিলি. ফরমালডিহাইড ও ১২.৫ গ্রাম ব্যাভিস্টিন মিশিয়ে নিয়ে তাতে কাটা খড় ডুবিয়ে ড্রামের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করে ১ দিন রেখে দিলেও "পাস্তুরাইজেশন" হয়ে যাবে। জীবাণুমুক্ত করার পর খড়ভর্তি বস্তা ঠান্ডা করতে হবে।
• বস্তাটির মুখ খুলে ছোট তারের জালির চৌকির উপর সিদ্ধ করা খড় ছড়িয়ে রাখলে খড় ঠান্ডা হবে এবং অতিরিক্ত পানি ঝরে যাবে। বাড়িতে ছোট আকারে মাশরুম উৎপাদন করার জন্য ৩৫×৪৫ সেমি আকৃতির পিপি (পলিপ্রপাইলিন) ব্যাগ অথবা ৩ কেজি ভেজা খড় ভরা যাবে এমন আকৃতির ব্যাগ নিতে হবে। ব্যাগের ভেতর জীবাণুমুক্ত স্পন ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি (১০ থেকে ১২ সেমি) পুরু করে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। স্পন ছিটানো শেষ হলে তার উপর ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি (১০ থেকে ১২ সেমি) পুরু আরো এক স্তর খড় দিতে হবে। এই খড়ের উপর একইভাবে স্পন ছিটিয়ে দিতে হবে। ছিটানো স্পনের উপর আরো এক স্তর খড় দিতে হবে। এভাবে তিনটি স্তরে খড় ও স্পন দিয়ে ব্যাগটি ভর্তি করে মুখটি ভালোভাবে পেঁচিয়ে রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
• ব্যাগে স্পন দেয়া সমাপ্ত হবার পর প্রস্তুতকৃত ব্যাগগুলো একটি কক্ষে রাখতে হবে। কক্ষটিকে স্পন কক্ষ বলা হয়। স্পন কক্ষের তাপমাত্রা ২৫০ থেকে ২৬০ সে. হতে হবে ;
• স্পন ভর্তি ব্যাগ ২৫০ থেকে ২৮০ সে. তাপমাত্রায় রাখা হয়। তাপমাত্রা কোন অবস্হায়ই ৩০০ সে. এর উপর যাতে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিদিনকার তাপমাত্রার রেকর্ড রাখতে হবে। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে পানি স্প্রে করতে হবে এবং বাতাস যাতায়াতের ব্যবস্হা করতে হবে। এই অবস্হায় মাশরুমের মাইসিলিয়াম তৈরি হতে থাকবে। এ সময় বাতাস চলাচলের খুব একটা প্রয়োজন হয় না বরং কার্বণ-ডাই-অক্সাইড ও অন্ধকারে মাইসিলিয়াম ভালো জন্মায়। দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময়ের মধ্যেই মাইসিলিয়াম সমগ্র খড়ের আবরণকে অসংখ্য সুতায় জালি তৈরি করে ঢেকে ফেলে। এ অবস্হায় ব্যাগটি মাশরুম উৎপাদনের সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হলো ;
• এরপর মাইসিলিয়াম ভর্তি ব্যাগ "শষ্যঘর" বা "চাষ ঘরে" স্হানান্তর করা হয়। "চাষ ঘরটি" যথাসময়ে জীবাণুমুক্ত হওয়া ভালো। কক্ষে ৮ ইঞ্চি দূরে দূরে ব্যাগ রেখে, ব্যাগের উপরের পলিথিন খুলে ফেলতে হয়। ব্যাগগুলো বাঁশের মাচায় বা কাঠের তৈরি র্যাকে সারি সারি করে বিভিন্ন তাকে রাখা সুবিধাজনক। এবার ১ গ্রাম ব্যাভিস্টিন (কার্বনডেজাইম) ও ৫ মিলি ফরমালডিহাইড ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ঘরের মধ্য স্প্রে করতে হবে। মাশরুমের উপর সরাসরি রাসায়নিকগুলো স্প্রে করা যাবে না। শষ্যঘরটি বাঁশের বেড়া, ছনের ছাউনি দিয়ে গ্রামীণ পরিবেশে তৈরি করা যায়। পাশের বেড়ার একটি অংশ ঝাপের মতো করা ভালো। এতে করে আলো, বাতাস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। শষ্যঘরের তাপমাত্রা ২৪০ থেকে ২৬০ সে. হওয়া উচিত। ঘরের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে থাকতে হবে। এ অবস্হায় ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে মাশরুমের আকৃতি প্রায় ২ থেকে ৩ ইঞ্চি হয়।
• মাশরুমের আকৃতি ২ থেকে ৩ ইঞ্চি হলেই গোড়া থেকে প্রায় ১ ইঞ্চি পরিমাণ ডাটাসহ সংগ্রহ করতে হবে। ফসল সংগ্রহ করতে দেরী হলে স্পোরগুলো ঝরে পড়া শুরু করবে এবং তখন মাশরুম বাজারজাত অসুবিধা হবে। এ সময় ব্যাগগুলোতে পানি ছিটিয়ে ভেজা রাখতে হবে। সংগ্রহ করা মাশরুম পরিষ্কার করে ছিদ্রযুক্ত (৫ থেকে ৬ মিমি বা প্রায় ০.২০ ইঞ্চি) পলিথিন প্যাকেটে রাখতে হবে। বাজারজাতকরণ করার জন্য পলিথিন প্যাকেটের মুখ বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ। সাধারণ তাপমাত্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা মাশরুমের রং ও আকৃতি ঠিক থাকে। তবে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত এ মাশরুমে রাখা যেতে পারে। ফ্রিজে এ মাশরুম ৩ থেকে ৪ দিন রাখা যায়। প্রথমবার ফসল সংগ্রহের ১০ দিন পর আরো একবার ফসল সংগ্রহ করা যায়। মোট তিনবারের বেশি ফসল সংগ্রহ না করাই ভালো।
• উৎপাদন বেশি হলে এবং তাজা অবস্হায় বাজারজাত করা সম্ভব না হলে ৩ থেকে ৪ দিন রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। শুকনো মাশরুম ৬ মাস পর্যন্ত ভালো অবস্হায় রাখা যায়। পোকামাকড় রোগ বালাই দমন ঝিনুক মাশরুমে মাছির প্রকোপ দেখা যেতে পারে। এ অবস্হায় ম্যালাথিয়ন ০.১% হারে স্প্রে করা যেতে পারে। এছাড়া ছত্রাকের আক্রমণ দেখা গেলে ফরমালডিহাইডে ৪% তুলা ভিজিয়ে সংক্রামিত অংশে লাগিয়ে দিতে হবে।
২. কান মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি দেখতে অনেকটা কানের আকৃতি বলে এ মাশরুমকে কান মাশরুম বা জেলি মাশরুম বলা হয়। এ মাশরুম দেখতে বেগুনী বাদামী রংয়ের। বাংলাদেশে কান মাশরুম সফলভাবে চাষ করা হয়েছে। কান মাশরুম প্রধানত: কাঠের গুঁড়িতেই জন্মায়। কাঠের গুঁড়ি ছাড়াও কাঠের গুঁড়া ও খড়ের মিশ্রণ এবং তুলার বর্জ্যের উপরও কান মাশরুম বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায়। গ্রামে ক্ষুদ্র চাষিরা খড়ের ওপর ব্যাগ পদ্ধতিতেই এ মাশরুম চাষ করতে পারেন। নীচে এর চাষ পদ্ধতি দেওয়া হলো।
• কাঠের গুঁড়া ৮০% ও ধানের তুষ ২০% ও ২৫০ গ্রাম চুন-এর মিশ্রণ পানিতে সিলিন্ডার আকৃতির প্লাস্টিক ব্যাগে ভালোভাবে চেপে ভর্তি করে ৯০ থেকে ১০০০ সে তাপমাত্রায় ৯০ মিনিট সময় জীবাণুমুক্ত করতে হবে ;
• জীবাণুমুক্ত ব্যাগ ঠান্ডা করার পর মূল স্পন থেকে খানিকটা স্পন নিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়ে ২৮০ সে তাপমাত্রায় ৮০ থেকে ৯০% আর্দ্রতায় রাখতে হবে। মাইসিলিয়াম সম্পূর্ণভাবে ব্যাগের মধ্যে বেড়ে উঠলে ব্যাগটি চাষ ঘরে স্হানান্তর করতে হবে। ২০ থেকে ২৫ দিনে মাইসিলিয়াম সম্পূর্ণ ব্যাগে ভরে যায়। এ অবস্হায় ব্যাগটি একটি ফ্রেমের মধ্যে রেখে ব্যাগের উপর ও নীচের পাশে খানিকটা কেটে দিতে হবে ;
• চাষ ঘরে বাতাস চলাচলের সুব্যবস্হা থাকা আবশ্যক। ফসল ভালোভাবে উৎপাদন হবার জন্য ঘরের তাপমাত্রা ২২০ থেকে ২৭০ সে. থাকা দরকার। এ অবস্হায় ব্যাগের কাটা অংশগুলো দিয়ে ছোট ছোট মাশরুম দেখা যাবে। এক সপ্তাহ সময়ের মধ্যে ফসল সংগ্রহের উপযোগী হয়ে উঠবে। এ মাশরুমের বিশেষত্ব: হচ্ছে যে, এর সংরক্ষণ ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি এবং মাশরুম পরিপক্ক হবার পরও অন্তত: দু'সপ্তাহ এটি নষ্ট হয় না।
৩. খড় মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি : স্ট্র মাশরুমের বাংলা নাম খড় মাশরুম। অল্প খরচে বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ করা যায়। দরকার শুধু বাড়তি যত্ন, তাহলেই বাড়তি লাভ। যা লাগবে স্পন (বীজ), বেড বা স্তূপ তৈরির জন্য ধানের খড়, শিমুল তুলা, চালের কুঁড়া, মাটির চাড়ি/ড্রাম, পলিথিন সিট, কাঠের তলাবিহীন ফরমা/বাক্স (৩.২৮১ ফুট × ১ ইঞ্চি × ১২ ইঞ্চি)।
উৎপাদনের ধাপ স্ট্র মাশরুমের জন্য বেড বা খড়ের স্তূপ তৈরি করতে সাধারণত: তিন কেজি পরিমাণ শুকনো খড়ের প্রয়োজন হয়-
• একটি চাড়ি বা চৌবাচ্চায় পরিমাণমত পানিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ খড় ভেজার জন্য ওজনের এক শতাংশ চুন পানিতে গুলাতে হবে। অর্থাৎ এক কেজি খড়ের জন্য প্রায় ১০ গ্রাম চুন। এরপর শুকনো খড়গুলো ওই পানিতে ভালোভাবে ভেজাতে হবে। যখন মনে হবে খড়ের প্রতিটি অংশে পানি গিয়েছে তখন থেকে আরও ৩০ মিনিট পর্যন্ত খড় ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর খড়গুলো পানি থেকে উঠিয়ে ঝুড়ির ভিতর ৩০ মিনিট অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত পানি ঝরা বন্ধ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত পানি ঝরাতে হবে। চৌবাচ্চায় পানির পরিমাণ বেশি হবে না। এক কেজি শুকনো খড় ভালোভাবে ভেজার জন্য ১০ লিটার পানি প্রয়োজন ;
• এরপর খড়গুলো একটু ঝেড়ে নিয়ে পলিথিন কাগজের উপর স্তূপ তৈরি করতে হবে এবং পলিথিন কাগজ দিয়ে সম্পূর্ণ খড় ঢেকে দিতে হবে;
• এভাবে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত স্তূপ তৈরি করে রোদে রাখতে হবে। এতে করে খড়ে তাপের সৃষ্টি হবে। এভাবে তাপমাত্রা প্রায় ৪৫০ সে থেকে ৫০০ সে. পর্যন্ত হয় ;
• পর দিন (২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর) যখন বেড তৈরি করা হবে তার এক থেকে দুই ঘন্টা আগে শিমুল তুলা পানিতে ভালোভাবে ভেজাতে হবে। ভেজানো শেষে তুলায় চাপ দিয়ে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে। তুলায় এ পর্যায়ে ৭০ শতাংশ আর্দ্রতা থাকবে। এ সময় তুলা ছিঁড়ে কিছুটা ছোট ছোট আকারের টুকরা করতে হবে।
• এবার যে ঘরে মাশরুম চাষ করা হবে সে ঘরের মেঝে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর মেঝে বা মাচায় রঙিন পলিথিন বিছিয়ে তার উপর বেড তৈরির ফরমা বসাতে হবে ;
• তারপর গত দিনের ভেজানো খড় কাঠের ফরমার ভিতর সাধারণত: ৪ ইঞ্চি পুরু করে বিছাতে হবে। ৪ ইঞ্চি পুরু খড়ের বাক্সের কিনার থেকে প্রায় ২ ইঞ্চি ভিতরের দিকে ভিজা তুলার টুকরাগুলো প্রায় ১ ইঞ্চি পরপর বসিয়ে দিতে হবে ;
• এ তুলার চারপাশে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম পরিমাণ ‘স্ট্র’ মাশরুমের বীজ (মাদার কালচার) ছিটিয়ে দিতে হবে। বীজ দেওয়া শেষ হলে এ বীজের চারপাশে পাঁচ গ্রাম চালের কুঁড়া ছিটিয়ে দিতে হবে। তা ছাড়া তিন গ্রাম পরিমাণ চুনের গুড়া ছিটিয়ে দিতে হবে ;
• এভাবে পুনরায় ৪ ইঞ্চি খড় দিয়ে দ্বিতীয় স্তর তৈরি করতে হবে এবং আগের মতো তুলা, বীজ, কুঁড়া ও চুন দিতে হবে ;
• এরপর তৃতীয় স্তর প্রায় ২ ইঞ্চি খড় দিয়ে তরি করতে হবে। এ স্তরে তুলার টুকরা বীজ (স্পন), চালের কুঁড়া ও চুন পুরো বেডের উপর দিতে হবে ;
• এবার শেষ স্তরে ১.৫ ইঞ্চি খড় দিয়ে হাত দিয়ে আলতো চাপ দিতে হবে, যেন বেডটি সুন্দর হয়। অত:পর কাঠের ফরমা তুলে পরবর্তী বেড তৈরির জন্য ৬ ইঞ্চি দূরে বসাতে হবে ;
• এভাবে ৫ থেকে ১০টি বেড প্রতি ৬ ইঞ্চি পরপর করা যেতে পারে। এবার সব বেড পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়ে 'স্ট্র' মাশরুমের মাইসিলিয়াম বৃদ্ধির ব্যবস্হা নিতে হবে। এ সময় বেডের তাপমাত্রা ৩০০ সে থেকে ৩৬০ সে. মধ্যে থাকতে হবে ;
• এভাবে দুই থেকে তিনদিন পর পলিথিন সরিয়ে এক ঘন্টা বেড খোলা রেখে বাতাস চলাচলের ব্যবস্হা করতে হবে। • প্রায় ৮ থেকে ৯ দিনের ভিতর পিনের মাথার মতো মাশরুম গজাতে শুরু করবে এবং ১০ থেকে ১২ দিনের মাথায় মাশরুম তোলার উপযোগী হবে। চাষ শুরু করার ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে স্ট্র মাশরুম যখন ডিম্বাকৃতির হবে, তখনই মাশরুম সংগ্রহ করতে হবে। সময়মতো না উঠালে মাশরুমের মাথা ফেটে গিয়ে ছাতার আকৃতি হয়ে যায়। এতে করে মাশরুমের মান নষ্ট হয়। এ জন্য স্ট্র মাশরুম দিনে দু’বার তোলার ব্যবস্হা রাখতে হবে।
৪. দুধ মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি দুধ মাশরুম বাংলাদেশের আবহাওয়ায় জন্মানোর জন্য অত্যন্ত উপযোগী একটি মাশরুম। দুধ মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি নীচে দেয়া হলো-
• সোনালী রংয়ের তাজা শুকনো ও মচমচে খড় অনুমানিক ১ ইঞ্চি (২.৫৪ সেমি) সাইজে ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিয়ে পরিষ্কার পাটের বস্তায় ভরে একদিন (৮ থেকে ১৬ ঘণ্টা) পরিষ্কার পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। এতে করে বস্তার খড় ভালোভাবে ভিজবে ;
• পানি থেকে বস্তা তুলে অতিরিক্ত পানি সরিয়ে নিতে হবে। এজন্য বস্তাটি তারের জালির ফ্রেমের উপর রেখে ভালোভাবে চাপ দিলে অতিরিক্ত পানি সরে যাবে ;
• একটি বড় মুখওয়ালা পাতিল (সসপ্যান) বা একটি ড্রামকে মাঝামাঝি কেটে নিলে দুটি ভালো পাত্র তৈরি করা সম্ভব। এজন্য কাটা ড্রামের দুপাশে দুটি হাতল লাগিয়ে নিতে হবে। এরূপ একটি পরিষ্কার পাত্রে পানি ঢেলে তাতে বস্তা ভর্তি ভেজা খড় ডুবিয়ে দিতে হবে ;
• পাত্রটি চুলায় বসাতে হবে, যাতে করে পানি অন্তত: ৯০০ সে. তাপমাত্রা পর্যন্ত গরম হয়। প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট এ তাপমাত্রায় খড় সিদ্ধ করলে জীবাণুমুক্তকরণ (পাস্তুরাইজেশন) প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। গ্রামীণ পর্যায়ে ছোট চাষীদের জন্য এটি সবচেয়ে ভালো। পাস্তুরাইজেশন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে খড়ের মধ্যকার জীবাণু ধ্বংস করা ;
• জীবাণুমুক্ত করার পর গরম খড় ঠান্ডা করা হয়। খড় ঠান্ডা হবার পর ৩ থেকে ৪টি স্তরে পলিথিন ব্যাগে খড় ভর্তি করতে হবে। প্রতিটি স্তরেই কিছুটা স্পন ছিটিয়ে দিতে হয়। ব্যাগ ভর্তি এবং স্পনিং করার অন্তত: এক সপ্তাহ আগে ব্যাগ রাখার ঘরটি পরিষ্কার করে ১% ফরমালডিহাইড স্প্রে করতে হবে। এতে কক্ষটি বালাইমুক্ত থাকবে। স্প্রে করার পর ঘর বন্ধ করে রাখতে হবে। স্পনিং এর সময় কক্ষটি অন্ধকারে রাখা দরকার। তাছাড়া ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা ২৫০ থেকে ৩৫০ সে. এর মধ্যে রাখতে হবে। এ অবস্হায় ২০ দিন পর ব্যাগে পুরোপুরি মাইসিলিয়াম বৃদ্ধি পাবে এবং তখন তা চাষ ঘরে ফসল উৎপাদনের জন্য স্হানান্তর করতে হবে ;
• চাষঘরে ব্যাগের উপর ‘কেসিং’ করা হয়। ‘কেসিং’ কি? ৭৫% ভাগ মাটি ও ২৫% বালির সাথে চক পাউডার মিশিয়ে মিশ্রণটি কেসিং করার ৭ দিন আগে ৪% ফরমালডিহাইড মিশ্রণে জীবাণুমুক্ত করা যায়। তবে চাষঘরে ফরমালডিহাইড মিশ্রণে মাটি-বালি ভিজিয়ে তা পলিথিন দিয়ে ঢেকে ২ দিন পর পর মাটি ও বালি উপর-নীচ করে নাড়িয়ে দিতে হবে। এভাবে মাটি ও বালির মিশ্রণ জীবাণুমুক্ত হবে। এরপর খড় ভর্তি ব্যাগগুলোর উপরিভাগ কিছুটা নেড়ে চেড়ে ০.১% কারবেনডাজিম ও ০.৫% ফরমালডিহাইড দিয়ে স্প্রে করতে হবে। এবার জীবাণুমুক্ত মাটি-বালির মিশ্রণটি ব্যাগের খড়ের উপর প্রায় ১ ইঞ্চি পুরু করে বিছিয়ে পুনরায় কারবেনডাজিম ও ফরমালডিহাইড দ্রবণে ভিজিয়ে দিতে হবে। এই প্রক্রিয়াকেই কেসিং বলে। কেসিং করা ব্যাগগুলো ৩০০ থেকে ৩৫০ সে. তাপমাত্রা ও ৮০% থেকে ৯০% আর্দ্রতায় রাখতে হবে। এক সপ্তাহ পর পুনরায় কারবেনডাজিম ও ফরমালডিহাইড দ্রবণের মিশ্রণ ঘরে ছিটাতে হবে। তবে এ সময় মাশরুমের ব্যাগের উপর সরাসরি স্প্রে করা যাবে না ;
• প্রায় ১০ দিন পর কেসিং এর মাটির উপর মাইসেলিয়াম দেখা যাবে। এ অবস্হায় চাষঘরের মধ্যে কিছুটা বাতাস চলাচলের ব্যবস্হা করা প্রয়োজন। এসময় ঘরের ভিতরের তাপমাত্রা ৩০০ থেকে ৩৫০ সে. এবং অন্ধকারের পরিবর্তে হাল্কা আলোর ব্যবস্হা করতে হবে। আর্দ্রতা রক্ষার জন্য গ্রীষ্মকালে মেঝেতে বালি ছিটিয়ে দিনে ৩ থেকে ৪ বার হালকা পানি ছিটিয়ে দেয়া হলে মোটামুটি আর্দ্রতা বজায় থাকে। বর্ষায় পানির তেমন প্রয়োজন হয় না। • ৩ থেকে ৫ দিন পর দানা আকৃতির মাশরুম দেখা যাবে যা পরবর্তী ৭ দিনে বেড়ে উঠে। এ অবস্হায় মাশরুম সংগ্রহ করতে হবে।
৫. শিতাকে মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি শিতাক মাশরুম জাপানে খুব জনপ্রিয়। এটি জাপানে ‘ওক’ গাছের গুড়িতে চাষ করা হয়। কাঠের গুড়ি ছাড়াও পিপি ব্যাগে কাঠের গুড়ার ওপর চাষ করা যায়। ব্যাগ পদ্ধতিটি তাইওয়ানে অনেক জনপ্রিয়। ব্যাগ পদ্ধতি
• এ মাশরুম উৎপাদনের জন্য বাঁশের চাষঘর তৈরি করতে হয়। ঘরের উপরের চালা পলিথিন দিয়ে ঢেকে চারদিকে এই পলিথিন ফ্লোর পর্যন্ত ঝুলিয়ে দিতে হবে। পলিথিনের উপর খড়ের ছাউনি দিতে হবে যাতে করে রোদ ও তাপ ঘরে না লাগে ;
• কাঠের গুঁড়া ৮০ থেকে ৯০%, ধানের তুষ ১০ থেকে ২০% ও পানি ৬৫% মিশিয়ে মাশরুম চাষের জন্য মিশ্রণ তৈরি করা হয়। কিছুটা (১%) চুন মিশিয়ে মিশ্রণের পি এইচ (৫.৫ থেকে ৭.০) ঠিক করা হয়। এই মিশ্রটি ঘরের বাইরে সপ্তাহখানেক রাখা হয় ;
• এক সপ্তাহ পর এ মিশ্রণটি ঘরে এনে ৬ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি চ্যাপটা ব্যাগে ভরতে হবে। ব্যাগের মুখে একটি মুখে একটি প্লাস্টিকের রিং পরিয়ে বোতলের মুখের মত করে তার মুখে তুলা দিয়ে বন্ধ করতে হবে। ব্যাগগুলো চেপে সিলিন্ডার আকৃতির করে নিতে হবে। ব্যাগগুলো এরপর জীবাণুমুক্ত করা হয় ;
• ব্যাগ জীবাণুমুক্ত হলে ঠান্ডা করে একটি জীবাণুমুক্ত ঘরে (স্পনিং কক্ষে) ব্যাগের তুলা খুলে তাতে খানিকটা স্পন দিতে হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় শষ্যদানা স্পন আগেই প্রস্তুত করে নিতে হবে। স্পন দেয়া হলে একটি কক্ষে ব্যাগ সাধারণ তাপমাত্রায় রাখা হয়। ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর ব্যাগের রং ঘন বাদামী হবে এবং ব্যাগ শক্ত হয়ে যাবে। সে সময় ঘরে খুব সামান্য আলো, ৯০% আর্দ্রতা এবং খুব সামান্য বাতাস চলাচলের ব্যবস্হা থাকতে হবে ;
• এবার বাঁশের ঘরে এনে মুখ কেটে পানি ছিটাতে হবে। এ ছিটানোর প্রক্রিয়া ঝিরঝিরে ধরনের হতে হবে। শেষে ব্যাগ ভেজা মেঝেতে উল্টিয়ে রাখতে হবে। ২ থেকে ৩ দিন পর এ ব্যাগ সোজা করে রাখতে হবে। একদিন পর পুনরায় পানি দিয়ে ১ রাত ১ দিন উল্টিয়ে সোজা করে সাজিয়ে রাখতে হবে ;
• এসময় চাষ ঘরে আলো বাড়াতে হবে, দিনে ২ থেকে ৩ বার পানি স্প্রে করতে হবে এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্হা করতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা ২০০ থেকে ২২° সে. থাকবে এবং আর্দ্রতা হবে ৮০% থেকে ৮৫%।
এ অবস্হায় মাশরুম গজানো শুরু হবে।
৬. ওষুধি মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি সুপ্রাচীন কাল থেকে মানুষের জানা ছিল যে মাশরুমে ওষুধিগুণ বিদ্যমান, যা বর্তমানে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। টনিক ও ওষুধ হিসেবে চীন, কোরিয়া ও জাপানে অনেক জাতের মাশরুম প্রায় শত শত বছর ধরেই ব্যবহার করা হচ্ছে। রেইস বা লিং ঝি মাশরুম ওষুধ হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয়তা লাভ করছে বিধায় এর উৎপাদনও দিন দিন বাড়ছে। এ মাশরুম বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সহজেই চাষ করা যেতে পারে। এই মাশরুম চাষ করে রপ্তানি করারও সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে এ মাশরুমের মোট বাণিজ্যিক মূল্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার।
৭. রেইসি মাশরুমের চাষ পদ্ধতি রেইসি মাশরুম চাষের জন্য প্রয়োজন হয় কাঠের গুঁড়া, তুষ এবং চুন। ১ কেজি ওজনের কাঁঠাল ও আম কাঁঠের গুঁড়ার সাথে ১০০ গ্রাম ধানের তুষ ও ৩০ গ্রাম জিপসাম মিশিয়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এ মিশ্রনের আর্দ্রতা ৬০% থেকে ৬৫% হতে হবে। এ মিশ্রণটি এবার ৭০০ গ্রাম পরিমাণ ধরে এমন সাইজের পিপি (পলিপ্রপাইলিন) ব্যাগ বা বোতলে ভরতে হবে। ইচ্ছে করলে ব্যাগের সাইজ বড়ও করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ২ কেজি পরিমাণ ধরে এমন সাইজের ব্যাগ (৮×১২ ইঞ্চি) নিয়ে কাঠের গুড়া, তুষ ও জিপসামের মিশ্রণটি ভরে পি পি ব্যাগের মুখটিতে একটি প্লাস্টিকের কলার/রিং বসিয়ে তুলা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে ;
• বন্ধ করা পিপি ব্যাগ ভর্তি কাঠের গুড়ার মিশ্রণটি এবার ৯৫০ থেকে ১০০° সে তাপমাত্রায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা রাখলে জীবাণুমুক্ত করা হবে ;
• তাপ প্রয়োগ শেষে এ ব্যাগ বা বোতলগুলো একরাত ঠান্ডা করার জন্য রেখে দেয়া ভালো ;
• এবার প্রতি কেজি মিশ্রণের জন্য শতকরা ২ ভাগ হারে গম বীজের স্পন নিয়ে আগুনের শিখার উপর পিপি ব্যাগের মুখ খুলে ঢুকিয়ে দিয়ে ব্যাগের মুখ বন্ধ করে দিতে হবে ;
• এরপর ব্যাগগুলো অন্ধকার কক্ষে ৩০০ থেকে ৪০° সে তাপমাত্রা ও ৮০% ভাগ আর্দ্রতায় ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ রাখতে হবে। এ সময়ের মধ্যে ব্যাগের ভেতরে মাইসিলিয়াম ভর্তি হয়ে যাবে ;
• মাইসিলিয়ামে ব্যাগ ভর্তি হয়ে গেলে ব্যাগের মুখটি কেটে খুলে দিতে হবে। এ সময় চারিদিকে বন্ধ অন্ধকারে ঘরের মধ্যে ২৮ থেকে ৩০° সে তাপমাত্রা ও ৯০ থেকে ৯৫% আর্দ্রতায় ২ থেকে ৩ দিন রেখে দিতে হবে ;
• তিনদিন পর ঘরের জানালা খুলে দিতে হব। এতে বাইরের বাতাস ও আলো আসবে। এ সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে আর্দ্রতা কোনভাবেই ৯০% কম না হয় ;
• এ অবস্হায় প্রায় ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যেই পিনের মাথার মত সাদা মাশরুম দেখা যাবে। এসময় আর্দ্রতা কিছুটা কমিয়ে ৮০% থেকে ৮৫% রাখা যেতে পারে। ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে মাশরুম মোটামুটি সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। এ সময় ৩০% থেকে ৪০% ভাগ মাশরুম বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়না। অবশিষ্ট মাশরুমের বৃদ্ধি চলতে থাকে। বৃদ্ধিকালীন সময় মাশরুমের ডাটা লাল ও উপরের মাথা সাদা রংয়ের থাকে। পরিপূর্ণ হয়ে আসলে সাদা মাথাটি চ্যাপ্টা হলুদ বর্ণ ধারণ করে, এবং সাদা লাইনিং বাদামী লাল হয়ে যায়। এসময় আর্দ্রতা ৬০% ভাগ নামিয়ে আনলে মাশরুমের মাথাটি ভারী হয়। এ অবস্হায় মাশরুম সংগ্রহ করা হলে প্রত্যেকটি ব্যাগ থেকে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর আরো অন্তত: দুটি ফসল পাওয়া যেতে পারে। এভাবে একটি সম্পূর্ন উৎপাদন শেষ হতে প্রায় ৪ মাস সময় লাগে।
মাশরুম সংরক্ষণ: মাশরুমের সংরক্ষণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম এবং ৮ থেকে ১০ দিন পর ফসল তোলা যায়। পলিথিন মোড়কে ৩০ থেকে ৩৫° সে. তাপমাত্রা মাশরুম ৫ থেকে ৬ দিন পর্যন্ত ভালো রাখা যায়। পিপি ব্যাগে ভরে সিল করে ফ্রিজেও মাশরুম বেশ কয়েকদিন রাখা যায়। মাশরুম ছিদ্র যুক্ত পলিথিনে ভরে কার্ড বোর্ডের বাক্সে করে বাজারে পরিবহন করা যায়। তাছাড়া মাশরুম নীচের উপায়ে সংরক্ষণ করা যায়।
• ঠান্ডা বায়ু শূন্য অবস্হায়
• হিমায়িত
• শুকানো • ক্যান বা টিনজাত
• ১৮% থেকে ২০% লবণের দ্রবণে আমাদের দেশে গ্রামীণ পর্যায়ে মাশরুম সুর্যালোকে শুকিয়ে পলিথিনে সীল করে ৫ থেকে ৬ মাস অনায়াসে রাখা যায়। শুকানো মাশরুম ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হয়। ১৮% থেকে ২০% লবণের দ্রবণেও মাশরুম দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। মাশরুম শুকানোর পদ্ধতি তাজা মাশরুমে ৭০% থেকে ৯৫% আর্দ্রতা থাকে। অন্যদিকে শুকানো মাশরুমে আর্দ্রতার পরিমাণ ১০% থেকে ১২% এর মধ্যে রাখতে হয়। নীচের পদ্ধতি অনুসরণ করে মাশরুম শুকানো যেতে পারে:
• মাশরুমের ডাটার নীচের অংশ কেটে পরিষ্কার করতে হবে ;
• পানি ফুটিয়ে ২% লবণ দিতে হবে ;
• গরম পানিতে ৩ মিনিট মাশরুম ডুবিয়ে রাখতে হবে ;
• তারপর তুলে একটি ট্রেতে রেখে ঠান্ডা করতে হবে ;
• ট্রেতে মাশরুম ছড়িয়ে সাজিয়ে রাখতে হবে যাতে একটি মাশরুম অন্যটির উপর না থাকে ;
• ২ থেকে ৩ দিন পর পর রোদে শুকাতে হবে ;
• মাশরুম শুকনো পাতার মত মচমচে হয়ে যাবে ;
• এরপর পলিথিন ব্যাগে ভরে মুখ সীল করে দিতে হবে ;
• শুকনো মাশরুম ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে। সাধারণত: ১০০ গ্রাম মাশরুম থেকে ১০ গ্রাম শুকনো মাশরুম পাওয়া যায়। শুকনো ছাড়া মাশরুম সংরক্ষণের একটি সহজ পদ্ধতি হলো ১৮% থেকে ২০% লবণের দ্রবণে ১% সাইট্রিক এসিড দিয়ে রাখা।
মাশরুম থেকে তৈরি খাদ্য: বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছে মাশরুম একটি অপরিচিত সবজি। সঙ্গত কারণেই এর রান্নার প্রক্রিয়াটি অনেকের কাছেই অজানা। ভালোভাবে রান্না করা হলে এটি আমাদের মুখেও স্বাদ লাগবে। মাশরুম রান্নার কয়েকটি সংক্ষিপ্ত প্রণালী হলো- ক) মাশরুম সবজি মাশরুম অন্যান্য দেশী সবজির সাথে মিশিয়ে রান্না করা যায়। এর জন্য যে পরিমাণে সবজি নিতে হবে-
১) শুকনো মাশরুম ২০ গ্রাম
২) আলু ১টি (৫০ গ্রাম)
৩) মটরশুটি ১২০ গ্রাম
৪) টমেটো ১৫০ গ্রাম
৫) পেঁয়াজ ১০০ গ্রাম
৬) আদা ১০ গ্রাম
৭) রসুন ২ থেকে ৩ টি কোয়া
৮) তেল ১ থেকে ২ চামচ
৯) অন্যমসলা, লবণ প্রয়োজনমত
রান্না প্রণালী:
• শুকনো মাশরুম গরম পানিতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে ;
• আলু, মটরশুটি, টমেটো ধুয়ে নিতে হবে। পেঁয়াজ, মটরশুটি ও আলুর খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে ;
• এরপর আলু, টমেটো ও পেঁয়াজ কুটতে হবে। পেঁয়াজ একটু তেলে ভেজে নিতে হবে ;
• আদা, রসুন বেটে নিতে হবে। মসলা তেলে ভেজে লবণ ও কাটা সবজি দিয়ে নাড়তে হবে ;
• এরপর একটু গরম পানি দিয়ে তরকারী সিদ্ধ করতে হবে ;
• মাশরুম টুকরা করে কেটে সিদ্ধ সবজির সাথে দিয়ে ২ থেকে ৩ মিনিট রান্না করে তুলে নিতে হবে। খ) মাশরুম বিরিয়াণী মাশরুমের স্বাদ কিছুটা মাংসের মত। এজন্য মাশরুমের সাথে সবজি মিশিয়ে সহজেই সুস্বাদু বিরিয়াণী তৈরি করা যায়। মাশরুম বিরিয়াণী প্রস্তুত প্রণালী হলো-
১. পোলাউর চাল ১৫০ গ্রাম
২. মাশরুম ১০০ গ্রাম
৩. গাজর ৫০ গ্রাম
৪. মটরশুটি ৫০ গ্রাম
৫. ফুলকপি ৫০ গ্রাম
৬. পেঁয়াজ ১০০ গ্রাম
৭. ধনেপাতা ২৫ গ্রাম
৮. রসুন ৫ গ্রাম
৯. আদা ৫ গ্রাম
১০.কাঁচা মরিচ ৫ গ্রাম
১১. টক দই ৫০ গ্রাম
১২. তেল/মাখন ৫০ গ্রাম
১৩. অন্যমসলা, লবণ, পানি প্রয়োজনমত
রান্না প্রণালী • চাল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। মসলা বেটে নিতে হবে ; • পেঁয়াজ সোনালী করে ভেজে রাখতে হবে ; • মাশরুম পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে ভেজে রাখতে হবে ; • সবজি ধুয়ে কেটে সিদ্ধ করে নিতে হবে ; • চাল তেলে ভেজে সামান্য পানি দিয়ে প্রায় রান্না করার অবস্হায় নিয়ে আনতে হবে ; • দই ভাল করে ফেটে ধনে পাতা কুচির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে ; • এরপর সিদ্ধ সবজি, মাশরুম, দই মিশাতে হবে ; • একটি পাত্রে আবার খানিকটা তেল/মাখন দিয়ে চুলায় দিতে হবে। এরপর সবজি, মাশরুম পেঁয়াজ এর মিশ্রণ দিয়ে একটু নাড়তে হবে এবং প্রায় সিদ্ধ পোলাউর চাল মিশিয়ে ১০ মিনিট হালকা আঁচে চুলায় রাখতে হবে ; • তুলে পোলাউর উপর ভাজা পেঁয়াজ, কাজু বাদাম ইত্যাদি মিশিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে। গ) মাশরুম ফ্রাই নাস্তা হিসেবে মাশরুম ফ্রাই চা-এর সাথে পরিবেশন করা যায়। ইফতারীর সময় বেসনের সাথে সবজি দিয়ে পাকুড়া তৈরির মত করে সবজির পরিবর্তে মাশরুমের পাকুড়া তৈরি করা হলে তা যথেষ্ট সুস্বাদু হবে।
১
মাশরুম
১০ থেকে ১২টি
২
ডিম
১ টি
৩
বেসন
১ থেকে ২ টেবিল চামচ
৪
লবণ, গোল মরিচ গুড়া, সয়াবিন তেল
পরিমাণ মত
রান্না প্রণালী • মাশরুম ধুয়ে পরিষ্কার করে পানি ছাড়িয়ে নিতে হবে ; • একটি পাত্রে ডিম ভেঙ্গে বেসন, লবণ, গোল মরিচের গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে তাতে প্রয়োজনমত পানি দিয়ে ঘন করে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। মাশরুমগুলো মিশ্রণে ভালোভাবে ডুবিয়ে নিতে হবে ; • পপাত্রে তেল গরম করতে হবে এবং একত্রে কয়েকটি মাশরুম ভেজে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে। ঘ) মাশরুম হালিম আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরণের ডালের সাথে মাংস মিশিয়ে হালিম তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে হালিমের জন্য প্রয়োজনীয় ডালের সাথে মাশরুম মিশিয়ে মাশরুমের হালিম বানানো যায়। তাছাড়া পাতলা ডালের সাথে মাশরুম দিয়ে মাশরুম স্যুপও তৈরি করা যেতে পারে।
১
মুগ ডাল
১২৫ গ্রাম
২
মসুর ডাল
২৫০ গ্রাম
৩
ছোলার ডাল
১২৫ গ্রাম
৪
মাশরুম তাজা
৫০০ গ্রাম (শুকনো হলে ৫০ গ্রাম)
৫
পেঁয়াজ কুঁচি, আদা, রসুন, জিরার গুড়া, হলুদের গুড়া, তেজপাতা, লবণ ও পানি
পরিমাণ মত
রান্না প্রণালী • মাশরুম ধুয়ে পানি ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে রাখতে হবে ; • ডালগুলো ধুয়ে পানিতে ছাড়িয়ে নিতে হবে ; • মুগ ডাল সামান্য ভেজে ধুয়ে মসুর ও ছোলার ডালের সাথে মিশিয়ে ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিতে হবে। সিদ্ধ করার সময় ডালের সাথে আদা, রসুন, পেঁয়াজ কুঁচি ও লবণ মিশিয়ে নিতে হবে। ডাল খুব ঘন করা যাবে না ; • কাটা মাশরুম পেঁয়াজ কুচির সাথে ১ থেকে ২ মিনিট গরম তেলে হালকাভাবে ভেজে নিতে হবে। তারপর সিদ্ধ ডালের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে ; • সামান্য জিরার গুড়া এবং গোল মরিচের গুড়া মিশিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে। ঙ) চিকেন মাশরুম স্যুপ আমাদের দেশের রেস্তেরাগুলোতে চিকেন কর্নস্যুপ অত্যন্ত জনপ্রিয়। চিকেন কর্নের সাথে মাশরুম দিলে স্যুপের পুষ্টিমাণ বাড়বে এবং স্বাদও ভিন্নতর হবে। চিকেন মাশরুম স্যুপ তৈরি করার জন্য নীচের উপরকরণগুলোর প্রয়োজন হবে।
১
মাশরুম
২৫০ গ্রাম
২
পেঁয়াজ
২টি
৩
মুরগীর স্টক
৪ কাপ
৪
পানি
৩ কাপ
৫
কর্নফ্লাওয়ার
১ কাপ
৬
বাটার অয়েল
২০ গ্রাম
৭
আদা
২৫ গ্রাম
৮
লবণ, টেস্টিং সল্ট
পরিমাণ মত
রান্না প্রণালী • মুরগির স্টক তৈরি করার জন্য ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের একটি মুরগি ২.৫০ লিটার পানিতে পরিমাণ মত লবণ আদা দিয়ে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে। মাংসগুলো নরম হয়ে আলাদা হয়ে গেলে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে মুরগির হাড়গুলো আলাদা করতে হবে এবং মাংস স্টক পানির সঙ্গে একত্রে মিশিয়ে নিতে হবে ; • মাশরুম ও পেঁয়াজ চাকা করে কেটে নিতে হবে। তারপর বাটার অয়েল দিয়ে হালকাভাবে ভেজে নিতে হবে ; • এবার এসব ভাজা মাশরুম, মুরগির হাড় ও মাংস সিদ্ধ স্টক পানিতে ৫ থেকে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজন মত লবণ ও একটি কাপে অল্প পানিতে কর্নফ্লাওয়ার গুলিয়ে নিতে হবে ; • ২ থেকে ৩ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে ; • প্রয়োজন মত টেস্টিং সল্ট দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করতে হবে। চ) মাশরুম চিংড়ি চিংড়ি মাছ এমনিতেই যথেষ্ট সুস্বাদু মাছ। এ মাছের সাথে মাশরুম রান্না করলে একটু ভিন্ন স্বাদের তৈরি করা যায়। নীচে রান্নার উপকরণ ও প্রণালীর বর্ণনা দেওয়া হলো-
১
মাশরুম
৫০ গ্রাম
২
মাঝারি ধরণের চিংড়ি
২০০ গ্রাম
৩
পেঁয়াজ , মরিচ, লবণ, আদা, হলুদ, সয়াবিন তেল
পরিমাণ মত
রান্না প্রণালী • মাশরুম ধুয়ে কেটে পানি ছাড়িয়ে রাখতে হবে ; • চিংড়ি মাছের খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে ; • তেল, লবণ ও প্রয়োজনীয় মসলা দিয়ে মাছ তেলে ভেজে নিতে হবে ; • মাছ প্রায় হলে আসলে মাশরুম চিংড়ি মাছের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে ; • ৫ থেকে ৭ মিনিট নেড়ে নামিয়ে নিতে হবে ; • গরম গরম পরিবেশন করতে হবে। ছ) মাশরুম স্যান্ডউইচ স্যান্ডউইচ বর্তমানে শহরের মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়। দ্রুত তৈরি এবং সহজে বহন করার কারণে স্যান্ডউইচ সব বয়সের মানুষের কাছে পরিচিত। স্যান্ডউইচ সাধারণত: মাংস, মাছ কিংবা ডিম দিয়ে হয়। মাছ, মাংস, ডিমের পরিবর্তে মাশরুম ব্যবহার করা হলে স্যান্ডউইচ স্বাদ ও পুষ্টিমাণ ভিন্নরকমের হবে। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তারা এই স্যান্ডউইচ খেতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে বাটারের পরিবর্তে কোলস্টেরল মুক্ত কর্ন অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
১
মাশরুম
৫০ গ্রাম
২
বাটার
৫০ গ্রাম
৩
পেঁয়াজ, লবণ
পরিমাণ মত
৪
পাউরুটি
১টি
রান্না প্রণালী প্রথমে মাশরুমগুলো স্লাইস করে কেটে নিতে হবে। তারপর ফ্রাইপ্যানে বাটার/কর্ন অয়েল বা ভেজিটেবল ঘির মধ্যে পেঁয়াজ, লবণ দিয়ে মাশরুমগুলো হালকা করে ভেজে নিতে হবে ; তারপর দুই পিস পাউরুটির ভিতর ভাজা মাশরুমগুলো সুন্দর করে স্প্রেড করে দিন। এরপর মিয়োনিজ, টমেটো, পেঁয়াজ দিয়ে পরিবেশন করতে হবে। জ) মাশরুম ওমলেট ডিম একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। ডিমের সাথে মাশরুম মিশালে সেই খাবারের মান ও গুণ দু-ই বৃদ্ধি পায়। নীচে মাশরুম ওমলেট রান্নার উপকরণ দেওয়া হলো-
১
মাশরুম
১০০ গ্রাম
২
বাটার
১৫ গ্রাম
৩
ডিম
২টি
৪
দুধ
১ থেকে ২ কাপ
৫
লবণ ও মরিচ গুড়া
পরিমাণ মত
রান্না প্রণালী • মাশরুম ধুয়ে পরিষ্কার করে কেটে নিতে হবে ; • অল্প তাপে বাটার দিয়ে মাশরুমগুলো ৫ থেকে ৭ মিনিট ভেজে নিতে হবে ; • ডিম ও দুধ একসঙ্গে ফেটে নিয়ে মাশরুমের কড়াইতে ঢেলে নিতে হবে ; • প্রয়োজন মত লবণ ও মরিচের গুড়া দিয়ে ভাল করে নেড়ে নামিয়ে ফেলতে হবে। • যাদের কোলস্টেরল সমস্যা আছে তারা ডিমের কুসুমটি বাদ দিয়ে সাদা অংশের সাথে মাশরুম মিশিয়ে পুষ্টিকর উপাদেয় ওমলেট তৈরি করে খেতে পারেন। মাশরুমের আচার • রান্না ছাড়াও তাজা মাশরুম তেল ও মসলা দিয়ে আচার বানিয়ে রাখা যায়। আচারের জন্য দুধ মাশরুম সবচেয়ে ভালো। এজন্য নীচের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে- • তাজা মাশরুম পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে ; • রসুন, আদা, গোলমরিচ ও সরষের গুঁড়া এবং গরম মসলা মিশিয়ে সামান্য তেলে মাশরুম ভেজে প্রায় শুকিয়ে ফেলতে হবে ; • ঠান্ডা করে লবণ ও ভিনেগার মিশাতে হবে ; • তেল গরম করে ঠান্ডা করতে হবে। সম্পূর্ণ মিশ্রণটি একটি বোতলে ভরে তেলের মধ্যে রাখতে হবে ; • বোতলে ঢুকাবার আগে বোতলটি ভালোভাবে ঢাকনাসহ সিদ্ধ করে নিতে হবে। • বাংলাদেশে খাদ্যে স্বয়ংভরতা অর্জন করেছে কিন্তু এথনো পুষ্টিতে সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হযনি। বাংলাদেশের পুষ্টিতে সহজ সরল এবং স্বল্প পুজিতে পুষ্টির উপকরণ যোগান দিতে মাশরুম অনন্য। এখন প্রয়োজন উদবুদ্ধকরণের মাধ্যমে মাশরুম উৎপাদন, বিপনণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং এর ব্যবহার সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যকর ভুমিকা। মাশরুম দিয়ে এদেশের পুষ্টি এবং কৃষিকে সমৃদ্ধ করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। মাশরুম সমৃদ্ধ পরিকল্পিত কৃষির প্রত্যাশা আমাদের সবার কাম্য।
মাশরুম প্রাপ্তিস্হান
মাশরুম প্রাপ্তিস্হান (উৎপাদন, বিক্রি, ট্রেনিং, গবেষণা) • সিরাজ ভেজিটেবলস্, গুলশান-১।
ফোন: ৮৮৫৬৪৯৩ • লোকমান ভেজিটেবলস্, গুলশান-১।
মোবাইল: ০১৭১০-৯৫৮৩১১ • কনজুমার শপিং মল, কাজীপাড়া বাস স্ট্যান্ড। • ওশান শপিং মল, মিরপুর-১৩।
ফোন: ৯০১৬০৩৯ • সিটি শপিং মল, মিরপুর-১০। ফোন: ৯০০৫৭৯০ • মাসলিন বুটিক, বনানী। ফোন: ৮৮১৬২০১ • তয়বা ফার্মেসী, শেওড়াপাড়া। ফোন: ৮০২৩১০৬ • কাজী সুপার স্টোর, মিরপুর-১০। ফোন: ৯০০১২৫২ • এস ডি হোমিওপ্যাথিক ফার্মেসী, মিরপুর-১৩। মোবাইল: ০১৭১১-৮১৬৬০৪ • খামারবাড়ি, ফার্মগেট। মোবাইল: ০১৭১৯-৬৪২৬৫৬ • এম এম ইন্টারন্যাশনাল, মধুমিতা রোড, টঙ্গী। মোবাইল: ০১৭১৩-৫৩৯৮০৬
আয়-ব্যয় হিসাব
পারিবারিক পর্যায়ে গ্রামে মাশরুম চাষ লাভজনক। গড় হিসাবে ঝিনুক বা দুধ মাশরুম চাষের জন্য ব্যবহার করা খড়ের ৫০% পরিমাণ কিংবা ততোধিক ফলন পাওয়া যায়। নীচে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প পর্যায়ে মাশরুমের আয়-ব্যায় হিসাব দেয়া হলো: (ক) পারিবারিক পর্যায়ে ঝিনুক মাশরুম উৎপাদনের আয়-ব্যয়ের হিসাব
কাঁচামাল পরিমাণ
ব্যয় (টাকা)
ক) ধানের খড়
২৫০০ কেজি
১৮৭৫.০০
খ) স্পন
৩৬৫ কেজি
৪৩৮০.০০
গ) পলিথিন ব্যাগ
৪০ কেজি
৩০০০.০০
ঘ) পিপি ব্যাগ
২৫ কেজি
১৭৫০.০০
ঙ) সুতার বল
৫টি
১০০.০০
চ) ফরমালডিহাইড
৫টি
২৫০.০০
ছ) ব্যাভিস্টিন
০.২৫ গ্রাম
২৫০.০০
জ) ব্লিচিং পাউডার
৫ কেজি
১০০.০০
ঝ) বিবিধ ব্যয় (মোট খরচের ১০%)
-
১১৭০.০০
টাকা =
১২,৮৭৫.০০
২. শ্রমিক ব্যয় (৯০ দিন)
-
৬৩০০.০০
৩. চাষ ঘর নির্মাণ
-
৫০০০.০০
৪. স্প্রেয়ার ড্রাম, ট্রে ইত্যাদি
-
২০০০.০০
মোট ব্যয় টাকা =
২৬,১৭৫.০০
মোট আয়: উৎপাদন = ১২৫০ কেজি, বাতিল = ১২৫ কেজি (মোট উৎপাদনের ১০%), নীট উৎপাদন =১১২৫ কেজি প্রতি কেজি টাকা ১০০/- হিসাবে আয় = ১১২৫×১০০ = টাঃ ১,১২৫০০.০০ মোট লাভ = (আয় টাঃ ১,১২৫০০.০০ -ব্যয় ২৬,১৭৫.০০) = টাঃ ৮৬,৩২৫.০০ খ. সীমিত পর্যায়ে দুধ মাশরুমের উৎপাদন ও বিক্রয়ের আয় ব্যয়ের হিসাব
কাঁচামাল
পরিমাণ
ব্যয় (টাকা)
ক) ধানের খড়
২৫০০ কেজি
১৮৭৫.০০
খ) স্পন
৩৬৫ কেজি
৭০০০.০০
গ) পলিথিন ব্যাগ
৪০ কেজি
৩০০০.০০
ঘ) পিপি ব্যাগ
২৫ কেজি
১৭৫০.০০
ঙ) সুতার বল
৫ টি
১০০.০০
চ) ফরমালডিহাইড
৫ লিটার
২৫০.০০
ছ) ব্যাভিস্টিন
০.২৫ গ্রাম
২৫০.০০
জ) ম্যালাথিয়ন
৫ লিটার
২৫০.০০
ঝ) ব্লিচিং পাউডার
৫ কেজি
১০০.০০
ঞ) বিবিধ ব্যয় (মোট খরচের ১০%)
-
১২০০.০০
টাকা =
১৫,৭৭৫.০০
২. শ্রমিক ব্যয় (৯০ দিন)
-
৬৩০০.০০
৩. চাষ ঘর নির্মাণ
-
৫০০০.০০
৪. স্প্রেয়ার ড্রাম, ট্রে ইত্যাদি
-
২০০০.০০
মোট ব্যয় টাকা =
২৯,০৭৫.০০
মোট আয়: উৎপাদন = ১২৫০ কেজি, বাতিল = ১২৫ কেজি (মোট উৎপাদনের ১০%), নীট উৎপাদন =১১২৫ কেজি প্রতি কেজি টাকা ৬০/- হিসাবে আয় = ১১২৫×৬০ = টাঃ ৬৭,৫০০.০০ মোট লাভ = (আয় টাঃ ৬৭,৫০০.০০ -ব্যয় টাঃ ২৯,০৭৫.০০) = টাঃ ৩৮,৪২৫.০০
তথ্যসূত্র
১. মাশরুম উৎপাদন প্রযুক্তি, এ. বি. সিদ্দিকী, পিএইচ ডি, জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়কারী, ২. ইন্টিগ্রেটেড হর্টিকালচার এন্ড নিউট্রিশন উন্নয়ন প্রকল্প, জানুয়ারি-২০০৬। ৩. মাশরুম উৎপাদন প্রযুক্তি, ইন্ট্রিগ্রেটেড হর্টিকালচার এন্ড নিউট্রিশন উন্নয়ন প্রকল্প ৪. সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, জানুয়ারি-২০০৬। ৫. দারিদ্র বিমোচনে মাশরুম চাষ, কৃষি কথা, ৬৬ তম বর্ষ, ৬ষ্ঠ সংখ্যা, আশ্বিন-১৪১৩, ৬. সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-২০০৬, পৃষ্টা ১৬৪ থেকে ১৬৬। ৭. পুষ্টিকর সবজি মাশরুম, কৃষি তথ্য সার্ভিস শক্তিশালীকরণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প, ৮. খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, সেপ্টেম্বর-২০০৬। ৯. মাশরুম, প্রকল্প পরিচালক, মাশরুম সেন্টার উন্নয়ন প্রকল্প, সোবহানবাগ, সাভার, ঢাকা, ফোন-৭৭১০৬৪৬। ১০. মান্না মাশরুমি, ৫৫/৬/এফ, পূর্ব বাইশটেকী (মুক্তিযোদ্ধা মসজিদ সংলগ্ন) মিরপুর ১৩, ঢাকা-১২১৬, মোবাইল-০১৭১২-৯৭২৪৬০, ফোন-৯০১৬০২৬। ১১. মাশরুমের বীজ বানানোর কৌশল, দনিক প্রথম আলো, ক্ষেত খামার পাতা, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫, ২২ জুলাই-২০০৬। ১২. স্ট্র মাশরুমের চাষ, দনিক প্রথম আলো, ক্ষেত খামার পাতা, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫
মাশরুম অনেক প্রাচীন উদ্ভিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে এটি একটি পুষ্টিকর সবজি হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। অন্যদিকে মাশরুম হচ্ছে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ভালো পরিবেশে চাষ করা সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ওষুধিগুণসম্পন্ন সবজি যা সম্পূর্ণ হালাল। সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বলা হয়েছে, "মাশরুম এক ধরণের ছত্রাক, যা অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ওষুধিগুণসম্পন্ন সবজি হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত"।
গ্রীক, রোমান ও চীনারা মাশরুমকে দেবতার খাবার হিসেবে মনে করেন। প্রাচীন দেব-দেবীদের এটি দিয়ে অর্ঘ্য বা পূজো দেওয়া হতো। এমনকি রাজা মহারাজাদেরকেও মাশরুম উপহার হিসেবে পাঠানো হতো। মাশরুম বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ফসল।
গুণাগুণ• মাশরুম অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ওষুধিগুণসম্পন্ন হালাল সবজি ;
• মাশরুমে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেলের এমন সমন্বয় আছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ;
• মাশরুমে চর্বি ও শর্করা কম থাকায় এবং আঁশ বেশি থাকায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের আদর্শ খাবার;
• মাশরুমে আছে শরীরের কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম কিছু উপাদান। তাই নিয়মিত মাশরুম খেলে হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপ দূর হয় ;
• মাশরুমে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ডি, যা শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে অত্যন্ত কার্যকরী ;
• মাশরুমে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। ফলে মাশরুম খেলে রক্তশূন্যতা দূর হয়। এ ছাড়া হেপাটাইটিস-বি, আমাশয়, ক্যান্সার, ডেঙ্গুজ্বর, টিউমার, ডায়বেটিস, কিডনী রোগ ও এলার্জি প্রতিরোধক উপাদানও আছে ;
• মাশরুমে "ট্রাইটারপিন" নামক উপাদান থাকাতে বর্তমানে এটি বিশ্বে এইডস্ প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ;
• মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে গ্লাইকোজেন থাকাতে শক্তি বাড়াতে কাজ করে। তাই যৌন অক্ষম রোগীদের জন্য মাশরুম একটি মহৌষধ ;
• মাশরুম খেলে হাইপার টেনশন দূর হয়, মেরুদন্ড দৃঢ় হয় ও মস্তিস্ক সুস্হ থাকে ;
• মাশরুম হজমে সহায়তা করে, রুচি বাড়ায় ও পেটের পীড়া দূর করে ;
• মাশরুম খেলে শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়, রক্ত চাপ কমায়, রক্ত চলাচল বাড়ায়, সর্দি কাশি প্রতিরোধ করে ;
• বাত, ব্যথা, জন্ডিস, কৃমি, রক্ত বন্ধ হওয়ার কাজে মাশরুম ব্যবহার হয় ;
• নিয়মিত মাশরুম খেলে চুল পড়া ও চুল পাকা বন্ধ হয়;
• মাশরুম কম ক্যালরিযুক্ত বলে ওজন কমানোর জন্য আদর্শ খাদ্য ;
• বিদেশে মাশরুম 'ওষুধ, টনিক ও খাদ্য' একের ভিতরে তিন হিসেবে পরিচিত। মাশরুমের পুষ্টিমাণ মাংস ও সবজির সংমিশ্রণ বলে, বিচিত্র ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত রুচিকর রকমারী খাবার তৈরি করা সম্ভব ;
মাশরুমের বিচিত্র জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে রয়েছে ভর্তা, সবজি-ভাজী, মাশরুম-গুঁড়ামাছ, মাশরুম-চিংড়ি মাছ, মাশরুম-মাংসের ভুনা, চাইনিজ কারি, চাইনিজ স্যুপ, মাশরুম পোলাও, মাশরুম-বিরিয়ানী, মাশরুম রাইস ইত্যাদি। ফাস্টফুড আইটেম বা নাস্তা হিসেবে এটি দিয়ে মাশরুম ভাজা, মাশরুম চপ, সমুচা, রোল, স্যান্ডউইচ, পিৎজা, পেটিস, সিঙ্গাড়া, নুডুল্স, বার্গার, চটপটি, মোগলাই ইত্যাদি দারুন উপযোগী এবং সুস্বাদু খাদ্য তৈরি করা যায়।
মাশরুমের পুষ্টিমাণঃ (১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমের ওজনের শতকরা হিসাবে)
জাত সাদা বোতাম মাশরুম
প্রোটিন ২৮.১
চর্বি ৩.১
কার্বোহাইড্রেট ৫৯.৪
আঁশ ৮.৩
শক্তি (কিলোক্যালরি)৩৫৩
জাত ঝিনুক মাশরুম
প্রোটিন ২১.৬
চর্বি ৭.২
কার্বোহাইড্রেট ৫৭.৬
আঁশ ৮.৭
শক্তি (কিলোক্যালরি)৩৪৫
জাত খড় মাশরুম
প্রোটিন ২৯.৫
চর্বি ৫.৭
কার্বোহাইড্রেট ৬০
আঁশ ১০.৪
শক্তি (কিলোক্যালরি)৩৭৪
বিভিন্ন মাশরুমের ভিটামিন ও খনিজের পরিমাণঃ (১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমের ওজনে প্রাপ্ত মিলিগ্রামে)
জাত সাদা বোতাম মাশরুম
থায়মিন ৮.৯
রিবোফ্লাভিন ৩.৭
নায়াসিন ৪২.৫
ক্যালসিয়াম ৭১০
পটাশিয়াম ২৮৫০
আয়রন ৮.৮
সোডিয়াম ১০৬
২
খড় মাশরুম
থায়মিন ১.২
রিবোফ্লাভিন ৩.৩
নায়াসিন ৯১.৯
ক্যালসিয়াম ৭১৫
পটাশিয়াম ৩৮৫৫
আয়রন ১৭.১
সোডিয়াম ৩৭৪
৩
ঝিনুক মাশরুম
থায়মিন ৪.৮
রিবোফ্লাভিন ৪.৭
নায়াসিন ১০৮.৭
ক্যালসিয়াম ৩৩৩
পটাশিয়াম ৩৭০৩
আয়রন ১৫.২
সোডিয়াম ৮৩৭
প্রতি ১০০ গ্রাম তাজা মাশরুমে ৩০ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায় এবং এতে কোলস্টোরেল নাই। চর্বির পরিমাণ এতে খুবই কম (২ থেকে ৮%) তবে শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড রয়েছে।
মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয়তা• মাশরুম একটি প্রোটিন, আঁশ, ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ সবজি।
• মাশরুম চাষে আবাদি জমি দরকার হয় না, ঘরেই এর চাষ সম্ভব।
• মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ (যেমন- খড়, কাঠের গুঁড়া, পচা পাতা, আখের ছোবড়া) খুবই সস্তা এবং সহজে পাওয়া যায়।
• এটি চাষ করতে অল্প পুঁজি ও অল্প শ্রম লাগে কিন্তু অধিক মুনাফা ও লাভ করা যায়।
• মাশরুম চাষের মাধ্যমে দেশের পুষ্টি উন্নয়ন, দারিদ্র দূর করা এবং কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হতে পারে।
• বিশ্বব্যাপী মাশরুমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মাশরুম রপ্তানি করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
মাশরুমের বৈশিষ্ট্যমাশরুম একপ্রকার ছত্রাকজাতীয় উদ্ভিদ। এতে সবুজ কণা বা ক্লোরোফিল নেই বলে সবুজ কণাযুক্ত উদ্ভিদের মতো নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। সে কারণে খাদ্যের জন্য এরা প্রাণীজ বা উদ্ভিজ বস্তুর উপর নির্ভর করে। মাশরুমের ফুল কিংবা খাবারযোগ্য অংশটি সাধারণভাবে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে।
টুপী: টুপী বা পিলিয়াস অনেকটা ছাতার মত আকৃতি। এটি সাধারণত: মাংশল এবং পুরু হয়। জাতভেদে টুপী বিভিন্ন আকৃতি, মাপ ও বর্ণের হয়।
জিল: জিল বা ল্যামেল্যা মাশরুমের টুপীর নীচের অংশ। এর মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় স্পোর থাকে। উদ্ভিদের বংশবিস্তারের জন্য যেমন বীজ থাকে, মাশরুমের তেমনি থাকে স্পোর। স্পোরের মাধ্যমে মাশরুমের বংশবিস্তার ঘটে। জাতভেদে স্পোরের রং বিভিন্ন হয় এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে রংয়ের পরিবর্তন হয়। স্পোরগুলো খালি চোখে দেখা যায় না তবে অনেকগুলো স্পোরকে একসাথে দেখতে ধূলোর মতো মনে হয়। স্পোরগুলো ঝরে পড়লে তা বাতাসে অন্য জায়গায় চলে যায়। অনুকূল পরিবেশ পেলে স্পোরগুলো গজায়। স্পোর গজিয়ে সুতোর মত এক ধরনের দন্ড জন্ম নেয়। এগুলোকে হাইফা বলা হয়। অনেকগুলো হাইফাকে একত্রে মাইসেলিয়াম বলে। মাইসেলিয়াম বৃদ্ধি পেয়ে বড় হয় এবং খাদ্য সংগ্রহ করে। হাইফাই মাশরুমের মূল কাঠামো।
আবরণ: মাশরুমের জিল এক ধরণের কোষ দিয়ে আবৃত থাকে যা টুপীর প্রান্ত থেকে দন্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। কোষগুলোকে আবরণ বা ভেইল বলা হয়। আস্তে আস্তে মাশরুমের বৃদ্ধি হতে থাকলে টুপীর দিককার আবরণ ছিঁড়ে যায় এবং এর কিছু অংশ টুপীর প্রান্তভাগ সংলগ্ন থাকে অন্য অংশ দন্ডের চারদিকে আংটির মতো থাকে এটিকে এনুলাস বলা হয়
দন্ড: মাশরুমের দন্ডটি সাধারণভাবে টুপীর মাঝামাঝি থাকে। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে এটি একপাশেও থাকতে পারে। দন্ডটির ভিতরের অংশ ভরাট কিংবা ফাঁপা থাকতে পারে। দন্ডটির সব জায়গায় একই ধরনের পরিধি বিশিষ্ট হতে পারে কিংবা মাঝে বা শেষ প্রান্ত কিছুটা ফুলে থাকতে পারে।
মাশরুমের জাত: জাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও প্রাপ্ত কাঁচামালের ভিত্তিতে নীচে দেয়া মাশরুমের জাতগুলো আমাদের দেশে চাষ করার জন্য উপযোগী: বাংলাদেশে উৎপাদন উপযোগী বিভিন্ন মাশরুমের নাম-
১) ঝিনুক মাশরুম Oyster Mushroom
২) দুধ মাশরুম Milky Mushroom
৩) কান মাশরুম Wood ear Mushroom
৪) বোতাম মাশরুম Button Mushroom
৫) শিতাকে মাশরুম Shitake Mushroom
৬) খড় মাশরুম Paddy Straw Mushroom
বিভিন্ন জাতের মাশরুম চাষের বর্ষপঞ্জী ও বিভিন্ন জাতের মাশরুম উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা
১) ঝিনুক মাশরুম ২০ থেকে ৩২০ সে.
২) দুধ মাশরুম ২৫ থেকে ৩৭০ সে.
৩) খড় মাশরুম ২৫ থেকে ৩৯০ সে.
৪) কান মাশরুম ২২ থেকে ৩২০ সে.
৫) তাপ সহনশীল বোতাম মাশরুম ১৮ থেকে ২৪০ সে.
৬) শিতাক মাশরুম ১৮ থেকে ২২০ সে.
৭) বোতাম মাশরুম ১৬ থেকে ২০০ সে.
বীজ উৎপাদন পদ্ধতি: মাশরুম বীজ বা স্পন সহজে পাওয়া যায় না বলে অনেকেই মাশরুম চাষ করার ইচ্ছা থাকলেও করতে পারছে না। গবেষণাগার অর্থাৎ ল্যাবরেটরিতে দুভাবে মাশরুমের বীজ উৎপাদন করা যায়।
১. টিস্যু কালচার পদ্ধতি ও ২. স্পোর কালচার পদ্ধতি।
মাশরুম চাষের সাথে জড়িত চাষীভাইরা মাশরুমের বীজ চাইলে নিম্নলিখিত ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন- • মাশরুম, প্রকল্প পরিচালক, মাশরুম সেন্টার উন্নয়ন প্রকল্প, সোবহানবাগ, সাভার, ঢাকা, ফোন-৭৭১০৬৪৬। • মান্না মাশরুমি, ৫৫/৬/১, পূর্ব বাইশটেকী (মুক্তিযোদ্ধা মসজিদ সংলগ্ন) মিরপুর-১৩, ঢাকা-১২১৬, মোবাইল-০১৭১২-৯৭২৪৬০, ০১৮১৯-২১৭৮৪৪ ফোন-৯০১৬০২৬ (বাসা)। ই-মেইল : mannamushroomy@yahoo.com
মাশরুম চাষ পদ্ধতি: চাষকৃত খাবার উপযোগী মাশরুমের মধ্যে বোতাম মাশরুম, ঝিনুক মাশরুম, কান মাশরুম, শিতাক মাশরুম ও খড় মাশরুম এই পাঁচটিকেই প্রধান হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
১. ঝিনুক মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি- ঝিনুক মাশরুম উৎপাদনের জন্য প্রচলিত ও অপ্রচলিত দুইটি পদ্ধতি রয়েছে। বাংলাদেশে প্রচলিত ঝিনুক মাশরুম চাষ পদ্ধতি ঝিনুক মাশরুম উৎপাদনের জন্য দেশে চাষীদের কাছে সাথে সাথে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত "পিপি ব্যাগ" (পলিপ্রপাইলিন ব্যাগ) সরবরাহ করা হয়। চাষীরা শুধুমাত্র শস্য ঘরে রেখে ফসল উৎপাদন করে থাকেন। "পিপি ব্যাগগুলোর" ওজন ৫০০ গ্রাম। এতে নীচের উৎপাদন মিলিয়ে মিডিয়া (যাতে মাশরুম চাষ করা হয়) প্রস্তুত করা হয়। কাঁঠের গুড়া = ৬৪% গমের ভূষি = ৩২ % ধানের ভূষি = ৪% এ মিশ্রণের সাথে সামান্য পরিমাণ চুন এবং ৬০ থেকে ৬৫% পানি মেশানো হয়। ব্যাগগুলো জীবাণুমুক্ত করা হয় এবং পূর্বে তৈরি বীজ বা স্পন নিয়ে খড়ের চালা বিশিষ্ট বাঁশের বেড়া ও পাকা মেঝের ঘরে কাঠ ও বাঁশের তাকে ছোট ছোট প্যাকেটগুলি সারি করে সাজিয়ে এ মাশরুম চাষ করা হয়। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ঝিনুক মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতির ধাপগুলো নিম্নরূপ: উজ্জ্বল সোনালী রংয়ের তাজা শুকনো খড় সংগ্রহ করে ছোট ছোট টুকরা করে কাটতে হবে। টুকরাগুলোর মাপ ১ থেকে ২ ইঞ্চি (২ থেকে ৪ সেমি) হতে হবে। খড়ের টুকরাগুলো পরিষ্কার চটের থলিতে ভর্তি করে পরিষ্কার কলের পানি ভর্তি ড্রামে একরাত ভিজিয়ে রাখতে হবে ;
• ভেজানো বস্তা সকালে পানি থেকে তুলে তারের জালের উপর রাখতে হবে যাতে করে অতিরিক্ত পানি সরে যায়। এ সময় বস্তাটিকে সামান্য পেটালে পানি তাড়াতাড়ি ঝরে যাবে ;
• একটি বড় মুখওয়ালা ডেকচি বা পরিষ্কার অর্ধেক ড্রাম দিয়ে তৈরি পাত্রে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভর্তি করতে হবে। পানিভর্তি পাত্রে খড় ভর্তি বস্তাটিকে ডুবিয়ে পানি গরম করার ব্যবস্হা করতে হবে। প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট পানি গরম করা হলে পানি ফুটতে শুরু করবে। এ অবস্হায় ১০ মিনিট সময় ফুটালে খড় জীবাণুমুক্ত হবে। এই পদ্ধতিকে "পাস্তুরাইজেশন" বলা হয়। পানি না ফুটিয়েও পাস্তুরাইজেশন করা যায়। এক্ষেত্রে ১০০ লিটার পরিষ্কার পানিতে ১২৫ মিলি. ফরমালডিহাইড ও ১২.৫ গ্রাম ব্যাভিস্টিন মিশিয়ে নিয়ে তাতে কাটা খড় ডুবিয়ে ড্রামের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করে ১ দিন রেখে দিলেও "পাস্তুরাইজেশন" হয়ে যাবে। জীবাণুমুক্ত করার পর খড়ভর্তি বস্তা ঠান্ডা করতে হবে।
• বস্তাটির মুখ খুলে ছোট তারের জালির চৌকির উপর সিদ্ধ করা খড় ছড়িয়ে রাখলে খড় ঠান্ডা হবে এবং অতিরিক্ত পানি ঝরে যাবে। বাড়িতে ছোট আকারে মাশরুম উৎপাদন করার জন্য ৩৫×৪৫ সেমি আকৃতির পিপি (পলিপ্রপাইলিন) ব্যাগ অথবা ৩ কেজি ভেজা খড় ভরা যাবে এমন আকৃতির ব্যাগ নিতে হবে। ব্যাগের ভেতর জীবাণুমুক্ত স্পন ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি (১০ থেকে ১২ সেমি) পুরু করে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। স্পন ছিটানো শেষ হলে তার উপর ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি (১০ থেকে ১২ সেমি) পুরু আরো এক স্তর খড় দিতে হবে। এই খড়ের উপর একইভাবে স্পন ছিটিয়ে দিতে হবে। ছিটানো স্পনের উপর আরো এক স্তর খড় দিতে হবে। এভাবে তিনটি স্তরে খড় ও স্পন দিয়ে ব্যাগটি ভর্তি করে মুখটি ভালোভাবে পেঁচিয়ে রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
• ব্যাগে স্পন দেয়া সমাপ্ত হবার পর প্রস্তুতকৃত ব্যাগগুলো একটি কক্ষে রাখতে হবে। কক্ষটিকে স্পন কক্ষ বলা হয়। স্পন কক্ষের তাপমাত্রা ২৫০ থেকে ২৬০ সে. হতে হবে ;
• স্পন ভর্তি ব্যাগ ২৫০ থেকে ২৮০ সে. তাপমাত্রায় রাখা হয়। তাপমাত্রা কোন অবস্হায়ই ৩০০ সে. এর উপর যাতে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিদিনকার তাপমাত্রার রেকর্ড রাখতে হবে। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে পানি স্প্রে করতে হবে এবং বাতাস যাতায়াতের ব্যবস্হা করতে হবে। এই অবস্হায় মাশরুমের মাইসিলিয়াম তৈরি হতে থাকবে। এ সময় বাতাস চলাচলের খুব একটা প্রয়োজন হয় না বরং কার্বণ-ডাই-অক্সাইড ও অন্ধকারে মাইসিলিয়াম ভালো জন্মায়। দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময়ের মধ্যেই মাইসিলিয়াম সমগ্র খড়ের আবরণকে অসংখ্য সুতায় জালি তৈরি করে ঢেকে ফেলে। এ অবস্হায় ব্যাগটি মাশরুম উৎপাদনের সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হলো ;
• এরপর মাইসিলিয়াম ভর্তি ব্যাগ "শষ্যঘর" বা "চাষ ঘরে" স্হানান্তর করা হয়। "চাষ ঘরটি" যথাসময়ে জীবাণুমুক্ত হওয়া ভালো। কক্ষে ৮ ইঞ্চি দূরে দূরে ব্যাগ রেখে, ব্যাগের উপরের পলিথিন খুলে ফেলতে হয়। ব্যাগগুলো বাঁশের মাচায় বা কাঠের তৈরি র্যাকে সারি সারি করে বিভিন্ন তাকে রাখা সুবিধাজনক। এবার ১ গ্রাম ব্যাভিস্টিন (কার্বনডেজাইম) ও ৫ মিলি ফরমালডিহাইড ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ঘরের মধ্য স্প্রে করতে হবে। মাশরুমের উপর সরাসরি রাসায়নিকগুলো স্প্রে করা যাবে না। শষ্যঘরটি বাঁশের বেড়া, ছনের ছাউনি দিয়ে গ্রামীণ পরিবেশে তৈরি করা যায়। পাশের বেড়ার একটি অংশ ঝাপের মতো করা ভালো। এতে করে আলো, বাতাস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। শষ্যঘরের তাপমাত্রা ২৪০ থেকে ২৬০ সে. হওয়া উচিত। ঘরের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে থাকতে হবে। এ অবস্হায় ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে মাশরুমের আকৃতি প্রায় ২ থেকে ৩ ইঞ্চি হয়।
• মাশরুমের আকৃতি ২ থেকে ৩ ইঞ্চি হলেই গোড়া থেকে প্রায় ১ ইঞ্চি পরিমাণ ডাটাসহ সংগ্রহ করতে হবে। ফসল সংগ্রহ করতে দেরী হলে স্পোরগুলো ঝরে পড়া শুরু করবে এবং তখন মাশরুম বাজারজাত অসুবিধা হবে। এ সময় ব্যাগগুলোতে পানি ছিটিয়ে ভেজা রাখতে হবে। সংগ্রহ করা মাশরুম পরিষ্কার করে ছিদ্রযুক্ত (৫ থেকে ৬ মিমি বা প্রায় ০.২০ ইঞ্চি) পলিথিন প্যাকেটে রাখতে হবে। বাজারজাতকরণ করার জন্য পলিথিন প্যাকেটের মুখ বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ। সাধারণ তাপমাত্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা মাশরুমের রং ও আকৃতি ঠিক থাকে। তবে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত এ মাশরুমে রাখা যেতে পারে। ফ্রিজে এ মাশরুম ৩ থেকে ৪ দিন রাখা যায়। প্রথমবার ফসল সংগ্রহের ১০ দিন পর আরো একবার ফসল সংগ্রহ করা যায়। মোট তিনবারের বেশি ফসল সংগ্রহ না করাই ভালো।
• উৎপাদন বেশি হলে এবং তাজা অবস্হায় বাজারজাত করা সম্ভব না হলে ৩ থেকে ৪ দিন রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। শুকনো মাশরুম ৬ মাস পর্যন্ত ভালো অবস্হায় রাখা যায়। পোকামাকড় রোগ বালাই দমন ঝিনুক মাশরুমে মাছির প্রকোপ দেখা যেতে পারে। এ অবস্হায় ম্যালাথিয়ন ০.১% হারে স্প্রে করা যেতে পারে। এছাড়া ছত্রাকের আক্রমণ দেখা গেলে ফরমালডিহাইডে ৪% তুলা ভিজিয়ে সংক্রামিত অংশে লাগিয়ে দিতে হবে।
২. কান মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি দেখতে অনেকটা কানের আকৃতি বলে এ মাশরুমকে কান মাশরুম বা জেলি মাশরুম বলা হয়। এ মাশরুম দেখতে বেগুনী বাদামী রংয়ের। বাংলাদেশে কান মাশরুম সফলভাবে চাষ করা হয়েছে। কান মাশরুম প্রধানত: কাঠের গুঁড়িতেই জন্মায়। কাঠের গুঁড়ি ছাড়াও কাঠের গুঁড়া ও খড়ের মিশ্রণ এবং তুলার বর্জ্যের উপরও কান মাশরুম বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায়। গ্রামে ক্ষুদ্র চাষিরা খড়ের ওপর ব্যাগ পদ্ধতিতেই এ মাশরুম চাষ করতে পারেন। নীচে এর চাষ পদ্ধতি দেওয়া হলো।
• কাঠের গুঁড়া ৮০% ও ধানের তুষ ২০% ও ২৫০ গ্রাম চুন-এর মিশ্রণ পানিতে সিলিন্ডার আকৃতির প্লাস্টিক ব্যাগে ভালোভাবে চেপে ভর্তি করে ৯০ থেকে ১০০০ সে তাপমাত্রায় ৯০ মিনিট সময় জীবাণুমুক্ত করতে হবে ;
• জীবাণুমুক্ত ব্যাগ ঠান্ডা করার পর মূল স্পন থেকে খানিকটা স্পন নিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়ে ২৮০ সে তাপমাত্রায় ৮০ থেকে ৯০% আর্দ্রতায় রাখতে হবে। মাইসিলিয়াম সম্পূর্ণভাবে ব্যাগের মধ্যে বেড়ে উঠলে ব্যাগটি চাষ ঘরে স্হানান্তর করতে হবে। ২০ থেকে ২৫ দিনে মাইসিলিয়াম সম্পূর্ণ ব্যাগে ভরে যায়। এ অবস্হায় ব্যাগটি একটি ফ্রেমের মধ্যে রেখে ব্যাগের উপর ও নীচের পাশে খানিকটা কেটে দিতে হবে ;
• চাষ ঘরে বাতাস চলাচলের সুব্যবস্হা থাকা আবশ্যক। ফসল ভালোভাবে উৎপাদন হবার জন্য ঘরের তাপমাত্রা ২২০ থেকে ২৭০ সে. থাকা দরকার। এ অবস্হায় ব্যাগের কাটা অংশগুলো দিয়ে ছোট ছোট মাশরুম দেখা যাবে। এক সপ্তাহ সময়ের মধ্যে ফসল সংগ্রহের উপযোগী হয়ে উঠবে। এ মাশরুমের বিশেষত্ব: হচ্ছে যে, এর সংরক্ষণ ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি এবং মাশরুম পরিপক্ক হবার পরও অন্তত: দু'সপ্তাহ এটি নষ্ট হয় না।
৩. খড় মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি : স্ট্র মাশরুমের বাংলা নাম খড় মাশরুম। অল্প খরচে বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ করা যায়। দরকার শুধু বাড়তি যত্ন, তাহলেই বাড়তি লাভ। যা লাগবে স্পন (বীজ), বেড বা স্তূপ তৈরির জন্য ধানের খড়, শিমুল তুলা, চালের কুঁড়া, মাটির চাড়ি/ড্রাম, পলিথিন সিট, কাঠের তলাবিহীন ফরমা/বাক্স (৩.২৮১ ফুট × ১ ইঞ্চি × ১২ ইঞ্চি)।
উৎপাদনের ধাপ স্ট্র মাশরুমের জন্য বেড বা খড়ের স্তূপ তৈরি করতে সাধারণত: তিন কেজি পরিমাণ শুকনো খড়ের প্রয়োজন হয়-
• একটি চাড়ি বা চৌবাচ্চায় পরিমাণমত পানিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ খড় ভেজার জন্য ওজনের এক শতাংশ চুন পানিতে গুলাতে হবে। অর্থাৎ এক কেজি খড়ের জন্য প্রায় ১০ গ্রাম চুন। এরপর শুকনো খড়গুলো ওই পানিতে ভালোভাবে ভেজাতে হবে। যখন মনে হবে খড়ের প্রতিটি অংশে পানি গিয়েছে তখন থেকে আরও ৩০ মিনিট পর্যন্ত খড় ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর খড়গুলো পানি থেকে উঠিয়ে ঝুড়ির ভিতর ৩০ মিনিট অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত পানি ঝরা বন্ধ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত পানি ঝরাতে হবে। চৌবাচ্চায় পানির পরিমাণ বেশি হবে না। এক কেজি শুকনো খড় ভালোভাবে ভেজার জন্য ১০ লিটার পানি প্রয়োজন ;
• এরপর খড়গুলো একটু ঝেড়ে নিয়ে পলিথিন কাগজের উপর স্তূপ তৈরি করতে হবে এবং পলিথিন কাগজ দিয়ে সম্পূর্ণ খড় ঢেকে দিতে হবে;
• এভাবে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত স্তূপ তৈরি করে রোদে রাখতে হবে। এতে করে খড়ে তাপের সৃষ্টি হবে। এভাবে তাপমাত্রা প্রায় ৪৫০ সে থেকে ৫০০ সে. পর্যন্ত হয় ;
• পর দিন (২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পর) যখন বেড তৈরি করা হবে তার এক থেকে দুই ঘন্টা আগে শিমুল তুলা পানিতে ভালোভাবে ভেজাতে হবে। ভেজানো শেষে তুলায় চাপ দিয়ে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে। তুলায় এ পর্যায়ে ৭০ শতাংশ আর্দ্রতা থাকবে। এ সময় তুলা ছিঁড়ে কিছুটা ছোট ছোট আকারের টুকরা করতে হবে।
• এবার যে ঘরে মাশরুম চাষ করা হবে সে ঘরের মেঝে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর মেঝে বা মাচায় রঙিন পলিথিন বিছিয়ে তার উপর বেড তৈরির ফরমা বসাতে হবে ;
• তারপর গত দিনের ভেজানো খড় কাঠের ফরমার ভিতর সাধারণত: ৪ ইঞ্চি পুরু করে বিছাতে হবে। ৪ ইঞ্চি পুরু খড়ের বাক্সের কিনার থেকে প্রায় ২ ইঞ্চি ভিতরের দিকে ভিজা তুলার টুকরাগুলো প্রায় ১ ইঞ্চি পরপর বসিয়ে দিতে হবে ;
• এ তুলার চারপাশে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম পরিমাণ ‘স্ট্র’ মাশরুমের বীজ (মাদার কালচার) ছিটিয়ে দিতে হবে। বীজ দেওয়া শেষ হলে এ বীজের চারপাশে পাঁচ গ্রাম চালের কুঁড়া ছিটিয়ে দিতে হবে। তা ছাড়া তিন গ্রাম পরিমাণ চুনের গুড়া ছিটিয়ে দিতে হবে ;
• এভাবে পুনরায় ৪ ইঞ্চি খড় দিয়ে দ্বিতীয় স্তর তৈরি করতে হবে এবং আগের মতো তুলা, বীজ, কুঁড়া ও চুন দিতে হবে ;
• এরপর তৃতীয় স্তর প্রায় ২ ইঞ্চি খড় দিয়ে তরি করতে হবে। এ স্তরে তুলার টুকরা বীজ (স্পন), চালের কুঁড়া ও চুন পুরো বেডের উপর দিতে হবে ;
• এবার শেষ স্তরে ১.৫ ইঞ্চি খড় দিয়ে হাত দিয়ে আলতো চাপ দিতে হবে, যেন বেডটি সুন্দর হয়। অত:পর কাঠের ফরমা তুলে পরবর্তী বেড তৈরির জন্য ৬ ইঞ্চি দূরে বসাতে হবে ;
• এভাবে ৫ থেকে ১০টি বেড প্রতি ৬ ইঞ্চি পরপর করা যেতে পারে। এবার সব বেড পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়ে 'স্ট্র' মাশরুমের মাইসিলিয়াম বৃদ্ধির ব্যবস্হা নিতে হবে। এ সময় বেডের তাপমাত্রা ৩০০ সে থেকে ৩৬০ সে. মধ্যে থাকতে হবে ;
• এভাবে দুই থেকে তিনদিন পর পলিথিন সরিয়ে এক ঘন্টা বেড খোলা রেখে বাতাস চলাচলের ব্যবস্হা করতে হবে। • প্রায় ৮ থেকে ৯ দিনের ভিতর পিনের মাথার মতো মাশরুম গজাতে শুরু করবে এবং ১০ থেকে ১২ দিনের মাথায় মাশরুম তোলার উপযোগী হবে। চাষ শুরু করার ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে স্ট্র মাশরুম যখন ডিম্বাকৃতির হবে, তখনই মাশরুম সংগ্রহ করতে হবে। সময়মতো না উঠালে মাশরুমের মাথা ফেটে গিয়ে ছাতার আকৃতি হয়ে যায়। এতে করে মাশরুমের মান নষ্ট হয়। এ জন্য স্ট্র মাশরুম দিনে দু’বার তোলার ব্যবস্হা রাখতে হবে।
৪. দুধ মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি দুধ মাশরুম বাংলাদেশের আবহাওয়ায় জন্মানোর জন্য অত্যন্ত উপযোগী একটি মাশরুম। দুধ মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি নীচে দেয়া হলো-
• সোনালী রংয়ের তাজা শুকনো ও মচমচে খড় অনুমানিক ১ ইঞ্চি (২.৫৪ সেমি) সাইজে ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিয়ে পরিষ্কার পাটের বস্তায় ভরে একদিন (৮ থেকে ১৬ ঘণ্টা) পরিষ্কার পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। এতে করে বস্তার খড় ভালোভাবে ভিজবে ;
• পানি থেকে বস্তা তুলে অতিরিক্ত পানি সরিয়ে নিতে হবে। এজন্য বস্তাটি তারের জালির ফ্রেমের উপর রেখে ভালোভাবে চাপ দিলে অতিরিক্ত পানি সরে যাবে ;
• একটি বড় মুখওয়ালা পাতিল (সসপ্যান) বা একটি ড্রামকে মাঝামাঝি কেটে নিলে দুটি ভালো পাত্র তৈরি করা সম্ভব। এজন্য কাটা ড্রামের দুপাশে দুটি হাতল লাগিয়ে নিতে হবে। এরূপ একটি পরিষ্কার পাত্রে পানি ঢেলে তাতে বস্তা ভর্তি ভেজা খড় ডুবিয়ে দিতে হবে ;
• পাত্রটি চুলায় বসাতে হবে, যাতে করে পানি অন্তত: ৯০০ সে. তাপমাত্রা পর্যন্ত গরম হয়। প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট এ তাপমাত্রায় খড় সিদ্ধ করলে জীবাণুমুক্তকরণ (পাস্তুরাইজেশন) প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। গ্রামীণ পর্যায়ে ছোট চাষীদের জন্য এটি সবচেয়ে ভালো। পাস্তুরাইজেশন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে খড়ের মধ্যকার জীবাণু ধ্বংস করা ;
• জীবাণুমুক্ত করার পর গরম খড় ঠান্ডা করা হয়। খড় ঠান্ডা হবার পর ৩ থেকে ৪টি স্তরে পলিথিন ব্যাগে খড় ভর্তি করতে হবে। প্রতিটি স্তরেই কিছুটা স্পন ছিটিয়ে দিতে হয়। ব্যাগ ভর্তি এবং স্পনিং করার অন্তত: এক সপ্তাহ আগে ব্যাগ রাখার ঘরটি পরিষ্কার করে ১% ফরমালডিহাইড স্প্রে করতে হবে। এতে কক্ষটি বালাইমুক্ত থাকবে। স্প্রে করার পর ঘর বন্ধ করে রাখতে হবে। স্পনিং এর সময় কক্ষটি অন্ধকারে রাখা দরকার। তাছাড়া ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা ২৫০ থেকে ৩৫০ সে. এর মধ্যে রাখতে হবে। এ অবস্হায় ২০ দিন পর ব্যাগে পুরোপুরি মাইসিলিয়াম বৃদ্ধি পাবে এবং তখন তা চাষ ঘরে ফসল উৎপাদনের জন্য স্হানান্তর করতে হবে ;
• চাষঘরে ব্যাগের উপর ‘কেসিং’ করা হয়। ‘কেসিং’ কি? ৭৫% ভাগ মাটি ও ২৫% বালির সাথে চক পাউডার মিশিয়ে মিশ্রণটি কেসিং করার ৭ দিন আগে ৪% ফরমালডিহাইড মিশ্রণে জীবাণুমুক্ত করা যায়। তবে চাষঘরে ফরমালডিহাইড মিশ্রণে মাটি-বালি ভিজিয়ে তা পলিথিন দিয়ে ঢেকে ২ দিন পর পর মাটি ও বালি উপর-নীচ করে নাড়িয়ে দিতে হবে। এভাবে মাটি ও বালির মিশ্রণ জীবাণুমুক্ত হবে। এরপর খড় ভর্তি ব্যাগগুলোর উপরিভাগ কিছুটা নেড়ে চেড়ে ০.১% কারবেনডাজিম ও ০.৫% ফরমালডিহাইড দিয়ে স্প্রে করতে হবে। এবার জীবাণুমুক্ত মাটি-বালির মিশ্রণটি ব্যাগের খড়ের উপর প্রায় ১ ইঞ্চি পুরু করে বিছিয়ে পুনরায় কারবেনডাজিম ও ফরমালডিহাইড দ্রবণে ভিজিয়ে দিতে হবে। এই প্রক্রিয়াকেই কেসিং বলে। কেসিং করা ব্যাগগুলো ৩০০ থেকে ৩৫০ সে. তাপমাত্রা ও ৮০% থেকে ৯০% আর্দ্রতায় রাখতে হবে। এক সপ্তাহ পর পুনরায় কারবেনডাজিম ও ফরমালডিহাইড দ্রবণের মিশ্রণ ঘরে ছিটাতে হবে। তবে এ সময় মাশরুমের ব্যাগের উপর সরাসরি স্প্রে করা যাবে না ;
• প্রায় ১০ দিন পর কেসিং এর মাটির উপর মাইসেলিয়াম দেখা যাবে। এ অবস্হায় চাষঘরের মধ্যে কিছুটা বাতাস চলাচলের ব্যবস্হা করা প্রয়োজন। এসময় ঘরের ভিতরের তাপমাত্রা ৩০০ থেকে ৩৫০ সে. এবং অন্ধকারের পরিবর্তে হাল্কা আলোর ব্যবস্হা করতে হবে। আর্দ্রতা রক্ষার জন্য গ্রীষ্মকালে মেঝেতে বালি ছিটিয়ে দিনে ৩ থেকে ৪ বার হালকা পানি ছিটিয়ে দেয়া হলে মোটামুটি আর্দ্রতা বজায় থাকে। বর্ষায় পানির তেমন প্রয়োজন হয় না। • ৩ থেকে ৫ দিন পর দানা আকৃতির মাশরুম দেখা যাবে যা পরবর্তী ৭ দিনে বেড়ে উঠে। এ অবস্হায় মাশরুম সংগ্রহ করতে হবে।
৫. শিতাকে মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি শিতাক মাশরুম জাপানে খুব জনপ্রিয়। এটি জাপানে ‘ওক’ গাছের গুড়িতে চাষ করা হয়। কাঠের গুড়ি ছাড়াও পিপি ব্যাগে কাঠের গুড়ার ওপর চাষ করা যায়। ব্যাগ পদ্ধতিটি তাইওয়ানে অনেক জনপ্রিয়। ব্যাগ পদ্ধতি
• এ মাশরুম উৎপাদনের জন্য বাঁশের চাষঘর তৈরি করতে হয়। ঘরের উপরের চালা পলিথিন দিয়ে ঢেকে চারদিকে এই পলিথিন ফ্লোর পর্যন্ত ঝুলিয়ে দিতে হবে। পলিথিনের উপর খড়ের ছাউনি দিতে হবে যাতে করে রোদ ও তাপ ঘরে না লাগে ;
• কাঠের গুঁড়া ৮০ থেকে ৯০%, ধানের তুষ ১০ থেকে ২০% ও পানি ৬৫% মিশিয়ে মাশরুম চাষের জন্য মিশ্রণ তৈরি করা হয়। কিছুটা (১%) চুন মিশিয়ে মিশ্রণের পি এইচ (৫.৫ থেকে ৭.০) ঠিক করা হয়। এই মিশ্রটি ঘরের বাইরে সপ্তাহখানেক রাখা হয় ;
• এক সপ্তাহ পর এ মিশ্রণটি ঘরে এনে ৬ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি চ্যাপটা ব্যাগে ভরতে হবে। ব্যাগের মুখে একটি মুখে একটি প্লাস্টিকের রিং পরিয়ে বোতলের মুখের মত করে তার মুখে তুলা দিয়ে বন্ধ করতে হবে। ব্যাগগুলো চেপে সিলিন্ডার আকৃতির করে নিতে হবে। ব্যাগগুলো এরপর জীবাণুমুক্ত করা হয় ;
• ব্যাগ জীবাণুমুক্ত হলে ঠান্ডা করে একটি জীবাণুমুক্ত ঘরে (স্পনিং কক্ষে) ব্যাগের তুলা খুলে তাতে খানিকটা স্পন দিতে হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় শষ্যদানা স্পন আগেই প্রস্তুত করে নিতে হবে। স্পন দেয়া হলে একটি কক্ষে ব্যাগ সাধারণ তাপমাত্রায় রাখা হয়। ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর ব্যাগের রং ঘন বাদামী হবে এবং ব্যাগ শক্ত হয়ে যাবে। সে সময় ঘরে খুব সামান্য আলো, ৯০% আর্দ্রতা এবং খুব সামান্য বাতাস চলাচলের ব্যবস্হা থাকতে হবে ;
• এবার বাঁশের ঘরে এনে মুখ কেটে পানি ছিটাতে হবে। এ ছিটানোর প্রক্রিয়া ঝিরঝিরে ধরনের হতে হবে। শেষে ব্যাগ ভেজা মেঝেতে উল্টিয়ে রাখতে হবে। ২ থেকে ৩ দিন পর এ ব্যাগ সোজা করে রাখতে হবে। একদিন পর পুনরায় পানি দিয়ে ১ রাত ১ দিন উল্টিয়ে সোজা করে সাজিয়ে রাখতে হবে ;
• এসময় চাষ ঘরে আলো বাড়াতে হবে, দিনে ২ থেকে ৩ বার পানি স্প্রে করতে হবে এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্হা করতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা ২০০ থেকে ২২° সে. থাকবে এবং আর্দ্রতা হবে ৮০% থেকে ৮৫%।
এ অবস্হায় মাশরুম গজানো শুরু হবে।
৬. ওষুধি মাশরুম উৎপাদন পদ্ধতি সুপ্রাচীন কাল থেকে মানুষের জানা ছিল যে মাশরুমে ওষুধিগুণ বিদ্যমান, যা বর্তমানে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। টনিক ও ওষুধ হিসেবে চীন, কোরিয়া ও জাপানে অনেক জাতের মাশরুম প্রায় শত শত বছর ধরেই ব্যবহার করা হচ্ছে। রেইস বা লিং ঝি মাশরুম ওষুধ হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয়তা লাভ করছে বিধায় এর উৎপাদনও দিন দিন বাড়ছে। এ মাশরুম বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সহজেই চাষ করা যেতে পারে। এই মাশরুম চাষ করে রপ্তানি করারও সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে এ মাশরুমের মোট বাণিজ্যিক মূল্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার।
৭. রেইসি মাশরুমের চাষ পদ্ধতি রেইসি মাশরুম চাষের জন্য প্রয়োজন হয় কাঠের গুঁড়া, তুষ এবং চুন। ১ কেজি ওজনের কাঁঠাল ও আম কাঁঠের গুঁড়ার সাথে ১০০ গ্রাম ধানের তুষ ও ৩০ গ্রাম জিপসাম মিশিয়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এ মিশ্রনের আর্দ্রতা ৬০% থেকে ৬৫% হতে হবে। এ মিশ্রণটি এবার ৭০০ গ্রাম পরিমাণ ধরে এমন সাইজের পিপি (পলিপ্রপাইলিন) ব্যাগ বা বোতলে ভরতে হবে। ইচ্ছে করলে ব্যাগের সাইজ বড়ও করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ২ কেজি পরিমাণ ধরে এমন সাইজের ব্যাগ (৮×১২ ইঞ্চি) নিয়ে কাঠের গুড়া, তুষ ও জিপসামের মিশ্রণটি ভরে পি পি ব্যাগের মুখটিতে একটি প্লাস্টিকের কলার/রিং বসিয়ে তুলা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে ;
• বন্ধ করা পিপি ব্যাগ ভর্তি কাঠের গুড়ার মিশ্রণটি এবার ৯৫০ থেকে ১০০° সে তাপমাত্রায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা রাখলে জীবাণুমুক্ত করা হবে ;
• তাপ প্রয়োগ শেষে এ ব্যাগ বা বোতলগুলো একরাত ঠান্ডা করার জন্য রেখে দেয়া ভালো ;
• এবার প্রতি কেজি মিশ্রণের জন্য শতকরা ২ ভাগ হারে গম বীজের স্পন নিয়ে আগুনের শিখার উপর পিপি ব্যাগের মুখ খুলে ঢুকিয়ে দিয়ে ব্যাগের মুখ বন্ধ করে দিতে হবে ;
• এরপর ব্যাগগুলো অন্ধকার কক্ষে ৩০০ থেকে ৪০° সে তাপমাত্রা ও ৮০% ভাগ আর্দ্রতায় ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ রাখতে হবে। এ সময়ের মধ্যে ব্যাগের ভেতরে মাইসিলিয়াম ভর্তি হয়ে যাবে ;
• মাইসিলিয়ামে ব্যাগ ভর্তি হয়ে গেলে ব্যাগের মুখটি কেটে খুলে দিতে হবে। এ সময় চারিদিকে বন্ধ অন্ধকারে ঘরের মধ্যে ২৮ থেকে ৩০° সে তাপমাত্রা ও ৯০ থেকে ৯৫% আর্দ্রতায় ২ থেকে ৩ দিন রেখে দিতে হবে ;
• তিনদিন পর ঘরের জানালা খুলে দিতে হব। এতে বাইরের বাতাস ও আলো আসবে। এ সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে আর্দ্রতা কোনভাবেই ৯০% কম না হয় ;
• এ অবস্হায় প্রায় ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যেই পিনের মাথার মত সাদা মাশরুম দেখা যাবে। এসময় আর্দ্রতা কিছুটা কমিয়ে ৮০% থেকে ৮৫% রাখা যেতে পারে। ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে মাশরুম মোটামুটি সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। এ সময় ৩০% থেকে ৪০% ভাগ মাশরুম বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়না। অবশিষ্ট মাশরুমের বৃদ্ধি চলতে থাকে। বৃদ্ধিকালীন সময় মাশরুমের ডাটা লাল ও উপরের মাথা সাদা রংয়ের থাকে। পরিপূর্ণ হয়ে আসলে সাদা মাথাটি চ্যাপ্টা হলুদ বর্ণ ধারণ করে, এবং সাদা লাইনিং বাদামী লাল হয়ে যায়। এসময় আর্দ্রতা ৬০% ভাগ নামিয়ে আনলে মাশরুমের মাথাটি ভারী হয়। এ অবস্হায় মাশরুম সংগ্রহ করা হলে প্রত্যেকটি ব্যাগ থেকে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর আরো অন্তত: দুটি ফসল পাওয়া যেতে পারে। এভাবে একটি সম্পূর্ন উৎপাদন শেষ হতে প্রায় ৪ মাস সময় লাগে।
মাশরুম সংরক্ষণ: মাশরুমের সংরক্ষণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম এবং ৮ থেকে ১০ দিন পর ফসল তোলা যায়। পলিথিন মোড়কে ৩০ থেকে ৩৫° সে. তাপমাত্রা মাশরুম ৫ থেকে ৬ দিন পর্যন্ত ভালো রাখা যায়। পিপি ব্যাগে ভরে সিল করে ফ্রিজেও মাশরুম বেশ কয়েকদিন রাখা যায়। মাশরুম ছিদ্র যুক্ত পলিথিনে ভরে কার্ড বোর্ডের বাক্সে করে বাজারে পরিবহন করা যায়। তাছাড়া মাশরুম নীচের উপায়ে সংরক্ষণ করা যায়।
• ঠান্ডা বায়ু শূন্য অবস্হায়
• হিমায়িত
• শুকানো • ক্যান বা টিনজাত
• ১৮% থেকে ২০% লবণের দ্রবণে আমাদের দেশে গ্রামীণ পর্যায়ে মাশরুম সুর্যালোকে শুকিয়ে পলিথিনে সীল করে ৫ থেকে ৬ মাস অনায়াসে রাখা যায়। শুকানো মাশরুম ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হয়। ১৮% থেকে ২০% লবণের দ্রবণেও মাশরুম দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। মাশরুম শুকানোর পদ্ধতি তাজা মাশরুমে ৭০% থেকে ৯৫% আর্দ্রতা থাকে। অন্যদিকে শুকানো মাশরুমে আর্দ্রতার পরিমাণ ১০% থেকে ১২% এর মধ্যে রাখতে হয়। নীচের পদ্ধতি অনুসরণ করে মাশরুম শুকানো যেতে পারে:
• মাশরুমের ডাটার নীচের অংশ কেটে পরিষ্কার করতে হবে ;
• পানি ফুটিয়ে ২% লবণ দিতে হবে ;
• গরম পানিতে ৩ মিনিট মাশরুম ডুবিয়ে রাখতে হবে ;
• তারপর তুলে একটি ট্রেতে রেখে ঠান্ডা করতে হবে ;
• ট্রেতে মাশরুম ছড়িয়ে সাজিয়ে রাখতে হবে যাতে একটি মাশরুম অন্যটির উপর না থাকে ;
• ২ থেকে ৩ দিন পর পর রোদে শুকাতে হবে ;
• মাশরুম শুকনো পাতার মত মচমচে হয়ে যাবে ;
• এরপর পলিথিন ব্যাগে ভরে মুখ সীল করে দিতে হবে ;
• শুকনো মাশরুম ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে। সাধারণত: ১০০ গ্রাম মাশরুম থেকে ১০ গ্রাম শুকনো মাশরুম পাওয়া যায়। শুকনো ছাড়া মাশরুম সংরক্ষণের একটি সহজ পদ্ধতি হলো ১৮% থেকে ২০% লবণের দ্রবণে ১% সাইট্রিক এসিড দিয়ে রাখা।
মাশরুম থেকে তৈরি খাদ্য: বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছে মাশরুম একটি অপরিচিত সবজি। সঙ্গত কারণেই এর রান্নার প্রক্রিয়াটি অনেকের কাছেই অজানা। ভালোভাবে রান্না করা হলে এটি আমাদের মুখেও স্বাদ লাগবে। মাশরুম রান্নার কয়েকটি সংক্ষিপ্ত প্রণালী হলো- ক) মাশরুম সবজি মাশরুম অন্যান্য দেশী সবজির সাথে মিশিয়ে রান্না করা যায়। এর জন্য যে পরিমাণে সবজি নিতে হবে-
১) শুকনো মাশরুম ২০ গ্রাম
২) আলু ১টি (৫০ গ্রাম)
৩) মটরশুটি ১২০ গ্রাম
৪) টমেটো ১৫০ গ্রাম
৫) পেঁয়াজ ১০০ গ্রাম
৬) আদা ১০ গ্রাম
৭) রসুন ২ থেকে ৩ টি কোয়া
৮) তেল ১ থেকে ২ চামচ
৯) অন্যমসলা, লবণ প্রয়োজনমত
রান্না প্রণালী:
• শুকনো মাশরুম গরম পানিতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে ;
• আলু, মটরশুটি, টমেটো ধুয়ে নিতে হবে। পেঁয়াজ, মটরশুটি ও আলুর খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে ;
• এরপর আলু, টমেটো ও পেঁয়াজ কুটতে হবে। পেঁয়াজ একটু তেলে ভেজে নিতে হবে ;
• আদা, রসুন বেটে নিতে হবে। মসলা তেলে ভেজে লবণ ও কাটা সবজি দিয়ে নাড়তে হবে ;
• এরপর একটু গরম পানি দিয়ে তরকারী সিদ্ধ করতে হবে ;
• মাশরুম টুকরা করে কেটে সিদ্ধ সবজির সাথে দিয়ে ২ থেকে ৩ মিনিট রান্না করে তুলে নিতে হবে। খ) মাশরুম বিরিয়াণী মাশরুমের স্বাদ কিছুটা মাংসের মত। এজন্য মাশরুমের সাথে সবজি মিশিয়ে সহজেই সুস্বাদু বিরিয়াণী তৈরি করা যায়। মাশরুম বিরিয়াণী প্রস্তুত প্রণালী হলো-
১. পোলাউর চাল ১৫০ গ্রাম
২. মাশরুম ১০০ গ্রাম
৩. গাজর ৫০ গ্রাম
৪. মটরশুটি ৫০ গ্রাম
৫. ফুলকপি ৫০ গ্রাম
৬. পেঁয়াজ ১০০ গ্রাম
৭. ধনেপাতা ২৫ গ্রাম
৮. রসুন ৫ গ্রাম
৯. আদা ৫ গ্রাম
১০.কাঁচা মরিচ ৫ গ্রাম
১১. টক দই ৫০ গ্রাম
১২. তেল/মাখন ৫০ গ্রাম
১৩. অন্যমসলা, লবণ, পানি প্রয়োজনমত
রান্না প্রণালী • চাল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। মসলা বেটে নিতে হবে ; • পেঁয়াজ সোনালী করে ভেজে রাখতে হবে ; • মাশরুম পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে ভেজে রাখতে হবে ; • সবজি ধুয়ে কেটে সিদ্ধ করে নিতে হবে ; • চাল তেলে ভেজে সামান্য পানি দিয়ে প্রায় রান্না করার অবস্হায় নিয়ে আনতে হবে ; • দই ভাল করে ফেটে ধনে পাতা কুচির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে ; • এরপর সিদ্ধ সবজি, মাশরুম, দই মিশাতে হবে ; • একটি পাত্রে আবার খানিকটা তেল/মাখন দিয়ে চুলায় দিতে হবে। এরপর সবজি, মাশরুম পেঁয়াজ এর মিশ্রণ দিয়ে একটু নাড়তে হবে এবং প্রায় সিদ্ধ পোলাউর চাল মিশিয়ে ১০ মিনিট হালকা আঁচে চুলায় রাখতে হবে ; • তুলে পোলাউর উপর ভাজা পেঁয়াজ, কাজু বাদাম ইত্যাদি মিশিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে। গ) মাশরুম ফ্রাই নাস্তা হিসেবে মাশরুম ফ্রাই চা-এর সাথে পরিবেশন করা যায়। ইফতারীর সময় বেসনের সাথে সবজি দিয়ে পাকুড়া তৈরির মত করে সবজির পরিবর্তে মাশরুমের পাকুড়া তৈরি করা হলে তা যথেষ্ট সুস্বাদু হবে।
১
মাশরুম
১০ থেকে ১২টি
২
ডিম
১ টি
৩
বেসন
১ থেকে ২ টেবিল চামচ
৪
লবণ, গোল মরিচ গুড়া, সয়াবিন তেল
পরিমাণ মত
রান্না প্রণালী • মাশরুম ধুয়ে পরিষ্কার করে পানি ছাড়িয়ে নিতে হবে ; • একটি পাত্রে ডিম ভেঙ্গে বেসন, লবণ, গোল মরিচের গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে তাতে প্রয়োজনমত পানি দিয়ে ঘন করে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। মাশরুমগুলো মিশ্রণে ভালোভাবে ডুবিয়ে নিতে হবে ; • পপাত্রে তেল গরম করতে হবে এবং একত্রে কয়েকটি মাশরুম ভেজে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে। ঘ) মাশরুম হালিম আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরণের ডালের সাথে মাংস মিশিয়ে হালিম তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে হালিমের জন্য প্রয়োজনীয় ডালের সাথে মাশরুম মিশিয়ে মাশরুমের হালিম বানানো যায়। তাছাড়া পাতলা ডালের সাথে মাশরুম দিয়ে মাশরুম স্যুপও তৈরি করা যেতে পারে।
১
মুগ ডাল
১২৫ গ্রাম
২
মসুর ডাল
২৫০ গ্রাম
৩
ছোলার ডাল
১২৫ গ্রাম
৪
মাশরুম তাজা
৫০০ গ্রাম (শুকনো হলে ৫০ গ্রাম)
৫
পেঁয়াজ কুঁচি, আদা, রসুন, জিরার গুড়া, হলুদের গুড়া, তেজপাতা, লবণ ও পানি
পরিমাণ মত
রান্না প্রণালী • মাশরুম ধুয়ে পানি ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে রাখতে হবে ; • ডালগুলো ধুয়ে পানিতে ছাড়িয়ে নিতে হবে ; • মুগ ডাল সামান্য ভেজে ধুয়ে মসুর ও ছোলার ডালের সাথে মিশিয়ে ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিতে হবে। সিদ্ধ করার সময় ডালের সাথে আদা, রসুন, পেঁয়াজ কুঁচি ও লবণ মিশিয়ে নিতে হবে। ডাল খুব ঘন করা যাবে না ; • কাটা মাশরুম পেঁয়াজ কুচির সাথে ১ থেকে ২ মিনিট গরম তেলে হালকাভাবে ভেজে নিতে হবে। তারপর সিদ্ধ ডালের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে ; • সামান্য জিরার গুড়া এবং গোল মরিচের গুড়া মিশিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে। ঙ) চিকেন মাশরুম স্যুপ আমাদের দেশের রেস্তেরাগুলোতে চিকেন কর্নস্যুপ অত্যন্ত জনপ্রিয়। চিকেন কর্নের সাথে মাশরুম দিলে স্যুপের পুষ্টিমাণ বাড়বে এবং স্বাদও ভিন্নতর হবে। চিকেন মাশরুম স্যুপ তৈরি করার জন্য নীচের উপরকরণগুলোর প্রয়োজন হবে।
১
মাশরুম
২৫০ গ্রাম
২
পেঁয়াজ
২টি
৩
মুরগীর স্টক
৪ কাপ
৪
পানি
৩ কাপ
৫
কর্নফ্লাওয়ার
১ কাপ
৬
বাটার অয়েল
২০ গ্রাম
৭
আদা
২৫ গ্রাম
৮
লবণ, টেস্টিং সল্ট
পরিমাণ মত
রান্না প্রণালী • মুরগির স্টক তৈরি করার জন্য ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের একটি মুরগি ২.৫০ লিটার পানিতে পরিমাণ মত লবণ আদা দিয়ে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে। মাংসগুলো নরম হয়ে আলাদা হয়ে গেলে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে মুরগির হাড়গুলো আলাদা করতে হবে এবং মাংস স্টক পানির সঙ্গে একত্রে মিশিয়ে নিতে হবে ; • মাশরুম ও পেঁয়াজ চাকা করে কেটে নিতে হবে। তারপর বাটার অয়েল দিয়ে হালকাভাবে ভেজে নিতে হবে ; • এবার এসব ভাজা মাশরুম, মুরগির হাড় ও মাংস সিদ্ধ স্টক পানিতে ৫ থেকে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজন মত লবণ ও একটি কাপে অল্প পানিতে কর্নফ্লাওয়ার গুলিয়ে নিতে হবে ; • ২ থেকে ৩ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে ; • প্রয়োজন মত টেস্টিং সল্ট দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করতে হবে। চ) মাশরুম চিংড়ি চিংড়ি মাছ এমনিতেই যথেষ্ট সুস্বাদু মাছ। এ মাছের সাথে মাশরুম রান্না করলে একটু ভিন্ন স্বাদের তৈরি করা যায়। নীচে রান্নার উপকরণ ও প্রণালীর বর্ণনা দেওয়া হলো-
১
মাশরুম
৫০ গ্রাম
২
মাঝারি ধরণের চিংড়ি
২০০ গ্রাম
৩
পেঁয়াজ , মরিচ, লবণ, আদা, হলুদ, সয়াবিন তেল
পরিমাণ মত
রান্না প্রণালী • মাশরুম ধুয়ে কেটে পানি ছাড়িয়ে রাখতে হবে ; • চিংড়ি মাছের খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে ; • তেল, লবণ ও প্রয়োজনীয় মসলা দিয়ে মাছ তেলে ভেজে নিতে হবে ; • মাছ প্রায় হলে আসলে মাশরুম চিংড়ি মাছের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে ; • ৫ থেকে ৭ মিনিট নেড়ে নামিয়ে নিতে হবে ; • গরম গরম পরিবেশন করতে হবে। ছ) মাশরুম স্যান্ডউইচ স্যান্ডউইচ বর্তমানে শহরের মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়। দ্রুত তৈরি এবং সহজে বহন করার কারণে স্যান্ডউইচ সব বয়সের মানুষের কাছে পরিচিত। স্যান্ডউইচ সাধারণত: মাংস, মাছ কিংবা ডিম দিয়ে হয়। মাছ, মাংস, ডিমের পরিবর্তে মাশরুম ব্যবহার করা হলে স্যান্ডউইচ স্বাদ ও পুষ্টিমাণ ভিন্নরকমের হবে। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তারা এই স্যান্ডউইচ খেতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে বাটারের পরিবর্তে কোলস্টেরল মুক্ত কর্ন অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
১
মাশরুম
৫০ গ্রাম
২
বাটার
৫০ গ্রাম
৩
পেঁয়াজ, লবণ
পরিমাণ মত
৪
পাউরুটি
১টি
রান্না প্রণালী প্রথমে মাশরুমগুলো স্লাইস করে কেটে নিতে হবে। তারপর ফ্রাইপ্যানে বাটার/কর্ন অয়েল বা ভেজিটেবল ঘির মধ্যে পেঁয়াজ, লবণ দিয়ে মাশরুমগুলো হালকা করে ভেজে নিতে হবে ; তারপর দুই পিস পাউরুটির ভিতর ভাজা মাশরুমগুলো সুন্দর করে স্প্রেড করে দিন। এরপর মিয়োনিজ, টমেটো, পেঁয়াজ দিয়ে পরিবেশন করতে হবে। জ) মাশরুম ওমলেট ডিম একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। ডিমের সাথে মাশরুম মিশালে সেই খাবারের মান ও গুণ দু-ই বৃদ্ধি পায়। নীচে মাশরুম ওমলেট রান্নার উপকরণ দেওয়া হলো-
১
মাশরুম
১০০ গ্রাম
২
বাটার
১৫ গ্রাম
৩
ডিম
২টি
৪
দুধ
১ থেকে ২ কাপ
৫
লবণ ও মরিচ গুড়া
পরিমাণ মত
রান্না প্রণালী • মাশরুম ধুয়ে পরিষ্কার করে কেটে নিতে হবে ; • অল্প তাপে বাটার দিয়ে মাশরুমগুলো ৫ থেকে ৭ মিনিট ভেজে নিতে হবে ; • ডিম ও দুধ একসঙ্গে ফেটে নিয়ে মাশরুমের কড়াইতে ঢেলে নিতে হবে ; • প্রয়োজন মত লবণ ও মরিচের গুড়া দিয়ে ভাল করে নেড়ে নামিয়ে ফেলতে হবে। • যাদের কোলস্টেরল সমস্যা আছে তারা ডিমের কুসুমটি বাদ দিয়ে সাদা অংশের সাথে মাশরুম মিশিয়ে পুষ্টিকর উপাদেয় ওমলেট তৈরি করে খেতে পারেন। মাশরুমের আচার • রান্না ছাড়াও তাজা মাশরুম তেল ও মসলা দিয়ে আচার বানিয়ে রাখা যায়। আচারের জন্য দুধ মাশরুম সবচেয়ে ভালো। এজন্য নীচের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে- • তাজা মাশরুম পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে ; • রসুন, আদা, গোলমরিচ ও সরষের গুঁড়া এবং গরম মসলা মিশিয়ে সামান্য তেলে মাশরুম ভেজে প্রায় শুকিয়ে ফেলতে হবে ; • ঠান্ডা করে লবণ ও ভিনেগার মিশাতে হবে ; • তেল গরম করে ঠান্ডা করতে হবে। সম্পূর্ণ মিশ্রণটি একটি বোতলে ভরে তেলের মধ্যে রাখতে হবে ; • বোতলে ঢুকাবার আগে বোতলটি ভালোভাবে ঢাকনাসহ সিদ্ধ করে নিতে হবে। • বাংলাদেশে খাদ্যে স্বয়ংভরতা অর্জন করেছে কিন্তু এথনো পুষ্টিতে সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হযনি। বাংলাদেশের পুষ্টিতে সহজ সরল এবং স্বল্প পুজিতে পুষ্টির উপকরণ যোগান দিতে মাশরুম অনন্য। এখন প্রয়োজন উদবুদ্ধকরণের মাধ্যমে মাশরুম উৎপাদন, বিপনণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং এর ব্যবহার সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যকর ভুমিকা। মাশরুম দিয়ে এদেশের পুষ্টি এবং কৃষিকে সমৃদ্ধ করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। মাশরুম সমৃদ্ধ পরিকল্পিত কৃষির প্রত্যাশা আমাদের সবার কাম্য।
মাশরুম প্রাপ্তিস্হান
মাশরুম প্রাপ্তিস্হান (উৎপাদন, বিক্রি, ট্রেনিং, গবেষণা) • সিরাজ ভেজিটেবলস্, গুলশান-১।
ফোন: ৮৮৫৬৪৯৩ • লোকমান ভেজিটেবলস্, গুলশান-১।
মোবাইল: ০১৭১০-৯৫৮৩১১ • কনজুমার শপিং মল, কাজীপাড়া বাস স্ট্যান্ড। • ওশান শপিং মল, মিরপুর-১৩।
ফোন: ৯০১৬০৩৯ • সিটি শপিং মল, মিরপুর-১০। ফোন: ৯০০৫৭৯০ • মাসলিন বুটিক, বনানী। ফোন: ৮৮১৬২০১ • তয়বা ফার্মেসী, শেওড়াপাড়া। ফোন: ৮০২৩১০৬ • কাজী সুপার স্টোর, মিরপুর-১০। ফোন: ৯০০১২৫২ • এস ডি হোমিওপ্যাথিক ফার্মেসী, মিরপুর-১৩। মোবাইল: ০১৭১১-৮১৬৬০৪ • খামারবাড়ি, ফার্মগেট। মোবাইল: ০১৭১৯-৬৪২৬৫৬ • এম এম ইন্টারন্যাশনাল, মধুমিতা রোড, টঙ্গী। মোবাইল: ০১৭১৩-৫৩৯৮০৬
আয়-ব্যয় হিসাব
পারিবারিক পর্যায়ে গ্রামে মাশরুম চাষ লাভজনক। গড় হিসাবে ঝিনুক বা দুধ মাশরুম চাষের জন্য ব্যবহার করা খড়ের ৫০% পরিমাণ কিংবা ততোধিক ফলন পাওয়া যায়। নীচে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প পর্যায়ে মাশরুমের আয়-ব্যায় হিসাব দেয়া হলো: (ক) পারিবারিক পর্যায়ে ঝিনুক মাশরুম উৎপাদনের আয়-ব্যয়ের হিসাব
কাঁচামাল পরিমাণ
ব্যয় (টাকা)
ক) ধানের খড়
২৫০০ কেজি
১৮৭৫.০০
খ) স্পন
৩৬৫ কেজি
৪৩৮০.০০
গ) পলিথিন ব্যাগ
৪০ কেজি
৩০০০.০০
ঘ) পিপি ব্যাগ
২৫ কেজি
১৭৫০.০০
ঙ) সুতার বল
৫টি
১০০.০০
চ) ফরমালডিহাইড
৫টি
২৫০.০০
ছ) ব্যাভিস্টিন
০.২৫ গ্রাম
২৫০.০০
জ) ব্লিচিং পাউডার
৫ কেজি
১০০.০০
ঝ) বিবিধ ব্যয় (মোট খরচের ১০%)
-
১১৭০.০০
টাকা =
১২,৮৭৫.০০
২. শ্রমিক ব্যয় (৯০ দিন)
-
৬৩০০.০০
৩. চাষ ঘর নির্মাণ
-
৫০০০.০০
৪. স্প্রেয়ার ড্রাম, ট্রে ইত্যাদি
-
২০০০.০০
মোট ব্যয় টাকা =
২৬,১৭৫.০০
মোট আয়: উৎপাদন = ১২৫০ কেজি, বাতিল = ১২৫ কেজি (মোট উৎপাদনের ১০%), নীট উৎপাদন =১১২৫ কেজি প্রতি কেজি টাকা ১০০/- হিসাবে আয় = ১১২৫×১০০ = টাঃ ১,১২৫০০.০০ মোট লাভ = (আয় টাঃ ১,১২৫০০.০০ -ব্যয় ২৬,১৭৫.০০) = টাঃ ৮৬,৩২৫.০০ খ. সীমিত পর্যায়ে দুধ মাশরুমের উৎপাদন ও বিক্রয়ের আয় ব্যয়ের হিসাব
কাঁচামাল
পরিমাণ
ব্যয় (টাকা)
ক) ধানের খড়
২৫০০ কেজি
১৮৭৫.০০
খ) স্পন
৩৬৫ কেজি
৭০০০.০০
গ) পলিথিন ব্যাগ
৪০ কেজি
৩০০০.০০
ঘ) পিপি ব্যাগ
২৫ কেজি
১৭৫০.০০
ঙ) সুতার বল
৫ টি
১০০.০০
চ) ফরমালডিহাইড
৫ লিটার
২৫০.০০
ছ) ব্যাভিস্টিন
০.২৫ গ্রাম
২৫০.০০
জ) ম্যালাথিয়ন
৫ লিটার
২৫০.০০
ঝ) ব্লিচিং পাউডার
৫ কেজি
১০০.০০
ঞ) বিবিধ ব্যয় (মোট খরচের ১০%)
-
১২০০.০০
টাকা =
১৫,৭৭৫.০০
২. শ্রমিক ব্যয় (৯০ দিন)
-
৬৩০০.০০
৩. চাষ ঘর নির্মাণ
-
৫০০০.০০
৪. স্প্রেয়ার ড্রাম, ট্রে ইত্যাদি
-
২০০০.০০
মোট ব্যয় টাকা =
২৯,০৭৫.০০
মোট আয়: উৎপাদন = ১২৫০ কেজি, বাতিল = ১২৫ কেজি (মোট উৎপাদনের ১০%), নীট উৎপাদন =১১২৫ কেজি প্রতি কেজি টাকা ৬০/- হিসাবে আয় = ১১২৫×৬০ = টাঃ ৬৭,৫০০.০০ মোট লাভ = (আয় টাঃ ৬৭,৫০০.০০ -ব্যয় টাঃ ২৯,০৭৫.০০) = টাঃ ৩৮,৪২৫.০০
তথ্যসূত্র
১. মাশরুম উৎপাদন প্রযুক্তি, এ. বি. সিদ্দিকী, পিএইচ ডি, জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়কারী, ২. ইন্টিগ্রেটেড হর্টিকালচার এন্ড নিউট্রিশন উন্নয়ন প্রকল্প, জানুয়ারি-২০০৬। ৩. মাশরুম উৎপাদন প্রযুক্তি, ইন্ট্রিগ্রেটেড হর্টিকালচার এন্ড নিউট্রিশন উন্নয়ন প্রকল্প ৪. সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, জানুয়ারি-২০০৬। ৫. দারিদ্র বিমোচনে মাশরুম চাষ, কৃষি কথা, ৬৬ তম বর্ষ, ৬ষ্ঠ সংখ্যা, আশ্বিন-১৪১৩, ৬. সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-২০০৬, পৃষ্টা ১৬৪ থেকে ১৬৬। ৭. পুষ্টিকর সবজি মাশরুম, কৃষি তথ্য সার্ভিস শক্তিশালীকরণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প, ৮. খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, সেপ্টেম্বর-২০০৬। ৯. মাশরুম, প্রকল্প পরিচালক, মাশরুম সেন্টার উন্নয়ন প্রকল্প, সোবহানবাগ, সাভার, ঢাকা, ফোন-৭৭১০৬৪৬। ১০. মান্না মাশরুমি, ৫৫/৬/এফ, পূর্ব বাইশটেকী (মুক্তিযোদ্ধা মসজিদ সংলগ্ন) মিরপুর ১৩, ঢাকা-১২১৬, মোবাইল-০১৭১২-৯৭২৪৬০, ফোন-৯০১৬০২৬। ১১. মাশরুমের বীজ বানানোর কৌশল, দনিক প্রথম আলো, ক্ষেত খামার পাতা, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫, ২২ জুলাই-২০০৬। ১২. স্ট্র মাশরুমের চাষ, দনিক প্রথম আলো, ক্ষেত খামার পাতা, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫
0 comments:
মন্তব্য করুন